#Love_with_vampire,১১,১২
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
১১
অহনা দুটি কাপ হাতে করে রুমে আসলো।অনুভবের দিকে তাকাতেই সে বিস্মিত,হতভম্ব হয়ে দারিয়ে রইলো।যেনো এখনি দম বন্ধ হয়ে যাবে।
অনুভব জেগে আছে।লাল টকটকে চোখ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে অহনার দিকে।অহনার সারা শরীর হিম হয়ে আসলো।মনে মনে ভাবলো, অনুভব কি সবকিছু বুঝতে পেরে গেলো নাকি?।কাপা কাপা স্বরে অহনা জিগ্যেস করলো
” আপনি জেগে আছেন? ঘুমাননি? ”
” কোথায় গিয়েছিলে তুমি? ”
” না মানে আ..আসলে ”
” তোতলানোর কি আছে,বললেই হতো রান্নাঘরে গিয়েছিলে,এতো ভয়ের কি আছে? ”
” আপনি জানলেন কিভাবে? যে আমি রান্নাঘরে গিয়েছিলাম ”
” তোমার হাতে চায়ের কাপ দেখে ”
” ও হ্যা হ্যা।আমিতো চা করার জন্য গিয়েছিলাম।এই নেন চা ”
” এত রাতে কেউ চা খায়? ”
” ঘুম আসছিলো না।তাই ভাবলাম… ”
” চলো ছাদে যাই ”
অহনার কথা শেষ না হতেই অনুভব বিছানা থেকে উঠে অহনার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে ছাদে চলে গেলো।আকষ্মিক সবকিছু হয়ে যাওয়ায় অহনা হতভম্ব হয়ে রইলো।
ছাদের কার্নিশে ভর করে দারিয়ে আছে অনুভব।অহনা তার কিছুটা দূরে দারিয়ে আছে।দুজনার হাতে চায়ের কাপ।অহনা কাপটা মুখে দিয়ে আবার সরিয়ে নিচ্ছে। মূলত তার চিন্তার শেষ নেই।অনুভব চায়ের কাপ মুখে দিচ্ছে না।সে তাকিয়ে আছে সামনের পাহাড়ের দিকে।অহনা মনে মনে ভাবলো ” পাহাড়ে কি এমন দেখছে,চা খাচ্ছে না কেন”। মৃদু স্বরে বললো
” চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ”
অনুভব কোনো উত্তর দিলো না।অহনার কথায় সে কাপটা মুখের কাছে আনলো।অহনার বুকের স্পন্দন বাড়তে লাগলো।চোখ বড় বড় করে অহনা তাকিয়ে আছে অনুভবের দিকে।
অনুভব চায়ে চুমুক দিলো।দিয়েই অহনার দিকে সংকুচিত চোখে তাকালো।এই চাহনিতে অহনা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে।অনুভব বললো
” চায়ে কি দিয়েছো? ”
কথাটা শুনে অহনা নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলো না।কানির্শে হাত রেখে ভর করে দারালো।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। বুকের স্পন্দন প্রচন্ড বেড়ে গেলো।অহনার মনে হলো অনুভব কি সত্যি সত্যিই বুঝে ফেললো যে চায়ে আমি শেকড় দিয়েছিলাম?।কাপা কাপা স্বরে উত্তর দিলো
” ক..ক..কিছু না তো, ”
” আনার মনে হলো এক্সট্রা কিছু একটা দিয়েছো।তবে যাই দাও,চা টা কিন্তু বেশ সুন্দর হয়েছে ”
অহনা ভাবলেশহীন অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো। অনুভবের চাহনি এখন স্বাভাবিক। সে স্বাভাবিক ভাবেই চায়ে চুমুক দিচ্ছে। অহনা হাতের পিঠ দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছলো।অনুভব আবারো বললো
” ছাদে তো ঠান্ডা বাতাস, তবুও ঘামছো যে? শরীর খারাপ? ”
বলেই অহনার কাছে এসে অনুভব তার হাত অহনার কপালে আলতো স্পর্শ করলো।অহনা হাত সরিয়ে দিয়ে বললো
” কিছু হয় নি,”
অনুভব আর কিছু বললো না।অহনার ভেতর থেকে একটা আওয়াজ আসলো ” কাজ হয়ে গেছে অহনা।সবকিছু এতো সহজে হয়ে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি “।
