আলো_আঁধার,part_2

0
1787

আলো_আঁধার,part_2
writer_Tahsina Islam Orsha.

আলো আঁধারের পা জোড়া ধরে ফুপিয়ে কান্না করছে। আঁধারের ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের মাথায় চুমু দিতেই আঁধার বলে ওঠে
‘ কে?

কোন সারাশব্দ নেই। আঁধার ঘুম ঘুম চোখে পাশে থাকা টেবিল ল্যাম্পটা অন করে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে কেউ নেই। আঁধার আবার লাইটটা অফ করে ঘুমিয়ে যায়।

এদিকে আলো নিচু হয়ে বেডের পাশে ফ্লোরে বসেছিলো। লাইট অফ করতেই আলো বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেয় বিছানায়। ভালো লাগছে না শরীরটা। হয়তো ধরা পরে যেতো আজ আঁধারের কাছে, একটুর জন্য বেঁচে গেছে। দু’দিন পরই আঁধারের বিয়ে অথচ মন মানছে না আলোর। এখানো এমন বাচ্চামি করার কোন মানে হয়না। কিন্তু মনকে কিভাবে বোঝাবে সে? মন তো তার কথা শুনছে না। আঁধারের জন্য এখনো কেন এমন আওয়াজ তোলে মন, জানা নেই তার।
অভিনয় করতে করতে ভালোবেসে ফেলার বিষয়টা প্রকান্ড বিচ্ছিরি বিষয়। সে আরেকজনকে ভালোবাসে জেনেও না জানার ভ্রম করে ভালোবেসে ফেলাটা সত্যিই অন্যায়। কেন সে করতে গেলো এই বাজে অভিনয়টা এমন না করলে হয়তো আজ না আঁধারকে ভালোবাসতো, না পরিবারের সকলের কাছে খারাপ হতো ।

সকালে নাস্তার টেবিলে বসে সবাই নাস্তা করছে। আনিশা, ফায়েজ বসে বসে ফোন ঘাটছে আর খাচ্ছে। আঁধারের আব্বু চা নাম নিয়ে
আঁধারকে বসতে দেখে মমতা জাহিদ আঁধারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে
‘ আলো কোথায়?

আঁধার নিজের প্লেটে খাবার নিতে নিতে
‘ কেন!? আসেনি একবারো?

‘ ওকে সকাল থেকে একবারো দেখিনি। অন্যদিন তো এসে সব কাজ গুছিয়ে রাখে। আজ এখনো রুম থেকে বের হয়নি। ওর সাথে রাগ করে কথা না বললেও চিন্তা তো ঠিকি হয়। ওটা কি ও বুঝবে?

আঁধার মুখটা গম্ভীর করে
‘ আমি ডেকে নিয়ে আসছি তুমি বসো।

আঁধার অনেকক্ষণ ধরে নক করছে কিন্তু আলোর কোন সারাশব্দ নেই। এতো বেলা পর্যন্ত আলো কখনো ঘুমায়না। দিনের আলো ফোটার আগেই ঘুম থেকে উঠে যায়। আঁধারের এবার একটু ভয় হলো। আঁধার কোন রেসপন্স না পেয়ে দরজায় একটু জোরে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়৷ এতো কেয়ারলেস মেয়ে দরজাটা লাগিয়ে ঘুমায়নি। ভিতরে প্রবেশ করে দেখে আলো কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে জড়সড় হয়ে। আঁধার কয়েকবার ডাক দিলো উঠার নাম নেই। এতো কিভাবে ঘুমায় মানুষ এতো ডাকার পরও একটুও রেসপন্স নেই। আঁধার চলে যেতে নিয়ে আবার কি মনে করে আলোর মাথার কাছে এসে বেডের কোনায় বসে। সে অদ্ভুতভাবে কেন তাকিয়ে আছে আলোর দিকে বুঝতে পারছে না তবে তাকিয়ে থাকতে কেন যেন ভালো লাগছে ভীষণ। আলোর মুখের উপর কিছু চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে দেখে আনমনে চুলগুলো সরিয়ে দিতে গিয়ে শক খায় আঁধার। ভীষণ গরম লেগেছে আলোর শরীর। ভালো করে দেখতে কাপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে আলোর শরীর।

আঁধার মমতা জাহিদকে তড়িঘড়ি করে ডাকতে শুরু করে। মমতা জাহিদ আঁধারের এমন ভয়ের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি করে আলোর রুমে এসে দেখে আঁধার একটা রুমাল ভিজিয়ে আলোর কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।
মমতা জাহিদ আলোর দিক থেকে চোখ সরিয়ে আঁধারের দিকে উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে

‘ আঁধার কি হয়েছে আলোর?

