Dangerous-husband,পর্বঃ_৭

0
2977

Dangerous-husband,পর্বঃ_৭
লেখকঃ_নুসরাত_জাহান_সম্পা

আদিবা মুখটা নিচু করে তাকিয়ে থাকল। অনেকটা গম্ভির গলায় বলল,
– আপনি কি করতে চান? আমার মাথাটা ঘুরছে।
– আদিবা তোমার কি খারাপ লাগছে?
– হুম।
– আদিবা বাসায় যাব চল। আমি ডাক্তার আংকেলকে কল করে বলে দিচ্ছি।
– ওহ্।

আবির আংকেলকে কল দিচ্ছে। দুবার কল দেওয়ার পরে ডাক্তার আংকেল রিসিভ করল।
– হ্যাঁ আবির বল।
– আংকেল আপনার আসতে কি দেরি হবে? আদিবার শরীরটা তেমন ভালো না। যদি একটু দেখে যাওয়ায় জন্য বলে দিতেন তাইলে ভালো হত।
– আমার কাছে গুরুতর রোগি এসেছে আদিবার কাছে যেতে ৩০/৪৫ মিনিটের মত লাগবে। তারচেয়ে বরং একটা কাজ কর তুই ওকে নিয়ে বাসায় চলে যা আমি রাতে আদিবাকে দেখতে বাসায় যাব।
– ঠিকাছে আংকেল আমি চলে যাচ্ছি আপনি সময় করে যাবেন৷ আরেকটা কথা।
– কি কথা?
মাথা চুলকাতে-চুলকাতে বলল,
– না থাক পরে বলব।
– হুম।

ডাক্তার আংকেলের সাথে কথা বলে আদিবাকে বলল,
– জলদি রেডি হও আমরা বের হব।

আবিরের কথায় তেমন একটা সাড়া না দিয়ে নড়েচড়ে বসল আদিবা৷ মাথাটা ঝিমঝিম করছে। অনেকটা বিরক্ত অনুভব করছে আবিরের উপরে।
সকালবেলা এখানে নিয়ে এসেছে ঠিকি কিন্তু কেনো জানি সস্তি পাচ্ছে না আদিবা।
আদিবা ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নায় নিজেকে দেখে মুখটা কালো করে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে তারপর বেড়িয়ে আসে। চোখদুটো লাল লাল হয়ে গেছে। বাবা মায়ের জন্য মনটা অস্থির লাগছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে আবির সিগারেট ধরাচ্ছে। আবিদার গলার আওয়াজ শুনে তাকাল। সিগারেটটা দেখে হয়তো কিছুটা খারাপ লাগলেও পক্ষান্তরে মুড চেইঞ্জ হয়ে গেল। ভাবছে আমার বাবার টাকায় আমি খাচ্ছি তাতে কার কি আসে যায়। খানিকবাদে নিজের কথায় নিজেই অনুতপ্ত হয়ে ভাবল সত্যি এমনটা ভাবা উচিত নয়। গলাটা সেরে নিয়ে ধীর গলায় বলল,
– আদিবা তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার অর্ডার দিচ্ছি।
– শুনুন আপনি এতটা অস্থির হবেন না আমি নিজের হাতে রান্না করব৷
– তুমি রান্না করবে?
– হ্যাঁ। আমি আবার দোকানের রান্না খেতে পারি না। ঘরে কিছু আছে তাইলে বলুন রান্না করি।
– ঘরে যা আছে তাই দিয়ে কি রান্না করবে। ফ্রিজে কোন গোশত আর তরকারি কিচ্ছু নেই।
– ওহ্। চাল, ডাল, তেল, মরিচ, পিয়াজ আর ডিম আছে?
– হ্যাঁ আছে কিন্তু তা দিয়ে কি করবে?
– দুজনে বোন ভাত খাব।
– বোন ভাত কি?
– ছোটবেলায় খেতাম আমরা বাচ্চারা বাড়ি বাড়ি দিয়ে চান্দা তুলে। কেউ ডাল দিত কেউ নুন আর কেউ তেল। সবার শেষে কাঠ আর কাগজ টোকাতাম রান্না করার জন্য৷ জানেন বেশ ভালো লাগত সেদিনের দিনগুলো
– আদিবা এখন তুমি কি এই বোন ভাত খাবে?
– হ্যাঁ। আপনার কোন সমস্যা?
– না তো। কিন্তু….
– কিন্তু কি বলুন বলুন।
– মজা হবে তো?
– খেয়েই দেখবেন এখন কিছু বলব না।
– হুম।

