জান্নাহ্,পর্বঃ৩৩,৩৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
পর্বঃ৩৩
গত এক সপ্তাহে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মতো চলছে জান্নাহ্ আর সারহানের সংসার।জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একে অপরের সাথে কথা বলে না।সেদিনের কথা বোধগম্য হয়নি জান্নাহ্ এর।শ্রীজা বলেছে সারহান সেদিন কোনো একটা কাজে যাবে।কিন্তু সেদিন ছিলো তাদের বিবাহ বার্ষিকী।তার উপর সকালেই ইহতিশাম জানিয়ে দিয়েছে সে বাসায় আসবে।তাহলে সেক্ষেত্রে সারহানের কোথাও যাওয়ার প্ল্যান কী করে হতে পারে!
টলটল করে উঠে জান্নাহ্ এর চোখ।জান্নাহ্ এর ভাবনার অবসান হয় সারহানের দারাজ গলায়।
“রজনীগন্ধা।”
সপ্রতিভ হতেই জান্নাহ্ খেয়াল করে তার হাত স্টোভের উপরে।খেমটি মেরে সারহান পুনরায় বললো—
“অার একটু হলেই তো হাতটা পুড়িয়ে ফেলতেন।”
জান্নাহ্ অধর কোণে তাচ্ছিল্য হাসে।নিজের উপর মায়াহীনভাবে বললো—
“যার পুরো জীবনটাই পুড়ে গেছে তার হাত পুড়লেই বা কী!
সারহানের দীপ্ত চেহারা ক্ষনকালেই নিষ্প্রভ হয়ে যায়।ম্লান চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে জান্নাহ্ এর দিকে।কিন্তু জান্নাহ্ দেখলো না।তার এই অবহেলায় কেউ একজন নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।
ডিভানে বসে আছে সারহান।বিছানার হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে পা দুটো পিরামিডের মতো করে তার মাঝে বই নিয়ে বসে আছে জান্নাহ্।একটু পরপর তার মেসেজ টোন বেজে উঠেছে।আর তা দেখেই একেক বার একেক রকম মুখভঙ্গি করছে জান্নাহ্।কখনো কপট রাখ,কখনো অভিমান আবার কখনো বা খলখলে হাসি।সারহানের মুখের সামনে রাখা ল্যাপটপের ফাঁকে আড়চোখে তাকায় জান্নাহ্ এর দিকে।আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না কিন্তু আমার শত্রুর সাথে ঠিকই হাসছে।ইচ্ছে করছে মোবাইলটা নিয়ে এখন ভেঙে ফেলে।সারহানের ভাবনায় গুঁতো লাগে জান্নাহ্ হাসির আওয়াজে।আর সহ্য হলো না।ত্রস্ত পায়ে উঠে জান্নাহ্ এর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নেয়।হতচকিত জান্নাহ্ বিছানা থেকে উঠ সরু চোখে তাকায়।চোখা চোখা কন্ঠে বললো—
“কী সমস্যা?
সারহান রাশভারি গলায় বললো—
“জিনিসপত্র গুঁছিয়ে নিন।কাল সকালেই আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো।”
জান্নাহ্ নিষ্কম্প চোখে তাকিয়ে কোনোরকম উল্লেখ যোগ্য প্রতিক্রিয়া ছাড়াই হেয়ালি গলায় বললো—
“কেন!আমি থাকলেই আপনার সমস্যা?
সারহান দৃঢ় চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।নিজের ড্রয়ার থেকে ঢাকা টু ইন্ডিয়ার টিকেটটা এনে জান্নাহ্ এর হাতে দেয়।থমথমে গলায় বললো—
“দেখুন।কাল সন্ধ্যায় আমার ফ্লাইট।আপনাকে বাড়ি রেখে এসে আমাকে যেতে হবে।”
জান্নাহ্ চুপ মেরে টিকেটের দিকে সুক্ষ্ম চাহনি দেয়।সারহান তার ট্রাউজারের পকেটে দুই হাত পুরে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়।ক্ষীন গলায় বললো–
“স্বামীদের সন্দেহ করা স্ত্রীদের জন্মগত অধিকার।আপনিও তার ব্যতিক্রম নন।”
জান্নাহ্ তার অশ্রুসজল চোখ দুটি দিয়ে সারহানকে দেখলো।ভেতর দিকে একটা শ্বাস টেনে বললো–
“বিশ্বাস হলো মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় নিঁখুত,ধারালো আর নিরব হাতিয়ার।যার আঘাতে কোনো মানুষকে নৈঃশব্দে নির্বাক করা যায়।”
সারহান বিগলিত হাসলো।কন্ঠে গভীরতা এনে বললো–
“অনেক কথা বলতে শিখেছেন!
