আলো_আঁধার,part_5,6
writer_Tahsina_Islam_Orsha.
part_5
বুকের ব্যথার সাথে মাথার ব্যথাটাও বেড়েছে
মনে হচ্ছে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে আলোকে বেশি ব্যথা দিতে পারে দেখার জন্য । চিনচিনে ঘাম ঝড়ে পড়ছে আলোর। ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে কিন্তু যেতে পারছে না চাইলেই কি পালিয়ে যাওয়া যায়?আমাদের নিয়মনীতিতে পালিয়ে যাওয়া মানা। তবে সহ্যের সীমানা লঙ্ঘন হয়ে গেলেও সহ্য করে ধৈর্য ধারন করাই আমাদের নিয়মে আছে শেখানো হয়। তবে ভিতরে ঝর বইবে আর মুখে ফুটে উঠবে না তা কি করে হয়?
আঁধার সামনে এগিয়ে
‘ আলো তুমি ঠিক আছো? রুমে গিয়ে রেস্ট কর যাও। আর মা তুমি এসব কি বলছো, হুটহাট এমন সিদ্ধান্তের মানে কি? তুমি একবারো কি আলো আর ফায়েজকে জিজ্ঞেস করেছো ওরা রাজি কিনা?
মমতা জাহিদ ধমকের সুরে
‘ তোকে কে কথা বলতে বলেছে আমার কথার মাঝে? আমি আমার সিধান্ত ভেবে চিন্তেই নিয়েছি। আর আমি জানি এই সিধান্তে আলো
দ্বিমত পোষণ করবে না। আর ফায়েজের মত আমি এখন নেবো। আনিশারও তো কাবিন হয়ে আছে। এইবার আমি চাই আলোর বিয়ে দিয়ে শান্তিতে মরতে।
ফায়েজের মা শান্তা উদ্বিগ্ন হয়ে
‘ কিন্তু আপা তাই বলে আলো? আমি আমার ফায়েজের সাথে আলোর বিয়ে করাতে পারবো না।
মমতা জাহিদ ভ্রুজোড়া কোচকে
‘ কেন? আমার আলোর মাঝে কি কম? এর থেকে ভালো মেয়ে তুমি পাবে ফায়েজের জন্য? আমি আলোকে আমার ছেলের বউ করেই রাখতাম আমি মনে প্রানে তাই চাইতাম যেদিন শুনেছিলাম ওদের বিয়ে হয়ে গেছে আমার থেকে খুশি আর কেউ হয়নি। কিন্তু আমার চাওয়া যে পূর্ণ হবে না সব মিথ্যে ছিলো তাতো আর আমি জানতাম না। আঁধার অন্য কাউকে ভালোবাসে তা-ও আগে বলেনি। এই লক্ষী মেয়েকে আমি আমার ঘরেই রেখে দিতে চাই। আঁধার ছাড়া ঘরের ছেলে ফায়েজই আছে শুধু। তাই আমি ফায়েজের সাথে আলোর বিয়ে দিতে চাই। তুই যদি সামান্যতম আমার সম্মান করিস তাহলে আমার কথা মেনে নিবি।
শান্তা চোখে ভীরুতা নিয়ে
‘ আপা আপনি ফায়েজকে জিজ্ঞেস করেন। ওর তো একটা মত আছে। আর ও যা চাইবে তাই হবে।
এই দিকে আলোর প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি করবে আলো? মনে প্রানে দোয়া করছে যাতে ফায়েজ রাজি না হয়।
মমতা জাহিদ এই বার গম্ভীরমুখে তাকালো ফায়েজের দিকে। ফায়েজের গলা এর আগেই শুকিয়ে গেছে। এই বাড়ির কর্তা আঁধারের আব্বু হলেও এই বাড়ির কাজ কর্ম চলে মমতা জাহিদের কথায়।
‘ তা ফায়েজ তুই তো সবই শুনলি। এইবার তোর মতামতের উপর ভিত্তি করেই এই বিয়ের সিধান্ত আগানো হবে। এখন বল তুই কি বলিস?