আবির আদিবাকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিল। আদিবা এক এক সব গুছগাছ করে রান্না বসিয়ে দিল। ঘণ্টাখানেক পরে চাল ডালের খিচুড়ি তৈরি হয়ে গেল। আবির রান্নাঘরে ঢোকার সময় স্মেল পাচ্ছে। কান দিয়ে ভিতরে টেনে টেনে স্মেলটা নিচ্ছে৷ খুব ভালো একটা স্মেল আসছে রান্নাঘর থেকে। আবির তো খুব উৎফুল্ল হয়ে আদিবাকে প্রশ্ন করল কি ব্যাপার তোমার রান্না হয়ে গেছে।
– আদিবাও হেসে হেসে উত্তর দিল হ্যাঁ হয়ে গেছে।
– বাহ্ তাইলে তো দারুণ হয়েছে। দুপুরে গরম গরম খিচুড়ি ভাবা যায়।
– এত প্রশংসা না করে টেবিলে গিয়ে বসেন আমি খাবার নিয়ে আসছি৷
– আমি আবার কখন প্রশংসা করলাম। তোমার মত আমাকে কি গাঁধা ভাব।
– আমি গাঁধা?
– তা নয় তো কি?
আদিবা রাগান্বিত হয়ে খুন্তি হাতে নিয়ে আবিরের দিকে ধরতেই আবির ধাপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। তাই দেখে আদিবা তো গড়াগড়ি খেতে লাগল। এদিকে আবির তো পুরোই রাগে ফায়ার হয়ে গেছে। লজ্জায় আর উঠতে পারল না। মনেমনে আসা করছে আদিবা বুঝি টেনে তুলবে কিন্তু না আদিবা মুখ ঘুরিয়ে বলল,
– তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন আমি এখনি খাবার পরিবেশন করব।
এই কথা শুনে আবির তো পুরোই রাগ হয়ে গেছে। ধীরেধীরে উঠে দাঁড়িয়ে আদিবাকে কিছু বলল না চুপচাপ গিয়ে টেবিলে বসল।

আদিবা প্লেটে করে খিচুড়ি নিয়ে গেল। আবিরের সামনে প্লেটটা এগিয়ে দিতেই সে তো পুরোই রাগ। আদিবা খাওয়া শুরু করল কিন্তু আবির খাচ্ছে না৷
আদিবা এক লোকমা মুখে দিয়ে আহ্ কি টেস্ট একদম ছোটবেলার মত। কালারটাও জোস হয়েছে।

আবির ভ্রু কুঁচকে আদিবার দিকে তাকাল। কি মেয়ে রে বাহব্বা এত রাক্ষস কিভাবে হয়? ওদিকে অসুস্থ তার উপরে খিচুড়ি গিলতে বসেছে। আদিবাকে মনেমনে আরও যা ইচ্ছা তাই বকাবকি করতে লাগল। মনের স্বাদ মিটানোর জন্য। আদিবা এক লোকমা আবিরের দিকে এগিয়ে দিল কিনে আবির মুখটা সরিয়ে নিল। আদিবা তো ভীষণ রেগে গেছে আবিরের কাণ্ডকারখানা দেখে। কি ভাব রে আমার আমি খাইয়ে দিব সেটা দেখেও এমন ভাব করে যে মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে। আদিবা আবারও আবিরকে বলল,
– আপনি কি খাবেন না? জানি এগুলো হয়ত আপনি কখনও খান নি তাই হয়তো পছন্দ হচ্ছে না কিন্তু বিশ্বাস করুণ একবার খেয়ে দেখুন আসা করি নিরায় হবেন না৷
আদিবার কথায় আবির পুরোপুরি হতাশ হয়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই বাধ্য হয়ে খিচুড়ি খাওয়া শুরু করল। এক লোকমা মুখে তুলে আবির সত্যি অবাক হয়ে গেল। খিচুড়িটা একদম সামান্য জিনিস দিয়ে রান্না করেছে তবুও টেস্ট অনেক হয়েছে। আবির স্বাভাবিকভাবে খেতে লাগল। আবিদা খাওয়া শেষ করে প্লেট হাতে নিয়ে উঠতে উঠতেই বলতে শুরু করল আপনি যা যা খাবেন সেগুলো বাজার করে নিয়ে আসবেন৷
– কে রান্না করবে বাজার আনলে?
– কেন আমাকে কি আপনার চোখে পড়ে না। আমি অনেক ভালো রান্না করতে জানি।
আবির হা হা হা করে হাসল। জানো একটা গল্প মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় আমার বাবা প্রায়ই আমার মাকে বলত।
আবিরের মুখে হাসি দেখে মনেমনে এক বস্তা রাগ জমা করছে কখন যে বস্তা ফাটবে সেই অপেক্ষা করছে আদিবা৷ আর যদি ফেটেই যায় এতে আবিরও উড়ে যেতে পারে।
আদিবার দিকে উল্টো মুখ করে তাকিয়ে কি বলব…?
– বলতে তো শুরুই করেছেন বলবেন না তো কি করবেন?
– তা ঠিক। এবার কাজের কথায় আসি। একটা মেয়েকে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছে। মেয়েটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে তাদের সামনে নিয়ে আসে মা। মেয়েটা সোফায় বসে আছে তার সামনে ছেলে পক্ষ থেকে আসা লোকজন। মেয়েটাকে অনেক কথাই জিজ্ঞাস করছে কিন্তু সবকিছুই এলোমেলো ভাবে উত্তর পেয়ে ছেলে পক্ষ পুরোই হতাশ৷ সবশেষে ছেলের মা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল মা তুমি ভাত রান্না করতে জানো..?

