আলো_আঁধার,part_9,10
writer_Tahsina_Islam_Orsha.
part_9
আলো আঁধারের পা দুটো ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে। দু’হাতে আলতো করে পায়ে ধরে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় পায়ের উপরিভাগে।
আঁধারের দিকে তাকিয়ে
‘ ভালোবাসার শাস্তি এতো বড় হবে জানলে কখনো ভালোবাসতাম না আঁধার। আপনাকে না পেয়ে যতটা কষ্ট আমি পেতাম তা হয়তো মেনে নিতে পারতাম কিন্তু আপনাকে পেয়ে যে কষ্টে আপনাকে দেখছি তা আমি মেনে নেবো কি ভাবে আঁধার? পাওয়ার থেকে পেয়ে হারানোর যে ভীষণ যন্ত্রণার। এখন যে আমার আজীবন নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে থাকতে হবে। তিন্নি আমার জন্যই আপনাকে ছেড়ে গিয়েছে এর দায় তো আমারই।
সকালের স্নিগ্ধ কোমল সজীবতা ঘুম ভাঙাতে পারেনি আলো আঁধারের।
সকাল আটটায় ঘুম ভাঙে আঁধারের। ঘুম ভাঙতেই গতকালের কথা ভাবতেই বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে আলো নেই। দু’হাত দিয়ে চোখে মুখে চেপে ধরে চুল গুলো ঠিক করে উঠতে যাবে তখনি পায়ের সাথে কিছু একটা লাগতেই তাকায় পায়ের দিকে। আলো ঘুমিয়ে আছে। আলো ফ্লোরে বসে পায়ের কাছে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে । কিন্তু ওকে তো বেডে ঘুমানোর জন্য বলেছিলো আঁধার! পায়ের কাছে বা কখন বসলো?
আঁধার পা টেনে আস্তে করে উঠে বসে। মেয়েটা কখনো ভালো হবে না যা বলবে সব সময় তার উল্টোটা করবে। কপট রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নেয় আঁধার। কি মনে করে আবার নিচে তাকিয়ে হাটু গেড়ে আলোর কাছে বসে তার দিকে তাকায়। চুল গুলো সরিয়ে দিতে যাবে তখনি কিছু একটা মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে যায় আবার।
আঁধার ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আলো এখনো এই ভাবে বসে বসে ঘুমাচ্ছে।
‘ রাতে কি ঘুমায়নি নাকি ( মনে মনে)
আঁধার তৈরি হয়ে ঘড়ি হাতে দিতে নিলেই ঘড়িটা হাত থেকে পড়ে যায়। আওয়াজ হতেই আলোর ঘুম ভেঙে যায়। আলো এদিক সেদিক তাকিয়ে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ায়। লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা। তাহলে আঁধার দেখে ফেলেছে আলোকে এই ভাবে! কি ভাবছে আঁধার, খারাপ কিছু ভাবছে না তো? আলো কিছু বলতে নিলে আঁধার খেয়াল না করার মতো ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে বসে পড়ে বেডের এক সাইডে। ফেসবুক লগইন করে স্ক্রল করছে। আলো চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে যায়। গতকাল রাতেই আলো গোসল করতো কিন্তু করেনি রাতে গোসল করলে তার সাইনাসের সমস্যাটা বেড়ে যায়।
চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখে আঁধার এখনো বসে ফেসবুকে স্ক্রল করছে। আলো কি বলবে আঁধারকে? কিছু বললে এখন হয়তো রাগ দেখাবে। আলোর চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে তোয়ালে দিয়ে চুল ঝাড়া দিতেই আঁধারের চোখে মুখে গিয়ে চুলের পানি ছিটকে পড়ে। আঁধার চোখ মুখ বন্ধ করে ফেলে মুহুর্তে। আঁধার রাগ দেখাতে আলোর দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায়। ভেজা চুলে আলোকে অনেকবার দেখলেও এমন সুন্দর লাগেনি কখনো। টিপ টিপ পানি পড়ছে চুল দিয়ে।
