নিষিদ্ধ_সে,১৩ (শেষ)
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
“হ্যা আমি সায়র ভাইকে পছন্দ করি।”
কথাটা বলে সায়রির দিকে তাকালাম। সে বিস্মিতচোখে আমাকে দেখছে। কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসার জন্য পিছনে ঘুরলে নির্মা আপুকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আপু উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। চমকে আপুর তুচ্ছতাচ্ছিল্য শোনার অপেক্ষায় আছি। অবাক করে দিয়ে বেশ স্বাভাবিকভাবে আমার জন্যে প্রশ্ন ছুড়লেন, “বর দেখতে যাবে না? তোমায় ডাকতে এলাম সেজন্যে।”
আপুর স্বাভাবিক কথায় ওর দিকে চুপ হয়ে চেয়ে আছি। আপু বেশ সানন্দে আমার কাছে এসে হাত টেনে নিয়ে এলো রুম থেকে। আমি শুধু আপুকে দেখে যাচ্ছি।
“আপু তুমি রেগে যাওনি?”
নির্মা আপু মৃদু হাসলো। আমার হাত নিজের হাতের ভাজে নিয়ে সামনে এগোতে লাগলো, “পছন্দ করতেই পারো। তোমার মনের উপর তো আর আমার অধিকার নেই। যদি থাকতো সত্যি বলছি আমার একমিনিটও সময় লাগতো না সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বার্থপর হতে। তোমার মন থেকে একদম মুছে দিতাম সায়রের উপর ক্রাশটুকু। সে সুযোগ তো আর নেই। তাছাড়া আমরা কেউই জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কে। তাই সামান্য এই কথা নিয়ে ঝগড়া করার কারন খুজে পাচ্ছি না। ক্রাশ খেতেই পারো। তুমি তো আর ভালোবাসো না সায়রকে! ঠিক না?”
আপুর প্রশ্নমাখা চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। কতো সহজভাবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছে আপু। আর আমি কিনা সেই এই আপুর ভালোবাসার বিচ্ছেদ চেয়েছি। না বোধক মাথা নাড়লাম। আপুর সাথে নিচে নেমে সায়রির কাজিনদের সাথে সাইফ ভাইয়ার গেট ধরে দর কষাকষি করলাম। একবারো সায়র ভাইয়ের দিকে তাকায়নি আর। তাকে পছন্দ করি, সেই সীমাটা হয়তো সায়রির ভাষায় পছন্দের থেকেও বেশি কিছু। যতোটা পছন্দ করলে ঘুম ভাঙলেই প্রথমে তার চিন্তা আসে মাথায়। সব চিন্তাতেই সে জড়িত থাকে। যার কথা ভাবলে নিমিষে হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে, যার স্মৃতি মনে পরলে লজ্জামিশ্রিত একরাশ ভালো লাগা গ্রাস করে আমাকে। প্রত্যেকটা মূহূর্ত সে নিষিদ্ধ আমার জন্য জেনেও সেই নিষিদ্ধ চাওয়াটা চেয়ে বসে অপরাধবোধে নিজেই গুটিয়ে যাই। একে ভালোবাসা বলে? হ্যা তাহলে আমি ভালোবাসি। কিন্তু এটা প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। কারন সে অন্যের সাথে সম্পর্কে জড়িত যে ভীষণ ভালো একজন মানুষ। আমার অধিকার নেই তাকে কষ্ট দেওয়ার। এই মানুষগুলো শুধু সুখ ডিজার্ভ করে কষ্ট না। যেখানে কিছুদিনের পরিচয়ে আমাকে আপন করে নিয়েছে আপুটা সেখানে আমি কেন তাকে কষ্ট দিতে যাবো। খুব পছন্দের একটা মানুষ এই নির্মা আপু। আবেগের বসে ওদের বিচ্ছেদ চাইলেও সেই চাওয়াটা যে আমার জন্য নিষিদ্ধ তা একদম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সময়। ভালোবাসলেও তা মুখে বলা মানা কারন সে নিষিদ্ধ আমার জন্য। “নিষিদ্ধ সে!” বিয়ের সময় বরপক্ষের সাথে প্রচুর মজা করলাম। আমার আম্মু প্রচুর খুশি আমার এই ব্যবহারে জামাইয়ের আশায়। কিন্তু রনক ভাইয়াকে তার বেশি ভালো লেগেছে। সায়র ভাই আমার হাত ধরে টেনে আনতে গেলেও পালিয়ে গেছি। চাইনা আমার এমন কেয়ারের যে কেয়ারের কোন নাম নেই। খেতে বসে রনক ভাই আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন পাশে বসে, “কিছু হয়েছে নিষ্ঠা?”
