অভিমানী_ভালোবাসা পর্বঃ০২

0
3455

অভিমানী_ভালোবাসা
পর্বঃ০২
লেখিকাঃ Hiya Chowdhury

হঠাৎ রোদের ফোন বেজে উঠল। রোদ দেখে রিমি ফোন দিয়েছে। রোদের মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠে। তবে এই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রিমির কথা শুনে মুহুর্তের মাঝে রোদের হাসি উধাও হয়ে গেলো।

-ভাই জুহি আপির না মত চেঞ্জ হয়ে গেছে। সে আমাদের বাড়ি তে আসবে না। সকালে সবার সাথে কথা বলে নিয়েছে। আর বলেছে আজকেই নাকি দুবাইয়ে ফিরে যাচ্ছে।

দুবাইয়ে ফিরে যাচ্ছে শুনে রোদের মাঝে আর্তনাদ শুরু হয়ে গেছে। তবে কি এবারে ও সে জুহির দেখা পাবে না।

-কককেন আসনে না? (রোদ)

-তা তো জানিনা। (রিমি)

-ওর নাম্বার টা দিতে পারবি? (রোদ)

-না না ভাই একদম নিষেধ আছে। আম্মু যদি জানতে পারে আমার হাড্ডি মাংস এক করে ফেলবে। (রিমি)

-আম্মু দেখবে না। তুই লুকিয়ে লুকিয়ে দে। (রোদ)

-না ভাই আমি এতো রিক্স নিতে চাই না। ফোন রাখছি…. (রিমি)

-আচ্ছা তুই এটা বল ফ্লাইট কয়টায় জুহির? (রোদ)

-তাতো আমি শুনি নি। (রিমি)

-আচ্ছা ফোন রাখ। (রোদ)

রোদ ফোন কেটে দিয়ে। ব্লেজার টা গায়ে জড়িয়ে গাড়ি করে সোজা অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রোদ দ্রুত গাড়ির চালিয়ে যাচ্ছে।

যে করেই হোক জুহি কে আটকাতে হবে। না হলে হয়তো বা এবার জুহি কে হারিয়ে ফেললে আর না ও পেতে পারে। গাড়ি পার্কিং করে রোদ সোজা বিমান বন্দরে ঢুকে যায়। এতো মানুষের ভিতরে রোদ কোথায় খুঁজবে জুহি কে। আর তাছাড়া আগের জুহি আর এখন কার জুহির মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। সে চিনবে কিভাবে কোনটা জুহি।

রোদের সারাটা দিন ও খানেই কেটে গেলো। নাহ জুহির দেখা পায় নি রোদ। অবশেষে হতাশ হয়ে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে বের হয়। মনে হাজারো রকমের ভাবনা। হয়তো সে জুহি কে এবার ও হারিয়ে ফেলেছে।

রোদ প্রতিদিন অফিস থেকে সন্ধ্যা ৬ টায় ফিরে আসে। কিন্তুু আজকে অনেক লেট করে বাসায় ফিরছে রোদ। সবাই অনেক টেনশন করছে। রোদ বাসায় ঢুকতেই এত্তো গুলো প্রশ্ন ছুড়ে মারে সবাই রোদের দিকে।

-এতোক্ষন কোথায় ছিলি রোদ? (রোদের আম্মু)

-আম্মু ঐ অফিসের জন্য একটু লেট হয়েছে। (রোদ)

-মিথ্যা বলছিস কেন । তোর আব্বু ম্যানেজার সাহেবের সাথে কথা বলেছে। উনি বলেছেন তুই অনেক আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেছিস। (রোদের আম্মু)

-ওহ উনি তাহলে বলে দিয়েছে। আচ্ছা শোনো আম্মু আমি না আমার পুরনো একটা বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। আসলে আজকে হঠাৎ করে দেখা হলো তো তাই। (রোদ)

-তাহলে ফোন দিয়ে জানালে ও পারতি। (রোদের আম্মু)

-দেখো না আম্মু ফোন টা অফ হয়ে গেছে। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে নিই কেমন। (রোদ)

-আচ্ছা যা। কিন্তুু আজকের মতো আর না বলে দেরি করে বাসায় ফিরবো না। (রোদের আম্মু)

-ওকে মাই সুইট কিউট মম। (রোদ)

