Death line,Part: 01

0
6314

Death line,Part: 01
Writer: Abir Khan

ক্লাসের শেষ প্রান্তের সিটে একটা নতুন ছেলে বসে আছে। সে বাইরে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে যেন এখানেই নেই। হয়তো দূরে কোথাও ভিন্ন জগতের ভাবনাতে ডুবে আছে। ছেলেটার চোখ এবং মুখ একদম শান্ত। তাকে দেখলে কেউ বলতে পারবে না আসলে সে কি ভাবছে কিংবা সে কি ফিল করছে। এরকম অদ্ভুত একটা ছেলে তিশার ক্লাসে পড়েছে। ওর বান্ধবীরা ওকে বলছে,

~ দেখ কেমন একটা ছেলে, যেখানে সবার সাথে সে পরিচিত হবে আর সেখানে সে রাজার মতো ভাব নিয়ে একা বসে আছে। মানে এটা কোন কথা? (রিনা)

তিশা এতক্ষণ আড় চোখে ছেলেটার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ও নজর সরিয়ে বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে রসিকতা করে বলে,

~ দোস্ত আমার কি মনে হয় জানিস, ছেলেটা ছ্যাকা খেয়েছে। তাই দুঃখ বিলাস করছে। হাহা৷
~ হাহা। একদম ঠিক বলেছিস। তুই ই ধরতে পেরেছিস। আহরে বেচারা ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গিয়েছে। (সবাই হেসে দেয়)

তিশা আর ওর বান্ধবীরা নতুন ভর্তি হওয়া অদ্ভুত ছেলেটাকে নিয়ে মজা করছে। শুধু ওরা না অনেকেই। ওরা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার একমাস পর আজ এই নতুন ছেলেটা ওদের ক্লাসে ভর্তি হয়ে এসেছে। স্যার যখন ছেলেটাকে বলল, তোমার পরিচয় দেও। ছেলেটা শুধু বলল,

– আমার নাম, আবির। সবার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো।

শেষ! আর কিছুই সে বলে নি। পুরো ক্লাস হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল। আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে স্যার যে পালটা কোন প্রশ্ন করবে কেন জানি ওর চাহনি দেখে সে তাও পারে নি। কারণ এমন শান্ত নিষ্প্রাণ মুখ সে আগে দেখে নি। যেন কত রহস্য লুকিয়ে আছে আবিরের মধ্যে। আবির এখনো বাইরে তাকিয়ে আছে৷ হঠাৎই,

– হাই আমি নিলয়। ক্লাস ক্যাপ্টেন। আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?

আবিরের সামনে এসে নিলয় কথাটা বলল। ও বাইরে তাকিয়েই উত্তর দিল,

– না।

নিলয় হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আশেপাশে ছেলে মেয়েগুলোও অবাক হয়ে যায়৷ নিলয় কোন ভাবে নিজেকে সামলে হাসি দিয়ে বলে,

– হাহা৷ মজা করছো নিশ্চয়ই?

আবির আস্তে করে নিলয়ের দিকে তাকায়। নিলয় আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে। কিন্তু আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে না ও কোন মজা করছে। বরং নিলয়ের কেমন জানি লাগছে। ও বলে উঠে,

– ওহ! তাহলে মজা করছো না। আচ্ছা ঠিক আছে।

বলেই নিলয় চলে যায়৷ আবির আবার বাইরে তাকিয়ে থাকে। পুরো বিষয়টা তিশা দূর থেকে খেয়াল করে। এরপর টিফিন পিরিয়ড শেষ হলে যথারীতি আবার ক্লাস শুরু হয়। সবাই মন দিয়ে ক্লাস করতে থাকে। কিন্তু তিশা বারবার আড় চোখে আবিরের দিকে তাকাচ্ছিল। ওর মনে আবিরকে নিয়ে অজানা এক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। আবির সেই শান্ত মলিন মুখ নিয়ে এক দৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। একটি বারও অন্য কোন দিকে তাকায় নি। যেন মানুষের বেশে কোন রোবট বসে আছে। দুপুর দুইটায় ক্লাস শেষ হয়৷ ক্লাস থেকে একে একে সবাই বের হয়ে যায়৷ কিন্তু আবির একা ওর সিটে বসে থাকে আর সেই আগের মতো বাইরে তাকিয়ে থাকে। তিশার বান্ধবীরা তিশাকে বলে,

~ কিরে যাবি না?
~ তোরা বাইরে দাঁড়া আমি একটু পর আসছি।
~ আচ্ছা। (সবাই)

এখন ক্লাসে শুধু আবির আর তিশা। তিশা ওর ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে আস্তে আস্তে আবিরের কাছে যায়৷ আবির এখনো বাইরেই তাকিয়ে আছে। তিশা আবিরের কাছে এসে দাঁড়ায়। ও ভাবছে কি বলে কথা শুরু করবে৷ তিশা অনেক ভেবে বলে,

~ বাসায় যাবে না?

