মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ১২(শেষ পর্ব)| কষ্টের গল্প

1
4223

মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ১২(শেষ পর্ব)
লেখকঃ আবির খান

১৮.
পরদিন সকালে,
মাইরা এখনো ঘুমিয়ে আছে তাহসানের বুকে। আজ তাহসান অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। ও শুয়ে শুয়ে মাইরার ঘুমন্ত মুখখানা দেখছে। অসম্ভব মায়াবী লাগছে মাইরাকে৷ তাহসান মুগ্ধ হয়ে শুধু ওকে দেখছে৷ মাইরার চোখে মুখে আলাদা একটা ভালো লাগা আছে৷ ওর দিকে তাকালে তাহসান সব কষ্ট ভুলে যায়৷ আর আজ থেকে তো তাহসান অতীতের সব বিষাক্ত স্মৃতি মুছে ফেলবে৷ কারণ আজকের দিনটা অন্যসব দিনের মতো না। আজকের একটা বিশেষ কিছু হতে যাচ্ছে৷ যা ওদের নতুন স্মৃতির পাতায় লিপিবদ্ধ হবে৷ মাইরাকে অনেক বড়ো একটা সারপ্রাইজ দিবে তাহসান। যেটা মাইরা হয়তো কখনো কল্পনাও করে নি। আজকের এই সারপ্রাইজের পর ওদের মাঝের সম্পর্কটা একদম পরিবর্তন হয়ে যাবে৷ তাহসান যেন আর অপেক্ষা করতে পারছে না। ও মাইরাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দেয়৷ আর মনে মনে বলে,

– আমি পিচ্চি বউরাণী রেডি হয়ে যাও। আজ তুমি বিশেষ কিছু পাবে৷ হাহা৷

তাহসানের গরম উষ্ণতা পেয়ে মাইরার ঘুম ভাঙে। তাহসানকে এত কাছে পেয়ে ওর ভালোই লাগছে। তবে ওর মনে এখনো একটা কষ্ট আছে। যেটা ও চাইলেও বলতে পারছে না৷ সেটা হলো, তাহসান এখনো ওকে আপন করে নেয় নি। স্বামী স্ত্রীর মাঝে যে মধুর মিলনটা সেটাই এখনো হয়নি। ও চোখ বন্ধ করে ভাবে,

~ তাহসান কি ওকে এখনো মেনে নেয় নি? যদি মেনে নিত তাহলে কেন ওকে আপন করে নিচ্ছে না? কেন ওকে অপেক্ষার জালে ফেলে কষ্ট দিচ্ছে? ও চায় ওর সবটা তাহসানকে উজাড় করে দিতে৷ কিন্তু তাহসান কেন নিচ্ছে না? তাহসান কি এখনো তমাকে ভালবাসে? তাই ওকে আপন করছে না!

মাইরা কোন উত্তর পায় না। তবে ও যতটুকু পেয়েছে তাতেই অনেক হ্যাপি। ও তাহসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তাহসান আস্তে করে বলে,

– কি আমার পিচ্চি বউরাণীর ঘুম ভেঙেছে তাহলে?
~ হুম।
– আচ্ছা শোনো, আজ সন্ধ্যায় একটা বিয়ের দাওয়াত আছে৷ তুমি যাবে আমার সাথে?
~ ইসস! ত যাবো না! আমি না গেলে কে যাবে শুনি?
– না ভাবছি আরেকটা বিয়া করে তাকে নিয়া যাবো। কেমন হবে বলো তো?
~ করেন না পারলে। ঘাড় মটকে দিব একদম। মনে নাই আমি কে?
– কে? (অবাক হয়ে)
~ কে আবার আপনার পারসোনাল সাকচুন্নি।

তাহসান হাসতে হাসতে একদম যায় যায় অবস্থা। মাইরা মুগ্ধ হয়ে তাহসানের হাসি দেখছিল। ও ইচ্ছা করেই মজা করেছে, যাতে তাহসান হাসে। অবশ্য তাহসান অন্য আরেকটা বিয়ে করবে শুনে ওর রাগ হলেও ও রাগ না করে উল্টো তাহসানকে হাসিয়েছে। কারণ ও জানে এটা নিতান্তই মজা ছিল। এসব বিষয় নিয়ে স্বামীর সাথে কখনো রাগারাগি করতে নেই। বরং মজাকে মজা হিসেবে নেওয়াই উত্তম। যেমনটা মাইরা করেছে। তাহসান হাসি থামিয়ে মাইরার গালে হাত রেখে ওর মুক্তার মতো চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,

