টপ_টেন_মডেল,পর্বঃ০৭

0
2520

টপ_টেন_মডেল,পর্বঃ০৭
ঋতু_পান্না

ঘটনার আকস্মিকতায় কি হল সেটা রাজ বা শবনম কেউই বুঝতে পারছিল না।
-“তুমি আমাকে মারলে!” ভয়ানক রকমের বিস্ময় নিয়ে বলল আবির।
তনিমার এরুপ কাজে শবনম খুবই রেগে গেল।
-“তনিমা এটা তুমি কি করলে?”
-“ভুলে যেও না আই’ম ইয়োর বস!” আত্নবিশ্বাসের সাথে জানাল আবির।
তনিমা সরাসরি ওর দিকে তাকিয়ে,
-“হ্যাঁ, আমি জানি আমি কে। তবে আবির থাপ্পড়টা আমি পরীর মডেল হিসাবে দেই নি। দিয়েছি তোমার প্রেমিকা হিসাবে। আমাকে ঠকানোর শাস্তি।”
বলেই অফিস থেকে বের হয়ে গেল সে। আর রাগে ফুঁসতে লাগল শবনম এবং আবির।

-“আহ! কিয়া সিন হ্যায়! তুমি যখন আবিরকে থাপ্পড়টা মারলে না তখন কী যে ভালো লাগছিল! দেখ আমি তো ভিডিও করে রেখেছি।”
অন্বেষার কথায় মৃদু হাসল তনিমা।
-“তবে তনিমা সমস্ত হেডলাইন থেকে ওদের ছবিগুলো ডিলিট করে দেওয়া হয়ছে।”
-“কোনো ব্যাপার না। আমাদের কাছে তো আরো প্রুফ আছে। কাল শুধু সময় মতো ওগুলো রিলিজ করবে। তারপর আমিও দেখি ওরা কত মিথ্যা বলতে পারে।”

একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে আবারও বলল,
-“আবিরকে থাপ্পড়টা মারতে আমার কোথাও একটা কষ্ট লাগছিল কিন্তু এখন ভিতর থেকে অনেকটা শান্তি লাগছে!”

এদিকে আবিরের রুমে বসে আছে শবনম। আবিরের মধ্যে তনিমার জন্য ভয়ঙ্কর রাগ থাকলেও সে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা সে জানে এই মুহূর্তে মাথা গরম করা মানে নেহাতই বোকামি।
-“কালকের সো’র জন্য নিজেকে রেডি কর।”
শবনম তখন ফ্যানদের কমেন্ট পড়ছিল। আসলে সে কিছুসময় আগে কালকের সো নিজে নিজের অফিসিয়াল পেইজ থেকে পোস্ট করেছিল। আর ফ্যানেরা তাকে নানাভাবে উইশ করছিল। সাথে তনিমাকে ধুঁয়ে দিচ্ছিল। সেগুলো পড়তে পড়তে তার মুড বেশ ভালো ছিল। আবিরের কথা শুনে ফোন বিছানায় ফেলে আবিরের কাছে এসে,
-“কাল তোমরা এক অন্য শবনমকে দেখবে।”
আত্নবিশ্বাসের সাথে বলল সে।

পরদিন সকাল ৮ টা। সকাল ১০টায় ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির সাথে তার স্বপ্ন সত্যির সো। তাই সে বেশ উৎফুল্ল। কিন্তু হঠাৎই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ৩৯ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল। ভিডিওটি ছিল শবনম আর আবিরের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ক্লিপ। সবাই জানত আবির আর তনিমা দুজনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে। সবাই শবনমের নামে ছি ছি করতে লাগল আর তনিমার রিয়েকশনের অপেক্ষায় ছিল।
কিন্তু শবনমের কাছে এটা এখন বড় ব্যাপার ছিল না। তার ভয় হতে লাগল সে তার টপ টেন মডেল হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে তো! সোশ্যাল মিডিয়া জুরে ভিডিওটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল।
-“আবির! এটা কি করে হতে পারে!”
প্রচণ্ড রকমের ভয় নিয়ে বলল শবনম।
-“আমিও তো সেটাই ভাবছি। আচ্ছা দাঁড়াও।”
বলেই তড়িঘড়ি করে কাউকে একটা ফোন দিল এবং কথা শেষ করে শবনমকে অভয় দিয়ে বলল,
-“টেনশন করো না, কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিডিও ক্লিপটা মিডিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।”

