Love_with_vampire,০৪,০৫

0
630

#Love_with_vampire,০৪,০৫
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
০৪

আকাশে চাঁদ দৃশ্যমান হলো।চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়লো তাদের ছোট্ট নৌকায়।অহনা সেই আলোয় অনুভবের দিকে তাকাতেই তার ভেতরটা মুচড়ে উঠলো।সিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা কি যেনো নেমে গেলো।

অনুভব পাশ ফিরে চাঁদের দিক তাকিয়ে আছে।তার আকার আসতে আসতে ক্রমশ বড় হয়ে যাচ্ছে।শরীর বেয়ে ঘন কালো লোম আবৃত হচ্ছে সারা শরীরে।হাত,পায়ের নখগুলি অস্বাভাবিক বড় হয়ে গেলো,চাঁদের আলোয় ধারালো নখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।

অহনা রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে দারিয়ে আছে।তার নড়াচড়া করার কোনো শক্তি নেই।অনেক চেষ্টার পর মুখ থেকে অস্ফুটে স্বরে একটা কথা বেড় হলো

“অ..অ..অনুভব,? ”

অনুভব পাশ ফিরলো।অহনার সামনে মুখোমুখি দাড়ালো। এখন সে আর মানুষ নেই।তার সারা শরীর ঘন কালো লোমে আবৃত হয়ে আছে,নখ গুলি ধারালো।সারা শরীর ঠিক আছে,কিন্তু মাথায় যায়গায় মাথা নেই।সেখানে একটা হায়েনা জাতীয় কোনো পশুর মাথা।চোখগুলি হিংস্র পশুর মতো,সেই চোখ হলুদ। হলুদ আভা বেড় হচ্ছে চোখ দিয়ে।এ দৃষ্টি মুহূর্তেই সব ধ্বংস করে দিতে পারবে।

অহনা কিছু বলতে পারলো না।ধপ করে লুটিয়ে পড়ে রইলো নৌকায়।ছোট্ট সরোবরের সকল পদ্ম শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।আকাশে তীব্র ভয়ে এলোমেলো হয়ে উড়তে থাকা বিচিত্র বড় বড় পাখিগুলি নিমিষেই ধপ করে মাটিতে পড়তে লাগলো।তার মধ্যে একটি পাখি নৌকার ওপর পড়তেই হায়েনা রুপী অনুভব সেই পাখিটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দুহাতে ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে নৌকা থেকে এক লাফ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরের সেই পাহাড়ের চূড়ায় চলে গেলো,তার গর্জনে সমস্থ যায়গাটা কেঁপে উঠলো।অহনার নিথর দেহ পড়ে রইলো সেই সরোবরের ছোট্ট নৌকাটায়।

পরেরদিন সূর্যের মৃদু আলো এসে অহনার চোখে পড়লো।পিটপিট করে চোখ খুললো।কোথায় আছে সেটা বুঝতে অহনার বেশ সময় লাগলো।প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেলো।দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে নৌকাটায় দারাতেই টাল সামলাতে না পেরে আবারো বসে পড়লো।মনে করতে লাগলো কি হয়েছিলো তার কাছে।মনে হতেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।কাল রাতের সেই ঘটনার কথা,অনুভবের একটা পশুতে পরিণত হওয়ার দৃশ্যটা চোখে ভাসতেই দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছে অহনার।

কাল এই যায়গাটা যতটা সুন্দর লাগছিলো,আজ ততটা সুন্দর নয়।এই যায়গাটাও তার মতোই ভীতিকর অবস্থায় আছে।জলের পদ্মগুলি একটাও নেই,সব শুকিয়ে নেতিয়ে পড়ে আছে।জলের ওপর বিচিত্র সব পাখিগুলি ভেসে ভেসে আছে।দূরের সবকিছু এলোমেলো, ভেঙ্গে চূড়ে আছে।সূর্যের আলোয় অহনার এখন আর তেমন ভয় লাগছে না।প্রকৃতির আলো সকল ভয়কে দূরে সরে রাখে।ভয় অন্ধকারে,আলোয় ভয় নেই।

