তোমার_প্রেমে_মাতাল,পর্ব ৩০+৩১(ঝামেলা বিদায়)
লেখিকা_মায়াবিনী (ছদ্ননাম)
পর্ব_৩০
এত শান্তি কেন লাগছে? নিজেকে খুব হালকা লাগছে। প্রিয় মানুষ, নিজের মানুষের সান্নিধ্যে থাকা বুঝি এমনই হয়। এমনি দিন হলে কখন ঘুমিয়ে যেতাম। এতদিন পর বলে বুঝি এমন! কাল রাতেও নিবিড় এর বাহুডোরে ঘুমিয়েছিলাম। অবশ্য কালকে আমি ঘুমানোর পর বুকে জরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু আজকে আমি ঘুমানোর আগেই নিবিড় আমায় বুকে মিশিয়ে নিয়েছে। চাঁদ আজ আমার বরকে দেখতে পাচ্ছে না। কারন আমার দিকে ঘুরে শুয়েছে নিবিড়। চাঁদের আলো আমার মুখে পরেছে। নিবিড় এক দৃষ্টিতে আমায় দেখেই চলেছে। ওর চোখ বলছে আমাকে মায়াবিনী লাগছে। মনে হচ্ছে ওকে এখনই বলে দেই আমি যে মা হতে চলেছি, মায়া আলাদা আঁচড়ে পরেছে আমার মুখ খানায়।
-তুমি এত সুন্দর কেন?
-এতদিন পর দেখার সময় মিলেছে?
-(মৃদু হেসে) হানিমুনে থাকা হলো না। তার জন্য আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি মায়াবিনী। আমারই এমন লাগছে তবে তোমার কেমন লাগছে? আমায় ক্ষমা করে দাও মায়াবিনী। আমাদের নতুন জীবনের সূচনা হয়ে গেছে। আমি আর কিছু তোমায় লুকাবো না। আগেই যদি তোমায় রুশমির কথা বলে দিতাম……
-ইসশ। যা হয়েছে ভুলে যাও। আমাদের আলাদা ভ্রমণের খুব বেশি দরকার নেই। তুমি আমার পাশে থাকো আমার আগের নিবিড় এর মতো। বিশ্বাস কর আমি আর কিছু চাই না। আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই।
-আমাকে তুমি এমনই পাবে। আমায় শুধু কখনো ভুল বুঝো না মায়াবিনী। বড্ড ভালোবাসি তোমায়।
জড়িয়ে ধরে মাথা নিবিড় এর বুকে চেপে ধরলাম। নিবিড় ও শক্ত করে ধরলো। আমি বললাম,
-আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি মাতাল ছেলে।
মনে মনে বললাম,
“তোমায় সারপ্রাইজ দিবো খুব শীঘ্রই আমার বাবুর বাবা।”
সকালে নাস্তা করে রুশমিকে খাইয়ে দিয়ে এলাম। নিবিড় বারবার বলছে অফিসে চলো। রেডি হও লেট হচ্ছে। আমি কোনোরকমে ওকে পাঠিয়ে দিলাম। বললাম রুশমির পাশে থাকবো আমি। তুমি যাও। আর আমি তো সাতদিনের কাজ সেরে এসেছি। দুইদিন পর থেকে যাবো। এইদিকে নীরবকে বলে এলাম রেডি হতে।
-মা আমি একটু বের হবো ঘন্টা খানিকের জন্য। এর মাঝে তুমি রুশমিকে একটু দেখো।
-কোথায় যাবি তুই।
-মা আমি নীরবের সাথে যাবো। কাজ আছে।
-ওই মেয়েকে আমি দেখতে পারবো না।
মাকে যেয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
-এমন করো না মা। এক ঘন্টায় মাঝে ফিরে আসব। কোনো কিছু করতে হবে না তোমার। শুধু ডাকলে যেয়ো।
-আচ্ছা তবে। তুই তাড়াতাড়ি আসিস।
-আচ্ছা মা।
বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে আমি আর নীরব। নীরবকে নিয়ে একটা শপিংমলে গেলাম। নিবিড়ের জন্য একটা শার্ট কিনলাম আর আমার জন্য একটা শাড়ি। হ্যান্ড পেইন্টের। এগুলো পরে আমি আর নিবিড় ঘুরতে যাবো। ওকে বাবা হওয়ার নিউজটা যে দিতে হবে।
নীরবের বাইকে চড়ে গেলাম একটা রেস্টুরেন্টে। রুশমির ফোন আমার কাছেই এখনো। ফোন বেজে উঠলো। লোকটা এসেছে।
-আপনি মিসেস নিবিড় আহমেদ?