সময় পেরিয়ে যেতে লাগল কিন্তু ভিডিওটি মিডিয়ার হেডলাইনেই রয়ে গেল।
-“তনিমা! তুমি কেন শবনমের প্রেগন্যাসি রিপোর্টগুলো ভাইরাল করলে না?”
তনিমার উওরের অপেক্ষায় তার মুখপানে চেয়ে রইল অন্বেষা।
-“কফিনের শেষ পেরেক হিসাবে রিপোর্টগুলো রেখে দাও।”
-“কিন্তু এর মধ্যে যদি শবনম এভর্শন করে ফেলে।”
-“না, আমি জানি শবনম এটা করবে না। আবির ও’কে এটা করতে দেবে না। আর কিছুদিনের মধ্যেই টপ টেন ফাইনাল তাই এখন ও আর এটা করবে না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ”

ততক্ষণে শবনমের এই খরব অর্গানাইজার এজেন্সির কাছে পৌঁছে গেল। তারা আবিরকে জানাল তাদের পক্ষে শবমের মতো মডেলকে দিয়ে এই সো করানো সম্ভব না। আবির যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
এজেন্সির পক্ষ থেকে এটাও জানান হলো তারা সো’র মডেল হিসাবে তারা তনিমা সেনকে চাই। আবির যেন আরেক দফা অবাক হল। এই খবর শবনম পেলে কি হবে সেটা ভেবেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আবিরের।
সে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করল তাদের নিয়ে যেই স্ক্যান্ডেল তৈরি হয়েছে সেটা কারো চক্রান্ত। কিন্তু এজেন্সির পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হল, তারা তনিমাকেই চাই। তা না হলে পরীর সাথে তাদের চুক্তি ভাঙতে হবে এবং পরী এন্টারটেইনমেন্টকে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আবির আর কোনো উপায় না পেয়ে জানাল,
-“ঠিক আছে তবে তনিমার সাথে শবনমকেও সো’টাতে চান্স দিতে হবে। আই মিন ওরা দু’জন স্টেজ শেয়ার করবে।”
এজেন্সি এই প্রস্তাবে কি সিদ্ধান্ত নিবে তার জন্য কয়েক কিছু সময় চেয়ে নিল। তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

এদিকে ওয়েটিং রুমে নেটিজেনদের কমেন্ট দেখে শবনমের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। বেশির ভাগ লোকেরই ধারনা, এই ভিডিও তে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে শবনম ফারিহার চরিত্র কতটা খারাপ! আবার শবনমের কিছু ফ্যানেদের দাবী এটা কোনো ষড়যন্ত্র, শবনমকে বদনাম করা হচ্ছে। ওয়েটিং রুমে বসে এইগুলোই দেখছিল সে। হঠাৎ আবির এসে উপস্থিত হল সেখানে।
-“আবির! এই ভিডিওটি এখনও হেডলাইন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি কেন!”
আবির মাথায় হাত দিয়ে বেখেয়ালে বলে উঠল,
-“আমিও বুঝতে পারলাম না। উপরমহল থেকে ওদের কাছে ইন্সট্রাকশন আছে যেন ভিডিওটা রিমুভ করা না হয়। তার চেয়েও বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে শবনম।”
-“সর্বনাশ! কি হয়েছে আবির?” আতঙ্কিত হয়ে প্রশ্ন করল শবনম।

এরপর আবির সবটা খুলে বলল। সবটা শুনে শবনম প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়ল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-“ঐ! থার্ডক্লাস তনিমার সাথে আমাকে স্টেজ শেয়ার করতে হবে!”
আবির ও’কে শান্ত করার চেষ্টা করল।

