টপ_টেন_মডেল,পর্ব:৬

0
2425

টপ_টেন_মডেল,পর্ব:৬
ঋতু_পান্না

-“স্যার তিন বছর আগে তনিমা সেনের মডেলিং পজিশন অনেক হাই ছিল। আবির আহমেদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন। যার কারনে তার পরিবার আর তাকে মেনে নেই নি। আবিরের কাছে চলে আসার পর থেকে তার সো করা কোনো কারনে অনেক কমে গিয়েছিল। মূলত অনেক বড় বড় এজেন্সি থেকে কাজের অফার আসলেও তনিমা ম্যাম সেগুলো ফিরিয়ে দেন। যতটুকু ধারণা করা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আবির স্যারই চাননি তনিমা ম্যাম অন্য বড় কোনো এজেন্সির সাথে কাজ করুক। কিন্তু সবাই জানে আবির আহমেদের সাথে অবৈধ সম্পর্কের কারনে ম্যাম ব্যানড হয়ে গিয়েছিলেন। গুন্জন আছে তাদের বিয়ের কথাও চলছে।”

রাজের এসিস্ট্যান্ট একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল আর সে খুব ধৈর্য সহকারে প্রতিটি কথা শুনল। আর ভাবতে লাগল, যে মেয়ে সেন পরিবার ছেড়ে আবির আহমেদের মতো সাধারণ একটি ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে আসতে পারে সে মেয়ের হৃদয় সাধারণ হতেই পারে না। এই মেয়ের রুপের সাথে মনটাও অসম্ভব রকম সুন্দর! আরো কিছু সময় খুব মনোযোগ সহকারে কিছু ভাবল সে।

-“অন্বেষা, তুমি পিক আর ভিডিও কালেক্ট করতে পেরেছ।”
ফোনের ওপাশ থেকে অন্বেষা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
-“তনিমা তুমি ঠিক আছো তো?”
-“হ্যাঁ, আমি লাস্ট আরেকবার আমার ভাগ্যটা যাচাই করতে চাই। শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটা আমিও দেখতে চাই!”
খুব শান্ত এবং ধীরভাবে জানাল তনিমা।

-“বিকালে তোমার সাথে মিট করছি।”

তনিমা এবার ঠিক করেই নিয়েছে সে আর কাঁদবে না। আবিরের মতো বেইমানের জন্য কাঁদার কোনো মানেই হয় না।

তনিমার ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাজ। সে তনিমার সাথে দেখা করতে এসেছে, নিজের মনের কথা বলতে এসেছে। কারন তার আর বুঝতে বাকী রইল না যে সে এই তনিমা সেনের প্রেমে পড়ে গেছে। সেও যে এরকম অসাধারণ হৃদয়ের মালিককে খুঁজছে।
সে ভাবছে রাজ চৌধুরিকে দেখে তনিমার রিয়েকশন কেমন হবে! কিন্তু তনিমার মুখ দেখে তার ভাবখানা বুঝতে পারল না সে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে তনিমা খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে উঠল,
-“আপনি এখানে! আচ্ছা বসুন।”

কাজের মেয়েটিকে ডেকে রাজের জন্য হালকা নাস্তার ব্যাবস্হা করতে বলল।

রাজ খেয়াল করল তনিমাকে কেমন অগোছালো লাগছিল হয়ত অনেকক্ষণ কান্না করার ফলে নিজের যত্ন নেওয়ার সময় হয়ে উঠেনি।
খানিকক্ষণ নীরবতা পালন করে রাজই প্রথমে মুখ খুলল, সে বুঝতে পারল তার খুব নার্ভাস লাগছে কোথা থেকে কি দিয়ে শুরু করবে তা বুঝে উঠতে পারছিল না।
নিজের মনের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে বলেই ফেলল,

-“দেখুন তনিমা, আমাকে আপনার বাসায় দেখে হয়ত খুবই অবাক হয়েছেন। আমি কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে পছন্দ করি না। তাই সরাসরিই বলছি আই লাভ ইউ এন্ড আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ। উইল ইউ মেরি মি।”
তনিমার চোখে চোখ রেখে এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলল রাজ।

কথাগুলো বলা শেষ করে সে তনিমার দিকে স্হির দৃষ্টি রেখে তাকিয়ে রইল, ওর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে কিছু বুঝে উঠতে পারল না সে। তবে এটুকু বুঝল তনিমা খুব অবাক হয়েছে। অবাক হওয়ারই কথা সিনে এন্টারটেইনমেন্ট-এর প্রেসিডেন্ট তার মতো একটা ব্যানড হওয়া মডেলকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।
তনিমা নিজের মনেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। কিন্তু সেটা বাইরে প্রকাশ করল না।

রাজ কিছুই বুঝতে পারল না। তাই আবারও বলতে লাগল,

-“দেখ তোমাকে এখনই কিছু বলতে হবে না। টেক ইউর ওউন টাইম। বাট আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। সবরকম বিপদে তুমি আমাকে তোমার পাশে পাবে।”

তনিমা এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তখনই কাজের মেয়েটি রাজের সামনে কিছু নাস্তা দিল।
রাজ আবারও তনিমার দিকে তাকিয়ে,

-“তুমি কী কিছুই বলবে না! তবে যাইহোক তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও তুমি আমার।” শেষের কথাটি খুব আত্নবিশ্বাসের সাথে বলল রাজ।

তনিমার মুখের ভাবভঙ্গি দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না রাজ। তাই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় পিছনে ঘুরে,
-“আর সেদিনের ব্যাবহারের জন্য আই’ম সরি। আসলে সেদিন মাথায় প্রচুর রাগ ছিল আর মডেল সম্পর্কে এরকম নিউজ পেলে নিজের রাগটা সামলাতে পারি না। সরি!”