-জ্বি।
-আমি আকরাম চৌধুরী। রুশমির হাসবেন্ড। আর আপনি?(নীরবকে ইঙ্গিত করে)
-আমার বন্ধু। আপনি বসুন। আমার নিজের ও কিছু কথা ছিল।
-জ্বি ম্যাম। আমি এখানে আমার ওয়াইফ রুশমিকে নিতে এসেছি। আশা করি আপনি আমায় সাহায্য করবেন।
-আপনি রুশমির সাথে যা করছেন তার জন্য আমি আপনায় কেন সাহায্য করব?
-হ্যা আপনি পারবেন। সেটা আমার জন্য হোক বা আপনার নিজের জন্য। কিন্তু….. (নীরবের দিকে তাকালো)
– Hey Mr. what’s name? Whatever. আপনি যেই হোন আমার সামনেই আপনাকে বলতে হবে। আমি মায়াকে একা আপনার সাথে ছাড়ব না নিশ্চয়ই।
-নীরব প্লিজ!
মিস্টার আকরাম দেখুন নীরব আমার দেবর। আমার হাসবেন্ডের ভাই। আপনি কি বলতে চান ওর সামনেই বলুন।
-ঠিক আছে ম্যাম। তবে ওনাকে বিশ্বাস করাই যায়। উনি নিশ্চয়ই ভাই ভাবীর সম্পর্কের মাঝে চির ধরতে দেবে না।
দেখুন ম্যাম আমার সম্পর্কে আপনি কি জানেন আমি জানি না। তবে আমার সাথে রুশমির সম্পর্ক কেমন তা বলতে চাচ্ছি।
-আপনি আপনার ওয়াইফকে টর্চার করেন। এর চেয়ে ভালো ভাবে আপনি কি বোঝাবেন?
-Excuse me mam! আমি আমার ওয়াইফকে সময় কম দিয়েছি আমি মানি। আমি আমার ওয়াইফকে মাতৃত্বের সাধ দিতে পারব না ঠিকই। কিন্তু আমি আমার ওয়াইফকে টর্চার করি এটা সম্পুর্ন বাজে কথা।
-মাতৃত্বের সাধ? (বলে আমি আর নীরব একে অপরের দিকে তাকালাম)
-জ্বি ম্যাম। আমার আর রুশমির প্রায় এগারো বছরের সংসার। বিয়ের পর রুশমিকে আমি পড়ার সুযোগ করে দেই। সুন্দর একটা মেয়ে স্কুলে পড়ে তাও বিয়ে করি। কারন আমি জানতাম আমি যদি ওকে বিয়ে না করি অন্য কারো কাছে বিয়ে দিয়ে দেবে ওর মা। সুন্দর মেয়ে। যেকোন কেউ ওকে বিয়ে করতো। তাই ভাবলাম বিয়ে করি। আমার সাথে থাকলে ও জীবনে আগাতে পারবে। তাই একটা মেয়েকে বিয়ে করে বাইরে নিয়ে এলাম। পড়ার সুযোগ হল। বিয়ের পাঁচটা বছর এভাবে কেটে গেল। রুশমির ছোট ভাইকেও জার্মান নিয়ে গেলাম। ভলোই চলছিলো আমাদের ছোট সংসার। রুশমির মাকেও প্রতি মাসে টাকা পাঠাতাম। আমরা বেবি নিলেই রুশমির মা আসতে পারত আমাদের কাছে। তাই চাইলাম আমরা। যখন বাচ্চা নিতে চাইলাম তখনই বাধলো সমস্যা। দুইটা বছর চেষ্টা করলাম হলো না। ডক্টর দেখালাম সব নরলাম বলল। এইদিকে হটাৎ রুশমি কনসিভ করল।
-মানে রুশমি প্রেগন্যান্ট ছিল?(অবাক হয়ে বললাম)
-তবে বেবি কোথায়? (নীরব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো)
-বেবি তো নেই। বলছি ক্লিয়ার করে। আমাদের খুশির তখন শেষ নেই। আমার বিজনেস আছে জার্মানে। ওইটার জন্য আমাদের অন্য একটা শহরে যাওয়ার প্রয়োজন পরলো। রুশমি যেতে চাইছিল না। ওর তিন মাস তখন। বললাম একা তুমি এখানে কি করবে? আমার সাথে চলো। ওইটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আমার না হয় ক্ষতি হলোই। রুশমিকে না নিলে আমাদের একটা বাচ্চা থাকতো। এত অঘটন ও ঘটতো না।
-কি হয়েছিল ওইদিন?
আকরাম নামের লোকটার চেহারা কেমন যেন পাল্টে গেল। যেন এক বিভীষিকা চোখের সামনে ঘটতে দেখছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। চোখের দৃষ্টি স্থির নয়। যেন ওনাকে ভয় গ্রাস করে ফেলছে।একটু থেমে আবার একটা শব্দ উচ্চারণ করলেন,
-এক্সিডেন্ট!
-এক্সিডেন্ট?