ফায়েজ চুপ করে আছে দেখে ফায়েজের মা শান্তা
‘ ও রাজি না আপা বুঝতে পারছেন না?
মমতা জাহিদের চোখ দেখে শান্তা চুপ হয়ে বসে।
‘ কি হলো ফায়েজ তোর মুখ থেকে আমি শুনতে চাই।
ফায়েজ আলোর দিকে তাকিয়ে
‘ তুমি যা ভালো মনে করো বড় মা। আমি আর কি বলবো? আঁধার ভাইয়ার মতো আমিও কখনো তোমার অবাধ্য হয়নি।
মমতা জাহিদ ভীষণ খুশি হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। এই দিকে আলো নিস্তব্ধ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে শুধু নীরবে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে। মিথ্যে সম্পর্কের কাছে হেরে ভালোবেসে এখন সত্যিকারের সম্পর্কে কি তাকে ভালোবাসতে পারবে? অচেনা হয়ে যাচ্ছে সব অনুভূতি। অধরা স্বপ্ন আরো ধরা ছোঁয়ার বাইরে গিয়ে অধরা হয়ে যাচ্ছে। নিয়ম। নিয়তির নিয়মে হয়তো তাই হওয়ার ছিলো
আঁধার তাকিয়ে আছে আলোর মলিন চেহারায়
‘ মা ফায়েজ না হয় তোমার কথা ফেলবে না কিন্তু আলো? আলোকে কি একবারো জিজ্ঞেস করেছো ওর পছন্দ কি? ও কি চায়? সবারই নিজের পছন্দ থাকে।
মমতা জাহিদ এই বার আঁধারের কথার জবাব দিলো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে উঠে আলোর কাছে যায়। আলো এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মমতা জাহিদ আলোর কাছে গিয়ে দুবাহুতে ধরে
‘ আলো আমার সিদ্ধান্তে কি তুই রাজি নয়?
আঁধার আলোর দিকে তাকিয়ে একটু জোরেই
‘ বলো আলো কিছু বলার থাকলে এখন বলো।
আলোর মনে পড়ছে আঁধারের তিন্নিকে জড়িয়ে ধরার কথা। মনে পড়ছে প্রতিটা লাইনের কথা যা তিন্নির জন্য লিখেছে আঁধার। কিছুই তো করার নেই। আঁধার তো তিন্নিরই কেন সে আশা রাখবে আঁধার ভালোবাসবে তাকে? এর চেয়ে সব উপায় বন্ধ হয়ে যাক। সব বেদনা সুর তুলুক
না, না, না, আঁধারকে ভালোবাসি না। ভালোবাসি না আমি আর তাকে।
মমতা জাহিদ আলোকে হালকা নাড়িয়ে
‘ কি হলো আলো বল তুই রাজি কিনা?
আলো চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে
‘ হ্যা আমি রাজি।
আর কিছু বলার আগেই মমতা জাহিদ পরম আদরে আলোকে বুকে টেনে নিলো। আলোকে কাছে বাধার এর থেকে ভালো উপায় আর নেই তার কাছে। এই দিকে আলো তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে আর আঁধার আলোর বেদনা ভরা চোখে।
.
.
.
