পত্রপ্রেম পর্ব_০৬

0
760

পত্রপ্রেম
পর্ব_০৬
লেখনীতে: স্পর্ষীয়া ভূমি

সামনেই বাম দিকে মোড় নেওয়া গলি।ঠিক তার সামনের বিল্ডিংটায় নিষাণদের ব্যাচেলর বাসা।নিষাণের মায়ের থেকে ঠিকানাটা নিয়ে আর দেরি করে নি রিয়া।সোজা রিক্সা নিয়েই নিষাণের উদ্দেশ্যে বেরুল।কিন্তু কি বলবে দেখা হলে?কিছু কি সে বলতে পারবে?রিয়া হতবাক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইল সে বিল্ডিংয়ের দোতালায়। নিজের বাসা ছেড়ে এখানে এসে উঠেছে কি কেবল রিয়ার জন্য?কেবল?চোখজোড়া টলমল করে উঠতেই আচমকা মোবাইলের রিংটোন বেঁজে উঠল।হুলস্থুল হয়ে কান্না আটকিয়ে কলটা রিসিভড করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ আসল।রিয়া অবাক হলো।মৃদু কন্ঠেই বলল,

‘ হাসছিস কেন নিষাণ?’

ওপাশের হাসিটা এবার ধপ করে থেমে গেল।কয়েক সেকেন্ড থেমেই হুট করে বলে উঠল,

‘ বুঝেছিস কি বাকিটা?’

‘ কি বুঝব?’

‘ তবে এখানে কেন?নাকি এ পাড়ায় অন্য কারোর সাথে দেখা করতে এলি।ওহ স্যরি।ভুল হয়ে গেল।’

নিষাণ একবুক ব্যর্থতা নিয়ে কলটা কেঁটে দিবে ঠিক তখনই রিয়া বলে উঠল,

‘ এই!কল রাখবি নাহ বলছি।আমি তোর সাথে দেখা করব বলেই এসেছি।কিন্তু তুই আমাকে কিভাবে দেখলি?কোথায় তুই?’

নিষাণ হাসল এবার।তার সাথে দেখা করতে এসেছে কথাটা শুনেই হৃদয় শীতিল হয়ে আসল।সত্যিই কি বুঝে নিয়েছে সব রিয়া?সত্যিই?রিয়া কি ফিরিয়ে দিবে আবারও?ভাঙ্গা হৃদয়টা আবারও কি ভেঙ্গে দিবে?কে জানে!মাথার চুলগুলো একপাশে ঠেলে দিয়ে থাই গ্লাস খুলে হাত নাড়াল নিষাণ।মৃদু হেসে বলল,

‘ আরেহ বিকাল হলো। ভাবলাম জানালা দিয়ে বাতাস খাব।এখানে তো বেলকনি নেই।তো থাই গ্লাসের এপাশ থেকে দেখলাম তুই হ্যাবলার মতো এদিকে তাকিয়ে আছিস।’

‘ তোর বাসা থেকে অনেক দূরে!বুঝলি কিভাবে ওটা আমি?’

নিষাণ ভাব নিয়ে বলে উঠল,

‘ না বুঝারই বা কি আছে?তোর চোখে ঐ গরুর চশমা দেখলেই বুঝা যায় ঐটা তুই।’

রিয়া জ্বলে উঠে বলল,

‘ নিষাণ!ভাল্লাগছে নাহ বলে দিলাম।’

‘ তো?তোর ভালো না লাগলে আমি কি করব?চলে যেতে পারিস।যা গিয়ে সাফাদ ভাইয়ের কাছে গিয়ে বল।উনি অনেক কিছু করবে তোর মন ভালো করার জন্য!’

রিয়া চুপ করে গেল।কিছু সময় চুপ থেকে বলে উঠল,

‘ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে আসতে পারবি?’

‘ কেন আমার কি পা নেই নাকি?নাকি তোর মতো অন্ধ!চোখে চশমা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াই আমি?’

এবার রাগটা তড়তড় করে বেড়ে গেল রিয়ার।চোখে মুখে স্বতস্ফূর্ত রাগ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

‘ যাচ্ছি!তোর সাথে আর জীবনে দেখা করার এটুকুও চেষ্টা করব নাহ।এন্ড সাফাদ ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ের এডভান্স দাওয়াত রইল।চলে আসবি।’

নিষাণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকল।কিছু সময় দাঁড়িয়েই মোবাইলের এপাশ থেকে শান্ত গলায় বলে উঠল,

‘ হু, অবশ্যই যাব।তুই নিশ্চয় আজও ফিরিয়ে দিতেই এসেছিলি রাইট?’