আঁধার ব্যস্ত হয়ে
‘ প্রচন্ড জ্বর আসছে। ধরে দেখো শরীর পুড়ে যাচ্ছে।

মমতা জাহিদ একটু এগিয়ে আলোর শরীর ধরে দেখে আসলেই জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। মেয়েটা কখনো কাউকে কিছু বলে না। চিন্তা দিতে চায়না। রাতেই হয়তো জ্বর এসেছিলো কাউকেই কিছু বলেনি।

‘ আঁধার ডাক্তারকে ফোন কর না হয় তুই নিয়ে যা ওকে হাসপাতালে অনেক জ্বর শরীরে।

‘ হুম মা সেটাই ভাবছি একটা প্যারাসিটামল দাও আগে। জ্বরটা কমলে নিয়ে যেতে হবে।

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আলোর জ্বর কমছে না কিছুতেই। আঁধার আর কোন উপায় না পেয়ে আলোকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসায় হাসপাতালে যাওয়ার জন্য সাথে আনিশাকে নিয়ে নেয়। আলোকে এডমিট করেছে ওর কন্ডিশন দেখে। ডাক্তার বলেছে ওর শরীর আর মনের দুটোর কন্ডিশনই খারাপ তাই এমন হয়েছে। বেশি ভেজার ফলে এমন হয়েছে।

বিকেলে আলোকে ডিসচার্জ করে দেয়। আসলে ডাক্তার থাকতে বলেছিলো কিন্তু আঁধার ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। সব কিছুই আঁধারের জন্য হয়েছে। আঁধার তখন এমন না করলে হয়তো এতোসব কিছু হতোই না। না বাড়ির সবার কাছে আলো খারাপ হতো। আঁধার তো নিজের সন্তান তাকে সবাই সহজেই মাফ করে দিয়েছে কিন্তু আলোকে তা করেনি। আঁধারের সবসময় একটা গিল্টি কাজ করে এখন। আলোও অসুস্থ হয়েছে ওর জন্য রাস্তায় একা ছেড়ে না আসলে এমন হতো না। জোর করে নিয়ে আসলেই হতো উল্টো রাগ দেখিয়ে চলে আসাটা ঠিক হয়নি।
.
.
এইদিকে তন্নি এসেছে আঁধারের বাড়ি। বিয়ের গহনা কিনতে যাওয়ার কথা ছিলো আজ। কিন্তু এসে দেখে আলো অসুস্থ। আঁধার বসে আছে আলোর কাছে হাত ধরে। তিন্নিকে দেখে আঁধার উঠে জড়িয়ে ধরে ওকে। আলোর ভিতরটাই মোচর দিয়ে ওঠে ওদের একসাথে দেখে। কি পাপের ফলে আল্লাহ তাকে এতো বড় শাস্তি দিচ্ছে বুঝতে পারছে না সে। কেন এমন হলো এতো কিছু জানার পরও কেন ভালোবেসে ফেললো আঁধারকে। কেন মেনে নিতে পারছে না দুজনকে একসাথে?!

তিন্নি আঁধারকে ছেড়ে

‘ এখন কেমন আছো আলো?

আলো জোর করে হাসির রেখা টেনে
‘ ভালো আছি এখন।

‘ আজকে কিন্তু শপিংয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে। শুধু আঁধারকে নিয়ে গেলে হবে বলো? ওতো কিছুই পছন্দ করে দিতে পারবে না উল্টো আমাকে কনফিউজড করে দেবে। তাই তোমাকে নিয়ে যাবো ভেবেছিলাম।

আলো মলিন হেসে
‘ তাতে কি আনিশা আছে ওকে যাও।

আঁধার আলোর কথার মাঝে
‘ আজকে যাওয়া হবে না তোমায় অসুস্থ রেখে শপিংয়ে যাবো নাকি আমি!!

আলো আঁধারের দিকে তাকিয়ে
‘ কেন! কি হয়েছে আমি তো এখন সুস্থই আছি আপনি তিন্নিকে নিয়ে যান। বিয়ের তো আর দেরি নেই সব শপিংই বাকি এখনো ।

আঁধার এক কথার মানুষ সে যাবে না আজকে মানে যাবে না। এর মাঝেই আনিশা আসে আলোর রুমে

‘ আলো এখন কেমন আছিস?

‘ হুম এখন ভালো।

‘ শোন আজকে রেস্ট নিবি শুধু, বিছানা ছেড়ে উঠবি না। তুই তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি আজ। সবাই কতো চিন্তা করছিলো। মা তো কান্না করতে করতে শেষ।

আলোর চোখে একটু পানি জমা হলো মামুনির কথা শুনে। যতই রাগ করুক না কেন তিনি এখনো ভালোবাসে আলোকে আলো জানে সেটা।

‘ ভাইয়া মা তোকে ডাকছে৷ তিন্নির শপিংয়ে যেতে হয়তো

আঁধার মুখ কালো করে
‘ আজকে যাবো না মাকে বলে দে।

‘ আমি আছি তো আলোর কাছে তুই যা সমস্যা নেই। তাছাড়া তিন্নিরও তো পরে অনেক কাজ থাকবে। বারবার তো সময় পাবে না শপিংয়ের।

আলো আনিশার হাত ধরে
‘ আপনি যান আনিশা তো আছেই।

আঁধার আলোর কাছে আবার বসে
‘ তুমি সিওর আমি যাবো।

আলো মনে মনে বলছে যাবেন না আঁধার প্লিজ থাকুন না আমার পাশে। আমার যে আপনার সাথে ভালো লাগে ভীষণ

‘ কি হলো আলো কথা বলছো না কেন?

আলো চোখ বুজে আবার খোলে

‘ হুম যান।

তিন্নি আলোর কপালে হাত দিয়ে

‘ সাবধানে থেকো তুমি, আমি আবার আসবো।
আর যা করেছো আমার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না।

আলোর খুব ইচ্ছে হচ্ছে বলে দিতে সে ভালোবেসে ফেলেছে আঁধারকে। আলো কিছু বলতে যাবে তিন্নিকে………….

চলবে………….

বিঃদ্র:- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here