পরদিন সকালে তোড়জোড় শুরু হয়েছে গায়ে হলুদের আয়োজন। আলো আর ফায়েজকে নিয়ে আবার শপিংয়ে যাওয়া হয়। শপিং শেষ হতে দুপুর হয়ে যায়। ওই দিকে তিন্নির বাসায় সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয় দুটো বিয়ে এক সাথেই হবে। আত্মীয়-স্বজনে ভরে গেছে বাড়ি। অনেক কাজ থাকায় আলো তৈরি হতে পারেনি। কয়েক গাড়ি ভরে আত্মীয়-স্বজনে আগে চলে যায় গন্তব্যে। ফায়েজ, ফায়েজমের আম্মু আর আঁধারের আব্বু , চলে যায় আরেক গাড়ি দিয়ে।
আলোকে সাজানো হচ্ছে আঁধার অপেক্ষা করছে আলো তৈরি হওয়ার পর কিছু কথা বলবে তাই।
আঁধার মমতা জাহিদের কাছে গিয়ে
‘ মা তুমি যাও অনেক গেস্ট চলে এসেছে নাকি ফায়েজ ফোন করেছিলো। আর তিন্নিদের ওখান থেকেও সবাই চলে এসেছে। আমি আলোকে নিয়ে আসছি তুমি গিয়ে ওদিকটা সামলাও। মমতা জাহিদ আঁধারের কথায় সায় দিয়ে চলে গিয়েছে। আলোর সাজা শেষ হবার পর নিচে নেমে দেখে কেউ নেই। অবাক হয়ে যায় সবাই ওকে রেখেই চলে গেলো নাকি। আরো কয়েক সিড়ি নিচে নামার পর দেখে আঁধার বসে আছে হলুদ রঙা পাঞ্জাবি পড়ে।
কাঁচা হলুদ রং খুব মানিয়েছে আঁধারকে। ভালো লাগছে ভীষণ দেখতে। আলো অবাধ্য চোখ জোড়া নিচে নামিয়ে ফেলে না চাইতেও। তাকে দেখা বারণ যে কিনা তার না।
আলোকে নামতে দেখ আঁধার উঠে দাঁড়ায়। চোখ দুটো আপনা আপনি ঠেকে আলোতে। কোন রাজকন্যা নেমে এসেছে মনে হচ্ছে। হলুদাভ লেহেঙ্গা পড়েছে আলো। কানে, হাতে লম্বা কাঁচা ফুল
আলো নিচে নেমে মাথা নুইয়ে
‘ সবাই কি চলে গেছে?
আঁধারের কোন উত্তর না পেয়ে আলো আঁধারের দিকে তাকিয়ে দেখে আঁধার চেয়ে আছে আলোর দিকে।
আলো আবার মাথা নুইয়ে জিজ্ঞেস করে
‘ সবাই কি চলে গেছে?
আঁধার ঘুম থেকে জেগে উঠার মতো করে
‘ ওহ হ্যা হ্যা। সবাই চলে গেছে তোমায় নিয়ে যেতেই আমি বসে আছি।
সারা রাস্তায় কারো সাথে কারো কথা হলো না। আঁধার কিছু জিজ্ঞেস করতো আলোকে তাও ভুলে গিয়েছে আলোকে দেখে। কিছুক্ষণ পর পর লুকিয়ে লুকিয়ে না চাইতেও আলোর দিকে তাকাচ্ছে আঁধার ।
আলো, আঁধার পৌছানোর পর দেখে সবাই ওদের জন্যই বসে আছে। তিন্নি আঁধারকে দেখে খুব খুশি হয়ে
‘ সুন্দর লাগছে ভীষণ।
আলোকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিন্নি আলোর কাছে যেতেই আলো জড়িয়ে ধরে তিন্নিকে। তিন্নিকে ও আলোকে ধরে
‘ তুমি পুরোপুরি সুস্থ হয়েছো?
আলো তিন্নিকে ছেড়ে চোখে মুখে কঠোরতার রেশ টেনে
‘ কি ভাবে সুস্থ হবো? সব অসুখ কি ভালো হয়?
আজীবনের জন্য হাসিমুখে এই অসুখ বরণ করে নিলাম। সব অসুখ সারানোর ঔষধ থাকে না।
‘ ঠিক বুঝলাম না আলো।
এমন সময় মমতা জাহিদ এসে আলোকে ডেকে নিয়ে যায় কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। আলোর কান্না পাচ্ছে ভীষণ কিন্তু যথেষ্ট নরমাল থাকার যথারীতি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সবার সাথে কথা বলে আলো ফায়েজের কাছে যাওয়ার পথে হেচকা টানে কেউ আলোকে সরিয়ে নেয়। হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ছাদে…………….
চলবে………….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
#আলো_আঁধার
#part_6
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.
