টক্সিক_রিলেশনশীপ,৮,৯

0
1385

টক্সিক_রিলেশনশীপ,৮,৯
ঈপ্সিতা শিকদার

বাসন্তীকে যখন উদ্ধার করতে আসে অনিমেষ ও নায়িমের লোকজন তখন সে পঞ্চাশ উর্ধ্ব পুরুষের জীবনকথা শুনতে ব্যস্ত।

লোকটি প্রবাসী, তার ধন-সম্পত্তি সবই আছে, কিন্তু এরপরেও পুরোটা ঘিরেই শূণ্যতা। পাঁচ বছর আগেই তার ত্রিশ বছর বয়সী স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে তার দুই সন্তান নিয়ে চলে গেছে। স্ত্রীর সাথে প্রণয়ের বিয়ে ছিল তার। আজও ভুলতে না পেরেছেন প্রেয়সীকে, না সন্তানদের। আপন কষ্টে জর্জরিত বাসন্তী এই লোকটির কষ্ট শুনে নিজেই কেঁদে ফেলে।

ঠিক তখনই দরজায় লাথি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে অনিমেষ। তার সাঙ্গপাঙ্গ এসে ঘেরাও করে লোকটিকে।

“চলো ভাবী!”

“আপনি এসেছেন। নায়িম কই?”

অনিমেষ খেয়াল করল বাসন্তীর কণ্ঠস্বরে যেন ‘বাঁচলাক’ জাতীয় সুর ধ্বনিত হলো। সেই সাথে তার মনে হলো মেয়েটার স্মৃতিশক্তি তুখোড় নাহলে একবার সাক্ষাতেই কাউকে স্পষ্ট চিনে ফেলা বেশ মুশকিল।

“চলছি। তবে এই চাচাকে ছেড়ে দিন। তার জীবনে এমনেই অনেক কষ্ট।”

সহানুভূতির শ্লেষ পাওয়া গেল বাসন্তীর কথা। অনিমেষ যতটা হাসি পেল, তার সাথে ফোনে থাকে নায়িমের ততটাই রাগ লাগল। নোংরা দুটো গালি সে অনায়াসেই নিক্ষেপ করল বাসন্তীর উদ্দেশ্যে।

“কত্ত ভালোবাসা! একদম চুয়ে পড়ে দরদ!”

তার কণ্ঠস্বরের ক্রোধ বুঝতে পেরে খুব দ্রুত বাসন্তীকে চলে যেতে বলল কয়েকজনের সাথে। বাসন্তী বের হয়ে দেখল সে একটা ছোটোখাটো এপার্টমেন্টে ছিল এতটা সময়। স্থানটা ঠিক চিনছে না। তাড়াতাড়ি বরাদ্দকৃত গাড়িতে উঠে বসল সে।

“তুমি ঠিক আছো তো বাসন্তী? কিছু লাগবে? ছোটখাটো ঝগড়ায় এভাবে বাড়ি ছাড়ে কেউ? নিজেরই তো ক্ষতি করতে যাচ্ছিলে…”

বিপদ থেকে বের হয়ে এলে সে কথা খুব মানুষই মাথায় রাখে। বাসন্তী সেই ক্ষুদ্রাংশের মাঝে না। তার চৈতালি অকপটে বলতে ইচ্ছে হলো, ‘তুমি নিজেই তো বাড়ি ছেড়েছো, হয়তো ছোট কিছুতেই।’

কিন্তু এমন কিছুই বলা হলো না তার। উল্টো বাসন্তী প্রশ্ন করল,

“তুমি এখানে?”

“না মানে নায়িম পাঠিয়েছে এমন অবস্থায় কীভাবে একা হ্যান্ডেল করবে তুমি? একজন নারীর সঙ্গ ভেবেই হয়তো…”

পানি এগিয়ে দিল চৈতালি। নায়িম ডগডগ করে পান করে নিল পুরো এক লিটারের বোতল। বেশ কয়েক মুহূর্ত ধরে পানি পিপাসা পেয়েছিল তার।

___

“শোন তাহলে ভাবীকে নিয়ে আমি বাসায় আসছি। এইখানের মালিকের সাথে ঝামেলা লেপ্টানো শেষ। আমরা বের হলেই পুলিশ এসে রেইড দিবে।”

“ভুলেও অপবিত্র বাড়িতে দিন কাটিয়ে আসা মেয়েকে এনে আমার ঘর-সংসার অপবিত্র করবি না? ছিঃ! ভাবতে আমার বমি আসছে, মাথা ধরে যাচ্ছে যে জায়গায় আমি পুরুষ হয়ে কোনো জায়গায় পা রাখিনি, ও আমার স্ত্রী হয়ে…!”