জান্নাহ্ দমদমে গলায় বললো–
“অবুঝ নই আমি।”
ঝলমলে হাসে সারহান।তার এই হাসিই সূঁচের মতো বিঁধে জান্নাহ্ এর শরীরে।সরস গলায় সারহান বললো–
“আমার কাছে তো অবুঝই।”
হেলেদুলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে সারহান।হিমালয়ের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জান্নাহ্।তার হাতে সারহানের ফ্লাইটের টিকেট।জল জমা চোখে অস্পষ্ট দেখছে জান্নাহ্।চকিতে শ্বাসরুদ্ধ করে জান্নাহ্ দৌঁড়ে আসে ড্রয়িং রুমে।আঁতকে উঠে জান্নাহ্।ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ডেকে উঠে—
“সারহান!
সেদিন শপিংমলে গিয়ে একটা কাঁচের জার এনেছিলো জান্নাহ্।তার মধ্যে মাল্টিকালারের পাথরকে পানিতে চুবিয়ে রেখেছিলো।সেটাই ভেঙে তছনছ করেছে সারহান।সাথে নিজের হাত কেটে ফেলেছে।জান্নাহ্ শশব্যস্ত হয়ে এসে উদ্বেলিত গলায় বললো—
“এইসব কী শুরু করেছেন আপনি!পাগল হয়েছেন?
সারহানের মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না।অবিচলিত হয়ে বসে থাকলো সে। মৃদুহাস্য অধর।জান্নাহ্ অধৈর্য হয়ে এক পেঁজা তুলো এনে স্যাভলনের সাহায্যে সারহানের হাত পরিষ্কার করতে থাকে।সারহান তার কাতর চোখে অনিমেষ চেয়ে রইলো জান্নাহ্ এর ওই মোহনীয় চেহারায়।কাত হয়ে পরম আবেশে আলতো হাতে সেই রক্ত মুছে দিচ্ছে জান্নাহ্।কপালের ঘামে তার ফিরফিরে চুলগুলো লেপ্টে আছে কানের দিকটায়।চোখের স্মিত প্লাবণ নাকের ডগা দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে।স্যাভলনসহ তুলো লাগাতেই ঝাঁঝিয়ে উঠে হাত।সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না সারহান।ডান হাতের তর্জনী দিয়ে জান্নাহ্ এর ঘামে সিক্ত চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়।এখন ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে তার রজনীগন্ধাকে।
সারহান তার পিঠ ঠেকায় কাউচে।রহস্য হাসে সে।যে মেয়েটা রক্ত দেখলে অজ্ঞান হয়ে যায় সে আজ দিব্যি সুস্থ!বাঁকা হাসলো সারহান।তার রজনীগন্ধা বড্ড বোকা।এখনো ভালো করে অভিনয় করা শিখেনি।একজন সফল অভিনেত্রী যেকোন পরিস্থিতিতেও নিজের ক্যারেক্টার ধরে রাখে।কিন্তু তার রজনীগন্ধা এতোদিন বেস্ট এক্টরের খেতাবটা পেলেও আজ আর পারলো না।
হাতটা ভালো করে পরিষ্কার করে তার মধ্যে তুলো দিয়ে আপাতত বেঁধে দেয় জান্নাহ্।অসহ্যকর চুলগুলো দুইপাশে নিজের হাত দিয়ে গুঁজে ভেজা অক্ষিপল্লব মেলে তাকায় জান্নাহ্।চোখ দুটো ঢোল হয়ে আছে।নাকের ঢগা লাল রঙ ধারণ করেছে।ফর্সা মুখটা ফ্যাকাশে।সারহান নির্বিকার চাহনিতে দেখছে তার রজনীগন্ধাকে।ধীরগতিতে জান্নাহ্ এর গলার দিকটায় মুখ নামিয়ে আনতেই আর্দ্র গলায় জান্নাহ্ বললো–
“প্লিজ সারহান।”
সারহান স্মিত হাসে।জান্নাহ্ এর অসাঢ় শরীরটাকে সরব হাতে কাউচে শুইয়ে দেয়।তার উপর পুরো ঝুঁকে কানের কাছে হিসহিসিয়ে সারহান বললো—
“এখনো রাগ কমেনি আমার উপর? আজ রাতে যদি আমি মরে যাই সবচেয়ে বেশি আপসোস আপনি করবেন রজনীগন্ধা।”