বলেই গেইট দিয়ে বের হয়ে গেল রাজ। এদিকে তনিমা উঠে নিজের রুমে চলে আসল। সে রাজের বিষয়টা নিয়ে কোনোরকম পাত্তাই দিল না। কেননা এতদিনে তার ধারণা হয়ে গেছে এই সেলিব্রেটিরা কখনোই কাউকে মন থেকে ভালোবাসতে জানে না। ওদের কাছে ভালোবাসা মানে হলো মোহ। মোহ কেটে গেলেই যে যার রাস্তায়। তাই সে বিষয়টিকে গুরুত্বই দিল না।

-“তনিমা আমদের পরের প্ল্যান কি হবে? আবির আর শবনমের হসপিটালে থাকাকালীন কিছু পিক কালেক্ট করতে পেরেছি।”
তনিমার সামনে বসে এই খবরটি দিল অন্বেষা।
-“কাল সকালে শবনমের সো। এখন তুমি বাসায় গিয়ে সন্ধ্যায় আবির আর শবনমের পিকগুলো বড় বড় কিছু নিউজ এজেন্সির কাছে বিক্রি করে দিবে।”
-“আমি বুঝে গেছি কি করতে হবে।” এরপর ওরা আরো কিছু কথা বলল।

যথারীতি সন্ধ্যায় মিডিয়া জুরে আলোচনার ঝড় শুরু হল। ‘পরী এন্টারটেইনমেন্ট’- এর সিইও এবং মডেল শবনম ফারিহার অশ্লীল কিছু ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে গেল। যা দেখে শবনম আর আবির দু’জনেই ভয়ানক রকম অবাক হল। এসব ছবি পাবলিক কী করে হতে পারে!

একের পর এক কল আসতে লাগল সাংবাদিকদের তরফ থেকে। যেসব কোম্পানির সাথে পরীর ডিল ছিল তাদের কাছ থেকেও কল আসতে লাগল।
-“আবির আমাদের বিরুদ্ধে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তুমি কিছু কর, আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।” ভীষণ রকম উদ্বিগ্ন হয়ে আবিরকে তাগিদ দিল শবনম।

আবির তার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের এসিস্ট্যান্টকে ডেকে বলল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা প্রেস কন্ফারেন্সর আয়োজন করতে।
-“তুমি কি করতে চাইছ আবির?”
-“শবনম তুমি শুধু বলবে যে আমাদের মধ্যে কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই। আমি শুধুই তোমার বস। আর কিচ্ছু না এবং এই ছবিগুলো ইডিট করা। আমি আমায় সাংবাদিক বন্ধুদের বলছি এই নিউজটা যেন হেডলাইন থেকে সরিয়ে দেই।”

বলেই ফোনটা হাতে নিয়ে তড়িঘড়ি করে কাউকে কল দিল।
অতঃপর মিডিয়ার সামনে শবনম জানাল ছবিগুলো ইডিট করা। তাদের মধ্যে সেরকম কোনো সম্পর্ক নেই।

-“ম্যাম আমরা কেউ বাচ্ছা নই যে এটা বুঝতে পারব না একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ঐ অবস্থায় ঠিক কী করতে পারে!”
এক মধ্যবয়সী মহিলা সাংবাদিক কথাটি বলে উঠল।

-“দেখুন আমি আবারও বলছি আবিরের স্যারের সাথে আমার কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই। নাও ইউ মে গো।”
বলেই সাংবাদিকদের সামনে থেকে সরে এল সে। সাংবাদিকদের হাজার রকমের প্রশ্ন, তাই গার্ড ডেকে তাদের অফিসের বাইরে বের করে দেওয়া হল।

পরিবেশ খানিকটা ঠান্ডা হতেই আবিরের অফিসে তনিমা এসে উপস্থিত হল। আসলে সেই মুহূর্তে আবির ভুলেই গিয়েছিল এই নিউজটি দেখে তনিমার ঠিক কি রিয়েকশন হতে পারে। তাই তনিমাকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। মন খারাপের ভাব মুখে এনে ন্যাকামি সুরে বলতে লাগল,
-“তনিমা তুমি তো আমাকে ভালোবাস। তুমি প্লিজ বিশ্বাস কর আমি তোমাকে ঠকায় নি। আমার কারো সাথেই কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো সবই ফেইক।”
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলতেই থাকল সে।

হঠাৎ তনিমা আবিরের গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে দিল।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here