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে মাথা নাড়লাম প্রবলবেগে। আমার দিকে বেশ সন্দিগ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন উনি।
“আমার মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে। সায়রকে ইগনোর করছো কেন? সে রেগে টমেটো হয়ে যাবার যোগার!”
খাওয়া থামিয়ে চারপাশ দেখলাম। এককোনে সায়র ভাই বেশ লাল চেহেরা করে বসে আছে আমার দিকে তাকিয়ে। আশপাশের সবাই নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত। খাবার মুখে দিতে দিতে সায়র ভাইয়ের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলাম, “তাকে ইগনোর করার কি হলো? আমাদের মধ্যে তো এমন কোন সম্পর্ক নেই যার জন্য তাকে ইগনোর করবো।”
রনক ভাইয়া চোখ বড় বড় করে আমার দিকে চেয়ে আছেন। খাওয়া শেষে হাত মুছছি রনক ভাইয়া আমাকে ফিসফিসিয়ে বললেন, “এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার! এই দুটো ক্ষেত্রে যেকোন কিছু করে জেতা যায়। যা সর্বক্ষেত্রেই জায়েজ!”
একগাল হাসি নিয়ে, “আমার জন্য মানুষটা ‘নিষিদ্ধ সে’। যাকে পছন্দ করলেও স্বিকার করা মানা।”
কথাটা বলে পিছন ঘুরতে আবারো ধাক্কা খেলাম সায়র ভাইয়ার বুকে। কিছু না বলে মাথা নিচু করে পাশ কেটে সরে এলাম। হয়তো উনি শুনেছেন। শুনে আমাকে সবচেয়ে বদমেয়ে পদবি দিয়ে দিয়েছেন।
•
•
•
ডায়রিটা বন্ধ করে পাশ ফিরলো পুতুল। পাশে নিষ্ঠা ব্যাগ গোছাচ্ছে ধুমসে। আজ হোস্টেলে লাস্টদিন ওর। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে ভ্রু কুচকে এলো। সব কিছু উঠিয়ে কিছু একটা খুজছে। পুতুল ডায়রিটা সামনে ধরলো নিষ্ঠার।
“আপু এটা খুজছো?”
নিষ্ঠা চোখের চশমা ঠিক করে পুতুলের দিকে তাকালো। মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে ডায়রিটা নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো। পুতুল মোচড়ামোচড়ি করতে লাগলো কিছুটা।
“আপু আসলে আমি না তোমার ডায়রিটা পড়েছি অনুমতি না নিয়ে। তুমি কি রাগ করেছো?”
নিষ্ঠা কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “পড়ে ফেলেছো এখন তো আর কিছু করার নেই। সবটুকু পড়েছো?”
পুতুল উপর নিচ করে হ্যা বোধক মাথা নাড়লো। ম্লান হাসি হেসে ব্যাগ কাধে নিতে লাগলো নিষ্ঠা, “আমাকে নিশ্চয় বেশ খারাপ ভাবছো? আমি সত্যিই খারাপ একজন!”
“আমার মনে হয় না তুমি তেমন।” নিষ্ঠাকে জড়িয়ে ধরে, “আমার পাওয়া বেস্ট রুমমেট তুমি। তোমার বাসা ঢাকাতে থাকতেও কেন হোস্টেলে এলে?”
“এমনিই!”
“শুধু এমনিই? আমি তো ডায়রি পড়ে ফেলেছি বলো না ব্যাপারটা কি সায়র ভাইয়ার জন্য?”
নিষ্ঠা ব্যাগ উঠিয়ে পুতুলের হাতে ধরিয়ে দিলো, “ডায়রি পড়েছো এখন তার পেমেন্ট করো।”
“হিহিহি তাতে রাজি। ও আপু বলো না পরে কি হয়েছে!”
“আমাদের বাসা আর সায়রিদের বাসা পাশাপাশি। সায়র ভাই বদলি হয়ে ঢাকায় এসে পরেছিলো। যেতে আসতে প্রতিদিন দেখা হতো আমাদের। এমন চললে ভোলা কঠিন হবে তাকে তাই হোস্টেলে এসে গেছি আম্মুকে জোর করিয়ে।”
“পরের কাহিনী?”
