ঠোঁট,পাট ১৬-১৮

0
2187

ঠোঁট,পাট ১৬-১৮
Written by- Ibna Imtiaj
ষোল,

আমি চিরকুটের লেখা দেখে তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা হয়তো এই নোট দেওয়ার পর থেকে আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ কিংবা কথা বলতে আসবেনা অথবা আমাকে মারাত্মকভাবে ইগনোর করে চলবে। কিন্তু মেয়েটা আমাকে সরাসরি এই চিরকুটে লিখে দিয়েছে যে, দুপুরে আপনার সাথে লাঞ্চে যাব। যে করে হোক ম্যানেজ করে নেন।

আমি রাগে গজগজ করে উঠলাম ভেতর থেকে। ওকে আমি দিতে চাইছি ছাতার কাপড়, আর ও কি না পুরো ছাতাটা নিয়ে যেতে চাইছে। এটাতো আমার জন্য দেওয়া সম্ভব না।

আমি তখন সামনের দিকে তাকিয়ে জোরে করে বললাম। আমার জন্য এটা সম্ভব না।

আর আমি তখন এটাও বুঝে ফেলেছি যে, ও আমার দিকে স্পষ্ট ভাবে তাকিয়ে আছে। সুতরাং সে আমার উত্তরটা খুব ভালো করেই পেয়ে গেছে।
সেই দিনের মত ক্লাস করে বাসায় চলে গেলাম। এরপর থেকে আমি নিজে হালকা টুকটাক কথা বলতাম তার সাথে। আস্তে আস্তে তার নাম তার ঠিকানা ও তার বাবা কি করে তার সবকিছু জেনে নিচ্ছিলাম।
কিন্তু আমি যা অনুভব করতে পারছিলাম। তার চলাফেরা ও কথার মধ্যে কিছু কোড আছে। যে কোডটা কোন অক্ষর কিংবা কোন শব্দ নাই।এই কোডটা হল আন্ডারকভার এজেন্সি কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ডের কোনো এজেন্ডা কথার মধ্যে ব্যবহার করে থাকে। যেটা কে বোঝায় কথার মধ্যে পরিমাপ কিংবা কথার সাধুকতা। এই পরিমাপের বাহিরে কোন কথা বলা যাবে না।
তাকে নিয়ে দিন দিন আমার সন্দেহ করছিল। আর আমার মনে হচ্ছিল। আমি তার সাথে যতটাই মিশছি , ততটাই নিজেকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছি।

এভাবে সবার অজান্তে চলতে থাকে তার আর আমার সম্পর্ক। আমার দিকে না বুঝে ঝরনা, আর তার দিকে না বুঝে অন্য কেউ। কিন্তু আমি মিশছি আমার স্বার্থের কারণে। যেটা উদ্ধার না করতে পারলে আমার অনেক কিছু ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

তবে আমি জানি না এই খেলাটা খেলে ভুল করছি নাকি ঠিক করছি।

সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা। খুব জমিয়ে পড়ছিলাম। এই পড়ার চাপে কারণে বিভিন্ন জায়গায় আমার অনেক ধার বাকি হয়ে গেছিল। আর এই ধার বাকি শোধ করার জন্য আমাকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছিল রাধিকা। হ্যাঁ মেয়েটা নাম রাধিকা। তবে এটা তার আসল নাম নাকি নকল নাম সেটা আমার জানা নাই।

তার সাথে লেনদেন করতে করতে আমার যখনই টাকা লাগত আমি তখন তার কাছে হাত পেতে বসতাম। আর ও আমার মুখ থেকে টাকা চাইতে দেরি, কিন্তু ও টাকা বের করতে দেরি করত না।এমনকি যে অংকের টাকায় আমি চাইতাম সে অংকের টাকাটা আমাকে দিতো। এই কারণগুলো আমার মারাত্মক সন্দেহ তো। কারণ আমিও একজন ট্রেনিংপ্রাপ্ত এজেন্সির এজেন্ট।

