ডাক পিয়ন & চিঠি,অন্তিম_পার্ট

0
1514

ডাক পিয়ন & চিঠি,অন্তিম_পার্ট
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ

আজ কয়েকটা বছর হয়ে গেলো সিন্থিয়ার সাথে রাজুর দেখা হয়নি। রাজু ইচ্ছা করে দেখা করেনি।

আজ তার সব কিছু আছে । টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি । বড় একটা ফ্যাক্টরিও আছে তার ।

– শুধু ভালোবাসার প্রিয় মানুষটা নেই, যাকে এতো ভালোবেসে গেলো তার বিনিময়ে সে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পেলো না । চশমাটা খুলে চোখের পানি গুলো একবার মুছে নিলো রাজু ।
টেবিলে থাকা সিগারেটের জ্বলে থাকা বাকি অংশটা একটা টানে শেষ করে দিলো ।

– আজ সিন্থিয়াকে অনেক অনুরোধ করে রাজি করালো দেখা করতে । সিন্থিয়া এত বছর পর রাজুর এতো অনুরোধ রাজি না হয়ে পারলো না ।

– পার্কে বসে আছে রাজু, দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সিন্থিয়া আসছে ।

সিন্থিয়াকে দেখে স্বর্গের পরীর মতো লাগছে রাজুর কাছে , কি মিস্টি চেহারা চুলগুলো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আর তা বাতাসে উড়ছে । রাজুর খুব ইচ্ছা করছে সিন্থিয়ার চুল গুলো হাত দিয়ে উড়াতে । ডুবে যেতে ইচ্ছে করে সিন্থিয়ার ভালোবাসাতে ।

– সিন্থিয়া কাছে এসে বললো কেমন আছো..
হুম ভালো আছি তুমি কেমন আছো.. ( রাজু )
– তুমি তো অনেক চেন্জ হয়ে গেছো । দামি গাড়ি টাকা পয়সা সব তো কামিয়ে ফেলছো ( মনে হয় )
হুম, যার কথায় এতো কিছু করলাম, তাকে না পেলে এই‌ সবকিছু বৃথা হয়ে যাবে ।

– আচ্ছা তুমি কি আমাকে এখনো ভালোবাসো ( সিন্থিয়া বললো.)

রাজুঃ- হুম অনেক বেশি ভালোবাসি তুমাকে । ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যায় না । বরং সেটা দিনে দিনে সতেজ হয়ে উঠে, আমি তুমার ভালোবাসার আগুন পুড়ে যাচ্ছি তুমি কি তা দেখছো না । আমাকে কি একটুও বুজো না তুমি ।

– আচ্ছা শুনো আমি তুমাকে কল করবো, রেডি থাকো এখন আমাকে যেতে হবে, খুব ব্যস্ত হয়ে সিন্থিয়া কথাটা বললো

আরেকটু থেকে যাও । ( রাজু )
– সিন্থিয়া রাজুর কোনো কথা শুনলো না, সে তার মতো করে চলে গেলো ।

দীর্ঘশ্বাস শ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো রাজু.

পার্ক থেকে বের হয়ে সে মেইন রোড দিয়ে হাটা শুরু করলো । আজকে আর গাড়ি দিয়ে বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না তার । ডাইভারকে বলে দিয়েছে গাড়িটা নিয়ে যেতে, আর গাড়ি থেকে ছাতাটাও নিয়ে নিলো ।

বিদুৎতের চমকানি একটু আগে তার মাথার উপর দিয়ে গেলো আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে যেকোনো সময়ে আকাশ ফেটে বৃষ্টি পড়বে,

– রাজুও তাই চাচ্ছে বৃ্ষ্টি পড়ুক আর নিয়ে যাক তার বুকে জমানো শত কষ্ট সে আর পারছে না । সিন্থিয়ার ভালোবাসায় সে যে পুড়ে যাচ্ছে, তার চেয়ে ভালো বৃষ্টি এসে সব ধুয়ে নিয়ে যাক । বৃষ্টি পড়া শুরু করলো,

– রাস্তার পাশে দেখলো ছোকরা একটা ছেলে বসে বৃষ্টিতে ভিজে কাপছে । রাজু তার ছাতাটা ছোকরাটাকে দিলো । আর ছেলেটাকে বললো কিছু খেয়েছিস ??

– ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে বললো না
রাজু মুচকি হেসে পকেটে হাত দিয়ে ছেলেটির হাতে অনেক গুলো টাকা গুজে দিলো ছেলেটি টাকা পেয়ে খুশি হয়ে দৌড় দিলো খাবার হোটেলের দিকে সাথে তার কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে নিলো

– যাক আজকের দিনটা হয়তো সে তাদের ট্টিট দিবে ..

– রাজু তা দেখে মুুচকি হাসি দেয়
এই সব করে রাজু এক ধরনের তৃপ্তি পায়, কারণ সেও এক সময়ে এই পরিস্থিতি থেকে এসেছে । আর এতো টাকা দিয়ে কি করবে সে, যাকে পাবার জন্য এতো কিছু করেছে তাকে না পেলে এইগুলোর কেনো মূল্য নেই তার কাছে।

– রাত বারোটা বাজতে বেশি দেরি না আর। রাজু সিন্থিয়ার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে, একটু আগে সিন্থিয়া কল করে রাজুকে আসতে বলেছে
সে পালাবে, রাজু সিন্থিয়ার কল পেয়ে এক মূহর্ত আর দেরি না করে বাতাসের গতিতে ছুটে এসেছে ।

