Love_with_vampire,০৬,০৭

0
621

#Love_with_vampire,০৬,০৭
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
০৬

হঠাৎ ঘুমের মাঝে অহনা একটা অস্ফুট স্বরে আওয়াজ করলো।সারা শরীর ছটফট করতে লাগলো।তার মনে হচ্ছে কেউ তার গলা টিপে ধরেছে।

অহনা আতঙ্কে বিছানা থেকে উঠে বসলো।দেখতে পেলো সামনে সেই বৃদ্ধ লোকটা একটা কুন্ডুলি নিয়ে দারিয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে বিরবির করে কি যেন বলছে।অহনার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। মনে মনে ভালো এই লোকটা তার কোনো ক্ষতি করে ফেলবে না তো?।

বৃদ্ধ লোকটা চোখ খুললো।তার সারাশরীর কাঁপছে। অহনা ভয়ে ভয়ে বললো

” আপনি এখানে? ”

” হ্যা মা,তোমার মধ্যে সংজীবনী আত্মার প্রবেশ করার জন্য এসেছি ”

” সংজীবনী আত্মা মানে? কি বলছেন আপনি ? ”

” ভয়ের কিছু নেই মা,এই আত্মা তোমাকে ওই নেকড়ে দানবের থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে ”

লোকটা হাতে থাকা কুন্ডুলি থেকে কয়েক ফোঁটা জল সামনে মাটিতে ফেললেন।সেখান কার মাটি থেকে আলোর আভা আসতে লাগলো।একটা আলোর বলয় ধিরে ধিরে বড় হতে লাগলো।তীব্র আলোর আভা অহনার চোখে পড়তেই হাত দিয়ে অহনা নিজের মুখমন্ডল ঢেকে নিলো।এরপর ধিরে ধিরে চোখ খুললো।

সামনে তাকাতেই দেখলো গুহার বাহিরে যে রমনীকে দেখেছিলো সে ভাসমান অবস্থায় আছে।অহনার দিকে তাকিয়ে রমনীর ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসির প্রলেপ পড়লো।

” মা রে,এই হলো সেই আত্মা। যে তোমারে রক্ষা করবে ”

” কিন্তু এই আত্মা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে কিভাবে? আমার প্রচন্ড ভয় করছে ”

” আত্মাকে প্রবেশ করাতে তোমায় নিদ্রা যেতে হবে।তুমি এখন যলমন আছো,এই আত্মা শরীরে প্রবেশের পর ঠিক তেমনি থাকবে।শুধু তোমার বিপদের সময় এই শুভ আত্মা তোমায় রক্ষা করবে।তোমার সাথে থাকবে ”

” আমার অনেক ভয় করছে, ”

” মা, তেমন ব্যাথা অনুভূত হবে না। শুধু গলায় একটু চাপ পড়বে।আত্মার প্রবেশ নিশ্বাসের সাথে হবে।তাই গলায় একটু ব্যাথা পেতে পারো”

অহনার এই বৃদ্ধর কথা শোনা ছাড়া কোনো উপায় রইলো না।কিই বা করবে সে? এই মায়ার দুনিয়া থেকে বাঁচার জন্য হলেও এই বৃদ্ধর সকল কথা তাকে শুনতে হবে।

অহনা বিছানায় শুয়ে পড়লো। ভয়ে বুকটা ফেটে যাবে এমন মনে হচ্ছে। নিজের শরীরে আরেকটা আত্মার প্রবেশ ঘটতে চলেছে।বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক নয়।

বৃদ্ধ লোকটি কুন্ডলী থেকে হাতে জল নিলো।সেই জল অহনার শরীরে ছিটিয়ে দিতেই অহনা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।সেই রমনী বাতাসের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।নিশ্বাসের সাথে প্রবেশ করলো অহনার শরীরে।অহনা ঘুমের ঘোরেই ব্যাথায় একটু নড়েচড়ে উঠলো।