হেচকা টানে কেউ আলোকে সরিয়ে নেয়। হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ছাদে। সামনের পরিচিত মুখটা খুব বেশিই চেনা। তবুও এই চেনার মাঝে এক আকাশসম অপরিচিত অভিমান। যার জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করে সারাজীবন ব্যয় করে দেওয়া যাবে। কিন্তু সে তার হবে না। হ্যা আঁধার আলোকে টেনে নিয়ে এসেছে ছাদে কিন্তু কেন? সে তো তিন্নিকে ভালোবাসে। কিন্তু এই ভাবে আলোকে টেনে নিয়ে আসার মানে জানতে আলো ব্যাকুল হয়ে আছে।
আলো রুক্ষভাষী হয়ে
‘ কেন নিয়ে এসেছেন এইখানে?
আঁধার আলোর দুবাহু ধরে
‘ আলো লুক এট মি। দেখো তুমি কি সত্যিই বিয়েটা করতে চাও? তুমি যদি না চাও তাহলে বিয়েটা হবে না কেউ তোমায় জোর করতে পারবে না। আমি আছি তো৷ তুমি কি সত্যিই রাজি বিয়ের জন্য?
আলোর চোখে সহস্র অশ্রুরা কায়দা করে জায়গা নিতে চাইছে কিন্তু আলো তাদের পথ আটকিয়ে
‘ তাতে আপনার কি আঁধার? আমি রাজি কি রাজি না এতে আপনার কিছু যায় আসবার কথা নয় । আমি যেমন আছি ঠিক আছি। আমি জানি মামুনি আমার জন্য খারাপ কোন সিধান্ত নেবে না। উনি যা সিদ্ধান্ত নেবে আমার ভালোর জন্যই নেবে। তাছাড়া আপনারও তো বিয়ে আপনি আপনার বিয়েতে ফোকাস না করে এসব নিয়ে কেন ভাবছেন?
‘ কারন তুমি আমার ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ড হিসেবে ফ্রেন্ডের চিন্তা করা খারাপ কিছুতো আমি দেখছি না৷ সত্যিই যদি বিয়েতে তোমার মত না থাকে আমি মাকে বলবো। এই ভাবে ফায়েজ আর তোমার দুজনেরই লাইফ নষ্ট হবে।
আলো মুখ ঘুরিয়ে নেয় আঁধারের দিক থেকে। ভিতরে কিছু হচ্ছে কিন্তু শান্ত থেকে
‘ সেগুলো আপনার ভাবতে হবে না।
আঁধার মুখে গাম্ভীর্যতা বাড়িয়ে
‘ আমি তোমার চোখে বিষাদ দেখেছি।
‘ বিষাদে তাকিয়ে দেখবেন না এতে বিষন্নতা বেড়ে যাবে।
আলো চলে যেতে নিলেই আঁধার আলোর হাত ধরে ফেলে আকস্মিক যার ফলে আলোর হাতে পড়া চুরির অনেক গুলো ভেঙে কিছু আলোর কব্জিতে লেগে কেটে যায় আর কিছু আঁধারের হাতে ঢুকে যায় ভেঙে। আলো চোখ বন্ধ করে ফেলে ব্যথায়। এদিকে আঁধার উফ বলে উঠে। আলো আঁধারের শব্দ শোনে চট করে আঁধারের দিকে ঘুরে দেখে উনার হাত কেটে গেছে। অল্প অল্প রক্ত বের হচ্ছে। আলো তার হাত দিয়ে চেপে ধরে আঁধারের হাত। যাতে রক্ত বের না হয়। এই দিকে আলোর হাত থেকেও রক্ত বের হচ্ছে সেই দিকে আলোর খেয়াল নেই৷ আঁধার আলোর ভেজা চোখ থেকে চোখ সরিয়ে হাতের দিকে তাকাতেই দেখে আলোর হাতেও রক্ত। তার হাতও কেটে গেছে একটু।
‘ আলো তোমার হাতও কেটে গেছে রক্ত বের হচ্ছে।
আঁধার পকেট থেকে রুমাল বের করে আলোর হাত থেকে বের হওয়া রক্ত মুছে দিয়ে ফুঁ দিচ্ছে। আর আলো তাকিয়ে দেখছে আঁধারকে
‘ আমার কথা না শোনে চলে যেতে না নিলে কিন্তু এখন হাত কাটতো না।
‘ আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি যাবো৷। আমাকে যেতে দিন।
‘ আগে বলো তুমি এতো মনমরা কেন থাকো তুমি কি বিয়েতে রাজি নয়?