নিষ্ঠা ব্যাগ নিভৃতের হাতে ধরিয়ে দিলো। নিভৃত সেগুলো নিয়ে নিজের গাড়িতে তুলে রাখলো। রিধিতাও এসেছে সাথে। কোলে কয়েকমাসের বাবু। কেটে গেছে তিনটা বছর নিষ্ঠা ইন্টার্নি করে বেরিয়েছে হসপিটাল থেকে। বাবুটার কপালে চুমু খেলো নিষ্ঠা। ঘুরে পুতুলের দিকে তাকালো।
“আমার উত্তরটা দিলে না আপু।”
“পরের কাহিনী অসমাপ্ত।”
পুতুলকে ভালো মতো থাকতে বলে গাড়িতে উঠে চলে গেলো নিষ্ঠা। তার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে পুতুল। তার ইচ্ছে করছে কোন এক অলৌকিক শক্তি দিয়ে নিষ্ঠার সাথে সায়রকে মিলিয়ে দিতে। মাঝখানে “নির্মা” মেয়েটাকে শুরু থেকে মুছে দিতে। যেনো সব কিছুই হ্যাপি এন্ডিং হয়। এ কয় বছরে বদলে গেছে সব। বিয়ের সংবাদ এসেছিলো নিষ্ঠার কানে নির্মাদের। প্রিয় মানুষটার বিয়ে সচক্ষে দেখার সাহস কুলিয়ে উঠেনি তাই যায়নি। চোখে আগে যে চশমাটা দু এক সময় হুটহাট করে মাথা ব্যাথা নিরাময়ে পরতো এখন তাতে পাওয়ার এসেছে। সব সময় পরে থাকতে হয়। বাসায় এলে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠান আমেজ দেখতে পেলো। নিষ্ঠা রিধিতার দিকে তাকালো, “ভাবী, বাসায় কি কোন অনুষ্ঠান হবে?”
“হ্যা, তোমাকে দেখতে আসবে। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেও। তোমার বিছানায় শাড়ি রাখা আছে।”
নিষ্ঠা অমত করলো না। কার জন্য অমত করবে যেখানে মানুষটা এখন বিবাহিত! ক্লান্ত ভঙ্গিতে মা-কে পিছন থেকে একবার জড়িয়ে ধরে রুমে এসে গেলো। সময়ের স্রোতে এক সময় না এক সময় বিয়ে তাকে করতেই হবে! শুধু শুধু এখন বাগড়া দিয়ে লাভ আছে? শাওয়ারের নিচে বসে চোখ বন্ধ করলো।
“ভাইয়াকে তুই ভুলে যা নিষ্ঠা! আমি জানি ব্যাপারটা কঠিন হবে। কিন্তু তোকে পারতে হবে। আমি কখনো ভাবিনি আমার জন্য এমন সময় আসবে যে সময়টায় আমাকে বোন আর বেস্টুর মধ্যে চুজ করতে হবে। নির্মা আপুকে আমি ছোট থেকে চিনি। সে কাউকে ভালোবাসলে একদম মন উজার করে ভালোবাসে! তার মধ্যে ভাইয়া আর নির্মা আপু রিলেশনে আছে তুই মাঝখানে ভাইয়াকে পছন্দ করে শুধু শুধু কাহিনী বানাচ্ছিস। হ্যা ভাইয়া তোর উপর দূর্বল নির্মা আপুর থেকে বেশি তোকে এ কদিনে কেয়ার করেছে যা আমার সচক্ষে দেখা কিন্তু তোরা নির্মা আপুকে মাঝখান থেকে সরিয়ে রিলেশনে গেলে পরে নিজেরাই অপরাধবোধে ভুগবি। ব্যাপারটা তোর জন্যেও ভালো হবে, আপু আর ভাইয়ার জন্যেও ভালো হবে ভুলে যাস ভাইয়াকে।”
চোখ খুললো নিষ্ঠা। সেদিন সায়রি সত্যি কথাই বলেছিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শাড়ি পরে নিলো। এ কবছরে এটা রপ্ত করেছে বেশ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেজে নিলো। রিধিতা নিষ্ঠার রুমে ডাকতে ডাকতে আসতে লাগলো, “নিষ্ঠ শেষ হয়েছে তোমার?”