রিয়া বিরক্ত গলায় বলে উঠল,

‘ এসব কি ধরণের বোকামি নিষাণ?আমি জানতাম তোর সামনে আমি একটা বাচ্চা। বোকামি গুলো কেবল আমায় মানায়।তুই সবসময় আমায় সামলে নিয়েছিস কোন না কোন ভাবে।হ্যাঁ হয়তো আমাদের সম্পর্কে অনেক বার রাগ, ঝগড়া ছিল কিন্তু নিজের বাসা ছেড়ে এভাবে একা থেকে কি প্রমাণ করতে চাস তুই?এসব পাগলামো তোকে মানায় নাহ নিষাণ!’

নিষাণ হাসল।ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলল,

‘ যেখানে আছিস থাক।আমি আসছি।ওয়েট।’

_________

অদ্রি ছাদের একপ্রান্তে নিশ্চুপ দাঁড়িয়েই বিকালের আকাশ দেখার মাঝেই পেছনে এসে দাঁড়াল সেই অতি প্রিয় পুরুষ মানুষটি।বাতাসের দাপটে খোলা চুলগুলো এদিক ওদিক উড়তেই বিরক্ত হলো অদ্রি।চোখ মুখ কুচকে নিয়ে হাতজোড়া দিয়ে চুল বাঁধতে নিলেই রিক্ত হাতটা ধরে নিল। আচমকা রিক্তের হাত ধরা দেখে অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকাল অদ্রি।ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলে উঠল,

‘ আমার হাত ধরলেন কেন?ছাড়ুন!’

রিক্ত হাসল।অদ্রির হাতটা দুই হাত দিয়ে ধরে নিয়ে বলল,

‘ ছাড়ছি নাহ।’

‘ কি আজব!কেন ছাড়বেন নাহ?আপনার প্রেমিকা আছে।চাইলে তার হাত ধরতে পারেন।শুধু শুধু একটা অপরিচিত মেয়ের হাত ধরলেন কেন।’

‘ অপরিচিত?কে?ওহ হ্যঁ!অপরিচিতা তো আপনি?রাইট?’

অদ্রি চোখজোড়ায় বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল,

‘ কিসব কি বলে চলেছেন বলেন তো?একবার কাঠগোলাপ, একবার চিঠি, একবার অপরিচিতা।কি বুঝাতে চান কি আপনি?’

রিক্ত বাঁকা হাসল ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বলে উঠল,

‘ কিছুই নাহ।’

অদ্রি ভালোভাবে তাকিয়েই বলল,

‘ ওহ আচ্ছা।তো আপনার প্রেমিকা?তার নাম কি?’

রিক্ত হাসল।

‘ যেই হোক। আপনি কি জ্বেলাস?’

‘ আজব!জ্বেলাস হবো কেন?থাকতেই পারে প্রেমিকা।আপনি দেখতে সুন্দর।সো প্রেমিকা মাস্ট থাকবেই।আমি কেন জ্বেলাস হতে যাব?’

রিক্ত আবারও হাসল।হুট করেই অদ্রির হাত এক টান দিয়ে অদ্রির পিঠ ঠেকিয়ে দিল নিজের বুকে।খোলা চুল গুলো নিজের মুখে এলেমেলো হয়ে ছড়িয়ে পরতেই মুচকি হেসেই চোখ বন্ধ করল।অদ্রির কাধে মুখ ঠেকিয়ে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠল,

