আলো_আঁধার,part_14,15

0
1415

আলো_আঁধার,part_14,15
writer_Tahsina_Islam_Orsha.
part_14

তবে শেষ হোক সকল অপেক্ষা, ভেঙে যাক দু’মনের দেয়াল। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে প্রতিধ্বনি তুলুক দূর আকাশের উজ্জীবিত চাঁদ। সাক্ষী হয়ে থাকুক হাজার হাজার নক্ষত্র। বয়ে যাক দু’জনের আনন্দের সুভাস চারদিকে৷

মুখে হাসির রেখা টেনে ছাদের দরজায় পা রাখতেই আচমকা একটানে আলোকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আঁধার। আলো অবাক নয়নে তাকায় আঁধারের দিকে। তাহলে কি আজ আঁধার বলবে আলোকে সেও ভালো ভালোবাসে।
আলোর চোখ আঁধারের দিকে আবার বিস্ময় নিয়ে তাকায় আঁধারের ঠোঁটের কোণায় রক্ত। রক্ত কিন্তু কেন? আলোর ভয় লাগছে আঁধারের ঠোঁটে রক্ত কেন আসবে সে তো এতক্ষণ ভালোই ছিলো। চোখ দুটো কাঁপছে আলোর, আঁধারের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশে থাকাতেই দেখে সানি নিচে পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। আলোর শরীর কেঁপে উঠলো সানিকে এমন ভাবে পড়ে থাকতে দেখে। আর কিছু বুঝার আগেই ফায়েজ রাইসা ও তার পরিবারের সকলে এসে ছাদে জড় হয়। কেউ ডেকেছে ওদের মনে হচ্ছে। সবার উপস্থিতিতে একটা শোরগোল পাকিয়ে গেছে

আঁধার সামনে এগিয়ে সকলের উদ্দেশ্য
‘ আমি আর আলো এখনি বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিতে চাই। রাইসা আর ফায়েজ কাল আসুক। আর আংকেল কি হয়েছে সবটা রাইসার থেকে জেনে নেবেন।

আঁধার আলোর হাত শক্ত করে ধরে নিচে নিয়ে আসে।
রুমে ঢুকে একে একে সব কাপড় ব্যাগে রাখছে আঁধার। আলো চুপ করে সাইডে দাঁড়িয়ে নিরবে কান্না করছে৷ আঁধার কিছুই বলছে না আলোকে। আঁধার কিছু না বলায় আরো ভয় লাগছে আলোর।

আঁধার নিজে নিজেই আলোর আর তার বের করা সব কিছু প্যাক করে নেয়। তারপর আলোর সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকে। আলোও মাথা নিচু করে আছে। আঁধার আর কোন কিছু না ভেবে৷ আলোকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

রাইসার আব্বু আঁধারকে ধরে
‘ বাবা দেখো যা হয়েছে তা তো আর বদলাতে পারবো না তোমরা কাল সকালে যাও। রাইসা আর ফায়েজও তোমাদের সাথেই যাবে। এতো রাতে যদি তোমরা ফিরে যাও আমি ও বাড়িতে সবার কাছে মুখ দেখাবো কিভাবে? আর বেয়াইন সাহেবকে মুখ দেখাবো কিভাবে?

আঁধার রাইসার আব্বুর হাত দুটো ধরে
‘ আংকেল আপনাকে চিন্তা করতে হবে না আমি সব সামলে নেবো। কিন্তু এখন যেতে হবে প্লিজ।

রাইসা খুব ভালো করেই জানে আঁধার কেমন মানুষ তাই ওর আব্বুকে আর বাধা দিতে মানা করে।

আলো এখনো বসে কান্না করছে। আঁধারের বিরক্তি লাগছে ভীষণ। এতো কান্না করার কি আছে? একটা মানুষ তো কান্না করতে করতেও থামে কিন্তু এই মেয়ের থামার কোন নাম নেই। কি প্রমান করতে চাচ্ছে সে কান্না করে ভেবে পাচ্ছে না আঁধার ।

