দূর আলাপন,পর্ব-১৭
অদ্রিজা আশয়ারী
সেদিন বাড়ি ফিরে তিহা নিজেকে খুব হালকা অনুভব করে। ভেবে দেখে সে পুরো ব্যাপারটা আগাগোড়া। তিতিক্ষা নিনাদের বিয়ে হলে সব দিকই রক্ষা হবে। তিতিক্ষা এখন আর আগের অবস্থায় নেই। সমাজের কাছে এখন তার যা পরিচয়, সেটা কোনো ভালো মেয়েদের থাকে না। সকলের বিশ্বাস তিতিক্ষা বিয়ের আগের দিন রাতে নিজে থেকেই গিয়েছিল রাজনের কাছে। ফলাফল যে ভয়ানক কলঙ্ক তার নামের সাথে যোগ হয়েছে, সেই কলঙ্ক মাথা পেতে নিয়ে সমাজের সাধারণ কেউ কোনদিন বিয়ে করবে না ওকে।
নিনাদের ব্যাপার টা আরও গুরুতর। নিজের একাকিত্ব মোচনে কোনকালে হয়তো সে ঝুঁকেছিল মেয়েদের প্রতি। ছিল হয়তো তার অগণিত প্রেমিকা। কিন্তু মনের দিক থেকে সে সবসময় অনুরত ছিল একজনের প্রতিই। তাই তারা যদি পারঙ্গমও হয় তিতিক্ষা কে অনত্র বিয়ে দিতে, তাহলে নিনাদও যে সাথে সাথে অন্য কাউকে খুঁজে নিয়ে বিয়ের পীড়িতে বসে যাবে এমনটা ভাবা ভুল।
এইসব নয় ছয় ভেবে নিয়ে তিহা রাতে জানায় মারুফ সাহেবকে কথাটা। মারুফ সাহেবের শুষ্ক মুখে কালো মেঘ সরে গিয়ে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে।
কিন্তু সে হাসি সরে যেতেও বেশি সময় লাগে না। মারুফ সাহেব আবারও চিন্তান্বিত হন। কিভাবে রাজি করাবেন এই সম্মন্ধে তার ভীষণ অভিমানী মেয়েকে!
এক বিশাল সমুদ্র ঝড়ের মাঝে আশ্রয়হীন অবস্থায় একটু আশার আলো দেখতে পেয়ে মারুফ সাহেব হঠাৎ হর্ষৎফুল্ল হয়ে পরেন। মৃত্যুপথ যাত্রি হঠাৎ জীবন লাভ করলে যেমন ধীরে ধীরে তার দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ, আকর্ষন ফিরে আসতে থাকে। আবারও সে মরণযন্ত্রণা ভুলে মত্ত হতে থাকে দুনিয়াবি চিন্তায়। ঠিক তেমনি এক ঘোর অমানিশার মাঝে একটুখানি আলোর রেখা সেদিন মারুফ সাহেবকে উজ্জীবিত করে তোলে। তিতিক্ষা রাজি হবে কিনা কিংবা তার কথায় রাজি হলেও মন থেকে সব ব্যাপার গুলো মেনে নেবে কিনা, জীবনে আর কখনো কি সে পারবে স্বাভাবিক হতে নাকি তার বাতুলতা বৃদ্ধিই পেয়ে যাবে, যার কারণ হিশেবে অবচেতনেও দায়ী থাকবেন তিনি নিজে। এসব ভাবনা ক্রমশ মারুফ সাহেবের মাথায় জেঁকে বসে। সেদিন পুরো রাত জেগেই কাটান তিনি। নিজের সার্থ হাসিলের পর মানুষের যেমন সহসা নৈতিক বোধ জাগ্রত হয়, মনে ইতস্তত ভাব জন্মায়, তেমনি সেদিন তিনি কেবল ভেবে যান এই বিয়ের পরিনতি নিয়ে। এই বিয়ে কি শুধু কারও একটা ইচ্ছা পূরণ কিংবা তার নিজেকে নিশ্চিন্ত করার একটা চাবি মাত্র। নাকি এই বিয়ে আরও কিছু সুফল বয়ে আনবে?
