পত্রপ্রেম
পর্ব_০৪
লেখনীতে: স্পর্ষীয়া ভূমি
রাত তখন প্রায় একটা।রিক্ত অফিসের ফাইল হাতে খাটে বসা।তার বামপাশে অদ্রি ঘুমানো।কাজ করতে করতে সময়টাই দেখা হয় নি তার।একটা বেজে যাবে এটাও ভাবে নি।হাতের ফাইলগুলো গুছিয়ে পাশের টেবিলে রেখে ওয়াশরুমে গেল।কয়েক মিনিট পর ফিরে এসেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকাল।অদ্রিকে খাটে সবটুকু জায়গাতে হাত পা ছড়িয়ে রাখতে দেখে উঠিয়ে ঠাস করে একটা চড় মারতে মন চাইল।কিন্তু চড় মারা গেল না।নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে পা বাড়াল।দুই তিনবার ডাক দিয়েও যখন অদ্রির ঘুম ভাঙ্গানো গেল না তখন বিরক্তিটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল।অদ্রির ঘুমন্ত চেহারায় দুই একবার তাকিয়েই বুঝতে পারল তার মাঝে এই মেয়ের প্রতি কোন দুর্বলতাই আসছে নাহ।মেয়েটা দেখতে খারাপ নয়।ফর্সা ধবধবে গায়ের রং।লম্বা চুল, চেহারাও বেশ।কিন্তু তবুও সম্ভব হচ্ছে না এই মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া।কিছুতেই না।কিন্তু তাকে এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।মেয়েটার সাথে তার পুরো জীবনটা কাটাতে হবে।অপরিচিতাতে আটকে থাকাটা কি মেয়েটার প্রতি অন্যায় হয়ে যাবে না?রিক্ত দীর্ঘশাস ফেলল।রাতের আঁধারেই তার কষ্টগুলো জ্বলজ্যান্ত হয়ে উঠে।অপরিচিতাকে দেখার তৃষ্ণা জাগে।কিন্তু অপরিচিতা তো দেখা দেয় নি।তার এটুকুও ভাবান্তর হলো না তার ভালোবাসার মানুষটা অন্যের হয়ে যাবে ভেবেও।কেন?অপরিচিতা কি পারত না তার ভালোবাসার দাবি নিয়ে বিয়ের আগে একবার সামনে এসে দাঁড়াতে?অপরিচিতার প্রতি মুহুর্তেই প্রচুর রাগ জাগল।রাগে থিতিয়ে গেল মন।যেখানে তার কোন কষ্টই হলো না তার বিয়ের কথা শুনে সেখানে নতুন করে চিঠি দিয়ে ক্ষত তাজা করার কি মানে?কপালের শিরাটা ফুলে উঠতেই রাগে হাত পা শক্ত হয়ে উঠল।অদ্রি নামক মেয়েটিকে জোরাল কন্ঠে ডেকে উঠল,
‘ অদ্রিয়া।আমি আপনাকে তখন থেকে ডাকছি।আপনি শুনতে পাচ্ছেন না?’
কথাগুলো একটু জোরে বলাতে পৌঁছে গেল অদ্রির কানে।সরু চোখে তাকিয়ে রাগে হাঁসফাস করতে করতে বলল,
‘ কি সমস্যা কি আপনার?আশ্চর্য!শান্তিতে ঘুমোতেও দিবেন না?’
রিক্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
‘ নাহ, দিব না।’
অদ্রি উঠে বসল।চোখ কচলিয়ে নিয়ে জ্বলন্ত চোখে চেয়ে বলল,
‘ কেন?কেন?আমি কি করেছি আপনার?’
রিক্ত শান্ত গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ সারা খাট দখলে নিয়ে নিয়েছিলেন।’
অদ্রি কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকল।পরমুহুর্তেই বুঝতে পারল।বাসায় বোনের সাথে ঘুমোলেও এই অভিযোগটা তাকে নিয়ে সবসময় করা হতো।নিজের ভুলটা বুঝতে পারলেও স্বীকার করতে পারল না।কপালে ভাজ রেখে অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে উঠল,
‘ কে?’