নৌকাটা সেই শেকড় দিয়ে ঠেলে অতি কষ্টে পাড়ে পৌঁছালো অহনা।মাথাটা এখনো ঝিমঝিম করছে।মনে একটা ভয় ধুকপুক করছে।সেখান থেকে সামনে এগুতে লাগলো অহনা।

বেশ কিছুদূর যেতেই আকাশে ধোঁয়া দেখতে পায় অহনা।তার মনে হলো নিশ্চই ওখানে কোনো মানুষ আছে,নইলে আগুনের ধোঁয়া উড়ছে কিভাবে?। কি আছে ওখানে দেখার জন্য দ্রুত হাটা শুরু করলো।অসাবধানতার কারনে একটা লতার সাথে পা পেঁচিয়ে নরম ঘাসে পড়ে গেলো অহনা।হাতে কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে।তবুও সেসব উপেক্ষা করে উঠে দ্বারালো অহনা।সামনে একটা গুহা।যার ওপরে কয়েকশো ফুট উচু উচু লতা।সেই লতায় কিছুটা ঢেকে আছে গুহার মুখ।অহনার ভয় করতে লাগলো।আরেকটু কাছে যেতেই কিছু শব্দ কানে ভেসে এলো।শব্দটা কিসের সেটা বুঝতে পারলো না।পাশে দেখলো একটা মৃত পশুর হাড়গোড় পড়ে আছে।অহনা নিজেকে কিছুটা সুরক্ষা করার জন্য একটা হাড় হাতে নিলো।গন্ধে তার পেট উল্টে আসছে,কিন্তু এই হাড় তার সাথেই রাখতে হবে।এতে পারে ভেতরে কোনো জানোয়ার থাকবে।মূহুর্তেই মতো হলো,ভেতরে অনুভব নেই তো? কেনো জানি অহনার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে যে ভেতরে যেন মানুষ রুপী অনুভব থাকে।আর সে অহনাকে দেখার সাথে নিজের বুকে জরিয়ে ধরবে।কানে ফিসফিস করে বলবে কাল রাতে তুমি যা দেখেছো সব ভুল।যদি অনুভব এটা বলে তবে অহনা বিশ্বাস করে নিবে।কারন অনুভবকে সে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে।তাকে হারানোর কষ্ট তার সহ্য হবে না।

হাতে হাড়টা শক্ত করে ধরে এক পা একপা করে এগুচ্ছে। যতোই এগুচ্ছে ততই ভেতরে থাকা গুনগুন শব্দটা যেনো বেড়েই চলেছে।সাথে ধোঁয়ার পরিমানটাও বেশি হচ্ছে। অহনার মিনমিনিয়ে কয়েকবার বললো ” কে? কে ভেতরে?বাইরে এসো “। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না।বরং সে লক্ষ্য করলো যখন সে ডাকছে তখন কিছু সময়ের জন্য গুনগুন শব্দটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার শুরু হচ্ছে।অহনা গুহার একদম নিকটে চলে আসলো।বুকে একটা গাঢ় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে।হঠাৎ তার সামনে একটা অতি সুন্দর রমনী।আসলো।রমনীকে দেখে অহনা ভয়ে চেচিয়ে উঠলো।

রমনীটি অতি রূপবতী। হবে সে মাটিতে স্পর্শ করে নেই,ভাসমান অবস্থায় দারিয়ে আছে।তার শরীর দিয়ে আলোর ছাঁটা বেড় হচ্ছে। অহনা ভয়ে ভয়ে বললো

” ক…ক…কে তুমি? ”

” আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ”

” মানে? ”

” মানে আমি তোমার ভালো চাই।তোমায় বাঁচাতে এসেছি ”

” বাঁচাতে কেন? আমার কি এমন হবে যে আমায় বাঁচাতে তুমি এসেছো? ”

” তোমার অনেক বড় বিপদ ”

” কি বিপদ? ”

