Dangerous husband,পর্বঃ_৪
লেখকঃ_নুসরাত_জাহান
রান্নাঘরে গিয়ে আদিবা কফি বানিয়ে মগ হাতে করে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আঁড়চোখে আবিরকে দেখছে। আবির মাথাটা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আদিবা পা বাড়তে গিয়ে আবারও থমকে গেল। অনেক জল্পনা-কল্পনা করে মগ হাতে নিয়ে রুমে ঢুকল। আদিবাকে কফি হাতে দেখেই বাঁকা হাসি দিয়ে আবির বলল,
– কফি বানানো শেষ!
– জি।
– কই দেখি তো এদিকে দাও তো!
আদিবা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে দিল কফির মগটা।
আবির মগটা হাতে নিয়ে রীতিমতো অবাক হয়ে যায়৷ কফির কালারটা তো দারুণ হয়েছে খেতেও নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। নিজের প্রতি অঢেল বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করে কফির মগে চুমুক দিল। চুমুক দিতেই থ মেরে থমকে গেল। চোখদুটো তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে কফি শপের কোন বিশাল রেস্টুরেন্টে বসে কফির স্বাদ নিচ্ছে। দ্বিতীয় চুমুক দিতেই আবির বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। অবাক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকাচ্ছে আদিবা৷ নিজের মনের মাঝে সংকোচ অনুভব করছে। কেনো জানি লজ্জা লাগছে কফিটা বানিয়েছে বলে। খাওয়ার অযোগ্য হয়েছে বলে আবির বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। জিজ্ঞেস করার মত সাহস টুকু সে সঞ্চারণ করতে না পেরে চুপচাপ অপরাধীর মত মাথা নিচু করে ফ্লোর বরাবর তাকিয়ে থাকল। মনে মনে কান ধরে তওবা কাটছে তার কখনও আগ বাড়িয়ে বলবে না আমি এটা পারি। ঢের শিক্ষা হয়েছে তার৷ ভয়কে জয় করে সাহস করে চোখ বন্ধ করে আবিরকে জিজ্ঞেস করল,
আসলে আমি প্রথমেই স্যরি বলছি। এত বাজে স্বাদের কফি বানিয়ে আপনাকে খাওয়ানোর জন্য। প্লিজ ভুল বুঝবেন না৷ এখন তো অনেক রাত হয়েছে হোটেলের সবাই বিঘোর ঘুম ঘুমুচ্ছে তাই আজ কফির নেশাটা বাদ দিন কালকে সকালে এক কাপ খেয়ে নিবেন যাওয়ার আগে৷
চোখ বড়বড় করে ভ্রু কপাল একত্রে করে আদিবার দিকে তাকাল। আদিবা তো ভয় পেয়ে গেল। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখনি আবির বলতে লাগল,
– আদিবা তুমি এত ভালো কফি বানাতে পারবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। মনে করেছি হয়তোবা মোটামুটি হবে কিন্তু তুমি তো একদম স্পেশাল কফি বানিয়ে এনেছ। আচ্ছা কতদিন যাবৎ তুমি কফি বানাও৷
– ইয়ে মানে আজই প্রথম।
আবির বাঁকা হাসি দিল। সত্যি!
– হুম।
– তুমি তো এই পথে না আসলেও চলতে। তুমি একটা রেস্টুরেন্ট দিয়ে বসতে তাতেই দেখতে দিন ভালো চলত। আসলে তোমরা কষ্ট করবা কেন বসে বসে যদি টাকা ইনকাম করতে পার তাইলে ক্ষতি কি?
