ডাক পিয়ন & চিঠি,পার্টঃ০১
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
প্রতিদিনের মতো আজও সিন্থিয়ার পথ চেয়ে বসে আছে রাজু
– সিন্থিয়া কলেজ থেকে বের হলে তার পিছু পিছু যাবে এটা তার প্রতিদিন কার রুটিন ।
– সিন্থিয়া কলেজ থেকে বের হয়ে দেখলো, রাজু আজও দাড়িয়ে আছে উফফ অসহ্য, এই ছেলেটাকে সিন্থিয়া একদম সহ্য করতে পারে না । সারাক্ষন তার পিছনে আঠার মতো লেগে থাকে এই ছেলেটা ।
সে যেখানে যায় রাজুও কোথার থেকে গিয়ে সেখানে হাজির হয়ে যায় ।
– আপনাকে না কতবার না করছি আমার পিছন পিছন না আসতে, তারপরও কেনো আসেন আপনি ??
– দেখো সিন্থিয়া আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি । গত দুটো বছর ধরে আমি তুমার পিছন পিছুন ঘুর ঘুর করছি একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আর তুমি আমাকে পাওাই দিচ্ছো না কেনো ??
– আমাকে কেনো ভালোবাসো না তুমি.. ( রাজু.)
আপনার মতো ছেলেকে কে ভালোবাসবে হুম, গুন্ডা বদমায়েশ ছেলে, বাজে বখাটে বস্তির ছেলে একটা ।
– সিন্থিয়ার মুখ থেকে এইসব কথা শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছে রাজুর ।
– আজকের পর থেকে যদি আপনাকে আমি আমার পিছনে ঘুর ঘুর করতে দেখি তাহলে কিন্তু খবর আছে । আগে নিজেকে চেন্জ করুন তারপর ভালোবাসতে আসুন । এই বলে সিন্থিয়া বাসায় চলে গেলো ।
– রাজু হতাশ হয়ে ফিরে এলো । মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে সে । আজ দুইটা বছর ধরে ভালোবেসে আগলে রেখেছে তাকে, কোনো ছেলেকে তার কাছে ঘেষতে দেয় নি সে, কিন্তু কি কারণে যে মেয়েটাকে তাকে অবহেলা করে সে বুজতে পারে না,
– তো চলুন একটু রাজু আর সিন্থিয়ার ফ্লাসব্যাক থেকে ঘুরে আসি…
– রাজুর পরিবার বলতে, সে একা । বাবা মা থাকতো ও নেই । তাকে বের করে দিয়েছে বাসায় থেকে সামান্য ভুলের জন্য,
– তারপর থেকে সে আর বাসায় যাই নি । নিজের পথ নিজেই বেচে নিয়েছে,
– সারাদিন ক্লাবে আর আড্ডা দিয়ে দিন কাটে । এর মধ্যে এলাকার একজন নেতার হয়ে কিছুদিন যাবত কাজ করে, গুন্ডা মাস্তানি যত অপকর্ম আছে সব রাজু করে দেয় ।
– একদিন হঠাৎই সিন্থিয়া নামের মেয়েটাকে সে দেখতে পায় ।
দিনটা ছিলো শ্রাবণ মাসের মেঘের দিন ।
রহিম চাচার দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো রাজু , আকাশে মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে এর মধ্যে টিপ টিপ করে বৃষ্টি নামা শুরু করছে,
– সিন্থিয়া প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফিরছিলো এর মধ্যে বৃষ্টি নামা শুরু করে দিয়েছে তাই সে উপায় না পেয়ে একটা বন্ধ দোকানের সামনে গুটিসুটি হয়ে দাড়িয়েছে, আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ।
– সিন্থিয়াকে প্রথম দেখাতে ভালো লেগে যায় রাজুর, মেয়েটার চাহনি, আর চুল থেকে টপ টপ করে বয়ে যাওয়া পানি, এই দৃশ্যটা রাজু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে । বিষয়টা তার কাছে খুব ভালো লেগেছে ।
– হঠাৎই রাজুর দিকে তাকায় সিন্থিয়া । রাজু থতমত খেয়ে যায়. রাজুর এমন এক্সপেশন দেখে সিন্থিয়া হেসে দেয় । সিন্থিয়ার এই হাসিতে রাজু পাগল হয়ে যায় । উফফ এই হাসিতে রাজু শতবার মরতে রাজি তবুও এই হাসিটা সে দেখতে চায় ।
– বৃষ্টি শেষ হলে সিন্থিয়া চলে যায় । রাজু সিন্থিয়ার পিছন পিছন যায় । গলির মোড়ে সিন্থিয়াদের বাসায় । প্রভাবশালীর মেয়ে সে, তার সাথে প্রেম করবে কেনো (এমন কথা ভাবে রাজু ) তবুও ভালোবাসা তো এত কিছু বুজে না । ভালোবাসা হলো এক অনুভৃতি যেটা অপরজন ফিলিংস না করলে চলে । যাকে দেখলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় । যার একটা হাসিতে অপর পান্তের মানুষ শতবার মরতে রাজি ।
– আবার দূর থেকেও ভালোবেসে তৃপ্তি পাওয়া যায় ।
– দিন যত যাচ্ছে সিন্থিয়াকে ঘিরে তার মনে বিন্দু বিন্দু করে ভালোবাসা তৈরি হচ্ছে !