“ঠাণ্ডা হ। এটা পতিতালয় নয়, একটা এসকর্ট সার্ভিস। এসকর্ট সার্ভিস মানসিক নিঃসঙ্গতা কাটাতে ব্যবহার হয়, মানে টাকা দিয়ে মেয়ে বান্ধুবীকে কিছু সময়ের জন্য কেনা টাইপ। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।”

অনিমেষ জানে বন্ধুর মানসিকতা ও চিন্তা-ভাবনা। মূলত বাসন্তীকে খাণিক রক্ষে দিতে ও নায়িমকে শান্ত করতেই উক্ত বিষয়টি বোঝায় সে।

তাতে কী আর একরোখা নায়িম সাহেব মানে! বরং, সে আরও তেঁতে উঠে ঝাঁঝ নিয়ে শুধায়,

“বিয়ের পর তোর বউ রে পাঠাইস, তারপর বুঝব… যা বলছি তা কর। কথা বাড়াইস না। ”

অনিমেষ চুপ মেরে যায়। এই ছেলের উপস্থিত বুদ্ধির প্রশংসা না করে সে কোনোভাবেই পারে না। তাৎক্ষনিক মানুষকে কী করে কথার বানে মারতে হয় তা তার খুব করে জানা। অতঃপর আরও বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় তাদের মাঝে। সুদীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে অনিমেষ নায়িমের কথা মোতাবেক কাজ করতেই অগ্রসর হয়।

___

সুবিশাল ও রাজকীয় সাজসজ্জা বিশিষ্ট এক স্নানাগারে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র শাড়ি পরিহিতা বাসন্তী। এই পুরো বাথরুমটাই মনে হয় তার বাসস্থান ফ্লাট থেকে বড়। পুরো স্নানঘর গোলাপজল, চন্দন, ঘিয়ের গন্ধে মৌ মৌ করছে। হাজারো ভাবনা মাথায় ঘুরছে তার। এই বাসাটাতে সে আগে কখনো আসেনি, এমন কী এই স্থানেও না। কী আলিশান বাড়ি! ঠিক যেন কোনো রাজপ্রাসাদ। রাজ-রানীদের বাস ছিল এখানে।

চৈতালি ও অনিমেষের সাথে গাড়ি করে দীর্ঘ সময়ের যাত্রার পর এই বাড়িতে পৌঁছিয়েছে সে। আর পৌঁছানোর পরপরই তাকে একঝাঁক সবুজ শাড়ি পরুয়া নারীর কাছে রেখে বিদায় নেয়। সেই নারীগুলো তাকে আদিকালের বাঙালি রমণীদের মতোন এক প্যাঁচা শাড়ি পরিয়ে এখানে রেখে গেছে। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করারও সুযোগ পায়নি বাসন্তী। অথবা, ইচ্ছে করেই দেওয়া হয়নি।

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটো অসাড় হয়ে আসছে বাসন্তীর। তারপরও কারো আসার নাম নেই। এবার ভয় ভয় লাগছে বাসন্তীর। যেই বাহিরে বের হওয়ার জন্য এক কদম আগাবে তখনই দরজা খোলার শব্দ। তাকিয়ে দেখে কালো পোশাকে নায়িম এসেছে। তার চোখের শুভ্র অংশটুকু রক্তিম, মাঝে নীলচে মণি। এই আঁখি যুগল দেখলে সবসময়ই ভয় লাগে তার।

“বাথটাবে যাও। গোসল করা হয়নি আজ সারাদিন, নোংরা হয়ে গেছো তো। পরিস্কার হতে হবে না বলো?”

বাসন্তীর দিকে না তাকিয়েই বাঁকা হেসে শান্ত সুরেই আদেশ করে নায়িম। এই স্থবিরতাই কি তুফান আসার পূর্বাভাস? আচার-ব্যবহারে পৈশাচিকী ধরা-ছোঁয়া বেশ ভালো অনুভব করতে পারছে বাসন্তী। সে কোনো কথা ছাড়াই আদেশ পালন করে। বাথটাবে পা লাগানোর সাথে সাথেই পানির শীতলতা গা শিউরে উঠে বাসন্তীর। একদম বরফ শীতল পানি। ছিটকে সরে যায় সে।

“অতিরিক্তই অবাধ্য হয়েছো বসন্তকুমারী, তাই না? এত সাহস যার কাছ থেকে পেতে, সে-ই তো বে*** বিক্রি করে দিসে। তাহলে এখন সাহস কোথা থেকে পাচ্ছো?”