রোদ নিজের রুমে চলে যায়। সারাদিন এতো হাটাহাটি করছে যে শরীর বড্ড ক্লান্ত। এতো খুঁজার ফলে ও আসল কাজ টাই হলো না। জুহির দেখা রোদ পেলো না। রোদ কোনো ভাবে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

পরেরদিন সকালে রোদ খেয়াল করে তার পাশে একটি মেয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। রোদ ভাবলো হয়তো জুহির কথা ভাবতে ভাবতে স্বপ্ন দেখছে। রোদ কোনো কিছু না ভেবেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

রোদ নিজের হাতের উপর ওজন জাতীয় কিছু একটা অনুভব করছে। মিটমিট করে চোখ খুলে দেখে সেই মেয়েটি। রোদ ভাবলো এ কেমন স্বপ্ন। রোদ চোখ কচলিয়ে দেখে না যা দেখছে তা তো সত্যি ই।

রোদ নিজের হাত ভেবে মেয়েটির হাতেই চিমটি কাটে। আর মেয়েটি সোজা চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে। সাথে রোদ ও।

-ও মাগো! তুমি আমার হাতে চিমটি কাটলে কেন? সকাল সকাল আমার ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে দিলে কি সমস্যা কি হ্যাঁ? সকাল সকাল ভূতে কামড়ে দিয়েছে? (মেয়েটা)

মেয়েটির কথা শুনে রোদের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। যেখানে ভূতের বলতে পৃথিবী তে কিছু নেই ই সেখানে ভূতে কামড়াবে? হাউ ইজ পসিবল..?

-কি হলো এভাবে বড় বড় চোখ করে কি দেখছো? (মেয়েটা)

-কে আপনি আর আমার সাথে শুয়ে আছেন ছিঃ ছিঃ (রোদ)

-কিহ আমাকে আপনি বলা তার উপর আবার জিঙ্গেস করছো কে আমি? বলি বিয়ে যে করেছো ভুলে গেলে? (মেয়েটা)

-বিয়ে আর আমি? (রোদ অবাক হয়ে)

-তো তুমি নয় তো কে? (মেয়েটা)

-কি সব যাতা বলছেন। আমি বিয়ে করতে যাবো কোন দুঃখে। দেখুন আপনি যদি আমার সাথে মজা করে থাকেন সো প্লিজ মজা বন্ধ করুন। (রোদ)

-আমি তোমার সাথে কোন দুঃখে মজা করতে যাবো শুনি??(মেয়েটা)

-দেখুন…..(রোদ)

-ওগো একটু কথাকাটাকাটি হয় এমন সংসারে। তাই বলে তুমি আমাকে অস্বীকার করছো। এতো অভিমান করে থেকো না। (মেয়েটা)

রোদের তো মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গেছে। মেয়ে বলে কি কথাকাটাকাটি হয়েছে বলে অভিমান করছি। মানে কি এসবের? সাত সকালে কি হচ্ছে এসব।

-ওগো কি ভাবছো। (মেয়েটা)

-আমি এখনো বিয়ে করিনি সত্যি বলছি। বিশ্বাস করুন আপনার স্বামী আমি না। আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। প্লিজ এখান থেকে চলে যান নয়তো আমার বাসার লোক কেউ‌ দেখলে কেলেংকারি হয়ে যাবে। বলবে আমি রাতে বাসায় মেয়ে নিয়ে এসেছি। প্লিজ প্লিজ চলে যান। (রোদ)

রোদ এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে মেয়েটির চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। রোদের তো ভয়ে জান বেরিয়ে আসছে। মেয়েটি গিয়ে সোজা রোদের বুকের উপর বসে।ইচ্ছা মতো রোদের বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে।

-আহ আপনি আমায় মারছেন কেন? (রোদ)

-বিয়ে করে এখন ন্যাকামো সাজা হচ্ছে। কি এমন ভুল করেছি আমি যে বাসা থেকে বের করে দিতে চাচ্ছো। ঘরে বউ রেখে বাসায় মেয়ে নিয়ে আসার কথা বলছো। খবরদার যদি আর কখনো এসব শুনি মেরে ভর্তা বানিয়ে ছাঁদে কড়া রোদের মধ্যে শুকাতে দিবো।এই আমি বলে দিলাম। (রেগে গজগজ করতে করতে মেয়েটা)