মাথাটা একপাশে ফিরিয়ে ঝমঝমিয়ে কাঁধে জান্নাহ্।সারহান তার শুষ্ক ঠোঁটের স্পর্শ একে দেয় জান্নাহ্ এর গলার দিকটায়।গভীর আশ্লেষে নিজের প্রশ্বস্ত বক্ষপিঞ্জিরায় আচ্ছন্ন করে জান্নাহ্ এর ছোট্ট মাখনের মতো শরীরটাকে।
,
,
,
কিছু জামা কাপড় রেখে বাকি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুঁছিতে নেয় জান্নাহ্।সকাল সাতটা।তার গোঁছগাছ শেষ।কোমরে হাত দিয়ে গভীরভাবে ভাবছে আর কিছু নেওয়া বাকি আছে কিনা।পেছন থেকে তাকে আলগোছে আঁকড়ে ধরে সারহান।জান্নাহ্ এর ভেজা চুলে ঘ্রাণেন্দ্রিয় গুঁজে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস টেনে নেয়।সারহানের এই স্পর্শ রোবটের মতো আস্বাদন করলো জান্নাহ্।কোমরে জড়ানো সারহানের হাতদুটো ছাঁড়িয়ে তার দিকে ফিরে তাকায়।সারহানের চোখ দুটো অদ্ভুত তৃপ্তিতে হাসছে।জান্নাহ্ একটা শুষ্ক ঢোক গিলে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট চেপে ধরে স্বাভাবিক গলায় বললো—
“আপনি আমাকে মামার বাসায় দিয়ে আসুন।”
সারহান বিগলিত হেসে ফিচেল গলায় বললো—
“কেন!মামা ভাগ্নি মিলে কী আমাকে মারার প্ল্যান করবেন নাকি!
ফকফক করে হেসে উঠে সারহান।তার এই অযাচিত হাসিতে রুদ্ধবাক জান্নাহ্।লোকটা মাঝে মাঝে কী অদ্ভুত কথা বলে!
জান্নাহ্ আনম্র গলায় বললো—
“তিলকে কল করেছিলাম।বললো পরীক্ষা শুরু হতে আরও এক সপ্তাহ বাকি।তাই কয়েকদিন মামার কাছে থাকবো।মামির শরীরটাও ভালো নেই।”
সারহান ভাবলেশহীনভাবে বললো—
“ওকে।এজ ইউর উইশ।”
সারহানের দিকে পূর্ণ নজরে তাকিয়ে সন্দিগ্ধ গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে জান্নাহ্–
“আপনি কী একা যাবেন?নাকি শায়িখ ভাইয়াও যাবে?
সারহান সোজা কন্ঠে বললো—
“একা।”
“কবে ফিরবেন?
“যতদিন কাজ শেষ করতে সময় লাগে।”
জান্নাহ্ মিইয়ে যাওয়া চোখে তাকায়।সারহান উজ্জ্বল হেসে জান্নাহ্কে নিজের বক্ষস্থলে চেপে ধরে।হুসহুসে বললো—
“এইবার যদি ফিরে আসি তাহলে আপনার হয়েই ফিরবো।”
জান্নাহ্ সন্দিহান গলায় বললো—
এইসব কী বলছেন!
সারহান আরেকটু চাপা গলায় বললো–
“আমার জীবনের সত্য যা হয়তো আপনিও জানেন।যান তাড়াতাড়ি করুন দেরি হচ্ছে আমাদের।”
,
,
,
ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা দোহারের একটা ছোট্ট পাড়ায় থাকে জান্নাহ্ এর মামা মামি।প্রায় এক ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করে তারা পৌঁছায় সেখানে।জান্নাহ্কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজেও বের হয় সারহান।কিন্তু ভেতর দিকে যাওয়ার কোনো তাড়া না দেখিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে থাকে।সূর্যের তীর্যক রশ্মি একদম খিঁচে যাচ্ছে সারহানের চোখে।সূর্য উদয়ের বিপরীত পার্শ্বে বাড়ির মুখ হওয়ায় এখান থেকে তার আলো সরাসরি দেখা যায়।পেছন ফিরে সারহানকে দাঁড়াতে দেখে ফিরে আসে জান্নাহ্।সারহানের মুখটা মুহূর্তেই লাল হয়ে উঠেছে কারণ তার এই আলো সরাসরি হজম করা ক্ষমতা নেই।চলাচলের রাস্তা থেকে একটু উঁচুতে বাড়ি।জান্নাহ্ সারহানের সামনে এসে দাঁড়ায়।তার ছায়ায় সারহানের মুখের উপর থেকে তপ্ত রোদ আড়াল হয়।কিঞ্চিৎ মুদিত চোখে জান্নাহ্কে দেখে সারহান।জান্নাহ্ প্রশ্নবিদ্ধ গলায় বললো–
“এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন!ভেতরে চলুন।”
সারহান মাথা নাড়ায়। কোমল গলায় বললো–
“নাহ।আজ আর ভেতরে যাবো না।দেরি হচ্ছে আমার।মামা মামিকে আমার সালাম জানাবেন।”
সারহান গাড়ি ছেড়ে জান্নাহ্ এর সামনে এসে দাঁড়ায়।জান্নাহ্ তার থেকে একটু উঁচুতে হওয়ায় জান্নাহ্ এর বুকের কাছে সারহানের শিয়র।ওয়ালেট থেকে কিছু টাকা বের করে জান্নাহ্ এর হাতে দেয়।জান্নাহ্ সরব গলায় বললো—
“লাগবে না।আমি অলরেডি ফি দিয়ে দিয়েছি।”
“ফি এর জন্য নয়।আপনার দরকারে লাগবে।না লাগলে কাউকে দিয়ে দিবেন।”
জান্নাহ্ এর হাতে ছোট্ট চুমু খায় সারহান।মোহবিষ্ট গলায় বললো—
“ভালো থাকবেন।নিজের খেয়াল রাখবেন।আসি।”
সারহান গাড়িতে গিয়ে বসে।এক্সিলেটরে পুশ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার ওই তৃষ্ণার্ত দুই চোখ আবদ্ধ থাকে তার রজনীগন্ধায়।
যতক্ষন পর্যন্ত সারহানের ধূলো উড়ানো গাড়ি দৃশ্যমান ছিলো ততক্ষন পর্যন্ত জান্নাহ্ পর্বতের মতো সূর্যের সেই গা ঝলসানো রোদে দাঁড়িয়ে রইলো।
চলবে,,,
#জান্নাহ্
#পর্বঃ৩৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
আধপাকা দেয়ালের অপর টিনের ছাউনি।ঘরে ঢুকতেই বসার জন্য ছোট্ট রুম।সেই রুমের ডানদিকে একটা শোভার ঘর।শোভার ঘরটিতে দুটো কাঠের পাল্লার জানালা।কমদামি পাতলা পর্দা টাঙানো।পশ্চিমের জানালা দিয়ে দুরের নদীটা এখান থেকেই দেখা যায়।জান্নাহ্ এর মামা বাতাসের প্রয়োজনে এই দিকটা খালিই রেখেছেন।উত্তরের জানালা দিয়ে কলকলিয়ে বাতাস ঢুকে।সেখানেই জান্নাহ্ এর মামা ছোট বাগান করেছেন।বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছে কলমের ব্যবহার করেছেন।যাদের থেকে বাড়িটি কিনেছিলেন তার সেখানে সুপারি ,মেহগনি ,পেয়ারা,হরতকি ও বহেরার গাছও লাগিয়েছিলেন।জান্নাহ্ এর মামা শরীফ তা আর কাটেন নি।কিন্তু গত মাসে তিনি টাকার প্রয়োজনে মেহগনি গাছটা বিক্রি করে ফেলেন।
বাম দিকে আরেকটা শোভার ঘর।তার পাশেই রান্নাঘর।উত্তরের ঘরটাতেই জানালার শিকে হাত দিয়ে তার কাঠের চৌকাঠের উপর চিবুক লাগিয়ে বসে আছে জান্নাহ্।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।দুইদিন কথা হয়নি সারহানের সাথে।কল ই করেনি।জান্নাহ্ নিজেও করনি।আর পারছে না সে।বারবার তাকেই কেন ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে হবে!সে কী বাধ্য!ভুল করেছে সে।তাই বলে কী সারাজীবন তার প্রতিদান দিতে হবে!অঝোরে কাঁদছে জান্নাহ্।ঘরে কারো পায়ের শব্দে নিজেকে গুঁছিয়ে নেয় সে।চোখ দুটো ভালো করে মুছে তাকিয়ে দেখে শরীফ খাবারের বাটি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।কোনোরূপ শব্দ ছাড়াই জান্নাহ্ এর পাশে বসে।জান্নাহ্ তার অশ্রুতে ভেজা চোখ দুটো লুকানোর চেষ্টায় ব্যস্ত।কিন্তু পারলো না।কারণ সন্তান আর যাই করুক বাবা মায়ের চোখ ফাঁকি দিতে পারে না।
জান্নাহ্ এর মামা শরীফ তার বাবার চেয়ে কম না।অতি নরম গলায় প্রশ্নসূচক বাক্য বললেন শরীফ—
“সারহানের সাথে কথা হয়েছে?