_____________

আলোর তৈরি এই পাহাড়,পর্বতের সকল কৃত্রিম জীব ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে।নরম কোমল ঘাসগুলির শরীরে ভরে আছে রক্ত। চারিদিকে থমথমে পরিবেশ বিরাজমান। সূর্য অস্ত যাচ্ছে।দুটি পাহাড়ের মাঝ বরাবর ফাটল অংশের ভেতরে নেকড়ে জাতীয় একটি পশু গর্জন করছে।নেকড়ের মতো মুখ দিয়ে ঘন লালা পড়ছে।সারা শরীরে রক্ত,কাটা ছেঁড়ার দাগ।সূর্য অস্ত যেতেই চাঁদের আলো পড়লো সেই দুনিয়ায়। হিংস্র সেই পশুটি আরো হিংস্ররুপ ধারন করলো।ফাটল থেকে বেড় হয়ে পাহাড়ে দারালো।চাঁদের দিকে চেয়ে বিকট গর্জন করে উঠলো।গর্জনের শব্দে ফাটলে থাকা বাদুড়গুলি উড়ে গেলো দূর আকাশে।

_________

অহনার ঘুম ভাঙলো। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।তার সারা শরীর ব্যাথা হয়ে আছে।অনেক কষ্ট করে বিছানা থেকে নিজেকো সরিয়ে নিলো।বৃদ্ধ লোকটির কাছে যেতেই কেউ একজন বললো

” কোথায় যাচ্ছো অহনা ”

অহনা আশেপাশে তাকালো।কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না।মনে মনে ভাবলো ” যে আত্মাকে শরীরে প্রবেশ করিয়েছে সেই কথা বলছে না তো?। বিষয়টা ভাবতেই অনহার কান্না পেয়ে গেলো।নরম গলায় বললো

” তুমি কি সেই আত্মা? ”

” হ্যা।তোমার মন খারাপ কেন? ”

” আমার মন খারাপ তুমি কিভাবে জানো? ”

” তোমার অনুভূতির সাথে মিশে আছি আমি ”

” হ্যা মন খারাপ।আর কেন মন খারাপ সেটাও তো তাহলে জানার কথা তোমার ”

” অনুভবের জন্য মন খারাপ হচ্ছে তোমার।দেখো সত্যিটা মেনে নাও।ভুলে যাও অনুভবকে। ”

” আমি ওকে ভুলতে পারবো না।যতোই হোক,সে আমার স্বামী।আচ্ছা উনাকে কি এই রুপ থেকে মুক্তি দেওয়া যাবে না? ”

” যাবে কি না সেটা আমি জানিনা।তবে এই বৃদ্ধ এর আগেও চেষ্টা করেছিলো কয়েকবার।কিন্তু পারেনি।তার কাছে হয়তো কোনো উপায় আছে, যেটার মাধ্যমে অনুভব এই রুপ থেকে মুক্তি পেলেও পেতে পারে।”

” সত্যি বলছো তুমি? ”

ভেতর থেকে আর কোনো উত্তর পেলো না অহনা।অনুভবের এই হিংস্র রুপ থেকে মুক্তির কথাটা অহনাকে অনেক আশ্বস্ত করলো।সে ছুটে গেলো সেই বৃদ্ধ লোকটির কাছে।দেখলো তিনি ব্যাধিতে কি কি যেনো ঢালছেন।এবং বিড়বিড় করে কিসব বলছে।অহনা দুরে গিয়ে বসে রইলো।আর মনে মনে অনুভবের সাথে কাটানো সেই দিনের কথাগুলি ভাবতে লাগলো।ভাবতে গেলে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে অহনা।বৃদ্ধ লোকটি ব্যাধি থেকে উঠে দারালো।অহনা কল্পনার জগৎ থেকে বেড় হয়ে বৃদ্ধ লোকটির কাছে গেলো।

” শরীরের ব্যাথা কমেছে মা?

” জি ”

” আর কিছুদিন অপেক্ষা করো মা,এরপরেই তুমি ফেরত যেতে পারবে পৃথিবীতে।মুক্তি পাবে এই দুনিয়া থেকে ”

” আমার একটা বিষয় জানার ছিলো ”

” বলো ”

” অনুভবকে কি এই হিংস্র পশুর রুপ থেকে মুক্তি করা সম্ভব? ”

অহনার কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি মনে হলো একটু অবাব হয়েছেন।তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন

” তুমি ওর মুক্তির কথা বলছো? ”

” জি,আমি চাই ও এই রুপ থেকে মুক্তি পাক। আমি ওকে স্বামী হিসেবে পেতে চাই, ”