পরীক্ষাটা আমি খুব ভালো করে দিলাম। কারন আমার সাপোর্ট ছিল ঝরনা।এত কিছুর পরেও তাকে আমি কখনো ভালোবাসা দিতে অবহেলা করিনি। অন্যদিকে গেম খেলছি,কিন্তু তার ভালোবাসায় আমি কোন কমতি না রেখে সম্পূর্ণটাই দিচ্ছি।যাতে ও কোনদিন বুঝতে না পারে কিংবা বলতে না পারে আমি সবকিছু ছেড়ে আসার পরেও আপনার কাছে আমি ভালোবাসা তেমন ভাবে পাইনি।

ঝর্নাকে আমি একদিন বলি। বিয়ের পরে আপনার সাথে আমার হানিমুন যাওয়া হলো না। দুইটা বছর কেটে গেল। না ঘুরেছি আপনাকে নিয়ে না আমি ঘুরেছি। সেজন্য আপনাকে বিপুল বিপুল বিপুল ভালোবাসা দিতে হানিমুনে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম।
রাজি আছেন?

ও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। মনে হচ্ছে যেন আমার কথাগুলো গভীরভাবে গিলছে।

ও আমার কথার উত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকে প্রশ্ন করল।

এত তাড়াতাড়ি বাচ্চার বাবা হয়ে যাবেন। তাহলে কি আমি আমার বাবাকে দেখাতে পারবো না?

তারা এমন প্রশ্ন শুনে আমার ভিতর চুপসে গেল। মুখটা আমি ফ্যাকাশে করতে যেও করিনি।
মুখের মধ্যে হাসি টেনে তাকে বললাম।
ধুর পাগলী, এতদিন আদর করলাম। কই আমি কি আপনাকে মা বানিয়ে ফেলেছি। হানিমুনে গেলে কি আপনাকে মা বানিয়ে ফেলবো এটা কেমন কথা। মন মেজাজ একটু ঘুরতে চায় না। সেই জন্য আপনাকে ঘুরতে নিয়ে যাব।

কিন্তু এখানে অনেক টাকা পয়সার ব্যাপার আছে। এখন থাক। আপনি অনার্স কমপ্লিট করেন। তারপরে অনেক টাকা পয়সা হবে। তখন আমাকে নিয়ে যত খুশি যেখানে ইচ্ছা ঘুরতে নিয়ে যাবেন। এখন আপাতত এই সময় গুলো আমাকে দিন। দুটো বছর আপনার খেটেছি। এখন চব্বিশ ঘন্টা আমাকে আদর দিয়ে এসব পুষিয়ে দেবেন। অনেক আদর পাওনা আছে আপনার কাছে আমার।শুধু পড়ার জন্য আর ক্লাসের জন্য কলেজ এর জন্য আপনাকে কিছু বলিনি। এখন প্রতি ঘন্টায় প্রতি মিনিটে ওসব চুকিয়ে দেবেন।

আমি মনে মনে হাসছি। ভেবেছিলাম, ঝরনা হয়তো এই দুই বছরে কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রথম কয়েক দিনের মতো উষ্ণতার মধ্যে আর পাব কিনা সন্দেহ ছিল। কিন্তু ও যে সব রস কস জমিয়ে রেখেছে ভেতরে আমার জন্য। সেটা তো আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র চিন্তা ছিল না। এমনকি জানতাম না আমি।
তবে ভেতরে ভেতরে একটি পরিকল্পনা করলাম। যেটা ওকে সারপ্রাইজ হিসেবে দিব ভাবছি। আর যাই হোক, আমার জন্য যথেষ্ট বন্দি হয়েছিল এত দিন। ওর ঘোরার প্রয়োজন। হয়তো আমার টাকা-পয়সা দিকে তাকিয়ে বলছে না। কিন্তু তাকে সারপ্রাইজ হিসেবে দিতে ক্ষতি কি আমার।

আমি সেই জন্য রাধিকার কাছে টাকা চাইতে গেলাম। কিন্তু রাধিকা আমাকে উল্টো একটা প্রস্তাব দিয়ে বসলো। ও আমাকে বলল। দুজনে একটা ব্যবসা দাঁড় করাবে। সবাই জানবে ব্যবসাটা আমার। কিন্তু এর মধ্যে শেয়ারে রাধিকা ও থাকবে। তবে আমি রাধিকাকে বললাম। এমনিতে আমার কাছে এখন টাকা নেই। তার উপর আমি এত বড় ইনভেস্ট করতে পারব না। ও আমাকে যা বলল।
ব্যবসার টাকা সে সম্পূর্ণই দিবে। কিন্তু মালিকানা থাকবে আমার। আর সবার অজান্তে সে শেয়ারের ভাগ পাবে।

