অভিমানী_ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
2241

অভিমানী_ভালোবাসা
পর্ব-০৫
লেখিকাঃ Hiya_Chowdhury

কিন্তুু এবার ঠিক তার উল্টো। জুহির মাথাটা কেমন ঝিম ধরে এসেছে। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেয় জুহি কিন্তুু তার সামনে থাকা লোকটি তাকে ধরে নেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই জুহির। কারণ সে সেন্সলেচ হয়ে যায়।

অন্যদিকে রোদ অফিসে চলে তো যায় ঠিক কিন্তুু নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না। বারবার জুহির সেই অসহায় মুখ টি চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নাহ তার হয়তো জুহি কে এভাবে ইগনোর করা ঠিক হয়নি।

হাজার হোক সে জুহি কে ভালোবাসে। জুহির তো কোনো দোষ নেই। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে সে নাহয় উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে তাই বলে রোদের এমন বিহেভ করা ঠিক হয়নি। বুঝতে পেরে রোদ দ্রুত গাড়ির নিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দেয়।

বাসায় পৌঁছে যায় রোদ। নিজের রুমে গিয়ে বেডের পাশে একটা কাগজ পড়ে থাকতে দেখে সে। রোদ কাগজ টা হাতে নেয়।

-আমি না হয় ভুল করে উল্টোপাল্টা বলে ফেলেছি তাই বলে আপনি ও আমার সাথে এমন বিহেভ করবেন? আমি আপনাকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসতাম। ছোট বেলায় আপনি যখন আমাকে অবহেলা করতে শুরু করেছিলেন একদিন আপনার উপর রাগ করেই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিলো আর কখনোই আপনার সাথে দেখা করবো না। রাগ করে মামনি কে নিষেধ করেছিলাম যাতে আমার কোনো কিছুই আপনাকে না দেয়। আপনি জেনো কোনো ভাবেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন। কিন্তুু নিজের এই জেদ রাগ সব হার মেনে যায় আপনার ভালোবাসার কাছে। যখন মামনি বললো আমি আপনাদের ঐ খান থেকে চলে আসার পর আপনি ও পাগলামি শুরু করে দিয়েছিলেন। আমি চলে আসার পর থেকে এখন ওবধি আমার জন্য অপেক্ষা করে যাচ্ছেন আমার জন্য বিয়ে পর্যন্ত করছেন না। আপনি যখন আমার ছবি বুকে নিয়ে কান্না করছিলেন তখন মামনি আপনাকে দেখে ফেলে। সব কিছু জানার পর আর থাকতে পারি নি।

চলে আসি এখানে। তারপর আপনাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য শুভ ভাইয়ার সাথে অভিনয় করছিলাম। এটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম আপনাকে যে আগে আমার কেমন লাগতো যখন আপনি অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতেন। আজকে আপনার কথায় বুঝলাম হয়তো আপনার সাথে একটু বেশী ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি। পারলে ক্ষমা করে দিবেন। আপনি যখন আর আমার মুখ ও দেখতে চান না চলে যাচ্ছি আমি। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

“ইতি জুহি”

রোদ পুরো লিখা টা পড়ে থ হয়ে যায়। কোথায় চলে যাচ্ছে জুহি..??রোদ নিচে নেমে ওর আম্মু কে ডাকে।

-আম্মু জুহি কোথায়? (রোদ)

-ও তো বললো ওর ফুফুর বাসায় যাবে। (আম্মু)

-তুমি যেতে দিলে কেন? (রোদ)

-আরে ও জোড় করছিলো। কিন্তুু কি হলো টা কি? (আম্মু)

-আচ্ছা আমি যাচ্ছি। (রোদ)

-কোথায় যাচ্ছিস? (আম্মু)

-পরে বলবো। (রোদ)

রোদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। যে করেই হোক জুহি কে আটকাতেই হবে। না হলে কখন আবার রাগ করে দেশের বাহিরে চলে যায় বলা যাবে না। দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে রোদ।

জুহির যখন সেন্স ফিরে তখন নিজেকে জুহি হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে। মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব করে জুহি। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। আস্তে আস্তে বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় জুহি। এমন সময় একটি নার্স আসে।

-ম্যাম আপনার জ্ঞান ফিরেছে…(নার্স)

-হুম কিন্তুু কি হয়েছিলো আমার। আর আমি হসপিটালে কিভাবে এলাম?( জুহি)

-জ্বী ম্যাম আপনি সেন্সলেচ হয়ে গিয়েছিলেন। একজন ভদ্রলোক আপনাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। (নার্স)

-কে উনি। (জুহি)

-আমি ডেকে দিচ্ছি উনাকে। (নার্স)

নার্স টি বাহিরে গিয়ে জিসান কে জানায় যে জুহির জ্ঞান ফিরেছে। জিসান জুহির কাছে আসে। জুহি জিসান কে দেখেই রেগে যায়।