চা শেষ করে দু’জনই ঘুমুতে গেলো।অনুভব সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে গেলো মনে হলো।কিন্তু অহনার চোখে কোনো ঘুম নেই।শুধু সারারাত ছটফট করছে।একবার এপাশ,ওকবার ওপাশ ফিরছে।মনে মনে ভাবছে হাজারো কথা।
অহনা বিছানা থেকে উঠে দারালো। তার কিছুতেই ঘুম আসছে না।শুধু চিন্তা হচ্ছে। দরজাটা খুলে ছাদে গিয়ে দারালো।ক্ষীন স্বরে ডাকলো
” রুপা,রুপা? শুনছো? ”
” হু,”
” আমার খুব চিন্তা হচ্ছে ”
” সে তো হবার ই কথা।”
” বৃদ্ধ লোকটি এখন কি করছে বলতে পারো? ”
” তিনি সাধনায় বসেছেন।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি তিনি অনুভবকে নিজের বশে আনতে পারবেন ”
” তাহলে কি উনি ঠিক হয়ে যাবে?,”
” সেটা ঠিক বলতে পারছি না।”
” পৃথিবীর কোনো খোঁজ দিতে পারবে? আমার পরিবারের কথা খুব মনে হচ্ছে। ওদের খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ”
” তোমায় আই সি ইউ তে রাখা হয়েছে।কোনো ডাক্তার তোমার বিষয়টা বুঝতে পারছেন না।তাদের জীবনে এমন ঘটনা এই প্রথম।অনেক বড় বড় ডাক্তাররা এসে তোমায় দেখছে,কিন্তু তারা কোনো রোগ ধরতে পারছেন না।তারা একটা ধারনা করেছে তুমি কোমায় চলে গেছো ”
” ও ”
” হুম,তোমার পরিবারের সবার মুখে শোকের ছায়া।”
” এখন চুপ করো।আর শুনতে চাচ্ছি না ”
” আচ্ছা। তুমি মন খারাপ করবে না।তোমার মুক্তির সময় হয়ে গেছে।খুব শীঘ্রই সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি ফিরে যাবে।”
অহনার চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে সে জল মুছলো।আরো কিছুক্ষণ ছাদে দারিয়ে রইলো।তারপর রুমে আসলো। ভোর সকালে অহনার চোখটা লেগে গেলো।তলিয়ে গেলো ঘুমের শহরে।
পরেরদিন একটু দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো।পিটপিট করে চোখ খুলতেই অহনা দেখলো কেউ তার ওপর উবু হয়ে তাকিয়ে আছে।একটা চিৎকার করে অহনা বিছানা থেকে উঠে বসলো।হঠাৎ এমন ঘটনা যে কারো ক্ষেত্রেই প্রবল ভয়ের সৃষ্টি করবে।প্রচন্ড ভয়ে অহনার বুকের স্পন্দন বাড়তে লাগলো। সাইডে তাকিয়ে দেখলো অনুভব তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।অহনার ইচ্ছে করছে একটা ঘুষি মেরে সবগুলা দাঁত ভেঙে দিতে।কিছুটা রাগি চোখে অহনার দিকে তাকালো অনুভব।তাকিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো।এতো হাসার মতো কি এমন ঘটনা ঘটলো সেটা ভেবে পাচ্ছে না অহনা। সে তাকিয়ে রইলো অনুভবের দিকে।অনুভব হেসেই চলেছে।তার হাসি থামার নাম নেই।অহনা একটু রেগে বললো
” এতো হাসার কি আছে হ্যা? একে তো ভয় দেখিয়েছেন,তার ওপর কিসের কি শান্তনা দিবেন, তা না হাসছেন ”
” তুমি এতো ভীতু কেন? ” ( হেসে হেসে বললো)
” আমি মোটেও ভীতু না।আপনি ওভাবে উবু হয়ে মুখের ওপর ছিলেন সেটা হঠাৎ দেখে ভয় পেয়েছি ”
” এতে ভয় পাওয়ার কি আছে।”
” কি আজব,হঠাৎ করে দেখলে ভয় পাবো না? ”
” আচ্ছা ঠিক আছে,সব আমার দোষ।আর হাসবো না।”
অহনার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে তিনি নিজ মুখে বলুক যে, তোমার ঘুমন্ত মুখ দেখছিলাম।ঘুম অবস্থায় তোমায় একটু মোটু মোটু লাগে।অনেক কিউট লাগে।আজকাল অহনার এমন প্রসংশা শুনতে খুব ইচ্ছে করে। অনুভবের মুখে তার প্রসংশা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে পালিয়ে যেতো ইচ্ছে করে।এমন আজব ইচ্ছে তার কেন হয় সে নিজেও বুঝতে পারে না।
