অভিমানী_ভালোবাসা
পর্ব_০৪
লেখিকাঃ Hiya_Chowdhury
রোদ জুহির কথায় নিশ্চুপ হয়ে যায়।জুহি রোদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে যায়।
শুভ্র ছাঁদে আসে…..
-কিরে রোদ জুহির কি হয়েছে? কান্না করছে কেন?
(শুভ্র)
-কিছু না। (রোদ)
রোদ কিছু না বলে ছাঁদ থেকে নেমে যায়। রোদের প্রচন্ড অনুতপ্ত বোধ হয়। জুহির সাথে এমন ব্যবহার করা তার সত্যি ই ঠিক হয়। আর জুহি ই বা তার কথা শুনবে কেন? সে তো জুহির কথা আগে শুনতো না। বরং আরো নানা ভাবে জুহি কে বকা দিতো অপমান করতো। বলতে গেলে তখন জুহির সাথে এসব করতে রোদের মজা লাগতো আর সেই মজার ফল এখন রোদ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
ডিনার শেষে জুহি ওর রুমের দিকে যাচ্ছিলো এমন সময়।
-জুহি…..(রোদ)
-নো রেসপন্স….(জুহি)
-জুহি আ’ম সরি। (রোদ)
-নো রেসপন্স…(জুহি)
জুহি রোদ কে পাওা না দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রোদ ও মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে যায়। অদ্ভুত বিষয় রোদের চোখের ঘুম উড়ে গেছে। কিছু তেই ঘুম আসছে না। রাত টা এপাশ ওপাশ করতে করতেই কেটে গেছে।
সকালে নাস্তা সেরে রোদ অফিসে চলে যায়। আজকে একটা মিটিং আছে তার। রাতে ঘুম না হওয়ার ফলে এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। কিন্তুু মিটিং টা খুব ইনফর্টেন্ট যেভাবেই হোক করতেই হবে।
মিটিং টা কমপ্লিড করে রোদ ম্যানেজার কে তার রুমে ডাকে।
-ম্যানেজার সাহেব আপনি এদিকে টা সামলে নিন আমার এখন বাসায় যেতে হবে। (রোদ)
-আচ্ছা স্যার। (ম্যানেজারল
-পারবেন তো? (রোদ)
-হ্যাঁ স্যার। (ম্যানেজার)
আর এদিকে জুহি একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন পায়। কথা বলার পর বুঝতে পারে ঐ দিনের সেই লোক গুলো। কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য ওরা জুহি কে রেস্টুরেন্টে ডেকেছে। তাই জুহি গাড়ি করে বেরিয়ে গেছে সকাল সকাল।
,
রোদ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে। হঠাৎ সে রেস্টুরেন্টে জুহির মতো কাউকে দেখতে পায়। পরে ভাবে জুহি কেন এখানে আসতে যাবে? এটা হয়তো বা তার মনের ভুল। সেদিকে আর মন টা দিয়ে বাসায় চলে আসে রোদ।
-আম্মু জুহি কোথায়? (রোদ)
-কেন বলতো? (আম্মু)
-না মানে এমনি আর কি। (রোদ)
-জুহি তো ওর রুমে। (জুহি)
-ওহ আচ্ছা। (রোদ)
রোদ আর কিছু বললো না। মনে মনে ভাবলো সত্যি রেস্টুরেন্টে যাকে সে জুহি ভেবেছে সেটা আসলেই তার মনের ভুল।
রোদ আর সাতপাঁচ না ভেবে জম্পেশ একটা ঘুম দেয়। এক ঘুমে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রোদের ঘুম ভাঙ্গলে ফোনে টাইম দেখে সে থ হয়ে যায়। এতোসময় সে ঘুমিয়েছে। অবাক করা বিষয়। কেউ একবার ডাকলো ও না।
-আম্মু ও আম্মু কোথায় তোমরা…? (রোদ)
-আরে এই তো কেন ডাকছিস? (আম্মু)
-তোমরা আমাকে একবার ও ডাকলে না কেন? (রোদ)
-ডাকি নি মানে? তুই জানিস কতোবার ডেকেছি কিন্তুু তোর তো কোনো সাড়াশব্দ ই পেলাম না। (আম্মু)
-ওহ। (রোদ)
-নাস্তা করতে আয়। (আম্মু)
-এই তো আসছি। (রোদ)
সবাই মিলে একসাথে নাস্তা সেরে নেয়। জুহি একবারের জন্যও রোদের সাথে কথা বলে নি। বিষয় টা রোদের ভালো লাগছে না।
রোদ জুহি কে পুরো বাসা খুঁজে কোথাও না পেয়ে ছাঁদে যায়। রোদ দেখে জুহি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে একা একা।
রোদ ও জুহির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে জুহি সেদিকে তাকায়। দেখে রোদ এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