– আমার এই একটা পিচ্চি সুন্দরী বউ একশোটা বউয়ের সমান। আমি এই একটাতেই খুশী বাবা। আমার আর কেউ চাই না। বুঝলা আমার সাকচুন্নি? হাহা।

মাইরা লজ্জা পায়। আর মিটমিট করে হাসে। তাহসান ওর গোলাপি মিষ্টি ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মাইরা জানে তাহসান কি চায়৷ ও বাঁধা না দিয়ে নিজ থেকে এগিয়ে দেয়। তাহসান খুশী হয়ে গ্রহণ করে। কিছুক্ষণ পর তাহসান মাইরাকে ছেড়ে দেয়। মাইরা লজ্জা পাচ্ছে খুব। তাহসান ওর কপালে একটা আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,

– তোমাকে পেয়ে আমি যে কি হ্যাপি তা তোমাকে কখনো বুঝাতে পারবো না। তুমি আমার এমন একজন যাকে ছাড়া আমি একমুহূর্ত বাঁচতে পারবো না।
~ তাই? তা আজ একটু বেশীই রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপার কি হুম?
– কই? না তো..একটুও না। (থতমত খেয়ে যায় তাহসান)

মাইরা হাসতে থাকে। তাহসানও মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

– তাহলে আজ সন্ধ্যায় আমরা বের হচ্ছি। খুব সুন্দর করে সাজবে। যেন সবার থেকে আলাদা লাগে তোমাকে।
~ আচ্ছা। এখন যাই নাস্তা বানাই গিয়ে। নাহলে ভাবী রাগ করবে৷ বলবে বসে বসে খাই খালি।
– হাহা। না না কিছু বলবে না। ভাবী অনেক ভালো আছে।
~ উহুম এটা আমার কর্তব্য। উঠি এখন।
– আচ্ছা যাও৷

মাইরা তাহসানকে রেখে উঠে ফ্রেশ হয়ে ভাবীর কাছে চলে যায়। তাহসানও ফ্রেশ হয়ে ফোনটা নিয়ে কাকে যেন কল দেয়।

– হ্যালো স্যার।
– হুম সব ঠিকঠাক আছে তো? যা যা বলেছি সব তেমন করেছেন তো?
– স্যার একদম যা যা বলেছেন তাই তাই করেছি। আমি কি ভিডিও পাঠাবো?
– ওকে পাঠান।
– ঠিক আছে স্যার পাঠাচ্ছি।
– আচ্ছা। আমি আসার আগে ফোন দিব।
– ওকে স্যার গুড লাক।
– থ্যাঙ্কিউ।

তাহসান ফোন কেটে দিয়ে একটু অপেক্ষা করতেই একটা ভিডিও আসে। ও মনোযোগ দিয়ে পুরো ভিডিওটা দেখে বলে,

– মাইরা রেডি হয়ে যাও সারপ্রাইজের জন্য।

১৯.
এখন সন্ধ্যা ৭:১২ বাজে৷ তাহসান ব্ল্যাক স্যুট আর প্যান্ট পড়েছে। আর মাইরাকে বেশ দামী কাজ করা ব্ল্যাক কালারের একটা শাড়ি পরতে দিয়েছে। তাহসান বাইরে অপেক্ষা করছিল। ভাবী মাইরাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। তাহসান অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে মাইরাকে দেখার জন্য৷ এ অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হয় না৷ অনেকক্ষণ পর ভাবীর গলা শুনতে পাওয়া যায়৷

~ তাহসান দেখো তোমার বউকে কেমন লাগছে।

ভাবীর কথা শোনা মাত্রই তাহসান সোফা ছেড়ে পিছনে তাকিয়ে মাইরাকে দেখে পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ও হা করে তাকিয়ে আছে। মাইরা খুব লজ্জা পাচ্ছে। ওর লজ্জাসিক্ত মুখে ওকে আরো বেশী মায়াবী লাগছে৷ তাহসান যেমনটা ভেবেছিল মাইরাকে তার চেয়েও বেশী সুন্দরী লাগছে৷ ভাবী রসিকতা করে বলে উঠে,