সকালে বাবার ভারাক্রান্ত মুখ দেখে তিহা আর বেশি ঘাটায় না। সে ব্যাস্ত থাকে ছোটন আর তিতিক্ষা কে নিয়েই। তারপর কোন ফাঁকে বাড়ির বাইরে বেড়িয়েছিলেন মারুফ সাহেব, জানতে পারে না কেউ। দুপুরে কড়া রোদে বাড়ি ফিরে দরজার মুখে যখন তিনি জ্ঞান হারান তখন হুশ ফিরে সবার। ছোটনের নজরেই আসে ব্যাপার টা প্রথমে। সে চিৎকার দিয়ে ডেকে নিয়ে আসে মা’কে। হইচই শুনে তিতিক্ষাও ঘরের দরজা খুলে বের হয়। বাবাকে এই অবস্থায় দেখে সেও কাঁদতে শুরু করে। নিজেই কল করে তাদের দুই’বাড়ি পরে থাকা বৃদ্ধ শিবলী ডাক্তার কে।
ক্ষানিক বাদেই কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন মারুফ সাহেব। ডাক্তার জানায় অতিরিক্ত মানসিক চাপে রক্তচাপ বেড়ে গেছিল। ডাক্তার চলে গেলে তিতিক্ষা এসে বসে বাবার কাছে। সে অনর্গল কথা বলে যেতে থাকে। যেন বহুদিন দূরে থাকার পর আজ নিজ বাড়ি ফিরেছে। হঠাৎ দেখা পেয়েছে প্রিয়জনের, এভাবেই অর্বাচীনের মত বলে করে যেতে থাকে নানান অভিযোগ। শাসনে, বাড়নে অস্থির করে তোলে মারুফ সাহেবকে। তখন তাকে পুরোপুরি স্বাভাবিক দেখায়। মুহূর্তের জন্য ভুলে যায় সবাই তিতিক্ষার জীবনে কিছু ঘটেছিল। ডাক্তার মারুফ সাহেবকে অতিরিক্ত মানসিক চাপ না নিতে ও বিশ্রাম করতে বলেন। তাছাড়া বেশি হাটাচলা করতেও নিষেধ করেন সেদিন। কিন্তু রাতেই ডাক্তারের অবাধ্য হয়ে মারুফ সাহেব হঠাৎ জেদি হয়ে ওঠেন ছাদে যাওয়ার জন্য। সাথে নিয়ে যান তিতিক্ষাকে। তিহা আর ছোটন যেন কোনভাবেই সেখানে না যায় সেই নির্দেশও দিয়ে যান।
তিতিক্ষা চিন্তিত মুখে বাবার হাত ধরে ধরে নিয়ে যায় ছাদে। অসুখে বাবার বাচ্চাদের মত এই জেদ তার কাছে ভালো লাগে না।
ছাদে উঠেই মারুফ সাহেব হর্ষধ্বনি করলেন। কি সুন্দর উজ্জ্বল প্রস্ফুটিত জোৎস্না। আকাশের মাঝখানে একটা পৌনে বৃত্তাকার চাঁদ স্থির হয়ে আছে। তুলোর মত রাশি রাশি মেঘ, সেই চাঁদ ঘেঁষে ভেসে ভেসে যাচ্ছে। তিনি সেদিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আজ আরবি মাসের কত তারিখ বল তো মা।’
-‘বারো তারিখ বাবা।’
মারুফ সাহেব মাথা নাড়লেন। ‘আমিও তাই ভাবছিলাম। তোমার মা চাঁদ দেখে আরবি মাসের তারিখ বলতে পারত। চাঁদটা যখন ঠিক এমন আনকোরা হাতে আঁকা বৃত্তের মত একটু অপরিপুষ্ট হয়ে আকাশে উঠত তখন আয়েশা রোজা রাখত। আরবি মাসের তেরো, চৌদ্দ, পরেনো এই তিনদিন রোজা রাখত তোমার মা। আইয়্যামে বীজের রোজা। আমিও রাখতাম তোমার মায়ের সাথে কখনো কখনো। তিতি মা, তুমি কি জানো এই রোজার কথা?’