-আপনি! আপনি এখানে কি করছেন? (জুহি রেগে)

-শান্ত হোন। এতো রেগে যাচ্ছেন কেন। আর আজকের ঐ এক্সিডেন্টের জন্য আই এম এক্সট্রিমলি সরি। (জিসান)

-সরি আমাকে নয় উনাকে বললে ভালো হতো। (জুহি)

-হুম সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন বলুনতো। (জিসান)

-আমাকে হসপিটালে নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ। আপনার নিশ্চয়ই এখন টাকা চাই! বলুন কতো টাকা চাই? (জুহি)

-টাকা নয় আমার তোমাকেই চাই। (বিড়বিড় করে)

-কিছু কি বললেন? (জুহি)

-না তো। (জিসান)

-কিছু জিঙ্গেস করেছি আমি আপনাকে? (জুহি)

-হেল্প করে আবার টাকা নিবো সরি এমন মানুষ আমি নই। (জিসান)

-কেমন মানুষ আপনি তাতো আমি নিজের চোখেই দেখলাম। এখন আসি আমি। (জুহি)

-এইইইই ওয়েট ওয়েট (জিসান)

-কি? (জুহি)

-আপনি কোথায় যাচ্ছেন? (জিসান)

-কেন আমি আমার যেখানে যাওয়ার কথা সেখানেই যাচ্ছি। (জুহি)

-ডাক্তার বলেছে আপনার শরীর দুর্বল এখন আপনার বেড রেস্ট দরকার। (জিসান)

-তা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। (জুহি)

জুহি দ্রুত পায়ে হেঁটে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে ওর ফুফুর বাসার দিকে রওয়ানা দেয়। আর হঠাৎ করেই রোদ এসে জুহির সামনে দাঁড়ায়।

-কোথায় যাচ্ছিস তুই? (রোদ)

জুহি তার সামনে রোদ কে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায়। আবার সকালে রোদের বলা কথা গুলো মনে পড়ে।

-আমি আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবো। আপনার কি দরকার? (জুহি)

-জুহি আ’ম সরি আমার ও ভুল হয়ে গেছে রে মাফ করে দে। (রোদ)

-মানে কি? আপনি কেন ক্ষমা চাচ্ছেন। ক্ষমা তো আমি চাইবো আপনার কাছে। আর আপনি তো আমার মুখ ও দেখতে চান না সো পথ ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন। (জুহি)

-চুপ একদম চুপ কোনো কথা বলবি না। কোথাও যেতে পারবি না তুই। নেমে আয়। (রোদ)

-না। (জুহি)

-আসবি না তো? (রোদ)

-না। (জুহি)

-ওকে। আমি আমার কাজ করছি। (টোদ)

-মানে? (জুহি)

রোদ জুহি কে কিছু বলতে না দিয়ে ওকে কোলে নিয়ে গাড়ি তে বসিয়ে ডোর লক করে দেয়। তারপর নিজে ও গাড়ি তে বসে।

-মানে হচ্ছে এটা। কেউ যদি স্বইচ্ছায় না আসে তো তাকে আমি জোড় করে নিয়ে আসি। (জুহি)

-হুহ।(রাগি লুক নিয়ে)

জুহি রোদের কথায় ভেঙ্গচি কেটে রাগ করে অন্যদিকে ফিরে যায়। রোদ হোহো করে হেসে উঠে। রোদ যে জুহি কে পেয়েছে এতেই ওর খুঁশি লাগছে। পুরো টা সময় জুহি রোদের সাথে একটা কথা ও বললো না। রোদ তাকে এটা সেটা বলেই যাচ্ছে কিন্তু জুহি কোনো উওর দিচ্ছে না। সে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

অন্যদিকে জিসান হসপিটালের বিল চুকিয়ে হসপিটাল থেকে বের হতেই দেখে কোথা ও জুহির চিহৃ ও নেই।

-মিনিটের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেলো মেয়েটা? (মনে মনে)

এমন সময় জিসানের পিএ সাদ আসে।

-স্যার আপনি যাকে খুঁজছেন সে তো চলে গেছে।

-কোথায় গেছে? (জিসান)

-তাতো জানিনা। শুধু দেখেছি একটা ছেলে ঐ মেয়েটিকে জোড় করে গাড়ি তে বসিয়ে নিয়ে চলে গেছে।

-সিট তুমি ওদের আটকাও নি কেন? (জিসান)

-কেন স্যার উনি কে?