নায়িমের নম্র কথাতেও কিছু একটা ছিল, যা বাসন্তীকে দগ্ধিত করে, বাধ্য করে। সে কাঁপতে কাঁপতে বাথটাবের পানিতে গোটা দেহ নিমজ্জিত করে।

প্রায় মিনিট দশেক হয়ে গেল তবুও কিছু বলছে না নায়িম। না বাসন্তী সাহস পাচ্ছে কিচ্ছু জিজ্ঞেস বলার। তবে সারা গা ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছে রমণী। মনে হচ্ছে এখনই বরফের মূর্তিতে পরিণত হয়ে যাবে।

“আ-আমি উঠি? আ-আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে।”

“লাগার জন্যই তো করা। আচ্ছা যাও, বেশি না, আর মাত্র দশ মিনিট।”

ঘড়ি দেখে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল নায়িম। বাসন্তীর কম্পিত কণ্ঠও তার মন ছুঁয়াতে পারে না। কিন্তু যুবতী? সে তো ধীরে ধীরে শক্তি হারা হয়ে উঠছে। অসাড় হয়ে উঠছে তার প্রতিটি অঙ্গ। সে যেন বোধ করতে পারছে না তার হাত-পা সহ অন্য অঙ্গ। আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বাসন্তী।

কাছে এসে কোলে তুলে বেডরুমে চলে নায়িম। তার চোখে-মুখে রাগ ঠোঁটে খেলা করছে এক পৈশাচিক হাসি। বাসন্তীর কাপড় বদলে দিয়ে তার চুল হেয়ার ড্রাইয়ারে শুকিয়ে, ব্লাঙ্কেট দিয়ে ভালোভাবে গা মুড়িয়ে দেয় সে।

“ইসলাম নারীকে সবচেয়ে অপরূপ ও মূল্যবান রত্ন বলেছে। তবে বসন্তকুমারী, তুমি আমার কাছে তার চেয়েও দামী। তবে তোমাকে আমি ভালোবাসি না বটে। ভালোবাসা তো ফিঁকে হয় সময়ের সাথে। তুমি হলে আমার জীবনরত্ন তুমি। যাতে আমার জান তো না, সুখ, স্বস্তি, আনন্দ, ভালো থাকা আটক। যা কখনো ফিঁকে হবে, সদাই মোহনীয় আর মূল্যবান মূল্য, যার দরকার শেষ হবে না আজীবন।”

থামে সে। বাসন্তীর কপালে আসা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে পুনরায় মুখ খুলে।

“দামী রত্ন মানুষ লুকিয়ে রাখে, খারাপ নজরের আড়ালে। এত দামী রত্ন হয়ে তুমি লোকসমাজে দেখিয়ে নিজের প্রতি লোভ জন্মানোর গুস্তাখি করেছে। ক্ষমা তোমার প্রাপ্য নয়। শাস্তি তাই পেয়েছো। আশা করি আর কোনোদিন এই ভুল ভুলেও হবে না।”

___

“তুই কি পাগল? কী রে তুই? একটা প্রেগন্যান্ট মেয়েকে আইস বাথ্… যদি কোনো সমস্যা হয়?”

অনিমেষের চোখে, মুখে, কণ্ঠে রাগ ধরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা। সে কোনোসময়ই নায়িমের সাথে রাগ ধরতে পারে না। তার একমাত্র বন্ধুই নায়িম। এর পিছনেও অবশ্য নায়িম দায়ী।

“জাস্ট চিল। আইস বাথ প্রেগন্যান্সির সময় হার্মফুল না। তাছাড়া এটা তো আরও ভালো আমাদের জন্য, স্ট্রেস রিলিজ করে, রিলেক্স করে। এথালেটস্ও তো এই উপায় অবলম্বন করে।”

“ভুলিস না যে ঐটা তোর বউ, কোনো এথালেট না।”

“ওকে শাস্তি দেওয়া দরকার ছিল। তুই জানিস না আজ কত কী হতে পারত? আমি জাস্ট এসব বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু শুনতে চাই না।”

বন্ধুকে উত্তেজিত হতে দেখে হার মানে অনিমেষ।

“ওকেহ্। আজ রাতে তো তোর ইন্টারভিউ আছে ললিতা’স ইন্টারোগেশনে। আমি না করে দেই ওদের।”

“না, না, আমি যাব।”