রিক্ত চোয়াল শক্ত করে বলল,
‘ আপনি।’
অদ্রি আরেক ধপা অবাক হয়ে বলল,
‘ আমি?আপনি কি আমাকে বলছেন?’
রিক্ত বিরক্ত হলো।চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে অদ্রির দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,
‘ অদ্রিয়া শেখকে চেনেন?আমি তার কথা বলছিলাম।’
অদ্রি মুখ ফুলাল। কিছু বলবে ভেবেও বলল না।তার আগেই রিক্ত উল্টো পাশ হয়ে হাত পা কাত করে শুয়ে পড়েছে।সে নিরাশ চাহনিতে তাকিয়ে শক্তপোক্ত ভাবে সীমানা দিল কোলবালিশ দিয়ে।এবার আর কিছুতেই ভুল কাজ করা চলবে না তার।কিছুতেই না।
________________
চোখজোড়া হালকা মেলেই কপাল কুঁচকাল অদ্রি।কতকাল যেন তার ঘুম হয় নি।চোখজোড়া সহস্র ঘন্টা ঘুম চায়।তারা এই মুহুর্তে সজাগ হতেও রাজি নয়।কিন্তু তাও চোখজোড়া মেলতে হলো।তড়িঘড়ি করে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি সময় দেখল।ছয়টা বাজার আরো দশমিনিট বাকি।অদ্রি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।সরু চোখে নিজের শাড়ির দিকে তাকিয়েই চরম রাগ হলো।শাড়ি পরা মোটেই উচিত হয় নি তার।আঁচলটা সরে গিয়েছে পেট থেকে।এলেমেলো অবস্থা বেগতিক শাড়িটার।চোখ ছোটছোট করে দ্রুত নেমে পড়ল খাট থেকে। শাড়িটা ঠিকঠাক করে নিয়ে লম্বা শ্বাস ছেড়ে খাটের ডানপাশে তাকাতেই মনে পড়ল রিক্তের কথা।ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে সে।কোলবালিশের ওপাশে আরো যথেষ্ট জায়গা খালি আছে।লোকটা ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করে না নাকি?অদ্রি দু পা বাড়িয়েই রিক্তের ঘুমন্ত মুখে নজর দিল।শুষ্ক সাদা ধবধবে মুখ, খাড়া নাক,এলোমেলো চুল।ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে লোকটিকে। অদ্রি মুচকি হাসল।ফ্লোরে হাঁটু ঘেড়ে বসে ডানহাতের আঙ্গুল গুলো বুলিয়ে নিল রিক্তের এলেমেলো চুলগুলোয়।দুর্দান্ত দেখতে লোকটি যে তারই স্বামী এটা ভেবেই খুশিতে চকচকিয়ে উঠল মুখ।আচ্ছা, মানুষটি কি অন্য কাউকে ভালোবাসে?তাই তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি?মনের ভিতর সূক্ষ ভাবনা গুলো ভেসে উঠতেই মুখ কালো হয়ে গেল অদ্রির।তৎক্ষনাৎ উঠে পা বাড়াল।রিক্তদের ছাদে যাওয়া হয়নি তার।রিয়া আগের দিন বললেও যাওয়া হয় নি।তাই ছাদের দিকেই পা বাড়াল।ছাদের দরজাটা ঠেলে পা রাখতেই রিয়াকে দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল।এত সকালে ছাদে কি করছে সে?
‘ রিয়া, কি দেখছ?’
রিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে চাইল।ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে এগিয়ে এসে অদ্রির হাতজোড়া হাত দিয়ে চেপে ধরল।মুচকি হেসেই বলল,
‘ বলেছিলাম নাহ তোমায় আমার ছাদ ভালো লাগে?সকাল, দুপুর, রাত, সবসময়। ছাদে এসে আকাশ দেখাটা ভালোই লাগে আমার কাছে।’
অদ্রি হাসল।
‘ আমারও আকাশ খুব পছন্দ। আগে হোস্টেলে আকাশ দেখার সুযোগই হতো না।চট্টগ্রামে ছুটিতে গেলে ছাদে উঠে আরামে আকাশ দেখতাম।’
‘ তোমার ভার্সিটি তো পাশেই ভাবি।তা কবে থেকে কন্টিনিউ করবে?চাইলে তো আজ থেকেই যেতে পারো।’
অদ্রি কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
‘ আজ?এখনো বাসায় চাচা,চাচি, মামা, মামি সবাই আছে।উনাদের একা রেখে ভার্সিটিতে যাওয়াটা কেমন দেখায় না?এর থেকে কয়েকদিন পরই যাই না হয়।’
রিয়া মাথা নাড়াল।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,
‘ বসবে?ছাদের ডানপাশে চেয়ার আছে। চলো গিয়ে বসি।’
অদ্রি ঠোঁট ফুলিয়ে হাসল।রিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ দাঁড়াও।আমি চেয়ার নিয়ে আসছি বরং।এদিকটায় ভালো বাতাস আছে।তাই না রিয়া?’
‘ হ্যাঁ বাতাস তো আছেই।কিন্তু চেয়ার আমিই আনছি দাঁড়াও।’
‘ ওকে তুমি একটা আমি একটা।’
রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।সাথে সাথে হেসে উঠল অদ্রিও।চেয়ার এনে বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়েই নিচে নামল তারা।মুখ ধুঁয়েই রান্নার কাজে ব্যস্ত হলো রিয়া, অদ্রি সহ রিক্তের চাচি ও মামিও।তার ঠিক কয়েক মিনিট পরই রিক্তের কন্ঠ ভেসে আসল,
‘ রিয়া, আমার কফিটা দিয়ে যা তো।আজ রিমা আন্টি আসে নি?এতো দেরি যে।’
রিয়া ক্লান্ত চাহনিতে তাকাল।আলুর খোসাটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে অদ্রির দিকে অসহায় চোখে তাকাল।মুখ কাচুমাচু করে বলল,
‘ ভাবি, কফিটা বানিয়ে দিয়ে আসবে একটু ভাইয়াকে?’
অদ্রি ড্যাবড্যাব করে তাকাল।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
‘ আমি?’
‘ হ্যাঁ, দিয়ে আসবে ভাবি?’
অদ্রি কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকল।তারপর মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ আচ্ছা।’
__________________
বেলকনিটা ফাঁকা।এককোণে দুটো টুল ছাড়া তেমন কিছুই নেই। লোহার গ্রিলে বৃষ্টির পানি গুলো ছুুঁয়ে যাচ্ছে। বাতাসের দাপটে বৃষ্টির পানি এসে পড়ছে বেলকনির ভেতরেও।টাইলস গুলো পানিতে পিচ্ছিল হতেই বিরক্তি কপাল কুঁচকাল রিক্ত।বর্ষাকাল তার তেমন পছন্দ নয়।ভেজা সেঁতসেতে পরিবেশে কেমন বিরক্তের আবছায়া।তাও স্থির দাঁড়িয়ে রইল সেখানে।বৃষ্টির ছিটেফুটেতে টিশার্টের ডানপাশটা ভিজে গেল মুহুর্তেই।বেলকনির নিশ্চুপ পরিবেশটা বৃষ্টির ঝমাঝম আওয়াজের সাথে উপভোগ করতেই মোবাইলের রিংটোন টা বেঁজে উঠল তার আপন বেগে।রিক্ত পকেট থেকে মোবাইল বের করেই ইলার নাম দেখে মৃদু হাসল।ইলার সাথে তার পরিচয়টা কলেজ লাইফ থেকেই।তারপর কতশত আড্ডা, কলে কথা বলা।বন্ধুত্বটা এখনও ঠিক আগের মতোই আছে।তবে ব্যস্ততার জন্য এখন আর আগের মতো আড্ডা জমানো হয় না।ঘন্টার পর ঘন্টা কলে কথাও বলা হয় না।রিক্ত ছোট নিঃশ্বাস ফেলে কল রিসিভ করল।সাথে সাথেই ওপাশ থেকে উচ্ছ্বলতায় ঘেরা মেয়েলি কন্ঠটা ভেসে আসল,
‘ পরের সপ্তাহে ঢাকায় আসব।আড্ডা দিব কিন্তু।কেমন?সাফাদ আর রিশভ কেও বলে দিয়েছি।তুই সময় দিবি তো?’