-কিছু না। ঐ মেয়েটির অল ডিটেইল চাই আমার। (জিসান)

-ওকে স্যার।

রোদ তাদের বাসায় এসে পৌঁছায়।

-এবার নামেন ম্যাম সাহেব!, (রোদ)

-উহু। (মাথা নাড়িয়ে না জানায়)

-নামবেন না? নাকি আবার কোলে……..(রোদ)

-এইতো নামছি। (জুহি)

তাড়াতাড়ি নেমে যায় জুহি। না হলে আবার যদি রোদ তাকে কোলে নিয়ে নেয় তাহলে মান সম্মান সব শেষ। বাসায় ঢুকতেই রোদের আম্মু সামনে পড়ে।

-কিরে জুহি রোদ তোদের হয়েছে টা কি বল তো? কিছুই তো বুঝলাম না। (আম্মু)

-মামনি তোমার ছেলে আমাকে বলেছে আমার মুখ দেখতে চায় না তাই আমি চলে গেছি কিন্তুু আবার মাঝ রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে এসেছে কেন জিঙ্গেস করো। (জুহি)

-কিরে রোদ কি শুনছি! (আম্মু)

-ঐ আম্মু হয়েছে কি…..(মাথা চুলকিয়ে)

-এ্যাঁ এ্যাঁ……..(জুহি)

-জুহি কি হলো আবার তোর?(রোদের আম্মু)

-কি হয়েছে জুহি? (রোদ)

-আমার ক্ষুধা পেয়েছে। (জুহি)

-দেখছিস রোদ তোর জন্য মেয়ে টা এখনো ওবধি না খেয়ে আছে। জুহি তোকে বলছি রোদ রাগারাগি করবে তাই বলে তুই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিবি এসব কি রে? (রোদের আম্মু)

-সরি মামনি। (রোদ)

-আমি কি ওকে বলেছিলাম না খেয়ে থাকতে? (রোদ)

-বলতে হয় নারে বান্দর। (রোদের কান টেনে)

-আহ আম্মু লাগছে তো। (রোদ)

-তুই ওকে ভালোবাসিস কিন্তুু ওকে বুঝিস না হ্যাঁ? (আম্মু)

-বুঝি তো। (রোদ)

-হয়েছে আর বলতে হবে না। জুহি তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি টেবিলে খাবার সার্ভ করছি। (আম্মু)

-আচ্ছা মামনি। (জুহি)

জুহি রোদের দিকে তাকিয়ে ভেঙ্গচি কেটে উপরে চলে যায়। রোদ হেসে দেয়। বড্ড খুশি লাগছে তার। যখন জানতে পেরেছে জুহি তাকে এখনো ভালোবাসে। আর শুধু তার জন্যই এখানে এসেছে। অন্যদিকে জুহি ভাবতেই পারেনি রোদ তাকে এভাবে নিয়ে আসবে।

সব প্ল্যান ভেজতে গেলো। রোদ ও জেনে গেছে সে তাকে ভালোবাসে। নয়তো রোদ কে আরো কয়েকদিন জ্বালানো যেতো।

-ইশ কি ভুল টাই না করলাম আমি। (মনে মনে)

সবাই মিলে একসাথে লাঞ্চ করে নেয়। তারপর থেকেই জুহি রোদের সামনে নিজেকে কোনো ভাবেই ধরা দিচ্ছে না। পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রোদ চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে জুহি কে কিন্তুু কোথায় জুহি?

পুরো বাড়ি খুঁজে ও জুহি না পেয়ে হতাশ হয়ে যায় রোদ।অবশেষে রোদ ছাঁদে গিয়ে দেখে জুহি সেখানে লুকিয়ে বসে আছে। রোদ কে দেখেই জুহি চোখ বড় বড় করে নেয়।

-কি আর একটু হলেই তো মনে হয় চোখ দুটো বেরিয়ে আসবে! (রোদ)

-মমমমানে। (জুহি)

-মানে তোর মাথা। তুই আমার থেকে পালাচ্ছিস? (রোদ)

-ককককই নাতো। কেন পালাবো আপনি বাঘ না ভাল্লুক? (জুহি)

-সেটাই তো। (রোদ)

রোদ আস্তে আস্তে জুহির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

-ককককি হলো ভাইয়া আপনি আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন? (জুহি)

-আমি তোর ভাইয়া তাই না। (রোদ)

-ননননা মমমানে…..! (জুহি)

রোদ জুহির খুব কাছে চলে আসে। এতো টাই কাছে যে রোদের নিশ্বাস জুহির মুখের উপর এসে পড়ছে। জুহির হার্টবিট বেড়ে গেছে। ঠোঁট প্রচন্ড রকমের কাঁপছে জুহির। যা রোদ কে আরো বেশী কাছে টানছে।

খুব আকর্ষণ করছে রোদ কে। রোদ জেনো কোনো এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। জুহি চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। যা রোদ কে আরো পাগল করে দিচ্ছে। রোদ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে জুহির ঠোঁট জোড়া নিজের করে নেয়………

চলবে————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here