” কি এতো ভাবছো? মাঝে মাঝে দেখি তুমি ভাবতে ভাবতে ভাবনার সাগরে ডুব দাও ”
” কই কিছু ভাবছি না তো ”
” ঘুমন্ত অবস্থায় তোমায় কিন্তু অনেক কিউট লাগে ”
” ধুর কি যে বলেন আপনি।আমি স্নানে গেলাম ”
অহনা একপলক অনুভবের দিকে চেয়ে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিয়ে কথাটা বলে টাওয়দল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।দরজা বন্ধ করে মনের চাপা আনন্দে মুচকি মুচকি হাসছে।তখন’ই রুপার আওয়াজ পাওয়া গেলো
” খুব খুশি মনে হচ্ছে ”
” হু ”
” অনুভবের প্রসংশায় কি এমন আছে যে এতো লজ্জা পেয়ে গেছো হ্যা? ”
” আমি জানিনা।শুধু এই টুকু জানি,ওনার মুখে প্রসংশা শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে।”
” এটাই কি ভালোবাসা? ”
” হু। একটা বিষয় কি জানো? আমি এই জীবনে অনেকের প্রসংশা পেয়েছি।আমার জানা মতে বন্ধু,পরিবার এমন যাই বলো,কেউ নেই যে আমার প্রসংশা করে না।কিন্তু কেন জানি ওনার মুখে এই কথা শুনতে আমার অনেক ভালোলাগে।আমার লজ্জা,সরম সব কি লোভ পাচ্ছে রুপা? ”
” ভালোবাসলে বোধহয় লজ্জা একটু কম’ই হয়। কি বলো? ”
” কি জানি ”
” তোমায় একটা খবর দিতে পারি।যেটা শুনে তোমার মন খারাপ হতে পারে।তুমি শুনতে না চাইলে বলবো না।আমি চাইনা তোমার এই সুখের মুহূর্ত নিমিষেই হারিয়ে যাক ”
চলবে?
#Love_with_vampire [১২]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
” তোমায় একটা খবর দিতে পারি।যেটা শুনে তোমার মন খারাপ হতে পারে।তুমি শুনতে না চাইলে বলবো না।আমি চাইনা তোমার এই সুখের মুহূর্ত নিমিষেই হারিয়ে যাক ”
” কি এমন বলবে তুমি? যে আমার মন খারাপ হয়ে যাবে? ”
” তোমার বাবা-মায়ের একটা খবর দিতে পারি ”
” দাও, আমার মন খারাপ হবে না।আমি নিজেকে অনেক শক্ত করে ফেলেছি।এখন আর সহজে মন খারাপ হয় না ”
” তোমার মা’কে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে।তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। যকন তার জ্ঞান ফেরে তখন শুধু বিরবির করে তোমার নাম বলে। ”
” ও আচ্ছা। তুমি এখন চুপ করে থাকো।আমার কথা বলতে ভালোলাগছে না ”
অহনা গোসল সেরে বেড় হলো।ভেজা চুল তার ধবধবে পিঠে,ঘাড়ের সাথে লেপ্টে আছে।টাওয়ালটা দিয়ে নিজের শরীর কোনো ভাবে পেচিয়ে রেখেছে।ঘরে ঢুকে দেখলো অনুভব ঘরে নেই।অহনা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।ধূসর ছাই রঙ্গের একটা শাড়ি বেড় করে পড়লো। চোখে একটু কাজলের ছোঁয়া লাগিয়ে কপালে ছোট্ট কালো টিপ পড়লো।ভেজা চুলগুলো থেকে এখনো টপটপ করে জল পড়ছে।আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে অহনা।
অহনা ঠিক করলো আজ বৃদ্ধ লোকটার কাছে যেতে হবে।তার থেকে জানতে হবে সে কোনো উপায় খুজে পেলো কি না।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো এখনি বেড় হবে।কিন্তু অনুভব কোথায় গেলো? সে যদি এসে দেখে আমি নেই তাহলে কি না কি হয়।
অহনা নিচে নামলো।অনুভবকে খুজতে সারা বাড়ি ঘুরে দেখলো।কোথাও তাকে পাওয়া গেলো না।অহনার কিছুটা চিন্তা হতে লাগলো। কোথায় গেলেন তিনি?।