ব্যাপারটা আমার কাছে মন্দ লাগলো না। আমার তখন অবস্থা হয়ে গেছিল, আমি কিছুক্ষণের জন্য তাকে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। কারণ তার কথাগুলোর ভাঁজ ছিল একদম বিশ্বাস করার মতো।

সে আমাকে পরেরদিনেই ডাকলো টাকাগুলো নেওয়ার জন্য। কোন নোট বা চেক দিবে না, সরাসরি ক্যাশ। আর ব্যবসাটা ছিল হচ্ছে ক্যাফে, সাইবার ক্যাফ। আর টাকার অংকটা আসলেও অনেক বড় ছিল ,প্রায় দশ লাখের মতো। আমি কোন কিছু না ভেবে বিশ্বাস করে তাকে হ্যাঁ বলে দিলাম। আমি পরের দিন তার সাথে টাকাগুলো আনতে যাব। আর সে আমাকে অমুক জায়গা থেকে নিয়ে যাবে।
এই ব্যাপারটা আমি ঝর্ণাকে ও জানালাম না।

তবে আমার সাথে এখন যা ঘটতে যাচ্ছে, তা হল। তীরের মুখে যখন পড়া হয়, আর সে যদি কোন গাছের সাথে দড়ি বন্ধন অবস্থায় থাকে। তাহলে সেই তীরের গতি কিংবা রেখা বদলানো যায় না। সেটা সেই মানুষের গায়ে গেঁথে যায়।
আমার অবস্থা এখন ঠিক তেমনি হয়েছে।
পরের দিন যে ঝরনার সাথে আমার শেষ দেখাও হতে পারে এই ধারণা কিংবা চিন্তাটা আমার মাথায় আসেনি। আমি তখনও বিশ্বাসের উপরে অটল ছিলাম। যে, হ্যাঁ রাধিকা আমাকে মোটা অংকের টাকা দিবে ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য। আর আমি সেই টাকা দিয়ে সত্যিই কোন ব্যবসা শুরু করব।

সেই দিন মনটা আমার খুব ভাল ছিল। ঝর্নাকে আমি একের পর এক বিশাল সারপ্রাইজ দিয়ে তাকে চমকে দিব। এই ভাবনাটা ভাবল ভিতরে আমার যা আনন্দের জোয়ার বইছে তা বলে বোঝানো সম্ভব না।

সেই দিন রাত্রে আমি ঝর্ণাকে পাগলের মত উষ্ণতায় মাতিয়ে দিয়েছিলাম।তার ঠোট নিয়ে এমন খেলায় মেতে উঠে ছিলাম যেন ছাড়তে ইচ্ছা করছিল না আমার। রসে জবজব করে ভিজিয়ে দিয়েছিলাম তার দুই ঠোঁট।
তার নগ্ন বুকে আঁচড় বসিয়েছিলাম আমার হাতের। কামড়ের দাগ লাগিয়ে দিয়েছিলাম নাভির নিচে।
যেন এক অন্যরকম উষ্ণতায় পেয়েছিলাম আমি তখন। যার কোন শেষ হচ্ছিল না।

পরেরদিন সকালবেলায় দুজনে নগ্ন অবস্থায় ঘুম ভাঙ্গে। ঠোঁট দুটো মিলিয়ে আদর দেয় আমাকে ঝর্ণা। কি হাসিমাখা মুখ তার। কিন্তু এই হাসিটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগলো।মনে হচ্ছিল এরকম হাসি আগে কখনো দেখেনি কিংবা আজ শেষ অথবা প্রথম দেখছি। হঠাৎ করে মনটা খারাপ হয়ে যেতে যেতে শুরু করল। কিন্তু খারাপ হতে দিই কি করে।
এখন তো আমি ভালোবাসা তে লিপ্ত হয়ে আছি। সঙ্গে তার রস রসে উষ্ণতা।