” সেটা এখন বলার শক্তি নেই আমার,তবে তোমার বিপদ হবে,অনেক বড় বিপদ ”

” তুমি কে? ”

” আমি এই দুনিয়ার সৌন্দর্যের দেখাশোনা করি।এই মায়ার দুনিয়ার রাজকন্যা আমি ”

” কি বলছো তুমি? এই পৃথিবীর দেখাশোনা করছো মানে? পৃথিবীর রাজকন্যা হয় নাকি কোনোদিন? ”

ভাসমান রমনী নিজের চোখ বন্ধ করলো।কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে বললো

” তুমি পৃথিবী থেকে এসেছো? ”

” পৃথিবী থেকে এসেছি মানে?আমি তো পৃথিবীতেই আছি।”

” তুমি পৃথিবীতে নেই।এটা অন্য জগৎ। এটাকে মায়ার জগৎ বলে।”

অহনার বুকটা কেঁপে উঠলো।মায়ার জগৎ মানে? এরকম কি কখনো হয় নাকি? পৃথিবী থেকে আমি অন্য কোথাও কিভাবে আসতে পারি?। তখন রমনীটি বলে উঠলো

” তুমি জালে পড়ে গেছো,এখান থেকে বেরুতে না পাড়লে তোমার অনেক বড় বিপদ হবে ”

” আমি তোমায় বিশ্বাস করছি না।তুমি যা তা বলবে সেটাই আমায় মেনে নিতে হবে? ”

” আমি তেমার অতীতকে তোমার সামনে উপস্থিত করছি,তুমি নিজেই দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিও।আমি তোমার ভালো চাই”

রমনীটি নিজের হাতে একটি বলয় তৈরি করলো।সেখানে অহনা নিজের বাবা,মা কে দেখতে পাচ্ছে।এরপর একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলো সে।

বিয়ের দিনের ঘটনা।সে যখন অধির আগ্রহ নিয়ে বিছানায় বসে আছে তখনি দরজা খুলে অনুভব ভেতরে ঢুকলো।ভেতরে ঢোকার পর অহনার কাছে গিয়ে ওকে স্পর্শ করতেই সাথে সাথে বিছানায় টলে পড়ে অহনা।

এটুকু দেখে অহনা শুকনো মুখে একবার সেই রমনীর দিকে তাকালো।তারপর আবারো বলয়ের দিকে চেয়ে রইলো

অহনা বিছানায় টলে পড়তেই অনুভব একটা জানোয়ারে পরিনত হচ্ছে। ঠিক যেমনটা সে কাল রাতে হতে দেখেছে।মুহূর্তেই অহনার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে উঠলো।

হায়েনারুপী হয়ে সে অহনাকে নিজের কাধে নিলো।এরপর সেখান থেকে জানাল ভেঙ্গে এক লাফ দিয়ে বড় বট গাছটার ডালে গেলো।এরপর একটা ভয়ঙ্কর গর্জন করে ওখান থেকে এক লাফ দিয়ে অনেকটা ওপরে উঠতে লাগলো।এরপর দেখলো চারিদিকে আলো।কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।কিছুক্ষণ পর একটা পাহাড়ের চূড়ায় এসে নামলো হায়েনারুপী অনুভব। এরপর সে অহনাকে ঘাসের ওপর রাখলো।স্বাভাবিক মানুষ হয়ে অহনাকে কোলে নিয়ে সেই পুরনো বাড়ির ভেতরে গেলো ।

এরপর বলয়টি অদৃশ্য হয়ে গেলো।অহনা মনে মনে ভাবলে,এজন্যই সে বাসররাতে ঘুমিয়ে ছিলো।হঠাৎ কোমরে স্পর্শে সে জেগে উঠেছিল। তখন অনেক চেষ্টা করেছিলো বিষয়টা বুঝার।কিন্তু এখন সে সবটা বুঝে গেছে।

রমনীর দিকে তাকাতেই দেখলো সেখানে কেউ নেই।আশেপাশে তাকিয়েও তাকে দেখতে পেলো না।সামনে তাকাতেই গুহার ভেতর থেকে কেউ একজন বেড় হতে দেখছে অহনা।গুহা থেকে লোকটা বেড় হলো।আলোয় লোকটির মুখ দেখে অহনা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো।অস্পষ্ট স্বরে বললো,

” না,এটা কিভাবে সম্ভব?এটা হতে পারে না।কে..কে তুমি? ”

চলবে?

