তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_২৩,২৪

0
1670

তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব_২৩,২৪
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্মনাম)
পর্ব_২৩

হোটেলের ওয়াশরুমের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সামনের ব্যক্তির দুই হাতের মাঝে আমি।নড়াচড়া করার ক্ষমতা আমার নেই। তার যে শক্তি আমি সেটা একদিন ভালোমতোই দেখেছি। আপাতত ওর বিরুদ্ধে যেতে আমি ইচ্ছুক নই।নিজের ক্ষতি নিজে কেইবা করতে চাইবে? কারন এই ব্যক্তির চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। এখন আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। ঢোক গিলতেও কষ্ট হচ্ছে। পাক্কা ১০/১৫ মিনিট একইভাবে দাঁড়িয়ে আছি। সামনের ব্যক্তি ব্ল্যাক রং য়ের স্যুট প্যান্ট সাথে ব্ল্যাক শার্ট পরেছে। সু ও ব্ল্যাক। খালি সাদা মুখটা লাল হয়ে আছে। সিল্কি চুল গুলোকে আজ জেল দিয়ে সেট করা। তাকে দেখেই এতটা সময় কাটিয়েছি। এখন গরমে ঘেমে আমি শেষ। তার উপর সামনের মানুষটার গরম নিশ্বাস তো আমার মুখের উপরেই পরছে। এত লম্বা একটা লোক। কি করে এত নিচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এতক্ষণ? তবে আমি জানি কোনো একটা কারনে সে রেগে আছে। যদিও বা আমার কারণ জানা নেই। কিন্তু ভালোই লাগছে। আমার বেবির খুব ভালো লাগছে। সে তার বাবার কাছাকাছি বলে হয়তো।

-এমন করে এখানে আনার কি মানে?

খুব সাহস নিয়ে নিবিড় এর সাথে কথা বলতে নিলাম। অনেকক্ষন যাবৎ নিশ্বাস বার বার আঁটকে আসায় কথা বলতে পারছিলাম না। তাও সাহস নিয়ে বললাম। খচ্চর লোক কিছু বলল না। এমনি দাঁড়িয়ে রইলো।আবার গলা পরিস্কার করে নিয়ে বললাম,

-ওয়াশরুমে আনছো কেন? তুমি আমার সাথে দেখা করার আর জায়গা কখনোই পাওয়া না?

নিবিড় বড় বড় করে তাকালো। হয়তোবা আমাদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ এর কথা ওর ও মনে পরে গেছে। তাই গলাটা আর একটু নামিয়ে নম্র করে বললাম,
-না মানে আনছো আনছো ভালো কথা, তাই বলে ওয়াশরুমে? কেউ কি আনে?

-তবে কি তাজমহলে নিয়ে যাবো তোমায়?(কাঠখোট্টা গলায়)

-তা নিতেও পারো। বউকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে তো তোমার নেই।

-What? You mean honeymoon?

-Sounds like as same!(ভাব নিয়ে)

-কি বললা?

-ঠোসা তুমি। কেমনে শুনবা?।

নিবিড় এর চোখের রাগ মুছে গেল নাকি হাওয়াই মিঠাই এর মতো মিলিয়ে গেল? চোখের চাহনিতে এখন আগুন নেই। জ্বল জ্বল করছে। এইটা হটাৎ আনন্দের পাওয়া খবরের মতো। চোখে মুখে স্পষ্ট। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কি হলো কে জানে? স্বাভাবিক করে নিলো নিজেকে। তারপর বলল,

-তুমি ঠিক বলছো তো? তুমি হানিমুনে যেতে চাও?

এতবার জিজ্ঞেস করলে কি আমার উত্তর পাল্টে যাবে? মেজাজটা বিগড়ে গেল। অসহ্য ছেলে।

-নাহ! মধুচন্দ্রিমায়।

-ওহ!(ছেলেটার মুখ সেকেন্ডে কালো হয়ে গেল।বাকি কথা শুনছে কি আদো?) এই কি বললে?