জুহি চলে যেতে নিলে রোদ ওকে আটকায়।
-দেখ জুহি আমি সরি বললাম তো। প্লিজ তুই আমার সাথে রাগ করে থাকিস না। তুই এভাবে রোবটের মতো হয়ে আছিস এটা আমার ভালো লাগছে না রে। (রোদ)
-নো রেসপন্স। (জুহি)
-কিছু তো বল জুহি। (রোদ)
-নো রেসপন্স। (জুহি)
রোদের কোনো কথা জেনো জুহির কান ওবধি পৌঁছাচ্ছে না। সে চুপ করে আছে।
-ওকে তুই আমার সাথে কথা বলবি না তো দেখ আমি নিজের কি অবস্থা করি। (রোদ)
রোদ পকেট থেকে ব্লেড বের করে হাতে কয়েকটা টান মারে। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে।
এটা দেখে জুহির কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে। রোদের থেকে ব্লেড টা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়।
-কি করলেন এটা আপনি হ্যাঁ। পাগল হয়ে গেছেন নাকি? (জুহি)
-তোকে যে কষ্ট দিয়েছি সেই কষ্টের থেকে এগুলা কিছুই না। (রোদ)
জুহি দৌড়ে নিচে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আসে। এখনো রক্ত পড়ছে। কোনো ভাবে রক্ত বন্ধ করে রোদের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় জুহি। জুহি কান্না করছে আর সেটা রোদ দেখে নেয়।রোদ জুহির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-কিরে তুই কান্না করছিস কেন? (রোদ)
-আর একবার এসব উল্টা পাল্টা কাজ করবেন তো আমি এই বাড়ি ছেড়ে আবার দেশের বাহিরে চলে যাবো। ধুর আমার আসলে এখানে আসাই ঠিক হয় নি।
(জুহি)
রাগে দুঃখে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে জুহির। কিভাবে পারলো সে রোদ কে এটা করতে দিতে?
জুহি নিচে চলে যায়। রোদ ও কিছুক্ষণ পর চলে যায়। ডিনার শেষে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে তখন রোদ চুপিচুপি জুহির রুমে যায়। আর দেঝে জুহি গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে। জুহির ঘুমন্ত চেহারা মুগ্ধ হয়ে দেখছে রোদ।
রোদ আস্তে আস্তে জুহির পাশে গিয়ে বসে। কেমন জেনো ঘোর লেগে গেছে তার। ইচ্ছে করছে জুহির কপালে তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে। যেই ভাবা সেই রোদ আস্তে করে জুহির কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। কিছু টা কেঁপে উঠলো জুহি।
হঠাৎ করে জুহির ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর দেখতে পায় রোদ তার খুব কাছে। খুব রেগে যায় জুহি। রোদ কে একটা ধাক্কা মেরে সরিয়ে উঠে বসে জুহি। রোদ তাল সামলাতে না পড়ে যেতেই যেতেই উঠে দাঁড়ায়।
-ছিঃ ভাইয়া আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন? এতো টা নিচে নেমে যাবেন আমি ভাবতে ও পারি নি। ঘৃণা হচ্ছে আমার। এতো টা জঘন্য আপনি। ছিঃ….(জুহি)
-জুহি আমার কথা টা তো শোন…..(রোদ)
-আমার রুম থেকে চলে যান এক্ষুনি। (জুহি)
-জুহি…..(রোদ)
-যদি আমার খারাপ দেখতে না চান তো চলে যান…. যেতে বলছি না আপনাকে শুনতে পারছেন না আপনি? (জুহি, চেঁচিয়ে)
রোদ ও রেগে যায়। জুহির হাত বেডের সাথে চেপে ধরে।
-তোর সাথে আমি খারাপ কিছুই করতে আসি নি। জাস্ট তোকে একটু দেখতে এসেছি। তাই বলে তুই আমাকে এগুলো বললি? খারাপ কিছু করার থাকলে তোকে এসব বলার সুযোগ ই দিতাম না। (রোদ)
রোদ কিছু না বলে জুহির হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।জুহি তার সাথে এতোটা মিসবিহেভ করবে সে ভাবতে ও পারে নি। রোদ বুঝতে পারলো তার হয়তো এই কাজ টা ঠিক হয় নি…. কিন্তুু জুহি কিভাবে তাকে এতো বাজে ভাবতে পারলো…?