আয়না থেকে চোখ সরিয়ে, “হ্যা আপু ওরা কি এসে গেছে?”
“হুম” নিষ্ঠার কাছে এসে থুতনি ধরে মুখটা উপরে উঠালো আরেকটু, “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে বোনু। উফ, ছেলে আজ হাই লেভেলের ক্রাশ খাবে তোমার থুতনির খাজে!”
“আপু আর কিছু পেলে না! থুতনির খাজে ক্রাশ!”
নিষ্ঠার গাল ফোলানোয় ফিক করে হেসে দিলো রিধিতা, “তোমার এই থুতনির খাজ আমার বেশ ভালো লাগে। আমার দিক থেকে বলে ফেলেছি তাই এমন!”
নিষ্ঠার মা আসলেন কিছু মূহূর্ত পর। মেয়েকে সজ্জিত অবস্থায় দেখে তিনি ভীষণ খুশি। মেয়ে বিয়ে করবেনা স্লোগান তুলে ঝামেলা করবে ভেবেছিলেন। ঝামেলামুক্ত সব মেনে নেওয়ায় উনার খুশির ইয়াত্তা নেই। নিষ্ঠা খাবারের প্লেট হাতে এক পা দু পা করে পাত্রপক্ষের সামনে এগুচ্ছে আর বিষাদগ্রস্ততা ঝেকে বসছে মনে। পাত্রপক্ষের সামনে মাথা নিচু করে আছে। বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করলে মাথা নিচু করেই মাথা নেড়ে হ্যা না উত্তর দিয়েছে। শেষে পাত্রকে নিষ্ঠার সাথে একা কথা বলতে ছেড়ে দিলো। একা রুমে হেজিটেট হবে দেখে রুমে যেতে গিয়েও ছাদে পা বাড়িয়েছে। ছেলেও আকা বাকা পথে নিষ্ঠার পিছু নিয়েছে। ছাদে নিষ্ঠা অন্যদিক মুখ করে চেয়ে। চোখের সামনে ছেলেটা তুড়ি বাজালে বিরক্ত হয়ে ছেলের দিকে তাকালো। চমকে পিছিয়ে গেলো।
“আপনি, আপনি এইখানে কেন?”
“পাত্র আমি তো এখানে আমি থাকবো না?”
নিষ্ঠা চেয়ে আছে সামনে বিস্মিত হয়ে। চিরচেনা মুখে এখনো লেপ্টে আছে সৌন্দর্য। জোড়া ভ্রুয়ের নাচানি, ঠোঁটে হালকা হাসি হৃদের বিষাদগ্রস্ততায় শীতল শিহরণ দিয়ে গেলো। কিছু মূহুর্ত পরই আবার ফ্যাকাশে হয়ে এলো মুখখানা।
“আপনি আমাকে ২য় বউ হিসেবে বিয়ে করতে চাইছেন?”
সায়র কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে নিষ্ঠার দিকে চেয়ে রইলো পরমূহূর্তে চেহেরায় শয়তানি হাসির রেখা টেনে উপর নিচ মাথা নাড়তে লাগলো। নিষ্ঠা রেগে উঠলো এবার।
“করবোনা আপনাকে বিয়ে!”
“তোমার বাবা-মা তো আমার মা-কে কথা দিয়ে দিয়েছে তোমাকে আমার ২য় বউ হিসেবে দিয়ে দিতে। এখন তুমি না করলেই কি আর হ্যা করলেই কি?”
নিষ্ঠা ভ্রু কুচকে গভীর চিন্তাতে মগ্ন। সায়র মেয়েটাকে একধ্যানে দেখছে।
“আমি না করাতেই অনেক কিছু। আমার বাবা-মা টিপিক্যাল বাবা-মা না যে আমার উত্তর না নিয়ে কথা খেলাপের চিন্তা করবে। আপনাকে বিয়ে করবো না করবো না করবো না!”
“পরে যেনো না পস্তাতে হয়। এমনিতেই বেচারা বুড়ো হয়ে গেছে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে!”
নিষ্ঠা ঠিকমতো তাকিয়ে দেখে পাশের বাসার ছাদে রনক, নির্মা বসে। ওরা নেমে এলো নিষ্ঠাদের বর্ডারের কাছটায়। নিষ্ঠা একবার নির্মার দিকে তো একবার সায়রের দিকে তাকাচ্ছে। নির্মা নিজের দিকে নিষ্ঠাকে তাকাতে দেখে হালকা হাসলো, “আমি মেরিড বারবার আমার দিকে না তাকিয়ে সায়রের দিকে তাকাও!”