বিচলিত হয় অনিমেষ।
“তুই নিশ্চিত? তোর মন-মানসিকতা এমনেই ঠিক নেই। এত বড় একটা কাহিনী হলো আজ। আর ললিতা খুবই ট্রিকি প্রশ্ন করবে। বাই চান্স তুই যদি এগ্রেসিভ হয়ে বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কিছু বলে ফেলিস… তার চেয়ে ভালো আমি কিছু একটা বলে বিষয়টা পোস্টপন করে দেই।”

“বনে সিংহকে সবাই বেশি মানে কেন জানিস? কারণ সিংহ কখনো নিজেকে দুর্বল দেখায় না, শরীরে ক্ষত নিয়েও শানের সাথে গর্জন দেয় সে। আর এই গর্জনেই কাঁপে সবাই। আমি আজ না গেলে, ওরা মনে করবে আমি দুর্বল। একবার দুর্বল হিসেবে গণ্য হয়ে গেলে, বনে টিকা মুশকিল বন্যদের মাঝে।”

শ্রাগ করে উত্তর দেয় নায়িম৷ এত জটিল এক উপলব্ধি জাহির করাতেও তার কী যে সরল ভঙ্গি! যেন এটাই স্বাভাবিক। অনিমেষ সায় জানিয়ে চলে যায়। তার মামনি যে কল করেছে বাড়ি ফিরতে। যাওয়ার আগে একটা বাক্যই উচ্চারণ করে সে।

“এতটা কঠোরতার সহিত রাখিস না মেয়েটাকে, সবাই এক হয় না।”

___

বাসন্তীর দিকে এক পলক তাকিয়ে বেডের কিনারায় বসে নায়িম। হাতে তার কোকাকোলা। চেনা এই ঘরটাকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে সে। গর্ভবতী বাসন্তীকে দেখে, এই ঘরকে দেখে অতীত তার চোখের সম্মুখে যেন স্পষ্ট ভেসে উঠে।

ঐ তো ঐ আলমারির কোণাটাতেই লুকাতো সে মিসেস খানের আঘাতের জন্য। নিজের অন্তঃসত্ত্বা জন্মদাত্রীকে প্রতিদিন বাবা ছাড়া অন্যকারো সাথে অন্তরঙ্গ ভাবে দেখে কেমন ঝড় যেত বারো বছরের শিশু-কিশোরের উপর তা কেউ বুঝবে? তার রাগ লাগত না শুধু বমি পেত, গা ঘিনঘিন করত।

সে ছোট ছিল তবে একদম যে বুঝত না এমন নয়। প্রথমদিনই রাগ হলো তার ঐ লোকটাকে দেখে। লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিল সে। বলেছিল,

“দূরে থাকো আমার মমের থেকে, বাজে লোক!”

এর জন্য কত যে মার খেয়েছিল সেদিন মিসেস খানের থেকে।

“অসভ্য, শয়তান ছেলে! তোর বাপ এক কাটা জীবনের, আমার সুখের পথে বাধা। এখন তুইও জ্বালাবি! মর তুই!” তার কথাগুলোতে কতটা যে আঘাত কেটেছিল ছোট্ট হৃদয়ে তা কেউ জানে না।

নায়িম আজও ভাবে, ‘কোনো মা কী সন্তানের মৃত্যু কামনা করতে পারে এই সাময়িক সুখের জন্য?’ পরক্ষণে নিজেকেই উত্তর দেয়, ‘মায়েরা হয়তো পারে না, কিন্তু নারী ছলনাময়ী, তারা সবই পারে।’

সবচেয়ে কুৎসিত যে বিষয়টি লাগত ঐ ছেলেটির সাথে বাহিরে যেয়ে মিসেস খান মিস্টার খানকে বলত সে নিজের আর বাবুর চেক-আপ করাতে বেড়িয়েছে। প্রেগন্যান্ট নারী দেখলেই তার সামনে ঐ ঘৃণ্য নারীটির মুখশ্রী ভেসে উঠে।

কারো কলে ভাবনার সুতো কাটে নায়িমের। ফোন উঠিয়ে দেখে ললিতা’স ইন্টারোগেশন থেকে কল এসেছে। বেড়ুতে হবে তার। চলে যায়।

___

পরম উষ্ণতায় জ্ঞান ফিরে বাসন্তীর। জ্ঞান ফিরার পর বেশ রিলেক্স লাগে তার। নিজের অবস্থা দেখে আপনমনেই হাসে সে।

“মানুষটা এমন কেন? নিজেই আঘাত করে, নিজেই দাওয়া দেয়। সে কি অসুস্থ? যদি হয়, তবে এ অসুখের দাওয়া কেন নেই? না কি আছে?”