” এমন একটা হিংস্র ভ্যাম্পেয়ারকে তুমি স্বাভাবিক করার কথা বলছো? ”

” হ্যা। আর যাই হোক,সে তো আমার স্বামী।আর আমি ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। এই রুপ থেকে মুক্তির কি কোনো পথ আছে? এর জন্য আমাকে যা করতে হবে আমি তাই করবো।”

” তুমি সত্যিই করবে? ”

” হ্যা করবো।এর জন্য যদি আমার জীবন বাজি রাখতে হয় তবুও আমি রাজি ”

” তবে আমি তোমায় বলবো।হয়তো সময় এসে গেছে সব কিছুর সমাপ্তির ”

” সমাপ্তির সময় হয়ে এসেছে মানে? ”

” হ্যা।সব কিছুর মুক্তি। এই মায়ার দুনিয়া,এই ভ্যাম্পেয়ার।এমন কি আমার নিজের ”

” আপনার নিজের বলতে ? ”

” আমার সৃষ্টি হয়েছিল এই মায়ার দুনিয়ার জন্য। যদি এই দুনিয়াই না থাকে তাহলে আমিও মুক্তি পাবো।এই মুক্তির প্রতিক্ষায় আছি। তার আগে তোমায় জানতে হবে অনুভব কিভাবে ভ্যাম্পেয়ারে পরিনত হলো ”

” পরিণত হলো মানে? অনুভব কি আগে মানুষ ছিলো? ”

” হ্যা ”

কথাটা শুনা মাত্র অহনার সাড়া শরীর শিউরে উঠলো।মনে হচ্ছে সে একটু হলেও আশা ফিরে পাচ্ছে।অহনা একটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো।বৃদ্ধ লোকটি বলা শুরু করলো

” অনুভবের ভ্যাম্পেয়ার হওয়ার বিষয়টা তোমার জানা দরকার।সময়টা তখন শীতকাল। চারিদিকে কুয়াশায় ঘেরা।অনুভব এবং তার বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিলো তারা পাহাড়ে ক্যাম্পিং করবে।যেমন কথা তেমনি কাজ।চার বন্ধু মিলে বেড়িয়ে পড়লো পাহাড়ে ক্যাম্পিংয়ের উদ্দেশ্য। পাহাড়টা ছিলো অভিশপ্ত। সেখানে যারা যায় তারা বেশির ভাগ সময় ফিরে আসে না।

_______

সিহাবঃ দোস্ত এই পাহাড়ে না গেলে হয় না? এই পাহাড়ে গেলে নাকি কেউ আর ফিরে আসে না,

অনুভবঃ হাহাহাহা, রুপকথার গল্প বিশ্বাস করে বসে আছিস দেখছি তুই,চল আমার সাথে,কিচ্ছু হবে না।আর না হলো থাক আমি একাই যাবো

আশাঃ অনুভব আমি তোর সাথে যাবো

সিহাবঃ তুই তো যাবিই,অনুভব যদি এখন আগ্নেয়গিরিতে সাঁতার কাটতে চায় তাহলে সেখানেও তুই বলবি তুই ওর সাথে যাবি।

আশাঃ আমি তো তোদের মতে না যে বন্ধুকে একাই যেতে দিবো।

সিহাবঃ ইশশশ রে,বন্ধুর ওপর কত্তো কেয়ার করে।

সায়রাঃ উফফ চুপ করবি তোরা? এখানে এসেছিস কি ঝগড়ার জন্য?

সিহাবঃ আমার তো ঝগড়াগুলির তোর চোখে পড়ে আর কিছুতো চোখে পড়ে না

অনুভবঃ তোরা থাক ভাই,আমি একাই যাচ্ছি।ফাই প্যাচাল কর তোরা।সায়রা যাবি তুই

সায়রাঃ হ্যা চল।

অনুভব আর সায়রা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে পাহাড়ের কাছে হাটতে লাগলো।আশা যেতেই সিহাব ওর হাত টেনে ধরে রইলো।আশা বিরক্ত স্বরে বললো

“কি হলো আবার? আটকাচ্ছিস কেন? ”

” দোস্ত সায়রা কবে বুঝবে আমি ওরে ভালোবাসি? ”

” সেই কথা এখন এখানপ বলার কি আছে? এখানপ এসছি একটা এডভেঞ্চারে, আবেগ নিয়ে পড়ে না থেকে ইনজয় করবি চল। অনুভবও তো আমায় তেমন পাত্তা দেয় না।তবে আমি জানি ও আমায় ভালোবাসে ”

” আমি বললাম আমার কষ্টের কথা,আর এখন উল্টে তুই শুরু করলি তাই না?

