সেই_মেয়েটি❤,পার্টঃ7
লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
সেই দিনের পর থেকে মাধুরিকে তার শাশুড়ি তেমন কিছু বলতো না ।
মেহেদির আর মাধুরির সংসারটা ভালোই চলছিলো,
এর মধ্যে একদিন মাধুরির প্রচন্ড বেগে প্রসাব বেদনা শুরু হয়ে গেলো । মাধুরি খুব কষ্টে হাতের কাজটা শেষ করে দ্রুত রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে মেহেদিকে কল দিলো ।
অফিসে বসে, কাজ করছে মেহেদি হঠাৎ মাধুরির রিং পেয়ে সে কিছুটা চমকে উঠলো , মাধুরির কিছু হলো না তো আবার ।
ফোনটা ধরে মাধুরি শুধু হ্যালো বললো তারপর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো । ওপাশ থেকে মেহেদি
” হ্যালো মাধুরি, মাধুরি কি হয়েছে তুমার, মাধুরি তুমি আমার কথা শুনতে পারছো । মাধুরির কেনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অফিস থেকে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লো, সে
অফিসের সকল স্টাফরা মেহেদির এমন বিচলিত হয়ে বের হওয়া যাওয়াটা দেখে অবাক হয়ে গেলো । সাথে সাথে মেহেদির কলিগ সবুজ মিয়া মেহেদির পিছন পিছন চলে গেলো ।
বাসায় এসে মেহেদি দেখে মেঝেতে মাধুরি পড়ে আছে অজ্ঞান হয়ে, সে তার মাকে ডায় দেয় কিন্তু ডাকে কেউ সাড়া দেয় না ।
তার মা তখন অন্য কাজে ব্যস্ত,মেহেদি আর দেরি না করে মাধুরিকে কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে দৌড় দিলো ।
এম্বুলেন্স নোয়াখালির আকাবাক পথ পেড়িয়ে মেইন রোড দিয়ে চলতে লাগলো এখন, এর মধ্যে মাধুরির জ্ঞান ফিরেছে সে চোখ মিলে তাকিয়ে দেখে মেহেদি তার হাত খুব শক্ত করে ধরে আছে ।
মাধুরি চোখ খুলতেই মেহেদি মাধুরির কপালে চুমু দিয়ে বললো কিছু হবে না আমার লক্ষীটি, একটু ধৈর্য ধরো ।
মাধুরিকে প্রাইম হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো, মেহেদি তার বাবা মা আর মাধুরির মাকে কল করে জানিয়ে দিলো । মেহেদির বাবা খবর পেয়ে ছুটে আসলো কিন্তু তার মা আসলো না। মেহেদি অনেক কষ্ট পেলে তার মা না আসাতে ।
যে কক্ষে মাধুরিকে নিয়ে গেছে সে কক্ষের সামনে মেহেদি পায়চারি করছে, একটি মিনিটের জন্য সে বসে নি ।
অনেকক্ষণ পর একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এসে বললো, এইখানে রোগীর স্বজন কে ???
মেহেদি সামনে এসে বললোঃ আমি তার বর কি হয়েছে আমাকে বলুন ।
ডাক্তারঃ- কিছুটা নিচু স্বরে বললো, আপনার ওয়াইফের আর বাচ্ছাটার অনেকটা ঝুকি আছে ।
প্রথমত ওনি সম্ভবত গর্ভীপতী হওয়ার পর অনেক ভারী কাজ করেছে । তাই এইজন্য ঝুকিটা অনেক বেশি এমনকি যেকোনো একজনের মৃত্যু হতে পারে । আপনার যেকোনো একজনকে বেচে নিতে হবে ।
ওয়াইফ অথবা বাচ্ছা ।
ডাক্তারের মুখে এই কথা শুনে মেহেদি থম মেরে দাড়িয়ে রইলো, সে এগুলো কি শুনছে, মেহেদির বাবা ডাক্তারকে বললো এই উপায় ছাড়া কি আর কেনো উপায় নেই আপনাদের ।
ডাক্তারঃ- না, তবে বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি এখন আপনারা চিন্তা করুন কি করবেন ??
আমরা রোগীকে কেবিনে শিফট করে দিচ্ছি, কয়েক ঘন্টা পর আবার আসবো ।
মাধুরিকে কেবিনে নিয়ে আসা হলো,
– ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে তাকিয়ে ঘুম পারানো হলো, মেহেদি মাধুরির কাছে গিয়ে মাধুরির হাত খুব শক্ত করে ধরে কেদে দিলো !! সে অনেক ভেবে চিন্তা করলো তার এখন বাচ্ছার দরকার নেই বেচে থাকলে হবে । আগে মাধুরিকে দরকার তার ভালোবাসা দরকার আগে ।
ডাক্তার এসে মাধুরিকে নিয়ে গেলো,
মেহেদি আল্লাহর কাছে দোয়া করলো, যেনো মাধুরি আর তার বাচ্ছাটা সুস্থ ভাবে যেনো ফিরে আসে ।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো, মেহেদির কাছে এই প্রতিটি সেকেন্ড কয়েক বছরের মতো লাগছে, সময়টা আজ যাচ্ছে না বোধহয় পৃথিবীটা কি তাহলে থামকে গেছে ।
যাক সব অবসান শেষে, ডাক্তার বের হলো
সবাই ছুটে গেলো তার কাছে, এইবার ডাক্তার আর মুখটা বেজাড় না করে হাসি মুখে বললো, আলহাদুল্লিলাহ আপনার একটা মেয়ে হয়েছে ।
মেহেদিঃ- আর মাধুরি …
ডাক্তারঃ- আপনার ওয়াইফও ভালো আছে আল্লাহর রহমতে,
এখন যান মিস্টি নিয়ে আসেন…..
হাসপাতাল থেকে মেহেদি তড়িঘড়ি করে বের হয়ে, একটা রিক্সায় উঠলো,
“” মামা কই যাবেন
মিস্টির দোকানে চলো মিয়া,
রিক্সা ওয়ালা পিছন ফিরে মুচকি হাসি দিয়ে বলে কোনো খুশির সংসবাদ আছে নাকি,
মেহেদি মুখ ফসকে বলে উঠলো সেই মেয়েটি আজকে মা হয়েছে….
রিক্সাওয়ালা আবার ঘুরে তাকিয়ে বললো কি বলেন মামা সে মেয়েটি আবার কোন মেয়েটি,
মেহেদি জিহ্বা কামড় দিয়ে বলে, কিছু না তুমি যাও তো !!!
( কেমন হলো জানাবেন…)
চলবে..