-জ্বি ম্যাম। একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেল আসার সময়। আমাদের পুরো পৃথিবী ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। আমাদের সন্তান পৃথিবী দেখতে পেল না আর। আমি আর রুশমি বেঁচে গেলাম। কিন্তু জানেন ম্যাম আমি বাবা হওয়ার ক্ষমতা হারালাম।
বলে লোকটা নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন। যেন চোখের পানি লুকাতে ব্যস্ত। নীরবকে ইশারা করলাম পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতে। পানি খেয়ে কিছুটা শান্ত হলো মনে হয়।
-দেখুন ভাইয়া মন খারাপ করবেন না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। এর পেছনেও নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা মঙ্গল দিয়েছেন। ভাইয়া ধৈর্য হারাবেন না। আপনাকে অনেক শক্ত মানুষ লাগে।
-আপনি আমায় ভাইয়া বললেন?
লোকটার চোখ হটাৎ জ্বলে উঠলো।
-জ্বি ভাই। আপনার খারাপ লেগেছে?
-না না বোন। এই প্রথম আমাকে কেউ ভাইয়া ডেকেছে। আমার কোনো ভাইবোন নেই। জানো বোন আমি তাও রুশমির সাথে সংসার করতাম। কিন্তু ওর যেন কি হয়ে গেল। ওহ আমি দুঃখিত আপনায় তুমি বলার জন্য।
-ভাইয়া আপনি আমায় তুমি বলতে পারেন। আমি আপনার থেকে অনেক ছোট। আর আপনার বোন নেই কে বলল? আমায় বোন ডাকছেন? তবে কি বোন নই?
-বোন হতে চাও আমার? কিন্তু যখন জানবে আমার স্ত্রী তোমার সংসার ভাঙতে এসেছে তখনো কি আমায় ভাই মানবে?(আকরাম অবাক হয়ে বলল)
-জ্বি ভাইয়া। আপনি বলুন কি চায় রুশমি। আপনার মত মানুষ ভাগ্যগুনে পায়। এমন ভালো হাসবেন্ড পাশে যার, সে কি করে বলে তার হাসবেন্ড ফিজিক্যালি টর্চার করে?
-আমি সত্যি জানি না বোন। তবে আমি এমন পুরুষ যে ওকে মাতৃত্বের সাধ দিতে পারবে না। তাই হয়তবা। আমার সাথে ওই ঘটনার পর থেকে রুশমির সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। রুশমি কথা কম বলতো। আমার সাথে সবসময় একটা দূরত্ব বজায় রাখা শুরু করে। আমার কোনো কথা না শোনা। আমাকে রেখে লেট নাইট করে বাড়ি ফিরা। এভাবেই চলতে থাকে। একবছর আগে থেকে খেয়াল করি ফোনে বেশি সময় কাটানো। ওর একটা ডায়রি পাই সেখানে দেখি নিবিড় আহমেদ নামের সমবয়সী একটা ছেলের সাথে বিয়ের আগে সম্পর্ক ছিল ওর। ওর ফোন চেক করে দেখি নিবিড় আহমেদ নামের একটা লোকের একাউন্ট বারবার সার্চ করেছে। লোকটা বিজনেসম্যান। এক বছরে অনেক নাম করেছে উনার ফ্যাশন কোম্পানি। উনার বার্থ টাইম থেকে হিসেব করলাম রুশমির সমবয়সী। মানে এই সেই ছেলে। তারপর থেকে নোটিশ করতাম, নিউজে তোমার হাসবেন্ড নিয়ে কিছু দেখালে, বা আর্টিকেল লিখলে রুশমি মনোযোগ দিয়ে তা দেখতো। এইটা নিয়ে একদিন আমি প্রশ্ন করি রুশমিকে। নিবিড় আহমেদকে তুমি এত ফলো করছো কেন? এরপর থেকে আমার সাথে রুশমির আচরণ পাল্টে যায়। সবসময় খোঁটা দিয়ে বলতে থাকে আমি বাবা হওয়ার ক্ষমতা রাখি না তবুও কেন ওকে প্রশ্ন করব। তুমি জানো বোন আমি কোনোদিন ও ওকে হার্ট করে কিছু বলিনি। টর্চার তো দূরের কথা। এভাবে আস্তে আস্তে দেখি রুশমি সবসময় আমার সাথে আচরন আরো খারাপ করতে লাগলো। আমাদের সম্পর্কের আর কোনো বাঁধন ছিল না রুশমি থেকে। কিন্তু আমি ওকে ছাড়তেও পারছিলাম না। এগারো বছরের সংসার আমার।
