Dangerous-husband,পর্বঃ_৮
লেখকঃ_নুসরাত_জাহান
আবির আদিবার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকল। অনেকক্ষণ পরে বলল,
– এই মেয়ে তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি বলছ না যেন? আচ্ছা আমি কি বলছি শুনতে পাচ্ছ নাকি?
আবিরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বিছানা দিয়ে নামার জন্য পা বাড়তে নিলে আবির বলল,
– একি নামছ কোথায়?
-“………”
– কি হল? কিছু তো বল?
– “……..”
– আশ্চর্য! তোমাকে এত করে বলছি তবুও উত্তর দিচ্ছ না। বুঝলাম ভাব বেড়েছে তাই না? আসলে মানুষ এমনি হয় কাউকে যদি মনের কথাটা বলা হয় তাইলে সে তার দূর্বলতা খুঁজে পায়। এবং নিজেকে বিশাল কিছু ভাবে। তবে আদিবা তুমি আমাকে চিনতে পারনি। হতে পারে দু’দিনের পরিচয় কিন্তু……
আড়চোখে আবিরের দিকে তাকায় আদিবা। কিছু বলার জন্য মুখটা খুলবে তখনি আবির গম্ভির গলায় বলল,
রিল্যাক্স আদিবা৷ স্যরি বলতে হবে না এমনিতেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আসলে জানো কি আমি এএএএএএএ……আদিবা এক ধমক দেওয়াতে আবিরের কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল। ঠোঁটটা বাঁকা করে ভ্রু কুঁচকে আদিবার দিকে তাকাল। রাগান্বিত গলায় আদিবা আবিরকে বলল,
– আপনার সমস্যা কি বলুন তো? শরীরে কি মানুষের রক্ত আছে? দেখছেন আমি অসুস্থ তবুও বকবক করে বলেই যাচ্ছেন। শুনুন সবকিছুর একটা লিমিট আছে। দেখছেন শরীরটা ভালো না তবুও এমন করছেন? আসলে আপনি ও একটা ডেঞ্জারাস মানুষ। যেমনি আমার ডেঞ্জারাস হাসবেন্ড ছিল।
আদিবার কথা শুনে আবির তো পুরো স্তব্দ হয়ে যায়। কথা বলার মত কোন ভাষা খুঁজে না পেয়ে বাঁকা হাসি দিল।
মুখটা ভেংচি কেটে বিছানা দিয়ে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকল আদিবা৷
একটুপরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে টাওয়ালটা খুঁজে না পেয়ে বেলকনিতে গেল। কিন্তু সেখানেও নেই। সমস্ত রুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও না পেয়ে বাধ্য হয়ে আবিরের কাছে গেল। টাওয়ালের কথা জিজ্ঞেস করতেই তেলে বেগুনের ন্যায় জ্বলে উঠল আবির। আমার কাছে জিজ্ঞেস করছ কেন? আমি তো ডেঞ্জারাস লোক সো আমার থেকে একশো হাত দূরে থাকো। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
গ্যারাকলে আটকে গিয়ে আদিবা পুরো দমে হাবুডুবু খাচ্ছে। সবদিক দিয়ে নিজেকে একা লাগছে এবার। মজা করার ফলাফল হাতে নাতে টের পেল আদিবা৷
অনুনয়ের সুরে বলল,
– প্লিজ বলুন না টাওয়ালটা কোথায়? ভিজা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকলে ঠাণ্ডা লাগবে।
– ড্রায়ারের ভিতরে দেখ গিয়ে।
– হুম।
মুখ মুছে বিছানার উপরে বসল।
মাগরিবের আজান দিলে আবির অজু করে নামাজ পড়তে গেল। আদিবাও নামাজ পড়ে জানালার পাশে হেলান দিয়ে বাহিরের দিকে তাকাল। আকাশ বেশ পরিষ্কার এখনো। সন্ধ্যার রক্তিম আভা কাটেনি এখনো। বাহিরে বাতাস বইছে। মনে হচ্ছে রাতে বৃষ্টি হবে। কিছুক্ষণের ভিতরে আকাশ পুরো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। আবির নামাজ পড়ে এসে দরজার খুলে রুমে ঢুকেই আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে আবিরের দিকে তাকাল। টুপি পড়াতে আবিরকে বেশ পবিত্র লাগছে। মনে হচ্ছে আলেমদার ছেলে।
আবির আদিবার হাতে মিষ্ট আর ঠোঙা ধরিয়ে দিয়ে বলল, যাও মিষ্টি আর নিমকি এনেছি পরিবেশন কর। মিষ্টিগুলো গরম। সবেমাত্র চুলো থেকে নামিয়েছে।
– ওহ্।
আদিবা প্যাকেটটা হাতে নিতে গরম অনুভব করল। গরম ভিজা মিষ্টি আদিবার ভীষণ পছন্দ।
প্যাকেটটা নিয়ে ডাইনিং রুমে টেবিলের উপরে রেখে বাটি খুঁজতে লাগল। কোথাও বাটি না পেয়ে আবিরকে ডাকার জন্য পিছনে ঘুরতেই দেখে আবির তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
চোখ বড় করে আবিরকে দেখে বলল,
– আপনি আমার পিছনে আসলেন কিভাবে?
