Dangerous husband,পর্বঃ_৫

0
3022

Dangerous husband,পর্বঃ_৫
লেখকঃ_নুসরাত_জাহান

আবির আদিবাকে রেখে বিছানা দিয়ে নেমে দরজার দিকে মুখ ঘুরালো। বিছানা দিয়ে নামার জন্য ডান পা বাড়িয়ে আবার আদিবার মুখটার দিকে তাকাল। আদিবার মুখটা বড্ড মায়াবী। খুব ইচ্ছা করছে আদিবার পাশে থাকতে কিন্তু পরিস্থিতি তো স্বাভাবিকভাবে নেই৷ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। দরজার পাশে গিয়ে খানিকক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন কর৷ যতবারই প্রশ্ন করল বিবেক তাকে এটাই বলে সান্ত্বনা দিল যে এই মূহুর্তে আদিবাকে ছেড়ে যাওয়াটা তার বোকামি হবে তাছাড়া মেয়েটা তো একদিন হলেও তার কামনা পূরণ করেছেন৷ ভয়ে বুকটা আৎকে উঠল যদি হৃদয়ের কথা সত্যি হয় যে আদিবা মরে গেছে তাইলে তো শ্বশুড়বাড়ি যেতে হবে। কি করবে ভেবে অস্থির আবির। মাথা বেয়ে ঘাম তরতর করে পড়ছে। বুকটা ধকধক করছে। অনেকক্ষণ স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে না না পালিয়ে যাওয়াটা কাপুরুষের লক্ষণ যেটা আমার দ্বারা সম্ভব না। যা হওয়ার হবে আমি আদিবাকে যেভাবেই হোক মেনেজ করে নিব। উল্টো দিকে ফিরে বিছানার কাছে গেল। আদিবার এখনও জ্ঞান ফিরে আসেনি। পাশে বসে হাত ধরল, কানের কাছে কান পেতে শুনল শ্বাস করছে কিনা! নাহ্ বেঁচে আছে। শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। যাক পুলিশের ভয়টা মাথা থেকে বেরিয়ে যায় এবার। অনেক সাহস পায় আবির। গোঙানির আওয়াজ আসছিল আবিরের কানের কাছে। বুঝতে পারছে না কোথা থেকে আসছে। হঠাৎ তার চোখ পড়ল পাশে ঘুমন্ত আদিবার দিকে। আদিবা ঘুমের ঘোরেই গোঙাচ্ছে। আবির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ৪.৪৫ বাজে একটুপরেই ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসবে।
কথাটা ভাবার সাথেসাথে আজান দিয়ে দিল। আবিরের চোখে ঘুমের লাই চলে এসেছে। বিছানায় ক্লান্ত শরীরটা একটু শান্তিতে ঘুমাতে চায়। চোখ বন্ধ করে আবারও লাফিয়ে উঠল। আদিবাকে এভাবে রেখে ঘুমানোটা ঠিক হবে না। আদিবার জ্ঞান আসার অপেক্ষার প্রহর গুনতে আবির।

সকাল আটটায় আবির বিছানার পাশে আধা শোয়া অবস্থায় ঘুমে বিভোর। হঠাৎ ফোনের ভাইব্রেটের আওয়াজে চোখ মেলে তাকাল। এতটাই ঘুম ছিল যে চোখ মেলে তাকানোর মত ক্ষমতা ছিল না। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলল আবির। একটু পরে আবারও ফোনের ভাইব্রেট বাজলে এবার চোখ খুলে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে ফোনটা ধরল।

– হ্যালো……
– হ্যালো আবির কোথায় তুই? আমি তো তোর খোঁজ করছিলাম। কোথায় এখন?
কথাগুলো ভালো করে না বুঝে বলল, হ্যালো আমার ভীষণ ঘুম পেয়েছে ঘুমাতে হবে।
কথাটা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গেল হৃদয়ের। ধমকের সুরে বলল,
– এই শালা হারামজাদা তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? তোকে আংকেল কি শুধু শুধু বকাঝকা করে। রাতে বললাম তুই হোটেল থেকে পালা কিন্তু পালালি না এখন কি করবি সকাল তো হয়ে গেছে। হৃদয়ের প্যানপ্যানানিতে আবিরের কান সজাগ হয়ে গেল। ঘুমের মধ্যেই লাফিয়ে উঠল আবির। মোবাইলটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে আদিবার দিকে তাকাল। এখনো আদিবা ঘুমন্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আবির হাঁটু ভাজ করে বসল। আদিবার কপালে হাত দিয়ে দেখল কপাল প্রচন্ড গরম। এরপর বুকের উপরে হাত দিল হাত সম্পূর্ণ গরম হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পুড়ে যাবে। কি করবে বুঝার আগেই দরজায় ঠকঠকানির আওয়াজ পড়ল। আবিরের মুখটা শুষ্ক হয়ে গেল। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। দ্বিতীয়বার দরজায় ঠকঠকানির শব্দে আদিবাকে রেখে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। দরজার কাছে হোটেলের ম্যানেজার দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বলল,

