Death line,Part: 02
Writer: Abir Khan
আবির ওর হাতে লেগে থাকা তাজা রক্তগুলো ধুয়ে ফেলে। তারপর হাত মুছে ওর রুমের জানালার সামনে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। পূর্ণিমার চাঁদের আলো ওর রুমের জানালা ভেদ করে ওর গায়ের উপর এসে পড়ছে। আবির শুধু এক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।
পরদিন সকালে,
~ আপু এই আপু উঠো…(তন্নি)
~ আরেকটু ঘুমাতে দে।( তিশা)
~ ঘড়ি দেখেছো? সকাল ৯ টা বাজে। ভার্সিটি যাবা না? তাড়াতাড়ি উঠো।
~ কিহ! আগে বলবি না। ( তিশা লাফ দিয়ে উঠে ঘড়ির দিকে তাকায়)
~ সেই কখন থেকে ডাকছি, তুমি তো উঠোই না। এরকম তো আগে কখনো হয় নি। কি হয়েছে তোমার?
~ আমিও বুঝতে পারছি না৷ (তিশা চিন্তা করছে)
~ আচ্ছা বাদ দেও। এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হও। একসাথে বের হবো।
~ আচ্ছা আচ্ছা।
তিশা দ্রুত ফ্রেশ হতে চলে যায়। তন্নি নিচে ওর মায়ের কাছে যায়। তন্নিকে দেখে ওদের মা বলেন,
~ কিরে তিশা উঠেছে?
~ হুম, ফ্রেশ হয়ে আসছে।
~ আচ্ছা। নে তোরা নাস্তা করতে বস।
~ আপু আসুক।
~ আচ্ছা।
তিশা ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য একদম রেডি হয়ে যায়। ও আজ মিষ্টি কালারের একটা ড্রেস পরেছে। বেশ মানিয়েছে ওকে। তিশা সোজা রান্নাঘরে মায়ের কাছে এসে বলে,
~ মা আমি বের হই।
~ আরে নাস্তা করবি না? তন্নি তোর জন্য অপেক্ষা করছে৷
~ উফফ! আচ্ছা দেও। এই তন্নি…
দুই বোন নাস্তা করে একসাথে বেরিয়ে পড়ে। তন্নি ওর কলেজের দিকে চলে যায় আর তিশা রিকশা নিয়ে ভার্সিটির দিকে যাচ্ছে। আধা ঘণ্টা পর ও ভার্সিটির সামনে চলে আসে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ঘুরতেই তিশা থমকে যায়। আবির দাঁড়িয়ে আছে এবং ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। তবে ওর তাকানিটা এমন যে কিছুই বুঝা যায় না। স্বাভাবিক মানুষ কেউ তাকালে বলা যায় যে, সে খুশি হয়ে তাকিয়ে আছে কিংবা দুঃখী কিংবা রাগী ভাবে৷ কিন্তু আবিরের ক্ষেত্রে পুরোটাই ভিন্ন। তিশা কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে একটা বিষয় না বললেই নয়, আবির দেখতে কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম। ফরসা গায়ের রঙ, সিল্কি চুল, বলিষ্ঠ দেহ। বেশ ভালোই লাগে ওকে দেখতে৷ আবির আজ কালো টিশার্টের উপর দিয়ে কালো ফুল হাতার শার্ট পরেছে। আর কালো জিন্স প্যান্ট। হাতে একটা ব্রেসলেট। এরকম ব্রেসলেট তিশা আগে দেখেনি৷ আবিরকে দেখে তিশার গতকালের কথা মনে পড়ে যায়৷ ও সাথে সাথে গালে হাত দেয়। আর রাগী ভাব নিয়ে আবিরের কাছে আসে। তিশা আবিরের কাছে আসতেই আবির হাঁটা শুরু করে। তিশাও ওর পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে বলে,
~ গতকাল এমন একটা কাজ করেছো কেন?
-……
~ কি হলো উত্তর দেও।
– এমনি।
~ কিহ! এমনি? এমনি কেউ কারো সাথে এমন করে?
– অাজ অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।
~ এহ! এটা আমার প্রশ্নের উত্তর না৷
– তোমার সবচেয়ে সুন্দর পার্ট কি জানো? তোমার চোখ আর..
~ আর কি?
আবির দাঁড়িয়ে তিশার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোমার গোলাপি ঠোঁটটা।
তিশা সাথে সাথে ওর ঠোঁটটা হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে৷ আবির আবার হাঁটা শুরু করে। তিশা কি করবে, কি বলবে বুঝতে পারছে না। আবিরের সাথে কেন জানি ও পেরে উঠতে পারছে না। তিশা দাঁড়িয়ে আছে দেখে আবির আবার পিছনে এসে বলে,
– ক্লাসে চলো।
~ তুমি অনেক অদ্ভুত! এমন কেন তুমি?