আমি তখন ঝর্নাকে বলে বসলাম।
আজ আপনার হাতে গরম গরম বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে। মানে আপনি রান্না করবে না সেটা আমি খাব।
ঝরনা খুশিতে খুশিতে রাজি হয়ে যায়।

সকালবেলায় দুজনের নাস্তা করে গল্প করছিলাম। তবে আজ বিরিয়ানি খেতে চেয়েছি বলে তার কাজ টা একটু বেশি। সেজন্য সে বলছিল তাকে এখন কাজের জন্য ছেড়ে দিতে।
আমি ও বাহিরে যেতে চাইলাম কিছু কিনে আনার জন্য। আসলে তো যাচ্ছি টাকাটা আনার জন্য।

তবে গেটের কাছে যখন তার কাছে বিদায় নিতে আসলাম আমি যাচ্ছি বলে। সে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো। ওর মুখটা হঠাৎ করে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আর অজান্তেই বলে বসলো, আমার ভালো লাগছে না। খুব তাড়াতাড়ি আসবেন।

আমি তখন তাকে হেসে বললাম। আরে নিশ্চয়ই আর বেশি দেরি হবে না আমি যাব কিছু কিনব আর চলে আসব।

ও তখন জোর করে আমার ঠোঁটের উপরে চুমু খেয়ে দেয়। ভিজিয়ে দেয় একদম। তবুও যেন তার মুখ থেকে ফ্যাকাশে রংটা সরছিল না।

আমি হাসতে হাসতে চলে গেলাম।

তবে সামনে যে আমার সত্যিই কোন একটা বিপদ অপেক্ষা করছে কি না। আমি তখনো জানি না। ঝরনার ব্যবহারটাও আমার খুব ভালো লাগলো না। এটা ভাবলে বুকটা আমার ব্যথা হয়ে উঠছে।
জানিনা এখনও কিছু ,কি হতে যাচ্ছে।

চলবে

Written by-Ibna ঈমতিয়াজ
ঠোঁট
সতের,

রাধিকার বলে দেওয়া জায়গাতে আমি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এই দাড়িয়ে থাকাটা আমার জন্য স্বস্তিকর নয়। খুব অসস্তিকর অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে আমি। বারবার মনে পড়ছিল ঝরনা সেই চুমু দেওয়ার দৃশ্য টা। আর চুমুটা কেমন যেন ছিল। রস কস ছিল ঠিক । কিন্তু চুমুটা ছিল কেমন যেন একটা আতঙ্কের।মনে হচ্ছিল এই বুঝি শেষ বারের মত ঝরনা তার দুটো ঠোঁট আমার ঠোঁটের উপরে বুলিয়ে দিচ্ছিল। উষ্ণতা আমি খুঁজে পাইনি। তার ঠোঁটের রসের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলাম আমি একটা বাধা।যে রস টা আমাকে বলছিল বারবার তুমি যেওনা এখন কোথাও।

এসব ভাবতে ভাবতে রাধিকা আমার সামনে ব্ল্যাক কালার প্রাডো নিয়ে হাজির হয়।
তার এই প্রাডো গাড়ি দেখে আমি খুব অবাক হয়ে যাই। তাও আবার নিজে ড্রাইভ করে এসেছে।
ব্ল্যাক গ্লাস নামিয়ে আমাকে গাড়িতে উঠতে ইশারা করে।
আমি কোন কথা বলা ছাড়া তার পাশের সিটে গিয়ে বসি। তবে বসার পরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি।

এই গাড়িটা কার?

ও তখন আমাকে গা-ছাড়া ভাবে উত্তর দেয়।
কেন এটাতো আমার গাড়ি।

তোমার গাড়ি মানে। এর আগে তো তোমাকে কখনো এই গাড়িতে আসতে দেখি নি।

নিয়ে আসিনি তাই। আর আজকে ভাবলাম তোমাকে একটু সারপ্রাইজ দিই। বান্ধবী হিসেবে তো এটাতো কমপক্ষে দিতে পারি।

এই গাড়িতে উঠে আমার জন্য কি বা এমন সারপ্রাইজ হবে।

আরে বাবা, এমনও তো হতে পারে এই গাড়িটা তোমাকে সম্পূর্ণ দিয়ে দিতে পারি আমি। তাই না?