আলো আয়নার সামনে বসে ক্রিম দিচ্ছে মুখে। হঠাৎ দেখে আঁধার তাকিয়ে আছে তার দিকে। আলোও আঁধারের দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পেরে আঁধার ল্যাপটপটা শাট ডাউন করে হন হন করে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে৷
রাগ হচ্ছে ভীষণ রাগ হচ্ছে আঁধারের নিজের উপর। কেন সব কিছু এই ভাবে উলোটপালোট হয়ে গেলো। মুহুর্তেই তুমুল ঝড়ে সব কিছু বদলে দিয়ে গেছে। যা হবার নয় তাও হয়ে গেছে যা হবার ছিলো তাও হয়ে গেছে৷
ফায়েজ রাইসার পাশে বসে বসে তাকে দেখছে। কি সুন্দর বিছানার এক পাশে জড়সড় হয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটা বড্ড অভিমানী এখনো। সারা রাত বুকে পড়ে কান্না করেছে। ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হতে দেখছিলো কান্না তো করবেই। কিল ঘুসি কম খেতে হয়নি রাতে। কিন্তু ফায়েজই বা কি করতো? বড় মায়ের কথা ফেলা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না । তাই রাইসাকে বলে দিয়েছিলো সে বিয়ে করতে যাচ্ছে আঁধারের সাথেই, আলোকে। তাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ। বিয়েতে যেন রাইসা অবশ্যই আসে৷ মেয়েটা কিছুই বলেনি হয়তো নিঃশব্দে কেঁদেছিলো কিন্তু তার আওয়াজ পৌঁছাতে দেয়নি ফায়েজের কান পর্যন্ত। রাইসা কখনোই অভিযোগ করেনা ফায়েজকে, শত কষ্ট পাক তবে অভিযোগ করবেনা। কষ্ট লুকিয়ে রাখার জন্য তার মনে সমুদ্র লুকিয়ে রেখেছে, সে নিজেই একদিন বলেছিলো। ফায়েজ যতই বলুক না কেন আমায় বলবে যা-ই সমস্যা হবে, আমার কাছ থেকে কোন কষ্ট পেলে কিন্তু সে কখনো বলবে না। এই জিনিসটা ফায়েজের অসহ্য লাগতো। অভিযোগ ভালোবাসা বাড়ায় কমায় না।
রাইসা চোখ খুলে দেখে ফায়েজ তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফায়েজকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে পায়ের কাছে কাঁথা ছিলো সেটা হাতে নিয়ে মুখ ঘুরে ফেলে সে। ফায়েজ
কাঁথা সরিয়ে দেয় রাইসাকে দেখতে কিন্তু রাইসা আবার মুখ ঢেকে ফেলে। ফায়েজের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি উদয় হলো ফায়েজও চলে গেলো কাঁথার ভিতরে। রাইসা ফায়েজের মতলব বুঝে উঠে চলে যেতে নিলেই ফায়েজ টান দিয়ে রাইসাকে আবার কাছে নিয়ে আসে। রাইসা ফায়েজের বুকে মাথা রেখে কান্না করে,
‘ আবার কি হলো রাইসা কান্না করছো কেন?
রাইসা দু’হাতে ফায়েজকে ধরে
‘ যদি তোমার বিয়ে হয়ে যেতো গতকাল? আমার কি হতো ফায়েজ?
ফায়েজ রাইসাকে শক্ত করে ধরে
‘ হয়নি তো তাই না? যা হয়নি তা নিয়ে কেন মন খারাপ করছো রাইসা? আল্লাহ তাই করবে যা আমাদের তকদিরে লেখা আছে। এটাই হয়তো লেখা ছিলো তাই এমন ভাবে সব কিছু হয়েছে। আমরা চাইলেও তো ভাগ্য বদলাতে পারবো না তাই না?
আঁধার নিচে যেতেই মমতা জাহিদ আঁধারকে দেখে খুশি মুখে
‘ আঁধার আলো কি এখনো ঘুমাচ্ছে? গতকাল সবার উপর দিয়ে যা গেলো সবাই অনেক ক্লান্ত ছিলো তাই ডাকিনি কাউকে। আলো উঠেছে?
আঁধার সোফায় বসতে বসতে
‘ হ্যা উঠেছে।
‘ তাহলে সাথে নিয়ে আসলি না কেন?
বলতে বলতেই আলো নিচে নেমে আসে। মমতা জাহিদ আলোকে দেখে সামনে এগিয়ে গিয়ে
‘ তুই ঠিক আছিস?
