Dangerous Husband,পর্বঃ_৩
লেখকঃ_নুসরাত_জাহান
অনেকক্ষণ অপলোক দৃষ্টিতে বিছানার দিকে তাকিয়ে রইল আবির। মাথা বেয়ে তরতর করে ঘাম পড়ছে। পকেটে হাত দিয়ে রুমাল দিয়ে মুছে নিল। গলাটা ধরে আসছে। কথা বলার জন্য মুখ খুলবে তখনি কাশি শুরু হয়েছে। ঢোকর গিলে সামনে তাকাতে চমকে উঠল আবির৷
বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকল সামনের দিকে।
মুখটা ভেংচি কেটে ধীর গলায় বলল,
– ভয় পেয়েছেন নাকি আমাকে দেখে? আমি কোন ভুত নই আমি আআআআ করতে গেলে আবিদা বলল আবির। আবিরের মুখে নিজের নামটা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না আদিবা। তোতলাতে তোতলাতে বলল,
– আমার নামটা আপনার মনে আছে?
– এই মেয়ে এতটা ভনিতা করার কোন প্রয়োজন নেই তুমি এখানে কি চাও? তোমার জায়গায় তো হিয়ার থাকার কথা ছিল। তাইলে কি হৃদয় আমার সাথে……
– না না হৃদয় আপনার সাথে কোন প্রতারণা করেনি আমি হিয়া৷ আসলে আপনাকে আমার রিয়েল নাম মানে বাপ মায়ের দেওয়া নামটা বলেছি কিন্তু অন্য সবাইকে হিয়া নামই বলি। হিয়া আমার ছদ্মনাম।
আবিরের মেজাজ এখন পুরোপুরি গরম হচ্ছে। নাক কান গরম হয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছে।
আদিবা আবিরের গায়ে স্পর্শ করতেই আবির হাতটা ছিটানি মেরে দূরে সরল। ভ্রু কপাল একসাথে করে হৃদয়ের নাম্বারে কল দিল।
রিং বাজছে তো বেজেই চলেছে কিন্তু হৃদয় রিসিভ করছে না।
কয়েকবার বাজার পরে হৃদয় কলটা রিসিভ করল।
– দোস্ত কি খবর তুই কল দিয়েছিস যে? হিয়াকে পাসনি নাকি!
– হৃদয় তুই এটা কি এনেছিস এটাকে তো আগেই পেয়েছি। তুই না বললি একদম নতুন জিনিস এই রাস্তায় এখনো আসেনি কিন্তু এর সাথেই তো সেদিন রাত কাটালাম। এত বড় ধোঁকা তাও আবার আমার সাথে।
– রিলাক্স দোস্ত জাস্ট রিলাক্স।
– কিসের রিলাক্স হৃদয়। তোকে কি বলেছিলাম যত টাকা লাগে দিব তবুও নতুন কালেকশন দরকার কিন্তু তুই তো একদম রিজেক্ট করাোর জিনিস নিয়ে আসলি। শোন আমি এখন বের হয়ে যাচ্ছি আমার জন্য নতুন একটা খুঁজে বের কর।
– আবির এতটা মাথা গরম করলে হয়? প্লিজ দোস্ত মাথাটা ঠাণ্ডা কর। আসলে মেয়েটাকে আমি কখনও দেখিনি সুমনের কাছে ওর প্রশংসা শুনেছি এখন মেয়েটা ভার্জিন কি নন ভার্জিন সেটা তো আর আমরা বুঝব না। এখন যেভাবেই হোক আজকের রাতটা কাটিয়ে সকাল হলে কেটে পরিস। অনেকটা টাকা ব্যয় হয়েছে একটু বোঝার চেষ্টা কর। টাকাটা তো উসুল কর।
– হুমমম। ঠিকাছে রাখছি সকালে দেখা হবে।
ফোনটা রেখে মুখটা ঘুরিয়ে আদিবার দিকে তাকাল। আদিবা মুচকি হাসল। আবির ফোনটা টেবিলের উপরে রেখে বিছানায় গিয়ে বসল। আদিবাও আবিরের পিছনে বসল। তখনি আদিবার ফোনটা বাজল। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখল বড় করে BABA লেখা। আবির আঁড়চোখে দেখল কার নাম্বার দিয়ে কল এসেছে।
আদিবা ফোনটা নিয়ে বসা ছেড়ে উঠে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
– বাবা কল দিয়েছে কোন কথা বলবেন না প্লিজ।
আদিবার কথা শুনে অবাক হয় আবির৷
মোবাইলটা নিয়ে জানালার এক কোণে গিয়ে পর্দার আড়ালে দাঁড়াল আদিবা৷
আসসালামু আলাইকুম বাবা৷ কেমন আছেন?
– কি রে আদিবা তুই কোথায়? সকালেও কল দিয়েছি কিন্তু রিসিভ করিসনি কেন? কোন সমস্যা হয়েছে কি? তোর মায়ের শরীরটা বড্ড খারাপ। ডাক্তার বলেছে এক সপ্তাহের ভিতরে অপারেশন করাতে হবে। এখন তুই কি টাকা জোগাড় করতে পেরেছিস?
– ইয়ে মানে বাবা তুমি কোন চিন্তা করও না আমি যেভাবে হোক টাকা মেনেজ করে নিব। বসের কাছে টাকা লোন চেয়েছি তিনি বলেছে আদিবা তুমি কোন চিন্তা করবে না টাকাটা তুমি পরশুদিনের ভিতরে পেয়ে যাবে। মা কেমন আছেন?
