আলো_আঁধার,part_1

0
2722

আলো_আঁধার,part_1
writer_Tahsina Islam Orsha

এয়ারপোর্টে সবার সামনে হাত থেকে পাসপোর্ট আর ভিসা কেড়ে নিলো আঁধার। অনেক চেষ্টা করেও ভিসা আর পাসপোর্ট হাতে রাখতে পারলাম না। আঁধার আমার শরীরের আধছেঁড়া জামা ঢাকার জন্য মাটি থেকে ওড়না তুলে শরীরর ঢেকে দিতেই উৎসুক জনতা আমাদের দিকে আরো গভীর দৃষ্টি মনোনিবেশ করলো। তারা বেশ মজা পাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে। ওড়নার এক অংশ ছিড়ে সদ্য কাটা হাতে ওড়নার এক অংশ নিজেই পেচিয়ে নেয়। আমার চোখ দিয়ে শুধু অনবরত পানি বের হচ্ছে কোন কথা বলতে পারছিনা।

কিছুক্ষণ আগেই মারামারি করেছে আঁধার। আলো এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকবে তখনি একটা ছেলে বাহিরে থেকে টিটকারি মারছিলো এমনিতেই আলোর মেজাজ খারাপ ছিলো, ছেলের কথায় আরো মেজাজ চড়ে যায়। কথা গুলো সহ্য করতে না পেরে এগিয়ে গিয়ে ওই লাফাঙ্গা ছেলেকে চড় বসিয়ে দেয় গালে। চড় বসিয়ে দিতেই ওই ছেলে আলোর ওড়না হেচকা টানে শরীর থেকে ফেলে দেয় আর ডান হাতের বাহুর দিকে জামা ছিঁড়ে ফেলে। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে মজা নিচ্ছিলো। হঠাৎ আঁধার এসে ওই ছেলেকে লাথি মারতেই ছিটকে দূরে পড়ে যায়। ওই ছেলের কাছে চাকু ছিলো চাকু বের করে আঁধারকে আঘাত করতে আসলেই আঁধার চাকু বাম হাত দিয়ে ধরে আরেকটা ঘুসি মেরে ফেলে দেয়। তারপর মাটিতে ফেলে ইচ্ছে মতো মেরে ছেলেটাকে পুলিশে দেয়।

আঁধার আলোর পিছু পিছুই আসছিলো কিন্তু ট্রাফিকে আটকে গিয়ে লেট হয়ে যায়৷ আলোকে আটকাতেই তার পিছু নেওয়া। আজকে যদি আরেকটু লেট করে আসতো সে, কি হতো ভাবতে পারছে না আঁধার। আজকাল কারো কিছু হলে বিপদে পড়লে মানুষ এগিয়ে আসে ঠিকি কিন্তু সাহায্য করতে নয় কেমেরা অন করে ছবি তুলতে আর ভিডিও করতে আসে।

আঁধার দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করছে আর হাতে ওড়নার ছেঁড়া অংশ ভালো ভাবে বাধতে বাধতে
‘ ফিরে চলো

আলোর কান্নার আওয়াজ আরো দিগুণ বেড়ে গেলো। কেন সে যাবে? যাবে না সে।
‘ যাবো না আমি আপনি চলে যান। কেন এসেছেন এখানে! আমি তো সব কিছু ছেড়ে চলেই এসেছি কেন পিছু এসেছেন আবার?

আধার নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে উপরের ঠোঁট কামড়ে ধরে

‘ আই থঠ তুমি একটা চালাক মেয়ে বাট একচুয়েলি তুমি একটা ডাফার।

আলো উদ্বিগ্ন চোখে আধারের চোখে তাকিয়ে
‘ আপনি যা-ই বলেননা কেন আর যা-ই ভাবেন না কেন আমি আর ফিরছিনা। এতো অপমান আর ধিক্কারের পরেও আপনাদের মনের খায়েশ মিঠেনি? আমি অনাথ হতে পারি অসহায় নই। মামুনি, আনিশা, তিন্নি, ফায়েজ, মামা আপনার ফেমিলির সবাইকে নিয়ে আপনি ভালো থাকুন তা-ই চাই।

আঁধার আলোর ডান হাত শক্ত করে ধরে

‘ তোমার কথায় শেষ কথা নয়। তুমি যাবে এবং এখন এই মুহুর্তে যাবে। ডেম ইট। আলোর কাজই সবাইকে আলো দেওয়া। নিজের আলোয় সবাইকে মুগ্ধ করা। চাইলেও সবার থেকে আড়াল করা যায়না আলোকে।

