নিষিদ্ধ_সে,৯,১০
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
(৯)
আমিঃ [ফিসফিসিয়ে] তুমি এই গর্ভবতী ছেলের জন্য আমায় সাজিয়ে আনতে চেয়েছিলে আম্মু? একে তো অলরেডি মেরিড লাগছে।
আম্মু আমাকে হাত পিছনে দিয়ে পিঠে মারলেন। মুখ কাচুমাচু করে তাকালাম।
আম্মুঃ [হেসে দাঁতে দাঁত চেপে] এরকম কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছিস কেন? যদি তোকে এর সাথেই বিয়ে দেই?
পাশে ভাইয়া বসা ছিলো। আমাকে আর আম্মুকে ফিসফিসাতে মানা করলো। চুপ করে গেলাম। শুধু কটমট করে তাকালাম একবার আম্মুর দিকে। কিছুক্ষন পর আপুকে আনা হলে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলাম। ভাইয়া চিমটি কাটলো হাতে। পাশ ফিরে তাকিয়ে আবারো তাকালাম।
নিভৃতঃ আমার বউটা অনেক সুন্দর তাই না?
আমিঃ [হালকা চেঁচিয়ে] আপু তুমি রনক ভাইয়ার বোন?
বসা সেই গর্ভবতী ভাইয়া আর বাকি মুরব্বীগন আমার দিকে কেমন করে তাকাতে লাগলো। অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। একটু বেশিই আওয়াজে বলে ফেলেছি। বসে থাকা পাত্রীর বাবা আমার দিকে প্রথম মুখভরা হাসি নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“তুমি রনককে চেনো?”
অপ্রস্তুত হাসি হেসে মাথা নাড়লাম। উনার প্রশ্নে আবারো স্বাভাবিক হয়ে এলো পুরো ঘরটা।
“রিধিতার ছোট সে। [বাবা মা’র দিকে ফিরে] এখন এক কম্পানিতে বেশ ভালো পদে আছে।”
আম্মু উৎসুক হয়ে আরো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো। এদিক আপু যে সামনে দাঁড়িয়ে তাতে হুস নেই। তিনি অদেখা “রনক” ভাইয়ার সুনামে বেশি আগ্রহী। আব্বু মৃদু হেসে ধাক্কা দিলে বিরক্তির সাথে চাইলো। আব্বু নিজেই আপুকে প্রশ্ন করতে লাগলে আম্মুর জ্ঞান আসলো। “রনক” ভাইয়া এখানে নেই দেখে বাসাটা থেকে বেরিয়ে কি আফসোস আম্মুর। আম্মুর আফসোসে আমারই রাস্তায় ভাঙ্গা থালি নিয়ে বসে হেলেদুলে গান গাইতে ইচ্ছে করছে। আব্বু পাকা কথা বলে এসেছেন ঐখানে। গাড়িতে বসে আম্মু শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরলেন।
আম্মুঃ ছেলেটা কেমন রে দেখতে?
আমিঃ [একবার চেয়ে নিয়ে] তুমি কি এখন রনক ভাইয়াকে আমার সাথে ভাবছো সে ভুল মোটেও করো না।
আম্মুঃ কেন ছেলেটা তো ভালোই। সুদর্শন, ভালো চাকরি,,
আমিঃ [গ্লাস নামিয়ে বাইরে তাকিয়ে] একবার সুদর্শন খেতাবধারীকে দেখে সাধ মিটে নাই? আবারো সুদর্শন সুদর্শন করো!
আব্বুঃ তোর মা-র বুঝছিস মনে রং লেগেছে সারাদিন কি কি ছবি দেখে আর নিজে সেগুলো কল্পনা করে নেয়। বুড়ো হয়ে তো আর নিজে সেগুলো পূরণ করতে পারবে না তাই তোদের দিয়ে সাধ মেটায়। এতো কমনসেন্স ছাড়া মানুষ কিভাবে হয় বুঝি না। গেছে মেয়ে দেখতে ইন্টার্ভিউ নিয়ে এসেছে মেয়ের ছোট ভাইয়ের। [হাসতে হাসতে] ভাগ্যিস রনক ছেলেটা ছিলো না নাহলে তোর মা দেখার সাথে সাথে কবুল পরিয়ে নিতো কাজি ডেকে!