আবিরের কথার পাল্টা জবাবে আদিবা বলল,
– যদি আমি এই পথে আমার প্রয়োজনে ছাড়া না আসতাম তাইলে আপনি আজ এই মূহুর্তে আমাকে কোথায় পেতেন? আপনার মনের চাহিদা কিভাবে পূরণ করতেন? শোনেন আপনাদের মত সাহেবেরা আছে বলেই কিন্তু আমাদের মত পতিতারা আছে। কেউ কেউ বউয়ের কাছে খুশি না তাই আমাদের কাছে আসে। কিছু বললেই বলে বউ বুড়ি হয়ে গেছে এখন আর আগের মত পারে না তাই নিজের চাহিদা মিটাতে পতিতার কাছে এসেছে। ভাইরে ভাই তাদের উদ্দেশ্যে বলছি বউরা যদি না পারে তাতে কি হয়েছে সারাজীবন তো মেয়েটা তোদের সখ পূরণ করেছে৷ এখন না হয় মোটা হয়েছে বাচ্চা কয়েকটা জন্ম দিতে গিয়ে। বাচ্চাটা তো আর মেয়েটার একার না৷ কিছু বললে তো বলিস তুমি এত মোটা কেনো আগে তো এমন ছিল না৷ আগে তোমার সৌন্দর্য দেখেই প্রেমে পরেছিলাম কিন্তু দিনদিন সেই সৌন্দর্য ভাটা পরে গেছে। তখন মেয়েটির চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে সিজারের সময় মেরুদন্ডে যে ইঞ্জেকশন দেয় সেটার কারণে মেয়েরা না চাইতেও ফুলতে থাকে। এতে তো মেয়েটির দোষ নেই বিধাতার লিখন এটা৷ ইচ্ছা করলেই কেউ খণ্ডাতে পারে না।
আদিবার কথাগুলো মন ছুঁয়ে গেছে আবিরের। আদিবা প্লিজ এমন করে বলো না সব পুরুষ এক না৷ আমি তো সবকিছু জানি তাই তোমার আঙুল তুলে আমাকে দেখানো লাগবে না৷
– সত্যি জানেন?
– হুম।
– তাইলে এই পথে কেনো এসেছেন?
আদিবার কথা শুনে চোখ পানিতে ছলছল করছে। চোখদুটো বুঝতেই পানি টপটপ করে পড়ছে। আদিবা বুঝতে পারল আবির কষ্ট পাচ্ছে৷ আবিরকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না। আবির আর নিজেকে সামলাতে না পেরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।
আদিবা আবিরের কাঁধে হাত রাখতে সে আদিবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
– প্লিজ থেমে যান। এভাবে কাঁদবেন না।
– জানো আদিবা ছোটবেলায় বাবা বিজনেস নিয়ে থাকত আর মা সারাদিন পার্টি নিয়ে। ছেলেকে দেখাশুনা করার মত তাদের কাছে সময় ছিল না। আমার তাদের প্রয়োজন ছিল কিন্তু তাদের আমাকে প্রয়োজন ছিল না। সব সময় টাকা নিয়ে পরে থাকত। আমিও আর কিছু বলতাম না। ধীরেধীরে বন্ধুবান্ধবকে আপন করে নিয়েছি৷ আস্তে আস্তে সিগারেট খাওয়া শুরু করি তারপর নেশা পরে নারী। নারীদের নেশাটা এত বেশি আমাকে আঁকড়ে ধরেছে যা থেকে বেরিয়ে আসা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি৷
আদিবা বুঝতে পারল আবিরের খারাপ হওয়ার পিছনে তার বাবা মা দায়ী৷ আদিবা এবার হেসে বলল,
– আমারও একই অবস্থা জানেন। নিত্য নতুন পুরুষদের কাছে যেতে আমার ভালো লাগে। নতুন নতুন পুরুষ আহ্ ভাবলেও মনটা খুশিতে ভরে যায়৷ আদিবার এমন কথায় আবিরের মাথায় রক্ত গরম হয়ে যায়৷ অগ্নিদৃষ্টিতে আদিবার দিকে তাকিয়ে ঠাসসস করে দুগালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
– তোকে মাত্র কি বলেছিলাম ভুলে গেছিস? রক্ত গরম হয়ে গেছে আমার।
আবিরের থাপ্পড় খেয়ে আদিবা দেয়ালের সাথে পরলে সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে পড়ল। আবির তড়িঘড়ি করে করে আদিবাকে ধরল। মাথাটা ফেটে রক্ত বের হয়েছে। আবির তো ভয়ে শেষ। তাড়াতাড়ি কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ভয়ে আৎকে উঠল৷ কি করবে বুঝতে পারছে না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে হৃদয়ের নাম্বারে কল দিল। হৃদয় কলটা রিসিভ করে হ্যালো বললে আবির সব খুলে বলল।
– আরে আবির তুই এখনো ওখানে বসে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যা। পুলিশ আসলে একদম বিন্দবনে পাঠিয়ে দিবে মার্ডার কেসের আসামী করে। মেয়েটি কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কিছু জানিস?
– মরেনি এখনো বেঁচে আছে।
– তাইলে পালা ওখান থেকে সকালে বাসায় আছিস বলে কলটা কেটে দিল হৃদয়৷
আবির তো পুরোই চিন্তায় পরে গেল। কি করবে আদিবার কাছে থাকবে নাকি হৃদয়ের কথামত পালাবে।
চলবে………