– আমার পাশে বসবে তুমি।
~ মানে? কেন?
– আমি বলেছি তাই।
~ যদি না বসি?
আবির তিশার অারো কাছে এসে আস্তে করে বলে,
– গতকাল গালে দিয়েছিলাম। আমার পাশে না বসলে আজ সবার সামনে ঠোঁটে দিব৷
আবিরের কথা শুনে তিশার চোখগুলো মুহূর্তেই বড়ো বড়ো হয়ে যায়। ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। আবিরের এভাবে চাহনি দেখে তিশার ভয় আরো বেড়ে যাচ্ছে। ও দ্রুত স্বরে বলে,
~ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে৷
– হুম এবার ক্লাসে চলো।
আবির হাঁটা নিলে তিশাও ওর পিছু পিছু আসে। আবির আড়ালে একটা ছোট্ট মুচকি হাসি দেয়৷ যেটা কেউ দেখে নি। ওরা ক্লাসে ঢুকে আবির সেই গতকালের মতো সবার পিছনে সিটে গিয়ে বসে। তিশাও বাধ্য মেয়ের মতো আবিরের পাশে গিয়ে বসে। পুরো ক্লাস হা করে তাকিয়ে আছে। এমনিতেই আবির দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম। তার উপর তিশা গিয়ে আবিরের পাশে বসেছে। পুরো ক্লাস হা করে তাকিয়ে আছে। তিশার বেস্ট ফ্রেন্ড আর ওর অন্য ফ্রেন্ডরা তিশা আর আবিরের কাছে আসে। নাতাশা আবিরের দিকে একবার তাকিয়ে তিশাকে বলে,
~ কিরে তুই আমাদের রেখে এখানে এসে বসলি যে?
~ না মানে দোস্ত হয়েছে কি, ও তো নতুন। তাই ওকে একটু পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্য এখানে বসেছি।
~ ওহ! তা আমাদের পরিচয় করিয়ে দে।
– দরকার নেই। (অন্যদিকে ফিরে তাকিয়েই বলল আবির)
তিশাসহ ওর সব বান্ধবীরা মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায়৷ আশেপাশে যেসব স্টুডেন্টরাও ছিল তারাও অবাক। নাতাশা রাগী ভাব নিয়ে বলে,
~ তিশা আমরা আমাদের সিটে গেলাম। আমাদেরও কোন ইচ্ছা নাই ওর সাথে বন্ধুত্ব করার। এই চল।
তিশার বান্ধবীরা চলে যায়। তিশা রাগ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তুমি এমন করলে কেন?
আবির আস্তে করে টেবিলের উপর হাত দুটো রেখে তার উপর মাথা রেখে তিশার দিকে তাকিয়ে বলে,
– তুমি থাকতে আমার অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা নাই৷
তিশা আবিরের দিকে আর আবির তিশার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তিশা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আবিরের উপর কেন জানি রাগও করতে পারছে না। তিশা মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। একটু পরেই স্যার চলে আসে। স্যার ক্লাস নিচ্ছে। তিশা আড় চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখে আবির ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ও ভ্রুকুচকে আবিরের দিকে তাকায়। আবির তাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তিশা রাগী ভাব নিয়ে আস্তে করে আবিরকে বলে,
~ আমার দিকে না তাকিয়ে স্যারের দিকে তাকাও। নাহলে স্যার বকা দিবে।
আবির তিশার কথা মতো সামনে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকে। তিশা কিছুক্ষণ পর পর আবিরের দিকে তাকাচ্ছে৷ আবির সেই আগের মতো স্যারের দিকেই তাকিয়ে আছে। তিশা শান্তির নিঃশ্বাস নিলেও ওর এখন কেমন জানি লাগছে৷ আবির একবারও ওর দিকে তাকাচ্ছে না৷ তিশা অজান্তেই যে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে তা ওর খেয়াল নেই৷ হঠাৎই,
– তিশা তুমি আবিরের দিকে তাকিয়ে আছো কেন? পড়া কি ও শিখাচ্ছে না আমি?
