lপ্রণয়_কোন্দল #মাশফিয়াত_সুইটি পর্ব:০৫(ছদ্মনাম)

0
1024

#প্রণয়_কোন্দল
#মাশফিয়াত_সুইটি
পর্ব:০৫(ছদ্মনাম)

রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে শতাব্দী তার পাশে বসে উৎস মোবাইল টিপছে। শতাব্দী চিন্তায় দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে, উৎস শতাব্দীর পাশ ঘেঁষে বসে বলল,

– এমন ভাবে চিন্তা করছো মানুষ দেখে তো ভাববে, হয়তো হাজব্যান্ডের ডেলিভারি হচ্ছে তাই বউ বাইরে বসে চিন্তা করছে।

শতাব্দী উৎসের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
– ছেলেদের ডেলিভারি কিভাবে হয়?

– আমি কিভাবে জানবো?

– তাহলে এখন যে বললেন।

– তোমার অবস্থা দেখে যা মনে হয়েছে তাই বললাম।

– ওহ।

– আর কতক্ষন বসে থাকব? রিপোর্ট পরে এসে নিয়ে গেলেই তো হয়।

– পরে না এখনি নিয়ে যাবো যতক্ষন অপেক্ষা করতে হয় করবো আপনার ইচ্ছে হলে আপনি যেতে পারেন।

– বাহ কাজ শেষ এখন আমাকে চলে যেতে বলছো এখন আর দরকার নেই আমায়?

– চুপ থাকেন তো আপনার কথাগুলো বিরক্ত লাগছে।

– বিরক্ত লাগতে লাগতেই ভালো লাগবে।

একজন নার্স এসে শতাব্দীর উদ্দেশ্যে বলল,
– ম্যাডাম স্যার আপনাকে ডাকছে।

নার্স কথাটা বলেই চলে গেল। শতাব্দী বসা থেকে উঠতেই উৎসও দাঁড়ালো, শতাব্দী উৎসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আপনি উঠলেন কেন?

– আমিও তোমার সঙ্গে যাবো।

– আপনাকে ডাকেনি চুপ করে বসে থাকুন।

– বললেই হলো?

– মি.উৎস একদম মাথা গরম করবেন না আপনাকে ডাকেনি তাই আপনার আসার প্রয়োজন নেই।

শতাব্দী রাগ দেখিয়ে ডা: আবিদের চেম্বারে ঢুকে গেল, উৎস দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো। শতাব্দী আবিদের সামনে বসে আছে চোখ দু’টো অশান্ত। আবিদ মনোযোগ সহকারে রিপোর্ট গুলো দেখছে, শতাব্দী কৌতুহলী স্বরে জিজ্ঞেস করল,

– রিপোর্টে কি লেখা আছে? মি. উৎসের কি..

– যেই মেডিকেল টেস্টের রিপোর্টটা জুবায়েরের কাছে পাঠিয়েছেন সেটা নকল, আসল মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী শাহরিয়ার আহমেদ উৎস রুহিকে রেপ করেননি।

শতাব্দী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল নিজেকে খুব হালকা লাগছে, শতাব্দী হেসে বলল,
– ধন্যবাদ ডা: আবিদ অনেক বড় একটা উপকার করলেন আজ তাহলে আসি আর হ্যা আমি কেন এখানে এসেছিলাম কেউ যাতে না জানে।

– কেউ জানবে না।

শতাব্দী আবিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। শতাব্দীকে দেখে উৎস বলল,
– কাজ হয়ে গেছে?