বিরক্ত হয়ে গেলাম। কি বললে কি বললে শুরু করছে। ওয়াশরুমে এত প্রতিধ্বনি। এক কথা দুইবার করে শুনতে পারছে তাও নাটক।

-মায়াবিনী তুমি সত্যি আমার সাথে যেতে চাও?

-তো বাপ, বউরা আর কার সাথে হানিমুনে যেতে চাইবে?

-(বুকে হাত গুজে দুষ্টু এক হাসি দিয়ে)Ok I see.

ছেলেটার যে মাঝে মাঝে কি হয়ে যায়। বুঝেই উঠতে পারি না।

-মায়াবিনী তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে। আমার মনে হয় তোমারও আছে কথা। রেডি হও। সময় একদিন পাচ্ছো। আজকের রাত টুকু পাবে। কালকে সন্ধ্যার পর আমরা সেইন্ট মার্টিন যাচ্ছি।

বলে ঘটঘট করে বেরিয়ে যেতে নিলো। কি মনে হলো ঘুরে এসে আমার দুই বাহু চেপে ধরে চুমু এঁকে দিলো কপালে। সুখের সান্নিধ্য পাওয়া মাত্র চোখ আবেশে বন্ধ হয়ে গেল। এই একটা শান্তি আমি একটা মাস পাইনি। তবে পেলাম এমন একটা দিনে যেদিন জানলাম আমি মা হবো। হ্যা আমার সন্তানের বাবা আমায় এই এক টুকরো স্বর্গ অনুভুতি দিয়েছে। মনে হচ্ছে আমার পেটে তার সন্তান আছে সে না জানুক কিন্তু যে টান টা আছে তা দ্বারা বাবাকে ডেকেছে। লজ্জায় গাল দুটো রক্তিম হয়ে উঠল। নিবিড় এর ঠোঁটের ভেজানো চুমু আমার কপালে। এর চেয়ে বেশি এখন আর কিছুই চাইনা।

বাসায় পৌঁছে ছিলাম প্রায় সাড়ে ছটার নাগাদ। আমি তাড়াহুড়ো করে নিজের রুমে যেয়ে ফ্রেশ হওয়া শুরু করলাম। বাসায় আপাতত বিচ্ছু পার্টির একটাও নেই। এমন কি আসলে তেমন কেউ নেই। ১০টার মাঝে ফাংশন শেষ করতে হবে বলেই ছয়টার মাঝে চলে গেছে। আমার দুই চাচা আর এক চাচী আছেন। আমি বলে দিলাম তোমরা যাও। আমার একটু দেরি হবে।চাচী যেতে চাইলেন না। কিন্তু চাচীর কাছে গয়না রাখা। না গেলে পরতে পারবে না শশী আপু। তাই জোড় করে সবাইকেই পাঠিয়ে দেই। আমি বাসা লক করে যাবো বললাম। ভাইয়া আর আমার বিয়ে বলে দুইমাসের জন্য বাবা পাশের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নিয়েছেন। যাতে থাকার জায়গার অভাব না হয়। পাশের ফ্ল্যাটটা চাচা লক করে রেখে গেলেন। আধঘন্টার মাঝে আমি রেডি হয়ে যাব জানি। সমস্যা হলো যাব কি করে? হোটেলটা বাসা থেকে বেশ দূরে। আর রাতে আমি সি.এন.জি তে চড়ি না একা। কে এসে আমাকে নিয়ে যাবে? উৎস আসলেও আসা যাওয়ায় সময় লেগে যাবে। নিবিড়কে কল করবো কিনা ভাবছি। দুপুর দিকে ওকে যেভাবে দেখেছি ওমন হলে কখনোই কল করতাম না আর৷ কিন্তু বিকালে শিমুল ভাইয়ার কথা শুনে মনে হয়েছে কল করা উচিত। নিজে থেকে নিবিড়কে কল করি ওর ফোন সুইচ অফ। এইদিকে রান্নাঘরে যেয়ে খেয়ে নিলাম আমার জন্য রান্না করা স্যুপ। দুপুরে খাইনি বলেই রয়ে গেছে। হালকা গরম করে খেয়ে রেডি হতে গেলাম। এইদিকে লাগাতার নিবিড়কে কল করছি। লাভ হল না। তারপর একাই যাওয়ার কথা চিন্তা করলাম। শশী আপু কল করে বলল এনগেজমেন্ট রিং বাসায় রেখে গেছে। পার্লারে যাওয়ার আগে খুলে। একা যাওয়া এখন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভাইয়া বাইরে থেকে প্লাটিনামের মরানো ডায়মন্ড বসানো রিং টা এনেছে।তাই মাকে কল করে জানলাম বাসার গাড়ি করে মা বাবা রুশমি চলে গেছে। নিবিড় অফিস থেকে তখনো ফিরেনি। নীরব নাকি রেডি হচ্ছিল। নীরবের কথা শুনে ওকেই কল করলাম। আমাকে নিয়ে যাবে। টেনশন মুক্ত হলাম। দরজা লক করে বাসা থেকে বের হলাম। নীরব আসতেই বাইকে চড়লাম।