মেয়েটি সোজা ফ্রেশ হতে চলে যায়। রোদ উঠে বসে।

-এটা মেয়ে ছিলো না অন্য কিছু? ওহ গড এটা যদি স্বপ্ন হয়ে থাকে তো তাড়াতাড়ি আমার ঘুম ভেঙ্গে যাক। এমন বাঘিনী মেয়ে স্বপ্নের মধ্যে এসে বলছে আমার বউ। না জানি এমন মেয়ে কার বউ হবে। ভাই একটু সাবধানে থাকিস। নয়তো তোকে কুপিয়ে মেরে ফেলবে।

রোদ অনেক ভাবেই চেষ্টা করছে। এসব কে স্বপ্ন ভাবতে কিন্তুু এটা স্বপ্ন নয় সত্যি। গতকাল রাতে তো ঘুমানোর সময় কোনো মেয়ে সে দেখে নি। তাহলে হঠাৎ কোথা থেকে এই মেয়ে টি উড়ে এসে জুড়ে বসলো। এখন যদি বাসার কেউ দেখে কি হবে…! টেনশনে রোদের মাথায় ও কিছু আসছে না।

-কি বিড়বিড় করছো? (মেয়েটা)

-কককই নাতো। প্লিজ বলুন কে আপনি? (রোদ)

মেয়েটি আবার চোখ গরম করে রোদের দিকে তাকায়।

-না মানে সত্যি আমার মনে হয় কি আমার স্মৃতি শক্তি লোভ পেয়েছে তাই আমি সব ভুলে গিয়েছি। তাই আপনি প্লিজ একটু মনে করিয়ে দেন। (রোদ)

-আর একবার যদি আপনি বলেছো তোমার মুখে আমি কসটেপ মেরে দিবো। (মেয়েটা রেগে)

-আচ্ছা তুমি আমাকে প্লিজ একটু মনে করতে সাহায্য করো। (রোদ)

হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে। মেয়েটি কথা বলতে যাবে এমন সময় রোদ মেয়েটির মুখ চেপে। আর হাত দিতে ইশারা করে চুপ থাকতে।

-কে? (রোদ)

-ভাই আমি রিমি।

-কোনো প্রয়োজনে এসেছিস না এমনি?(রোদ)

-ভাই আমি কাল তোর বেলকনিতে এসেছিলাম। আমার রুমে নেটওয়ার্ক কাজ করছিলো না দেখে। পরে বোধহয় ভুল করে ফোন টা তোর বেলকনিতে ফেলে রেখে চলে গেছি। রাতে তো তুই ঘুমিয়ে পড়েছিলি ডোর লক করে তাই আর ফোন টা নিতে পারি। এখন নিতে এসেছি। (রিমি)

-ওহ আচ্ছা। (রোদ)

-খুল দে না দরজা টা। ভেতরে কি করছিস। (রিমি)

-এই তো ২ মিনিট। (রোদ)

রোদ মেয়েটির মুখ এখনো চেপে ধরে আছে। মেয়েটির কথা রিমির কানে গেলেই শেষ। রোদ আস্তে আস্তে মেয়েটিকে বলে….

-তুমি লুকিয়ে পড়ো। প্লিজ। (রোদ)

-কেন? (মেয়েটা)

-আরে আমার বোন যদি তোমাকে দেখে। আমাকে শেষ করবে। (রোদ)

-মানে (মেয়েটা)

-কিছু না এদিকে আসো। (রোদ)

আর ঐ দিকে রিমি চিল্লিয়ে রোদ কে বলে…

-আরে ভাই দরজা টা খুলতে তোর এতোক্ষণ লাগে? (রিমি)

রোদ রিমির কথায় পাওা না দিয়ে নিরাপদ একটা জায়গা খুঁজতে থাকে যেখানে সে মেয়েটি কে লুকিয়ে রাখবে। যাতে করে রিমি না দেখতে পায় ওকে। রোদ মেয়েটির কে আলমারির সামনে নিয়ে যায়। আলমারি পুরো ফাঁকা। রোদ মেয়েটির কে আলমারির ভিতরে ঢুকিয়ে….