” আচ্ছা দোস্ত ভুল হইছে আমার,এখন চল, ওরা দেখ কতদূরে চলে গেছে ”

” তুই এখন কিছু একটা করবি কি না তাই বল ”

” আমি কি করবো? ”

” তুই অনুভবকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাটবি,আমাদের পিছনে ফেলে।যাতে আমরা দু’জনই আলাদা থাকতে পারি। এই সুন্দর ওয়েদারে আমি ঠাস করে প্রপোজ করে ফেলবো।তারপর চড় থাপ্পড় কি খাই খাবো।”

” হাহাহাহা,আচ্ছা ঠিক আছে।তবে আমার কি মনে হয় দোস্ত জানিস? সায়রাও তোকে ভালোবাসে ”

চলবে?

#Love_with_vampire [৮]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

” এখন অনুভবকে এই অভিশাপ থেকে বাঁচাতে আমায় কি করতে হবে? আমি সব করতে রাজি ”

” আমার সেটা জানা নেই মা,আমায় সাধনায় বসে সে উপায় খুজতে হবে।কিভাবে সে আবার মানুষ রুপে ফিরে যেতে পারবে।”

” আমি কি একটু বাহিরে যেতে পারি? এখানে আমার কেমন দম বন্ধ লাগে।”

” হ্যা যেতে পারো।তোমার সাথে যে শুভ আত্মাটা আছে সে সবসময় তোমায় রক্ষা করবে।তোমার বিপদ হলে সেটা আগেই ও জানিয়ে দিবে।ওর লথা মতো তুমি চলবে।বিঝতে পেরেছো? ”

“হ্যা পেরেছি।আমি তেমন কোথাও যাবো না।গুহার বাহিরে একটা সরোবর আছে,সেখানে পদ্মফুল ফুটে আছে।সেখানেই যাবো”

“যেখানেই যাও।শুধু মনে রাখবে তোমার সাথের আত্মার কথা শুনবে।ওর কথার বিরুদ্ধে যাবে না”

” আচ্ছা ”

” আমায় সাধনায় বসতে হবে।দেখতে হবে কোন উপায়ে এর থেকে অনুভবের মুক্তি পেতে পারে। ”

বৃদ্ধ লোকটি সাধনায় বসলো।অহনার মন চাইছে একটু বাইরে বের হতে।কিন্তু একটু ভয় ভয় করছে বেড় হতে।মনের বিরুদ্ধতা সে সিদ্ধান্ত নিলো বাহিরে বেড় হবে।চুপচাপ বৃদ্ধর সামনে দিয়ে গুহার মুখের কাছে যেতে লাগলো। সামনে যেতেই একটা চাপা স্বরে কেউ বলে উঠলো

” বাহিরে বেরুলে তোমার বিপদ হতে পারে।ভ্যাম্পেয়ারটার চোখে পড়লে কিন্তু রক্ষা থাকবে না আর ”

অহনা একটু ভয় পেলো।কে কথা বলছে? আশেপাশে তাকালো,কাউকে দেখতে পেলো না।পরোক্ষনেই মনে হলো তার মধ্যেই তো একটা আত্মার প্রবেশ ঘটেছে।চাপা স্বরে সে আবারো বললো

” তোমাদের মানুষের মধ্যে এতো কিছু চিন্তাভাবনা আসে কিভাবে? ”

অহনা ফিসফিস করে বললো

” চিন্তাভাবনা আসে মানে? ”

” হু,এই যে তুমি কতো কিছু চিন্তা করার পর মনে করতে পারলে আমার অবস্থান তোমার ভেতর ”

” কেন এই জগতের কেউ কি চিন্তা ভাবনা করতে পারে না? ”

” না। আমাদের চিন্তা করার তেমন ক্ষমতা নেই।আমরা যখন যা ঘটবে তার পূর্ব মুহুর্তেই সেটা জানতে পারি ”

