#Love_With_Dragon
#Episode__02
[গল্পটি কাল্পনিক দয়া করে কেউ বাস্তবের সাথে তুলনা করবেন না]
রোহিত ক্লাসের ফাঁকে রিদিয়ার দিকে তাকালো। রিদিয়াকে চোখ বড় বড় করে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলো।
রোহিত দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হলো।
হঠাৎ করেই রিদিয়ার চোখে ঘুম আসতে শুরু করলো। রিদিয়া হাই তুলে ক্লাসের দিকে তাকিয়ে চোখ থেকে চশমা খুলে রোহিত এর দিকে তাকালো।
রোহিত ও রিদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রোহিতের দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পরে গেল। সুযোগটা মিস করলো না রিদিয়া। রোহিতকে ফ্লাইং কিস দিল?।
রোহিতের চোখ যেন কপালে ওঠে যাবে এমন অবস্থা।
— মেয়ে দেখেছি এমন অসভ্য মেয়ে কম দেখেছি।আমার সাথে কোনো মেয়ে ভয়ে কথা বলতে পারে না। আর এই স্টুপিড মেয়ে প্রথমে চোখ মারল আর এখন সোজা ফ্লায়িং কিস দিল।এর একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে আমার।(রোহিত)
দেয়ালে ড্রাগনের প্রতিচ্ছবির কথা মনে পড়তেই রিদিয়া চোখে চশমা দিয়ে সেদিকে তাকালো।
তাকাতেই মাথায় যেন বাজ পরলো।
— একি কিছুক্ষণ আগে ও তো আমি ড্রাগনের প্রতিচ্ছবি দেখলাম। এখন নেই কেন।(রিদিয়া)
রিদিয়া চশমা খুলে চশমাটা তার সাদা ওড়না দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে আবার চোখে দিল।
— হয়তো চশমার কারনে ভুল দেখেছি । না সত্যিই তো এখন দেখা যাচ্ছে না। এখন তো স্যারের সম্পূর্ণ শরীরের ছায়া দেখা যাচ্ছে। আচ্ছা সারাদিন ড্রাগন নিয়ে ভাবার কারনে এমন হয়নি তো আবার।
কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি সত্যি সত্যি ড্রাগনের প্রতিচ্ছবি দেখলাম। হয়তো আমি ভুল দেখেছি।যদি সত্যি ড্রাগন হতো তাহলে কি এমন ক্ষতি হতো।আমার অনেক ইচ্ছে নিজের চোখে ড্রাগন দেখার।সবাই বলে এইসব নাকি কাল্পনিক কিন্তু আমার মন বলে সত্যিই ড্রাগন আছে।(রিদিয়া)
রোহিত ক্লাস শেষ করে বের হতেই রিদিয়ার মুখোমুখি হলো।
— কি স্যার কিসটা কেমন ছিলো?।(রিদিয়া)
— অসভ্যতার কতগুলো লিমিট থাকা দরকার তোমার তাও নেই। লাস্ট বার সুযোগ দিচ্ছি যদি আবার আমার সাথে অসভ্যতামি করেছ সোজা কলেজ থেকে বের করে দিব।(রোহিত)
— বললেই হলো নাকি এইটা কি আপনার বাপের কলেজ যা ইচ্ছা তাই করবেন।(রিদিয়া)
— তাই আমি কি তোমার নিজের সম্পওি নাকি যখন ইচ্ছে চোখ মারবে ফ্লায়িং কিস করবে।এইটা কোনো রুলস এ পরে। (রোহিত)
— হ্যাঁ আপনি আমার নিজের সম্পওি।আর একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নেন,,,,
কোনো মেয়ের সাথে যদি আপনাকে কথা বলতে দেখি তাহলে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না। সব মেয়েদের থেকে এক কোটি হাত দূরে থাকবেন বুঝলেন স্যার। (রিদিয়া)
— তুমি কি পাগল….(রোহিত)
— আপনার পাগল স্যার?।(রিদিয়া)
রোহিত আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।
— বেয়াদব মেয়ে একটা।আসার পর থেকে জ্বালাচ্ছে।এর সাথে কথা না বলাই ভালো। না হলে কবে জানি আমি নিজেই পাগল হয়ে যাব তার কোনো ঠিক নাই।(রোহিত)
স্যার ক্লাস থেকে বের হতেই মেঘলা,আকাশ,স্পর্শিয়া,আদর রিদিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো।