-তুমি প্লিজ একটু এখানে থাকো। জাস্ট ২ মিনিট। আমার বোন আমার রুম থেকে ওর ফোন টা নিয়ে চলে গেলে তুমি বেরোবে এর আগে না। (রোদ)

-মানে? আমি আলমারির ভেতরে কি বলতে চাইছো তুমি? (মেয়েটা)

-প্লিজ ২ মিনিট। (রোদ)

রোদের অবস্থা দেখে মেয়েটির এতো হাসি পাচ্ছে যা বলার বাহিরে। তাও নিজের হাসি চেপে রেখে মেয়েটি বলে…

-আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার কথা মেনে নিলাম। এখানেই আছি আমি। (মেয়েটা)

-থ্যাঙ্কস…(রোদ)

রোদ তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আর রিমি রোদের রুমে আসে।

-কিরে ভাই তুই এতোক্ষণ কি করছিলি? (রিমি)

-আরে আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। (রোদ)

-ওহ আচ্ছা। (রিমি)

-যা তুই তোর ফোন নিয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড় আমার রুম থেকে! (রোদ)

-হুহ আমি তোর রুম দখল করতে আসি নি। আমার ফোন টা খুঁজতে এসেছি। আমার টা আমার জন্য ঢের ভালো। (রিমি)

মুখ বাকাঁ করে রোদের দিকে তাকিয়ে ভেঙ্গচি মারে রিমি। তারপর বেলকনিতে যায় ফোন খুঁজতে রোদ ও রিমির পিছন পিছন যায়।

-কি ব্যাপার বল তো তুই আমার পিছন পিছন কেন আসছিস? (রিমি)

-কেন আবার তুই যদি আমার কোনো কিছু চুরি করে নিস তাই আর কি। (জোড় করে হাসার চেষ্টা করে রোদ। কিন্তুু ভেতরে ভেতরে ভয়ে শেষ। ভালোয় ভালোয় রিমি রুম থেকে বেরোলেই সে বাঁচে।)

-আমার বয়েই গেছে তোর জিনিস চুরি করতে। (রিমি)

রিমি ফোন টা নিয়ে বেলকনি থেকে রুমে যায়। এমন সময় মেয়েটি আলমারি থেকে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়। রোদ টেনশনের ফলে ভুলেই গিয়েছিলো আলমারি লক করতে। লক না করার ফলে আলমারির দরজা হালকা তে লেগে ছিলো। মেয়েটি জোড়ে ধাক্কা দেওয়ার ফলে তাল সামলাতে না পেরে সোজা ফ্লোরে।

-আহ্ মাম্মি আমার কোমড়।(চিৎকার দিয়ে মেয়েটা)

রিমির মুখে হাত। রোদ একবার রিমির দিকে তাকায় একবার ফ্লোরে পড়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকায়। রিমির রিয়েকশন বোঝার চেষ্টা করছে রোদ। একটু পরে কি হবে সেটা ভাবতেই রোদের কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। একদম পিচ্চি ছেলেদের মতো কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার। (মাইনকা চিপায় পড়লে যা হয় আর কি)

রোদ ভাবছে তার সাথে এখন কি কি হবে। এমন সময় রিমির বলা কথা শুনে রোদ বিস্মিত হয়ে গেলো। আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা রোদের।

-আরে ভাবী তুমি আলমারি তে কি করছিলো?(রিমি মেয়েটি কে প্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে)

-তোমার ভাই জামা কাপড়ের মতো গোটা একটা মানুষ কে ঢুকিয়ে রেখেছে। (মেয়েটা)

-কিরে ভাই তুই ভাবী কে আলমারি তে কেন ঢুকয়োয়েছিস? (রিমি)

-না মামমনে এমনি। (রোদ)

-দেখ তো ভাই ভাবী কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কিনা আমি গেলাম। আর নাস্তা করতে আয়। (রিমি)

-আচ্ছা তুমি যাও রিমি। আমরা আসছি। (মেয়েটা)

-হুম (রিমি)

রিমি চলে যায়। রোদ ভাবছে রিমির তো উল্টো রিয়েকশন করার কথা ছিলো কিন্তুু রিমি কোনো রিয়েকশন ই করলো না। রিমি আরো মেয়েটি কে বলছে ভাবী!! রোদের মাথায় কিছুই আসছে না।