– বাহ্ রে আমি তোমার পিছনে কোথায় আসলাম। আমি তো মিষ্টির পিছনে পিছনে এসেছি৷
– ঠোঁট বাকিয়ে সামনে ফিরে প্যাকেট খুলে মিষ্টি বের করল। আবির বাটি হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে এসে বলল,
– নাও এটায় ঢেলে খাও।
মিষ্টি খাওয়া শেষ হলে বাটি ধুয়ে জায়গা মতো রেখে ড্রইং রুমে সোফার উপরে বসল আদিবা। মায়ের কথা খুব করে মনে পড়ছে তার৷ ইচ্ছা করছে কথা বলতে। টিভির রিমোট নাড়াচাড়া করছে কিন্তু টিভি ছাড়তেছে না। মনটা উথাল-পাতাল করছে। ভালো লাগছে না কোন কিছু।
আবিরের হঠাৎ মনে পড়ছে আদিবা তো টাকা চেয়েছিল কিন্তু এখনোও তো দেওয়া হয়নি৷
ধীরগতিতে এগিয়ে এসে সোফার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়ল আবির।
– আদিবা।
– হুম।
– তোমার মায়ের জন্য টাকা নিবে না? তুমি কি ক্যাশ টাকা নিবে নাকি তোমার বাবার একাউন্টে পাঠিয়ে দিব।
– বাবার একাউন্টে পাঠিয়ে দিলেই ভালো হয়। ক্যাশ টাকা নিলে তো আমার যেতে হবে যেটা আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না৷
– হুম। ঠিকাছে একাউন্ট নাম্বার দিও কালকে ব্যাংক বন্ধ তাই পরেরদিন রবিবার পাঠাতে হবে।
– ঠিকাছে।
– আদিবা রাতে বাহিরে খাব।
– আবার বাহিরে?
– ইনভাইট আছে৷
– কিসের?
– বন্ধুর জন্মদিন।
– তাই!
– হ্যাঁ। কিছুক্ষণ আগেই মনে পড়ছে শুক্রবার সন্ধ্যার পরে দাওয়াত আছে।
– ওহ্।
আবিরের ফোন বাজতে লাগল। আবির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল বাবার নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। আবির ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। অনেকক্ষণ কথা বলার পরে উচ্চস্বরে তর্ক বিতর্ক করে করতে লাগল আবির৷ পুরো রুম চিল্লানীর শব্দে ভরে গেল। আদিবা টিকতে না পেরে বসা ছেড়ে উঠে বেলকনিতে গেল।
– কি ব্যাপার এত জোড়ে জোড়ে কার সাথে ঝগড়া করছেন? কান চেপে ধরেও বসা যাচ্ছে না। আরেকবার যদি চিল্লাচিল্লি করেন তাইলে বাসা দিয়ে নামিয়ে দিব।
আবির ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে লাইনে আছে তার বাবা। জিহ্বায় কামড় দিয়ে তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দিল আবির।
আদিবা ভ্রু কুঁচকে আবিরের দিকে তাকিয়ে সোজা বেড রুমে ঢুকল।
আবিরও পিছুপিছু ঢুকল। ফোনটা হাতে নিয়ে টেবিলের পাশে রেখে আদিবাকে বলল,
– ওভাবে হনহনিয়ে চলে এলে যে? কি হয়েছে?
– না কি হবে?
– তাইলে?
– এমনি৷
– জানো বাবা লাইনে ছিল তুমি যা বললে সবটাই শুনেছে। তোমাকে মানা করার আগেই তুমি সব গড়গড় করে বলে দিলে। আসলেই মেয়েদের কথা কখনও পেটে থাকে না শুধু একবার শুনতে পারে তাইলেই হল।
– আর কিছু!
– নাহ্।
– হুম।
– আংকেল কি বলল?
– যা বলার বলেছে৷
– বলা যায় না?
– না।
– হুম।
চলবে………..