হাসতে লাগলাম পুরো গাড়ির সবাই। আম্মু আব্বুকে মেরে নিজেও হাসছেন।
আম্মুঃ আমার কতো শখ জানো? মেয়েটা আমার নিজের ভাইয়ের বিয়েতে মেয়ে পক্ষের সাথে মজা করতে গিয়ে প্রেমে পরবে। তারপর___
আব্বুঃ [হাততালি দিতে দিতে] ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মা তুমি! মেয়ের প্রেমকাহিনী কল্পনা করে রেখেছো!
•
•
•
আমিঃ আম্মু! এতো শাড়ি ভরছো কেনো ব্যাগে?
আম্মুঃ আরে বেস্টফ্রেন্ডের মেয়ের বিয়ে শাড়ি ভরবো না বেশি করে?
আমিঃ [ভেংচে] বেস্টফ্রেন্ড বলে এখন উতলা হচ্ছো কেন? তুমিই না মানুষের বাসায় এতোদিন থাকে নাকি বলে নিয়ে এসেছো আমাকে! তখন মনে ছিলো না সেটা তোমার বেস্টফ্রেন্ডের বাসা?
আম্মুঃ চুপ থাক জ্ঞান দিবি না! তুই আমাকে পেটে ধরেছিস না আমি ধরেছি? নিজে তো ছোট্ট একটা ব্যাগ নিচ্ছিস! সেখানে কিছু আটে?
গাল ফুলিয়ে ভাইয়ার রুমে এসে গেলাম। ভাইয়া প্রেমালাপে ব্যস্ত। পিছে গিয়ে ফোন কেড়ে নিলাম টুপ করে। ভাইয়া চেচিয়ে উঠলো।
আমিঃ হ্যালো আপু বলছো?
রিধিতাঃ হুম। সব রেডি? কখন বেরোবে তোমরা?
আমিঃ আটটায় বেরোবো। তোমার ছোট ভাইয়ের ফ্রেন্ডের বোনের বিয়ে তুমি যাবে না?
রিধিতাঃ হাহাহাহা বহুত দূর সম্পর্ক হয়ে যায়। তাছাড়া বাসার কেউই তো যাচ্ছে না!
আমিঃ [লাফিয়ে ভাইয়ার বেডে উঠে বসে] আপু আমাদের সাথে চলো।
রিধিতাঃ এটা হয় নাকি?
আমিঃ আলবাদ হয়! তোমাকে দেখার জন্য আমি চট্টগ্রাম থেকে আসতে পারলে এটুকু পারবে না আমার জন্য?
রিধিতাঃ না গো আপু! বাবা মানবে না!
আমিঃ হিহিহি আরে আমার ফিল্মি আম্মু আছে না! তুমি যাবে নাকি সেটা বলো!
রিধিতাঃ আ আমি____
সামনে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়ানো ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কণ্ঠ নামিয়ে আপুকে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলান,,,
“ভাইয়া যদি পাল্টি খায় ঐখানে গিয়ে?”
রিধিতাঃ মানে?
“ভাইয়ার যদি সেখানে গিয়ে সুন্দ্রী কোন আপুকে দেখে মাথা ঘুরে তোমাকে ভুলে যায়?”
রিধিতাঃ হাহাহাহা, মাথায় বারি মেরে আমাকে মনে করাবো!
“উফ, তুমি বড় নিরামিষ মানুষ! চলো না আপু! আমার সঙ্গী বলতে কেউ নেই ঐখানে! সায়রি তো নিজেই বউ সেজে থাকবে স্টেজে!”
রিধিতাঃ বাবা____
“তুমি যেতে চাও নাকি সেটা বলো!”
রিধিতাঃ হ্যা কিন্তু___
“আচ্ছা আমি আম্মুকে বলে দেই!”
