#Love_With_Dragon
#Episode_19(২য়_খন্ড)
[✖️গল্পটি কাল্পনিক দয়া করে কেউ বাস্তব এর সাথে তুলনা করবেন না✖️]
— স্যার আমি রিদিয়ার সাথে থাকতে চাই। (মেঘলা)
— মেঘলা রিদিয়াকে এখানে রাখা আর ঠিক হবে না।নেকড়েরা ওর খুঁজ পেয়ে গেছে। রিদিয়াকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।(রোহিত)
— স্যার আপনি ঠিক বলেছেন রিদিয়াকে এখানে রাখা ঠিক হবে না।পরপর দু’বার রিদিয়াকে নেকড়েরা আক্রমণ করেছে।(মেঘলা)
— সব করছে নেকড়ে রাজা হিউগো। হিউগো লুকিয়ে লুকিয়ে এসব করছে।রিদিয়াকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাব।ওখানে ও সবার সাথে থাকলে ভয় কম পাবে।রিদিয়া ভয় পেলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।বারবার এমন হলে ওর সমস্যা বেড়ে যাবে।যত দ্রুত সম্ভব ওর আগের জন্মের সব কিছু মনে করাতে হবে।(রোহিত)
— স্যার আপনি তাই করুন রিদিয়াকে আপনার বাড়িতে নিয়ে যান।(মেঘলা)
— এভাবে নিয়ে গেলে হবে না কৌশলে নিয়ে যেতে হবে।(রোহিত)
বলেই মেঘলাকে কিছু বললো।((কি বলেছে সামনে ক্লিয়ার করে বলে দেওয়া হবে))
— আপনি যেভাবে করতে বলেছেন ওইভাবেই আমি রিদিয়াকে আপনার বাড়িতে নিয়ে যাব।(মেঘলা)
— ঠিক আছে। আমি রিদিয়ার মাথা থেকে নেকড়েদের সব ঘটনা মুছে দিয়েছি।ওর জ্ঞান ফিরলেই বুঝিয়ে শুনিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসবে।আমি এখন যাচ্ছি। (রোহিত)
__________________________
রোহিত যাওয়ার দশ মিনিট পরই অধরার জ্ঞান ফিরে আসে।অধরা ধীরে ধীরে শোয়া থেকে ওঠে বসে।
— মেঘলা আপু আমার মাথা এত ভার ভার লাগছে কেন কিছু কি হয়েছিল…..(অধরা)
— না অধরা কিছু হয়নি।তোর সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আমি যা বলি তুই মনোযোগ দিয়ে শুন।(মেঘলা)
— ঠিক আছে আপু বলো।(অধরা)
— তুই এইখানে আর থাকিস না তোর যে কোনো সময় বিপদ হতে পারে।আর এখানে নেকড়ের উপদ্রব বেশি তোকে যে কোনো সময় মেরে ফেলতে পারে।(মেঘলা)
— কিন্তু আমার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আমি কোথায় গিয়ে যাব….(অধরা)
— আমার কাছে আছে।আমার একজন স্যার আছে ওনার বাড়িতে তুই থাকতে পারিস।(মেঘলা)
— কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই এমনি এমনি কেউ আমায় কারো বাড়িতে জায়গা দিবে।(অধরা)
— স্যার অনেক ভালো তোকে থাকতে দিবে টাকা লাগবে না।(মেঘলা)
— তা বুঝলাম। বাবার দোকানটার কি হবে….(অধরা)
— তুই দোকান নিয়ে চিন্তা করিস না।তোকে স্যারের বাড়িতে দিয়ে এসে আমি তোর বাবার দোকানটা বিক্রি করার ব্যাবস্থা করব।(মেঘলা)
— আমার বাবাকে এখানে একা রেখে আমি চলে যাব আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপু…?।(অধরা)
অধরার কথা শুনে মেঘলা অধরাকে জড়িয়ে ধরে।
— তোর বাবা সবসময় তোর সাথেই আছে তুই চিন্তা করিস না।এখন তোকে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে।নেকড়ে গুলো অনেক ভয়ানক। তুই এখান থেকে যাবি কিনা বল…(মেঘলা)
— যাব?। আমি নেকড়েদের ভীষণ ভয় পাই।আমি তোমার সাথে যাব আমায় নিয়ে চলো সেখানে। ( অধরা)
— তাহলে তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নে। (মেঘলা)
— এক্ষুনি চলে যেতে হবে….(অধরা)
— হ্যাঁ এখন চলে যাব।কখন বিপদ আসে ঠিক নেই ।তাই এখন চলে যাব।(মেঘলা)
অধরা মেঘলার কথায় তৈরি হয়ে নিল।
— আপু আমি তৈরি। (অধরা)
— আপু না বলে শুধু মেঘলা বলে ডাক ভালো লাগবে আমার।(মেঘলা)
— এটা হয় নাকি তুমি তো আমার থেকে অনেক বড়।(অধরা)
— হয়েছে হয়েছে চল তোকে কিছুই বলতে হবে না?।(মেঘলা)
অধরা যাওয়ার আগে বাবার কবরের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে কান্না করে।
___________________________
মেঘলা অধরাকে স্যারের বাড়িতে নিয়ে আসল।মেঘলা বাড়িটা দেখেই আশ্চর্য হলো। অসম্ভব সুন্দর একটি বাড়ি।