পরক্ষণেই রাতের কথা ভাবতেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় সে। তার ডেলিভারি ডেট খুব বেশি দূরে নয়। কমপ্লিকেশনসের কারণে আগেই ডেলিভারি করতে হবে বলেছে ডাক্তার। তবে কী খুব শিঘ্রই নিজের সন্তান হারাতে চলেছে সে? জন্মের পর বাবুটার মুখটাও বুঝি দেখা হবে না তার?

চলবে…

#টক্সিক_রিলেশনশীপ
||৯ম পর্ব||
-ঈপ্সিতা শিকদার
“আপনাকে এখন পাওয়াই যায় না। খুব ব্যস্ত দিনকাল যাচ্ছে না কি গায়ক নায়িমের?”
হাস্যোজ্জ্বল মুখে ললিতা সেনের প্রশ্ন। প্রতি উত্তরে মৃদু হাসে নায়িম।

“ব্যস্ততা নয়, বাধ্যতা ও নেশা সুরের খেলার। তবে ফিরিয়ে দেইনি তো আপনাকে। সময় দিয়েছি দেরিতে হলেও।”

“শুনেছি, আপনাকে খুব সরল, সোজা, প্যাঁচহীন মানুষ হিসেবে সকলে জানলেও বাস্তবে এর উল্টোই। শুনেছি প্রচণ্ড ধূর্ত, জটিল, নিম্নগামী, মেয়েবাজ এক পুরুষ আপনি।”

“কী অদ্ভুৎ না! আপনিই বললেন সবাই আমাকে সরল-সোজা বলে জানে। তবে আপনি আমার বিষয়ে দ্বিতীয় ধারণা শুনেছেন কার থেকে? ভেরি কনফিউজিং লেডি! না কি আমার সম্পর্কে জানার এত আগ্রহ যে গোয়েন্দা লাগিয়েছেন?”

উত্তর দেয় না ললিতা সেন। শুধুই শব্দ করে হেসে যায়, হয়তো এটাই এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা।

“মেয়েদের সম্পর্কে আপনার ধারণা বা উপলব্ধি কী?”

“সরি ম্যাম। আমার এত এক্সপেরিয়েন্স নেই মেয়েদের নিয়ে উপলব্ধি হওয়ার মতোন। যদি তিন-চারটা বিয়ে, বিচ্ছেদ হত তাহলে আজ আমিই আপনার আসনে হতাম।”

চমকিত হয় ললিতা সেন। তার কপায় বেয়ে সূক্ষ্ম ঘাম ঝরে, তবুও নিজেকে সামলে নেন। বস্তুত, তিন বার সংসার ভেঙেছে তার। কারণ কোনো স্বামীই তার অতিরিক্ত পুরুষের সাথে মেলামেশা ও মদ্য পান মেনে নিতে পারেনি।

“রিসেন্টলি ঘটা ঘটনাটা সকলেরই জানা। একজন অদম্য লাস্যময়ী ও সুন্দরী নারী নিজে থেকে কাছে আসলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা… সবাই জানে ব্যাপারটা নিছকই অসম্ভব যেকোনো পুরুষের পক্ষেই। তাহলে কি আপনার পুরুষত্বে সমস্যা না কি অন্য কোনো ঘাপলা আছে?”

এবার হয়তো বাধ ভাঙবে ভেবে আছে ফিনফিনে পাতলা কালো নেটের শাড়ি পরনে থাকা নারীটি। কারণ পুরুষত্বে প্রশ্ন কোন পুরুষই বা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে! লাইভ ইন্টার্ভিউ চলছে নির্ঘাত কোনো বাজে কাজ করেই ছাড়বে। কিন্তু তাকে অবাক করে নায়িম তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াই দেয় না। বরং, ভ্রু নাচিয়ে বলে,

“সবাই এটাও জানে আপনি মিস. শবনমের কত বড় বান্ধব! এমন কী তার ইমেজ ক্লিয়ার করাতে আর আমাকে হেনেস্তা করাতেই যে এখানে ডাকা। বাট কথা হলো যার ইমেজ ঠিক নাই, সে কী করে অন্যের ইমেজ ঠিক করবে?”