জুহি বুঝতে চেষ্টা করলো কি ছিলো এটা? রোদ কি করতে যাচ্ছিলো তার সাথে? হঠাৎ করে ঘুম ভাঙ্গার ফলে জুহির সেন্স ঠিক ছিলো না। জুহি নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। রোদ কি ভাবলো তাকে..?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে জুহি আবার ঘুমিয়ে পড়লো সে নিজে ও জানে না। অন্যদিকে রোদ তার রুমে গিয়ে দেওয়ালে একটা ঘুষি মারে।
-এতো টা বাজে চিন্তা ভাবনা আমাকে নিয়ে জুহির ছিঃ…….(রোদ)
সকালে জুহি ঘুম থেকে উঠে। রাতের বিষয় টা মনে পড়ে যায়। যেভাবেই হোক রোদ কে সরি বলা প্রয়োজন। জুহি নিচে এসে জানতে পারে রোদ অনেক আগেই অফিসে চলে গেছে।এতো তাড়াতাড়ি তো রোদ অফিসে যায় না। তাহলে আজকে…? হয়তো রাগ করেই এমন করছে রোদ। বুঝতে পারে জুহি। মন টা খারাপ ই হয়ে গেছে জুহির।
,
জুহি পুরো দিন অপেক্ষা করে রোদের জন্য। কখন রোদ আসবে আর কখন সে সরি বলবে এই ভেবে। কিন্তুু রোদের আসার নাম গন্ধ ও নেই। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে রোদ।
জুহি ভাবলো এখন বলা ঠিক হবে না আগে কিছু টা রেস্ট নিক। রোদ ফ্রেশ হয়ে নেয়। সন্ধ্যায় সবাই মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে। জুহি শুধু উপরে তার ঘরে ছিলো। কিছুক্ষণ পর জুহি ড্রয়িংরুমে ওদের সাথে আড্ডা দিতে আসলেই রোদ উঠে চলে যায়।
জুহি কে কোনো পাওাই দিচ্ছে না। জুহির থেকে দূরে দূরে থাকছে রোদ। যেখানে জুহি আছে সেখান থেকে সে চলে আসে। জুহি রোদ কে তার কথা টা বলতেই পারছে না। কোনো চান্স ই দিচ্ছে না রোদ তাকে। রোদ জুহি কে বার বার ইগনোর করছে যেটা জুহির বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
আর সহ্য করতে পারলো না জুহি…..
জুহি রোদ কে কোথাও না দেখে ওর রুমে যায়। রোদ জুহি কে দেখতে পেয়ে……
-তুই কেন এসেছিস আমার রুমে? (রোদ)
-আসলে আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া…. আমি আসলে বুঝতে পারি নি…. তাই… (জুহি)
-তুই আমার রুম থেকে চলে যা নয়তো আমি ই চলে যাবো! (রোদ)
-আমি তো বলছি আমার ভুল হয়েছে। (জুহি)
রোদ রাগ করে নিজের রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে চলে যায়। জুহির এবার খুব খারাপ লাগলো। সে নাহয় রাতে ঘুমের ঘোরে উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে তাই বলে এমন করতে হবে…?
জুহি ডিনার না করেই শুয়ে পড়ে। রোদের আম্মু জুহি কে ডাকতে আসলে বলে সে খাবে ক্ষুধা নেই। রোদের আম্মু জোড় করে ও কোনো লাভ হলো না। জুহির এক কথা সে খাবে না।
রোদ ভালোই বুঝতে পারছে জিত করে জুহি ডিনার করছে না। না করুক তাতে রোদের কি হুহ….