— আপু তোমার স্যারের বাড়িটা দেখছি অনেক সুন্দর। বাড়িটার চারপাশে ফুলের বাগান। আমার অনেক ভালো লেগেছে বাড়িটি।(অধরা)
— হুম?। (মেঘলা)
বাড়ির দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল। মেঘলা অধরাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল।অধরাকে সোফায় বসিয়ে দিল মেঘলা। অধরা চুপচাপ বসে আছে আর চারপাশে তাকাচ্ছে।
— বাড়ির বাহিরটা যতটা সুন্দর ভিতরটা তার থেকে ও বেশি সুন্দর। (অধরা মনে মনে বললো)
সিঁড়ির দিকে তাকাতেই অধরা থমকে গেল।একজন সুদর্শন পুরুষ সিঁড়ি দিয়ে নামছে।পুরুষটিকে দেখেই অধরার চোখের সামনে অস্পষ্ট কিছু ভাসতে লাগল।অধরার মনে হচ্ছে এই পুরুষটিকে সে চিনে কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছে না।
— আমার কেন মনে হচ্ছে এই লোকটিকে আমি আগে থেকেই চিনি। আর মনে হচ্ছে সবথেকে কাছের কেউ। কিন্তু মনে করতে কেন পারছি না।(অধরা মনে মনে বলে)
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয় এইসব নিয়ে ভাবলে।অধরা মাথায় হাত দিয়ে,,,,,, আ….হ্ বলে উঠলো।
অধরাকে আওয়াজ করতে দেখে রোহিত দৌঁড়ে অধরার কাছে এসে বলে,,,,
— রিদিয়া তুমি ঠিক আছো তোমার কোথাও লাগেনি তো…(রোহিত)
অধরা অবাক হয়ে তাকালো রোহিতের দিকে।
— রিদিয়া…… আমি রিদিয়া নই আমি অধরা।(অধরা)
— আসলে সরি আমি…. (রোহিত)
হঠাৎ করেই রিদিয়ার নাম মুখে চলে আসে রোহিতের এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখন মেঘলা কথা ঘোরানোর জন্য বলে,,,
— স্যার এই হচ্ছে অধরা আমি আপনাকে যার কথা বলেছি।আর অধরা ইনি হচ্ছেন আমাদের রোহিত স্যার।(মেঘলা)
— ও তাহলে এই হচ্ছে মেঘলা আপুর স্যার…..(অধরা রোহিতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাটি বললো)
অধরা রোহিতের থেকে চোখ সরাতেই পারছেনা।এত সুদর্শন পুরুষ অধরা আগে কোথাও দেখেনি।
এরই মাঝে মিসেস মেহের এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
— তোকে আর কোথাও যেতে দিব না আমি রিদিয়া। তোকে আমার আমার…….বলে মিসেস মেহের কাপড়ের আঁচলের সাথে অধরার হাত বাঁধা শুরু করলো। অধরা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিসেস মেহেরের দিকে।অধরার মনে হচ্ছে এই মহিলা তার পূর্বপরিচিত কিন্তু কেন কিছু মনে করতে পারছে না। কেন মনে হচ্ছে এসবের পেছনে রহস্য লুকিয়ে আছে। অধরার এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে।
রোহিত মিসেস মেহেরকে অধরার থেকে ছাড়িয়ে নিলো। মিহিকে বললো মিসেস মেহেরকে তার রুমে নিয়ে যেতে।মিসেস মেহের কিছুতেই তার রুমে যাবে না।মিহি জোর করে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
— কে এই মহিলা কেন আমাকে দেখলে পাগলামো করে আর রিদিয়া কে….? আমাকে জানতেই হবে সবকিছু যে করেই হোক…..(অধরা মনে মনে বললো)
— ওনি আমার ফুপিমণি তুমি ওনার কথায় কিছু মনে করো না।আর মেঘলা তুমি খেয়ে যেও।(রোহিত)
অধরা ভালো করেই বুঝে গেছে রোহিত কিছু লুকাচ্ছে।অধরা কিছু না বলে হালকা হাসলো রোহিতের কথায়।
— না স্যার আমার কাজ আছে আমি এখন খেতে পারব না।(মেঘলা)
— আচ্ছা সমস্যা নেই তোমার যদি জরুরি কাজ হয়ে থাকে তাহলে যাও।(রোহিত)
মেঘলা যাওয়ার সময় অধরাকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে সেখান থেকে চলে গেল।
— চল তোমার রুম দেখিয়ে দিচ্ছি। এখানে তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পার কেউ তোমায় কিছু বলবে না সবাই তোমাকে ভালোবাসবে। (রোহিত)
রোহিত অধরাকে তাদের বাড়ির গেস্ট রুমে থাকতে দিল।রোহিত রুম থেকে চলে যেতেই অধরা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে খাটের ওপর বসে রইল। মিহি অধরার জন্য খাবার নিয়ে আসল।
মিহি অধরার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,,
— খেয়ে নেও নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুধা লেগেছে তোমার…(মিহি)
অধরার মিহির কথায় কোনো জবাব না দিয়ে মিহির দিকে তাকিয়ে রইল।