হোটেলে পৌঁছাতে পৌনে আটটা বেজে গেল প্রায়। নিবিড়কে খুঁজছি অনেকক্ষণ যাবৎ। নেই নেই নেই। কোথাও নেই ছেলেটা। আমার প্রেগন্যান্সির খবর কাউকে বলতে পারবো ওকে না জানানো পর্যন্ত। আমি প্রেগন্যান্ট কেউ জানলে বিশাল ঝামেলার শিকার হবো। তার আগে নিবিড়কে জানানো খুব দরকার। ছেলেটাকে খোজে পেলাম না। তার মাঝে ওয়াশরুমেও যেতে হবে। ওইদিক টাতেই যাচ্ছিলাম। আমাকে হটাৎ কেউ হেঁচকা টেনে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে নিলো। মুখ চেপে ছিল বলেই চিৎকার করতে পারলাম না। কি আর করা যাবে।দেয়ালে এত জোরে চেপে ধরলো। রাগে সামনের মানুষটার দিকে তাকাতেই রাগ গলে গেল। কারন সামনের লোকটা আমার হাসবেন্ড বলে কথা। আবার এই লোকটাকেই এতক্ষণ যাবৎ খুঁজে পেলাম না সেখানে নিজেই সামনে এসেছে। তার উপরে তার চোখে মুখে যে পরিমাণ রাগ, রাগে গাল চোখ কান দুটোও লাল হয়ে আছে। সেখানে আমার রাগ রাখার জায়গা পাবো না। তাই দাঁড়িয়ে আমার বরকেই দেখেছি।

চুমু খাওয়া শেষে সে বেরিয়ে গেছে। লজ্জা কাটাতে আমার বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগেছে। পরে আমিও বেরিয়ে এলাম। এসে দেখি আমার নিলজ্জ বলদ ভাই বোন গুলো নিবিড়কে তেল মারছে। মাথায় হাত দিয়ে বললাম,
-সব কয়টা গাধার দল?‍♀️।

কাছে যেয়ে বললাম,
-তা তোদের মধ্যে কে জিতলো?

-কিসের হার জিৎ?

-তোদের দুলাভাই কাকে কাকে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড দিলো?

নিবিড় হা করে আছে আমার কথা শুনে। নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে বলল।
-কি বললে বুঝি নাই।

-ওহ তাই না?

-(নিবিড় কড়া লুক দিয়ে বিচ্ছুবাহিনীর দিকে তাকিয়ে) কে মুখ খুলেছে?

সবকয়টা চুপ।

-কে বলছে বলো বলছি?(ধমকের সুরে)

-এই তুমি আমার ভাইবোনদের বকছো কেন? আমার ভাইবোনেদেরকে আমি না হয় বকতেই পারি। তুমি দুলাভাই হয়ে বকবে কেন?