– মনে হাজারো অনুভৃতি দোলা দিচ্ছে তার, অবশেষে চিঠিটা তার ঠিকানায় আসবে…

ইসস মেয়েটা এত দেরি করছে কেনো এখনো নামছে না কেনো । সিড়ি বেয়ে সিন্থিয়া নিচে নামে । রাজু ছন্নছাড়া ভাবে সিন্থিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে .
রাতের আলোতে সিন্থিয়াকে খুব মায়াবী দেখাচ্ছে । এই মায়াবি চেহারার দিকে তাকিয়ে রাজু সারা জীবন পার করে দিতে রাজি ।
রাজুর হাত ধরে টান দেয় সিন্থিয়া । রাজুর ঘোর কাটে, শক্ত করে হাতটা ধরে সিন্থিয়ার , হাজারো অনুভৃতি তখন তার মনে সাড়া দেয় এই হাতটা আর ছাড়বে না সে, অনেক দূর নিয়ে নিয়ে যাবে সেখানে বাধবে সুখের ঘর ।

রাস্তা থেকে একটা টেক্সি ধরায় রাজু, তারপর দুজন মিলে উঠে যায় সেটাতে

-টেক্সিটা অনেক গতিতে ছুটে চলছে । আর বাতাসে সিন্থিয়ার চুল গুলো উড়ছে । সিন্থিয়া মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে,

একটা মানুষ এতো মায়াবী কিভাবে হতে পারে??
নাকি আমরা যাকে ভালোবাসি তার মধ্যে শুধু মায়াটা দেখতে পারি…
রেলস্টেশনে নেমে সিন্থিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে যেনো খুজছে ।

সিন্থিয়ার এদিক ওদিক তাকানো দেখে রাজু ভাবে মনে মনে ভাবে আচ্ছা কারো আসার কি কথা ছিলো ।

রাজু দুটি টিকেট আগ থেকে কেটে রেখে দেয়.
শেষ ট্টেন চলে আসলো, সিন্থিয়ার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে আছে.যেমনটা কেউ প্রিয়জনকে দেখলে হয় তেমনটি সিন্থিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে এখন !!

– সিন্থিয়া দৌড়ে দেয়
রাজু পানির বোতল আর টুকটাক খাবার কিনতে দোকানে এসেছে । সিন্থিয়াকে দেখে সে অবাক হয়ে যাচ্ছে সিন্থিয়া দৌড়ে আসছে দুহাত বাড়িয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে,

জিবনে প্রথমবার যাকে ভালোবাসছে সে তাকে আলিঙ্গন করবে সেই‌ অনুভৃতি হচ্ছে তার মনে । সে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে ।

– তবে রাজুর বুকে যে সুখটা আসছে সেটা দুঃস্বপ্ন চিঠি হয়ে উড়াল দিয়ে রাজুর পিছনে যে ছেলেটা দাড়িয়ে আছে তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সিন্থিয়া।

রাজু সেই দৃশ্য দেখে তার পা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে মনে হয় , সিন্থিয়া কি আসলেই তাকে ধোকা দিলো। তার ভালোবাসা সিন্থিয়ার মনে একটুও নাড়া দেই নি । নাকি সে ব্যর্থ..

সে কি তাহলে ডাকপিয়ন ছাড়া আর কিছুই নয় আর সিন্থিয়া কি তার চিঠি ??

– অপর পাশ থেকে ছেলেটি বললো থ্যাংকস ব্রো আপনার এই উপকার কখনো ভুলবো না । ( রাজু পরক্ষণে নিজেকে সামলে নেয় এবং বিষয়টা বুজে যায়)

অচেনা ছেলেটিঃ আর টিকেট গুলো কোথায় ।

রাজু মুচকি হাসি দিয়ে টিকেট গুলো ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে দেয় । ছেলেটি সিন্থিয়াকে নিয়ে ট্টেনে উঠে যায়.

সিন্থিয়া নিচু স্বরে বললো থ্যাংকস রাজু
রাজু হাসি মুখে তাদের বিদায় জানায় ( রাজু এইটুকু বুজতে পারলো রাজুর মনে কখনো সুখ আসবে না)

হুইসাল বেজে উঠলে ট্টেনটা ছুটা শুরু করে তার গন্তব্যের দিকে . ট্টেনটা রাজুর চোখের দৃষ্টিতে যতক্ষণ পযন্ত রয়েছে ততক্ষণ পযন্ত একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সে..

– শেষে কি এটাই হওয়ার কথা ছিলো তার সাথে,
রেলস্টোশন থেকে বেরিয়ে সরু রাস্তার ধরে হাটা শুরু করলো সে

মূহর্তে আকাশের গগন মাখা গর্জনে অজার ধারায় বৃষ্টি নামা শুরু করলো, এই সময়ে বৃষ্টি নামবে রাজু কল্পনা করতে পারলো না । এমনিতে ওইদিন বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়ে ফেলছে..

আজকে শরীর মানছে না বৃষ্টিতে ভিজতে তারপরও তার মন চায়ছে বৃষ্টিতে ভিজতে

আচ্ছা রাজু তাহলে ডাক পিয়ন ছিলো । আর সিন্থিয়া ছিলো চিঠি । রাজু ভেবেছিলো অনেকদিন যাবত যে চিঠিটাকে সে আগলে রেখেছে সেই চিঠিটা হয়তো তার ঠিকানায় এসে পৌছায়ছে .

কিন্তু না চিঠিটার খামের অংশের ঠিকানাটা পড়লো জানতে পারতো সে চিঠিটা তার ঠিকানায় নয় অন্য ঠিকানায় এসেছে..

– খামের অংশে লেখা ঠিকানাটা পড়ে নি সে ‌. রাস্তার পাশে ওই ছোকরাটাকে আজ দেখা যাচ্ছে না ।

চিঠিটা হয়তো এতোক্ষণে তার গন্তব্য পৌছায়ে গেছে রাজু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে..

– যাক আজ থেকে তাহলে ডাক পিয়নের ছুটি ?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here