তিতিক্ষা ধীর গলায় বলল, ‘জানি বাবা। প্রতি মাসেই আমি এই রোজা রাখি।’
-‘তাই নাকি! খুব ভালো। তাহলে তো আজই সেহেরি খেতে হবে তোমাকে। ‘
-‘হ্যাঁ। ‘
মারুফ সাহেব চাঁদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ছাদের মাঝখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা গুটিকয়েক চেয়ার দেখিয়ে বললেন,’ ওদিকটায় বসি চল।’
বাবার পাশাপাশি তিতিক্ষাও একটা চেয়ার টেনে বসল। মারুফ সাহেব বললেন, ‘তিতি, আজ একটা গল্প শোনাব তোমাকে। তারপর কিছু প্রশ্ন করব। গল্পটা শোন মনযোগ দিয়ে।’
তিতিক্ষা দুরুদুরু বুকে বাবার দিকে তাকাল একবার। বাবা তাকে কেন ডেকে এনেছেন সে বুঝতে পারছে না। তবে বিশেষ কোন কারণ যে আছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মারুফ সাহেব গল্প শুরু করলেন,’ তুমিতো জানই আমি আমার বাবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সন্তান ছিলাম। আমার এক সৎ ভাই ছিল সেলিম নামে। সেলিম ভাই ছিলেন ভীষণ সাহসী আর মানুষ হিশেবেও খুব ভালো। একাত্তর সনে যুদ্ধে গিয়ে একটা পা তিনি হারালেন গাড়ি চাপা পরে। যুদ্ধের পর বাড়ি ফিরে আসলেন একদম অচল হয়ে। তার নামের সাথে যোগ হল পঙ্গু শব্দটি। ঘরে ছিল তার গর্ভবতী স্ত্রীর আর দুই বোন। বোন দুটো তখন সবে মাত্র বালিকা আর সে নিজে তো পঙ্গু। এদিকে ঘরে কোন দানাপানি নেই। আমরা তখন খুব ছোট। মায়ের সাথে মামার বাড়তেই থাকতাম বেশিরভাগ সময়। বাবাও গত হয়েছেন। এমন অবস্থায় সকল লাজ লজ্জা ভুলে, আমার ভায়ের সেই পোয়াতি স্ত্রী মানুষের বাড়ি কাজ শুরু করলেন। সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রম করে দিনশেষে অল্প খাবার, পয়সা কড়ি যা পেতেন তাই দিয়ে আহার যুগিয়ে ধরতেন পঙ্গু স্বামী ও ওই দুটি বালিকার সামনে। ভাবির বাপের বাড়ির লোকজন কতবার এল তাকে নিতে। বলল বাচ্চাটা হয়ে গেলে আবার তাকে বড় ঘরে বিয়ে দেবে। ভাবি শুনলেন না। পঙ্গু স্বামী নিয়েই কাটিয়ে দিলেন পুরোটা জীবন। সেজন্য কোনদিন আমার ভাই বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নি ভাবির কাছে। তাকে দেখে কখনো মনে হত না যে তিনি অসহায়। একটি পা হারিয়ে তিনি পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তার সর্বদা প্রফুল্ল মুখ দেখে মনে হত যা হয়েছে আর যা হচ্ছে তা যেন হওয়ারই ছিল। সেকথা তিনি যেন আগে থেকেই জানতেন।
আমি প্রথমে খুব অবাক হতাম। পঙ্গু হয়ে স্ত্রীর কামাই খেয়ে কিভাবে একটা মানুষ এত খুশি থাকে! আর একজন স্ত্রী-ই বা কিভাবে মেনে নেয় সবটা মুখ বুজে?