-দেখ মায়াবী আপি তোর জন্য আমি আজ কি কি করছি বল? তাও দুলাভাই বলছে আমাকে বয়ফ্রেন্ড খুঁজে দিবে না।

-আরে বাস!! কি ব্যাপার মৌ। এখনই দল পাল্টে ফেললে? আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে তিন্নিকেই খুঁজে দিবো।

-সত্যি দুলাভাই? আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম মৌ বেইমান। তাও মানলে না?।

-এই আমি বেইমান? তিন্নি তুই মায়াবী আপি বলে দিয়েছিস দুলাভাই কাল রাতে যা যা বলেছিলো। তাহলে তুই কি?

-ও এই কাহিনি। তবে তিন্নি মৌ বাদ। বাকিরা বলো।

অন্যগুলো বলতে লাগলো। তিন্নি মৌ মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।অবশেষে উৎসের সময় এলো।

-দুলাভাই আমি মায়াবীকে হসপিটালে নিয়ে গেছি। তবে আমি জিতেছি।

-তাহলে উৎসই জিতেছে।

-(সবগুলোকে ভেঙ্গিয়ে) আমি জিতছি। আমার গার্লফ্রেন্ড হবে। আমি তোদের নিউ লিডার। মায়াবীকে লিডার পদ থেকে বহিস্কার করা হলো?।

আমি হাসতে লাগলাম এদের কান্ড দেখে। নিবিড় সত্যি খুব ভালো মনের মানুষ। সবার উপকার করতে চায়। এতে নিজের ক্ষতি হলেও ওর কোনো আপস নেই।

-কিন্তু ভাই তোমার বোনকে সাথে নিয়ে বাসায় আসোনি তো। কেন হে ভাই? সবাই সারাটাদিন টেনশন করেছে কত।

এ কথা শুনে বিচলিত হয়ে গেলাম আমি। এখন সবটা জেনে না যায় নিবিড়।

-কেন? তোমার কাছে তো পৌঁছে দিয়েছিলাম।এরপর থেকে তোমার দেখার দায়িত্ব ছিল।আমার না!?

-কি? আমার কাছে মানে?(আমার দিকে তাকিয়ে)

-তোমার অফিসে।

-কয়টার দিকে?(নিবিড় এখনো আমার দিকেই তাকিয়ে)

-১টার নাগাদ।

-ওহ!(ভ্রু গিট্টু দিয়ে আমাকে দেখে যাচ্ছে)

-কেন তোমার কাছে কখন পৌঁছেছে ঘড়ি দেখোনি? সে যাই হোক নিজের বউকে নিজেই সামলাতে পারো না। আবার আমাকে বলছো!(বলেই নিবিড়কে ভেঙ্গালো)

আমি পরেছি মহা জ্বালায়। নিবিড় কি বুঝে গেছে আমি ওকে আর রুশমি দেখে ফেলেছি? কিন্তু এটা জানলে সমস্যা নেই। ও নিবে কিভাবে সেটা ব্যাপার। আপাতত চোখ দিয়েই খাচ্ছে আমায়। পিচ্চি গুলার সামনে এখনো কোনো কিছু বলছে না। তবে বলবে সিউর আমি।

-দুলাভাই তুমি বলো কে জিতলো? আমি কি তোমার মতো ডেশিং বয় পাবো?

-আমার কিন্তু তোমার মতো সেম টু সেম লাগবে বলে দিলাম।

শুরু হয়ে গেল এদের আদিক্ষেতা।আমার তো শরীর রাগে কাঁপছে। চুপচাপ গিলতে লাগলাম। কতদূর যায় এরা আমিও দেখি।

-ডেশিং তো অনেক পাবো। সেম টু সেম কোথায় পাবো শালিকা?