আলো আধারের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে ।
‘ আমি ক্লান্ত আর না প্লিজ। আলো বেলা শেষ হতেই আধারে হারিয়ে যায়। সবাই জেনে গিয়ে ভালোই হয়েছে অন্তত এখন আর নাটক করতে হবেনা। আপনি যান চলে যান আ আমি যাবো না ( কান্নার মাঝে হেচকি তুলে) আর এখন আমি আপনার সাথে গেলে সবাই আমায় তা-ই ভাববেন যা ভাবছে হয়তো তার থেকে বেশি খারাপ ভাববে। আমি আসলে কারো আদর ভালোবাসা ডিজার্ভ করিনা। এমনিতেও ভালোবাসা পাইনি কারো আর যাদের পেয়েছিলাম তাদের ভালোবাসাও হারালাম।

‘ দেখো ভুল তো তোমার ছিলো না। ভুল আমার ছিলো। আমি সব ঠিক করে দিবো তুমি ফিরে চলো।

আলো বা হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে

‘ না সব ভুল আমারই ছিলো।

আধার কপালে হাত দিয়ে ঘসছে
‘ কান্না বন্ধ কর। তুমি এতো ছিঁচকাঁদুনে কেন? চলো বাসায় ফিরবে৷

‘ আমি যাবো না মানে যাবো না। কথা বুঝেন না আপনি?

‘ ওকে ফাইন তাহলে থাকো তুমি এইখানে আমি গেলাম।

আলো অবাক হয়ে
‘ আমার পাসপোর্ট আর ভিসা দিয়ে যান।

আধার আর কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিতেই আলো দৌড়ে গাড়ির পিছনে যাচ্ছে আর বলছে

‘ আধার আমার পাসপোর্ট ভিসা দিয়ে যান প্লিজ।

আধার আর পিছনে ফিরে তাকায়নি একবারের জন্যও। আলো মাটিতে বসে পড়ে।

হঠাৎ ই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয় সবাই ব্যাস্ত হয়ে আশ্রয় নেয় বৃষ্টি হাত থেকে বাঁচার জন্য কিন্তু আলো ওখানেই বসে আছে ওভাবে। এখন আলো কি করবে। পাসপোর্ট আর ভিসা ছাড়া তো সে যেতে পারবে না। আধার কেন করলো এমনটা। সবার থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য সে দেশের বাহিরে যেতে চেয়েছিলো। ভালো স্টুডেন্ট হওয়ায় ভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পায়। এই সুযোগে সবার থেকে আড়াল হতে চেয়েও পারলো না আলো।
.
.
আলো বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়েই ছিলো। তাদেরও টাকা পয়সার কোন অভাব ছিলো না। ক্লাস এইটে ওঠার পর তার মা মারা যায়। এর দুই মাসের মাথায় মারা যায় বাবা। অনেকে বলে স্ত্রীর শোকেই মারা গিয়েছে উনিও। স্ত্রীকে নাকি খুব বেশিই ভালোবাসতো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তারা। আলোর চাচারা কৌশলে আলোদের জায়গা সম্পত্তি সব নিয়ে যায়। মামার বাড়ি কিছু দিন থাকতেই আলোর মামি বেশ উৎপাত করতে শুরু করলে আধারের মা মমতা জাহিদ আলোকে ওদের বাড়ি নিয়ে যায়। আঁধারের বাবা মা আলোর দূর সম্পর্কের মামা মামি। আধারের আব্বু তেমন পছন্দ করতো না আলোকে। তখন আঁধার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করছিলো। আধার ইউএস চলে যাওয়ার পর পাঁচ বছর থেকে এক বছর হলো দেশে এসেছে। আধার আলোকে বন্ধুর মতোই দেখতো। অনেকে ওর সাথে বাজে বিহেভ করলেও আঁধারের আচরণ ছিলো কোমল।

মমতা জাহিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে আঁধারের বিয়ের কথা বলতেই আঁধার কিছটা ঘাবড়ে যায়। কারন সে একজনকে ভালোবাসে আর সে ইউএস ই থাকে। ওরা ও বাঙালি পরিবারের সবাই ইউএস থাকে। আঁধারকে অনেক চাপ দিচ্ছিলো আঁধার কোন উপায় না পেয়ে আলোর কাছে যায়। সেদিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে আলোর। কি সুন্দর করে আলোর সামনে এসে

‘ আলো আমায় বাঁচাও এই বিপদ থেকে। তোমায় তো বলেছি আমি একজনকে ভালোবাসি। এখন আমি কি ভাবে বিয়ে করবো অন্য কাউকে। আর তন্নি এখন দেশেও আসতে পারবে না। ওর এক্সাম চলছে। ওর বাসায়ও কিছু জানায়নি ও।

‘ কিন্তু আমি কি ভাবে সাহায্য করবো বলুন?