লোকটা এখন কাঁদছে। ছেলে মানুষ কাঁদলে সত্যি খারাপ লাগে। মনে হচ্ছে এতদিন কাঁদে নাই। আর আজ চোখের পানি বাধ মানছে না। এগিয়ে পানি দিলাম খেতে।
-ভাইয়া আপনি না আমায় বোন বলেছেন? ছোট বোনের সামনে এভাবে ভাঙতে নেই ভাইয়া।
-(চোখ দুটি জ্বল জ্বল করে উঠলো) তুমি খুব ভালো মেয়ে। তোমার জীবন সুন্দর হোক বোন। আমার ওয়াইফ আমাকে রেখে চলে আসে ১ মাস ৭ দিন আগে। বাংলাদেশে এসেছে রুশমি আমি জানতাম। কিন্তু ফোন নাম্বার ছিল না। জানো কে যেন আমায় ফোন করে জানালো রুশমির বাংলাদেশের ফোন নাম্বার। কে সেটা আমি জানি না। এমনকি এরপর থেকে নাম্বারটাও সুইচ অফ। পরে আমাকে ওই নাম্বার থেকে আবার ফোন দিয়ে জানায় রুশমি নিবিড় এর কাছে আছে। তারপর আমি নিবিড় আহমেদের খোঁজ খবর নেই। ১ মাস ৭ দিন আগেই উনি বিয়ে করেছেন। বাংলাদেশে আসার পর আমি রুশমিকে বলি নিবিড় আর উনার ওয়াইফকে তোমার সব কথা বলে দিবো। আর একজনের সংসার আমি তোমায় ভাঙতে দিবো না। এই সব তোমার বানানো প্ল্যান ছিল আমি বুঝে গেছি। রুশমি অনেক ভয় পেয়ে যায়। ফোন অফ করে দেয়। কিন্তু কালকে যখন আবার ফোন দিলাম তখন আমি জানতাম ফোন তোমার কাছে বোন। এই কথা আমাকে ওই নাম্বার থেকেই আগে জানিয়ে ছিল। রুশমির ব্যাপারে সব সত্যি কথা তোমায় বলতে বলেছিল কালকে বিকালে। মানে কেউ একজন রুশমির ব্যাপারে সব জানে। এমনকি তোমার আর নিবিড় এর ব্যাপারেও। কি চায় সে তা জানি না। কখনো মনে হয় রুশমির পক্ষে কখনো মনে হয় তোমার আর নিবিড় আহমেদের সাথে যুক্ত।
-কি বলছেন ভাইয়া এসব?
-আমি সত্যি বলছি। রুশমি একা বাংলাদেশে আসতে পারতো না। ওকে বাংলাদেশের কেউ তো হেল্প করেছে।
-কি করে বুঝলেন?
-ও অনেক বোকা একটা মেয়ে। একা একা কোনোদিনও কিছু করতে পারবে না। আর এই আননন নাম্বার থেকে কল আসাতে বুঝে ফেলেছি কিছু তো ঝামেলা আছেই। রুশমির ভাইয়ের সাথে কথা বলো দেখো ওই ছেলেটাও এসবই বলবে। কারন ও জানে আমার কাছে রুশমিই সব।
-রুশমি আপনার নামে মিথ্যা কথা বলে আমাদের বাসায় আছে। ভাইয়া আমি আপনার সাথে আছি। আপনি কি চান বলুন।
-বোন আমি রুশমিকে চাই। মেয়েটাকে আমি বড় করেছি। এত বছর একসাথে থেকেছি। ওকে নিয়ে যেতে চাই। আমি অনাথ বাচ্চা পালতে চাই। ওকে মা হওয়ার খুশি দিতে চাই। এখন ও যা করছে তা ও বুঝে করছে না। মেয়েটা বড্ড অবুঝ।
রুশমি যা যা করেছে তার জন্য আমি মেয়েটার উপর রাগ হচ্ছে ভীষণ। আমার কাছে থেকে নিবিড়কে রুশমি নিতে পারে নাই। এই জীবনে কোনো নারী তা পারবেও না। কিন্তু ওর নিজের সংসার নিজে হাতে ভাঙতে চাইছে এমন হাসবেন্ড পেয়েও ছেড়ে দিচ্ছে। আসলেই অবুঝ। এখন রাগ না করুণা হচ্ছে মেয়েটার জন্য।
-ভাইয়া আমি আপনাকে আপনার ওয়াইফ ফিরিয়ে দিবো। রুশমিকে আপনি নিয়ে যেতে পারবেন। আমার সংসারে কোনো সমস্যা হয়নি। নিবিড় নিজের বন্ধু মনে করে রুশমিকে হেল্প করছিল। তবে আননন নাম্বার থেকে আপনায় কে ইনফরমেশন দিয়েছে আমি জানি না। আপনি আমাকে নাম্বারটা দিন। আর কালকে আপনি আমার শশুর বাড়ি যাবেন। আমি আপনায় ফোন দিয়ে জানাবো কখন যাবেন। আজকে বাসায় যেয়ে আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে কথা বলবো।
-বোন তুমি সত্যি বলছো রুশমিকে আমি পাবো?