মজা করছো

এখানে মজা করার তেমন কিছুই নেই। তোমাকে মোটা অংকের টাকা দিচ্ছি ব্যবসা করার জন্য। আর এই গাড়িটা তো সামান্য একটা ব্যাপার।

তার মুখে এমন কথা গুলো শুনে আমি তাৎক্ষণিক যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এসব কি আমি সত্যি শুনছি নাকি কল্পনা দেখছি চোখের সামনে। ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারছি না।

খুব অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম।

ব্যাপারটা কি বলতো। তোমার কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

থাক তোমাকে কিছু বুঝতে হবে না, এখন যেখানে আছি সেখানে চলো।
তবে আজকে তোমার কাহিনী শুনতে চাচ্ছিলাম।তোমার স্ত্রী ঝর্নার সাথে তোমার পরিচয় কি করে হলো ভালোবাসা কি করে হলো বিয়ে কি করে করলা। সবকিছুই।

আমি তখন বুঝতে পারলাম। রাধিকা তার কথার প্রসঙ্গ উল্টিয়ে অন্যদিকে আমার মন ঘুরাতে চাইছে। তবে সমস্যা নেই কিছু একটা ঘটতে গেলে আমি বুঝে ফেলতে পারব।

আমি তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার গল্প বলতে শুরু করলাম।

ঝরনা আর আমার পরিচয় ফেসবুকে। আমি এক সময় গল্প লিখতাম। সময়ের ব্যবধান আর এখন লেখা হয় না। আর গল্পের নায়িকা যেহেতু আমার সাথেই থাকে।সুতরাং নায়িকা কে আলাদাভাবে কল্পনা করে তাকে আবার লিখে অনুভব করতে আর ইচ্ছা হয় না।তাকে আমি জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে পাশে বসেই অনুভব করতে পারি।
তবে ফেসবুকে পরিচয় এবং চার বছর সম্পর্ক তারপর বিয়ে এসব গল্প শুনলে সবার কাছে খুব অদ্ভুত লাগে। ফেসবুকে সম্পর্ক হয়ে বিয়ে হওয়াটা কি এই যুগেও সম্ভব। এরকম প্রশ্ন অনেকেই করেছে আমাকে। কিন্তু আমার আর ওর ব্যাপারটা একদম আলাদা।
ফেসবুকে এই চার বছরের সম্পর্কে তার সাথে আমার কখনও দেখা হয়নি। তাকে কোনদিন এর সামনে গিয়ে ভালোবাসি বলা হয়নি।কিন্তু এ ফেসবুকে তার সাথে প্রেম করে আমি মাত্র একদিন দেখা করে সে দিনই তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে চলে এসেছি।
সে ছেড়ে আসলো আমার ভরসা করে তার বাবা মা। আর আমি ছাড়লাম আমার পরিবার। কারণ তার পরিবার মানলেও আমার পরিবার মানতো না। মানতো না কারণ হচ্ছে, আমার পড়াশোনা এখনো শেষ হয়নি। আরো অনেক ধরনের কারণ আছে। আর আমার পরিবার যদি না মানে তার পরিবার ও আমার হাতে তাকে তুলে দেবে না। এই কারণেই দুজনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে দুজনের ঘর ছেড়ে বের হয়ে যায়। অথচ তার চেয়ে বয়সে কিন্তু আমি ছোট। আর এটা আমি ভালো করে না জানলেও সে খুব ভালো করেই কোথাও থেকে যেন জেনে গেছিলো। কিন্তু আমাকে সে ছাড়েনি। আর যখন দুজনে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। তখন সে প্রতিজ্ঞা করেছিল আমাকে সে নিজ হাতে গড়ে তুলবে একটা গর্ব অবস্থায় আমাকে নিয়ে যাবে।
তবে সে আমাকে বিশ্বাস করত না। তার ভিতর একটা ভয় ছিল। যদি আমি তাকে ছেড়ে চলে যায়। একা করে। তাহলে তো সে কোন পথে যেতে পারবে না। এই ভয়টা তার ভেতর খুব বেশি ছিল। কিন্তু এখন অতটা নেই। এই দুই বছরে নিজেদের মধ্যে নিজেকে বেশ ভালো করে মানিয়ে নিয়েছি। এই হলো আমাদের সংক্ষিপ্ত ঘটনা, মোট কথা হচ্ছে। আমরা দুজন দুজনের পরিবার থেকে পালিয়ে আছি। আমার যেদিন বড় একটা পজিশন হবে। সেদিন সে আমার হাত ধরে তার পরিবারের সামনে দাঁড়িয়ে বলবে। এই ছেলেটা হচ্ছে আমার বর।
তবে আমাদের প্রেম টা আসলে অদ্ভুত ধরনের ছিল। এতটা দূরে থেকে দুজনে প্রেম করেছি। কিন্তু মনে হতো মাঝে মাঝে, আমরা দুজন দুজনের খুব কাছাকাছি আছি। এটাই ছিল আমার ভালোবাসা পাওয়ার সংক্ষিপ্ত কথা।

