Death line,Part: 04
Writer: Abir Khan
আবির ওকে এভাবে ইগনোর করবে, তিশা সেটা কখনো ভাবে নি। তিশার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। ও মাথা নিচু করে সবার আড়ালে কাঁদছে। সবার? কেউ না দেখলেও আবির ঠিকই দেখেছে। প্রথম পিরিয়ড শেষ হলে তিশা চোখ মুছে আবার আবিরের কাছে আসে। আবির সেই আগের মতোই বাইরে তাকিয়ে আছে। তিশা ওর পাশে বসে আস্তে করে বলে,
~ আবির আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ। তুমি রাগ করে থেকো না। আমার ভালো লাগছে না৷ প্লিজ….
আবির তিশার দিকে তাকায়। তিশা আবিরকে দেখে সেই প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে যায়। নিষ্প্রাণ একটা মুখ। তিশার খুব ভয় করছে কেন জানি। ওর কেমন কেমন জানি লাগছে আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে। তিশা চোখ সরিয়ে বলে,
~ প্লিজ…
– সেদিন তোমাকে কেন আমার সাথে থাকতে বলেছিলাম জানো?
তিশা কৌতূহল নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ কেন?
– আমি ক’দিনের জন্য একটা কাজে যাবো বলে। কিন্তু তুমি…
তিশা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। ওর চোখ বেয়ে শুধু টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। ও বড়ো ভুল করে ফেলেছে। আশেপাশে অনেকেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই আবির ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তিশাও সাথে সাথে বেঞ্চ থেকে বের হয়ে আবিরকে বের হওয়ার সুযোগ করে দেয়৷ আবির বের হয়ে তিশার দিকে তাকায়। তিশা আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে ওর মনের কথা বুঝে যায়। ও সাথে সাথে ব্যাগ নিয়ে আবিরের পিছনে পিছনে যেতে থাকে। ক্লাসের সবাই ওদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে৷ নাতাশা ঠিক করেছে ও আর ওদের মাঝেই যাবে না। কারণ ও বুঝতে পেরেছে তিশাও আবিরের উপর অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ হয়তো ভালবেসে ফেলেছে।
আবির তিশাকে নিয়ে ভার্সিটির বাইরে চলে আসে। তিশা ওর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আবির হঠাৎই ওর হাতটা ধরে হাঁটা শুরু করে। তিশা খুব অবাক হয়। তবে ওর ভালো লাগছে। আবির ভার্সিটির পাশে গ্যারেজে গিয়ে তিশাকে দাঁড় করিয়ে ভিতরে গিয়ে ওর বাইকটা নিয়ে আসে৷ গাঢ় রেড কালারের স্পোর্টস বাইক। তিশা হা করে তাকিয়ে আছে৷ আবির বাইক নিয়ে তিশার কাছে এসে ওকে একটা হেলমেট পরিয়ে দিয়ে বাইকে উঠতে বলে। তিশাও বাধ্য মেয়ের মতো বাইকে উঠে বসে৷ আবির বাইক চালাতে শুরু করে। তিশা ভয়ে আবিরকে জড়িয়ে ধরে থাকে। আবির তিশাকে নিয়ে একটা জায়গায় চলে আসে। তিশা বাইক থেকে নেমে হেলমেট খোলার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। আবির নেমে আগে ওর হেলমেট খুলে দিয়ে তারপর নিজেরটা খুলে বাইকে ঝুলিয়ে রাখে৷ এবার তিশা আশপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখে। আশেপাশে একদম লোক শূন্য বিশাল বড়ো খোলা একটা জায়গা। মাথার উপর খোলা আকাশ। রাস্তার দু’ধারে বড়ো বড়ো গাছ আর আশেপাশে কাশফুলে ভরা। প্রকৃতির মিষ্টি ঘ্রাণে চারপাশটা মুখরিত হয়ে আছে৷ তিশার খুব ভালো লাগছে। আবির বাইকটাকে একটা গাছের নিচে ছায়াতে দাঁড় করিয়ে তার সাথে হেলান দিয়ে তিশাকে দেখছিল। তিশা প্রকৃতিকে নিজের মধ্যে পুজি করে আবিরের কাছে ফিরে আসে। ও আবিরের সামনে মাথা নিচু করে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,
~ তাহলে তুমি বাইরে ছিলে বলে এতদিন ভার্সিটি আসো নি?