-(মৌ আর তিন্নি একসাথে বলে বসলো) আছে তো।

-আমার মতো এতো কিছু একসাথে সবার মাঝে থাকে না। আমি তো এক পিছ। তাও তোমাদের বোন পেয়ে গেছে। (বলেই আমাকে চোখ মারলো নিবিড়)

হা হয়েও নিজেকে সামলে নিলাম। এই লোকটা এত বজ্জাত কেন?

-ধ্যাত দুলাভাই কাছাকাছির মধ্যে হলেও চলবে। তোমার একটু ফ্লেবার থাকলেই হবে?।(বলেই মুচকি মুচকি হাসছে তিন্নি)

-আর আমরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারি। দুধ তো মায়াবী আপি পেয়েই গেল। কিন্তু ঘোলটাও খারাপ না। (বলেই আমার দিকে তাকালো মৌ)

আসলে আমার দিকে না আমার পিছনের দিকে। আমার মতো সবাই পিছনে তাকালো। নীরব এইদিকেই আসছে।

-এহেম এহেম চয়েস ভালোই করেছো তবে ওইটাও তো একটাই আছে। দুইজন একসাথে চাইলে কিভাবে? তবে হ্যা ওইটাকেই জিজ্ঞেস করি কাকে নিবে। কি বলো?? (বলেই নিবিড় ও মজা নিচ্ছে)

-এই তোদের বয়স কত রে? পোলা দেখলেই লোভ লাগে? একটা সবে এসএসসি দিয়ে কলেজে উঠেছিস। অন্যটা তো এসএসসি ও দেসনি। আমার জামাইকে নজর দেস সাথে দেবরটাকেও। লজ্জা শরম বলতে কিচ্ছু নেই।

এসব বলতে বলতে নীরব চলে এলো। তাই আর কথা বাড়ালাম না। এইগুলোকে ইশারা করলাম বাঁদরামি না করতে।

-তোমরা সবাই কি করছো?

-নীরব তোকেই খুঁজছিলাম। আয় এখানেই বস।

-জ্বি ভাইয়া।

-এই যে দুইটা মেয়ে দেখছিস এরা আমার প্রিয় শালি। তুই ওদের সাথে থাক। ওদের যা যা লাগবে তাই তাই দিবি। না করতে পারবি না। ওরা যেন কষ্ট না পায়। আজকে রাতের জন্য এটা তোর দায়িত্ব। (বলে উঠে দাঁড়ালো)

-আচ্ছা(বলল বাধ্য ছেলের মতো)। আর তুমি কোথায় যাচ্ছো?

-হ্যা আমি আমার বউ এর সাথে এখন রোমাঞ্চ করবো। তাই প্রাইভেসিতে যাচ্ছি। (বলে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো)

এর না হয় লজ্জা শরম নেই। আমার তো আছে। আমার বন্ধু, ওর বন্ধুদের সামনে এমন করে মানলাম, তাই বলে ছোট ভাই-বোনগুলোর সামনে?

বিচ্ছু সব কয়টা হাসতাছে। রাগ পাচ্ছে আমার ভীষণ। বাঁদরগুলো বলছে হ্যা নিয়ে যাও নিয়ে যাও। এমন ভাব আমাকে তুলে দিচ্ছে। ছেলেটাও আমাকে এদের সামনে কোমড় জড়িয়ে ধরলো একহাতে।একটানে নিবিড় এর সাথে মিশে গেলাম। একটা বড় সড় ঢোক গিললাম। উড়ন্ত একটা চুমুর ভঙ্গিমা করে বলল,

-Come with me darling.

কোনো কথা আর বললাম না এদের সামনে চুপচাপ ওদের সামনে থেকে এসে ধাক্কা মেরে হাত নামিয়ে নিলাম। হেটে চলে আসছিলাম পিছন ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

-বেহায়া!(বলে শশী আপুর কাছে চলে এলাম)

নিবিড় রাগ করলো না হাত সরানোর জন্য। উল্টো পিছনে তাকিয়ে যখন দেখি দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে দুইহাত ঢুকিয়ে রেখেছে। তখন বেহায়া বলায় ঠোঁটের কোণায় বাকা হাসি ফুটে উঠলো।শয়তানি দুষ্টামি টাইপ লুক। আমার পিত্তি টা আবার জ্বালিয়ে দিলো। ভেংচি কেটে চলে এলাম। অসভ্য লোক!