রিক্ত হাসল।
‘ তুই না এক বাচ্চার মা?আজ চারবছর ধরে সংসার করে কি শিখলি শুনি?এখনও মনে হয় তুই নিজেই বাচ্চা।’
‘ আমাকে বাচ্চা বলছিস?তুই জানিস প্রতিদিন কতকিছু করি আমি?ভাত রান্না, তরকারি রান্না, মেয়েকে খাওয়ানো, তার অফিসে খাবার পাঠানো আরো কত কি।মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট কথা আমার মেয়ের কান্নাকাটি সামলানো।তার কান্না শুরু হলে থামানো কত কষ্টকর তা একমাত্র আমিই জানি।আর তুই আমাকে বাচ্চা বলছিস?’
রিক্ত হু হা করে হেসে উঠল।পরনের ভেজা টিশার্টটা খুলে নিয়ে একহাতে বেলকনির দড়িতে রেখে বলল,
‘ এছাড়া কি বলব বল।এই তো আড্ডা দিলে দেখা যাবে তুই চিপস নিয়ে টানাটানি করছিস, কিংবা সাফাদকে মেরে আলুভর্তা করে দিচ্ছিস।তো এগুলো বাচ্চার লক্ষণ নয়?’
‘ নাহ।মোটেই না।আমি হলাম আমার মেয়ের মা আর আমার বরের বউ।তুই কোথায় থেকে এসব বাচ্চা টাচ্চা ওয়ার্ড যোগ করে আমার মান সম্মানের ফালুদা বানাচ্ছিস?’
রিক্ত আবার ও হেসে উঠল।পা দিয়ে ফ্লোরে স্লিপ করতে করতে বলল,
‘ ওহ স্যরি ম্যাডাম।তুমি হলে সুন্দরী, মায়াবতী ইলায়রা।রাইট?’
এবার দুইপাশ থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে উঠল।হাসিতে কম্পমান এই পরিস্থিতির মাঝেই বেলকনির দরজার ওপাশে কফি হাতে উপস্থিত হলো অদ্রি।রিক্তর বলা কথাটা মাথায় ঘুরিয়েই রাগে মুখ চোখ লাল হয়ে উঠল তার।সুন্দরী, মায়াবতী?চোখের সামনে একটা সুন্দরী মেয়েকে ঘুরঘুর করে অথচ তার চোখে পড়ে না।অথচ ফোনে প্রেমালাপ!যদি প্রেমিকার সাথে প্রেমালাপই করবে তবে বিয়ে করল কেন?কেন?মাথায় রিক্তকে নিয়ে চিন্তার ঝটলা পাকানোর মাঝেই রিক্ত আবারও বলল,
‘ উহ, মায়াবতী তুমি এতো ব্যস্ত থাকোই বা কেন?একটু সময় করে কথাও বলা যায় না।আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাই তোমার সাথে কথা বলতে না পেরে।’
অপর পাশের কথাটা শুনতে পেল না অদ্রি।রাগে মুখ চোখ লাল করেই পা বাড়িয়ে রিক্তর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।ততক্ষনে রিক্তর কলে কথা বলা শেষ।মুখে অমায়িক হাসি নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।অদ্রি তার দিকে না তাকিয়েই কফির মগটা বাড়িয়ে দিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আপনার কফি।’
রিক্ত পাশ ফিরে চাইল।অদ্রির ঝাঝালো কন্ঠে বিরক্ত হলেও বিরক্তিটা প্রকাশ করল না।কফির মগটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে বলল,
‘ থেংক্স।’
অদ্রি তেমন পাত্তা দিল না কথাটার।চোখে মুখে তেজ দেখিয়ে চলে যেতে নিলেই রিক্ত বলে উঠল,
‘ শুনুন’
অদ্রি দাঁত মুখ খিচে দাঁড়িয়ে পড়ল।
‘ কি শুনব?’