আলো একটুখানি নিঃশ্বাস ছেড়ে
‘ আমি রাজি বললাম তো।
‘ তাহলে তুমি হাসিখুশি নয় কেন? সেই চঞ্চলতা কেন নেই আলো? তুমি কি কাউকে পছন্দ করো? করলে বলো আমি মায়ের সাথে কথা বলবো তোমার চিন্তা করতে হবে না। এখনো সময় আছে…….
আর কিছু বলার আগেই আলো ধাক্কা মেরে আঁধারকে দূরে সরিয়ে দেয়৷ বিমূর্ত হয়ে কান্নায় ভেঙে বসে পড়ে নিচে
আঁধার হতভম্ব হয়ে যায়। কি এমন বলে দিলো আলোকে ভাবার চেষ্টা করছে। না খারাপ কিছু তো বলেনি। তাহলে আলো এমন করছে কেন? আবার ভাবার চেষ্টা করলো আঁধার খারাপ কিছু বলেছে কিনা
আঁধার হাটু গেড়ে বসে আলতো করে আলোর হাতে হাত রেখে
‘ আলো কি হয়েছে। কাউকে পছন্দ করো? ভালোবাসো? দেখো সময় আছে বলো আমায়।
আলো আবার শরীরের সব টুকু শক্তি একত্র করে আঁধারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে
‘ সময়? কিসের সময়ের কথা বলছেন আপনি?
সত্যিই কি সময় আছে? বিয়েটা কি থামানো যাবে আর আপনার? আর কি চাইলেও কখনো বলতে পারবো ভালোবাসি আপনাই? ভালোবাসি? হ্যা ভালোবাসি। আপনাকে ভালোবাসি( কান্না মুছে) ইচ্ছে করে জেনে শুনে তো বাসিনি শুধু বেসে ফেলেছিলাম। ভালোবাসা কি নিয়মনীতি মেনে হয়? যদি তাই হতো তাহলে আপনি আরেকজনকে ভালোবাসেন জেনেও কেন ভালোবেসে ফেললাম আমি? না আমি এই দিকে যেতে পাচ্ছি না ওইদিকে। কেন এতো শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে? আমি একটু একটু করে মারা যাচ্ছি, তাতে কি আপনার কিছু আসে যায়? কেন শুনতে চাইছেন সব? ঠিক করতে পারবেন সব? ভালোবাসতে পারবেন আমায়?