সেই প্রশ্নের উত্তর আমি পেলাম কিছু বছর পর। তোমার মা কে বিয়ে করে।
জানো তিতি, তোমার মায়ের গায়ের রঙ ছিল তামার মত কালো আর আমি ছিলাম বংশের সবচেয়ে সুদর্শন , পরিবারের বড় ছেলে। যেদিন আমি তাকে বিয়ে করে ঘরে আনলাম, দেখলাম বিয়ে বাড়ির রোশনাই হঠাৎ স্তিমিত হয়ে গেছে। তাকে দেখে ফুঁড়ে গেছে সব হাসি, আলো। আমার ছোট বোন মেরি। যে কিনা দেখতে ছিল ইরানি গোলাপের মতই সুন্দর। তাকে দেখলাম বউ দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেল ঘরে। তার সাথে সাথে বাকি বোনেরাও। আমি পাশে তাকালাম। তোমার মা নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে। এই যে তাকে দেখে সবাই মুখের আলো নিভে গেছে সেজন্য কোন আফসোস নেই তার। আমাদের সংসার জীবনের পুরোটা সময় সেই এমনই ছিল। যখন তোমাদের দু বোনকে নিয়ে আমরা কোথাও বেড়াতে যেতাম। লোকে ভাবত তোমার মা আমার দুর্সম্পর্কের কোন আত্মীয়া। আমার স্ত্রী এবং তোমাদের মা হিশেবে কেউ স্বীকৃতি দিতেই চাইত না তাকে। বর্ণে এতটাই তফাৎ ছিল আমাদের। তোমার মা শুধু হাসত সেসব দেখে।
জানো, কোথায় পেয়েছিল তোমার মা এত দৃঢ়তা যেমনটা ছিল আমার সেই পঙ্গু ভাইয়ের?
এই দৃঢ়তা হল ভালোবাসার অদৃশ্য শিকল। যেই শিকলের জোড়ে পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে গিয়েও তোমার মা ঠিক জানত সে আমার যোগ্য। ঠিক যেমন সেলিম ভাই স্ত্রীর ওপর সম্পুর্ন নির্ভরশীল হয়েও কখনো ছোট করে দেখেননি নিজেকে। কারণ তিনি জানতেন তাদের ভালোবাসার জোরের কাছে এইসব তুচ্ছ।
‘ অযুহাত সেখানেই বড় হয়ে দাঁড়ায়, ভালোবাসা যেখানে বিলাসিতা। ‘
কথা শেষ করে খানিকক্ষণ নিরব থেকে মারুফ সাহেব বললেন, ‘কিছু বুঝলে তিতি?’
তিতিক্ষা পাথরের মূর্তির মত নিশ্চল হয়ে বসে রইল। নিজেকে তার প্রচন্ড নিচ মনে হতে লাগল। এত গভীর ও সুন্দর করে কোনদিন ব্যাপারটা সে ভেবে দেখে নি। অহর্নিশ শুধু ভেবেছে, একটা মেয়ের নারীত্ব যেখানে, সেটুকু যখন সে ক্ষুইয়েছে তখন একমাত্র করুণার বলে সে পেতে পারে জীবন যা কিছু তার প্রাপ্য। নারীত্বের অহংকার হারানোর সাথে সাথে ভালোবাসা পাওয়ার দাবিও হারিয়েছে সে।
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে মারুফ সাহেব ফের বললেন, ‘কি মনে হচ্ছে তিতি? তোমার মায়ের মতো দৃঢ় মন নিয়ে সবকিছু পেছনে ফেলে, সামনে এগিয়ে চলার মত সামর্থ্য কি তোমার আছে? ‘
তিতিক্ষা ইতস্তত করে অস্ফুট স্বরে বলল, ‘ আছে। কিন্তু সেজন্য যে প্রয়োজন….. ‘
মারুফ সাহেব তাকে থামিয়ে দিলেন। মুচকি হেসে বললেন,’ আমি জানি মা। সেই প্রয়োজন টুকুই সব। একটা বিশ্বস্ত হাত ছাড়া কেউ তার পঙ্গুত্ব কিংবা আর কোন বিপর্যয় কে জয় করতে পারে না। যার সেটুকুও নেই, সে সত্যিকার অর্থেই দুঃখী। কিন্তু আমার তিতি মায়ের তো সেটুকু আছে।’
তিতিক্ষা চমকে তাকাল বাবার দিকে। সপ্রশ্ন চোখে।
মারুফ সাহেব মনে মনে হাসলেন। ওপরে স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বললেন, ‘একদিন বলেছিলাম না তোমাকে যে ‘ভালোবাসা তুচ্ছ কারনে পায়ে ঠেলতে নেই। নাহয় সেই ভালোবাসা একসময় পিছু ছেড়ে দেয়। হাতড়ে বেরালেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।’