‘ আপনাদের বাসা চট্টগ্রাম?’
অদ্রি ভ্রু কুঁচকাল।
‘ হ্যাঁ, তো?আপনি জানেন না?’
রিক্ত চরম বিরক্ত হলেও নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখল।চোখ মুখ শান্ত রেখে বলল,
‘ আপনার বাবা কল করেছিল। যেতে বলেছিল।আমি আপনাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
অদ্রি বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘ ওহ আচ্ছা।আমি নিজেই যেতে পারব।’
‘ তাহলে তো ভালোই।এমনিতেও আমি ওখানে গিয়ে করব টা কি।মামাকেও বলেছি।কিন্তু বলল যেতেই হবে।’
অদ্রি কাঁটকাঁট গলায় বলল,
‘ আপনার যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে যাবেন নাহলে যাবেন নাহ সিম্পল।’
রিক্ত ভ্রু বাকাল।এই মেয়ে কি শান্ত ভাবে কথা বলতে পারে না?নাকি সবার সাথেই এমন তেজ দেখিয়ে কথা বলে?আজব প্রকৃতির মেয়ে!
‘ আপনি একা যেতে পারবেন?’
অদ্রি হাসল।হাসতে হাসতেই বলল,
‘ আমাকে কি প্রতিবন্ধী মনে হচ্ছে?আমি চারবছর এখানে হোস্টেলে। প্রতিমাসে তো নিজে নিজেই যেতাম। তাহলে পারব না কেন?’
অদ্রি হোস্টেলে থাকত সেটা রিক্ত জানতই না।না জেনেশুনে চরম একটা কথা বলে নিয়েছে সে।মুহুর্তেই নিজেকে বোকা মনে হলো।এই মেয়েটা নিজেকে আরো এক ধাপ চালাক মনে করল নিশ্চয়।রিক্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ আমি জানতাম নাহ যে আপনি এখানে থাকতেন।আমি আপনার সম্পর্কে কিছুই জানি নাহ।এনিওয়েজ, একা যেতে পারলেই ভালো।’
অদ্রি কিছু সময় চুপ থাকল।তারপর বলল,
‘ আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চান নাকি?জানতে চাইলে জিজ্ঞেস করতে পারেন।ফটাফট উত্তর দিয়ে দিব।’
রিক্ত সোজাসুজি গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ নাহ।’
অদ্রির মুখের ভাবভঙ্গি পাল্টে গেল এইবার।চরম অপমান বোধে আর রাগে চোখ টলমল করল।শিরা উপশিরা কেঁপে উঠল।মুহুর্তেই ইচ্ছে হলো কেঁদে দিক। কিন্তু এই লোকটার সামনে কিছুতেই কান্না করা যাবে নাহ।কিছুতেই না।সে যতই কান্না আসুক।দরকার হলে কান্না দমাতে দমাতে মরে যাবে তাও সে এই লোকের সামনে কান্না করবে নাহ।কিছুতেই নাহ।প্রেমিকা ব্যস্ত তা নিয়ে এতটা আপসোস অথচ তাকে নিয়ে জানার এটুকুও ইচ্ছে নেই? এটুকুও না?কেন?
চলবে……