‘ আমি বলবো আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমরা লুকিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলেছি। তাহলে আপাতত ওরা আমায় চাপ দেবে না। আমি সিউর ওরা আমাদের আবার বিয়ে দিতে চাইবে ততদিনে তন্নির এক্সামও শেষ হয়ে যাবে। ওকে দেশে এনেই আমি সব সত্যি বলে দিবো।

‘ কিসব বলছেন আপনি?!! আমি এইসব পারবো না। তাছাড়া এতো বড় মিথ্যা আপনি জানেন ওরা কত কষ্ট পাবে পরে জানতে পারলে?

‘ প্লিজ আলো আমার হাতে আর কোন অপশন নেই আম্মুকে সরাসরি না-ও করতে পারছিনা আম্মু অসুস্থ। আমি তন্নিকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্লিজ আমার এই হেল্পটা করো। তোমার কখনো এমন হলে আমি সাহায্য করতাম না বলো?

‘ আমি পারবো না আঁধার এটা অনেক বড় একটা বিষয়।

আঁধার চুপ থেকে কিছুক্ষণ
‘ আমি তোমায় সব চেয়ে কাছের বন্ধু ভেবেই বলেছিলাম আর কোন উপায় না পেয়ে। থাক কি করবো আর। সবার ভালোবাসা তো আর কপালে জুটে না তন্নির ভালোবাসাও হয়তো আমার কপালে নেই।

আঁধার চলে যেতে নিলেই আলো পিছন থেকে ডাক দেয়

‘ আঁধার ঠিক আছে আমি রাজি কিন্তু বেশি দিন না সত্যিটা শিগগিরই বলে দিবেন।

আঁধার খুশি হয়ে প্রথম আলোকে জড়িয়ে ধরতেই আলো কেঁপে উঠে ।

‘ থ্যাংস আলো। আমি জানতাম তুমি আমার পাশে থাকবে।

সেদিনই আঁধার অনেক মিথ্যে বানিয়ে বলে সবাইকে। মমতা জাহিদ এতো খুশি হয় যেন সে এটাই চেয়েছিলো। ছেলে যে লুকিয়ে বিয়ে করেছে সেই ভাবনা তার মাথায় নেই। কিন্তু আঁধারের আব্বু আর বাকি সবাই অনেক রাগ করেছিলো সেদিন।
.
.
.

গাড়ির হর্ন বেজে চলেছে আলোর সেদিকে কোন খেয়াল নেই। হঠাৎ একজন এসে আলোকে ধাক্কা দিতেই আলোর হুশ ফিরে আসে। আলো উঠে দাঁড়িয়ে হাটতে শুরে করে।

আঁধারের বাড়ি ছাড়া তো আলোর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। প্রায় সন্ধ্যায় আলো বাড়িতে ঢুকতেই সবাই আলোর কাছে গিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করছে। মমতার দিকে আলো তাকাতেই উনি কষ্টে মুখ ফিরিয়ে নেয় আলো দিক থেকে। আঁধার বসে এমনভাবে
সন্ধ্যার নাস্তা খাচ্ছে যেন কিছুই হয়নি।
আলো ভিজে একাকার আনিশা (আঁধারের বোন) আলোকে নিজের ঘরে পাঠায় সবার প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচিয়ে।

????

গভীর রাতে আলো আঁধারের রুমে এসেছে। আলোর ঘুম আসছে না। এতো কিছুর মাঝে তার কি ভুল ছিলো? সে তো শুধু ভালোবেসে ফেলেছে আঁধারকে তাতে ওর দোষটা কোথায়?

আলো আঁধারের পা জোড়া ধরে ফুপিয়ে কান্না করছে। আঁধারের ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের মাথায় চুমু দিতেই আঁধার বলে উঠে

‘ কে?…………..

চলবে………….

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here