– হুম কাজ শেষ এবার বাড়িতে যাবো চলুন।

শতাব্দী আর উৎস বাড়িতে ফিরেছে, শতাব্দী ফুরফুরে মেজাজে আছে সবার সঙ্গেই বেশ ভালো ব্যবহার করছে।উৎস হাসপাতাল থেকে এসেই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। শতাব্দীও বিরক্ত করেনি, সন্ধ্যার পর আয়মানের কল আসে কল রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে আয়মান বলল,

– ম্যাম উৎস স্যারের কল ডিটেইলস পেয়ে গেছি আপনার হুয়াটসএপে ছবি দিয়েছি।

– ঠিক আছে।

শতাব্দী সময় নষ্ট না করে দ্রুত হুয়াটসএপে ঢুকলো ছবিগুলো দেখে চমকে গেল।যেই রাতে রুহির মৃ’ত্যু হয়েছিল সেই রাতেই রুহি উৎসকে ফোন করেছিল।

শতাব্দী আয়মানকে কল দিয়ে বলল,
– আয়মান রুহি আর উৎসের কল রেকর্ডটা কি পাওয়া যাবে?

– জ্বি ম্যাম কিন্তু সেন্টারের লোকেরা আমাকে কল রেকর্ডটা দিতে রাজি নন।

– ওহ আচ্ছা রাখি তাহলে কাল ঠিক সময়ে চেম্বারে পৌঁছে যেও।

– জ্বি ম্যাম।

শতাব্দী পুরো ঘর জুড়ে পায়চারি করছে আর ভাবছে,’রুহি উৎসকে কেন ফোন করেছিল? কি কথা হয়েছিল ওদের মধ্যে?

উৎসের ঘুম ভেঙ্গে গেছে বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ মুছছে। শতাব্দীর এখনও সেদিকে খেয়াল নেই সে নিজের মতো নখ কামড়াচ্ছে আর চিন্তায় মগ্ন।উৎস আড়চোখে শতাব্দীকে দেখে নিলো তারপর জিজ্ঞেস করল,

– কি ব্যাপার উকিল সাহেবা এত চিন্তিত কেন?

উৎসের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে শতাব্দীর, ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কোনো উওর‌ না পেয়ে উৎস ইজি চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কিছু একটার দিকে মনোযোগ সহকারে তাকালো। শতাব্দী গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

– একটা কথা জিজ্ঞেস করছি সত্যি কথা বলবেন।

– বলো।

– রুহি মা’রা যাওয়ার আগে আপনাকেই শেষ ফোন করেছিল কি কথা হয়েছিল আপনাদের?

উৎস শতাব্দীর দিকে তাকালো তারপর পূর্বের ন্যায় নিজের কাজ করতে লাগলো। উৎসের এমন ব্যবহারে বেশ চটে গেল শতাব্দী বিছানা থেকে উঠে উৎসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কিন্তু উৎস পাত্তা দিল না। শতাব্দী এবার উৎসের ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে কড়া গলায় বলল,

– আমি একটা প্রশ্ন করেছি।

– হুম শুনেছি।

– তাহলে উওর দিচ্ছেন না কেন?

– তুমি তো আমার বিরুধী দল তোমাকে কেন বলবো?

– আমি আপনার স্ত্রী তাই আপনি আমাকে সবকিছু বলতে বাধ্য।

উৎস ব্রু নাচিয়ে বলল,
– তুমি না বললে আমাদের বিয়ে মানো না?

শতাব্দী থতমত খেয়ে গেল মিনমিনে গলায় বলল,
– ওইটা তো কথার কথা বলেছি।

– তার মানে তুমি আমাকে হাজব্যান্ড হিসেবে মেনে নিয়েছ?

– আশ্চর্য না মানার কি আছে?

– ওহ আচ্ছা যেই মেডিকেল টেস্টের আসল রিপোর্ট পেয়ে গেলে সেই বিয়ে মেনে নিলে?

শতাব্দী উৎসের এহেম কথায় ভরকে গেল, উৎসের ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলছে। শতাব্দী জিজ্ঞেস করলো,
– আপনি জানলেন কিভাবে রিপোর্টের কথা?