আবির মাথা ঘুরিয়ে তিশার দিকে তাকায়। মানে ওর চোখের দিকে আর কি। তিশাও আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজন দুজনের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেউ কোন কথা বলছে না। আবির তিশাকে উত্তরও দিচ্ছে না৷ আবিরের কেমন জানি অদ্ভুত তাকানিতে তিশার এখন অস্বস্তি লাগছে। তাও ও নিজেকে সামলে বলে,

~ এভাবে সবাইকে ইগনোর করে চললে সামনে অনেক সমস্যা হবে৷ বন্ধু ছাড়া কখনোই ভার্সিটি জীবন মজায় হয় না। আশা করি তুমিও নতুন বন্ধু বানাবে৷ (একটা অসম্ভব সুন্দর মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল)

আবির কিছুক্ষণ তিশার দিকে তাকিয়ে ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তিশা ওর সামনে দিয়ে সরে সাইড দেয়৷ যাতে আবির বের হতে পারে। তিশা মনে মনে খুব খুশী হয় কারণ আবির ওর কথা শুনেছে। ও মুচকি হাসছিল। তিশা যখন খুশী ছিল তখন আবির ওর সামনে থেকে বের হয়ে আবার দাঁড়িয়ে যায়। এবং এমন একটা কিছু করে যা তিশা স্বপ্নেও ভাবে নি। আবির তিশার দিকে ঘুরে ওর কাছে এসে ওর ডান গালে একটা চুমু দিয়ে চলে যায়। তিশা মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এত বড়ো একটা ব্যাপার হয়ে গেল! তিশা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও রিয়েক্ট করার আগেই আবির ক্লাস ত্যাগ করে৷ তিশা বাকরুদ্ধ হয়ে ক্লাসের বাইরে আসে। ও রীতিমতো ভীষণ অবাক হয়ে আছে৷ যে ছেলে কাউকে পাত্তা দিল না, কারো সাথে ঠিক মতো কথা বলল না, সে কথা নাই বার্তা নাই ডিরেক্ট চুম! তিশা এভাবে বাইরে এলে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নাতাশা জিজ্ঞেস করে,

~ কিরে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন কি হয়েছে?

তিশা নাতাশার দিকে তাকিয়ে দ্রুত গাল থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। আর বলে,

~ না কিছু না৷ চল বাসায় যাবো।
~ কিছু তো একটা হয়েছে।
~ বলছি তো কিছু না৷ চল তো।
~ আচ্ছা আচ্ছা।

তিশা আর নাতাশা ভার্সিটির বাইরে এসে একটা রিকশায় উঠে। রিকশা চলতে শুধু করে একটু সামনে যেতেই তিশা দেখে আবির কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হলো ও যেন তিশার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে। তিশা শুধু আবিরের দিকে তাকিয়ে ছিল। তিশার মনে হলো আবিরের চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে। ও মনে মনে ঠিক করে আবিরকে কাল সায়েস্তা করবে৷ কেন এমন একটা কাজ ও করলো? এই ভেবে নিজেকে কিছুটা স্বান্ত্বনা দিয়ে ও বাসায় যায়৷

তিশার বাসায়,

~ এসেছিস মা। আয় আয়। (তিশার মা)
~ আজ যা গরম পড়েছে না। যাই আগে সাওয়ার নিয়ে আসি৷
~ ঠিক আছে যা। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
~ ওকে…মা তন্নি কোথায়?
~ ওতো ছাদে। কাপড় আনতে গিয়েছে।
~ ওহ! আচ্ছা৷

তিশা মাকে বিদায় দিয়ে ওর রুমে এসে কাঁধ থেকে ব্যাগটা রেখে বিছানায় বসে। ওর সামনেই আয়না৷ তিশা নিজেকে দেখছে৷ ডান গালটায় বারবার চোখ যাচ্ছে। ও আলতো করে গালটা ছুঁয়ে দেয়৷ আর সাথে সাথে আবিরের কথা মনে পড়ে যায়৷ লজ্জায় পুরো মুখখানা লাল বর্ণ ধারণ করে ওর। তিশা মনে মনে বলে,

~ ছেলেটা এত অদ্ভুত কেন? সে আজ প্রথম এসে এরকম একটা কাজ করলো? নাহ! এর একটা বিহিত করতেই হবে৷ দুষ্ট পঁচা একটা ছেলে।

আবিরকে বকাবকি করে তিশা সাওয়ার নিতে চলে যায়।

তিশা ওর পরিবারের বড়ো মেয়ে। ওর একটা ছোট বোন আছে। নাম, তন্নি। সে কলেজে পড়ে। তিশার মা গৃহিণী আর বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী। তাই বঅলা যায় ওদের পরিবারটা মধ্যবিত্তই। তবে ওরা অনেক সুখী। তিশা দেখতে আহামরি সুন্দর না হলেও মোটামুটি। শ্যামলা গায়ের রঙ। তবে ওর চোখেমুখে আলাদা একটা মায়া আছে। যেটা সবাইকে ওর দিকে আকৃষ্ট করে৷ ও বেশ মিশুক স্বভাবের। তাই বান্ধবীরা ওকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না৷ সবাইকে মাতিয়ে রাখে ও একাই। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, তিশা পড়াশোনায় অনেক ভালো।

অন্যদিকে,
– এটা কি ঠিক হলো আবির? তুই জানিস এটা ঠিক না। তারপরও কেন?
– আই নিড সাম ফান৷ আই নিড ইট।
– আমাদের জন্য কোন ফান নেই আবির। ভুল করছিস।
– ভুল? সেটা আবির কখনো করে না৷ (অট্টো হাসি দিয়ে বলল)

আবিরের হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে। ও হাসতে হাসতে হাতে লেগে থাকা তাজা রক্তের দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে..?

অনেকেই গল্প পড়ে চলে যান। লাইক, কমেন্ট করেন না। এত কষ্ট করে লিখা আপনাদের জন্যই। আপনারা যদি লেখক/লেখিকাদের সাপোর্ট না করেন তাহলে তারা কিভাবে লেখার জন্য অনুপ্রেরণা পাবে? তাই আশা করছি সবার ভালো সাড়া পাবো। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here