— একদিনেই এই বাড়ির মানুষগুলো তাকে কত ভালোবাসা দিচ্ছে। (অধরা মনে মনে বললো)
— তুমি কিছু মনে না করলে আমি তোমায় খাইয়ে দিব…(মিহি)
মিহির কথা শুনে অধরার চোখে পানি চলে আসল।অধরা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
— কাল রাস্তায় আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। (অধরা)
— আসলে মা মাঝে মাঝে পাগলামি করে বাড়ির বাহিরে চলে যায় মাকে খুঁজতে খুঁজতে তোমার সাথে দেখা হয়।মায়ের আচরণে তুমি কিছু মনে করো না।(মিহি)
— না কিছু মনে করিনি কিন্তু ওনি আমায় রিদিয়া কেন বলেছেন…… (অধরা)
— আসলে আমার একটা বোন ছিল দেখতে তোমার মতো তাই মা তোমায় দেখে রিদিয়া মনে করেছিল। (মিহি)
— আপনার বোন কোথায়….(অধরা)
— নেই ও মারা গেছে। (মিহি)
— আসলে আমি বুঝতে পারিনি কিছু মনে করবেন না।(অধরা)
— কিছু মনে করিনি……?।(মিহি)
মিহি অধরাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আড়াল থেকে রোহিত রিদিয়াকে দেখছে।
— মেয়েটা এই জন্মে এতো ভীতু হয়ে জন্মালো কেন…… অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়। কতবছর পর দু’বোন একসাথে হয়েছে। এতবছর পর ও দু’বোনের মধ্যে ঠিক আগের মতোই ভালোবাসা রয়েছে।(রোহিত)
((রোহিতের থেকে মিহি জোর করে রিদিয়ার ব্যাপারে সবটা জেনেছে))
খাবার শেষে মিহি অধরাকে বলে,,,,
— তুমি আমায় মিহি আপু বলে ডাকবে? । (মিহি)
— ঠিক আছে মিহি আপু বলে ডাকব☺️।(অধরা)
মিহি অনেকবছর পর অধরার মুখ থেকে মিহি আপু শুনলো।মিহি অধরাকে জড়িয়ে ধরলো আর অধরাও মিহিকে জড়িয়ে ধরলো।
— আজ থেকে তুমি আমায় নিজের বোন মনে করবে।এখন একটু ঘুমিয়ে নেও তাহলে শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।(মিহি)
— ঠিক আছে আপু?।(অধরা)
মিহি অধরাকে শুইয়ে দিয়ে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অধরা আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে পরলো। অধরাকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে মিহি অধরার কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে চলে আসল।
______________________
খাবারের টেবিলে খেতে খেতে রোহিত মিহিকে জিজ্ঞেস করে,,,,
— মিহি ইরা কোথায়…? (রোহিত)
— ভাইয়া ওনি ইরাকে নিয়ে ইরার বান্ধবীর বার্থডেতে গিয়েছে। মনে হচ্ছে আজ আসবে না।(মিহি)
— ঠিক আছে। আজকে পিচ্চিটাকে অনেক মিস করছি।(রোহিত)
_____________________
দিন গড়িয়ে রাত হয়ে গেল অধরা এখনো ও ঘুমাচ্ছে। মিহি অনেকবার রুমে এসে দেখে গেল অধরার ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা কিন্তু অধরা ঘুম ভাঙ্গার কোনো খবর নেই। রাতে অধরাকে আর মিহি ঘুম থেকে তুলেনি।
রাত একটা পাঁচ মিনিটে অধরার ঘুম ভাঙ্গে। অধরা দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে তাকাতেই যেন আকাশ থেকে পড়লো।
— বাপরে আমি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম?।(অধরা)
অধরা শোয়া থেকে ওঠে ওয়াশরুমে যায়।ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়।
অধরার বাম দিকের রুমটায় চোখ গেল। অধরার মনে হচ্ছে রুমটা তাকে টানছে কিন্তু রুমটা তালাবদ্ধ। অধরা রুমটার সামনে এসে দাঁড়ালো। চারপাশে একবার ভালো করে দেখে নিল কেউ আছে কিনা।কাউকে আশেপাশে না দেখতে পেয়ে অধরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।
অধরা রুমের তালাটি ধরে বলে,,,
— ইস্ যদি তালাটি নিজে নিজে খুলে যেত?….(অধরা)
আশ্চর্য ব্যাপার তালাটি নিজে নিজে খুলে গেল।তালাটিকে নিজে নিজে খুলে যেতে দেখে অধরা ভয় পেয়ে গেল।
চলবে……
#লেখনীতে__ফিহা
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]
_____________________
[বানানে ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]
★
[গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি পাঠক-পাঠিকাদের কাছ থেকে]