অভিমানী_ভালোবাসা পর্ব_০৭

0
2088

অভিমানী_ভালোবাসা
পর্ব_০৭
লেখিকাঃ Hiya _Chowdhury

মুখে হাসি নিয়ে দরজা খুলতেই‌ চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা রোদের।

-আব্বু তোমরা!

-তুই কেমন ছেলে রে হ্যাঁ! বড় করলাম আমরা আর বিয়েই আমাদের ছাড়া করে নিবি!

-রোদ ভাইয়া দেখো তুমি শুভ্র ভাইয়া কে বলেছিলে কাজি সাহেব কে নিয়ে আসতে আর শুভ্র ভাইয়া গুষ্টি শুদ্ধ নিয়ে এসেছে হিহিহি।

-সরি রে আমার কোনো দোষ নাই। আমি কেটে পড়ি!

শুভ্র মানে মানে কেটে পড়ে। রোদ পাড়ছে না শুভ্র কে গিলে খাবে। বাকি সবাই এখনো রোদের সামনে দাঁড়িয়ে।

-কিরে ভাই আর কতোক্ষণ এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকবি?

-না মানে….. বলছিলাম যে….. (মাথা চুলকিয়ে)

সবাই হেসে দেয়। বিয়ের সব কিছু আগে থেকেই সাজানো ছিলো। সেই অনুযায়ী রোদ আর জুহির বিয়ে হয়ে যায়। হালকা পাতলা ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান টা হয়। কারণ জুহির আব্বু আম্মু পরশু আবার চলে যাবেন। তাদের বিজনেস এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে যায় সেজন্য।

তাই পরে বড় করে অনুষ্ঠান করে হবে! এখন জাস্ট নরমাল ভাবে সব কিছু হয়। যাই হোক রোদ জানতে পেরে যায় আসলে জুহির বিয়ে তার সাথেই হতে যাচ্ছিলো। রোদ কে একটু টাইট দেওয়ার জন্য জুহি সবাইকে নিষেধ করে দেয়+রোদের আম্মু কে বলে মিথ্যা বলতে। ব্যচ হয়ে গেলো।

খুব সুন্দর ভাবে রোদের বাসর ঘর সাজানো হয়েছে। জুহি সেখানেই বসে আছে। আর রোদ! রোদ গেছে ওর আম্মুর সাথে কথা বলতে!

-আম্মু….!

-কিরে….!

-তুমি আমাকে মিথ্যে বললে কেন যে জুহির বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে?

-জুহি বলেছিলো।

-ও বলবে বলে তুমি ও তাই করবে!

-বেশ করেছি। তুই মেয়েটা কে কষ্ট দিয়েছিলি কেন!

-আরে আমি তো….!

-চুপ আর একটা ও কথা বলবি না। যদি আর কখনো শুনেছি তুই ওকে কষ্ট দিয়েছিস তোর একদিন কি আমার একদিন!

রোদ ওর আম্মুর সাথে কথা শেষ করে রুমে আসে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে একটা টিশার্ট পড়ে নেয় রোদ। হাতা ফোল্ড করতে করতে জুহির দিকে এগিয়ে আসে। এমন একটা ভাব জেনো সে জুহি কে মারবে!

-এএএএএই আপনার কি আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান আছে?

-না থাকলে ও এখন তোকে মেরে প্ল্যান করবো!

-মানে(কাঁদো কাঁদো হয়ে)

-মানে হচ্ছে…!

রোদ জুহি কে ধরতে যাবে জুহি এক লাফে উঠে দৌড় মারে। পিছন পিছন রোদ ও। পুরো রুম জুড়ে দৌড়াদৌড়ি চলছে। রুমের দরজা তো বন্ধ। দরজা খুলতে যে সময় লাগবে এই সময়ে রোদ জুহি কে ধরে ফেলবে সো নো চান্স।

-এই দাঁড়া বলছি!

-জ্বী না।

দৌড়াতে দৌড়াতে দুই জন ই ক্লান্ত। জুহির সব শক্তি শেষ। রোদ জুহি কে প্রায় ধরে ফেলেছে। এমন দুইজনে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়। জুহি নিচে পড়ে আছে আর জুহির উপর রোদ। অবস্থা বেগতিক।

-মাম্মি আমি শেষ।

-এই চুপপপপ….!