রাধিকা আমার মুখে এসব সুনে বলে। হ্যাঁ, তোমাদের দুজনের গল্পটা বেশ দারুন। আর এই জন্যই তোমাদের দুজনের জন্য আমি স্পেশাল কিছু গিফট এনেছি। পেছনে দেখো একটা বক্স আছে ,বক্স টা এখনই খোলো।

আমি কিছু না জিজ্ঞেস করে মুচকি হাসি দিয়ে পিছনে তাকালাম।
পিছনে তাকিয়ে দেখি সত্যিই একটা বক্স। আর তখন বক্সটা কাছে নিয়ে খুলে দেখি। ভেতরে শাড়ি পাঞ্জাবি পারফিউম আরো নানান ধরনের জিনিস আছে।

আমি তখন বকা দিয়ে রাধিকা কে বলি। এসব করার কি দরকার ছিল।
ও তখন হেসে বলে।

এসবের মজা তুমি বুঝবানা। এগুলা মানুষ মানুষকে ভালোবেসে গিফট করে। আর ভাবিকে আমার খুব ভালো লাগে। খুব বেশি ভালো লাগে তার ভালোবাসাটা। সত্যি বলতে, উনি তোমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারে না। আর এই ভালোবাসাটা আমার কাছে খুব অবাক লাগত অদ্ভুত ও লাগতো। তার কেয়ারিং গুলো ছিল খুব অদ্ভুত। তোমাকে একটা ছায়ার মত সব সময় আগলে রাখে। তোমার কপালটা আসলে অনেক লাকি। যার জন্য এমন একটা মেয়ে পেয়েছো জীবনে।

আমি কথা শোনার মাঝেই পারফিউমের বোতলটা নাকে লাগিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম।

কিন্তু তারপরে আমার আর কিছু মনে নেই।

আমার যখন জ্ঞান ফেরে। তখন আমি একটি চেয়ারের সাথে বাধা। আমার পুরো শরীর ভেজা পানিতে। আর চারিদিকে কেমন যেন একটা ভ্যাপসা অবস্থা

Written by-Ibna ঈমতিয়াজ
ঠোঁট
আঠারো,

আমার ঘাড় শক্ত করে বাঁধা মোটা দড়ির সাথে । উপরের দিকে মাথা ঘুরিয়ে ভালো করে কিছু যে দেখবো। সেই সুযোগটা কোন ভাবে রাখেনি। কিন্তু আমার এখন আফসোস হচ্ছে ঝরনার সেই রস মাখানো চুমুটার জন্য। কেন আমি তার সেই চুমুটার রহস্য বুঝতে পারলাম না, এর জন্য আমার প্রচন্ড আফসোস হচ্ছে। যদি বুঝতে পারতাম, তাহলে হয়তো ঝর্নাকে এখন একা করে ফেলতাম না।
খুব ভয় লাগছে ভেতরে আমার। এতটা ভয় এর আগে কখনো পাইনি আমি। ভয়টা ঠিক আমার জন্য না। ঝরনার জন্য। আমি হয়তো মরে যাব কিংবা তারা মেরে ফেললে মরে গেলাম, কিন্তু আমার অবর্তমানে ঝরনার কি হতে পারে এই চিন্তাটা আমি করতে পারছিনা।
আর কিছু ভাবার আগে আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠি।