আঁধার এইবার রাগে টগবগিয়ে
‘ তুমি কান্না থামাবে নাকি গাড়ি কোথাও ধাক্কা খাওয়াবো? না টেনশন করো না তোমার কিছু হবে না তোমায় বের করেই খাওয়াবো। আমি মরলেই তখন শান্তি পাবে স্টুপিড।

আলো আঁধারের মুখে এমন কথা শোনে কান্নার আওয়াজ আরো বাড়িয়ে দিলো।
আঁধারও রাগ করে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।
এই বার দেখবে আলো কি করে! আলো আঁধারকে গতি কমাতে বলছে কিন্ত আঁধার কমাচ্ছে না।
আকস্মিক আঁধার গাড়ির হার্ড ব্রেক চেপে ধরে। আলো কিছু বুঝে উঠার আগে গাড়ি একজনকে পিছনে ফেলে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আলোর ভয় লাগছে কিছু হয়নি তো উনার? যদিও গাড়ি লাগেনি তেমন ভাবে। আঁধার গাড়ির ব্রেক ধরে সাইড করে উনার পাশ কাটিয়ে নিয়ে এসেছে। আঁধার তার সিটবেলটা খুলে তারাহুরো করে গাড়ি থেকে নেমে অপরিচিত লোকটার কাছে যায় কিছু হয়েছে কিনা দেখার জন্য, আঁধারের পিছু পিছু আলোও গাড়ি থেকে নেমে অপরিচিত লোকের কাছে যায়। অপরিচিত লোকটি একজন মেয়ে

আলো উনাকে উদ্দেশ্য করে
‘ আপনি ঠিক আছেন?
মেয়েটা মাথা তুলতেই আলো অবাকের উচ্চতর পর্যায়ে চলে যায়, মাথা ভন ভন করতে শুরু করে

ততক্ষণে আঁধার মেয়েটাকে গিয়ে সামলে নেয়। বলতে গেলে জড়িয়ে ধরে

‘ তিন্নি!! তিন্নি তুমি এখানে কি করছো? কোথায় ছিলে তুমি? ঠিক আছো তুমি?

তিন্নি রাস্তায় পড়ে যাওয়াতে তার হাতের কনুই ছিলে যায় আর মাথায় একটু ব্যথা পায়।

‘ আমি ঠিক আছি তেমন কিছু হয়নি।

আলো থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে, কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না।

আঁধার আলোর দিকে তাকিয়ে
‘ আলো তিন্নিকে ধরো গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে হাত আর কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে। আলো আর কিছু না ভেবে তিন্নির এক হাত তার কাধে রেখে তিন্নিকে ধরে। দুজনে মিলে তিন্নিকে গাড়িতে বসায়।
আলো তিন্নিকে রেখে সামনে আঁধারের পাশে বসতে গেলে আঁধার নরম সুরে

‘ আলো তুমি তিন্নির কাছেই বসো। ওকে ধরে রেখো।

আলো মুখটা মলিন করে কোন উত্তর না দিয়ে তিন্নির কাছে গিয়ে বসে৷

আলোর আকাশ কুসুম চিন্তা যেন ঘিরে ধরেছে আবার। এখন কি হবে? আঁধার তো তিন্নিকে আর কোথাও যেতে দেবে না তাহলে কি এখন আঁধার আলোকে ছেড়ে দেবে? আর কি থাকবে সে আলোর কাছে? আলোর মাথার যন্ত্রণাটা আবার শুরু হয়েছে। তবে তিন্নিকে দেখে আলোর ভালো লাগছে ভীষণ। সাথে ভয়ও হচ্ছে আঁধারকে হারানোর ভয়। আঁধার তাকিয়ে আছে গাড়ির লুকিং গ্লাসে।

তিন্নিকে নিয়ে আঁধারের বাড়ি আসতেই সবাই বড়সড় একটা ঝটকা খায়। তিন্নি তাও এতো রাতে! আঁধার আর আলোর সাথে কি করছে তিন্নি? সবাই ভাবছে । আর আঁধার আলো তো আজ রাইসাদের ওখানে থাকার কথা ছিলো তাহলে এখানে কি করছে?!