আম্মুর কথায় আঙ্কেল বাধ্য হয়ে আপুকে যাওয়ার পাস দিয়ে দিলেন। গাড়ি আপুকে পাশে বসিয়ে ভাইয়াকে ড্রাইভারের পাশের সিটে পাঠিয়ে দিয়েছি। ভাইয়ার কি রাগ! সারা রাস্তা আপু আর আমি গল্প করতে করতে এসেছি। ভোর বেলায় চট্টগ্রাম পৌছুলে আম্মুকে বললাম নেমে যাবো। ঘুম এক্কেবারে উধাও হয়ে গেলো তার। রণমূর্তি হয়ে আমার দিকে চাইলো।
আম্মুঃ ভোর বেলায় ঢং ধরবি না যেতে হয় তো দিনের বেলা যাবি। এখন তোর খালামনির বাসায় গিয়ে উঠবো।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে গেলাম। বাসায় পৌছুতে খালামনি আমার লাফানো শুরু করবে এমন অবস্থা। একে তো আপু এসেছে তার উপর মা-কে বহুদিন পর পাওয়া। খালাতো ভাই মরার মতো ঘুমোচ্ছে রুমে। গিয়ে কানে সুরসুরি দিয়ে ভালো মানুষের মতো এসে গেছি।
•
•
•
আম্মুঃ [ধমকে] সোজা হয়ে হাট।
রেগে তাকালাম। এমনিতেই এসেছি একদম দেরি করে। না জানি বান্ধবীর হলুদ সন্ধ্যা শেষ হলো বলে! আর মধ্যে পরেছি শাড়ি! কোনদিন শাড়ি পরিনি তাই কুচিতে বারবার দেখে ঠিক করছিলাম। আম্মুর তাতে ঘোর বিরোধিতা। দরজা দিয়ে ঢুকতে মাথায় বারি খেলাম কারোর চওড়া বুকে!
আমিঃ আব্বে কে রে!
মাথা তুলে দেখি সায়র ভাই ফোন হাতে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে। হলুদ পাঞ্জাবি সোজা হালকা বড় চুলগুলো জেল দিয়ে সুন্দর করে পিছনে নিলেও কিছু অবাধ্য চুল কপালে এসে পরছে। চোখ মুখ কেমন নির্বিকার লাগছে। আজকে ধাক্কা খেয়েও ঝগড়া করলো না! খুব আজব! আম্মু মাথায় মারলো আমার। মাথায় হাত বুলিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে তাকালাম মা-র দিকে!
আম্মুঃ দেখে হাঁটিস না আবার এমন ভাষা ব্যবহার করিস! [সায়র ভাইকে] কিছু মনে করো না তুমি!
সায়র ভাই আমাকে সম্পুর্ণ উপেক্ষা করে মা-বাবার সাথে বহুদিন পর দেখার কথাবার্তা আদান প্রদান করতে লাগলেন। এমন ভাব নিচ্ছেন যেনো এখানে আমার কোন অস্তিত্বই নেই! কিন্তু বেহায়া চোখ দুটো দিয়ে পুরো স্ক্যান করে ফেলেছি উনাকে কতোবার কে জানে হিহিহিহি। জোরসে ক্রাশ খেয়েছি ভাই! মাথায় হালকা আঘাতে পাশে তাকালাম। রিহাম ভাইয়া (খালাতো ভাই) চোখ নাচাচ্ছে।
রিহামঃ ছেলে দেখলেই লুচুমি শুরু করে দিস নাকি এভাবে? তোর চোখ তো বেশ খারাপ হয়ে গেছে নিশু!
আমিঃ [কাধে ঘুষি মেরে] তুই বুঝি খুব ভালো! ঐ দিকের একটা মেয়েকে মাত্র চোখ টিপ মারলি বখাটেদের মতো আমি দেখিনি ভেবেছিস!
রিহামঃ [চোখ গোল গোল করে] কই করলাম?
আমিঃ [ছাড়া চুলগুলো পিছনে একেবারে ভাইয়ার মুখের উপর দিয়ে] বলতে বাধ্য নই!