~ দেখছো মাইরা বলছি না তাহসান চোখ ফেরাতে পারবে না তোমার উপর থেকে।

মাইরা লজ্জা পায় খুব। তাহসানও অনেকটা লজ্জা পায়৷ ভাবী হাসতে হাসতে বলে,

~ আচ্ছা লজ্জা লজ্জা না খেলে তোমরা রওনা হও তাড়াতাড়ি। দেরী হচ্ছে না?
– হ্যাঁ হ্যাঁ। আসো মাইরা৷

তাহসান মাইরার হাত ধরে। মাইরা একটু কেপে উঠে। তাহসান ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়। মাইরার খুব ভালো লাগে। এরপর ওরা বাইরে আসলে তাহসান গাড়ির সামনের সিটের দরজা খুলে মাইরাকে বসিয়ে দেয়। মাইরা খুব খুশী হয়। এরপর তাহসানও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। গাড়ি চালু করে বলে,

– আজ এই গাড়ি আমাদের আগামী সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। তোমাকে আর কেউ আলাদা করতে পারবে না আমার থেকে।
~ কি বলেন? বুঝি না তো।
– না না কিছু না চলো।

তাহসান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে রওনা হয় ওর ঠিক করা গন্তব্যে। দেড় ঘন্টা ঢাকার জ্যাম ঠেলে ওরা সেখানে গিয়ে পৌঁছায়। তাহসান আগে আগে নেমে মাইরার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়৷ মাইরা বাইরে এসে অবাক হয়ে যায়। কারণ এটা কোন বিয়ের হল না৷ এটা একটা রেস্টুরেন্ট। ৩০০ ফিটে পুরো একটা রেস্টুরেন্ট তাহসান ভাড়া করেছে আজকে শুধু মাইরাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। মাইরা অবাক হয়ে দেখে পুরো রেস্টুরেন্টটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। রেড কার্পেট বিছানো। তাহসান মাইরা হাত ধরে বলে,

– চলো ভিতরে যাওয়া যাক৷

মাইরা শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ও কিছুই বুঝতে পারছে না৷ ওরা দুজন আস্তে আস্তে রেড কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে ভিতরে ঢুকে। রেস্টুরেন্টের ওয়েটার আর ম্যানেজার ওদের ওয়েলকাম করে। মাইরা পুরো থ হয়ে আছে। পুরো রেস্টুরেন্টে ওরা ছাড়া আর কেউ নেই। চারদিকটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। বিভিন্ন আলোতে ঝলমল করছে চারপাশ। একটা রোমান্টিক ভাইব দিচ্ছে ওদের৷ মাইরা শুধু অবাক হয়ে আশেপাশে দেখছে। তাহসান ওর হাত ধরে ওকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে আলাদা খোলা একটা জায়গায় যায়। মাইরা সেখানে গিয়ে দেখে পুরো জায়গা জুড়ে গোলাপের পাপড়ি আর হার্ট বেলুনে ভরা। সেগুলো দিয়ে ওদের দুজনের নাম লিখা৷ জায়গাটার ঠিক মাঝ বরাবর ছোট ছোট কাপ মোমবাতি দিয়ে বড়ো একটা হার্ট বানানো। মাইরার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না সবকিছু। তাহসান মাইরাকে নিয়ে সেই হার্টের মাঝে গিয়ে দাঁড়ায়। আর সাথে সাথেই বিশাল বড়ো সাদা পর্দায় ওদের বিয়ের ছবি ভেসে উঠে। একের পর এক ওদের বিয়ের মুহূর্ত গুলো ভেসে উঠছে৷ মাইরার চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে। ও অবাক পানে সবটা দেখছে। হঠাৎই তাহসান মাইরাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে ওর সামনে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে পড়ে। ওর হাত দুটো ধরে বলতে শুরু করে,

– আমাদের বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত একটা কথা আমি তোমার বলিনি। আজ সে কথাটা তোমাকে বলতে কিংবা জানাতেই এই বিশাল বড়ো সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছি। কথাটা বলার আগে তোমাকে কিছু বলতে চাই। তুমি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী, রূপবতী, মায়াবী আর বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে। তুমি আমার শূন্য জীবনকে মুহূর্তেই পূর্ণ করে দিয়েছো, তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া হাসিকে ফিরিয়ে দিয়েছো, তুমি আমার সব কষ্টকে সুখে পরিণত করে দিয়েছো, তুমি আমাকে আরো একবার ভালবাসয়ে শিখিয়েছো। হ্যাঁ মাইরা, আজ তোমাকে যে কথা বলতে এই আয়োজন করেছি তা হলো,

আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক অনেক বেশী ভালবাসি। আমার একমাত্র পিচ্চি বউটাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি। মাইরা, তুমি কি আমায় ভালবেসে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সাথে থাকবে? (একটা ডায়মন্ডের রিং এগিয়ে দিয়ে তাহসান কথাটা শেষ করলো)

মাইরা অঝোরে কেঁদে দিয়েছে। তাহসানের চোখেও পানি। মাইরা স্বপ্নেও ভাবে নি তাহসান ওকে এভাবে প্রপোজ করবে৷ মাইরা আজ সবচেয়ে সবচেয়ে বেশী খুশী। ওর খুশী আজ সীমাহীন। ও আর পারে না কান্না করতে করতে মাথা নাড়িয়ে চিৎকার করে হ্যাঁ বলে। তাহসান রিংটা পরিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথেই পুরো আকাশ আতসবাজিতে ভরে যায়। মাইরা জ্বলজ্বল নয়নে আতসবাজি দেখছে। ও প্রতিনিয়ত শুধু অবাকই হচ্ছে। এদিকে তাহসান শুধু মুগ্ধ হয়ে মাইরার হাস্যজ্জ্বল মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যিকারের ভালবাসার মানুষটাকে ও শেষমেশ পেয়েছে। ওর জীবনে এখন একটাই লক্ষ্য, মাইরার এই খুশীটাকে ধরে রাখা। সেটা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আজ থেকে মাইরা আর তাহসানে মাঝে কোন দূরত্ব নেই। তাহসান এখন মাইরাকে আপন করে নিতে পারবে। কারণ ও মাইরাকে ভালবাসে৷ মাইরা আতসবাজি দেখে কান্নাসিক্ত নয়নে তাহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ আজ আমিও লজ্জা ভুলে আপনাকে বলতে চাই, আমিও আপনাকে অনেক বেশী ভালবেসে ফেলেছি। নিজের থেকেও বেশী। আমার ভালবাসাটা আজকে শুরু হয়নি, আমি আপনাকে ভালবাসি সেই বাসর রাত থেকে। যখন আপনি আমার কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আমাকে আপনার একাকিত্বের সঙ্গী ভেবেছিলেন। সেদিন থেকে আমি আপনাকে ভালবাসি। অনেক অনেক বেশী ভালবাসি।

তাহসান মাইরার চোখগুলো মুছে দিয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে,

– আমাদের মাঝে ভালবাসার চেয়ে তীব্র মায়া বেশী। যে মায়ায় আবদ্ধ আমরা দুজন।
~ একটা কথা বলি?
– বলো?
~ আপনার নাকে আজ একটা কামড় দি? নাহলে কেমন জানি অসম্পূর্ণ লাগছে৷

তাহসান মাইরার কাছে হঠাৎ এমন আবদার শুনে অবাক হয়। কিন্তু হাসি দিয়ে বলে,

– ওরে সাকচুন্নিটা আমার। আচ্ছা যাও দেও। কিন্তু আস্তে দিও। হাহা।

মাইরা সত্যি সত্যিই আজ তাহসানের নাকে একটা কামড় দিয়ে দেয়। আর তারপর তাহসানও দেয়। তবে সেটা কোথায় আর নাই বা বলি। হিহি।

২০.
ওদের গল্পটা শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না। হয়তো কিছু একটা এখনো বাকি রয়ে গিয়েছে। আজ দীর্ঘ এক বছর পার হয়ে গিয়েছে ওদের বিয়ের। তাহসান ওর অফিসে নিজের কেবিনে বসে কাজ করছিল। হঠাৎই ওর ল্যান্ডফোনটা বেজে ওঠে। ও রিসিভ করতেই,

– হ্যালো….
– স্যার একজন ভদ্র মহিলা এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে চায়। বলছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
– আচ্ছা পাঠিয়ে দেও।
– ওকে স্যার।

কিছুক্ষণ পর তাহসানের কেবিনের দরজায় নক পড়ে। ও বলে ওঠে,

– কামিং…

ওর অফিসের পিওন দরজা ঠেলে যাকে ওর কেবিনে নিয়ে আসে তাকে দেখে তাহসান যেন আকাশ থেকে পড়ে। এ যে তমা! তমাকে দেখে তাহসান চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। পিওনকে চলে যেতে বললে সে চলে যায়। তমা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে তাহসানের সামনে আসে। তাহসান অবাক স্বরে বলে,

– তুমি এখানে?