আঁধারের আব্বু চিন্তিত গলায়
‘ আধার তুই তিন্নিকে কোথায় পেলি? আর এতো রাতে তুই তো ওখানে থাকার কথা।

আঁধার তার বাবার দিকে তাকিয়ে
‘ আব্বু সব পরে বলছি আগে তিন্নিকে ব্যান্ডেজ করতে দাও। কনুই ছিলে গেছে আর কপালেও ব্যথা পেয়েছে দেখছো-ই তো। আমার গাড়ি ওর শরীরে লাগতো আজকে ভাগ্যিস তেমন কিছু হয়নি।

আঁধার ফাস্টএইড বক্স এনে তিন্নির কপালে আর কনুইতে মলম দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

আলোর মতো মমতা জাহিদও নিরব দর্শকের মতো শুধু দেখছে কিছু বলছে না। কিন্তু ফায়েজের মায়ের মুখ বন্ধ রইলো না। কেন চলে গেলো এমন হীরার টুকরো ছেলেকে রেখে ব্লা ব্লা অনেক কিছুই বললো।

আঁধারকে হারিয়ে ফেলার ভয় আবার ভীষণ ভাবে চেপে ধরেছে আলোকে। অবশ্য আঁধার কখনো তার ছিলোই না তবুও হারানো ভয় কেন লাগছে আলোর?

আনিশা আলোর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে
‘ কি করে হলো এসব? তিন্নিকে কোথায় পেলি তোরা?

আলো মাথা নুইয়ে
‘ তিন্নি আমাদের গাড়ির নিচে পড়তো আজ একটুর জন্য বেঁচে গেছি সবাই।

আনিশার উত্তরটা পছন্দ হয়নি। তাই আবার জিজ্ঞেস করলো
‘ কিন্তু তুই আর ভাইয়া এতো রাতে গাড়ির ভিতরে কি করছিলি? তোরা তো রাইসাদের বাসায় থাকার কথা এখন।

সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে মমতা জাহিদ উঠে দাঁড়িয়ে
‘ তিন্নিকে সকালে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবি।
যা জানার বা বুঝার সব পরে দেখা যাবে।

এদিকে আঁধারের মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তিন্নিকে তার সব প্রশ্নের উত্তরই দিতে হবে। কিন্তু তিন্নির এখন বিশ্রাম প্রয়োজন তাই কিছু না বলে ওকে গেস্ট রুমে নিয়ে যায়।
.
.
.
পরদিন খুব ভোরে রাইসা আর ফায়েজ চলে আসে৷ বলতে গেলে ওদের রাতটা কোন ভাবে পাড় করেই রওনা দিয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্য। আঁধার খুব রেগে ছিলো তাই বাড়ির অবস্থা নিয়ে টেনশন করছিলো ফায়েজ। রাইসাও কম যায়না সমান তালে চিন্তা করতে করতে দুজনেই বাড়ি এসে উপস্থিত হয়৷ সানির ঘটনা নিয়ে আঁধার আলোকে কিছু বলেছে কিনা বা ভুল বুঝেছে কিনা রাইসা বুঝে উঠতে পারছে না।
রাইসা আনমনা হয়ে কিচেনে ঢুকে দেখে আলো রান্না করছে তাই রাইসাও সুযোগ পেয়ে আলোর কাছে গিয়ে
‘ আলো……….

চলবে….

#আলো_আঁধার
#part_15
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.