– রাজু থাকে জঙ্গলের ভিতরের ভাঙ্গা বাড়িতে
ছাদে শুয়ে শুয়ে আকাশের চাঁদ দেখছে সে আর সিন্থিয়ার কথা ভাবছে
– পরের দিন থেকে
প্রায় সিন্থিয়ার পিছু নিতো রাজু । এক বছর এমন চলে আসছিলো,
–
সেইদিনও সিন্থিয়ার পিছনে রাজু হাটছে
অচমকা সিন্থিয়া রাজুকে ডাক দেয় ।
এই যে শুনছেন..
– জ্বি আমাকে ডাকছেন ।
তো এখানে আপনি ছাড়া তো আর কেউ নেই আর আমার কাছে আসুন ।
– রাজু এখন কি করবে বুজতে পারছে না. সারা শরীর তার কাপছে পা যেনো আর আগাতে চাচ্ছে না, অজানা একটা ভয় কাজ করছে তার ভিতরে, সারা শরীর ঠান্ডায় হিম হয়ে যাচ্ছে ।
– মনে অনেক সাহস নিয়ে, সিন্থিয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালো সে.
অনেকদিন ধরে দেখছি আপনি আমার পিছনে ঘুর ঘুর করছেন এর কারণটা কি..??
– রাজু চুপ করে আছে কোনো কথা বলছে না ।
কি হলো বলেন চুপ করে আছেন কেনো কেনো ঘুরছেন বলেন ??
– রাজু এইবার মনে সাহস নিয়ে বললো আমি আপনাকে.. বলতে গিয়ে থেমে গেলো সে,
কি হলো বলুন আপনি থেমে গেলেন কেনো বলুন(সিন্থিয়া )
– আমি আপনাকে ভালোবাসি, আমি আপনাকে খুব খুব ভালোবাসি । আপনি একবার হ্যা বললে আমি আপনার জন্য সব করতে পারি । এতটুকু বলে রাজু মুখটা নিচের দিকে নিলো
– রাজুর মুখ থেকে এমন কথা শুনে সিন্থিয়ার অবাক হওয়ার কথা কিন্তু সে বিন্দুমাত্র অবাক হলো না ।
– সে বললো দেখুন আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর আমার মনে আপনার জন্য কোনো ফিলিংস নেই । আর আপনার মতো বখাটে ছেলেদের মুখে এইসব মানায় না । সারাদিন তো মাস্তানি করে বেড়ান, আপনি ভালোবাসার কি বুজেন । ফারদার কখনো আমার পিছনে ঘুরবেন না ওকে এই কথা বলে সিন্থিয়া চলে যাবে
– রাজু বললো আমি আপনার জন্য সব কিছু করতে পারি…
সিন্থিয়া ঘুরে রাজুর দিকে তাকিয়ে বললো কি করতে পারবেন বলেন তো..
– রাজু বললো সব কিছু একবার বলে দেখো ??