” পূর্ব মুহুর্তেই জানতে পারো? ”

” হ্যা ”

” কিভাবে জানতে পারো? কে বলে তোমাদের? ”

” কেউ বলে না।আপনা আপনিই জানতে পারি।ধরে নাও এটা এই অদ্ভুত জগতের মতোই আমাদের একটা অদ্ভুত শক্তি ”

” আচ্ছা আমি কি তোমাদের বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করতে পারি? ”

” হ্যা অবশ্যই,বলো কি জানতে চাও ”

” তোমাদের জন্ম হলো কিভাবে? ”

” আমাদের জন্ম নেই ”

” তাহলে তুমি কি এমনে এমনেই চলে আসছো? ”

” আমরা শুধু আলোর তৈরী। এই দুনিয়ার সবকিছুই আলোর তৈরী ”

” যদি অনুভবের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি ঘটে তাহলে তোমাদেরও তো মুক্তি হবে তাই না? ”

” হ্যা ”

” তখন তোমরা কোথায় যাবে? তোমাদেরও কি মুক্তির পর যাওয়ার কোনো স্থান আছে? না মানে আমাদের মানুষের যেমন মৃত্যু হলে তার কর্ম অনুযায়ী নরকে, স্বর্গে গমন করে।তেমন কি তোমাদেরও কোনো কিছু আছে? ”

” না,আমাদের তেমন কিছু নেই,আমাদের মুক্তি হলে আমরা আলোর মাঝে তলিয়ে যাই।আলোতেই মিলে যায় আমাদের শরীর ”

” আচ্ছা আরেকটা কথা,আমাদের মানুষের তো অনেক ধর্ম আছে।হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আরো অনেক অনেক ধর্ম আছে।আমরা তাদের প্রসন্ন করার চেষ্টা করিচতাদের দেওয়া আদেশ মেনে চলি।তাদের হৃদয়ে ধারন করি।তোমাদেরও কি সৃষ্টিকর্তা বা ধর্ম আলাদা আলাদা? ”

” আসলে আমাদের সৃষ্টিকর্তা নেই।আর আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষতাও নেই।”

” ও আচ্ছা ”

” আর তোমাদের মতো মানুষেরও জানার বাহিরেও অনেক অলৌকিক বিষয় আছে,প্রতিনিয়ত ঘটে।যেগুলো হয়তো তোমার মতো কিছু মানুষ জানতে পারে।কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে তারাও ভুলে যায় ”

” ভুলে যায়? ”

” হ্যা ভুলে যায়।তুমিও ভুলে যাবে ”

” ভুলে যাবো? এখানে ঘটে যাওয়া সবকিছুই ভুলে যাবো? ”

” হ্যা।ভুলে যাবে ”

” কিন্তু কিভাবে? ”

” পৃথিবীতে যেতেই তোমার মস্তিষ্ক থেকে সকল বিষয় মুছে ফেলা হবে।তোমার এই দুনিয়ার কোনো কথাই মনে পড়বে না ”

” এটা করা কি খুব প্রয়োজন? জানলেই বা কি? ”

” এই দুনিয়ার কথা শুধু মানুষ স্বপ্নেই ভাবতে পারে।বাস্তবে ফেরার সাথে সাথেই ভুলে যাবে এটাই নিয়ম ”

” কিন্তু আমি তো এখন স্বপ্ন দেখছি না ”

” দেখছো।তুমি এখনো ঘুমিয়ে আছো।এবং স্বপ্ন দেখছো ”

” কি বলছো তুমি? হাহাহাহা তুমি অসুস্থ হয়ে গেছো,তোমার বিশ্রাম প্রয়োজন ”

” আমাদের কোনো বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না।আমরা ক্লান্ত হইনা।আর আমি যা বললাম সেটা সত্যি। তুমি সত্যিই এখন ঘুমিয়ে আছো ”

অহনা মনে মনে ভাবলো তার শরীরে যে আত্মাটি রয়েছে সে নিতান্তই বোকা,মানষিক ভাবে সে সুস্থ না।তার বলা কথা বিশ্বাস করা না করা একই।তবুও মনের একটা কৌতুহল থেকে প্রশ্ন করলো

” কিভাবে আমি ঘুমিয়ে আছি? ঘুমিয়ে থাকলে এই সব কিছুই কি স্বপ্ন? তার মানে আমি যদি এখন ঘুমিয়ে পড়ি,এবং একটা স্বপ্ন দেখি তাহলে আমি স্বপ্নের মধ্যেই ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখবো? হাহাহাহা ”

” তুমি আমার কথা আগে শোনো তারপর নাহয়….”