সামনে ঘুরে রিধিতা আপুর পাশে যেতে সায়র ভাইকে শীতল চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। আশপাশ তাকালাম। না আমাকেই দেখছে। চোখ টিপ মারলে সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। আজব তো এমন হাসির মানে কি? আর তাকাবো না মনে মনে পণ করলাম। রিধিতা আপুর সাথে দাঁড়িয়ে আছি এককোনে। হঠাৎ রনক ভাইয়াকে দেখে তার কাছে গেলো আপু। একা একা দাঁড়িয়ে সায়রিকে ফোন করতে লাগলাম। বারবার বিজি আসছে!
সায়রঃ ছেলে ঠিক হয়ে গেছে বিয়ের জন্য তবু ছেলেদের চোখ টিপ মারিস লজ্জা বলতে কিছু আছে তোর?
চোয়াল হা হয়ে গেলো আমার। কাছ থেকে দেখে মনে হচ্ছে চোখের নিচে কালির রেখা দেখা যাচ্ছে! আমার দিকে শীতল চোখে চেয়ে আছেন। রিহাম ভাইয়াকে দেখে আবারো তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেসা করে উঠলেন,,,
“ঐটাই কি তোর জন্য ঠিক করা ছেলে? ভালোই তো!”
চলবে________?
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
#নিষিদ্ধ_সে
(১০)
সায়রঃ ছেলে ঠিক হয়ে গেছে বিয়ের জন্য তবু ছেলেদের চোখ টিপ মারিস লজ্জা বলতে কিছু আছে তোর?
চোয়াল হা হয়ে গেলো আমার। কাছ থেকে দেখে মনে হচ্ছে চোখের নিচে কালির রেখা দেখা যাচ্ছে! আমার দিকে শীতল চোখে চেয়ে আছেন। রিহাম ভাইয়াকে দেখে আবারো তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেসা করে উঠলেন,,,
” ঐটাই কি তোর জন্য ঠিক করা ছেলে? ভালোই তো!”
“কি আবোল তাবোল বলছেন? আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়েছে মানে?”
“লুকোচ্ছিস কেন? ঠিক হয়নি বলতে চাইছিস?”
“লুকোতে যাবো কেন? সত্যিই আমার জন্য কোন ছেমড়াকে ঠিক করা হয়নি!”
সায়র ভাই বিস্মিত হয়ে তাকালেন আমার দিকে কিছুক্ষন পর চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো উনার।
“সায়রি তাহলে আমাকে মিথ্যে বলবে?”
চোখ মুখ কুচকে তাকাতে উনি পাশ থেকে চলে গেলেন। আমি ভেবলা হয়ে চেয়ে আছি। অদ্ভুত! ঘুরে ঘুরে সায়রিকে খুজতে গিয়ে কিছু আন্টির কথা কানে এলো। গুজুর ফুজুর করছেন কিছু নিয়ে। পাশে দেখি আম্মু আর সায়রির মা দাঁড়িয়ে অসন্তুষ্ট চেহেরা নিয়ে। আম্মুর কাছে দাঁড়াতে টেনে পাশে দাঁড় করিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলেন, “দেখেছিস? এর জন্যই তোকে ঢাকায় নিয়ে গেছিলাম!” বহুত সময় লাগানোর পর ঘটে কাহিনীর মূলভাব স্পষ্ট হলো। রনক ভাই সামনে ভাবলেশহীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও রিধিতা আপুর চেহেরা ফেকাশে হয়ে আছে সায়রির চাচির বদৌলতে। মানে বন্ধুর বাড়িতে থাকাটাও দোষের হয়ে গেলো!
“দেখো কেমন করে দাঁড়িয়ে আছে! সামান্তা (সায়রির আম্মু) তুই কোন চার্জ নিসনি এর থেকে? বিনা পয়সায় খাওয়াচ্ছিস থাকতে দিচ্ছিস! এদেরও বা কি বলবো!”
আন্টি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত চোখে এক আন্টির দিকে তাকালেন। সেই আন্টিটা মুখ দিয়ে মধু বের হওয়া আন্টিকে ধমকে উঠলো। ভেংচি কেটে উঠলেন তিনি, “মানুষের ভালোও চাইতে নেই! ভালো কথাতেও কেমন করে!” আমি আম্মুর হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে রনক ভাইয়াদের কাছে গেলাম। ফোনে নিউজফিড স্ক্রল করছেন খুব মনোযোগে তিনি! আমি কাধে হাত দিয়ে ধাক্কা দিলে ম্লান হাসি দিলেন।
“ভাইয়া চলুন! সায়রিকে খুজে দিবেন!”