মেয়েটি রেগে কোমড়ে হাত দিয়ে রোদের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। রোদ কি বলবে বুঝতে পারছে না।

-তোর জন্য সব হয়েছে। তোর সব প্ল্যান ছিলো আমাকে ফেলে দেওয়ার তাই না? (মেয়েটা)

-এই একদম না। আর তাছাড়া তোমার মতো এরকম একটা হাতি ঐ ছোট্ট আলমারি তে থাকতে পারবে ও কিভাবে? পড়বেই তো।(রোদ)

-কিহ আমি হাতি? (মেয়েটা)

-না না জলজ্যান্ত একটা বাঘিনী মানুষ। (রোদ)

রোদ এটা বলে কোনো ভাবে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। কোনো ‌মতেই হিসাব মিলছে না। রোদের মাথায় এখনো ঘুরছে বউ আসলো কোথা থেকে। যতোদূর মনে পড়ছে সে তো বিয়ে করেই নি। হঠাৎ রোদের জুহির কথা মনে পড়ে।

-আমি জুহি কে ভালোবাসি এই মেয়ে কে নয়। আমি এখন উনাকে সাফ জানিয়ে দিবো আমি তোমাকে চিনি না বিয়ে ও করিনি ব্যস। আমি জাস্ট জুহি কে ভালোবাসি আর কাউকে না। আর বিয়ে করলে জুহি কেই করবো। জুহি ই আমার বউ হবে(মনে মনে)

রোদ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে মেয়েটি রুমে নেই। রোদ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। জুহির কথা মনে পড়তেই কিছুই জেন ভালো লাগছে না। এক দিকে জুহি আরেক দিকে এই মেয়ে কি হচ্ছে রোদের সাথে এসব। রোদ অফিসের জন্য রেডি হয়ে নেয়। তারপর নিচে নাস্তা করতে গেলেই অবাক রোদ।

কারণ মেয়েটি সবাই কে নাস্তা সার্ভ করছে। আর হেসে হেসে সকলের সাথে কথা বলছে! কারো তেমন রিয়েকশন ই নেই। এসব ভাবতে ভাবতে নাস্তার টেবিলে আসে রোদ।

-রোদ তুই এসেছিস দেখ না বউ মা তোকে ছাড়া নাস্তা করতে বসছে না। এবার দুজন একএে বস। (রোদের আম্মু)

-হুম (জোড় করে হাসার চেষ্টা করছে রোদ)

অতঃপর রোদের পাশে মেয়েটি বসে। তারপর রোদের আম্মু কে বলে।

-মামনি আমি নিজের হাতে খাবো না ওকে খাইয়ে দিতে বলো। (মেয়েটা)

মেয়েটির কথা শুনে রোদের হাত থেকে কাটা চামচ যেটা দিয়ে সে খাচ্ছিলো সেটা পড়ে যায়।এতো বড় মেয়ে বলে কিনা ওকে খাইয়ে দিবে রোদ। অসম্ভব।

-এই জন্যই বলেছিলি যে রোদ আর তুই একএে খাবি? হাহা রোদ ওকে খাইয়ে দে। (রিমি)

-না আমি পারবো না! (রোদ)

মেয়েটি রোদের কথা শুনে নাক ফুলিয়ে কাটা চামচ টা হাতে নিয়ে রোদের পেটের দিকে ইশারা করে। রোদ বড় বড় চোখ করে মেয়েটির দিকে তাকায়। রোদ মেয়েটির ইশারা বুঝতে পেরে চুপচাপ ওকে খাইয়ে দিতে থাকে। রোদের বুক ফুটছে তো মুখ ফুটছে মা। বাহ মেয়েটি ও বেশ আয়েশ করেই খাচ্ছে। আর বাকি সবাই রোদ আর মেয়েটির অবস্থা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।

কোনোমতে রোদ নাস্তা শেষ করে সোজা অফিসে চলে যায়। এদিকে জুহি কে রোদ খুঁজে তো পাচ্ছেই না অার অন্য দিকে এই মেয়ে যত্তোসব ঝামেলা।

নাস্তা শেষে মেয়েটি রোদের ঘরে যায়। বেড টা ভালো ভাবে গুছিয়ে রাখে। এমন সময় বেডের পাশের টেবিলে থাকা রোদের ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠে।