” তুমি চুপ থাকো।আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না।তুমি কোনো কাজের না।স্বপ্নে মানুষ নিজের শরীর নিজেই দেখতে পারে।আমি তো নিজের শরীর দেখতে পারছি না।অতএব আমি স্বপ্ন না বাস্তবে আছি।আমি চাই তুমি আমার শরীর থেকে বেড় হও।তোমার মতো বোকা মেয়ে আমার কোনো উপকার করতে পারবে না ”

” তোমার উচিৎ আমার কথা শোনা। সবটা তোমার জানা দরকার ”

” হাহাহাহাহা,,আচ্ছা বলো,আমার তো এখন কোনো তারা নেই।তোমার আজাইরা কথাই নাহয় শুনি।বলো আমার কি জানা দরকার? ”

” এই মুহুর্তে বাস্তবে পৃথিবীতে তুমি কি অবস্থায় আছো জানো? ”

অহনা তাচ্ছিল্যের স্বরে হাসতে হাসতো বললো –

” কি অবস্থায় আছি? ”

” তুমি বর্তমানে পৃথিবীতে মৃত অবস্থায় শুয়ে আছো ”

কথাএা শোনা মাত্র অহনা হাসতে হাসতে উঠে দারালো।অহনার এখন মনে হচ্ছে এই আত্মার শুধু অকর্মাই নয়,এর কাজ আজাইরা প্যাচাল পেরে আনন্দ দেওয়া।অহনার হাসি দেখে ভেতরে থাকা আত্মাটাও হাসছে।অহনা হাসি থামালো।গম্ভীর স্বরে বললো-

” তুমি হাসছো কেন? ”

” তোমার শরীরে আমার অবস্থান এখন।তুমি যা করবে আমাকেও সেটা কিছুটা প্রভাবিত করে।তুমি হাসলে আমারো হাসতে ইচ্ছে করে,তুমি কাঁদলে আমারো কাঁদতে ইচ্ছে করে।তোমার আনন্দ, কষ্ট সব আমারো অনুভূতি জাগায় ”

” একটা কথা শুনবে? ”

” হ্যা ”

” তুমি আমার শরীর থেকে বেড়িয়ে যাও,তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া,তুমি আমার শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাও ”

” আমার সাহায্য তোমার প্রয়োজন। ”

এবার অহনা কিছুটা রেগে গেলো।রেগে রেগে কর্কষ গলায় বললো-

” তোমার কোনো সাহায্য আমার প্রয়োজন নেই।তোমার মতো আজাইরা কথা বলা কোনো আত্মা অন্তত কোনো কাজে আাসার কথা না।তুমি বিদেয় হও ”

” আমি জানিনা আমি কিভাবে বললে তুমি বিশ্বাস করবে,তবে আমি যা বলছি সব সত্যি বলতেছি।তোমার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি ওই বৃদ্ধ লোকটিকে বলতে পারো।তার কথা নিশ্চয়ই তোমার বিশ্বাস হবে? আর আমার অবস্থান তোমার শরীরে না হলে আমি বলয় তৈরী করে তোমায় দেখাতাম সব সত্যিটা।”

অহনার এখন কেমন যেন কথাগুলি সত্যি বলে মনে হচ্ছে।নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলো।প্রথম দেখায় সে যেগুলি দেখিয়েছিলো সেসবই তো সত্যি ছিলো।আর সে মিথ্যাই বা কেনো বলবে? তবে কি এই কথাগুলিও সত্যি? আমি কি বাস্তবে পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই? আমার কি সত্যিই মৃত্যু হয়েছে? যদি পৃথিবীতে আমার মৃত্যু হয়েই থাকে তাহলে আমি পৃথিবীতে ফিরে যাবো কিভাবে? কি হতে চলেছে এসব আমার সাথে?

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here