আলোর কান্নার মাত্রা বেড়েই চলেছে
‘ কেন আমায় তখন অভিনয়টা করতে বাধ্য করেছিলেন কেন? আমি তো চাইনি এমন হোক তাহলে কেন হলো এমন? সত্যিই কি সময় আছে? আর চাইলেই কি হাজার বাহানা দিয়ে আপনাকে দেখতে পারবো? আপনি এখন অন্য কারো আমানত। আমায় আর বাধ্য করবেন না আপনাকে ভালোবাসতে মিথ্যে মায়া দিয়ে আর যাইহোক বেঁচে থাকা যায় না। আলোর বুকে আঁধার নামিয়ে দিয়েছেন আপনি। এমনটা না হলেও হতো।
আলো কথা গুলো বলে আঁধারের সামনে দিয়ে নেমে গেলো নিচে। নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আঁধার। আঁধারের চারপাশে শন শন আওয়াজ তুলেছে বাতাস। আলোর সব গুলো কথা বার বার কানে কোন দুঃখী কবির কবিতার মতো বাজছে। সব কিছু মুহুর্তে উলোটপালোট হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। যার ধ্বংসশেষ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আঁধার।
আলোর নিচে গিয়ে সবাইকে দেখে জ্ঞান ফিরে এসেছে মনে হচ্ছে। একটু আগে কি করেছে আলো? আলোর মনে হতেই কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ে চেয়ারে। আঁধারকে সব বলে দিয়েছে! কি ভাবে বলে দিতে পারলো সব? ছিহ আঁধার আলোকে কি ভাবছে? নিশ্চয় খুব বাজে মেয়ে ভাবছে। যে কিনা বিয়ে ঠিক হবার পরও হলুদের দিন তার মনের কথা বলে বেড়ায় অন্য পুরুষকে। কি ভাবে সামনা করবে আলো আঁধারের? আলো কি ভাবে এখন আঁধারের সামনে যাবে। সারাজীবন একি বাড়িতে থেকে আঁধার জানবে আলো ভালোবাসে আঁধারকে আর আলো মাথা নিচু করতে হবে। আলোর লজ্জায় আর নিজের উপর ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
.
.
.
সবাই আলো ফায়েজ, তিন্নি আর আঁধারকে ডেকে নিয়ে যায়। সেন্টারের দুপাশে দুটো মঞ্চে সাজানো হয়েছে। যেভাবে বসলে দুই পক্ষই একে অপরকে সামনে থেকে খুব ভালো ভাবে দেখতে পারবে। একপাশে আলো আর ফায়েজ বসেছে আরেক পাশে তিন্নি আর আঁধার। আলো লজ্জায় আর ভয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। আঁধার চুপ করে চেয়ে আছে আলোর দিকে।
প্রথমে হলুদ লাগানো হয় আঁধার আর তিন্নিকে তারপর আলো আর ফায়েজকে।
নাচ-গান আর আড্ডার মধ্যে দিয়ে হলুদ শেষ হয়।
সকালে তোড়জোড় শুরু হয় বিয়ের। সবাই সাজগোছ হৈ-হুল্লোড় নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে আলোর মনে তুফান আরো বড় হয়ে আসছে। সব শেষ হয়ে যাবে একটু পর। আঁধার হয়ে যাবে সব নীতি মেনে অন্য কারোর।
নিয়মের নীতিতে তাকে বাধতে না পারি
কিন্তু অনুভুতির অনুভুতিতে সব সময় বেধে রাখবো। সেই অনুভুতিতে তার বাধাগ্রস্ত করার কোন হক থাকবে না। কারো হক থাকবে না।
তবে আঁধার কি ভাবছে ভেবে আরো বেশি অস্বস্তি লাগছে। আলোকে সাজানো শেষ হয়েছে অনেক আগেই একটু পরই হয়তো বিয়ে পড়ানো হবে। এই দিকে বাহিরে চিৎকারে চেচামেচির শব্দে আলো রুম থেকে বেড়িয়ে যায় দেখার জন্য কি হয়েছে।
আঁধার ব্যস্ত হয়ে তিন্নিকে খুঁজছে। কোথাও তিন্নি নেই সাথে অনেকেই তিন্নিকে ডাকছে। মমতা জাহিদ ব্যস্ত হয়ে
‘ আঁধার ফোন কর তিন্নিকে।
আঁধার ফোন বের করে কল দেয় কিন্তু নাম্বার বন্ধ বলছে। তিন্নির বাবা-মা ও ভয়ে কান্না করছে। কিন্তু তিন্নি কোথায়? আলো ভেবে পাচ্ছে না তিন্নি কোথায় যাবে। এই দিকে তিন্নির এক কাজিন একটা চিঠি নিয়ে এসে আঁধারের হাতে দেয় এটা নাকি ওর টেবিলে পাওয়া গেছে।
কাউকে মন থেকে চাইলে নাকি পুরো দুনিয়া ষড়যন্ত্র রচনা করে একে অপরকে মিলিয়ে দিতে। তবে কি তাই হয়েছে?………..
চলবে………
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।