Dangerous husband,পর্বঃ_৬

0
2998

Dangerous husband,পর্বঃ_৬
লেখকঃ_নুসরাত_জাহান

আবিরের কথা শুনে ডাক্তার আংকেল রিতীমত অবাক হয়ে যায়। মাথাটা হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে বলল,
– এ্যনি প্রবলেম আবির?
– নো আংকেল নো।
– তাইলে এমন প্রশ্ন করছে যে?
– ইয়ে মানে আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম.. কথাটা শেষ করার আগেই ডাক্তার আংকেল বলল,
– মাই সান এই সব বিষয়ে একটু ও চিন্তা করতে নেই কারণ মেয়েদের তো এমনটা হওয়ারই কথা।
আংকেল…বলে মুখ খুলতে নিলে সে আবিরের হাতে রিপোর্টের কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে এবার তুই নিজেই দেখে নে বাবা। আমি যা বলেছি তার সাথে মিল আছে কিনা!
রিপোর্টের কাগজটা হাতে নিতেই কেমন যেনো লাগছে। চোখদুটো উপর নিচ করে আবার মনোযোগ সহকারে রিপোর্টের দিকে খেয়াল করল আবির৷ বেশ ভালো করে চেক করছে রিপোর্টটি৷ রিপোর্ট দেখার পরে সব ক্লিয়ার বুঝতে পারল আবির। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রিপোর্টটা টেবিলের উপরে রাখল। তারপর টেবিলের উপরে রাখা মগের পানিটা খেয়ে নিল আবির। খেতে খেতে মস্তকে বিষম গেল আবিরের। ডাক্তার তাই দেখে হাসছে।

– নিশ্চয়ই তোর বাচ্চা তোকে স্মরণ করছে বলে আবারও উচ্চস্বরে হাসতে লাগল।

আবির নিশ্চুপ হয়ে গেল। এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে যেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না৷
আবির এবার মুখ খুলল।
– আংকেল একটা কথা জিজ্ঞেস করব।
– হ্যাঁ বল।
– আদিবা কত মাসের প্রেগন্যান্ট!
– এই ধর দুমাসের মত।
– দুমাস!
– হুম৷
– শোন কি নাম বললি যেনো আবিদা না আরিবা.
না আংকেল আদিবা৷
– রাইট আদিবা। ওর শরীর বড্ড উইক। খাওয়য় দাওয়া তো মনে হয় ঠিকমত করে না তাই তোর দ্বায়িত্ব হল আদিবাকে খাওয়ানো৷ শরীরে রক্ত শূন্যতা হলে তো কোন লাভ নেই৷ যতই খাওয়াবি কাজ হবে না রক্ত শূন্যতা একটা রোগ। আমাদের শেষে এটা এখন কমন একটা রোগে পরিণত হয়েছে।
– হুম।
– মাই সান তুই আদিবার কাছে পাশের রুমে ওয়েট করে বিশ্রাম নে আমি ততক্ষণে বাকী রোগীদের দেখছি৷
– হুম।

আংকেল চলে গেলে আদিবা বসে তাকিয়ে থাকল৷ আবির স্তব্দ পায়ে আদিবার কাছে গেল। আদিবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে৷ আবির অনেকটা সময় একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আদিবার কান্না সময় গড়ানোর সাথে সাথে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আদিবা এতক্ষণ মুখ বুঝে শুয়ে থাকল৷ ডাক্তার চলে যাওয়ার মিনিট দশেক পরে উচ্চস্বরে ফুপিয়ে কানতে লাগল। আবির তো আদিবার রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো চোখের পলক কিছুতেই পড়ছে না৷ ধ্যান কাটার পরে আদিবার কান্নার আওয়াজ কানে আসতেই মুখটা ঘুরিয়ে আদিবার দিকে তাকিয়ে চোখের কোণে পানি চলে এসেছে। আবিরের চোখে পানি যেটা আদিবার চোখে এখনো পড়েনি৷ পড়বেই বা কিভাবে আদিবা নিজেই কেঁদে কেঁদে অস্থির৷ আবির বসা ছেড়ে তড়িঘড়ি করে আদিবার কাছে গেল যেহেতু ডাক্তার বলে দিয়েছে যেভাবেই হোক আদিবাকে সুস্থ রাখতে হবে কারণ সে প্রেগন্যান্ট। প্রেগন্যান্সির সময়ে কতটা সতর্ক থাকতে হয় সেটা আবির ভালো করেই জানে। ছোট চাচী যখন প্রেগন্যান্ট ছিল তখন আর চাচা কতটা কেয়ার করেছে সেটা আবির খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছে। হঠাৎ বুকটা ধুক করে উঠল। হৃদয়ের কথাটা আচমকাই মনের মাঝে দোলা দিয়ে উঠল। আবিরের খুব সিগারেটের টান উঠেছে যেমন প্রকৃতির ডাকে মানুষ যেখানে খুশি সেখানে চলে যায়। আবির আদিবার গায়ে হাত রাখতেই আদিবা আরও জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগল৷ আবির এবার ধমকের সুরে বলল,