“তোমার আর সায়র ভাইয়ার না বিয়ে হয়ে গেছে_”
রনক বাধা দিলো, “ভুল, বিয়েটা আমার আর নির্মার হয়েছে সায়র আর নির্মার না। তুমি কার্ড ঠিকমতো দেখোনি।”
নিষ্ঠা অবাক চোখে বারবার ওদের দিকে তাকিয়ে কাহিনী স্বপ্ন না বাস্তব বুঝতে চাইছে। রনক সায়রের ইশারায় নির্মাকে ধাক্কাতে লাগলো, “চলো পাত্রী আর পাত্রকে স্পেস দাও ওরা কথা বলে নিক।”
দুজন চলে গেলে সায়র এক হাটু ভেঙে বসে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফুল বের করলো। নিষ্ঠা এখনো চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে।
“আমার শুধু তোমাকেই লাগবে! আমি ভাবতে চাই না কে আমায় পছন্দ করে আর কে করে না! এতোগুলো বছরে কাটানো প্রত্যেকটা সময় আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আমার যা চায় সবটাই তোমাতে! বিয়ে করবে আমায় নিষ্ঠা?”
চোখের পাতা কয়েকবার ঝাপ্টা দিলো নিষ্ঠা। চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। সায়রের হাত থেকে ফুল নিতে উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিষ্ঠাকে।
“তোমার “নিষিদ্ধ সে” আজ থেকে শুধু তোমাতেই আবদ্ধ। তুমি ছাড়া সবার কাছেই সে নিষিদ্ধ! “নিষিদ্ধ সে”
“এর জন্যই কণ্ঠটা সামান্তা আন্টি আর আঙ্কেলের কণ্ঠে সাথে মিলছিলো?”
নিষ্ঠা সপ্রশ্ন চোখে সায়রের বুক থেকে মাথা তুলে তার দিকে চাইলো।
“তোমার এখন আমার বাবা-মা-কে নিয়েও অবিশ্বাস হচ্ছে উনারা সত্যিই আমার বাবা-মা না স্বপ্ন?”
নিষ্ঠা চিমটি কাটলো সায়রের পিঠে। দুজন হাসতে লাগলো। আড়াল থেকে এদের দেখে নির্মা চোখের পানি ফেলতে লাগলো। সায়রকে সে সত্যিই ভালোবাসতো কিন্তু নিজের করা ইগনোরগুলো যে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে শুরু করেছিলো তা তার কাছে অজানা ছিলো। নিষ্ঠা সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবার পর সায়রের নতুন রূপ দেখেছিলো। আস্তে আস্তে নির্মাকে ইগনোর করা শুরু করে। পরে একটা সময় দুজনেই বুঝে যায় ওদের রিলেশনটা শুধু নামমাত্র। সায়রের দিকে থেকে কোন রেস্পন্স নেই। এদিকে নির্মার কাছে পরিষ্কার সায়র যাকে চায় মানুষটা নির্মা না নিষ্ঠা। ভালোবাসলেও সরে যায় সায়রের জন্য। ততোদিনে নির্মার বাবা আর রনকের বাবা নিজেদের মধ্যে পাকা কথা বলে ফেলেছেন। নির্মা রনককে বিয়ে করতে না চাইলেও বাবা-মা-র মুখের উপর না বলতে পারেনি। এখন রনককে ভালোবাসলেও প্রাক্তন অধ্যায়টা বারবার কড়া নাড়ে মনের মধ্যে। রনক নির্মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
“রনক, আমি এখনো ভুলতে পারিনি তাকে!”
রনক ম্লান হেসে নির্মার মাথায় চুমু খেলো, “ভুলতে হবেও না। কিছু কিছু মানুষকে কোনদিন ভুলতে হয় না।”
“তুই এতো ভালো কেন?”
“কারন আমি তোর নামে রেজিট্রি হয়ে যাওয়া আসামি! যে সায়রের ভাষায় অন্য সবার কাছে ‘নিষিদ্ধ সে’।”
নির্মা কাঁদতে কাঁদতেও ফিক করে হেসে দিলো। রনক নির্মাকে কোলে তুলে নিয়ে নামতে লাগলো সিড়ি ভেঙে।
সমাপ্ত________❤