জান্নাহ্ ম্লান গলায় বললো–
“নাহ।মেসেজ করেছে।বললো ব্যস্ত।সময় পেলেই কল করবে।”
জান্নাহ্ বেশি নারকেল দিয়ে,ঘিয়ে ভাজ সেমাই যেটাকে অনেকে ভুনা সেমাই বলে থাকে তা খুব পছন্দ করে।শরীফ নিজ হাতে তা বানিয়ে এনেছে।কথার ফাঁকে তা জান্নাহ্ এর মুখে দিচ্ছে।বিরসমুখে জান্নাহ্ বললো–
“মামিকে কেন ডক্টর দেখাচ্ছো না?
সংক্ষিপ্ত হাসলো শরীফ।মৃদু গলায় বললেন—
“ডক্টর বলেছে বাইরে নিয়ে যেতে হবে।”
জান্নাহ্ ভ্রু নাচিয়ে অধৈর্য হয়ে বললো—
“তাহলে নিচ্ছো না কেন?
শরীফ অত্যন্ত সন্তর্পনে মোলায়েম হাসলেন।স্বাভাবিক গলায় বললেন—
“পরীজান,আপনি নিশ্চয়ই জানেন আপনার মামার সেই সাধ্য নেই।আর আপাতত…।”
জান্নাহ্ শরীফের কথা টেনে নিয়ে আহ্লাদী গলায় বললো–
“এইসব কী বলছো তুমি!কীসের সাধ্য নেই।এতো টাকা দিয়ে আমি কী করবো!
তুমি চেকবই নিয়ে এসো আমি সাইন করে দিচ্ছি।মামিকে তুমি ডক্টর যেখানে বলেছে সেখানে নিয়ে যাও।তাকে এইভাবে দেখে আমার ভালো লাগছে না।”
শরীফ অনুরক্তির সুরে বললেন—
“আপনি জানেন তা সম্ভব নয়।”
জান্নাহ্ তপ্ত গলায় বলে উঠে—
“কেন সম্ভব না!সব সম্ভব।তুমি কী চাও মামি সারাজীবন এইভাবেই বিছানায় পড়ে থাক!আমি মা বাবাকে হারিয়ে ফেলেছি।আর কাউকে হারাতে পারবো না।কাউকে না।”
ঝমঝমিয়ে কাঁদে জান্নাহ্।ব্যগ্র হয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করছে শরীফ।আলতো হাতে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে জান্নাহ্ এর মাথা।বিচলিত গলায় বললেন—
“কাঁদবেন না পরীজান।কাঁদবেন না।আপনার সুখের জন্যই তো এইসব করেছি আমি।আপনি ভালো থাকবেন বলেই করেছি।আপনি এমন করে কেন কাঁদছেন!তাহলে কী আমি ধরে নিবো আপনি ভালো নেই!সত্যিই আপনি ভালো নেই?
জান্নাহ্ বুক কাঁপিয়ে কেঁদে উঠে।তার কান্নার আওয়াজ জান্নাহ্ এর মামি হুসনা বিছানা থেকে শুনতে পান।তার পুরো শরীর প্যারালাইজড।বিছানায় সারাদিন শুয়ে থাকেন।এমনটা ছিলো না।জান্নাহ্ কে একবার ছাদ থেকে পড়ে যেতে লাগলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে ছাদের উপর স্তুপ করে রাখা পুরোনো জিনিসপত্র তার গায়ের উপর পড়ে যায়।তার শরীরের অনেক হাড় ভেঙে যায়।গলায় লোহার রোড ঢুকে যায়।সেই থেকে একটা মৃত লাশের মতো বেঁচে আছে হুসনা।হুসনার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন তিনি জান্নাহ্কে।তার নিজের মেয়ে যখন তাদের ছেড়ে চলে যায় তখন এই জান্নাহ্ই তাদের শূন্য বুকটা পূর্ণ করেছে।
নিজের কান্নার তোড় থামাতে জান্নাহ্ ওড়নার আঁচল মুখে গুঁজে দেয়।শরীফ জান্নাহ্ এর মাথার উপর চিবুকটা রেখে নৈঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।কারণ যেই কারণটা তার জানা তা জিঙ্গেস করে জান্নাহ্কে আর কষ্ট দিতে চায় না সে।আর তাকে কাঁদতেও বাঁধা দিতে চায় না।কারণ নিজের চাপা কষ্ট লাঘব করার একটি উত্তম পদ্ধতি চোখের জলের নিঃসরণ।
“আপন সম্পর্কে যখন কাটা বিঁধে সেই কাটার আঘাতে তখন চোখের জল গড়াবেই।”
প্রায় আধাঘন্টা নিজের মামার বুকে পড়ে কেঁদেছে জান্নাহ্।এতোটা কান্নার পর তার গলা বসে যায়।চোখ দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।চোখের নিচটা ফুলে যায়।বাচ্চারা যেমন অধিক কান্নার পর কিছু একটা পেয়ে নিজের সব কান্না ভুলে যায় জান্নাহ্ও তেমন করলো।চোখের পানি দুই হাতে মুছে নিয়ে গ্যারগ্যারে গলায় বললো—
“আপুর সাথে কথা হয়েছে?কবে ফিরবে সে?