আলো আঁধারের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মমতা জাহিদের দিকে তাকায়
‘ হ্যা মামুনি ঠিক আছি আমি। আসলে মাথা ব্যাথার জন্য সকালে উঠতে পারিনি।
মমতা জাহিদ আলোর মাথায় হাত দিয়ে
‘ ভালো করেছিস ঘুমিয়ে। এখন সবাই বসে পড় নাস্তা করতে।
এর মধ্যে ফায়েজ আর রাইসাও এসে উপস্থিত হয়। ফায়েজের আম্মু শান্তা
‘ রাইসা তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
রাইসা মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়। খাবার টেবিলে সবাই বসতেই মমতা জাহিদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে
‘ বিয়ে যেভাবে হাওয়ার কথা ছিলো সেভাবে হয়নি ঠিকি কিন্তু আশা করি তোমরা ভালো ভাবে চলবে। আর রাইসার বাড়ি থেকে কল এসেছিলো ওদের কাছে বিয়েটা হুট করে হয়েছে। ওদেরর কোন আত্মীয়-স্বজনও ছিলো না তাই ওরা রিসিপশন পরে ধুমধামে করতে চাই তাই আজকেই রাইসা আর ফায়েজকে নিতে আসবে। তোমরা দু’জন তৈরি হয়ে থেকো যে ক’জন আসবে আমরা ছোট খাটো ভাবে আপ্পায়ন করে দিবো।
মমতা জাহিদের কথার মাঝেই শান্তা বাম হাত ঢুকিয়ে দিয়ে
‘ হ্যা ফায়েজ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যা, শশুর বাড়ির খাবার সবার কপালে জুটে না। এই যে দেখ আমাদের বেচারা আঁধার ওর কপাল কতটা খারাপ শশুর বাড়ি আর যাওয়া হলো না।
শান্তার কথা শোনে মমতা জাহিদ রেগে
‘ চুপ করবি তুই শান্তা?
আলো রান্না ঘর থেকে খাবার এনে টেবিলে রাখছিলো। শান্তার কথা শোনে আটকে যায় রান্না ঘরেই চোখে একটু পানি আসলো কিন্তু অভ্যাস থাকায় নিজেকে সামলে নিলো৷
আঁধারের রাগ হলো তবে কিছু না বলে ফোন টিপছে।
রাইসা নিচু স্বরে মমতা জাহিদকে বললো
‘ বড় মা আসলে আমি চাই আঁধার ভাইয়া আর আলো আমাদের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে যাক।
সঙ্গে সঙ্গে ফায়েজও রাইসার কথার সাথে তাল মেলালো
‘ হ্যা বড় মা আঁধার ভাইয়া আলোও যাবে আমাদের সাথে।
আঁধার সাথে সাথে বলে দিলো
‘ আমি যাবো না ফায়েজ তোরা দু’জন ঘুরে আয়।
ফায়েজও তার কথায় অটুট থেকে
‘ তুমি না গেলে আমিও যাবো না ভাইয়া।
মমতা জাহিদ ওদের থামিয়ে
‘ আচ্ছা এখন নাস্তা কর পরে দেখা যাবে কি হবে।
আঁধার তার আব্বুর দিকে তাকিয়ে আবার মমতা জাহিদের দিকে তাকায়
‘ আমি কিছু বলতে চাই মা।
মমতা জাহিদ হাসির রেখা টেনে
‘ হুম বল কি বলবি
আঁধার মুখ কঠিন করে
‘ আমি তিন্নিকে খুঁজতে বের হবো…..
চলবে…
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
#আলো_আঁধার
#part_10
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.
সে কখনো আমার ছিলো না তাই মিথ্যে মিথ্যে সে আমার ছিলো বলে তার বদনাম করতে চাই না। একটা মানুষের অর্ধেক জীবন চলে যায় বুঝতে আর ভুল করতে করতে আর বাকি অর্ধেক জীবন চলে যায় সেই ভুল গুলো শুধরাতে। কারো হয়তো শুধরানোর সুযোগ হয়না। আমারো ঠিক তেমন শুধরানোর আর সুযোগ নেই শুধু প্রস্থান করা ছাড়া। প্রস্থানই হয়তো এক মাত্র উপায় নিজেকে ব্যথা মুক্ত করার।
আলো কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রান্নাঘর থেকে আনা খাবারের আয়োজন টেবিলে রেখে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
আনিশা আলোকে চলে যেতে দেখে ডাক দিতে নিলেই মমতা জাহিদ ওকে বাধা দেয়৷ সদ্য বিবাহিত স্ত্রী স্বামীর মুখে তার প্রেমিকাকে খুঁজে বের করতে চায় শুনলে খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আঁধার আর কি বলে তার কোন ঠিক নেই তাই আলো চলে গিয়ে ভালোই করেছে বলে মনে করছে মমতা জাহিদ।
মমতা জাহিদ ভাবনা বাদ রেখে নিজেকে গম্ভীর করে
‘ তিন্নিকে খুঁজতে বের হবি মানে? তোর যে বিয়ে হয়ে গেছে ভুলে গেছিস??