– স্যার সকাল থেকে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু আপনি কল রিসিভ না করার কারণে সম্ভব হয়নি। রাত তো পেরিয়ে সকাল হয়েছে এখন আপনি কি রুম ছেড়ে দিবেন? যদি না দিন বেলা ১২ টার পরে কিন্তু আরও একদিনের ভাড়া পেমেন্ট করতে হবে।

আবির ম্যানেজারের কথায় কিছুটা বিরক্তবোধ করল। তারপর রাগান্বিত হয়ে গম্ভির গলায় বলল,
– আপনি টাকা নিয়ে চিন্তা করবন না আপনার যত টাকা বিল হোক না কেন সবগুলো পরিশোধ করব।
– ধন্যবাদ স্যার৷

ম্যানেজার চলে গেলে রুমে ঢুকল আবির৷ আদিবার পাশে গিয়ে বসল কিছুক্ষণ। গায়ে প্রচুর জ্বর সেটা দেখে বেশি ভয় পাচ্ছে আবির৷ হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে ডাক্তারকে কল করল। কলটা রিসিভ করলে আবির বলল,

– আংকেল আপনি কোথায় আছেন?
– বাবা আমি তো চেম্বারের মাত্র আসলাম। কোন কাজ আছে কি?
– জি আংকেল আমার একটা এর্মাজেন্সি পেশেন্ট ছিল যদি সময় দিতেন তাইলে ভালো হতো।
– তুমি ঘণ্টা খানেক পরে আসো আমি তখন ফ্রি থাকব।
– আচ্ছা আমি সময়ের আগেই আসব।

কলটা রেখে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট মুখে তুলে লাইটার জালিয়ে ধোঁয়া উড়াল আকাশের পানে৷ জীবনে এই প্রথম কষ্ট পাচ্ছে কোন মেয়ের জন্য৷ বাবা মাকেও হয়তোবা এতটা ভালোবাসেনি কখনও অথচ আজ কোন মেয়ের জন্য এমনটা হচ্ছে ভাবতেই অবাক হচ্ছে আবির৷
সিগারেট খেতে খেতে এসব ভাবছে আবির৷ একের পর এক সিগারেট শেষ করে ফ্লোরে ফেলছে ফিল্টারগুলো৷ সিগারেটের ধোঁয়ায় পুরো পুরো রুম অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।

আচমকাই বমির শব্দে পিছনে ফিরে তাকায় আবির৷ ওয়াশরুমে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াক ওয়াক করে বমি করছে আদিবা৷ আবির সিগারেটটা ফেলে দিয়ে দৌড়ে আদিবার কাছে গেল। পিঠে মালিশ করছে আবির৷ আদিবা কি হয়েছে বমি করছ কেন খিদে পেয়েছে নাকি!
আদিবা কোন উত্তর দিচ্ছে না অঢের বমি করেই যাচ্ছে৷ বমি করতে করতে গলার ভিতর থেকে রক্ত বেরিয়ে আসছে। আবিরের বুক ধুক করে উঠল। পানি পানি বলে খুব ধীর গলায় বলল আদিবা৷ আবির বসা ছেড়ে উঠে জগ দিয়ে পানি মগে ঢালল৷ আদিবার সামনে ধরলে পানিটা ঢকঢক করে খেয়ে নিল৷ চোখমুখ লাল হয়ে আছে।
আবির আবারও জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে তোমার? হঠাৎ করে বমি করছ কেন?
আদিবা কোন উত্তর দিচ্ছে না শুধু পেট চেপে ধরে রেখেছে। কষ্টে কলিজা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। আবির এবার এক মিনিটও সময় নিল না৷ আদিবাকে কোলে তুলে নিল। হোটেল থেকে বেড়িয়ে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। মিনিট দশেক এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে আদিবাকে কোলে নিয়ে কিন্তু গাড়ির দেখা পেল না। সামনে একটা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে সেটা দেখতে পেয়ে ডাক দিল। ডাক্তারের চেম্বারের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তার আংকেলের জন্য৷ তিনি বুঝতে পেরে আবিরকে ডাক দিল। আদিবাকে নিয়ে রুমে ঢুকতেই ডাক্তার পেশেন্টের অবস্থা দেখে এবং শুনে কয়েকটা টেস্ট করাতে দিল। আবির আদিবাকে নিয়ে টেস্ট করিয়ে রিপোর্টের জন্য ওয়েট করছে। দু’ঘন্টা পরে রিপোর্ট ডাক্তারের হাতে গেলে ডাক্তার আবিরকে একা ডাকল৷ ডাক্তারের কথা শুনে আবির তো পুরোপুরি শকড হয়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ডাক্তারকে বলছে আংকেল আপনি কি সত্যি বলছেন নাকি মিথ্যা? আদৌ কি এটা সম্ভব? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।

চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here