#Love_With_Dragon
#Episode__01
[গল্পটি কাল্পনিক দয়া করে কেউ বাস্তবের সাথে তুলনা করবেন না]
রিদিয়া তুই আবারও এইসব ছবি ড্রয়িং করছিস।আম্মু জানতে পারলে আবার মারবে তোকে।
— মিহি আপু আম্মুকে বলবে না প্লিজ। আমার ড্রাগন অনেক ভালো লাগে। কেন ভালো লাগে নিজেও জানি না।মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যিই ড্রাগন আছে। (রিদিয়া)
— তোর মাথা ঠিক আছে রিদিয়া এইসব কাল্পনিক বাস্তবে এইসব ড্রাগন- প্রাগন কিছুই নেই। এইসব মাথা থেকে সরিয়ে পেল।আম্মু এসে এইসব দেখলে তোর বারোটা বাজাবে।(মিহি)
— মিহি মিহি রিদিয়াকে তৈরি হয়ে নিচে আসতে বল টেবিলে খাবার দিয়েছে। খাবার খেয়ে কলেজে চলে যেতে বল। নবাবজাদী এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে। দু’দিন পর পরীক্ষা সেই খবর রাখে।
— উঠ এইসব যেন আর না ড্রয়িং করতে দেখি তাহলে সত্যি সত্যি আম্মুকে বলে দিব।(মিহি)
রিদিয়া মন খারাপ করে কলেজের জন্য তৈরি হয়ে না খেয়েই চলে গেল। খেয়ে যায়নি দেখে মিসেস মেহের রিদিয়াকে অনেক বকেছে।
[রিদিয়া আর মিহি দু’বোন। ছোট বেলায় তারা বাবাকে হারিয়েছে। তাদের মা মিসেস মেহের একটা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা।কোনোরকমে তাদের সংসার চলে।]
_________________________
রিদিয়া মায়ের বকুনি খেয়ে রাগ করে টাকা না নিয়েই চলে এসেছে। এখন হেঁটে হেঁটে কলেজ যেতে হবে।
— দূর কেন যে রাগ করে আসলাম বিশ টাকা নিয়ে আসলে তো আর এখন কষ্ট করে হেঁটে যেতে হতোনা।পা’দুটো ব্যাথা হয়ে গেছে হাঁটতে হাঁটতে।(রিদিয়া)
রিদিয়া বেখেয়ালি ভাবে রাস্তায় হাঁটছে।
সামনে একটা কালো রঙের গাড়ি অনেকক্ষণ ধরে হর্ণ বাজাচ্ছে সামনে থেকে সরে যেতে রিদিয়ার সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।
— কি হলো কাকু গাড়ি চালানো থামিয়ে দিলে কেন। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
— রোহিত বাবা অনেকক্ষণ ধরে হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছি মেয়েটা সামনে থেকে সরছে না।(ড্রাইভার কাকু)
— তুমি বসো আমি দেখছি।(রোহিত)
রোহিত গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে দেখে একটা মেয়ে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছে।
সাদা ড্রেস পরে আছে মেয়েটি আর সাথে চুল দুই বেনি করা।
— এইভাবে বেখেয়ালি ভাবে রাস্তায় হাঁটছ কেন।তোমার জন্য আমার সমস্যা হচ্ছে। রাস্তার মাঝে না হেঁটে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটো। এতে তোমারও ভালো হবে আর রাস্তা দিয়ে যেসব গাড়ি চলাচল করে তাদের ও উপকার হবে।(রোহিত)
সামনে থেকে কারো কন্ঠ শুনে রিদিয়া সামনে তাকালো।
— কে কথা বললো কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না। (রিদিয়া)
— এইযে মিস এইখান থেকে বলছি। আপনি যদি রাস্তার মাঝখান থেকে সরে যান তাহলে আমার বড় উপকার হতো।(রোহিত)
রিদিয়া কোনো কথা না বলে হা করে তাকিয়ে আছে রোহিতের দিকে।রিদিয়ার মনে হচ্ছে এতো সুন্দর ছেলে আগে সে কোথাও দেখেনি।
রিদিয়াকে এইভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোহিত বিরক্ত হলো।
— এই যে শুনছেন ভালো ভাবে বলছি রাস্তার মাঝখান থেকে সরে যান।(রোহিত)
রিদিয়া কিছু না বলে রাস্তা সরে দাঁড়ালো।রিদিয়া সরে যেতেই রোহিতের গাড়ি সেখান থেকে চলে গেল।
রিদিয়া এখনো ও অবাক হয়ে আছে।বার বার রোহিতের চেহারা মুখের সামনে ভাসছে।
— একটা ছেলে এত সুন্দর কেমনে হয়। আর যখন কথা বলছিল কথা তো নয় যেন গান গাইছিল আমার এমন মনে হলো।ছেলেটার কন্ঠ এত সুন্দর কেন বারবার শুনতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিছু বলতে না দিয়েই চলে গেল?।(রিদিয়া)
এইসব ভাবতে ভাবতে রিদিয়া কলেজে চলে আসল।
________________________
রিদিয়া ক্লাসে গিয়ে গালে হাত দিয়ে রোহিতের কথা ভাবছে।
আর রিদিয়ার বন্ধুরা সবাই অনেকক্ষণ ধরে রিদিয়াকে পর্যবেক্ষণ করছে।
— কিরে মেঘলা রিদিয়া এইভাবে গালে হাত দিয়ে বসে আছে কেন।(আকাশ)