তমা আস্তে আস্তে মাথা তুলে তাহসানের দিকে তাকায়। তমাকে দেখে তাহসান যেন হতভম্ব হয়ে যায়। যে তমার দিকে একবার তাকালে তাহসানের দিনটা সুন্দর হয়ে যেত, যে তমার মুখখানায় আলাদা একটা উজ্জ্বলতা ছিল, যে তমার ঠোঁটের কোণায় সবসময় একটা হাসি ছিল, আজ তার কিছুই নেই। আজ ওর চোখের নিচে কালো দাগ, মুখটা ফ্যাকাসে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও একটা জিন্দালাশ। আচমকা তাহসানের দিকে তাকিয়ে তমা কেঁদে দেয়। তমার কান্না দেখে তাহসানের বুকটা মুহূর্তেই দুমড়ে মুচড়ে যায় কষ্টে। ও দ্রুত তমার কাছে এসে ওকে ধরে চেয়ারে বসায়৷ ও পাশে বসে অস্থির হয়ে বলে,

– একি! তোমার এ অবস্থা কেন? আর কান্না করছো কেন? কি হয়েছে?

তমা অঝোরে কান্না করতে করতে বলে,

~ তোমাকে প্রচন্ড কষ্ট দেওয়ার শাস্তি পেয়েছি আমি। আমার জীবন থেকে সব হারিয়ে গিয়েছে। আমি আজ বেঁচেও যেন মৃত।
– মানে! কি বলছো এসব?
~ তোমার সাথে প্রেমের মিথ্যে অভিনয় করে তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি একজনকে পছন্দ করে বিয়ে করি। আমি ভেবেছিলাম সে আমাকে ভালবাসে। কিন্তু না, সে ভালবাসতো আমার শরীরটাকে শুধু। বিয়ের পর প্রতিটি দিন আমাকে পশুর মতো ছিড়ে ছিড়ে খেত। শুধু তাই না মদ খেয়ে আমাকে মারতো। অসম্ভব যন্ত্রণা আর সহ্য করতে না পেরে আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দি। কিন্তু সে আমাদের নাম খারাপ করার জন্য আমাদের নামে সবার কাছে খারাপ বলে বেড়ায়। সমাজে এখন আমাদের আর কোন মানইজ্জত সম্মান নেই। সবাই আমাদের ঘৃণা করে। বাবা-মা তো আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। আমার জীবনটা শেষ হয়ে গিয়েছে তাহসান। একদম শেষ। আমাকে মাফ করে দিও দয়া করে। তোমার কাছে মাফ চাইতে এসেছি আমি। খুব কষ্ট হচ্ছিলো আসতে৷ কোন মুখে তোমার সামনে এসে দাঁড়াবো? আমি যে কষ্ট তোমাকে দিয়েছি তার কোন ক্ষমা নেই আমি তা জানি। কিন্তু আমাকে তো মাফ চাইতেই হবে৷ তুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দিতে পারবে তাহসান? পারবে?

তাহসানের চোখগুলো ভিজে আসছে। এই তমা একসময় ওর হাসি, আনন্দ আর ভালবাসা ছিল। ওকে সুখী রাখার জন্য তাহসান কত কিছুই না করতো। কিন্তু তমা এত কিছু পেয়েও ওকে হারিয়েছে নিজের কারণে। তাহসান তমাকে বলে,

– ক্ষমা! সেতো তোমাকে কবেই করে দিয়েছি। আমার মাইরা বলেছিল তোমাকে যেন ক্ষমা করে দি। ও না বললে হয়তো কখনো করতাম না৷ তোমার উপর আমার আর কোন রাগ, অভিমান কিছুই নেই। সত্যি বলতে আমার মধ্যে থেকে গত এক বছর আগে তোমাকে মুছে ফেলেছি। সেখানে এখন আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।
~ যাক ভালো আছো শুনে খুশী হলাম। তোমার স্ত্রী সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী। তোমার মতো একজনকে পেয়েছে। যে সত্যিকারে ভালবাসতে পারে। আজ আমার ভুলেই আমার এই অবস্থা। আসি আমি। ভালো থেকো। আর পারলে দোয়া করো।