‘ তোমাকে কতকাল দেখার তৃষ্ণায় চটফট করেছি আমার জানা নেই । তবে আমার অভিমান, অভিযোগ সবকিছুতেই তোমাকে জড়িয়েছি।নাহ!তুমি আমার ভালোবাসা নও।তুমি আমার অভ্যাস!মাতাল করে দেওয়া অভ্যাস।যে অভ্যাসে আমি চটফট করে মরেছি।ক্ষনে ক্ষনে জ্বলেছি।সেই অনুভূতি গুলো পাওয়ার জন্য।তার কি আমার প্রতি অনুভূতি কমে এল?তার স্মৃতিতে কি আমি আজ ঝাপসা?তার লেখনে কি আজ অন্য কেউ এসে স্থির হয়েছে?চিঠির সেই পাতায় কি আজ অন্য কারো নাম লিখা হয়?আরো কতসব আজব বিদ্ঘুটে ভাবনা আমায় জ্বালিয়ে মারত জানো অপরিচিতা?ঐ অগোছাল, পাগলাটে চিঠিগুলো কেন জানি না আমায় ছুঁয়ে যেত।তবে শেষবারের চিঠিটা আমায় ছুঁতে পারেনি।সেই চিঠিতে আমি মোটেও খুশি হতে পারে নি।আমার মুখে অন্যবারের মতো এটুকুও হাসি এসে জমা হয় নি।চিঠিটা কেমন যেন ছন্নছাড়া!সেই চিঠিটা পড়ে একমুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল তোমার সব অনুভূতি পাল্টে গিয়েছে।আমার জন্য বোধ হয় এটুকুও অনুভূতি জমা রাখো নি তুমি আর।কি সুন্দর আমার বিয়েটা মেনে নিলে।একবারের জন্যও তোমার অধিকার ফলাতে চাইলে না।আচ্ছা, ভালোবাসা থাকলে অধিকার ফলানো যায় তো তাই না?যায় হোক!শেষ পর্যন্ত অপরিচিতা আমাকে কিন্তু ছেড়ে যায় নি।সেই বিষাক্ত বেদনার অন্ত ঘটাতেই টুপটাপ এসে জমা হলো আমার এই জীবনে।আমার শীতল চাহনি টুকু শুধু তোমার জন্য।নিবে? আমার হৃদয়ভরা অগোছাল সব অনুভূতি কেবল তোমার জন্য।মিশে যাবে সেই অনুভূতিতে অপরিচিতা?আমার অগোছাল, ছন্নছাড়া জীবনের সবটুকু জুড়ে থাকবে তো?’

অদ্রি কেঁপে উঠল।রক্তকনা গুলো কেমন তপ্ত হয়ে উঠেছে।গরম নিঃশ্বাস গুলো কাঁধ ছুঁতেই শিরা উপশিরায় বহমান রক্ত টগবগ করে উঠল মুহুর্তেই।শীতল কন্ঠে রিক্তর বারবার তুমি সম্বোধন শুনে বুক ধড়পড় করছে।হৃৎপিন্ড যেন হাঁতুড়ি দিয়ে পেটানো হচ্ছে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে।অদ্ভুত!এই মানুষটার মনে তার জন্য অনুভূতি ছিল?কোথায়?কখনও তো প্রকাশ করে নি সেই অনুভূতি।সে তো ভাবেই নি এই লোকের মনেও তার জন্য এত অনুভূতি সাঁজানো আছে।হুট করে এসেই বলে বসবে, “অনুভূতিতে মিশে যাবে অপরিচিতা?”অদ্রি হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে নিল।মাথাটা কেমন ঘুরিয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ।হাত পা কাঁপছে তড়িঘড়ি করে।কিসব হচ্ছে তার সাথে।কিসব!যে মানুষটাকে এতদিন ধরে ভালোবেসে আসছে সেই মানুষটাও তাকে ভালোবাসে?নাহ!বিশ্বাস হচ্ছে নাহ।কোনভাবেই নাহ।অদ্রি ঝাপসা চোখে আকাশের দিকে তাকাল।আনন্দে, উচ্ছ্বলতায় শরীরটা লতিয়ে গেলো রিক্তের বুকে।দৃষ্টিটা আরো ঝাপসা হয়ে গেল।চোখজোড়া বন্ধ করে নিয়ে শরীরের ভারসাম্য হারাতেই শক্ত করে চেপে ধরল রিক্ত।অদ্রিকে এভাবে লতিয়ে পড়তে দেখেই চিন্তায় চোখ মুখ শুকিয়ে আসল।একহাত দিয়ে শক্ত করে ঠেকিয়ে রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল অদ্রিকে।গালে আলত হাতে হাত রেখে বলে উঠল,

‘ অদ্রিয়া?এই, কি হয়েছে আপনার?শরীর খারাপ লাগছে?এই অদ্রিয়া?’

অদ্রি চোখ জোড়া বন্ধ রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিল।রিক্তর শার্টটা খামচে রেখেই ঠোঁট চেপে কাঁপা কন্ঠে বলল,

‘ হ হ হু।’

রিক্ত ব্যস্ত হয়েই বলে উঠল,

‘ হু? হু মানে?আপনি ঠিক আছেন?’