নীরবতাও আর নীরব থাকতে পারছে না আলোর নীরবতা দেখে তাও আলোর নীরবতা ভাঙছে না। রাইসার ডাকে আলোর কোন পরিবর্তন আসেনি। কিছু মনোযোগ দিয়ে ভাবছে নয়তো ইচ্ছে করে জবাব দিচ্ছে না।

রাইসাও দমে যাওয়ার মানুষ নয় তাই আবার ডাক দেয় কিন্তু আবারো আলোর কোন প্রতুত্তর নেই। রাইসা আলোর কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখতেই একটু চমকে যায় আলো৷

রাইসা বুঝতে পেরে আলোকে তার দিকে ফিরিয়ে
‘ কিছু ভাবছিলে? আঁধার ভাইয়া কি কিছু বলেছে গতরাতে?

আলো তরকারির ঢাকনা সরাতে সরাতে বললো তিন্নিকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। তুমি এখন যাও তিন্নির জন্য তারাতাড়ি নাস্তা নিয়ে যেতে হবে ওর রুমে।

রাইসা প্রচন্ডরকম অবাক হয়ে
‘ তিন্নি!! তিন্নি কোথায় থেকে আসলো? গতকাল তো সানিকে নিয়ে সমস্যা হয়েছে।

আলো চুপ চাপ তরকারি নামিয়ে গ্যাস বন্ধ করে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

রাইসা তার জায়গায়ই এখনো অবাক হয়ে দাঁড়িয়েই আছে। বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে, একটার পর একটা মসিবত কেন আসছে আলোর জীবনে!

আলো রুমের দিকে পা বাড়াতেই মমতা জাহিদ ডাক দেয়। আলো পিছনে ফিরতেই মমতা জাহিদ কাছে এসে দাঁড়িয়ে
‘ সব কিছু ঠিক আছে আলো?

আলো মুচকি হেসে
‘ হ্যা মামুনি সব ঠিক আছে।

মমতা জাহিদ ধীরস্থির ভাবে
‘ কিছু বলবি আমায়?

আলোর কান্না পাচ্ছে এমন প্রশ্নে অনেক কিছু বলার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু মমতা জাহিদকে শুধু জড়িয়ে ধরলো। মমতা জাহিদ আলোর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে

‘ তোকে কাছে রাখার জন্য তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম না তো? ভয় হচ্ছে এখন আমার আলো।

আলো মমতা জাহিদের কথা শুনে একটু নয় অনেকটা অবাক হয়। যিনি এক হাতে পুরো সংসার সামাল দিয়েছে ভয় নামক জিনিস যাকে কখনো ভয় দেখাতে পারনি তিনি আজ কেন ভয় পাচ্ছে?
আলো মমতা জাহিদকে ছেড়ে দুইহাত ধরে আস্বস্ত করতে
‘ সব ঠিক আছে মামুনি ভয় পাওয়ার কিছু নেই আর যদি হয়ও আমি সামলে নেবো কথা দিলাম।

মমতা জাহিদ আলোর দুহাতে চুমু দিয়ে
‘ আচ্ছা রুমে যা।

আলো সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর ভাবছে তার ভয়ের কথা কাউকে বলাই হলো না আদৌ কি হবে? আঁধার এখনো তিন্নিকে ভালোবাসে এই বন্ধন তার কাছে নাম মাত্র। আলো নিজের রুমে না গিয়ে আনমনে তিন্নির রুমে চলে যায়।

আলো নক করতেই তিন্নি ভিতরে যেতে বলে।তিন্নি বসে বসে ফোন টিপছে ফোনের ভেতরে কিছু দেখে হাসছে। আলো চুপচাপ পাশে ওর পাশে গিয়ে বসে। তিন্নি কিছুক্ষণ পর ফোন রেখে
‘ সরি একটা জিনিস দেখছিলাম।

আলো ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে
‘ এখন কেমন আছো?

