টপ টেন মডেল,পর্বঃ১
ঋতু_পান্না
বিয়ের ঠিক আগের রাতে নিজের হবু বর আর বোনের মতো বেস্টফ্রেন্ডকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তনিমা।
তনিমা! তনিমা নামের অর্থ ‘সৌন্দর্য ‘। আর তনিমাকে দেখলেই তার নামের স্বার্থকতা এবং তার ব্যাবহার ও শারিরীক সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। পেশায় মডেল হওয়ায় তার জিরো সাইজ ফিগার খুবই আকর্ষণীয়। নিজের ব্যাচেলার লাইফের শেষ পার্টিতে অতিরিক্ত মদ্যপান এবং নাচানাচির ফলে অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়ে। তার হবু বর আবির তাকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে শুয়িয়ে দেয়। ঘন্টাখানেক পর কিছু অদ্ভুত শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তনিমার। পিটপিট করে চোখ মেলে সে ডিম লাইটের আলোতে নিজেকে আবিরের ফ্ল্যাটে আবিষ্কার করে। আবিরের কেয়ার দেখে নিজের মনেই হেসে উঠে। কিন্তু পরক্ষণেই যেটা দেখল সেটা তার মন মানতে চাই না।
এটা কি সেই আবির! যাকে ভালোবেসে তিলে তিলে গড়ে তোলা মডেল হওয়ার স্বপ্নকে মেরে ফেলেছিল। নিজের পরিবার ছেড়ে কোটি টাকার প্রোপার্টি ফেলে আবিরের কাছে এসেছিল।
-“উফ, থামো শবনম! তনিমা এখনই ঘুম থেকে উঠে যাবে।” শবনমের কোমরে নিজের হাত রেখে কথাটি বলল আবির।
-“কেন?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে শবনম।
-“কাল থেকে তোমরা হাজবেন্ড ওয়াই হয়ে যাবে। আর এখন থেকেই বউকে ভয় পাচ্ছ আবির। আজ রাতটা আমরা এনজয় করব।” আবিরকে কাছে টেনে কথাটি বলল শবনম।
-“কিন্তু তনিমা উঠে গেলে প্রবলেম হয়ে যাবে।” বিছানার দিকে তাকিয়ে বলল আবির।
তারা ভাবছে তনিমা ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু তনিমা সবই দেখছে আর শুনছে। দুঃখের বিষয় নিজের সবচে বড় দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি আবির তাকে এমন ভাবে ঠকাবে।
শবনম এবার খানিকটা রেগে গিয়ে বলে,
-“নো বেবি, কিছুই হবে না। পাশের রুমে চলো।”
-“ওকে বেবি।লেটস্ গো।”
-“তুমি যাও। আমি আসছি!” বলেই রোমান্টিক একটা লুক নিয়ে আবিরের বুকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে আবিরকে রুম থেকে বের করে দেয়।
আবির চলে যেতেই শবনম তাকায় বিছানার দিকে। তনিমা সঙ্গে সঙ্গেই চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে যেন, এখানে যা লীলাখেলা চলেছে তা সে কিছুই দেখেনি। তনিমার কাছে এসে কিছুটা তার দিকে ঝুঁকে সে মুচকি হেসে বলতে লাগল,
-“কি তনিমা নিজের বিয়ের স্বপ্ন দেখছ? দেখোনা দেখোনা! কারন যতদিন আমি বেঁচে আছি আবির শুধু আমার। ও হ্যাঁ! একটা গুড নিউজ দিতে ভুলে গেছি। আমি প্রেগন্যান্ট। আর বাচ্চার বাবা কে জানো? আবির!”
কথাগুলো বলেই অদ্ভুত এক হাসি হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
তনিমার গা রি রি করে ওঠে। কতটা বেহায়া, নির্লজ্জ এই শবনম! তনিমার ইচ্ছা করছিল এই বেহায়ার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিতে।
তিন বছর আগে কলকাতার নামী মডেল ছিল তনিমা। নাম, যশ, খ্যাতি কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। কিন্তু নিজের সবকিছুকে জলের মতো ভাসিয়ে দিয়েছিল শবনমকে জায়গা করে দিতে। তাও আবার আবিরের কথায়। আর আজ সেই শবনমই তার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিল।
আবির এটা কিভাবে করতে পারে তার সাথে!