মুখভর্তি হাসলেন শরীফ।বললেন—
“বললো এই সপ্তাহেই ফিরবে।”
জান্নাহ আনন্দিত গলায় বললো–
“এইবার আপু ফিরলে তাকে একটা বিয়ে দিয়ে দিবে।”
ফোঁস করে দম ছাড়লেন শরীফ।হতাশ গলায় বললেন–
“ও কী রাজী হবে!ওই ছেলের ধোঁকা এখনো ভুলতে পারেনি ও।”
জান্নাহ্ ব্যস্ত হয়ে বললো–
“কেন পারবে না!জীবন কী কারো জন্য থেমে থাকে!আপুর সাথে যা হয়েছে অনেকের সাথে তা হয়।তাই বলে কী সারাজীবন তা মনে রাখতে হবে।আপু একটা ভুল করেছে।আর ভুলটা আপুর নয়।ওই ছেলেটার।ওই জঘন্য ছেলে আপুকে ধোঁকা দিয়েছে।তুমি দেখো একদিন না একদিন ওই ছেলে তার পাপের সাজা পাবেই।”
শরীফ নীরস গলায় বললেন–
“তার আগে তো আমার মেয়েটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
জান্নাহ্ অনুনয়ের গলায় বললো–
“তুমি মন খারাপ করো না।তোমাকে একটা জিনিস দেখাই।”
জান্নাহ উচ্ছ্বাসিত হয়ে ইহতিশামের কার্ড টা বের করে।ঝলমলে গলায় বললো—
“এইটা তিশাম ভাইয়ার কার্ড।সারহানের বন্ধু।খুব ভালো ছেলে।আপু আসলে তুমি তার সাথে একবার কথা বলতে বলো।”
শরীফ আক্ষেপের গলায় বললেন–
“সব জেনেশুনে কী ছেলেটা রাজী হবে ওকে বিয়ে করতে?
জান্নাহ্ কিছুক্ষন থম মেরে মুখ খুললো।সরব গলায় বললো–
“তিশাম ভাইয়া অনেক বুদ্ধিমান আর বিচক্ষন।সে নিশ্চয়ই বুঝবে।আর আমার আপু কী দেখতে কম নাকি!আর এতো ভালো জব করে।তুমি দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
শরীফ শ্রান্ত মুখে কার্ডটা নিয়ে যত্নে রাখলেন।জান্নাহ্ উঠে গিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।দুরের নদীটা এখান থেকে দেখা যাচ্ছে।সূর্যের প্রখর রশ্মিতে যেনো ধৌঁয়া হয়ে উড়ে যাচ্ছে নদীর শান্ত জলরাশি।আকাশটাও গনগনে প্রভাকরের দীপ্তাতায় ঝকঝক করছে।পাশ থেকে কাঠঠোকরার কাঠ ঠোকরানোর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।নদীর দিকে উন্মনা হয়ে নির্নিমেখ চেয়ে আছে জান্নাহ্।ভাবুক গলায় বললো–
“বাবা বলেছিলো তার পরে আমার গাইড হবে রাফাত।আর আমি কি না ওকেই ছেড়ে দিলাম!আজ ও আমার সাথে থাকলে হয়তো এই ভুলগুলো আমি করতাম না।”
শরীফ ভাবিত নয়নে তাকিয়ে আছে জান্নাহ্ এর দিকে।জান্নাহ্ তার নাম্বার চেঞ্জ করেছে বলে রাফাত তার সাথে যোগাযোগও করতে পারছে না।
জান্নাহ্ অনুযোগের সুরে বললো–
“ঠিকই হয়েছে।কাউকে কষ্ট দিলে সেই কষ্ট নিজেকেও পেতে হয়।আমি রাফাতের ভালোবাসা কখনো বুঝতে পারি নি।কোনোদিন চাইওনি বুঝতে।ওর ভালোবাসাকে নিছক বন্ধুত্বের নাম ছাড়া আমি কিছুই দিতে পারি নি।আর দেখো যাকে ভালোবেসেছি সে প্রতি মুহূর্তে আমাকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে।”
আরেক পশলা অশ্রুসিক্ত হয় জান্নাহ্ এর অক্ষিদ্বয়।তার প্রস্ফুরনিত ওষ্ঠাধর কামড়ে ধরে রেখেছে সে।জান্নাহ্ আবারো ধরা গলায় বললো–