— কিরে রিদিয়া স্যার তোর সাথে কি কথা বললো যাওয়ার সময়।মনে হচ্ছে তোর ওপর খুব রেগে আছে। (মেঘলা)
— কি বলবে কতগুলো ইন্সট্রাকশন দিয়ে গেল আমাকে।(রিদিয়া)
— রিদিয়া স্যারটা কি হ্যান্ডসাম রে আমি তো ফিদা হয়ে গেলাম স্যারকে দেখে।(স্পর্শিয়া)
— একদম নজর দিবি না উনি শুধু আমার বুঝলি?।তোদের হবু দুলাভাই হবে হবু দুলাভাই ☺️।যেখানেই দেখবি দুলাভাই বলবি। (রিদিয়া)
— ঠিক আছে?।(স্পর্শিয়া)
— তোরা মেয়েরা যে কি দিয়ে তৈরি একটু সুন্দর ছেলে দেখলেই জামাই বানিয়ে ফেলছ।আমাদের কি তোদের চোখে পড়ে না?।(আকাশ)
— ঠিক বলেছিস আকাশ আমাদের যে কি হবে। মনে হচ্ছে সারাজীবন সিঙ্গেলই থাকতে হবে।(আদর)
— তোরা যেই ছেলে সারাজীবন সিঙ্গেলই থাকতে হবে।জীবনে ও তোদের কপালে বউ জুটবো না?।
আদর আর আকাশ ওদের কথায় রেগে সেখানে থেকে চলে গেল।
— রেগে গেছে দুজন। আজকে আর ক্লাস করতে মন চাইছে না। চল লাইব্রেরী থেকে ঘুরে আসি।(মেঘলা)
— আমারও ভালো লাগছে না। আদর,আকাশ কই গেল মনে হচ্ছে রেগে আছে আমাদের ওপর।মজা করে বলেছি এতে এতো রাগ হওয়ার কি আছে।(স্পর্শিয়া)
— তোরা গেলে যা আমি যাব না আজকে সব ক্লাস করমু।(রিদিয়া)
রিদিয়া কথা শুনে মেঘলা আর স্পর্শিয়া অবাক হলো।
— আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই ক্লাস করবি তাও সব ক্লাস ইম্পসিবল।(মেঘলা)
— পসিবল মেঘলা।তোদের হবু দুলাভাইকে ইমপ্রেস করার জন্য আমি সব ক্লাস করবো।(রিদিয়া)
— তোর মনে হয় তুই এইসব করলে রোহিত স্যার তোর প্রেমে হাবুডুবু খাবে।(স্পর্শিয়া)
— প্রেমে হাবুডুবু না খেলে তার ব্যাবস্থা ও আমার কাছে আছে জানু?।(রিদিয়া)
— চল না আমরা তিনজন লাইব্রেরী থেকে ঘুরে আসি। এই ক্লাসটা করবো না পরবর্তী দুটো ক্লাস করবো। (মেঘলা)
— ঠিক আছে চল।(রিদিয়া)
তিনজন লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে চললো।
— আমি একটু আসছি তোরা লাইব্রেরীতে যাহ্।(রিদিয়া)
— না একসাথে যাব।(মেঘলা)
— এই যাব আর আসব।(রিদিয়া)
বলেই রিদিয়া মেঘলা আর স্পর্শিয়ার থেকে আলাদা হয়ে গেল।
_________________________
— স্যারের কেবিন কোনটা। দূর ওদের মিথ্যে বলে এসেছি স্যারকে একটা নজর দেখার জন্য আসলাম এখন স্যারকেই খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায়…. কোথায়……(রিদিয়া)
এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে কারো সাথে ধাক্কা লেগে রিদিয়া নিচে পড়ে যায়।
— আ…..হ্ আমার কোমরটা গেলরে।কোন পাগলের বাচ্চারে দেখে হাঁটতে পারিস না আমার কোম…..র ভেঙে গেল রে?।(রিদিয়া)
— সরি সরি মিস বেশি ব্যাথা পেয়েছেন। বলেই ছেলেটা হাত এগিয়ে দিল রিদিয়ার সামনে। (ছেলেটি)
রিদিয়া রেগে ছেলেটার হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিতেই ছেলেটা দশ-বারো হাত দূরে ছিটকে পরলো।
রিদিয়া আশ্চর্য হয়ে গেল। হঠাৎ করে হাতের আঙ্গুলের দিকে রিদিয়ার নজর পরলো।হাতের আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে ভয় পেল সাথে অবাকও হলো।
— একি আমার হাতের আংটিটা জ্বলজ্বল করছে কেন।আর আমি ধরতেই ছেলেটা এত দূরে গিয়ে পরলো কিভাবে কিছুই বুঝতে পারছি না।(রিদিয়া)
রিদিয়া উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার কাছে যায়।