#Love_with_vampire [৫]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

গুহা থেকে লোকটা বেড় হলো।আলোয় লোকটির মুখ দেখে অহনা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো।অস্পষ্ট স্বরে বললো,

” না,এটা কিভাবে সম্ভব?এটা হতে পারে না।কে..কে তুমি? ”

তার সারা শরীর দৃশ্যমান হলো।সামনে যে দারিয়ে আছে সে একটি মেয়ে।মেয়েটি দেখতে হুবহু অহনার মতো।অহনা আবারো বললো

” কথা বলছো না কেন? কে তুমি? ”

সামনে অহনার রুপে দারিয়ে থাকা মেয়েটির সারা শরীর থেকে আলোর আভা বেড় হতে লাগলো।সে আভা এতোটাই প্রখর যে সহ্য করতে না পেরে অহনা হাত দিয়ে নিজের চোখ আড়াল করে রাখলো।

এখন আর সেই আলো চোখে লাগছে না।অহনা চোখ থেকে হালকা হাত সরালো।সামনে একটা বৃদ্ধ দারিয়ে আছে।অহনার সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে বৃদ্ধ লোকটি বললো

” ভয় পেয়ো না। আমি তোমার ক্ষতি করবো না ”

” কে আপনি? এলটু আগে আমার রুপে যে ছিলো সে কোথায়? ”

” আমি এই দুনিয়ায় আটকে পড়া মেয়েদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।”

” মানে? ”

” ওই দানবটা এর আগেও অনেক মেয়ের সর্বনাশ করতে চেয়েছিলো।আমি হতে দেই নি।আমি থাকতে ও কারো ক্ষতি করতে পারবে না ”

” কার কথা বলছেন আপনি? কোন দানব? ”

” তুমি জানো না মা? কার কথা বলছি? ”

” আ..আপনি কি অনুভবের কথা বলছেন? ”

” হ্যা।তোমার আগেও ও অনেক মেয়েকে এই দুনিয়ায় নিয়ে এসেছিলো”

” কি বলছেন আপনি ? ”

” হ্যা মা।তুমি হয়তো জানোনা,যুবতী মেয়ের র’ক্ত পানে ওর শক্তি দ্বিগুণ হয়ে যায় ”

কথাটি শুনে অহনার বুকটা কেঁপে উঠলো অহনার।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো

” অনুভব তাহলে ”

” হ্যা,ও মানুষ না।ও একটা ওয়েয়ারওয়াল্ফ ”

” ওয়েয়ারওয়াল্ফ ? মানে হায়েনাতে পরিণত হওয়া দানব প্রকৃতির কোনো পিশাচ? ”

” হ্যা। তবে সে এখন ভ্যাম্পেয়ারেও পরিণত হয়েছে ”

” ভ্যাম্পেয়ার? ”

” হ্যা।প্রতি ২০০ বছর পর পর যখন চাঁদের রেখা,সূর্যের রেখার সোজায় আসে তখন সেখান থেকে এই দুনিয়ায় একটা আলো পড়ে।সেই আলো পড়ার আগেই এই নেকড়ে দানবটা পৃথিবী থেকে কোনো না কোনো যুবতী মেয়ে খুজে নিয়ে আসে।আর যখন সেই চাঁদের আলো এই দুনিয়ায় পড়ে তখন সে নেকড়েতে পরিণত হয়।এবং যে যুবতীকে নিয়ে এসেছিলো সেই যুবতী মেয়ের শরীর থেকে রক্ত চুষে খায়।”

” তার মানে অনুভব আমায় এখানে নিয় এসেছে আমার রক্ত চুষে খেয়ে নিজের শক্তি বাড়াতে? ”