“বাবা থাকলে এই ভুল আমি কখনো করতাম না।কখনো সারহানকে বাবার জায়গায় বসাতাম না।আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি সারহানকে ভালোবেসে।তোমাকেও কষ্ট দিচ্ছি আমি।”
শরীফ ভেজা গলায় বললো–
“এমন করে বলে না পরীজান।ভালোবাসা সব করতে পারে।আরে ভালবাসাতো পাথরেও ফুল ফোটাতে পারে।মৃত নদীতে স্রোত তৈরি করতে পারে।আর আমার পরীজান কোনো সাধারণ মেয়ে নয়।সে তো ভালোবাসার আধার।সে কখনো হারবে না।তার ভালোবাসা দিয়েই সে তার ভালোবাসাকে জয় করবে।”
জান্নাহ্ দৌঁড়ে এসে তার মামাকে জড়িয়ে ধরে।শরীফের বুকের অংশের পাঞ্জাবীটা ভিজে যায় জান্নাহ্ এর চোখের জলে।
,
,
,
মুম্বাইয়ের একটি সুনসান এলাকা।রাত প্রায় বারোটা।অগোছালো পায়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে সারহান।রাস্তায় তেমন গাড়ি নেই।প্রায় মিনিট বিশেক পর এক একবার বড় লরি বা ট্রাক যায়।দু’ধারে ঘন জঙ্গল।তবে হিংস্র প্রাণির আনাগোনা নেই বললেই চলে।দিনের বেলা মানুষে সরব হয়ে থাকা রাস্তাটা রাত হতেই নিরব,নিস্তব্ধ।
সারহান একটা বোর্ডের সামনে এসে দাঁড়ায়।এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটা এলাকার গতিপথ লেখা।তার পাশেই দাঁড়ায় সারহান।বেশ কয়েকটা ট্রাক যাওয়ার পর একটা ট্রাক এসে থামে সারহানের সামনে।সারহান অবিচলিতভাবে তাকায়।ট্রাক থেকে নেমে আসে খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা একটা লোক।গায়ে ঘামে ভেজা চেক শার্ট।গলার সাথে একটা গামছা নয় তবে সেইরকম কিছু একটা ঝোলানো।চুলগুলোতে কয়েকমাস হাত পড়েনি মনে হচ্ছে।গা দিয়ে ঘামের ভোটকা গন্ধ।সারহান স্থির দাঁড়িয়ে আছে।লোকটি তার কাছে এসেই বললো–
“সালাম সাভ।”
প্রত্যুত্তরে সারহান বললো—
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
লোকটি এদিক ওদিক চোরা চোখে তটস্থ হয়ে তাকালো।গলায় ঝোলানো কাপড়টা দিয়ে মুখের ঘাম মুছে নিলো।ঘামের গন্ধের সাথে সস্তা মদের উটকো গন্ধ এসে ঠেকে সারহানের ঘ্রাণেন্দ্রিয়তে।নিজেকে তবুও দৃঢ় রাখে সারহান।লোকটি সারহানের কাছে চেপে এসে মিনমিনে গলায় বললো–
“ক্যায়া কাম হে সাভ?জালদি বাতাইয়ে।”(কী কাজ সাহেব?তাড়াতাড়ি বলেন)
সারহান একটা মুক্ত শ্বাস নিলো।সরব গলায় বললো—
“উনুনে তুমহে কুছ ন্যাহি বাতায়া?(তিনি তোমাকে কিছুই বলেনি?)
লোকটি খসখসে গলায় বললো–
“বাতায়া তো থা।পার আপ আগার ডিটেলস মে কাহেঙ্গে তো মেরে লিয়ে আচ্ছা হোগা।”(আপনি যদি বিশদভাবে বলেন তো আমার জন্য সুবিধা হবে।)
সারহান লোকটি কে একটা ছবি দেয়।তার সাথে আরেকটা ছবি এড করে যা হাই কোয়ালিটির ফটোশেপ এপ দিয়ে করা।লোকটি চোখ কুঁচকে মোবাইলের আলোতে ভালো করে দেখে হেয়ালি গলায় বললো–
“ইয়ে লারকি তো আচ্ছা হ্যায়।পার ইস বুড়িয়াকা ক্যায়া কারেঙ্গে?(এই মেয়ে তো ঠিক আছে।কিন্তু এই বৃদ্ধাকে দিয়ে কী করবেন?)