আঁধার নিজের চোখ স্থির রেখে
‘ ভুলে যাবো কেন মা? তিন্নি আমার সাথে কেন এমন করেছে আমি শুধু তা জানতে চাই। ওর এটলিস্ট কথা বলা দরকার ছিলো আমার সাথে। একা কিভাবে ডিসিশন নিতে পারে ও যেখানে দু’জনেই ভালোবেসে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মমতা জাহিদ রেগেমেগে
‘ আমি এতো কথা শুনতে চাই না আঁধার। তোমার এখন বিয়ে হয়ে গেছে সেটা যেভাবেই হোক। আর তা যত তারাতাড়ি মেনে নেবে তাতেই মঙ্গল। আলোর কথা ভেবেছো একবার?
মেয়েটার কি দোষ? তোমার জন্যই তো সব হলো। এখন বিয়ে করেও যদি এমন করো তাহলে বুঝে নেবো আমি তোমায় মানুষ করতে পারিনি। মমতা জাহিদ আর কিছু না বলে চলে যায় টেবিল থেকে।
পুরো ডাইনিং টেবিলে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। রাইসা আনিশা তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে। কেমন যেন হয়ে গেছে সব কিছু একদিনের ব্যবধানে
আনিশা আঁধারের কাধে হাত রেখে
‘ ভাইয়া যা হবার তো হয়েই গেছে আমরা চাইলেই তো আর বদলাতে পারবো না, ভাগ্যে যা লেখা ছিলো তাই হয়েছে ভাগ্যের উপর তো আর কারো হাত থাকেনা। তাই হতে থাকবে যা ভাগ্যে আছে তবে চেষ্টা তো করতেই পারিস। আলোকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা কর। বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। এটাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই আমাদের। জীবন যত জটিল ঠিক ততটাই সহজ। শুধু হার মেনে নেওয়া উচিত নয়।
রাইসা আনিশার কথায় তাল মিলিয়ে
‘ ভাইয়া আনিশা আপু ঠিক কথাই বলছে। আপনি আরেকটু ভাবুন।
আনিশা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই
আঁধার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে। বিচ্ছিরি লাগছে কেন জানি সব। ছোট বোনও এখন জ্ঞান দেওয়া শুরু করেছে। আঁধার রুমে যেতে নিলেই মনে পড়ে রুমে আলো আছে। তাই রুমে না গিয়ে ছাদে চলে যায়।
রাইসা দরজায় টোকা দিতেই আলো দরজার দিকে তাকায়। দরজায় তাকিয়ে দেখে রাইসা হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আলো একটু এগিয়ে,
‘ ভিতরে আসো রাইসা।
রাইসা এক-পা দু-পা করে আলোর দিকে এগিয়ে এসে
‘ এখন তো আর তোমায় আলো বলে ডাকা যাবে না, সম্পর্কে এখন বড় ভাইয়ের বউ মানে বড় জা। ভাবি ডাকতে হবে, আমি কিন্তু তোমায় বোন মনে করি যা-ই ডাকি না কেন। আর আজকে আমাদের সাথে তোমাদেরও যেতে হবে ছোট বোনের আবদার এটা।
আলো মুচকি হেসে
‘ তোমার যা ইচ্ছে ডেকো। কিন্তু সরি যেতে পারবো না। যেখানে সম্পর্ক নেই সেখানে সম্পর্কের নাম দিয়ে কি হবে বলো? মিছেমিছি কত অভিনয় করা যায়?