তিন্নি ঠোঁট দুটো চিকন করে একটা হাসি দিয়ে
‘ হুম ফিল মাচ বেটার।

আলো ইতস্ততভাবে তিন্নিকে প্রশ্ন করে বসলো
‘ গতকাল রাস্তার মাঝে কি ভাবে আসলে? মানে ওখানে কি করছিলে? যদি গাড়ি লেগে যেতো কি হতো ভাবতে পারছো?

তিন্নি আলোর দিকে এবার সম্পুর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকালো
‘ তুমি কি ইনডিরেক্টলি আমায় দোষ দিচ্ছো? দেখো দোষ কিন্তু তোমার হাজবেন্ডের। আঁধার অনেক স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিলো আমি রাস্তা পাড় হয়ে যেতে পারবো ভাবছিলাম কিন্তু বিদ্যুৎ গতিতে গাড়ি চলে আসায় কি হয়েছে বুঝতে পারিনি।

আলোর কেমন যেন একটা খটকা লাগছে এতো রাতে তিন্নি রাস্তায় কি করছিলো আর ওদের গাড়িতেই কেন? তিন্নি ইচ্ছাকৃতভাবে আসেনি তো আবার?

আলোকে ভাবতে দেখে তিন্নি নিজেই বলছে
‘ আসলে আমার একটা বান্ধুবির জন্মদিন ছিলো। গাড়ি নিই নি তারপর আসার সময় ও ড্রপ করতে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি মানা করে দিয়ে একাই বাসায় যাচ্ছিলাম। আর তোমাদের গাড়ির নিচে যেতাম । বাই দ্যা ওয়ে তোমরা এতো গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলে কেন? মরার শখ নাকি?

আলো মুচকি হেসে
‘ আসলে আঁধার আমার সাথে রাগ করেই এতো গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলো।

তিন্নির নজর এবার নিচে চলে গেলো কিছু ভেবে আবার আলোকে প্রশ্ন করলো
‘ তুমি ভালো আছো আলো? আঁধার মেনে নিয়েছে সব? আঁধার…..

তিন্নিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আলো বলে উঠে
‘ কেন ওই দিন চলে গিয়েছিলে তিন্নি? আমি তো এমন চাইনি। আমার চোখে আমাকে ছোট করে দিয়ে চলে গেলে। আঁধার তোমাকে……

তিন্নি আলোকে থামিয়ে
‘ আঁধার তোমাকে ভালোবাসে আর সেটা সে বুঝতে পারবে। বলেছিলাম না? কখনো সুযোগ হলে অনেক গুন বেশি ফিরিয়ে দেবো। আমি আবার তোমাদের সাথে দেখা হোক চাইনি তাও দেখা হয়ে গেলো।

ওদের কথার মাঝে রাইসার আগমন ঘটে। রাইসাকে দেখে তিন্নি রাইসার দিকে তাকায়
আলো বুঝতে পেরে
‘ ফায়েজের সাথে রাইসার বিয়ে হয়েছে।

তারপর তিন্নি একটু হেসে রাইসার দিকে তাকিয়ে
‘ তোমার সাথে আমার দুইবার দেখা হয়েছিলো এখন নিয়ে তিনবার। প্রথমবার দেখার পর দ্বিতীয়বার যখন দেখা হয়েছিলো তখন জেনেছিলাম তুমি ফায়েজের ভালোবাসার মানুষ আর তৃতীয়বার দেখায় জানলাম তুমি তার স্ত্রী। দেখো তো কত গুলো মানুষ কষ্ট পেতো যা হতে যাচ্ছিলো তা যদি হতো৷

রাইসা মুচকি হেসে প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য
‘ এখন কেমন আছো?