” হ্যা ” (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

” কিন্তু কাল রাতের চাঁদের আলোয় তো ও আমার রক্ত চুষে নেয় নি।”

” হ্যা নেয়নি কারন এখনো সেই সময় আসেনি।সেই সময় আসতে আর বেশি দেরি নেই।”

” তাহলে কাল রাতে চাঁদের আলো পড়তেই নেকড়েতে পরিণত হলো কিভাবে? ”

” ওয়েয়ারওয়াল্ফ রা চাঁদের আলো সহ্য করতে পারে না।এবং ওর ছদ্দবেশ নিয়ে থাকতে পছন্দ করে।ওদের শরীরে যদি চাঁদের স্নিগ্ধ আলো পড়ে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের আসল রুপে পরিণত হয়।চাঁদের আলো তাঁদের জন্য অভিশাপ ”

” আপনি এতোকিছু কিভাবে জানলেন? আর এই দুনিয়ায় কি আপনি ছাড়া আর কেউ নেই? ”

” আছে, সেটা হলো তুমি।এই দুনিয়াটা ওই পিশাচটার তৈরি।তবে এখন এখানে আমরা এই তিনজন ই আছি ”

” আপনার কোনো ক্ষতি করে না?!”

” আমার গুহার চারিদিক মন্ত্রসিদ্ধ করে রেখেছি।এই মন্ত্রসিদ্ধ রেখা কখনোই সে অতিক্রম করতে পারবে না।ধরে নাও সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকেই আমাকে পাঠানো হয়েছে এই সকল পিশাচদের থেকে তোমার মতো মানুষদের বাঁচাতে।”

” পিশাচদের মতো মানে? ওর মতো কি আরো অনেকে আছে? ”

” হ্যা। ওর যেমন এই দুনিয়া,তেমনি আরো হাজার হাজার ওয়েয়ারওয়াল্ফ আছে,ভ্যাম্পেয়ার আছে,আবার দুটোর মিশ্রনে ওয়েয়ারওয়াল্ফ ভ্যাম্পেয়ার ও আছে।তাদের নিজেদের একটা করে দুনিয়া আছে।আমার মতো তাদের ওখানেও কেউ না কেউ আছে।যে এই অশুভ শক্তি থেকে প্রতিনিয়ত যুবতী মেয়েদের রক্ষা করছে ”

” আপনি এতোকিছু কিভাবে জানলেন? ”

” হাহাহাহা,আমরা সব জানি মা, সব জানি ”

” আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে”

” প্রথমে অবিকল তোমার মতো দেখতে যে মেয়েকে দেখেছো সেটা আমি নিজেই ”

” আশ্চর্য আপনি কিভাবে জানলেন আমি এটা জিগ্যেস করবো?!”

” আমি সব জানি মা। আমি তেমার অপেক্ষায় ছিলাম।তবে তুমিই কি সেই রমনী নাকি সেই ভ্যাম্পেয়ারটা রুপ বদলে এসেছে সেটা পরিক্ষা করতে আমি নিজেকে ইচ্ছেরুপী বানিয়েছি।ইচ্ছেরুপী হলো যার দৃষ্টি আমার ওপর পড়বে সে তার নিজেকে আমার মধ্যে খুজে পাবে”

” এতে কি হবে? যদি সত্যিই ওই ভ্যাম্পেয়ারটা আসতো তাহলে কি হতো?

” তাহলে নিজের রুপের মতো অবিকল সামনে আরেকট রুপ দেখলে সে নিজের রুপে ফিরে যেতো।একই রুপে তারা দ্বিতীয় ব্যাক্তি সহ্য করতে পারে না”