তার কথায় নড়চড়ে বসে নারীটি। নায়িম সামনে রাখা কোকাকোলার বোতলটি তুলে একটু পান করে পায়ে পা তুলে বসে। আয়েশি ভঙ্গিমা তার।

“আর যতটুকু আপনার স্টেটমেন্ট ‘কোনো পুরুষের পক্ষেই অসম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা’ এ সম্পর্কে আমি কী বলব? আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবে আমাদের অডিয়েন্স। শুনেন মিস অর মিসেস হোয়াট এভার ইউ আর কোনো মানুষ কি কখনো কারো ইউজ করা টিস্যু ব্যবহার করে? না, দেখলে নাক কুঁচকায় বটে। তেমনি কোনো রুচিশীল সুপুরুষ এমন ধরনের নারীর দিকে হাত বাড়ায় না, বরং তাদের গা ঘিনঘিন করে। আই থিংক ইউ গট ইউর এন্সার।”

উক্ত বাক্যগুলো উচ্চারণ করেই লাইভ ইন্টার্ভিউয়ের মাঝ থেকে উঠে যায় যুবক। এক পলক ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত রাজকীয় ভাবে চোখে দামী সানগ্লাসটা এঁটে নিয়ে বের হয়ে যায়।

ললিতা সেন বিস্মিত হয়ে সেখানেই বসে। লাইভ ইন্টার্ভিউয়ে যে কেউ এত খোলামেলা শত্রুতা প্রকাশের সাহসিকতা ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ রাখে তা তার জানা ছিল না।

___

বাসন্তীকে খাবার দিয়ে গেছে একজন সবুজ পোশাক পরিহিতা নারী। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না এই নারীরা কারা বা কী করে এখানে? আর এই রাজকীয় কামরা ও বাড়িটাই বা কার? পুরোটা দালান ও ফার্নিচার সোনালী ও শুভ্র রঙের তাল-মিল রেখে ডিজাইন করা। এমন কী বর্তমানে সে যেই শাড়িটি পরা সেটাও বেশ দামী স্বর্ণজরি দিয়ে কাজ করা কাতান। বাসন্তীর মাঝেসাঝে মনে হচ্ছে সে রাজরাণী এই রাজপ্রাসাদের।

“ছোট মালকিন, আপনার জন্য মালাই চা।”

“মালাই চা?” বিড়বিড়ায় বাসন্তী। চায়ের এমন নাম সে কখনোই শুনেনি।

“হুম, ছোট মালকিন। অনিমেষ বাবুই তো বললেন আপনার আর তার জন্য মালাই চা পাঠাতে।”

“অনিমেষ ভাইজান? কিন্তু কোথায় তিনি? আর আপনি বারবার আমাকে ছোট মালকিন বলছেন কেন?”

“উনি স্টাডিরুমে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। চলেন, আমি নিয়ে যাই।”

ছোট্ট এক বিরক্তিমাখা শ্বাস ফেলল বাসন্তী। মেয়েটা আবারও কায়দা করে শেষ প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল। যতবার সে জিজ্ঞেস করেছে ততবার এমনই হয়েছে। এখন তো জিজ্ঞেস করার মানসিকতাই হারিয়ে গিয়েছে।

“আচ্ছা চলেন।”

চায়ের ট্রে হাতে নিয়েই মেয়েটি এগিয়ে চলল। বাসন্তীও গেল তার পিছু পিছু। বড় একটা ঘর, যার চারটা দেওয়াল জুড়ে শেলফ্ এঁটে আছে। কী গাঁদা গাঁদা বই! এতটা বই তো সে নিজের শিক্ষা জীবনেও দেখেনি।

“বসো।” গভীর ভাবনার মাঝে শব্দটি শুনে কেঁপে উঠে বাসন্তী।

অনিমেষ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। তার ইশারায় চায়ের কাপ সমেত ট্রে রেখে চলে যায় সাথে আসা মেয়েটি।

“আপনার সাথে বেশ কিছু কথা বলার আছে আমার ভাবী। কখনো ভাবিনি কথাগুলো কাউকে বলব, নিজের জীবনের চেয়ে অধিক প্রিয় বন্ধুকে করা ওয়াদা ভাঙব।”

কথাটুকু শেষ হতে ঘরে পা রাখে আরেকজন ব্যক্তি। চৈতালি সে।

“হ্যাঁ, অনেক কিছু তোমার জানার আছে। তোমার জীবন কেন এতটা বিষাক্ত বা কেন এত টক্সিক রিলেশনশীপ তোমার আর নায়িমের তা তোমার জানতে হবে।”

“আমি কখনো বলতাম না। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে অতীত খোলাসা হওয়া খুব জরুরি তোমার ও নায়িমের ভালো জীবনের জন্য।”

বাসন্তী কিছুই বুঝতে পারছে না। একে তো নিজেরই এত মানসিক চাপ যন্ত্রণা, তার উপর চৈতালি ও অনিমেষের এত ধাঁধাময় কথাবার্তা সবটাই তার কাছে এখন নিছকই হেয়ালিপনা লাগছে।