-হায় রে রোদ তো ওর ফোন টা ও ফেলে রেঝে চলে গেছে। হাহাহা বিয়ে না করেই বউ কোথা থেকে এলো হয়তো এই টেনশনেই সব গুলিয়ে ফেলেছে। (মনে মনে)

মেয়েটি ভাবছে রোদের ফোন টা দেখবে কি দেখবে না। অনেক ভাবা ভাবির পর মেয়েটি রোদের ফোন টা হাতে নেয়। আর ফোনের screen এ ভেসে উঠা মেসেজ টা দেখে মেয়েটি অবাক হয়ে যায়। মেসেজ টা ছিলো এরকম….

“যদি নিজের শত্রু দের দেখতে চাও এন্ড নিজের কোম্পানী কে বাঁচাতে চাও তবে রেস্টুরেন্ট এ চলে এসো। আর আমার খোঁজ করতে এসো না। ভাবতে পারো আমি তোমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী।”

মেয়েটি কিছু টা বিব্রত হয়ে যায়। কোন নাম্বার থেকে মেসেজ টা এসেছে তা চ্যাক করতে গেলে দেখা যায় মেসেজ টা একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে এসেছে।

মেয়েটি রোদের ফোন থেকে মেসেজ টা ডিলেট করে নেয়। আর রেডি ও হয়ে নেয়। কারণ তাকে এক্ষুনি দেখতে হবে ব্যাপার টা।

রোদের রুম ছেড়ে নিচে ড্রয়িংরুমে আসতেই রোদের আম্মু মেয়েটির সামনে পড়ে।

-কিরে মা কোথাও যাচ্ছিস? (রোদের আম্মু)

-হ্যাঁ মামনি একটু দরকার ছিলো। তাই…. (মেয়েটা)

-তুই একা যাবি নাকি আমি রিমি কে ও ডেকে দিবো? (রোদের আম্মু

-না মামনি। আমি একাই যাবো। ওকে ডিস্টার্ব করার দরকার নেই। (মেয়েটা)

-আচ্ছা সাবধানে যাস। (রোদের আম্মু)

-আচ্ছা মামনি। (মেয়েটা)

মেয়েটি গাড়ি নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্টে যায়। আর খোঁজার চেষ্টা কোথায় রোদ দের কোম্পানি নিয়ে কথা হচ্ছে। পেয়ে যায় মেয়েটি তাদের।

মেয়েটি ঐ লোক গুলো ঠিক পেছনে বসে। আর মুখ টা ঢেকে বসে। এমন সময় একজন ওয়েটার আসে।

-কি লাগবে ম্যাম? (ওয়েলটার)

-এক কাপ কফি নিয়ে আসো।(মেয়েটা)

-ওকে ম্যাম। (ওয়েল্টার)

লোকগুলো যা বলছে………

-ঐ চৌধুরী কোম্পানি টপে উঠে গেছে। পরপর ৩ বার টপে থাকলে ঐ কোম্পানি কে পুরস্কার দেওয়া হয় সাথে হরেক রকমের সুবিধা। আর এবার চৌধুরী কোম্পানির ৩য় বার টপে থাকার সময়। এবং এখনো পর্যন্ত আছে ও আর এটা কোনো ভাবেই হতে দেওয়া যাবে না।

-ঠিক বলেছো আর তাছাড়া আমাদের ওপর থেকে চাপ ও দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের বড় যিনি আমাদের দিয়ে এই কাজ করাচ্ছেন তার সম্পর্কে তোমরা একটা কথা জানো?

-কি কথা?

-উনি চৌধুরী পরিবারের ই একজন।

-হোয়াট তো তাহলে ইনি এই কাজ করাচ্ছেন কেন?

-উনি চৌধুরী কোম্পানির আসল মালিক নন। আর উনার মতে এভাবে চলতে থাকলে উনি কখনো হতে ও পারবেন না ঐ কোম্পানির আসল মালিক।

-ওহ।আমাদের কাজ দিয়ে কি ভাবে কি হবে?