-এ্যাঁ এ্যাঁ এ কেমন জামাই বিয়ের প্রথম রাতেই বউ কে ধমক দেয়। এ্যা এ্যাঁ…… মাম্মি!

-বেশ করেছি। তোকে ইচ্ছে মতো বকবো। মেরে হাড্ডি গুড্ডি ভেঙ্গে দিবো।

-তাহলে আপনি তো বিধবা হয়ে যাবেন!

-ছেলে রা কখনো বিধবা হয় নাকি (হো হো করে হেসে উঠে রোদ)

-সরুন বলছি ও মাম্মি কতো বড় একটা হাতি পড়ে আছে আমার উপর।

-আমি হাতি?

-হু!

-চুপ বজ্জাত মেয়ে। আমি হাতি হলে হাতি। তুই আমাকে এটা বল!

-কোনটা?

-তুই সবাইকে বলতে নিষেধ করলি কেন যে তোর সাথেই আমার বিয়ে?

-বেশ করেছি! আরো করবো!

-তাই নাকি?

রোদ জুহির ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে দেখে জুহি ভয় পেয়ে যায়।

-না না না আর করবো না! কখনো করবো না! জীবনে ও করবো না।

জুহি ওর ঠোঁটে হাত দিকে চোখ বন্ধ করে আছে। রোদের কি যে হাসি পাচ্ছে বলার মতো না। রোদ জুহি কে কোলে তুলে নেয়।

জুহি আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে রোদ ওকে কোলে নিয়ে আছে। রোদ সব কিছু ভুলে এটাই ভেবেই খুশি যে জুহি কে সে সারাজীবনের জন্য পেয়ে গেছে। সারাজীবন সে জুহি কে তার #কাছে_পাশে আগলে রাখবে। আর কখনো হারাতে দেবে না সে তার জুহি কে।

জুহি বুঝতে চেষ্টা করছে রোদ তার সাথে কি করতে চাচ্ছে। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জুহির দিকে রোদ। জুহি মনে লাড্ডু পুড়ছে। জুহি কে অবাক করে দিয়ে রোদ ওকে শুইয়ে দেয়।

তারপর রোদ জুহির পাশে শুয়ে জুহির কপালে আলতো করে চুমু একেঁ দিয়ে। ওকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। জুহির ও খুব ভালো লাগছে। কেমন জেনো প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে জুহির।

অতঃপর দুই জনে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে।

পরের দিন সকালে………….

নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে জুহি। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। সেই পানি গিয়ে পড়লো রোদের উপর।

ফলে রোদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

-সকাল সকাল দিলে তো আমার ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে।

-আমি আবার কি করলাম!

-কি করো নি সেটা বলো। যাই হোক ঘুম যখন ভেঙ্গে দিলে তার শাস্তি তো পেতেই হবে।

-মমমমমানে! কিসের শাস্তি….

রোদ জুহি কে ড্রেসিং টেবিলের সাথে চেপে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। জুহির চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।কিছুক্ষন পর রোদ জুহি কে ছেড়ে দেয়।

-শাস্তি এটা…….(চোখ টিপ মেরে রোদ ওয়াশরুমে চলে যায়)

জুহি হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে। রাগে মুখ ফুলিয়ে জুহি নিচে চলে যায়। ডাইনিং টেবিলে সবাই উপস্থিত রোদ ছাড়া।কিছু সময় পর রোদ ও নিচে আসে। রোদ শুভ্রর পাশে বসে।

-কেমন কাটলো ভাই বিয়ের প্রথম রাত!(চুপিচুপি)

-দাড়া তোর মজা দেখাচ্ছি!(মনে মনে)

রোদ শুভ্র কে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য বলে উঠে।

-আব্বু চাচ্চু শুভ্র বললো ও নাকি বিয়ে করবে! লজ্জার কারণে তোমাদের কে বলতে পারছে না।

-কিহ আমি! এই রোদ আমি তোকে এই কথা কখন বললাম?

-দেখ ভাই লজ্জা পাস না। এসবে লজ্জা পেতে নেই।

-শুভ্র ভাইয়া তুমি বিয়ে করবে আমাকে বলতে পারতে! আমি আছি না!

সকাল টা শুভ্র কে দিয়েই হাসি তামাশায় শুরু করা হয়। কাব্য আর রিমি শুভ্র রোদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে শুভ্র কে আরো উষ্কে দিচ্ছে। সবাই হাসতে হাসতে শেষ……!

চলবে—————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here