রাইসা হাত থেকে খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে
আলোকে ধরে বেডে বসিয়ে সেও সামনে বসে পড়ে।
‘ আমি এই বাড়িতে অনেক আগে থেকেই আসি আলো। তুমি যেমন জানতে আমি ফায়েজকে ভালোবাসি তেমনি আমিও আন্দাজ করতে পারতাম তুমি আঁধার ভাইয়াকে ভালোবাসো৷ আঁধার ভাইয়া সেটা না বুঝলেও আমি বুঝতাম। আমার বিশ্বাস সব ঠিক হয়ে যাবে। আঁধার ভাইয়াও তোমায় ভালোবাসে। সেদিন তিন্নি ঠিক কথা-ই বলে গিয়েছে। আঁধার ভাইয়াও তোমায় ভালোবাসে কিন্তু উনি সেটা নিজেই জানে না। যে কেউ তোমাদের দেখলেই বলতো একে অপরকে নিশ্চয়ই ভালোবাসে। আমিই কতো দিন ফায়েজকে জিজ্ঞেস করেছি তোমাদের মাঝে কিছু আছে কিনা যখন সে না করতো আমি তাকে বলতাম সে আমায় মিথ্যা বলে। এতো কেয়ার এতো আগলে রাখা, এতো লড়াই করা তোমার জন্য সবার সাথে এটা শুধু বন্ধুত্ব হতে পারে না।
আলো উঠে দাঁড়ায় নিজেকে সংযোজন করে
‘ তুমি ভুল ভাবছো রাইসা। আমি ওর মনের কোথাও নেই। এটা জেনেও মিথ্যা আশা নিয়ে থেকে কি লাভ? মিথ্যে সান্তনা দিয়ে নিজেকে নিজে আর ধোকা দিতে চাই না।
রাইসা উঠে আলোর কাছে এসে দেখে আলো ততক্ষণে কান্না করছে। রাইসারও খারাপ লাগছে ভীষণ সে দেখেছে আঁধারের জন্য আলোর হাহাকার৷ আলোর চোখে আঁধারের জন্য তৃষ্ণা। অনুর্বর ঠোঁঠে শুধু আঁধারের নাম। রাইসা জড়িয়ে ধরেছে আলোকে।
আলোও রাইসাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয়। রাইসা চুপ করে আছে কি বলবে এখন আলোকে স্বান্তনার বাণী সব সময় মানায় না।
আলো রাইসাকে ছেড়ে দিয়ে
‘ কতশত প্রাণ বেঁচে যায়। দেখো কত-শত মানুষ বেঁচে যায় নিজের আপন মানুষকে তার আপন মানুষের সাথে দেখেও। মেনে নেয়, সে ভালো আছে ভেবে, ভালো থাকবে ভেবে। আমিও হয়তো বেঁচে যেতাম আঁধারকে ছাড়া। মেনে নিতাম সে আর আমার নেই। ভালো আছে অন্যের কাছে। কাছে না থাকলে কি ভালোবাসা যায়না? যায়। আমিও দূর থেকেই ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন? এখন কি ভাবে সব কিছু ঠিক হবে বলতে পারো? ( কান্নার আওয়াজ তুলে) আর কি সব ঠিক হবে? হবে না।
রাইসা আবার আলোকে জড়িয়ে ধরে
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে। আঁধার ভাইয়া একদিন ঠিক বুঝতে পারবে উনিও তোমায় ভালোবাসে আমার কথা মিলিয়ে দেখো। সব কিছুরই শেষ আছে এই খারাপ সময়ের ও সময় শেষ হবে।
আলো মুখ তুলে মলিন হাসে।
রাইসা খাবারের প্লেট আলোর হাতে দিয়ে
‘ এখন তারাতাড়ি খেয়ে নাও। অনেক কাজ আছে। নিজেকে ভেঙে দিলে কিভাবে হবে বলো? বিকেলে আমাদের সাথে কিন্তু তোমরা যাচ্ছো ফাইনাল।
আলো মুখ উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি রাইসা বাধা দিয়ে
‘ উঁহু কোন কথা নয় যেতে হবে মানে যেতে হবে। তোমরা না গেলে আমরাও যাবো না, আর ফায়েজ তো যাবেই না বলে দিয়েছে। এবার ভাবো কি করবে।
রাইসার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আলো। মেয়েটা এখনো ঠিক আগের মতোই আছে।
আলো পরোটার একটুকরো ছিড়ে মুখে দিতেই আঁধার রুমে আসে। হঠাৎ করে আঁধার সামনে আসায় আলো ভীষণ ভাবে বিষম খায়। আলোর চোখে পানি চলে আসে। আলোকে কাশতে দেখে আঁধার জলদি করে ওর মুখে পানির গ্লাস ধরে আর এক হাতে আলোর পিঠে হাত দিয়ে মাজতে থাকে। আলো একহাতে আধারের হাতের উপর ধরে গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে। আলো ভেজা চোখে
ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে, ইচ্ছে হচ্ছে আঁধারকে একবার জড়িয়ে ধরে চোখের নদী শুকিয়ে ফেলতে। কিন্তু নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রেখে চুপ করে উঠে যেতে নিলেই আঁধার আলোর হাত ধরে বলে উঠে
‘ আলো..
আলো আঁধরের মুখে আলো ডাক শুনে ঝড়েরবেগে তাকায় আঁধারের দিকে…..
চলবে………