– আমাকে কি তোমার অশিক্ষিত বোকা মনে হয় নাকি? প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়েছিল তোমায়, তারপর টেস্ট করার জন্য যখন পাঠালে তখন সন্দেহ পুরোপুরি সত্যি হলো।

শতাব্দী মনে মনে নিজেকে কয়েকটা গালি দিয়ে বিছানায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। উৎস আবার জিজ্ঞেস করল,
– রুহির লা’শ তো দাফন হয়ে গেছে তাহলে এখন টেস্ট করলো কিভাবে?

– প্রয়োজনীয় সবকিছু রেখে তারপর দাফনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

– ওহ।
_____________

সকাল সকাল নাস্তা না করেই শতাব্দী বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে, উৎস বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে আছে। শতাব্দীর রেডি হওয়া শেষ হতেই উৎস জিজ্ঞেস করলো,

– এই সাত সকালে কোথায় যাচ্ছো?

– বাবার বাড়িতে।

– কেন?

– যেতে ইচ্ছে করছে তাই।

– ফিরবে কখন?

– আজই ফিরব।

– এখানে থেকে কু বুদ্ধি মাথায় আসছে না বলে বাড়িতে যাচ্ছো কু বুদ্ধি আনতে।

– একদম ফালতু কথা বলবেন না কু বুদ্ধি আপনার মাথায় ঘুরে অসভ্য লোক।

– অসভ্যতামি না করেও এসব শুনতে হয় বউয়ের কাছ থেকে।

– আপনার সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নেই গেলাম আমি।

শতাব্দী নিজের পার্স নিয়ে ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনি উৎস হুট করে শতাব্দীর সামনে দাঁড়ালো। শতাব্দী ব্রু কুঁচকে তাকালো, উৎস বাঁকা হেসে শতাব্দীর ঠোঁটে চুমু দিয়ে সরে গেল। আকষ্মিক দ্রুত এমন একটা ঘটনায় বেশ অবাক হলো শতাব্দী হা করে উৎসের দিকে তাকিয়ে আছে।উৎস শতাব্দীকে চোখ মেরে বলল,

– বাড়িতে গিয়ে যদি অন্যের প্ররোচনায় আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার ফন্দি আঁটো তাই তোমার মুখে সিল মেরে দিলাম এবার যেখানে ইচ্ছে যাও বউউ…

উৎসের কথায় শতাব্দী চমকে গেল সঙ্গে রাগও হচ্ছে সেও উৎসের এক হাত টেনে ধরে জোরে নিজের দাঁত ডাবিয়ে দিল কিন্তু উৎস মুখ দিয়ে কোনো শব্দ করলো না চোখ বন্ধ করে নিলো।কয়েক সেকেন্ড পর শতাব্দী উৎসের হাত ছেড়ে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে চলে গেল। কামড় দেওয়া জায়গা থেকে রক্ত বের হচ্ছে উৎস সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
.
.
.
উৎসের বাড়ি থেকে শতাব্দীদের বাড়ি আসতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। শতাব্দী নিজের বাড়ির সোফায় বসে আছে, শতাব্দীকে দেখে বাড়ির সবাই অনেক খুশি হয়েছে শতাব্দীর মা মিসেস তাসলিমা মেয়ের কাছ থেকে সরছেনই না। শতাব্দীর ভাবী শরবত বানিয়ে এনে শতাব্দীর হাতে দিয়ে বলল,

– বাইরে কি গরম ,শরবত খেয়ে ঠান্ডা হও।

শতাব্দী শরবত খেয়ে মৃদু হাসলো। শতাব্দীর বাবা শাওন হাসান ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন রিটায়ার্ড করেছেন বছর খানেক হলো। এখন সংসার চালায় শতাব্দীর বড় ভাই শুভ্র, শুভ্র একটা ভার্সিটির লেকচারার শুভ্রের সাত বছর বয়সী একটা ছেলে আছে যার নাম তূর্য। শতাব্দী ভাবীর উদ্দেশ্যে বলল,

– তূর্য কোথায় ভাবী?