না এগুলো দুঃস্বপ্ন। কাল সকালে সব ঠিক হয়ে যাবে। এগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় তনিমা।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায় তনিমার। মেয়েটা এতোটাই বোকা যে সে ভাবে, আবিরের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা আর অতিরিক্ত ড্রিংক করার কারনে উল্টাপাল্টা ভাবছে। কিন্ত শবনমের কথা মনে আসতেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। বিছানা ছেড়ে গোসল করে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসের যাওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগল সে।
এদিকে সারারাত শবনমের সাথে কাঠিয়ে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে তনিমার রুমে আসে আবির। ভাবখানা এমন যেন কিছুই হয়নি।
-“গুড মর্নিং মাই লাভ। লাল বেনারসিতে তোমাকে যা লাগছে! উফ! ইচ্ছে করছে এখনই বিয়ে করে ফেলি। তাড়াতাড়ি করো। আমাদের যেতে হবে।”
আবির যতই নাটকীয় ভাবে কথাগুলো বলুক তনিমা আজ বুঝতে পারছে কতটা বেপরোয়া ভাবে মিথ্যা বলতে পারে এই আবির!
আসলে তনিমার মাথায় তখন একটাই কথা ঘুরতেছিল শবনম ঠিক কি প্ল্যান করেছে তাদের বিয়েটা আটকানোর।
মুখে একটা মেকি হাসি টেনে তনিমা বলল,
-“চলো, আমিও রেডি।”
গাড়িতে উঠে আর কোনো কথা হলো না তাদের। আর ঠিক ২ ঘন্টার মধ্যে তাদের বিয়েটা হয়ে যাবে। তাহলে কাল রাতে যা হলো সেগুলো কি সত্যি ছিল। তনিমা ফুল কনফিউজড। রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে আসতেই আবিরের ফোনে একটা কল আসে।
আবির ফোনটা তুললে ওপাশ থেকে শবনম কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে,
-“আহ! আবির আমি বাথরুমে পড়ে গেছি। উঠে দাঁড়াতেও পারছি না। প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি আসো।”
আবির নার্ভাস হয়ে বলে উঠে,
-“আমি পাঁচ মিনিটেই আসছি।” আর তনিমার দিকে তাকিয়ে বলে, “চিন্তা করো না, আমি এখনই চলে আসব।”
প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু আবিরের আসার কোনো নাম গন্ধই নেই। তনিমা জানে আবির আজ আসবে না। তবুও ধৈর্য ধরে তনিমা লাস্ট বারের মতো কল দেয় আবিরের ফোনে। প্রথম বার কেউ কল তোলে না। দ্বিতীয় বার আবির কল রিসিভ করলে,
-“আবির কোথায় তুমি? আমি অপেক্ষা করছি।”
-“কিসের জন্য অপেক্ষা করছ শুনি!” বিরক্তি নিয়ে বলল আবির।
-“আবির আজ আমাদের বিয়ে।” উওেজিত হয়ে।
-“বিয়েটা অন্য কোনো দিন করে নেয়া যাবে।” বলেই ফোনটা কেটে দেয় আবির।
হঠাৎ রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে এক সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যাক্তিকে দেখে চোখ আটকে যায় তনিমার। সে আর কেউ না, এ তো রাজ চৌধুরী! সিনে এন্টারটেইনমেন্টের সিইও। কিন্তু উনি এখানে কেন?
গাড়ি সামনে দাঁড়িয়ে একটা কল রিসিভ করেলেন উনি। ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে,
-“সরি রাজ। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।”
ফোনটা কেটে রেগে উনার এসিস্ট্যান্টের শার্টের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন,
-“তোমাকে ৩০ মিনিট সময় দিচ্ছি। আমার জন্য পাএী খুঁজে নিয়ে এসো। গো নাও!”
হঠাৎ তনিমা এসে সরাসরি বলল,
-“আমাকে বিয়ে করবেন…
চলবে…