– হুম।
~ আমি ভেবেছি, আমি সেদিন খারাপ বিহেভ করেছি বলে তুমি রাগ করে আসো নি। তোমার নাম্বারটা পর্যন্ত আমার কাছে নেই যে তোমাকে একটা কল দিয়ে মাফ চাইবো।
– পাগলি। আমি কি বাচ্চা ছেলে নাকি যে রাগ করে ভার্সিটি আসবো না৷
~ তা ঠিক। আচ্ছা সেদিনের জন্য আমি অনেক অনেক সরি। প্লিজ তুমি আমাকে খারাপ ভেবো না। আমি বুঝতে পারি নি তুমি কেন আমাকে থাকতে বলেছো।
তিশা মাথা নিচু করেই কথাগুলো বলে। ও কেন জানি আবিরের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না৷ আবির বিষয়টা বুঝতে পেরে তিশাকে টান মেরে ওর একদম কাছে আনে৷ তিশা চমকে যায়৷ আবির ওকে কাছে এনে ওর দিকে মুখ তুলে হাত দিয়ে দুষ্ট চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দেয়। আবিরের গরম নিঃশ্বাস তিশার একদম মুখের উপর পড়ছে। ওর কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে। কারণ আবির ওর একদম কাছে৷ তিশাকে কিছুক্ষণ দেখে আবির বলে উঠে,
– শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিয়েছো। আমার পছন্দের মুখখানার কি অবস্থা হয়েছে।
তিশা কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। আবির হঠাৎই কোথা থেকে একটা বড়ো ডেইরি মিল্ক চকলেট তিশার সামনে ধরে বলে,
– এখন এটা সুন্দর করে আমার সামনে খাও। আমি দেখি৷
তিশা ভীষণ অবাক হয়ে বলে,
~ তুমি এটা কই পেলে? আমি তো তোমার কাছে দেখি নি।
– উফফ! খেতে বলেছি খাও।
~ আচ্ছা আচ্ছা৷
তিশা চকলেটের প্যাকেটটা খোলার আপরান চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। তাই আবির ওর কাছ থেকে নিয়ে মুহূর্তেই খুলে এক টুকরো ভেঙে তিশাকে খাইয়ে দেয়৷ তিশার মুখখানা লজ্জায় লাল হয়ে আছে৷ আবিরও এক টুকরো মুখে নিয়ে খেতে খেতে তিশার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওকে খাইয়ে দিতে দিতে আবির বলে,
– আচ্ছা ধরো, কোন একদিন যদি জানতে পারো তুমি আমাকে যেমনটা ভেবেছো আমি তেমন নই। তাহলে কি করবে?
~ লাইক কি রকম?
– ধরো আমি যদি কোন সাধারণ মানুষ না হই। তখন?
তিশা আবিরের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলে,
~ তুমি তো এমনিও সাধারণ না। ক্লাসে সবাই তোমাকে অদ্ভুত বলে। এই যে আমার পিছনে পড়ে থাকো তার জন্যও বলে। কি বলে জানো? আবিরের মতো এত হ্যান্ডসাম ছেলে আমার মতো একটা মেয়ের পিছনে পড়ে আছে কেন। কি অদ্ভুত! দেখলে আমার জন্যও তুমি অসাধারণ হয়ে গেলে।
আবির তিশাকে কাছে টেনে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
– কে কি বলে তাতে আমি কান দি না। আমি চাই তুমি সবসময় হাসিখুশি থাকো। তাতে আমি থাকি কিংবা না থাকি।
~ তুমি থাকবে না কেন?
– এই পৃথিবীতে সবাই চিরস্থায়ী না তিশা।
~ জানি। আচ্ছা তুমি কি আমায় সত্যি ভালবাসো?
– কি জানি। (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ এইইই বলোওওও প্লিজ….
– উহুম। অন্য কোন একদিন।
~ হুহ। জানো আমার কোন ছেলে ফ্রেন্ড ছিল না। তোমাকে প্রথম যখন একা একা দেখি তখন আমি নিজেকে তোমার মাঝে দেখেছি। আমি চেয়েছিলাম তুমি যেন আমার মতো একা না থাকো। সবার সাথে মিশে থাকো।
– আমার সবাইকে চাই না৷ শুধু তুমি হলেই হয়।
~ আমার ক্ষেত্রেও তাই৷
– নাহ! এই চকলেটে মিষ্টি কম। মন ভরছে না।
~ ও মা কি বলো? কই চকলেট তো অনেক মিষ্টিই।
– মোটেও না। আমার একটা প্রিয় চকলেট আছে। সেটা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে মিষ্টি। এরচেয়ে মিষ্টি আর কিছু নাই৷
তিশা খুব কৌতূহল নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
~ প্লিজ প্লিজ বলো না সেই চকলেটের নাম। আমিও খাবো।
– আমার কাছে আছে এখন, খাবে?
~ হ্যাঁ হ্যাঁ।
– তাহলে দ্রুত চোখ বন্ধ করো। আমি যাদু দিয়ে সেই মিষ্টি চকলেট নিয়ে আসছি।
তিশা বাচ্চা মেয়েদের মতো আবির বলা মাত্রই চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করে৷ আবির চকলেট লাগানো তিশার মিষ্টি ঠোঁটটার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
– এই যে তোমার মিষ্টি চকলেট।
তিশা চোখ মেলে তাকানোর আগেই আবির ওর মিষ্টি ঠোঁটটা নিজের করে নিল। তিশা অবাক হয়ে যায়। আর মনে মনে বলে,
~ সত্যিই এর চেয়ে মিষ্টি আর কিছু নাই।
কিছুক্ষণ পর ওরা একে অপরকে ছেড়ে দেয়। তিশা আবিরের বুকে মাথা লুকিয়ে রাখে লজ্জায়৷ আবির ওর মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
– একটা কথা বলি?
~ হুম।
– তোমাকে খুব ভাল….
আবির কথাটা শেষ করার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে কয়েকটা মানুষ জাতীয় পশু মতো আকৃতি ধারণ করা লোক এসে বলে,
– তাহলে তুই এখানে৷ আজ আর তোকে ছাড়ছি না৷ অনেক জ্বালিয়েছিস। তোদের দুইটাকে আজ মেরে রক্ত দিয়ে আমরা গোসল করবো।
তিশা পিছনে ঘুরে তাকানোর আগেই….
চলবে..?
সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।