– স্কুলে গেছে আর কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে।

– ওহ, ভাইয়াও ভার্সিটি চলে গেছে?

– হুম, কিছুদিন থাকবে তো আহী?

– না ভাবী ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করেই চলে যাবো।

মিসেস তাসলিমা ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,
– চলে যাবি মানে? কতদিন পর আসলি।

– আরেকদিন এসে থেকে যাবো মা আজ হবে না।

– কি আর বলবো এখন বিয়ে হয়ে গেছে মা’কে পর করে দিয়েছিস মায়ের কথা শোনার সময় আছে নাকি।

– আহা মা রাগ করো না তো।

– আমি রাগ করলে কার কি?

শতাব্দী মিসেস তাসলিমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলল,
– বললাম তো আরেকদিন এসে থেকে যাবো।

মিসেস তাসলিমা হালকা হেসে বললেন,
– ঠিক আছে এখন আমায় ছাড় রান্না করতে হবে অনেকদিন পর এসেছিস কতদিন তোকে নিজ হাতে খাওয়াই না।

মিসেস তাসলিমা রান্নাঘরে চলে গেলেন। শতাব্দীর ভাবী শতাব্দীর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
– সব ঠিকঠাক আছে তো আহী?

– হ্যা ভাবী সব ঠিক আছে।

– উৎস কি সত্যিই এমন একটা কাজ করেছে?

– জানি না।

– আরেকবার সবকিছু যাচাই বাছাই করে দেখে নিও।

– হুম এই জন্যই তো আসা।

বিকেলে শুভ্র বাড়িতে ফিরেছে, বাড়িতে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে বোনের পাশে এসে বসেছে। শতাব্দী ভাইকে দেখে খুশি হয়ে বলল,
– তোর জন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম ভাইয়া।

– বল কি হেল্প করতে পারি।

– রুহি যেদিন মা’রা যায় সেদিন তার মোবাইল থেকে শেষ কল এসেছিল উৎসের ফোনে তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল সেটা যদি জানতে পারি তাহলেই সব সত্যি সামনে আসবে কিন্তু কল রেকর্ডটা সেন্টারের লোক দিতে রাজি হচ্ছে না।

– ওহ এই ব্যাপার চিন্তা করিস না ওখানে আমার পরিচিত লোক আছে কল রেকর্ড পেয়ে যাবি।

– যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওইটা চাই আমার।

– ঠিক আছে।

– এই জন্যই এসেছিলাম রাত হয়ে যাচ্ছে এখন তাহলে যাই আমি।

– সেকি আজ চলে যাবি কেন? থেকে যা।

– থাকা যাবে না অনেক কাজ বাকি আছে।

– চল আমি দিয়ে আসি।

– তোকে কষ্ট করতে হবে না ভাইয়া আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি।

– আচ্ছা চল গেইট পর্যন্ত দিয়ে আসি।

শুভ্র শতাব্দীকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে এসেছে।
_____________

শতাব্দী ঘরের ভেতরে ঢুকেই উৎসকে দেখতে পেল। উৎস পুরো ঘর জুড়ে কিছু একটা খুঁজছে, মুখে আতংকের ছাপ। শতাব্দী জিজ্ঞেস করল,

– কি খুঁজছেন?

উৎস শতাব্দীর কন্ঠ পেয়ে থেমে গেল, মুখে ভয়, উৎস কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
– তুমি! এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছ?

– কেন আশা করেননি।

উৎস হাসার চেষ্টা করে বলল,
– আশা করবো না কেন? বাইরে থেকে এসেছ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমি শেফালীকে বলে তোমার জন্য ঠান্ডা জুস পাঠিয়ে দিচ্ছি।

– দরকার নেই।

শতাব্দী পার্সটা রেখে আলমারি থেকে থ্রি পিস নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।উৎস দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here