-অবশ্যই পাবেন ভাইয়া। যে পুরুষ নিজের স্ত্রীকে এত ভালোবাসে সে নারী তো ভাগ্যবতী। রুশমি নিশ্চয়ই বুঝবে।
আকরাম ভাইকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম। বাসার নিচে আসার পর নীরব আমার কাছে আননন নাম্বারটা চায়। ও খুঁজে দিবে লোকটা কে। আমি বললাম আমার ফ্রেন্ড আছে আইটি বিভাগের। তাড়াতাড়ি জেনে যাবো। নীরব তাই আচ্ছা বলে ভেতরে চলে যেতে নিলে আমি ডাক দিয়ে থামালাম।
-নীরব!
-বলো মায়া।
-ধন্যবাদ। তুমি না থাকলে আমি কোনোভাবেই আজ সত্যি জানতাম না।
-সত্যি সবাই জানতে পারে একসময়। কখনো আগে কখনো বা সময় ফুরিয়ে গেলে। তবে জানে মায়া। সময় সবকিছু নির্ধারণ করে। সময় যখন চাইবে তখনই তুমি জানবে।
-সেটাই। তুমি ছিলে বলে সময় থাকতেই জেনেছি আমি। বন্ধু তুমি আমার। আমি সত্যি অনেক অনেক লাকি তুমি আমার বন্ধু বলে।(বলে এক গাল হেসে দিলাম)
-তবে ধন্যবাদ দিও না। তোমার খুশির জন্য আমি সব করতে পারি মায়া। তুমি ভালো থাকো আমি এই চাই।
-তুমি কোথায় গিয়েছিলে মায়াবিনী?
————————————————————
#পর্ব_৩১
পিছনে আমি আর নীরব একসাথে তাকালাম। নিবিড় এ সময় বাসায়। অবাক হলাম।
-নিবিড় তুমি এ সময় বাসায়?
-তুমি ফোনটা ধরলে তো আমায় বাসায় আসতে হতো না।
-আমার ফোন মেবি সাইলেন্ট ছিল। কেন ফোন দিয়েছো? না ধরলে বাসায় আসবে? কি আর্জেন্ট এত?(চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
-(হাঁটতে হাঁটতে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে) তুমি রুশমির খেয়াল রাখবে বলে অফিস যাও নাই। সেখানে আমাকে আসতে হল রুশমিকে দেখতে অফিস থেকে। আর তুমি শপিং করতে বেরিয়েছিলে?
আমার হাতে শপিং ব্যাগ শাড়ি পাঞ্জাবির। আমি আর নীরব একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলাম। নিবিড় আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে উপরে চলে গেল। আমরাও ওর পিছু পিছু উপরে উঠলাম।
উপরে যেয়ে শুনলাম রুশমি আমাকে খুঁজছিল। তারপর নাকি ওর ফোন খুঁজছিল। নিবিড়এর সাথে কথা বলবে বলে। আমাকে মা কল দিয়েছিলো আমি ফোন রিসিভ করছিলাম না। পরে নিবিড়কে কল করে। এই দিকে রুশমি নাকি নিজের ফোন বারবার খুঁজছিল। হটাৎ প্যানিক হয়ে যায়। নিবিড় রুশমির জন্য বাসায় এসেছে। মা আর খালা পারছিল না ম্যানেজ করতে। আমি জলদি ওর রুমে যাই। নিবিড় অনেকটা শান্ত করেছে রুশমিকে।রুশমি বেডে শুয়ে আছে। নিবিড় ওর পাশে একটা টুলে বসে আছে।
-মায়াবিনী রুশমির ফোন এনে দাও।
-দিচ্ছি। কিন্তু তুমি তো চলে এসেছো। উনি ফোন দিয়ে কাকে কল করবে? ফোন হাতে না রাখাই ভালো। ওর হাসবেন্ড এখনো বাংলাদেশে। আবার ফোন দিবে আবার প্যানিক হয়ে যাবে।
নিবিড় আমার কথার মানে বুঝতে পেরেছে। তাই রুশমিকে বলল,
-তবে রুশমি ফোন নিয়ো না।
-কিন্তু……
-কোনো কিন্তু না রুশমি।
-নিবিড় তুমি রুমে যাও। আমার রুশমি আপুর সাথে কথা আছে। উনাকে আমি শুইয়ে দিয়ে আসছি। তোমার সাথে ও আমার কথা আছে।
নিবিড় আমার দিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে উঠে যেতে নিলো। রুশমি নিবিড় এর হাত ধরে থামালো। এইদিকে আমার মনে হচ্ছে মেয়েটাকে কষিয়ে থাপ্পড় মারি।
-কিছু বলবে রুশমি?