অহনা নরম ঘাসের ওপর ধপ করে বসে পড়লো।এইসব বিষয় তার এই প্রথম শোনা।এগুলি যে সত্যি হতেও পারে এ বিষয় কখনো তার স্বপ্নেও আসেনি।অহনার খুব কান্না পেলো।নিজের বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে খুব ইচ্ছে করছে।চিৎকার করে কান্না করতে পারলে নিজেকে হাল্কা মনে হতো।কিন্তু না, নিজেকে সামলে নিলো অহনা।মনে মনে দৃঢ় সংকল্প নিলো,যেভাবেই হোক,এখান থেকে ফিরে যেতেই হবে।তখন বৃদ্ধ লোকটা বললো

” তুমি অনেক ক্লান্ত মা,ভেতরে চলো।বিশ্রাম নেবে”

” আমার খুব ভয় করছে, যদি ওই ভ্যাম্পেয়ারটা চলে আসে এখানে তাহলে? ”

” এখন সে আসবে না। পনেরো দিন পর আসবে ”

” কেনো? পনেরো দিন পর কেন? ”

” পনপরো দিন পর যখন পূর্নিমা কেটে গিয়ে অমাবস্যা হবে তখন সে আসবে।পূর্নিমার সময় তারা লুকিয়ে থাকে গভীর অন্ধকারে,যেন তাদের শরীরে চাঁদের আলো না পড়ে ”

অহনা এবার বুঝতে পারলো কেন চাঁদের আলো পড়তেই অনুভব বলেছিলো সে এতো বড় ভুল কিভাবে করলো।সম্ভবত সে কাল রাতের পুর্নিমার কথা ভুলে গিয়েছিলো।

বৃদ্ধ লোকটির সাথে অহনা ভেতরে প্রবেশ করলো।সেখানে কিছু হাড়গোড় পড়ে আছে।সামনে চার কোনা একটা ব্যাধি,যেখানে আগুল জ্বলজ্বল করছে। অহনা সেখানকার মাটিতে বসলো।বৃদ্ধ লোকটা তার ঝুড়ি থেকে কিছু ফল অহনার দিকে এগিয়ে দিলো।অহনার কেন জানি হঠাৎ প্রবল খিদে পাচ্ছে। খিদেটা আবিষ্কার করেছে গুহায় ঢোকার সাথে সাথে।এতোকিছু না ভেবে সামনে রাখা ফলের ঝুড়ি থেকে কিছু ফল ভয় ভয় নিয়ে খাচ্ছে আর বৃদ্ধ লোকটির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।

উনি এখন সম্ভবত ধ্যানে বসেছে।তার শরীর থেকে হাল্কা আলোর আভা বেরুচ্ছে।অহনা গুটিশুটি মেরে বসে আছে।বৃদ্ধ লোকটি ধ্যান ভঙ্গ করে চোখ খুললেন।অহনা মৃদু স্বরে বললো

” সাধু বাবা,আমার একটা কথা ছিলো ”

” বলো মা, কি জানতে চাও ”

” আমি এই দুনিয়ায় আসার পর এই প্রথম খিদে অনুভব করলাম কেন? এর আগে তো আমার খিদে অনুভব হয়নি ”

” এই সবই ওর মায়া,।এই গুহায় ওর তৈরি কোনো মায়া কাজ করে না।তাই তুমি ঢোকার সাথে সাথেই খিদে অনুভব হয়েছে।তোমায় ক্লান্ত লাগছে।তুমি বিশ্রাম করো।ভেতরে তোমার জন্য বিছানা করা আছে।আমায় ধ্যানে বসতে হবে।তোমার মুক্তির পথ খুজতে হবে”

অহনা সাধু বাবার সামনে মাথা ঝুঁকে ভেতরে চলে গেলো।লতা পাতা দিয়ে দোলনার মতো একটি বিছানা। সেখানে ফুল দিয়ে ভর্তি।এতেসুন্দর বিছানা সে আগে কখনো দেখেনি।এখন ওর খুব ঘুম পাচ্ছে। বওছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো অহনা।সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ বেয়ে ঘুম চলে এলো।

হঠাৎ ঘুমের মাঝে অহনা একটা অস্ফুট স্বরে আওয়াজ করলো।সারা শরীর ছটফট করতে লাগলো।তার মনে হচ্ছে কেউ তার গলা টিপে ধরেছে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here