অদ্রি লতানো শরীরটা আরেকটু ঝুকিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

‘ হ হু। ‘

রিক্ত বিরক্ত নিয়ে বলল,

‘ কিসব হু হু করছেন আপনি?ওয়েট। আমি আপনাকে রুমে নিয়ে যাচ্ছি।’

রিক্ত কথাটা বলেই কোলে তুলে নিল অদ্রিকে।অদ্রির নেতিয়ে যাওয়া মুখটা দেখেই লম্বা শ্বাস ফেলল।

___________

রুমে এসে অদ্রিকে খাটে হেলান দিয়ে বসিয়ে জলের ছিটকে দিতেই অদ্রি স্বাভাবিক ভাবে চোখ মেলে তাকাল।চোখের সামনে রিক্তকে দেখে অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করে উঠল শরীর।চিঠিতে কত শত কথার বহর সাঁজিয়েছিল সে।অথচ আশ্চর্য জনক ভাবে এখন গলা দিয়ে একটা শব্দ ও বের হচ্ছে নাহ তার।কথা তো দূরে থাক।কি বলবে সে?ড্যাবড্যাব করে রিক্তের দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝেই রিক্ত বলে উঠল,

‘ কি হলো এটা?’

অদ্রি মিনমিনিয়ে বলল,

‘ কি হলো?’

‘ আপনার এমন দশা হলো কেন?নার্ভাস ফিল করছিলেন?যাকে লুকিয়ে ভালোবেসেছেন তার সামনে ধরা পরে গিয়ে?’

অদ্রি হালকা কাঁশল।সোজা হয়ে বসেই বলে উঠল,

‘ আ আপনি?আপনি সবটা কিভাবে জানলেন? কিভাবে?আর আপনি তো অন্য একজনকে ভালোবাসেন।তাই নাহ?তো চিঠি গুলো আমি দিয়ে থাকি কিংবা অন্য কেউ আপনার কি যায় আসে?’

‘ ঐ যে বললাম। অভ্যাস তো।’

‘ কেবল অভ্যাস। চিঠিগুলো পড়ে হয়তো হেসেছেন, উপহাস করেছেন আমাকে নিয়ে, আমার অনুভূতি নিয়ে।এটাই অভ্যাস। তাই তো?’

রিক্তের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল মুহুর্তেই।মুখের হাসিটা কপট রাগে পরিণত হলো।কপালের রগটা ফুলে উঠতেই বলে উঠল,

‘ শাট আপ অদ্রিয়া!আমার সম্পর্কে আপনি এটুকু ধারণা নিয়েই ভালোবেসেছেন?’

অদ্রি শুকনো ঢোক গিলেই বলল,

‘ নাহ, তবে আপনার সম্পর্কে ধারণাটা বিয়ের পরই বদলেছে।’

রিক্ত ভ্রু জোড়া কুচকে নিয়েই বলল,

‘ মানে?বিয়ের পর বদলেছে মানে?’

‘ ইলায়রা?সুন্দরী ইলায়রা?তো একজনকে ভালোবাসেন তাও বলছেন আমার চিঠি নিয়ে উপহাস করেন নি? ‘

রিক্ত স্থির বসে থেকেই চোখ মুখে সেই ভাবভঙ্গি স্থির রেখে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল।

_________

তখন সন্ধ্যা!আশেপাশের আলো গুলো সবেমাত্র অন্ধকারে রূপ নিচ্ছে।চারদিকে হালকা বাতাসে এদিক ওদিক তাকিয়ে নজর সরাল রিয়া।নিষাণের দিকে এক নজর তাকিয়ে থেকেই বলে উঠল,

‘ দেখ, আমি তোকে ভালোবাসি কিনা জানি নাহ।কোনদিন বাসব কিনা জানি নাহ।তবে এটুকু জানি তোর থেকে আলাদা থাকা সম্ভব নাহ।কোনভাবেই নাহ।পাগল নাকি? তোর সাথে সারাজীবনে একবারও দেখা হবে নাহ?ভাবতে পারছিস তুই?একবারও নাহ।যে আমরা কিনা সবসময় একসাথে থেকেছি
একসাথে খেলেছি।একসাথে খেয়েছি, ঝগড়া করেছি, মারামারি, বৃষ্টিতে ভেজা। আর তুই বলছিন কোনদিন কথা হবে নাহ?দেখা হবে নাহ?’