“আমি কিভাবে____”
“আরেক মেয়ে আবার ঢং দেখিয়ে ডাকতে এসেছে।”
আন্টিটার কথায় কথাটা মাঝ পথে থামিয়ে দিলেন ভাইয়া। আমাকে নিচুস্বরে এখান থেকে চলে যেতে বললেন। খারাপ লাগলো খুব রিধিতা আপুর মুখ দেখে। বড় মানুষ নাহলে চুলাচুলি লাগিয়ে দিতাম এখন। সামান্তা আন্টির ইশারাতে রনক ভাইয়ার হাত ধরে টানতে লাগলাম, “রনক ভাইয়া আসেন তো! আপনার পিছনে যে মধুর চাক আছে সব তো ধুয়ে নিচ্ছে মৌমাছিরা! পিছনে যে ভনভন করে পরেছে সেটা দেখেন না? অবস্থা আরো নাজেহাল করে দিবে। মৌমাছিগুলোও কেমন! নিজের চাক ছেড়ে আপনার পিছনের মধুতে সুখ খুজে! আজব চিড়িয়া সব!”
ভাইয়াকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে সামনে আবারো সায়র ভাইয়া পরলো। ভ্রু কুচকে চেয়ে আছেন তিনি রনক ভাইয়ার হাত ধরে রাখা হাতটায়। উনার চাহনি দেখে হাত চাপ দিয়ে ধরলাম আরো। রনক ভাইয়া ব্যাথাদায়ক শব্দ করে উঠলে ছেড়ে দিয়ে আবারো ধরলাম।
“তুই কি চাস আসলে? নিজের_____”
“ঐ ঐ সমস্যা কই আপনার? একে তো নিজের ফ্রেন্ডকে এনে তার খোজ রাখেন না ভালো আছে কি না আছে। তার উপর আমার জামাইয়ের পিছে পরেছেন! আমাকে কি লেসবো লাগে? হ্যা? দেখতে গেলাম ভাইয়ার জন্য মেয়ে জনে জনে রটিয়ে বেড়াচ্ছেন আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়ে গেছে! হলে বেশ হয়েছে আপনার কি? রিলেশনে আছেন নির্মা আপুর সাথে বারবার আমার না হওয়া মেয়ে জামাই ওরফে রিধিতা আপুকে খোচা দিয়ে কথা বলেন কেন? আজকেও গঞ্জিকা খেয়েছেন? বেশি করবেন তো কিছুদিন আগে আপনার স্বিকারোক্তি ভাইরাল করে দিবো! হ্যান্ডসাম ওম্যান কোথাকার!”
রেগে সায়র ভাইকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই সায়রিকে খুজতে লাগলাম। রেগে কোন কোন রুম তাড়াঘোড়ায় দেখেছি খেয়াল করিনি। হঠাৎ হলুদ শাড়িতে সজ্জিত সায়রিকে চোখে পরলো। দম টেনে নিজেকে ঠিক করে ওর কাছে গেলাম। সে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে। রুমে থাকা নির্মা আপুসহ সায়রির কাজিনরা আমাকে অবাক হয়ে দেখছে! সায়রির কাছে গিয়ে আয়নার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ালাম সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ভ্রু কুচকে ওর থুতনি ধরে আমার দিকে ফিরালে হাত ঝারা মারলো। নির্মা আপু কানের দুল পরতে পরতে এগিয়ে এলো।
নির্মাঃ শুনলাম তোমার জন্য নাকি ছেলে ঠিক হয়েছে? এর জন্যই এতো তাড়াহুড়োয় চলে গেছিলে? আমাদের অন্তত কিছু বলে যেতে।
সায়রি আড়চোখে তাকালো। ভ্রু কুচকে নির্মা আপুর দিকে তাকালাম।
“কে বলেছে এগুলো তোমাদের?”
নির্মাঃ তুমিই তো মেসেজ দিলে সায়রিকে ছেলে দেখতে গিয়েছো!