ক্লাসের সবাই হেসে দেয়। তিশা ভীষণ লজ্জা পায়। ও স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকে এবার। আবির এতকিছুর পরও ওর দিকে তাকায় নি। তিশার এবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে৷ ও মনে মনে বলে, আরে স্যারের দিকে তাকাতে বলছি বলে কি এভাবে তাকিয়েই থাকবে? একবার তো আমার দিকে তাকাতে পারে তাই না? বলেই তিশা আড় চোখে যেই আবিরের দিকে তাকায় দেখে আবিরও ওকে আড় চোখে দেখছে। তিশা সব ভুলে জোরে খুশিতে বলে উঠে,
~ হে হে এই যে তুমি আমার দিকে তাকিয়েছো। আমি জিতে গিয়ে….
ক্লাসের সবাই হতভম্ব হয়ে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে। তিশা লজ্জায় হেড ডাউন করে থাকে। তিশার মনে হচ্ছে আবির হাসছে। ও আর মাথায় উঠায় নি। এরপর টিফিন পিরিয়ড চলে আসে।
~ এই তিশা… তিশা…মাথা তুল…
তিশা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে নাতাশা আর ওর বান্ধবীরা দাঁড়িয়ে আছে। রিনা বলে,
~ চল ক্যানটিনে যাবি।
তিশা পাশে তাকিয়ে দেখে আবির বাইরে তাকিয়ে আছে। ও সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে,
~ আমাদের সাথে ক্যানটিনে যাবে?
আবির শুধু তিশার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ওকে দেখে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তিশা খুশী হয়ে বলে,
~ চল তাহলে।
নাতাশাকে তমা বলছে,
~ দোস্ত তিশা কেমন জানি হয়ে গিয়েছে। যে আবির আমাদের অপমান করলো তাকে ও আমাদের সাথে যেতে বলল? এটা কি ও ঠিক করলো?
~ শোন আবিরের জন্য আমাদের ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট হতে পারে না৷ চল যাই। দেখি এই আবিরটা কেমন।
~ আচ্ছা।
আবির তিশার পাশেই হাঁটছে। তিশা ওর বাকি বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে। ক্লাসের আর ভার্সিটির অন্য ছেলে মেয়েরা আবিরকে এতগুলো মেয়ের সাথে হাঁটতে দেখে হিংসা করছে। অনেকে অনেক কথা বলছে। তিশা কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে। কিন্তু যেই আবিরের দিকে তাকাচ্ছে আবিরও ওর দিকে তাকাচ্ছে। যেন কিছুই হয় নি৷ তিশা হেসে দিয়ে সব ভুলে যায়। তিশারা ক্যানটিনে ঢুকে তিশা বসা মাত্রই ওর বান্ধবীরা ওর সাথে বসার আগেই আবির ঠাস করে বসে পড়ে। তিশা ভীষণ অবাক হয়। আবির বসে কারো দিকে তাকায়ও না৷ ওর মুখটা এমন করে রাখা যেন ও কারো পরোয়া করে না। শুধুমাত্র তিশা ছাড়া। তিশার বান্ধবীরা রাগ করে তাকিয়ে আছে। তিশা ইশারায় সবাইকে সরি বলে। ওরা বান্ধবীরা আর কোন উপায় না পেয়ে তিশার সামনে বসে। আবিরের পাশে আর কেউ বসল না৷ তিশা সবার জন্য সিংগাড়া অর্ডার করে। এবার তিশা আবিরকে বলে,
~ নেও এবার আমার বান্ধবীদের সরি বলো সকালের জন্য।
আবির তিশার দিকে তাকায়। কিন্তু ও কিছু বলে না৷ তিশা আবার বলে,
~ কই কি বললাম আমি। ওদের সরি বলো।
~ থাক তিশা বাদ দে।
~ না কোন বাদ নাই। আমার বান্ধবীদের কষ্ট দিলে আমি কখনোই তা মানবো না। আবির তুমি সরি না বললে কিন্তু আমি আর কখনো তোমার সাথে কথা বলবো না৷
আবির তিশার দিক থেকে মুখ সরিয়ে ওর বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– সরি।
~ এহহহ!
সবাই অবাক হয়ে যায়। কেউ ভাবে নি আবির সরি বলবে৷ নাতাশা বলে,
~ আচ্ছা ইটস ওকে৷ আমি নাতাশা, ও রিনা আর ও তমা। আমরা সবাই তিশার অনেক ভালো ফ্রেন্ড। এখন থেকে তুমিও আমাদের ফ্রেন্ড।
– সরি আমি শুধু তিশার সাথেই থাকবো। কারণ ও শুধু আমার।
আবিরের হঠাৎ এ কথায় তিশাসহ ওর সব বান্ধবীরা স্তব্ধ হয়ে যায়। এদিকে তিশা…
চলবে…?
সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।