বলেই তমা উঠে চলে যায়। তাহসান ওকে থামায় না৷ তমাকে থামানোর মতো ওর কাছে আর কিছুই নেই। এক বছর আগে হয়তো ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। তাহসানের অজান্তেই ওর চোখ দিয়ে গড়গড় করে অশ্রু পড়ছে৷ খুব কষ্ট হচ্ছে তমাকে এভাবে দেখে৷ যে মিথ্যে অভিনয় দিয়ে ওদের গল্পটা শুরু হয়েছিল, আজ তমা তার চির ইতি টানলো। তাহসান এক রাশ কষ্ট নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে। বেল দিতেই মাইরা দরজা খুলে। যেন ওরই অপেক্ষায় ছিল। মাইরাকে দেখে তাহসান অবাক হয়ে যায়। সুন্দর করে ওর পছন্দের নীল কালারের একটা শাড়ি পরেছে মাইরা। কেমন মুচকি মুচকি হাসছে ও। তাহসান বলে,

– কি হয়েছে আজ তোমার?

মাইরা আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তাহসানের কাছে এসে ওর কানে কানে আস্তে করে বলে,

~ আজ থেকে আমরা আর দুইজন নই, তিনজন হয়ে গিয়েছি।

তাহসান মুহুর্তেই সব ভুলে যায়। মাইরাকে জড়িয়ে ধরে অসম্ভব খুশী হয়ে বলে,

– আমার পিচ্চি বউরাণীটার পিচ্চি একটা বাবু হবে? সত্যিই?

মাইরা লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ও তাহসানের বুকে মাথা লুকিয়ে হ্যাঁ বলে। তাহসান খুশীতে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছে৷ ও পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে ওর খুশী ভাগাভাগি করছে। নতুন অতিথি যে আসছে ওদের পরিবারে।

– সমাপ্ত।

–> এই গল্পটা লেখা হয়েছে তাদের জন্য, যারা তাহসানের মতো সত্যিকারে কাউকে ভালবেসে হেরে যায়৷ এবং ভাবে এটাই বুঝি সব শেষ। কিন্তু না। গল্পের তাহসানকে দেখলে আমরা বুঝতে পারি, ভালবাসা মাঝে মাঝে মিথ্যে হয়। একতরফা হয়। কিন্তু প্রকৃত মানুষটাকে বিয়ের পর যে ভালবাসাটা দিনে দিনে সৃষ্টি হয় সেটা আজীবন টিকে থাকে। সেটাই সত্যিকারের ভালবাসা। যেমন তাহসান আর মাইরার ভালবাসাটা৷ তাই আমাদেরও উচিৎ হার না মেনে ভাগ্যের উপর সবটা ছেড়ে দেওয়া। তুমি সত্যিকারের ভালবাসতে জানলে, তোমার জীবন সঙ্গীনিও তোমাকে সত্যিকারের ভালবাসবে। শুধু অপেক্ষা করতে হবে তাকে পাওয়ার। পুরো গল্পটা জুড়ে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এবং পরিবার কেন্দ্রীয় অনেক শিক্ষা ছিল। আশা করি সবার ভালো লেগেছে। যদি সত্যিই ভালো লেগে থাকে তাহলে সবার কাছ থেকে গঠন মূলক একটা মন্তব্য আশা করছি। আর এতটা সময় ধরে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদেরকে।

আগের পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া আছে।

© আবির খান।

1 COMMENT

  1. Vai gonpota onk sundor. But sbr jibone arokom wife ashe na jmn amk dekhun ami 4 bar preme bartho onk valobeshar poro sby amk sere sole jai akhono biyer boyosh hoini ty biye korte parci na. Aka thakle koshta kokhono muce na koshto dur hote amn kau k lage j tar nijer theke o amr mon bujbe asole agula sob golpe hoi bastobe kokhonoi hoi na vai ami 4 ta prem koreci sob komi madrasar meye onk pordashil tar poro amr mon vennge day tara. Asole meye manushi kharap meye manush valobasha buje na tara buje sex r tk ay 2 thklei hoi ami 4 prem korleo kono meyer sathe sex niye kono kotha boltam na. Ty hoito amk sere gece tara.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here