‘ হুম ভালো। আলো আঁধার ভাইয়া তোমায় খু্ঁজছে, যেতে বললো৷ আর আমি তিন্নিকে নাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।

তিন্নির মুখটা মলিন করে।
‘ না আমি সবার সাথে টেবিলে বসেই খাবো।

রুমের দরজা খুলতেই দেখে আঁধার চুল আচড়াচ্ছে আলো দৌঁড়ে গিয়ে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে পিছন দিক থেকে। আলোর এমন আচরণে ভেবাচেকা খেয়ে যায় আঁধার। হঠাৎ আলোর কি হয়েছে এমন করছে কেন? আলো চোখ জোড়া বন্ধ করে দু’হাত দিয়ে আঁধারের বুকের শার্টে খামচি দিয়ে ধরে।

আঁধার কিছু বুঝতে না পেরে আলোর মুষ্টি করা হাতে ধরে
‘ কি হয়েছে আলো? এমন করছো কেন?

আলো চোখ মুখ খিচে
‘ ভয় লাগছে আমার আঁধার।

আঁধার এবার একটু রাগ করে।
‘ ভয়! কিসের ভয় এখন? এখন কি রাত?

আলোর কিছু একটা মনে আসতেই আঁধারকে ছেড়ে দেয়। আঁধার আলোর দিকে ঘুরে
‘ কিসের ভয় আলো? বলো।

আলো মাথা নিচু করে
‘ জানি না আমি কেন যেন আমার ভয় লাগছে।

আঁধার চুপ থেকে আয়নার দিকে ঘুরে শরীরে পারফিউম দিতে দিতে
‘ ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার কালো মোজা গুলো কোথায়?

আলো চুপ চাপ আঁধারের মোজা বের করে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়। কি দরকার ছিলো আঁধারকে ভয়ের কথা বলার? সে কি কখনো বুঝেছে আলোর ব্যথা? তাহলে আজ বলে কি হবে?

নাস্তা করে তিন্নি সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য সবাই নরমাল দেখালেও আসলে কিছু নরমাল নেই। সবাই কেমন গুমোট হয়ে আছে।

আঁধারের পাশেই বসেছে তিন্নি আজ। আঁধারের কি বলা উচিত করা উচিত বুঝতে পারছে না৷ আঁধার এখন একজন বিবাহিত পুরুষ চাইলে সে যা ইচ্ছে বলতে পারবে না। তবুও মন যেন মানছে না। আজ এই নিস্তব্ধতা বাস করতো না দুজনের মাঝে যদি না তিন্নি সেদিন চলে যেতো। চলে গিয়ে কি সে খুব ভালো করেছে? সব কি ঠিক হয়ে যাবে? আঁধার কি সত্যিই ভালোবাসে আলোকে? কিন্তু সে তো তিন্নিকে ভালোবাসতো।

আঁধার তিন্নির দিকে তাকিয়ে
‘ চুপ হয়ে আছো যে?

তিন্নি অল্প হেসে
‘ তুমিও তো চুপ।

‘ কেন চলে গেলে সেদিন তিন্নি? এমন না করলেও পারতে তাহলে আজ সব কিছুই….

আর কিছু বললো না আঁধার কেন যেন থেমে গেলো কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না আর। গতরাতেই অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কিন্তু এখন কেন হচ্ছে না?

তিন্নি আঁধারকে চিন্তায় দেখে
‘ কেন কি হয়েছে সব কিছুই তুমি জানতে পারবে আঁধার। তুমি তোমাকে চিনতে পারোনি এখনো। চলে গিয়ে ভালোই করেছি একদিন তুমি নিজেই বলবে।

আঁধার সারা রাস্তায় আর কোন কথা বলেনি। কিছু বলতে ইচ্ছেও করছিলো না৷
.
.
.
মমতা জাহিদের কাছে একটা ফোন আসতেই মমতা জাহিদ ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ে। আলো কাছেই ছিলো দৌড়ে মমতা জাহিদের কাছে গিয়ে

‘ মামুনি! মামুনি কি হয়েছে? কে কি বলেছে ফোনে? …….

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here