এখনই সেই কথা পূরনের যথার্থ সময়। চাইলে তুমি ঠেলে ফেলতে পারো, আবার চাইলে বাড়ানো হাতটা আকড়ে ধরতেও পারো। ইচ্ছা তোমার।’
তিতিক্ষা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল বাবার দিকে। বাবার কথার মানে বুঝতে পারছে না সে।
তিতিক্ষার মনের অবস্থা মারুফ সাহেব বুঝতে পারলেন। সহসা গম্ভীর হয়ে উঠে দাঁড়ালেন। মেয়ের দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন চাঁদটাকে। কিছুক্ষণ নিরব থেকে রাশভারি স্বরে বললেন,’আমি তোমার বিয়ে দিয়ে চাই, নিনাদের সাথে। অবশ্যই তোমার অনুমতি নিয়ে। তুমি কি চাও দ্রুত জানিও তিহাকে।’
তিতিক্ষা নিনাদের বিয়ের দিন ঠিক হয় পরের জুম্মা বারে। বিয়েতে শিউলি বেগম নিমরাজি হয়েছিলেন। শুধু মাত্র নিনাদের মুখের দিকে চেয়ে। তারপর আরও দুটোদিন তিনি ভাবলেন। মেয়ে হিশেবে তিতিক্ষা খারাপ একথা তার শত্রুও বলতে পারবে না। এটুকু জানতেন তিনি। তাছাড়া নিনাদও পছন্দ করে তাকে। তাই অবশেষে শিউলি বেগমেরও মন গলল। সেদিন সোমবার। পরের শুক্রবারেই বিয়ে। শিউলি বেগম সকাল সকাল আফরিনকে নিয়ে চলে এলেন তিতিক্ষাদের বাড়ি আংটির জন্য আঙুলের মাপ নিতে। আজ বিয়ের বাজার করতে যাবেন তিনি। দূর থেকে দাঁড়িয়ে সদর দরজার সামনে শিউলি বেগম কে দেখে তিতিক্ষা সহসা বিচলিত হয়ে পড়ল। তার হাত পা কেঁপে কপালে ঘাম জমতে লাগল। কাল সারারাত ঘুমায় নি সে। একটা ভাবনা তার সব ঘুম, মনের প্রশান্তি কেড়ে নিয়েছে। পারবে না সে নিজের কুৎসিত দিক টুকু আঁধারে রেখে ধোঁকা দিতে ওই নিরীহ মহিলাটিকে। ফলাফল যাই হোক, আজ সে সবকিছু সত্যি জানাবে ফুআম্মাকে।
শিউলি বেগম এসে তিতিক্ষার হাত ধরতেই সে সম্বিৎ ফিরে পেল। হাসিতে উজ্জ্বল শিউলি বেগমের মুখ। সে সালাম দিল মলিন হেসে। সালামের জবাব নিয়ে শিউলি বেগম তার হাত তুলে ধরলেন। প্রশস্ত হেসে আফরিনকে দেখিয়ে বললেন,’ মা শা আল্লাহ! আম্মাজানের আঙুল দেহি কাঠির মত চিক্কণ। এই মাপের আংটি তো মনে হয় বাজারে নাই। অর্ডার দিয়াই বানাইতে হইব। দেখসস আফরিন কি সুন্দর আঙুল আমার নিনাইদ্দার বউয়ের?’
আফরিন খিল খিল করে হেসে উঠল।
তখনই তিহা এসে বিনিত ভাবে বলল তাদের বসার ঘরে যেতে, সেখানে খাবার সাজিয়ে রেখে এসেছে সে। আফরিন ছোটনের সাথে পা বাড়াল আগে আগে। শিউলি বেগম তিহার খানিক পেছন পেছন এগোতেই তিতিক্ষা তাকে আটকাল। ক্ষীণ স্বরে বলল, ‘ফুআম্মা। আমার ঘরে একটু আসুন। কিছু কথা আছে। ‘
তিনি ভেতরে ঢুকতেই তিতিক্ষা বিছানা দেখিয়ে বলল,’আপনি এখানে বসুন। ‘
শিউলি বেগম বিস্মিত হয়ে এসে বসলেন বিছানায়। বললেন, ‘কি কইবা তাড়াতাড়ি কও বউ। ‘
তিতিক্ষা বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস লুকালো। গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না তার। শেষ পর্যন্ত বলতে পারবে তো সে কথাটা? তিতিক্ষা নিজেকে সামলে নিল। গলা খাকাড়ি দিয়ে বলতে শুরু করল নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা।
চলবে………