– আগে মাস্তানিটা ছেড়ে ভালো হয়ে যান । তারপর দেখা যাবে এই বলে সিন্থিয়া চলে গেলো ।
বিকাল বেলা রাজু তার বসের কাছে গিয়ে সব খুলে বলে, বস প্রথমে রাজি হলো না । তবে একটা শর্ত রাজি হলো রাজুর কাজের জন্য যে টাকা গুলো বসের কাছ থেকে পেতো সেটা পাবে না ।
– রাজু তাতে রাজি হয়ে গেলো কারণ যে করে হক সিন্থিয়াকে পেতেই হবে তার ।
– রাজুর বন্ধু সবুজ রাজুর এই অবস্থা দেখে বললো কিরে ধান্দাগীরি ছেড়ে তুই কি সান্নাসী সাজবি নাকি ।
– আরে না বেটা আমার হ্দয়টা সিন্থিয়ার ভালোবাসার আগুনে পুড়ে যাচ্ছে, আচ্ছা মেয়েটা এমন কেনো আমি যে তাকে কত ভালোবাসি সে বুজে না নাকি বুজেও না বুজার ভান করে ।
সবুজ বললো আরে এই যুগের কিছু মেয়ে গুলো এমনিই চল ( আবার সবাই না আমি কাউকে উদ্দেশ্যে করে বলি নি…) অনেক রাত হলো ঘুমিয়ে যাই । সবুজ ঘুমিয়ে গেলো ।
– রাজুর চোখে ঘুমে নেই । থাকবে কি করে সারাক্ষণ সিন্থিয়ার কথা মনে পড়ে । মেয়েটার কথা বলার স্টাইল, চোখ নাড়ানোর এক্সপেশন আর ভুবন জোড়ানো সেই হাসি রাজুর হ্দয়ে সুচোর মতো করে বিধে যায় ।
প্রায় একমাস পর রাজু সিন্থিয়ার সমানে আসে,
– তুমি যেমনটি বলছো আমি ঠিক তেমনটি করছি ।
– তো ভালো করছেন ।
এখন কি আমায় ভালোবাসা যাবে, রাজু বললো..
– আচ্ছা আপনারা ভাবেন কি, একটা মেয়ের পিছে পিছে ঘুরলে তার ভালোবাসা পাওয়া যায় হুম । আর আপনাকে ভালোবাসে আমি কি পাবো, আপনার না আছে বাড়ি না আছে গাড়ি, আপনার তো কিছুই নেই আমাকে নিয়ে রাখবেন কোথায় হুম আপনার থাকার মতো ঘর আছে হুম ।
– আপনার মতো অনেক ছেলে আমার পিছনে লাইন মেরে আছে, আর আপনি তো একটা তোতাপাখির মতো সারাক্ষণ ভালোবাসি ভালোবাসি বলে ফেণা তুলেন । এটা বলা ছাড়া তো আর কিছুই নেই আপনার.??
একবার আমাকে ভালোবেসে দেখো আমি তোমাকে সব সুখ দিবো । তুমার জন্য যেকোনো প্রকার কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছি । আর আমি অন্য ছেলের মতো না, আজ প্রায় দুইটা বছর ধরে আমি তুমাকে ভালোবেসে যাচ্ছি । একটু ভালোবাসার পাওয়ার জন্য আমি তুমার পিছনে ঘুর ঘুর করছি ।
এই গুলো কি তুমার কাছে মামুলি মনে হয় । আমি যদি তুমাকে ভালো না বাসতাম তাহলে কেনো শুধু শুধু তুমার পিছনে সময় নষ্ট করতাম । একটু বুজার চেষ্টা করো সিন্থিয়া এই বলে রাজু সিন্থিয়ার হাত ধরে ।
– সিন্থিয়া আর তার রাগকে কন্টোল করতে না পেরে রাজুর গালে ঠাস করে চড় মেরে বসে । তারপর বলে আগে আমার লেভেলের হয়ে দেখা তারপর আমার সামনে আসিস ।
সিন্থিয়া চলে গেলো রাজু সিন্থিয়ার চলে যাওয়া পানে তাকিয়ে রইলো । রাজু ভাবলো সিন্থিয়াকে পেতে হলে তাকে টাকা কামাই করতে হবে যেভাবেই হক,
সিন্থিয়া কে পাওয়ার জন্য সে সব কিছু করবে ।
এই শহরে টাকা ছাড়া ভালোবাসার দাম নেই রাজু তা বুজতে পারছে । টাকা কামানের নেশা তার মনে ভালো করে ঝেকে বসেছে ।
একটা প্রবাদ আছে না,
– শহর জুড়ে খুজে বেড়াই যদি সে মনের আস্তানা । যার হ্দয়ে ভাঙ্গা মন আছে তার তো নেই কোনো ঠিকানা ।
রাজু চলে গেলো নিজেকে নতুন দমে সাজাতে…
চলবে