সারহান দারাজ গলায় বললো—
“জো কাহা গায়া হ্যায় বো কারো।জিতনা প্যায়সা চাহিয়ে মে দুঙ্গি।জিতনা ওয়াক্ত চাহে লো।পার মুঝে ইয়ে ওরাত চাহিয়ে।”(যা বলা হয়েছে তাই করো।যত টাকা লাগবে আমি দেবো।যত সময় লাগে নাও।কিন্তু এই মহিলাকে আমার চাই।)
লোকটি ছবিটা শূন্য উঠিয়ে ধরলেন।ছবির কোনায় দুটো টোকা মেরে বললো–
“খোদা কাসম।আগার ইয়ে ওরাত জিন্দা হ্যায় ওর ইস লাইনমে হ্যায় তো হাম ইসে জরুর ডুন্ডলেঙ্গে।”(আল্লাহ্ কসম।যদি এই মহিলা জীবিত থাকে আর এই সবকাজেই থাকে আমরা ঠিক খুঁজে বের করবো।)
প্রশ্রয়ের হাসি হাসলো সারহান।লোকটি কপালে হাত উঠিয়ে বললো–
“সালাম সাভ।ফের মোলাকাত হোগি।”(সালাম সাহেব।আবার দেখা হবে।)
লোকটি ট্রাকের কাছে গিয়ে আবার ফিরে এসে জিঙ্গাসু গলায় বললো–
“এক সাওয়াল হে।ইয়ে লাগতা কোন হ্যায় আপকে?(একটা প্রশ্ন।উনি কী হয় আপনার?)
সারহান বিক্ষিপ্ত গলায় বললো–
“হেয় কোই।যিসকি ওয়াজাসে ম্যায় ইস দুনিয়ামে হু।যাও আব।”(কেউ একজন।যার জন্য আমি এই দুনিয়াতে।যাও এখন।)
হোটেলে ফিরে এসে একটা লম্বা শাওয়ার নেয় সারহান।দুই দিন পাগলের মতো কেটেছে তার।মুম্বাইয়ের বেশিরভাগ ব্রোথেল ঘোরা শেষ তার।অবশ্য তার জন্য একজন পুলিশের সাহায্য নিয়েছে।
বিছানায় বসেই ধপাস করে গা এলিয়ে দেয় সারহান।হোটেলটা অতোটা উচ্চ মানের নয়।সারহান ইচ্ছে করেই এমন জায়গা বেছে নিয়েছে।ভালো মানের হোটেলগুলোতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় পরিচয় লুকাতে।
সারহানের চোখের সামনে তার সেই ছোট্ট রজনীগন্ধার মায়া ভরা চেহারাটা ভেসে উঠে।দু’দিন তার কন্ঠ পর্যন্ত শুনতে পায় নি।মোবাইলটা নিয়েই কল করে জান্নাহ্কে।বেশ কয়েকবার রিং হলেও জান্নাহ্ রিসিভ করলো না।খিস্তি মেরে উঠে সারহানের মস্তিষ্ক।ক্ষোভ নিয়ে স্বগতোক্তি করে বললো–
“একদিন এই মেয়েটা আমাকে শেষ করেই ছাড়বে।”
রাগে ইচ্ছে করছে মোবাইলটা গুড়িয়ে দিতে।নিজেকে শান্ত করলো সারহান।তার রুমের বেল বেজে উঠে।আরেক দফা মেজাজ খারাপ হয় সারহানের।দু’দিন এক দন্ড ঘুমাতে পারেনি সে।খেয়েও এসেছে বাইরে থেকে।এখন আবার কে এলো!
সারহান বিগড়ে যাওয়া মস্তিষ্কে দরজা খুলেই চিবিয়ে চিবিয়ে বললো—
“কী হয়েছে?এখানে কী?এতো রাতেও শান্তি নেই!কেমন হোটেল এইটা?
ছেলেটি কাঁপা কাঁপা হাতে একটা কাগজ দেয় সারহানের হাতে।কম্পিত গলায় বললো–
“এইটা আপনার।”
ছেলেটি আর দাঁড়ালো না।চঞ্চল পা জোড়া চালিয়ে দ্রুত ত্যাগ সেই স্থান।সারহান দরজা লাগিয়ে ঘরে এসে বসে।খামটি খুলে একটা চিরকুট পায়।তাতে লেখা—
“মৃতের ছায়ায় আহাজারি
সুখের ছোঁয়ায় মহামারি,
যতই পাক তৃষ্ণা
হারিয়ে তুই যাসনা।”
সারহানের চোখের পাল্লা কাঁপছে।তার নজর গিয়ে পড়ে মোবাইলে।তা ভাইব্রেট হচ্ছে।শ্রীজা কল করেছে।
চলবে,,,