-আমার কাছে কিছুক্ষণ থাকো নিবিড়।
রাগে পিত্তি জ্বলছে আমার। তাই নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে রুশমিকে বললাম,
-আমি আপনার সাথে মেয়েলি ব্যাপারে কথা বলব। নিবিড় এখানে থাকতে পারবে না।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে রুশমি থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে গেল। রুশমি বিরক্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। তাতে আমার কি? যা বলতে এসেছি তাই বলে চলে যাবো। কালকে থেকে এই ঝামেলা আর নিতে হবে না আশা করি।
-রুশমি আপনার কি মনে হয় না আপনার মিথ্যাচার জানলে নিবিড় আপনায় বাসা থেকে বের করে দিবে?
-মিথ্যাচার মানে? তুমি নিজের টা আমার উপর চাপাচ্ছো? নিবিড়কে বাদ দিয়ে তার ছোট ভাই এর সাথে কি করে বেড়াচ্ছো তা কি নিবিড় বোঝে না?
-How cheap you are!
(অবাক হয়ে বললাম। ভাবছি মহিলা অবুঝ না অসুস্থ।)
-তুমি করলে দোষ নেই আমি করলেই পাপি?
-নীরব আমার বন্ধু। আর আমার নিবিড় এর সম্পর্ক এত ঠুকনো না রুশমি। তোমার মত এমন হাজার নারী এলেও নিবিড় আমাকে ছাড়া কারো দিকে ফিরেও তাকাবে না।
-তাই নাকি? আমি যদি নিবিড় এর মন ঘোরাতে পারি?
-এ আর আদো সম্ভব নয়। আকরাম ভাই যে তোমায় নিতে আসছে।(খানিকটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
-(ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল) মানে?
-তুমি তোমার হাসবেন্ড সম্মন্ধে যা বলেছো সব মিথ্যা। নিবিড় আজই তা জানবে। তোমার মনে হয় তুমি সেই সুযোগ পাবে আর?
-তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছো মায়াবী।
-Just shutup. Don’t call me Mayabi. Just call me Vabi. Understood?
রুশমি মেয়েটা কিছু একটা ভেবে ভেঙিয়ে আমায় বলল,
-ভাবী? ঠিক আছে ভাবী। আপনি দয়া করে আমায় একটা সুযোগ দিন। কিছুদিন সত্যি লুকিয়ে রাখুন। আমি যদি নিবিড়কে আমার কাছে টানতে পারি তবে নিবিড়কে আপনি ছেড়ে দিবেন। আর কি যেন বলছিলেন আমার জন্য আপনি কিছু করতে চান? দিন সেই সুযোগ। যখন নিবিড় আমার কাছে এসে যাবে নিবিড়কে আমার সাথে ভালো থাকতে দিবেন।
অন্যসময় হলে আসলেই মেরেই দিতাম। কিন্তু আপাতত আমি তা করব না। খানিকটা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলাম।
-রুশমি সে সুযোগ আর তুমি পাবে না। পেলেও নিবিড় তোমার কাছে কখনোই যাবে না।কেন জানো? কারন নিবিড় আমায় পাগলের মত চায়। অবশ্য তুমি ভালোবাসা কি জিনিস বুঝবে না। নয়ত আকরাম ভাই এর মতো কাউকে ছেড়ে তুমি আসতে? তুমি ভীষণ বোকা রুশমি। যাই হোক তোমার মতে তোমার ধরনের কোনো উত্তর দেই। অন্য একটা নিউজ দেই যেটা তুমি বুঝবে। যেটা জানলে নিবিড় কেন পৃথিবীর সকল পুরুষ তার বাচ্চার মাকে নিশ্চয়ই ছেড়ে অন্য কারো কাছে যায় না।
-কিহ?? What do you mean?