সে চিন্তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে আপাতত সেই বৃদ্ধ লোকটির কাছে যাওয়া জরুরি। অহনার বাড়ির সদর দরজাটা আকারে প্রকান্ড।দু’হাতে শক্তি দিয়ে দরজাটা খুলতে হয়।খোলার সময় কেমন কটকট শব্দ হয়।শব্দটা শুনলে সারাশরীর শিউরে ওঠে।
বেড় হয়ে গুহার উদ্দেশ্য হাঁটতে লাগলো অহনা।মনে একটু ভয় কাজ করছে।ভয়টা কাটানো দরকার।ভয় কাটাতে কি করা যায়? রুপার সাথে একটু কথা বলা যায়।এতে ভয় একটু কমবে।
” রুপা,রুপা শুনতে পাচ্ছো? ”
” নিশ্চুপ ”
” রুপা আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? ”
” হ্যা।বলো অহনা ”
” তুমি কি জানো বৃদ্ধ লোকটি কোনো উপায় পেয়েছে কি না? ”
” না ”
” না কেন? তুমি তো সব জানো।এটা কেন জানোনা? ”
” ওই গুহার ভেতরের কোনো খবর আমি নিতে পারি না।সে শক্তি আমার নেই ”
” ও আচ্ছা ”
” হু ”
” তোমার কি মন খারাপ? ”
” আমাদের মন ভালো,খারাপ বলতে কিছু হয় না।আমাদের তেমন অনুভূতি নেই ”
” আমার খুব অস্থির লাগছে জানো,আচ্ছা তোমার কি মনে হয় উনি কি উপায় খুজে পেয়েছে? ”
” আমি জানি না।বলতে পারছি না ”
” তোমায় এখন কেমন যেন অন্যরকম লাগছে।তোমার কি কিছু হয়েছে? ”
” না আমার কিছু হয় নি।আমি ঠিক আছি।গুহার সামনে চলে এসেছি ”
অহনা সামনে তাকালো।সত্যিই গুহার কাছে চলে এসেছে।কথা বলতে বলতে তেমন খেয়াল করেনি।অহনা গুহার কাছে গেলো।গুহার মুখেই বৃদ্ধ লোকটি বসে আছে।তিনি অহনাকে দেখে বললো
” মা’রে কেমন আছিস? সব ঠিকঠাক তো? ”
” ভালো আছি চাচা। আমি আপনাকে চাচা বলে ডাকলে কি আপনি রাগ হবেন? ”
বৃদ্ধ লোকটা হেসে ফেললো।হাসিমুখে বললো
” না রে মা,রাগ করবো কেন।ভেতরে আয় ”
অহনা গুহার ভেতরে গেলো।সেখানে পাথরের ওপর বসলো।বসে বললো
” চাচা আপনি কি কোনো উপায় খুজে পেলেন? ”
” হ্যা পেয়েছি।আর অনুভব এখন আমার কবলে আছে রে মা।তোর সাহস আছে।”
” আপনার কবলে আছে মানে? ”
” হ্যা আমার কবলে।এখন আমি ওকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।”
” সেই উপায়টা কি বলবেন? ”
” উপায়টা একটু কঠিন রে মা ”
” কত কঠিন হয় হোক।আমি যেভাবেই হোক করবো।আপনি বলুন কি করতে হবে ”
” ওদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে একটা গ্রন্থের প্রয়োজন ”
” গ্রন্থ? ”
” হ্যা,গ্রন্থ।সেই গ্রন্থের ঠিক মাঝ পৃষ্ঠায় একটা গোল ঘর আছপ।সেই ঘরে যদি অনুভবের তিন ফোটা রক্ত দেওয়া যায়,তবে সেই গ্রন্থটিতে একটা মন্ত্র উচ্চারণ ফুটে উঠবে।সেই মন্ত্রের দ্বারাই ওর এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব ”
” কোথায় আছে সেই গ্রন্থ? ”
” সেটা খুজে পাচ্ছি না রে মা।কোথায় যে আছে ”
“সে কি,আপনি জানপন না কোথায়? সাধনার বলে খুজে দেখুন? ”
” দেখেছি, সেই গ্রন্থটা এমন কোথাও রাখা হয়েছে। যেখানে আমার শক্তি প্রবেশ করতে পারে না।আমি অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্তু খুজে পাইনি।”
কথাটা শুনে অহনার একটা ঘটনা মনে পড়লো।সে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর বললো
” চাচা,আমি জানি গ্রন্থটা কোথায় ”
” কি বলছিস রে মা? তুই জানিস? ”
” হ্যা চাচা।গ্রন্থটি আমাদের বাড়ুতেই আছে।একটা ঘরে ”