যেয়ে দেখি শশী আপু, শিমুল ভাইয়া, দিহান দিপু সাদি ভাইয়ারা সবাই একসাথে।নীলাও আছে। রুশমিও। সব মরা আমার এখানেই কেন এসে মরে রে বাপ! শশী আপু রুশমির সাথে অলরেডি পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সবার। দেখি শিমুল ভাইয়া রুশমিকে এই সেই জিজ্ঞেস করছে। যেয়ে আমি দাঁড়ানো মাত্রই সবাই আমাকে নিয়ে পরলো।

-মায়াবী ভাবী তোমাকে তো পার্পল শাড়ীতে হেব্বি লাগছে।(দিপু ভাইয়া আমাকে দেখেই শুরু করে দিলো)

-তোর সবসময় ভাবীর দিকে চোখ। কেন রে? মাইর খাইতে খাইতে বেঁচে যাস। তাও এসব ছাড়বি না? (দিহান ভাইয়া বলল ভ্রু উঁচিয়ে)

-প্রতিবার সুন্দরী ভাবী বাঁচিয়েও দেয়?।

-এবার ওইদিকে না দেখে দিপু, এইদিকে দেখ। (রুশমিকে ইঙ্গিত করে বলল নীলা)

-কেন? ওইদিক কেন?(সাদি ভাইয়া বলল)

-নিবিড় তো এই মেয়েকে মন দিয়েছিল বলে আর কারো দিকে তাকায় নাই প্রায় ছ’বছর। কি সুন্দরী দেখ।

মনটা আমার সাথে সাথে ছোট হয়ে গেল। প্রতিবার নীলার কথায় খারাপ লাগে না এতো আজকে যতটা লাগছে। মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলছে।

-নীলা আবার শুরু করলি? তুই কি কোনোদিন থামবি না?(শিমুল ভাইয়া কড়া গলায় বললেন)

-শিমুল তুই চুপ থাক। দিপু মায়াবীকে সুন্দর দেখতে বলে এসব বলে না। নিবিড়কে চেতানোর জন্য বলে। নিবিড় তো চেতে না। যেখানে বললে নিবিড় এর লাগবে সেখান টা দেখিয়ে দিচ্ছি।

-এখন অনেক বেশি বলে ফেলছিস নীলা।

-শশী শিমুল তোরা সবটা জানিস মায়াবীকে বলিস না। আজকে আমি জানিয়ে দিচ্ছি। দিপু প্রতিদিনই মায়াবীর সাথে ফাজলামো করে। নিবিড় ভয় দেখায়। কই কখনো তো আসলেই দিপুকে সিরিয়াস হয়ে কিছু বলে নাই। নিবিড় এর গায়ে যদি সত্যি লাগতো তবে আমাদের সবারই নিবিড় এর রাগ জানা আছে। একবারের মারে দিপু হসপিটাল থাকতো। দ্বিতীয়বার দিপুর সাহস হতো না মায়াবীকে কিছু বলার। অথচ আমি মেয়ে হয়ে একদিন রুশমিকে নিয়ে বলছিলাম। নিবিড় আমাকে বলেছিল মেয়ে না হলে গায়ে হাত তুলতো। সেদিন তো মায়াবীও সেখানে ছিল। (আমার দিকে ফিরে) ছিলে না তুমি?

(আমি নীলার মুখের পানে চেয়ে থাকতে পারলাম না। নিচু করে ফেললাম মুখকে।আবার বলতে লাগলো নীলা)

-দেখলে মায়াবীও ছিল সেদিন দেখেছে। জায়গা মতো বললে সবই হয় বুঝলি?

পিছন থেকে কেউ এসে বলল, হ্যা আমিও বুঝলাম সবটা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here