-তুমি যা ভেবেছো তাই। I’m pregnant. আমি নিবিড় এর বাচ্চার মা হতে চলেছি।
-মা! তুমি মা হচ্ছো মায়াবী? (রুশমির চোখ ছলছল করছে)
এখন সত্যি আমার কষ্ট হচ্ছে। একটা মেয়ে আর কখনো মা হতে পারবে না। এই অনুভূতি আমি বুঝি। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে আমার। নিজেকে শান্ত করে রুশমির পাশে বসলাম। কাধে হাত রেখে বললাম,
-আমি জানি তোমার মিসকারেজ হয়েছে। আবার এও জানি তুমি আর মাতৃত্বের সাধ পাবে না আকরাম ভাই এর সাথে থাকলে। তাই তুমি নিবিড় এর কাছে আসতে চেয়েছিলে। আচ্ছা রুশমি তুমি তো ৩ টা মাস সেই সাধ পেয়েছো। কিছু নারী যে তা কখনোই পায় না। তুমি নিবিড়কে না পাও অন্য মানুষকেও বিয়ে করে মা হতে পারবে কিন্তু আমি তা চাই না। আমি চাই তুমি আকরাম ভাই এর সাথে থাকো। উনিও তো হারিয়েছেন। তুমি চলে গেলে উনি ভালোবাসা হারাবেন, পিতা হবার ক্ষমতাও। তুমি অন্যায় করছো তাও তিনি তোমায় ভালোবাসেন। কি করে এমন একটা মানুষ ছেড়ে দিচ্ছো? পৃথিবীতে কত অনাথ শিশু আছে। তাদের দুই-তিন জনকে দত্তক নাও। দেখবে ভালো থাকবে তুমি আর আকরাম ভাই। এত শিশুকে না পারো একজনকেই দত্তক নাও। তাকে ভালো খাবার দিবে, থাকার জায়গা দিবে, পড়ালেখা করাবে। দেখো তুমি আর আকরাম ওই অনাথের জন্য ভালো থাকবে। কাল তোমায় নিতে আসলে তুমি যাবে আকরাম ভাই এর সাথে? বিশ্বাস কর এত সুখ তোমায় আর কেউ দিবে না। এত ভালোবাসা আর তোমায় কেউ বাসতে পারবে না।
রুশমি এতক্ষণ চুপ করে আমায় শুনছিল। আর চোখ বেয়ে পানি পরছিল ওর। হটাৎ আচমকা আমায় জড়িয়ে ধরলো। হাওমাও করে কাঁদছে মেয়েটা। এতদিন পর বুঝি সত্যি মেয়েটা মন খুলে কাঁদছে। আমিও আজ মন থেকে রুশমিকে জরিয়ে ধরলাম। ওর কষ্ট আজ আমিও সইতে পারছি না। অনেকটা সময় পর ও আমায় ছাড়লো। কোনো কথা হলো না আমাদের আর। ওর রুম থেকে বের হয়ে দরজাটা ভিরিয়ে চলে আসলাম। নিজের রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকে মুখটা ধুয়ে নিলাম। এত কষ্ট আমার হচ্ছে তবে রুশমির কেমন লাগছে!!
মনটা এতটাই বিষন্ন, কথা বলছি না কারো সাথে। নিবিড় অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে আমার। কোনো উত্তর দিতে ইচ্ছে হয়নি। খালাকে দিয়ে রুশমির রুমে খাবার পাঠিয়েছি। আর ওকে ফেস করতে ইচ্ছে করছে না। কোনোরকম খেয়ে নিলাম।
দক্ষিণে বারান্দাটি হওয়ায় সবসময় বাতাস বইতেই থাকে। এত মিষ্টি বাতাস তবুও মনটা বড়ই উতলা। বুকের ভেতর কেমন হাহাকার লাগছে। বিকালে বারান্দার দোলনায় বসে আছি। নিবিড় দুই কাপ চা এনে আমার পায়ের কাছে বসলো। যেন টের পেলাম না। আমার কোলে মাথা রাখলো নিবিড়। হটাৎ কারো ছোঁয়া পেয়ে চমকে উঠলাম। আমার হাত টেনে ওর মাথায় রাখলো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তারপর আমার হাত টেনে নিলো নিবিড় মুখের কাছে। হাতে ওর ঠোঁটের ছোঁয়া পেলাম। তারপর মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো ছেলেটা।
-আমার বউটার চোখ ফুলে আছে। কেঁদেছে কেন সে? মন খারাপ কেন এত? কে আমার বউটাকে কষ্ট দিয়েছে?
-তোমার জীবনে তুমি কি চাও নিবিড়?
-তুমি আমার জীবনের লক্ষ্য ছিলে যা আমি সারাজীবনের জন্য পেয়ে গেছি। অন্য যা পেয়ে তা কখনো আমায় চায়তে হয়নি। আর কোনো কিছুর অভাব আমার নেই। আমি সবসময় সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
-এছাড়া আর কিছু চাও না তুমি? ভেবে বলছো?
আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিবিড়। তারপর বলল,
-আমি একটা ছোট্ট মায়াবিনী চাই। একদম একই রকম। ওর ছোট ঠোঁট দিয়ে বাবা ডাক বের হবে আমার জন্য।
এখন আমার মনটা পুরো ঘুরে গেল৷ এই ছেলে কেবল আমায় ভালোই বাসে না। আমার মন পড়তেও জানে। নিবিড়এর চোখ মুখ জ্বলজ্বল করছে। দুইহাত দিয়ে ওর মুখ ধরলাম। কপালে চুমু এঁকে দিলাম।
-নিশ্চয়ই আপনার এই চাওয়াও পূরন হবে শীঘ্রই জনাব।
-তা বেগম সাহেবা আপনি যেহেতু বলছেন তাই হবে। এই ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি শুরু করতে হবে।(বলেই চোখ মারলো)
-যাহ! অসভ্য কোথাকার। (বলেই মুখ ভেংচি মারলাম)
(মনে মনে ভাবছি এটা আগেই করে ফেলেছো। তাড়াতাড়ি তোমায় জানাবো। লজ্জা লাগছে খুব। আসলেই ছেলেটা নিলজ্জ)
-(মুচকি দুষ্টু হেসে বলল) এত কি ভাবছো? চা খেয়ে নাও। ঠান্ডা হয়ে গেল।
আমরা চা খেলাম দোলনায় পাশাপাশি বসে। নিবিড় এর কাঁধে মাথা রেখে।
-আমি তোমায় কিছু বলতে চাই নিবিড়।
-বলো।
-রুশমি নিয়ে।
-কি হয়েছে?