আমার মাথায় এটাও ছিল না, আমার উপরে একটা হুমকি আছে। কিন্তু সেই হুমকিটা যে রাধিকার ভিতরে লুকানো। সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি কখনো।
চোখের সামনে ঝরনার অনেক কিছু ভেসে উঠছে আমার।ঠিক যেমন মৃত্যুর আগে মানুষের অনেক কাজ অনেক কর্ম অনেক স্মৃতি ভেসে ওঠে তার চোখের সামনে। আমার সাথে ও ঠিক এমনটাই হচ্ছে।

ঝরনা আমাকে প্রায়ই বলতো, আমি যদি মরে যাই এখন আপনার কি কোন আফসোস হবে ?

আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিয়েছিলাম। না আমার তেমন কিছুই হবে না।কারণ আপনি এখন মরে গেলে আমি নিশ্চিত আপনাকে আমি আমার জান্নাতে পেয়ে যাব। সেই জন্য এখন অতটা চিন্তা আমার হয়না।

এই উত্তরটা ঝরনার তখন পছন্দ হয়নি। ও একদম রেগে যায়।রেগে গিয়ে আমার কোল থেকে উঠে একদম সোজা বারান্দায় গিয়ে হপ করে বসে পড়ে।

আমি তখন পাশে গিয়ে বসি। খুব শক্ত করে চেপে ধরি বুকের সাথে। যেন ছুটতে না পারে।

ও তবুও নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে। আমাকে জড়িয়ে ধরছেন কেন, আমাকে মেরে ফেলে তো অন্য মেয়ের সাথে শোয়ার ধান্দা আপনার। আমি জানিনা মনে করেছেন। সব জানি আমি। আমাকে তো ভালো লাগেনা। পুরাতন হয়ে গেছি।

আমি তখন আস্তে করে ঘাড়ে একটা কামড় দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলি।
এই পৃথিবীতে আমি একটা ছেলে, যার কাছে কখনো মনে হয় না যে, তার স্ত্রী তার কাছে পুরাতন হয়ে গেছে। আরো থাকলেও আমি জানিনা। আমি শুধু আমার কথাই বললাম। আপনাকে দেখলে তো আমার বারবার নতুন করে প্রেম উপচে পড়ে।তাহলে কেন বলছেন যে আপনি পুরাতন হয়ে গেছেন বলে আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না মেরে ফেলতে চাই।

ঝরনা দহন বুকের ভিতর গুটিসুটি হয়ে ঢুকে বলে। থাক আর বানিয়ে বলতে হবে না আমি সব জানি।

এই শুনেন না, আপনাকে না মারাত্মক হট লাগে।

ঝরনা তখন একটা মুচকি হাসি দেয়। তারপর বলে, যা শয়তান। খালি মিথ্যা কথা।

ও আমি হট বললাম তাই গায়ে কোন কথাই লাগলো না। এখন যদি একটা দেবর থাকতো বা অন্য কেউ থাকতো ভাবি ভাবি ডাকে। শুনতে খুব ভাল লাগত আপনার তাই না।

ধুরু, কি যে বলেন। ওসব ফালতু কথা রাখেন।
আমি মোটেও হট না।

হয়েছে অনেক হয়েছে। আমার ভালোবাসাকে আমি হট বলেছি। আপনাকে এত মাথা ঘামাতে হবে না। আমার সুন্দরী জান টা।

এই ভাবনাটা শেষ হওয়ার পরে আমি আরো জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করলাম। ভাবতেই অবাক লাগছে ঝর্ণাকে আমি আর বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না। আর ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে উষ্ণতায় ভিজিয়ে দিতে পারবো না। পারবো না সেই নগ্ন বুকে আমার বুকটা লেপ্টে দিতে। সবকিছু যেন নিমিষেই আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেল।

এমন সময় একটা লোহার দরজা খোলার শব্দ পাই আমি। সম্ভবত তিন থেকে চার জন বা তার অধিক কেউ ঢুকছে ভেতরে।