“কিহ! আমি মেসেজ দিয়েছি! কই দেখি!”
সায়রি অন্যদিকে ফিরে ফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আসলেও আমার ফোন থেকে মেসেজ গিয়েছে আমি ছেলে দেখতে এসেছি। নিজের ফোন বের করলাম দেখি সত্যিই পাঠিয়েছি। কিছুক্ষন ভাবার পর কাহিনী পরিষ্কার হলো। লুকিয়ে ফোন টিপে উত্তর দিতে গিয়ে টাইপিং এ ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি লিখতে গিয়ে অটোকারেকশনে মেসেজ চলে গেছে ভাইয়াকে নিয়ে ছেলে দেখতে এসেছি! কিছুক্ষন পর কোমড়ে হাত দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলাম। সায়রি কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে তাকালো।
নির্মাঃ [আমাকে ধাক্কিয়ে মিটিমিটি হেসে] তোমার বান্ধবী রেগে আছে আর তুমি হাসছো? ছেলে দেখতে গেলে আর ওকে নিলে না? বেশ রাগ করেছে!
হাসতে হাসতে সায়রির কাধে মারলাম সে বিরক্ত হয়ে তাকালো। “আরে ভাই, অটোকারেকশনে এই মেসেজ চলে গেছে তোর কাছে। কালকে ভাইয়ার সাথে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়নি!”
সায়রিঃ [হাতের কাছে থাকা পাউডারের কৌটা ছুরে মেরে] হারামি আমি আরো ভেবেছি তুই আমাকে রেখেই কবুল পড়ে এসেছিস।
“হুস! একটা মজার ব্যাপার কি জানিস?”
সায়রিঃ কি?
“ভাইয়ার জন্য যে মেয়ে দেখতে গিয়েছি সে রিধিতা আপু।”
সায়রিঃ মানে রনক ভাইয়ার বোন?
“হ্যা। হাহাহাহা, ভাগ্যিস রনক ভাই সেখানে ছিলো না আমার আম্মু তো রনক ভাইয়ার নাম শুনেই ফিট! রিধিতা আপুর ইন্টার্ভিউ না নিয়ে রনক ভাইয়ার আব্বুর কাছে ভাইয়ার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছিলো। বাসা থেকে বেরিয়ে আম্মুর কি আফসোস____”
রিধিতাঃ [মাথায় মেরে] বেশ তো! তাহলে আন্টিকে বলতে হয় তোমার আর রনকের বিয়ে আমাদের সাথেই দেওয়ার জন্য।
পিছনে ঘুরলাম। রিধিতা আপু ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আর সায়র ভাইয়া, রনক ভাইয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে হেসে, “আউইইইই তাহলে তো বেশ হয়! এমনিতেই টোলওয়ালা ক্রাশ ভাইয়া। আচ্ছা এখন থেকেই রনক বলে ডাকবো। এই রনক এদিকে আসো সেলফি তুলবো!”
রিধিতা আপু হেসে আবারো মারলেন আমাকে।সায়রিকে জড়িয়ে ধরে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেসা করতে লাগলেন। রনক ভাইয়ার হাত ধরে দূরে সরে যেই সেলফি তুলবো সায়র ভাই মধ্যে এসে বাগড়া দিলো।
ভ্রু কুচকে তাকালাম, “কি সমস্যা?”
সায়রঃ আমিও তুলবো!
ভেংচি কেটে, “আপনাকে নিবো না! সরেন!”
সায়রঃ তুই নিবি না তোর ঘাড় নিবে!
চোখ ছোট ছোট করে, “আচ্ছা রনক ভাইয়া কি আপনার প্রেমিকা লাগে? যতোবার ছবি তুলতে যাই, ভাইয়ার সাথে থাকি আপনি মধ্যে এসে বাগড়া দেন! [ফিসফিসিয়ে] আপনার কি গে-সম সমস্যা আছে সায়র ভাই?”
সায়র ভাই চোখে আগুনের শিখা জ্বেলে তাকিয়ে আছেন। সপ্রশ্নচোখে তার এই রিয়েকশন দেখছি।
চলবে_________❤