যথারীতি সো শুরু কিছুসময় আগে এজেন্সির পক্ষ থেকে জানান হল তারা দুজন মডেল দিয়েই সো’টা কমপ্লিট করাতে চাই। শবনম এবং তনিমা দু’জনকেই রেডি করানো হল। তনিমার জন্য আগে থেকে কোনো নির্দিষ্ট পোশাক রেডি করা ছিল না যার ফলে তাদের কালেকশন থেকেই কস্টিউম ডিজাইনারের চয়েজ মতো ড্রেস পড়িয়ে রেডি করানো হল। তাদের মধ্যে কোনো কথা না হলেও শবনমের চাহনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে তনিমার জন্য তার মনে ঠিক কতটা রাগ, ক্ষোভ তৈরি হয়েছে!
সো শুরু হলে অতিথিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন। এবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, স্টেজে উঠে আসল তনিমা এবং শবনম। শবনমকে বেবি পিংক কালারের একটি সর্ট গাউন পড়ান হয়েছিল সাথে হাতে ব্রেসলেট, হাই হিল, খোলা চুল। অন্যদিকে তনিমাকে কালো রঙের সর্ট গাউনের সাথে হাই হিল, হালকা মেকঅাপ দিয়ে রেডি করা হয়েছিল।
শবনমকে দেখতে খুবই আকর্ষণীয় লাগছি সাথে তার পারফর্মেন্সও ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু তনিমাকে যেন কুইন অফ বিউটি লাগছিল। তার মুখের মুচকি হাসি, শরীরের গঠন সবকিছুতেই ভয়াবহ রকমের মাধুর্যতা ছিল। সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল তনিমা। শেষ পর্যন্ত সো’টা শেষ হল।
অডিটোরিয়াম থেকে বের হতেই সাংবাদিকরা তাদের তিনজনকে ঘিরে ধরল। তাদের একটাই প্রশ্ন আবির আহমেদ এবং শবনমকে নিয়ে যে ভিডিওটা রিলিজ হয়েছে এটা নিয়ে তাদের কি মতামত।
-“মি.আবির আপনার সাথে তনিমা ম্যামের বিয়ের কথা চলছিল। তারপরও আমি শবনম ম্যামের সাথে এরকম সম্পর্কে জড়ালেন কিভাবে!”
-“এই বিষয়ে তনিমা ম্যামের মতামত কি?”
-“আপনি আসলে কাকে ভালোবাসেন?”
সাংবাদিকদের এরকম শত শত প্রশ্নে তারা তিনজনেই ঘাবড়ে যাচ্ছিল। গার্ডদের সাহায্য নিয়ে তারা বের হয়ে আসল। আবির শুধু এতটুকু জানাল, তনিমা শুধুই তার কোম্পানির একজন মডেল। এর বাইরে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তনিমা ছলছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে ছিল।

পরদিন সকাল বেলা পরী এন্টারটেইনমেন্ট এর কাছে সিনে এন্টারটেইনমেন্ট এর পক্ষ থেকে একটা অফিসিয়াল চিঠি আসল। চিঠিতে উল্লেখ করা ছিল, ইন্ড্রাসির কিং রাজ চৌধুরির বাড়িতে একটা নাইট পার্টির আয়োজন করা হবে। সেখানে টপ টেন মডেলের সাজেসটেড সব মডেল উপস্থিত থাকবেন। সেই অনুযায়ী পরীর পক্ষ থেকে তনিমা আর শবনম সাথে আবিরকে ইনভাইট করা হয়েছে।
এই নোটিশ পড়ে তো শবনম প্রায় পাগল হয়ে যাবে এমন অবস্থা। সে রাজ চৌধুরির সাথে দেখা করবে এটা ভেবেই আনন্দে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল। ভাবা যায়! সিনে এন্টারটেইনমেন্ট এর সিইও রাজ চৌধুরিকে সামনে থেকে দেখব!

তনিমাকে এই বিষয়ে জানান হলে সাথে সাথেই তার সামনে রাজের মুখটা ভেসে উঠল।
-“মানুষটা কত অদ্ভুত! চেনা নাই জানা নাই প্রোপোজ করে বসল!” বলে নিজের মনেই হেসে উঠল তনিমা। সে বলে দিল সে যাবে না। অন্বেষা তাকে এই পার্টিতে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে বোঝাতে লাগল। এটা যেহেতু টপ টেন স্পেশাল পার্টি তাই এর গুরুত্ব বুঝে সো’তে যাওয়ার জন্য শেষে রাজি হয়ে গেল তনিমা।
সন্ধ্যায় আবির আর শবনম তনিমাকে রিসিভ করতে তার বাসার সামনে আসল। গাড়িস ড্রাইভিং সিটে আবির পাশে শবনম বসে আছে। সে আজকে নীল রঙের একটা গাউন পড়েছে। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। আবিরও তার সাথে ম্যাচিং করে নীল রঙের সু্ট পড়েছে। বেশ দেখতে লাগছে দু’জনকেই!
তনিমা গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসল। শবনম তনিমাকে জ্বালানোর জন্য তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আবিরের হাতে হাত রাখছিল। আবিরের কাঁধে মাথা রেখে তারা ফিসফিস করে প্রেমালাপ চালিয়ে যাচ্ছিল। পিছনে বসে এই সব সহ্য করছিল তনিমা।

অবশেষে তারা পার্টিতে এসে উপস্থিত হল। শবনম আবিরের হাতের ভাঁজে হাত রেখে অনেকটা কাপেল স্টাইলে পার্টিতে ঢুকল। পার্টিতে নানা রকম মানুষের ভীড়ে তনিমার যেন বারবার রাজকে দেখতে মন চাচ্ছিল!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here