আমার বাঁধনের সব দড়ি গুলো খুলে দেওয়া হলো।
পেছনে থাকার কারণে এই লোক গুলোর সংখ্যা আমি নির্ধারণ করতে পারেনি। কিন্তু তারা মোট ছয় জন।
এদের আমি কাউকে চিনি না।

তবে একজন আমার মোবাইলটা আমার সামনে ধরে বলছে। তোর বউটা অনেক কষ্টে আছে রে।তাকে শান্ত করার জন্য তো তোকে বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। আর না হয় এখানে বসে থেকে বিদায় নেওয়া।

এই কথা শোনার পর আমি খুব কাকুতি করে জানালাম। দেখুন একটুর জন্য হলেও আমার স্ত্রীর সাথে আমার কথা বলতে দিন। সে খুব চিন্তা করছে আমার জন্য। কেঁদে কেঁদে তাদের কাছে আহাজারি করলাম। কিন্তু তাদের মন একটু গলেনি।

তাদের চাহিদা হল। আমি যখন এজেন্সি ছেড়ে দিয়েছিলাম, তখন যেসব ডাটাবেজ ও কোড লিস্ট নিয়ে চলে গেছিলাম। সেগুলো তাদের হাতে সোপর্দ করে দিতে।কিন্তু এগুলো যদি আমি তাদের হাতে দিই তাহলে আমাদের দেশের একটা অংশের অনেক বড় ক্ষতি হবে। আর আমি চাই না সে ক্ষতিটা আমার হাতের দারাই হোক। এটাই করে যদি আমার জান যায় যাক তবু আমি সেটা দিতে পারবো না।

আমার কথা আমি সাফ সাফ জানিয়ে দিলাম।কিন্তু মরেই যখন যাব ,তাহলে শেষ বারের মত ঝরনার সাথে আমার নিশ্চয়ই কথা বলতে দেওয়া উচিত। কিন্তু তারা আমাকে তা হতে দিলো না। আমাকে পাঁচ ঘন্টা সময় দেওয়া হলো। এ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে যদি আমি আত্মসমর্পণ করি। তাহলে আমাকে অনেক মোটা অংকের টাকা সহ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর যদি সময় শেষ না হওয়ার আগে কিছু না করি,তাহলে সময় শেষ হওয়া মাত্রই আমাকে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা হবে।

এই কথা শেষ করে তারা চলে গেল।
তারা চলে যাওয়ার পরে আমার মৃত্যুচিন্তা টাও আসছে না আত্মসমর্পণ করার চিন্তাটাও আসছে না। শুধু আমাকে চিন্তাটা ঘিরে রেখেছে ঝরনার সেই অবস্থাটা। এখন বাজে রাত দুইটা। আজ সারাদিন আমাকে না পেয়ে তার ভেতরের অবস্থাটা ঠিক কেমন হয়ে গেছে তা বোঝার শক্তি আমি এতক্ষণে হারিয়ে ফেলেছি।

সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত এখনো ঠিক নিতে পারছি না।এতটা দিন দেশের ভিতরে আন্ডারকভার এজেন্সি গেম খেলে দেশের জন্য কাজ করেছি। আর আজ কিনা আমাকে দেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর জন্য মেরে ফেলার হুমকির সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।

আমি তখন তায়াম্মুম করে নামাজ দাঁড়িয়ে গেলাম।

নামাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে খুব কান্না করলাম। শুধু এটাই বললাম যে, আমাকে আমার ঝর্ণা থেকে বিয়োগ করিও না। দেশের বিরুদ্ধে ও যেন আমাকে কিছু না করতে হয় সেই ব্যবস্থা টাও তুমি করে দিও আমাকে। আমি এসব থেকে মুক্তি পেতে চাই।

কারণ আমি জানতাম। খুব বিপদের সময় আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করে। আর সেই দোয়া টা এমন ভাবে কবুল হয়। যাকে অবিশ্বাস্য বলা যায়।

দুই ঘন্টা হয়ে গেল চুপ করে বসে আছি। ঠিক এমন সময় দেখি, সামনের দরজা দিয়ে কালো টাইট ফিট ড্রেস পড়ে একটা মেয়ে ঢুকছে।

চলবে

Written by- Ibna Imtiaj

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here