পরের দিন ও যথারীতি নাস্তা সেরে নেয় রোদ। গায়ে ব্লেজার টা জড়িয়ে নেয় সে। এমন সময় জুহির আগমন।
-আবার কেন এসেছিস তুই? (রোদ)
-এতো রাগ করছেন কেন আপনি? আমি বললাম তো সরি। ঘুমের ঘোরে আমি কি উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি। (জুহি)
চোখ মুখ লাল হয়ে আছে রোদের। রোদ জুহির কথা শুনে আরো রেগে গিয়ে জুহি কে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
-শোন তোর এসব শুনার মতো আমার টাইম নাই। তুই আমাকে কিভাবে এতো টা নিচু স্থানে বসিয়ে দিতে পারলি। ছিঃ তোর মুখ ও দেখার ইচ্ছা নাই আমার। আর কখনো আমার সামনে ও আসবি না।
রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় জুহি। খুব কান্না পাচ্ছে তার। নিজেকে সামলাতে না পেরে ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয় সে।
প্রায় অনেক্ষন কান্না করে জুহি। ফলে চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। রোদ যখন আর তার মুখ ও দেখতে চাচ্ছে না তাহলে সে ওই বাড়িতে থেকে লাভ কি? জুহি ঠিক করে সে তার ফুফির বাসায় চলে যাবে।
জুহি ওয়াশরুমে গিয়ে ভালোভাবে মুখ টা ধুয়ে নেয়। যাতে কেউ বুঝতে না পারে সে কান্না করেছে। তারপর সব কিছু গুছিয়ে রেডি হয়ে নেয় সে।
-কিরে জুহি এই সকাল বেলায় কোথায় যাচ্ছিস তুই? তাও আবার নাস্তা না করেই? কি হয়েছে তোর জুহি? কোনো সমস্যা। (রোদের আম্মু)
-না মামনি কোনো সমস্যা না। আমার এমনি ভালো লাগছে না। ফুফুনি ফোন দিয়েছিলো তোমাকে তো কয়দিন আগেই বললাম। আজ আবার বললো তাই ভাবলাম গিয়ে ঘুরে আসি। (জুহি)
-তাই বলে নাস্তা না করে কোথায় যাচ্ছিস? (রোদের আম্মু)
-না মামনি আমি নাস্তা পরে করে নিবো। এক্ষুনি বের হতে হবে আমাকে প্লিজ। (জুহি)
-রাতে ও না খেয়ে ঘুনিয়েছিস আবার এখনো নাস্তা করছিস না। মানে কি এসবের জুহি? এভাবে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবো তুই এটা বুঝিস না! (রোদের আম্মু)
-ওহহো মামনি বললাম তো আমি যাওয়া আগে রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাস্তা করে নিবো এখন আসি কেমন। টাটা। (জুহি)
-তোকে আর কি বলবো। সত্যি করে বল নাস্তা করে নিবি তো? (রোদের আম্মু)
-হু একদম সত্যি। এখন যাই। (জুহি)
-সাবধানে যাস। (রোদের আম্মু)
-ওকে। (জুহি)
বেশ হাসিখুশি ভাবেই রোদের আম্মুর থেকে বিদায় নেয়ার জুহি। উনাকে বুঝতেই দিলো না আসলে ঠিক কি হয়েছে? জুহি গাড়ি ড্রাইভার কে কিছু টা পথ যাওয়ার পর বললো।
-ড্রাইভার আংকেল থামুন আমি এখানেই নামবো। (জুহি)
-আরো তো অনেক টা পথ বাকি।
-থাক আমি যেতে পারবো। (জুহি)
-কি বলছেন আপনি ম্যাম সাহেব যদি জানতে পারে আমি আপনাকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিয়েছি তাহলে আমাকে জব থেকেই বের করে দেবেন।
-আরে না কিছু করবেন না। আমি বলছি তো। (জুহি)
-কিন্তুু…….