-আজকে আমি বাইরে গেছিলাম তুমি তা জানো। কেন গেছিলাম তা জানো না।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-কেন গিয়েছিলে?
-যা বলব মনোযোগ দিয়ে শুনবে। আগেই রাগ করবে না। আমায় শুনবে আগে তারপর যা করার করো। কিন্তু না শুনে চেতে যাবে না। ঠিক আছে?
-(কিছুক্ষণ ভেবে)আচ্ছা।
-আমি রুশমির হাসবেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছিলাম।
আমার কথা শোনা মাত্র নিবিড় উঠে দাড়িয়ে জোরে জোরে না বরং চিৎকার করে বলা শুরু করলো,
-মায়াবিনী? ওই রকম একটা লোকের সাথে তুমি কিভাবে দেখা করতে পারলে? যদি তোমার কিছু হত? আমাকে না বলে কি করে কাজটা করলে? তুমি বাইরে থেকে আসার পর কাঁদছো। কথা বলছো না। নিশ্চয়ই লোকটা বাজে কিছু করেছে? আমি লোকটাকে মেরেই ফেলব।(বলে বারান্দা থেকে চলে যাচ্ছিল)
হাত ধরে টান দিলাম দোলনা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে।
-তোমাকে বললাম শোনো আগে। তুমি কি শুনবে? আমি একা যাইনি নীরবকে নিয়ে গিয়েছিলাম।
নিবিড় দাঁড়িয়ে রইলো ঠায়। আর রাগ দেখালো না। আমি সব খুলে বললাম। নিবিড় এখন চুপচাপ আমার সব কথা শুনছে। গাম্ভীর্যের মাত্রা ওর চোখেমুখে অনেক বেশি। বারান্দার রেলিঙের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। রেলিং ধরে আকাশের দিকে আছে নিবিড়।
-মায়াবিনী তুমি সব জানতে তাই না? কি করে আমায় এত বিশ্বাস করলে?
যেয়ে নিবিড়কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার দুই হাত নিবিড়ের বুকে রেখে বললাম,
-আমার ভালোবাসার বর তুমি। তোমায় অবিশ্বাস কি করে করি? আমার প্রেমে মাতাল সে।
আমার হাতের উপর হাত রেখেই নিবিড় বলল,
-তোমার প্রেমে মাতাল আমি মায়াবিনী। আজীবন আমায় এমন বিশ্বাস করো।
বলে আমার হাত সরিয়ে আমার দিকে ঘুরলো। তারপর আবার বলল,
-আমি যদি কখনো তোমার কাছে থেকে কিছু লুকাই, আমায় কি ক্ষমা করে দিবে?
ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলতে চাচ্ছে নিবিড়। আমার মুখের উপর থেকে খোলা চুল গুলো সরিয়ে দিল। তারপর আমার ডান গালে ওর বাহাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শরীর শিউরে উঠলো আমার। দুই হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরলো। চোখে চোখ রেখে বললাম,
-আমি তোমায় পাঁচ বছর আগে যেমন ভালোবাসতাম আজ ও এমনই ভালোবাসি। কিন্তু বিশ্বাস দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদি আমায় কিছু লুকাও আর আমি তাও তোমায় বিশ্বাস করছি, তবে জানবে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হচ্ছে। আর কিছু সত্যি লুকানো ভালো। সব সত্যি সবসময় জানতে নেই। সত্য এমন জিনিস সামনে আসবেই। যখন যা জানার প্রয়োজন তখন একাই সামনে চলে আসবে। এসবই সময়ের খেলা। এসব নিয়ে ভাবতে হবে না তোমায়।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ আমার মাথা ওর বুকে চেপে ধরলো। আমরা একে অন্যের সাথে মিশে গেলাম। সন্ধ্যার এই আকাশ, ডুবা সূর্য আমাদের প্রেমের সাক্ষী হবে। নিশ্চিন্তে শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছি। নিবিড় কিছু কি এখনো লুকাচ্ছে? আমি জানি না। তবে মন খারাপ হচ্ছে না। কারন আমি জানি যা সত্যি তা একদিন আমি জানবো। নীরব আজ এই সুন্দর কথাটাই যে বুঝিয়েছে। নিবিড় এর বুকে একটা বড় চুম্বন দিয়ে আবার মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলাম। নিবিড় আমার মাথায় চুমু দিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার পুরোনো মাতাল ছেলে!
চলবে…….