— সরি ভাইয়া আসলে পরে অনেক ব্যাথা পেয়েছি তো তাই এমন করেছি।বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ফেলে দেই নি।হঠাৎ করে কিভাবে এত দূরে উড়ে চলে গেলেন আমি নিজে ও বুঝতে পারছি না।(রিদিয়া)
ছেলেটা কিছু না বলে মাথা ওপরে উঠিয়ে রিদিয়ার দিকে তাকালো।
রিদিয়া ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল।
ছেলেটার চোখ দুটো নীল বর্ন ধারণ করেছে।
— আ….আপনার চোখে কি হয়েছে হঠাৎ নীল হয়ে গেল কি করে।হয়তো বেশি ব্যাথা পেয়েছেন এইজন্য চোখ নীল হয়ে গেছে। আমি দেখছি…(রিদিয়া)
বলে রিদিয়া ছেলেটির দিকে তার বাম হাত বাড়িয়ে দিবে তার আগেই ছেলেটা চিৎকার করে বলে,,,,,
— দূরে সরে যাও আমার কাছ থেকে। তোমার হাতের ওই আংটি নিয়ে আমার কাছে আসবেনা দূরে সরে যাও। (ছেলেটি)
রিদিয়া হাতের আংটির দিকে তাকালো।আংটির ওপরে থাকা নীল পাথরটা জ্বলজ্বল করছে।
— অদ্ভুত আংটি দেখে ছেলেটা এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন।আর হঠাৎ আমার হাতের আংটি থেকে আলো কেন বের হচ্ছে। আমার মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কি হচ্ছে এইসব আমার সাথে।
রিদিয়া ছেলেটাকে আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলো।(রিদিয়া)
রিদিয়া লাইব্রেরীতে এসে চুপচাপ বসে আছে।
— আরে বৃষ্টি দেখ দেখ আমাদের নতুন টিচার আমাদের নতুন মেডামকে কিভাবে ধরে আছে।
— হ্যাঁ সোজা কোমর জড়িয়ে ধরে আছে।দু’জনকে দারুণ মানিয়েছে।(বৃষ্টি)
পিছন থেকে দুটো মেয়ের কথোপকথন শুনে রিদিয়া পিছনে তাকালো। পিছনে তাকাতেই রিদিয়া খুব কষ্ট পেল।চোখে পানি টলমল করছে মনে হচ্ছে এখনই টুপ করে চোখ দিয়ে জল পড়বে।
— বৃষ্টি তুই ঠিক বলেছিস রোহিত স্যারকে জোহরা মেডাম এর সাথে দারুণ মানিয়েছে।কি সুন্দর লাগছে দেখ।
ওদের কথা শুনে রিদিয়ার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারলো না চোখের জল আটকে রাখতে। চোখের জল হাত দিয়ে মুছে লাইব্রেরী থেকে চলে গেল রিদিয়া।
এইদিকে মেঘলা আর স্পর্শিয়া রিদিয়াকে লাইব্রেরীতে না পেয়ে রেগে গেল।
— মেঘলা রিদিয়া আমাদের মিথ্যে বলেছে।গিয়ে দেখ রোহিত স্যারকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।(স্পর্শিয়া)
— রাগ করিস না পাগলিটা সবসময় বান্দরামি একটু বেশিই করে।চল খুঁজে বের করি।(মেঘলা)
এইদিকে রিদিয়া ক্লাসে গিয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় মন খারাপ করে হাঁটছে।
— স্যারকে আজকেই প্রথম দেখলাম আমি। স্যারকে আমার ভীষন ভালো লেগে গেছে।জোহরা মেডাম এর সাথে স্যারকে দেখে এত কষ্ট হয়েছিল কেন আমার। মনে হলো আমার হৃদয়টা হাজার টুকরো হয়ে গেল। ভালো লাগা থেকে আমি স্যারেকে চোখ মেরেছি,,,, ফ্লায়িং কিস দিয়েছি।এইটা কি আদোও ভালো লাগা নাকি অন্য কিছু।(রিদিয়া মনে মনে বললো)
রিদিয়া রোহিতেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছিল।রাস্তার দুপাশে থাকা ঘন জঙ্গল থেকে হঠাৎ ভয়ানক আওয়াজ শুনতে পেল রিদিয়া।
— এত ভয়ানক আওয়াজ মনে হচ্ছে কেউ হাড্ডি চিবাচ্ছে।(রিদিয়া)
রিদিয়া প্রথমে যাবে না ভেবেছিল কিন্তু কেন জানি তার জঙ্গলে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে কিসের এত ভয়ানক আওয়াজ।
চলবে………
#লেখনীতে__ফিহা