-কোনো কিন্তুু নয়। (জুহি)
এভাবে অনেকক্ষণ পর ড্রাইভার টাকে কোনো ভাবে বুঝ দিয়ে পাঠিয়ে দেয় জুহি। গাড়ি তে তার ভালোই লাগছে না। হেটে হেটে বেশ লাগছে।
রোদের সেই কথা গুলো ভাবছে জুহি। কিছুই জেনো ভালো লাগছে না। রোদের কথা মতো তো তার মুখ আর রোদ দেখতে পাবে না তবে কি রোদ খুশি হবে? এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকায় জুহি।
একটা গাড়ি এসে সজোরে রাস্তার পাশে থাকা ফুচকা বিক্রেতার ঠেলা গাড়ি কে ধাক্কা দেয়। ফলে সব জিনিস মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাড়ি থেকে একজন লোক নেমে আসে।
লোকটার দোষেই এমন হয়েছে। সে ফুচকা ওয়ালা কে সরি না বলে উল্টো মারতে আসছে। ততক্ষণে রাস্তায় অনেক লোক জমা হয়ে গেছে।
-ছোট লোকের বাচ্চা তোর জন্য আজকে আমার গাড়ির কতো টা ক্ষতি হয়েছে তুই জানিস??…… (জিসান)
এ কথাটি বলে গাড়ি থেকে নেমে আসা লোকটি ফুচকা ওয়ালা কে মারতে রেগে তেড়ে আসে। ফুচকা ওয়ালার গায়ে হাত দিতে যাবে জুহি লোকটার হাত ধরে ছিটকে ফেলেন দেয়।
লোকটার ই দোষ। সে উল্টা বিনা দোষে ফুচকা ওয়ালার গায়ে হাত দিবে। এটা দেখে জুহি রেগে গিয়েছে।
-দোষ টা উনার নয় আপনার। গাড়ি চালাতে না পারলে রাস্তায় নামেন কেন? নাকি চোখ হাতে নিয়ে গাড়ি চালান। কতো টাকার মালিক আপনি যার জন্য লোকটা কে ছোট লোক বলছেন? কিসের এতো অহংকার? সামান্য আল্লাহর সৃষ্টি জীব হয়ে উনাকে আপনি ছোট লোক বলছেন তাহলে আপনি কি?।। আপনার গাড়ির ধাক্কায় ক্ষতি আপনার নয় উনার হয়েছে। আপনি ধন সম্পদের মালিক তাই আপনার কাছে হয়তো দু চার টাকার কোনো মূল্য নেই কিন্তুু এই মানুষটা যে সারাদিন এই কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করে যাচ্ছে! তার কাছে এই দু চার টাকার মূল্য দু চার লক্ষ কোটি টাকার থেকে ও বেশি মূল্যবান। দিন উনার ক্ষতিপূরণ দিন। (জুহি)
গাড়ি তে থাকা লোকটির নাম জিসান। সে ও একজন বিজনেসম্যান। জিসান হা করে জুহির দিকে তাকিয়ে আছে। জুহির কোনো কথাই জেনো তার কান ওবধি পৌঁছাচ্ছে না।
সে তো জুহির রাগি লুক কাঁপা কাঁপা ঠোঁট রেগে লাল হয়ে কথা বলা এসব দেখে পাগল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের জন্য জিসান অন্য কোনো এক রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। যেই রাজ্য জুড়ে শুধু জুহির প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান।
-ও হ্যালো আপনাকে কিছু বলছি আমি এভাবে হা করে আছেন কেন? (জুহি)
-হ্যাঁ কিকিকি হয়েছে। (জিসান)
-আপনি উনার অনেক ক্ষতি করেছেন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এখন আপনাকে। (জুহি)
জিসান অনেক গুলা টাকা বের করে লোকটির হাতে ধরিয়ে দেয়। কিন্তুু লোকটি তার উপযুক্ত টাকা নিয়ে বললো…
-দেখো বাবা আমরা গরীব কিন্তুু লোভী নই।
জুহি ফুচকা ওয়ালা কে জিঙ্গেস করে…
-মামা আপনার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তো? (জুহি)
-হ্যাঁ মা।
জুহি বাকি টাকা গুলো জিসানের হাতে ধরিয়ে দেয়।
-আশা করি নেক্সট টাইম আর এমন কিছু করবেন না। (জুহি)
-হুম। (জিসান)
আস্তে আস্তে সবাই চলে যায়। জিসান এখনো অবাক দৃষ্টিতে জুহি কে দেখছে। মুগ্ধ হয়ে গেছে জিসান। অন্য সময় হলে জিসান বুঝিয়ে দিতো তাকে অপমান করার মানে কি।
কিন্তুু এবার ঠিক তার উল্টো। জুহির মাথাটা কেমন ঝিম ধরে এসেছে। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেয় জুহি কিন্তুু তার সামনে থাকা লোকটি তাকে ধরে নেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই জুহির। কারণ সে সেন্সলেচ হয়ে গেছে………
চলবে————