মেয়েটি প্রথমে অনেক সময় নিয়ে হাসল। তারপর মাথাটা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে বলল,
– হ্যাঁ পারি।
– ছেলের মা এবার বুদ্ধি খাঁটিয়ে বলল, কেমন ভাত মা? ভাত কেমন হয়?
– মেয়েটি আবারও হেসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ও মা বলো না তোমার মেয়ে খাট্টাও রান্না করতে পারে। ওই যে দিন ভাত রান্না করতে গিয়ে ভর্তা হয়ে গেছিল তখন তুমি তো বলেছিলে এটা খাট্টা হয়েছে৷ লজ্জায় মেয়ের মা মুখ নিচু করে ফেলল।

গল্পটা শেষ করে জোরে জোরে হাসল আবির। আদিবা ভ্রু কুঁচকে রাগান্বিত হয়ে আবিরের দিকে তাকাল। ঠোঁট দুটো চেপে ধরে বলল,
– তার মানে আমিও এমন রান্না করব৷ ঠিকাছে আপনি রান্না করে খাবেন কথা বলে রুমে চলে গেল। আবির খাওয়া শেষ করে মন খারাপ নিয়ে সোফার উপরে শুয়ে পড়ল।

আদিবা বিছানায় শুয়ে পড়ল। কয়েক মিনিটের ভিতরে ঘুমিয়ে পড়ল। আচমকাই ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করছে। কথাগুলো এমন ছিল প্লিজ আর পারছি না আমাকে ছেড়ে দিন৷ আমাকে যেতে দিন। এসব সহ্য করতে পারছি না। ঘুমের ভিতরে এসব বলেই যাচ্ছে আদিবা৷

আবির রুমে ঢুকে পানি খাওয়ার জন্য কারণ বিছানার পাশে টেবিলের উপরে জগ রাখা। পানি খেতে বারবার ডাইনিং রুমে যাবে তাই কষ্ট কমানোর জন্য পানিটা বেড রুমে রাখা। ঘুমের ঘোরে আদিবাকে এমন আজেবাজে কথা বলতে শুনে আবির তো হতভম্ব হয়ে গেল। অনেকটা ভয়ও পেয়ে যায়। আদিবার কপালে হাত দিয়ে ডাকল,
– আদিবা।
– গোঙানির আওয়াজ আসছে। আবির অনেকটা ধৈর্যসহকারে আদিবার মাথায় হাত দিল। নিজের হাতের তালুর ভিতের আদিবার চুলগুলো ঢুকিয়ে আঙুল দিয়ে টানতে শুরু করল। আদিবার ঘুম ভেঙে গেলে লাফিয়ে উঠে বিছানায় বসল।
– আদিবা তুমি কি স্বপ্নে দেখছিলা? কি সব বলছিলা বুঝতে পারলাম না৷

মাথায় হাত রেখে উফফ করে কষ্ট অনুভব করছে আদিবা৷ পুরোনো কষ্টের কথা মনে করে কাঁদতে শুরু করল সে। বুকটা ধুক করে উঠছে। স্বপ্নের ভিতরে রবিকে দেখে সমস্ত শরীর শিউরে উঠেছে। খুব বড় জোর কয়েকমাস ধরে শান্তিতে আছে। না হলে জানোয়ারটা মেরে মেরে রক্ত বের করে দিত আবার কাঁটা গায়ে মলম লাগিয়ে হাসত। সেদিনের কথা মনে করলেও শরীরের সমস্ত লোম খাঁড়া হয়ে যায়।
আবির বুঝতে পারল আদিবা বড় কোন ধরণের স্বপ্নে দেখেছে।

আদিবার কপাল বেয়ে তরতর করে ঘাম পড়ছে।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here