তার খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে, “হেয়ালি বন্ধ করে দয়া করে বলুক কেন এতটা বিষাক্ত ছোঁয়ায় দগ্ধ হতে হয় আমায় বিনা অপরাধেই?” কিন্তু স্বভাবগতই সে বলতে পারে না।

“নায়িম টক্সিক রিলেশনশীপে বেড়ে ওঠা একজন পুরুষ। নায়িমের জন্মদাতা মি. নিয়াজ খান ছিলেন একজন জমিদার ও নামকরা বস্ত্র ব্যবসায়ী। নায়িমের জন্মদাত্রী নুসরাত মোস্তফা ছিলেন নিয়াজ খানের দাদূর বন্ধুর নাতনি। এছাড়াও তার আরেক পরিচয় হলো বিশিষ্ট রাজনীতিবিদের একমাত্র কন্যা। পারিবারিক ভাবেই নিয়াজ খান ও নুসরাত মোস্তফার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রীকে খুব বেশিই ভালোবেসে ফেলেছিলেন নায়িমের বাবা। অনেক বিশ্বাস করতেন স্ত্রীকে। ভালোই চলছিল তাদের সংসার, আরাম, আয়েশে ও আদরে বেড়ে উঠছিল তাদের একমাত্র পুত্র নায়িম।

কিন্তু হুট করেই আবার যেন অতীত ফিরে আসে নুসরাত মোস্তফার জীবনে। প্রথম প্রেম না কি ভুলা যায় না। তিনিও ভুলতে পারেননি হয়তো। তাই তো স্বামী-সন্তানের উর্ধ্বে রেখেছিলেন প্রেমিককে। প্রতিনিয়ত স্বামীকে মিথ্যে বলে ছেলের চোখের সামনে পরপুরুষের সাথে মিলিত হতেন তিনি। নায়িম বাধা দিতে গেলে বা কাউকে বলতে চাইলে মার-ধর, গালাগালি করতেও থামেননি তিনি। হেসে-খেলে চলা ছেলেটা হুট করেই নীরব থাকত, স্তব্ধ থাকত সদা। সে বুঝত না মায়ের এমন করার কারণ।

এর মধ্যেই একদিন সময়ের আগে ফিরে স্ত্রীকে হাতেনাতে ধরেন নিয়াজ খান। নুসরাত মোস্তফা একটু অনুতপ্ত তো হয়ই নাই। বরং, দাম্ভিকতার সহিত মুখ ঝামটা মেরে সংসার ছাড়েন তিনি। ঐ যে বললাম স্ত্রীকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন তিনি। তাকে ফেরাতে পায়ে সুদ্ধ ধরে তবুও লাভ হয়নি। তার পাগল দশা। সারাদিন মদে ডুবে থাকতেন। ঘৃণা করতে শুরু করেন স্ত্রীকে। দিন নাই, রাত নাই বাড়িতে নানা মেয়ে আনতেন। বাসায় যে একটা সদ্য কিশোর ছেলে আছে ভুলেই যেতেন। নায়িমকে দেখলেই রেগে যেতেন তিনি। মার-ধর ও গালিগালাজ করতেন মা তুলে।

ছেলেটা দিনে দিনে আরও ভেঙে পড়েছিল মানসিক ভাবে। চুপচাপ থাকত, কাঁদতে ভুলে গেছিল, সারাক্ষণ কেমন আবদ্ধ স্তব্ধতা তার মাঝে। আমাকে সব বলত ও, তবে আগের মতোন সেসব বলার সময় রাগ ও ঘৃণা ছাড়া কোনো অনুভূতি প্রকাশ পেত না তার মাঝে। অত্যন্ত সাবলীল ভাবে বলত সে যেন এটাই স্বাভাবিক। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল ওর আজকের এই নায়িম হওয়া।”

অনিমেষ থামে, তার ভিষণ তেষ্টা পেয়ে গেছে। পানি নেই আশেপাশে, তবে ঠাণ্ডা মালাই চা সম্মুখে রাখা। তা-ই পান করে নেয় সে।

চৈতালি বাসন্তীর ফ্যাকাসে হয়ে উঠে মুখ খানার দিকে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকায়। এই মেয়েটা যে তাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখে না, তা তার খুব করে জানা।