-হবে কারণ আমরা যদি চৌধুরী কোম্পানি কে এবার টপ থেকে নিচে নামিয়ে দিই তাহলে চৌধুরী কোম্পানির মালিক ভেঙ্গে পড়বেন। উনার এতো দিনের স্বপ্ন ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে। আর ঠিক তখনি আমাদের বড় স্যার উনাদের কোম্পানি টা দখল করে নিবেন। আর উনি ই হবেন আসল মালিক। পরে আবার উনি কোম্পানি টা কে টপে নিয়ে যাবেন।

-ওও আচ্ছা। তো তোমরা কেউ উনাকে দেখেছো যার নির্দেশে আমরা এসব করছি?

-না দেখিনি।

ওদের ঠিক পিছন থেকে ওদের এই সব কথা পুনরায় ফোন থেকে শুনে চমকে উঠে ওরা ৩ জন। পিছনে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আর তার হাতে ফোনের রেকর্ড থেকে এসব চলছে। ওরা ৩ জন ভয় পেয়ে যায়।

-এই মেয়ে কে তুমি? (একজন লোক)

-জুহি!! (মেয়েটা)

-মানে? (লোক)

(হ্যাঁ যা ভাবছেন সেটাই। মানে রোদের বউ সেজে থাকা মেয়েটি আর কেউ নয় জুহি ই। জুহি সেদিন ই রোদের বাসায় এসেছে যেদিন ওর আসার কথা ছিলো। জুহি শুধু রিমি কে দিয়ে মিথ্যা বলিয়েছে রোদ কে। ব্যাস সারাদিন তো রোদের বাহিরেই কেটে গেলো।মূল কথায় আসি….)

-মানে আমার নাম জুহি।

-তুমি আমাদের কথা গুলো রেকর্ড করলে কেন?

-সেটা এই জন্যই যে তোমরা যদি এখন আমাকে তোমাদের সাথে না নাও তো আমি চৌধুরী কোম্পানির আসল মালিক কে এই ফোনে রেকর্ড করা সব কথা শুনিয়ে দিবো। (জুহি)

সবাই ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।

-দেখো আমরা একজনের থেকে কন্ট্রাক্ট নিয়ে ফেলেছি। এই কাজ টা করার জন্য। (লোক)

-তো কি হয়েছে। তোমাদের সাথে এই কাজে আমি ও হেল্প করবো। (জুহি)

-এতে তোমার লাভ? (লোক)

-আমার লাভ অবশ্যই আছে। চৌধুরী কোম্পানির মালিকের সাথে আমার খুব পুরোনো শত্রু তা। চৌধুরী কোম্পানির মালিক আমার বাবা ও ছিলেন একটা সময়। ৫০% ৫০% এ ছিলো কোম্পানির ভাগ। কিন্তুু পরে তার সাথে বেঈমানি করা হয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এই কোম্পানি। তাই আমি ও ওদের থেকে ঠিক এটাই করবো। (জুহি)

-কিন্তুু তুমি তো কোম্পানির ভাগ পাবে না?….(লোক)

-নো প্রবলেম। কোম্পানি টা তো আর রোদ চৌধুরীর বাবার ও থাকবে না। আর আমি এটাই তো চাই। হাহাহা
(জুহি)
-কিন্তুু…..(লোক)

-দেখো তোমরা যদি রাজি না হও তো আমি চললাম।(জুহি)

-হ্যাঁ আমরা রাজি। (লোক)

-ওকে। থ্যাঙ্কস তো এবার বলো চৌধুরী কোম্পানির কোন সদস্য তোমাদের দিয়ে এই কাজ টা করাচ্ছে তোমরা কি ওকে চেনো? (জুহি)

-না আমরা উনাকে কখনো দেখি ই নি। (লোক)

-ওহ আচ্ছা। তোমাদের বড় স্যার উনাকে জানিয়ে দিও তোমাদের সাথে আমি নতুন এড হওয়ার কথা ওকে।আর তোমরা যদি বেশি তিড়িং বিড়িং করো তাহলে কিন্তুু এই ফোন রেকর্ড…(জুহি)

-না না আমরা কিচ্ছু করবো না।…(লোক)

-ওওওকে। (জুহি)

জুহি রেস্টুরেন্ট থেকে গাড়ি করে বাসায় চলে আসে আর ঠিক তখনি রোদের বলা কথা টা শুনে জুহি চমকে উঠে।

-রোদ জানলো কিভাবে এই কথা…..?????

চলবে————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here