— আমি ও বুঝতে পারছি না আকাশ আজ আমাদের রিদিয়ার কি হলো চুপচাপ বসে আছে অন্যদিন হলে পুরো ক্লাস মাতিয়ে রাখতো।(মেঘলা)
— এই রিদুপাখি কি হয়েছে তোর কথা বলছিস না কেন। (মেঘলা)
— মেঘলা আজকে নীল আর অনিমা আসেনি কেন।(আকাশ)
— জানিনা আকাশ দু’জনকে কলেজে আসার সময় অনেকবার ফোন দিয়েছে কেউই ফোন ধরেনি।(মেঘলা)
— স্পর্শিয়া আর আদরের কি হলো এরা রিদিয়ার দিকে এইভাবে কি দেখছ।(আকাশ)
— রিদিয়ার চুপ থাকার ভাইরাসে ওরা আক্রান্ত হয়ে গেছে?।(মেঘলা)
ক্লাসে স্যার এসেছে সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম দিল শুধু রিদিয়া গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
— এই রিদিয়া দাঁড়া ক্লাসে স্যার এসেছে। দেখ স্যারটা কি হ্যান্ডসামরে।(মেঘলা)
মেঘলার কথায় রিদিয়া বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকাতেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।রিদিয়া সাথে সাথে দাঁড়িয়ে স্যারকে সালাম দিল।
— আরে আপনি এখানে জানেন আপনাকে কতো মিস্ করছিলাম আমি।ইস্ আমার কি ভাগ্য আপনার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল। (রিদিয়া)
রিদিয়ার কথা শুনে ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে রিদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
— সরি আমি তোমাকে কখনো দেখিনি আজই ক্লাসে তোমার সাথে আমার দেখা।(স্যার)
— এই ব্যাটা কতবড় মিথ্যাবাদী রাস্তায় তো এর সাথে আমার দেখা হয়েছে। মিথ্যে কেন বলছে আমাকে।না ভালো করে দেখে নেই যদি আবার ভুল হয় আমার। রিদিয়া চশমাটা ভালো করে চোখে দিয়ে আবার সামনে তাকালো। না ঠিকই তো দেখছি এইটা সেই ছেলেটা।(রিদিয়া)
_________________________
— আমি রোহিত মির্জা । আমি তোমাদের নতুন টিচার। এখন থেকে তোমাদের গনিত পড়াবো আমি। আর আমার ক্লাসে সবাই সাইলেন্ট থাকবে আর মনোযোগী হতে হবে।যার ক্লাস করতে ভালো লাগবে শুধু সে ক্লাস করবে যার ভালো লাগবে না সে এখনই ক্লাস থেকে চলে যেতে পারো।কোনো অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রী আমার ক্লাসে থাকা যাবেনা।(রোহিত)
রোহিত রিদিয়ার দিকে তাকিয়ে রিদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
— ক্লাসে কোনো ছাএ বা ছাএী কেউ যদি ফাউল কথাবার্তা বলে তার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে। (রোহিত)
রোহিতের কথা শুনে ক্লাসের সবাই চুপচাপ হয়ে বসে আছে। কোনো শব্দ নেই ক্লাসে।আর রিদিয়া রোহিতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
রোহিত বিরক্ত হলো রিদিয়ার কাজে।
— স্টেন্ড আপ…(রোহিত)
— স্যার আমাকে বলছেন?…(রিদিয়া)
— হ্যাঁ তোমাকেই বলছি অন্যদিকে মন না দিয়ে ক্লাসে মন দেও।(রোহিত)
— কি করবো স্যার আপনিই বলুন এত সুন্দর একজন হ্যান্ডসাম স্যার সামনে থাকলে ক্লাসে মনোযোগী হই কিভাবে?। (রিদিয়া)
— স্টুপিড গার্ল ক্লাস থেকে বের হও?। পড়াশোনা করতে আসো নাকি এইসব করতে আসো।বের হও ক্লাস থেকে। (রোহিত)
রিদিয়া মুচকি হেসে রোহিতকে চোখ মেরে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল।
আকাশ, মেঘলা, স্পর্শিয়া আর আদরের মনটা খারাপ হয়ে গেল রিদিয়াকে বের করে দেওয়ায়।
রোহিত বিরক্ত নিয়ে ক্লাস করা শুরু করলো।
— কি ডেঞ্জারাস মেয়ে আমায় চোখ মারলো।আমি যে একজন টিচার এই মেয়ে আদোও সেটা মানে।(রোহিত)
রিদিয়া ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোহিতকে পর্যবেক্ষণ করছে।
— ইস্ কত সুন্দর আপনি স্যার। আপনার সুন্দরের বর্ননা দিতে গেলে আমার কয়েকশো বছর লেগে যাবে।(রিদিয়া মনে মনে বললো)
এইসব ভাবতে ভাবতে রিদিয়ার চোখ পরলো দেয়ালে।রিদিয়া ভয় পেয়ে গেল।
এইটা কি মনে হচ্ছে কোনো ড্রাগনের প্রতিচ্ছবি ?।
রিদিয়া একবার রোহিতকে দেখছে আবার দেয়ালের ছায়াটির দিকে তাকাচ্ছে।
স্যার যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে সেই জায়গায় মানুষের ছায়ার বদলে ড্রাগনের প্রতিচ্ছবি কেন।
তাহলে কি স্যার……..(রিদিয়া)
চলবে…….
#লেখনীতে__ফিহা