“আমি নায়িমের কোনো বোন নই। আমার মা ছিলেন এই সবুজ শাড়ি পরা অন্যান্য মেয়েদের মতোই এই বাড়ির একজন কাজের মেয়ে। নায়িমের দেখভাল করাই ছিল তার প্রধান কাজ। নায়িমের বাবা স্ত্রীর বদলে যাওয়া, অতিরিক্ত ড্রিংক, শৃঙ্খলছাড়া জীবন-যাপনের জন্য ছয়-সাত মাসের মাঝেই স্টক করে মারা যায়। উইল অনুযায়ী নায়িমের আঠারো হওয়া অবধি সব কিছু নুসরাত মোস্তফার। তিনি স্যারের মৃত্যুর পরই সবকিছুতে হক নিতে নিজের প্রেমিক সহ এসে পড়েন। আর প্রেমিকের কথাতে নিজের ছেলেকেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন, তখন নায়িমকে আগলে নেন আমার মা। নিঃস্বার্থ ভাবেই যে সবটা করেছিল এ দাবী করব না। কিন্তু নায়িমকে নিয়ে কখনো হেলাফেলা করেনি। কষ্ট করেও নায়িমের পড়াশোনা আগের মতোই চালানোর চেষ্টা করেছে।

বছর এক যেতেই এক লোক আসেন নায়িমের সন্ধানে, চিনতাম না। তিনি বলেন নায়িমের দাদার ভাইয়ের ছেলে। নায়িমের দায়িত্ব নিতে চান। আমাদের জন্য নায়িমের খরচ চালানো কষ্টসাধ্য ছিল, আমার মা তাই অনতিবিলম্বেই সায় দিয়ে ফেলে। কিন্তু নায়িম বলে সে তার বাড়িতে যাবে না। বরং, তাকে যেন একটা হোস্টেলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। এত সহায়-সম্পত্তির মালিক হয়েও এতিমদের মতোন ছিল সে আঠারো হওয়া অবধি। কীভাবে যেন আঠারো হওয়ার পরপরই নিজের সবকিছু আবার নিজের অধীনে আনে নায়িম। ভাগ্যের খেলায় জয়ী হয়। কিন্তু সবকিছুর সে এক অমানবিক মানসিকতার যুবকে পরিণত হয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তার গোটা ভালো মানসিকতা, নির্মলতা ও অনবদ্যতা। সে এমন এক মানুষ, যার মাঝে মনুষ্যত্বেরই বড় অভাব”

ফোস করে এক শ্বাস ফেলে অনিমেষ। বাসন্তীর দিকে বিনয়ী ও অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।

“ও অসুস্থ, কিন্তু পাগল কী আর মানে সে পাগল! আমি বহু চেষ্টা করেছি ওকে সায়কায়ট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়ার, কিন্তু পারিনি। যতটুকু সায়কায়ট্রিস্ট থেকে জেনেছি, সেও খুব একটা লাভ করতে পারবে না। ওর মানসিকতা বদলাতে হবে। তোমার একটু সাহসিকতাই পারে ছেলেটাকে বদলে দিতে। কাঠের পুতুল কিন্তু বিপ্লব বয়ে আনবে না, তা কঠোর ও দৃঢ় মানুষের দ্বারাই সম্ভব। নায়িমকে তো অনেক ভালোবাসো, তবে তাকে ভালোবাসেই নাহয় পুতুল থেকে বিপ্লবী হও।”
বলে থামে অনিমেষ।

বাসন্তী তীব্র ঘোরে ডুবে। সব তার মাথার উপর দিয়েই যেন যাচ্ছে। তার একটু বিরতি প্রয়োজন, আরাম প্রয়োজন।

“কী রে অনি তুই না চলে যাবি বললি? আর কী কথা হচ্ছে এখানে সবার?”

হুট করেই নায়িমের কণ্ঠস্বর শুনে হচকচিয়ে যায় উপস্থিত সকলেই। শুধু বাসন্তীরই শূণ্য দৃষ্টি।

“তেমন কিচ্ছু না হালকা-পাতলা আড্ডা দিচ্ছিলাম। আর ভেবেছি আজ থেকে যাব এখানে, মামনিকেও বলেছি।”

“ওহ, আচ্ছা। বাসন্তী ঘরে চলো।” বলে নায়িম চলে গেল। তার কিছু সন্দেহ হলো কি না কে জানে?

নায়িমের পিছু হাঁটা ধরল বাসন্তীও। যাওয়ার আগে একবার অনিমেষের চোখ জোড়ার দিকে তাকালো। ছেলেটি চোখে গভীর আবেদন। যেন বলছে, “ভালোবেসে বিপ্লবী হও নারী, পুতুল নও।” কিন্তু বাসন্তী কি পারবে বিপ্লবী হতে? তার আবেদন গ্রহণ করতে?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here