নিষাণ হাসল।

‘ কি হবে দেখা না হলে? কষ্ট হবে তোর?’

‘ কষ্ট হবে কিনা জানি নাহ।তবে আমি অলটাইম তোকে মিস করব।খুঁজে বেড়াব যদি অযুহাত দেখিয়ে একবার কথা হয়ে যায়, দেখা হয়ে যায়।যদি নাটকীয়ভাবে তুই সামনে পড়ে যাস কখনো।হয়তো বোকা বোকা কথা।তাই নাহ?তবে আমি এমনটাই করব।’

‘ ওহ!’

‘ কেবল ওহ?’

নিষাণ চুখ মুখ তুলে বলল,

‘ আরো কিছু কি বলার ছিল?বলার আছে?কিংবা থাকবে বলার?’

রিয়ার চোখজোড়া টলমল করে উঠল।এভাবে কি ভালোবাসা সম্ভব।বলল আর ভালোবাসা হয়ে গেল?নিষাণের কি এটা আধো পাগলামি নয়?

‘ নিতুকে ভালোবাসিস তো?’

নিষাণ সোজাসুজি উত্তর দিল,

‘ নাহ।হঠাৎ এই প্রশ্ন?’

‘ তাহলে ওর সাথে রিলেশন?কেন?’

‘ রিলেশন?নেই তো।’

রিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,

‘ মানে?’

নিষাণ হাসল।ঘড়িতে সময় দেখে বলে উঠল,

‘ সন্ধ্যা হলো তো।বাসায় যা।’

কথাটা বলে পেছন ফিরতে নিলেই রিয়া খামচে ধরল নিষাণের হাত।অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলল,

‘ আজকের পর দেখা হবে তো?কথা হবে তো?’

নিষাণ ঘাড় বাকিয়ে তাকাল।রিয়া এমনভাবে চিপকে ধরেছে হাত যেন হারাতে দিবে নাহ।অথচ হারাচ্ছে।প্রতিনিয়ত হারিয়ে দিচ্ছে সে।এটুকু ভালোবাসা না দিয়ে তৃষ্ণার্ত যুবকটিকে ক্ষণে ক্ষণে ক্ষত বিক্ষত করছে।চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যুবকটির অনুভূতি আরো জোরাল হয়ে উঠছে।শেষে পারবে তো এই অনুভূতিকে সামলাতে এই যুবক?আধো কি পারবে?

‘ হাত ছাড় রিয়া।মানুষ অনেক কিছু ভেবে নিবে।’

রিয়া কিছুক্ষন চুপ থাকল।তৎক্ষনাৎ হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,

‘ দেখ আমি তোকে ফিরিয়ে দিচ্ছি নাহ নিষাণ।কিন্তু আমি তোকে ছাড়া থাকতেও পারব নাহ।তোকে ছাড়া অস্থিরতাময় জীবনটা চাই নাহ আমার। একদমই নাহ।যদি সে অস্থিরতা ভালোবাসা হয় তবে ভালোবাসি।শতবার ভালোবাসি কিন্তু তোকে ছাড়া থাকা সম্ভব নাহ।’

নিষাণ হাসল।

‘ ভালোবাসি শব্দটা অতোটা সহজ নাহ রিয়া।কুল!আমি তোকে জোর করছি না।কিছুটা সময় আগেও তো বললি ভালোবাসতে পারবি কিনা জানিস নাহ। সময় নে।বুঝতে শিখ।অনুভূতি গুলো গুঁছিয়ে নে।যাকে নিয়ে অনুভূতি তাকে বলে দে।আমি অন্যের অনুভূতিতে রাজত্ব করতে চাই নাহ।বাই।পরে কোন একদিন হুট করেই হয়তোবা নাটকীয়ভাবে দেখ হয়ে যাবে।’

নিষাণ পা বাড়াল। রিয়া টলমলে চোখ নিয়ে ঠিক সেভাবেই তাকিয়ে রইল।নীড়ে ফেরা পাখিরা যতটা ক্লান্ত থাকে ঠিক ততটাই ক্লান্তি নিয়ে চেয়ে রইল।নাহ, চাহনি টা অক্লান্তিময়।তাতে ক্লান্তির এটুকুও চিহ্ন নেই।

চলবে….

(কেমন হয়েছে জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here