– এত বড় মেয়ে হয়ে বাচ্চাদের মত এভাবে কাঁদে?
আদিবা কেঁদেই যাচ্ছে। একবার আবিরের দিকে তাকিয়ে আবারও কাঁদতে লাগল। এবার আবির রাগি সুরে জোরে ধমক দিয়ে বলল,
– আবার যদি একটুও কাঁদো তাইলে তোমার খবর আছে৷ আবিরের কথা শুনে আদিবা চুপ হয়ে গেল। তারপর মাথাটা নিচু করে বলল,
– আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আপনাকে সত্যিটা গোপন করেছি।
– মানে? কি বলছ তুমি?
– আমার লাইফে একটা এক্সিডেন্ট ঘটেছে যেটা আপনার কাছে বলিনি৷ ইচ্ছা ছিল না বলার তবুও বলা লাগছে কারণ আজ আমি প্রেগন্যান্ট!
– হ্যাঁ তো! হাজার হাজার ছেলের সাথে শুয়ে এসেছ তাই প্রেগন্যান্ট হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। তোমাদের মত প্রোস্টিটিউটরা এমন করে কখনও কাঁদে না৷ বাচ্চা কনসেপ্ট হয়েছে তো ভালো কথা কালকে সকালে গিয়ে এর্বোশন করিয়ে নিলেই তো সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে। অথচ কিন্তু তুমি যেভাবে রিয়েক্ট করছ তাতে তো মনে হয় তুমি ভুলবশত প্রেগন্যান্ট হয়েছ আর এতে তোমার কোন দোষ নেই। শোন আদিবা অনেক ন্যাকা কান্না হয়েছে এবার চোখ মুখে তাড়াতাড়ি উঠ বাসায় যাব।
– আমি কোন ন্যাকা কান্না করছি না যা বলছি সত্যি বলছি৷ আমি রবির কাছ থেকে পালিয়ে এসেছি। রবি যদি আমাকে পায় তাইলে জানে শেষ করে দিবে। রবির মত মানুষ আমার কপালে জুটেছে বলেই আজ আমি প্রোস্টিটিউট। জানেন আমার জীবনটা খুব সুন্দর ছিল হঠাৎ কাল বৈশাখী ঝড়ে সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে৷ বাবা মাকে খুব মিস করছি। তারা অনেকবার সত্যিটা জানতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি কখনও বলিনি। কিভাবে সত্যি কথাগুলো বলতাম বলেন তো, যার স্বামী বিয়ে করে বউকে দিয়ে দেহব্যবসা করিয়ে টাকা ইনকাম করার সহজ রাস্তা জানে তার সাথে কি কোন মেয়ে থাকতে পারে? আমি তার কথায় রাজি হইনি দেখে আমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল রাতের আঁধারে ভাগ্যিস টের পেয়েছিলাম তাই বুঝতে পেরে নিজেকে বাঁচাতে পেরেছিলাম৷ আমার কষ্ট কেউ বুঝবে না কিন্তু আমি তো জানি আমি নিজের ইচ্ছায় এই পথে নামিনি৷ আমার স্বামী স্যরি ওকে স্বামী বললে ভুল হবে ডেঞ্জারাস হাজবেন্ড বলা উচিত। স্বামী যদি স্বামীর মত না হয় তাইলে একটা স্ত্রীর লাইফটা নষ্ট হয়ে যায়৷ আমার জীবনটা একটা নরকে পরিণত হয়েছে আর সেটা একমাত্র আমার স্বামীর জন্য৷ আমার কষ্টগুলো বোঝার মত কেউ নেই জানেন৷ আজ আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু বেঁচে থাকতে গেলে তো আমার গর্ভের সন্তানকে আনা যাবে না। সমাজ এই বাচ্চাটাকে মেনে নিবে না৷ একবার ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব কিন্তু পরে আবার পিছ পা দিয়েছি। সাহস করতে পারিনি আমি আত্মহত্যা করার। আত্মহত্যা করতে গেলে বুকের সাহস লাগে যেটা আমার ছিল না তাই ফিরে আসতে হয়েছে মরতে চেয়েও। এখন বুঝতে পারছি যদি একবারও জানতাম আমি প্রেগন্যান্ট তাইলে হয়তোবা সাহস সঞ্চালন করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতাম৷

আবির মনোযোগ সহকারে আদিবার কথাগুলো শুনে যাচ্ছে। একবারের জন্যও কোন প্রশ্ন করেনি৷ কি বা করবে প্রশ্ন! নিজের ভিতরে নিজের কথাগুলোকে সীমাবদ্ধ রেখে হাসিমাখা মুখে আদিবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলল,
– আদিবা তুমি কোন চিন্তা করও না আমি আছি তোমার পাশে। আচ্ছা বলতো তোমার মারাত্নক নামটা দেওয়া সেই ডেঞ্জারাস হাজবেন্ড এখন কোথায়?

– নিশ্চুপ আদিবা।
– কাম অন বেবি বলো না কোথায়?
– কি করবেন জেনে? আমাকে তার হাতে তুলে দিবেন?
– না তো।
– তাইলে তার ঠিকানা জানতে চাচ্ছেন কেন?
– হাড্ডি গুড়ি গুড়ি করব বলে।
– আমি ওই বিষয়ে আর এগোতে চাই না। কারণ কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসবে৷ রবি যদি একবার জানতে পারে আমি এখানে আপনার কাছে আছি তাইলে কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে৷
– তাই!
– হুম৷
– তাইলে তুমি যেনে রাখ আমিও কাউকে ছাড়ব না। তোমার আমার সম্পর্কে কোন ধারণা নেই তাই এই কথা বলতে পারলে। আমার পছন্দের জিনিস অন্য কেউ নিয়ে যাবে সেটা ইম্পসিবল৷

আবিরের কথা শুনে আদিবা রিতীমত অবাক হয়ে যায়। আবিরের পছন্দের জিনিস আবার কবে থেকে হল সে। তবে মনে মনে এটা ভেবে খুশি লাগল এতদিনে কেউ তো তাকে রেসপেক্ট করেছে সেটা হোক তার শরীরের বিনিময়ে।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here