– বেশি ভালো না৷ ডাক্তার তো সময় নিতে চাচ্ছে না৷ জানি না কি যে হবে কিন্তু মা তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস টাকাটা জোগাড় করে নে।
– হুম। আচ্ছা বাবা রাখছি মায়ের যত্ন নিও। ফোনটা রেখে দুচোখ ভরে পানি পড়তে লাগল। বুকটা হাহাকার করছে মায়ের জন্য। মায়ের চিৎকার জন্যই আজ আদিবা এই কাজ করতে এসেছে। পিছন থেকে কারও হাতে স্পর্শে মুখটা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখল আবির দাঁড়িয়ে আছে।
আদিবার চোখের পানি নিজের হাত দিয়ে মুছে হেসে হেসে বলল,
– আদিবা কি হয়েছে তোমার মায়ের? কিসের টাকার কথা বলেছ যে তোমার স্যার দিবে?
আবিরের এমন প্রশ্নে আদিবা নিজেকে সামলাতে না পেরে জড়িয়ে ধরল। খুব জোড়ে জোড়ে কাঁদল।
আদিবার এভাবে কান্না দেখে আবির অনেকটা বিষন্ন হয়ে গেল। মনটা হঠাৎ করে নরম হয়ে গেল। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ের কান্না দেখে আবিরের কষ্ট লাগছে।
আদিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
– কি হল বল? কি হয়েছে তোমার?
আদিবা ধীরে ধীরে মুখ খুলল, মায়ের হার্টে সমস্যা ধরা পড়েছে ডাক্তার বলেছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হার্টের অপারেশন করে রিং বসাতে হবে। যা বাংলাদেশে সম্ভব নয়৷ তাকে ইন্ডিয়া নিয়ে যেতে হবে। বাবা প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার ছিল। রিটায়ার্ড করেছে ৫ বছর আগে। কিন্তু ভাগ্য এতটাই খারাপ যে পেনশনের টাকাটা হাতে পাওয়ার পরে রোড এক্সিডেন্টে বাবার একটা পা অপারেশন করে ফেলে দেওয়া লেগেছে। বাবা এখন কোন কাজ করতে পারে না। একটা ভাই ছিল আমার বড়। বাবার এক্সিডেন্টের এক বছর পরে পাশের বাড়ির চেয়ারম্যানের মেয়ের সাথে রিলেশন করার জন্য তারা রাতের আধারে ঘর টেনে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। ভাইয়ের মৃত্যুর পরে বাবা মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়ে আর মা তো সেদিন থেকে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে বড় ধরণের আঘাত খাওয়ার কারণে তিনি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে আবার যদি আঘাত পায় হয়তোবা সে সবাইকে চিনতে পারবেন। কিন্তু কয়েকমাস হল মায়ের হার্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে যার কারণে তার অপারেশনে অনেক টাকা প্রয়োজন। আজ টাকার কারণে আমি এই রাস্তায় এসেছি কিন্তু টাকা এখনো জোগাড় করতে পারিনি।
– কত টাকা লাগবে?
– সাত লাখ তো লাগবেই৷ অপারেশনেই সাড়ে চার লাখ লাগবে। এছাড়া ওষুধ খরচ, সিট ভাড়া নিয়ে বাকি টাকায় হবে কিনা সেটাও সন্দেহ।
– টাকাটা যদি আমি দেই।
– আপনি দিবেন? কিন্তু কেন?
– আমার ইচ্ছা। একটু আগেই তো বললে না অফিসের বসে কাছে চেয়েছিলে ধরে নাও আমি তোমার বস।
– আপনি টাকা কেনো দিবেন?
– মনে কর টাকাটা দিয়ে তোমাকে কিনে নিলাম।
তুমি আমি ছাড়া কারও কাছে যেতে পারবে না আমার সাথে থাকবে। আমার সব কথা শুনবে। বল শর্তে রাজি কিনা!
অনেকক্ষণ ভাবার পরে দিবা বলল,
– আমি রাজি। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?
– কি শর্ত?
– আমার মাকে নিয়ে যাওয়ার মত কেউ নেই আপনি যদি নিজ দ্বায়িত্বে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতেন তাইলে আমার উপকার হত৷ আরেকটা কথা বলার ছিল।
– কি?
– বাবাকে বলবেন আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন আমি আপনার বউ৷ এছাড়া বাবা কখনও আমার টাকা নিবে না কারণ বস কখনও এতগুলো টাকা এমনি এমনি দেয় না এটা সবাই জানে। কোন কিছুর বিনিময়ে কোন কিছু দেয়।
– হুম।
– আপনি কি রাজি?
– হ্যাঁ রাজি। তুমি আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে আনবে প্লিজ?
– কফি? আর এখানে?
– হ্যাঁ। হৃদয় বলে দিয়েছে রান্না ঘরে কফি বানানোর সব উপকরণ রয়েছে তাই তুমি যাও আর কফি বানিয়ে আনো।
– হুম।
– বানাতে পারও তো?
– হ্যাঁ।
– ওকে।
আদিবা হাঁটছে আর স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মনের ভিতরে অনেকটা হাসি ফুটে উঠেছে। কষ্টগুলো যেনো হাসি রুপে ফুটে উঠেছে।
চলবে………