” কিন্তু তুই কিভাবে জানলি? ”
” চাচা আমি একদিন ওই ঘরের কাছ দিয়ে যেতেই আমার অনুভূতি হয়েছিলো কেউ আমায় আকর্ষন করছে,আমায় ডাকছে।তখন বিষয়টা বুঝিনি।আর অনুভব তার সারা বাড়ি আমার ঘুড়িয়ে দেখিয়েছিল। কিন্তু ওই ঘরে যেতে দেয়নি।ওই ঘরে মস্ত বড় বড় দুটা তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে ”
” এজন্যই হয়তো আমি জানতে পারিনি।ওই ভ্যাম্পেয়ারের শক্তি কবচ দ্বারা পুরো বাড়িটা আবদ্ধ করে রেখেছে।এজন্যই আমার দৃষ্টি দেখানে পৌঁছাতে পারে না।”
” আমি তাহলে এখন কি করবো চাচা? ”
” গ্রন্থটা যেভাবেই হোক তোকে নিয়ে আসতে হবেরে মা।সাথে অনুভবের শরীরের রক্ত। পারবি? ”
” পারবো।আমাকে যে পারতেই হবে।আমি আজ আসি চাচা।”
” আজ রাতে অনুভবের শরীর আমি নিয়ন্ত্রণ করবো।যা করার আজকেই করেত হবে।পূর্নিমার আর বেশি দেরি নেই।আমাদের হাতে সময় খুব কম ”
” আচ্ছা চাচা আমি আসি।যপভাবেই হেক আমি গ্রন্থটা আনবোই ”
বলেই অহনা গুহা থেকে বেড় হলো।মনে মনে ভাবতে থাকলো কিভাবে সে এই কাজটা করবে।
বাড়িতে এসেই অহনা চলে গেলো ওপরের শেষ কর্নারের বিশাল বড় দু’টি দরজা বিশিষ্ট ধ্বংসস্তুপ ঘরটার কাছে। ঘরটার কাছে যেতেই অহনার কেমন যেন বুকটা ধুকধুক করছে।কপাল বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঘড়ছে।অহনা লক্ষ করলো সে যতই ঘরটার কাছে যাচ্ছে ততই মনে হচ্ছে কেউ তাকে ডাকছে।একটা মায়াবী ডাকের মতো কেউ তাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে।অহনা এবার দরজার একদম সামনে এসে দারালো।প্রকান্ড দরজায় ঘুলছে বড়বড় দুটি তালা।এবং দরজার কাঠ খোদাই করে কিসব পশুপাখির চিহ্ন স্পষ্ট ফুটে আছে।তালার সাথেই একটা পাখির মতে কিছু একটা খোদাই করা।দেখতে খুবই ভয়ঙ্কর লাগছে।অহনা একটু কাছে এসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখলো।এটাকে পাখি বলার কোনোই কারন নেই।এটা পাখির মতো দেখতে লাগছে না।প্রাণীটির মাথাটা হায়েনার মতো,শরীরটা মানুষের মতেই,হাতের নখ গুলি ধারালো এবং সূচালো।
অহনা সিদ্ধান্ত নিলো তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দেখবে।কিন্তু যতটা সহজ ভেবেছিলো, ঘটনাটা ততটা সহজ ছিলো না।দরজার পাশে রাখা বড় বড় পাথরের টুকরো গুলি থেকে এক টুকরো পাথর গাতে নিলো।দু’হাতে পাথরটা দিয়ে সজোরে আঘাত করলো দরজায়।অহনা বেশ বুঝতে পারলো এভাবে এই তালা ভাঙ্গা যাবে না।আর ভাঙ্গলেও দরজা সে খুলতে পারবে না।কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম হাতের বাম পাশ দিয়ে মুছলো। তখনই পেছন থেকে অহনার হাত শক্ত করে ধরে হ্যাচকা একটা টান দিলো কেউ।অহনা কিছু বুঝে উঠার আগপই ধপ করে ফ্লোরে পড়ে যায়।কপালে গিয়ে ঠেকে যায় একটা পাথরের টুকরোর ওপর।অহনা মাথায় হাত চেপে ধরলো।হাত চুপচুপে হয়ে গেলো রক্তে।গলগল করে রক্ত পড়ছে ফ্লোরে।
অহনা মাথায় হাত চেপে ধরে ফ্লোরে মাথা ঠেকালো।সারাশরীর অবশ হয়ে আসছে।চোখের সামনে সবকিছু কেমন যেনো অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তার সারাশরীর রক্তে টইটুম্বুর হয়ে আছে।ফ্লোরের রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ছে।অহনা পিটপিট করে পেছনে তাকালো।হলুদ বর্নের দুটি ভয়ঙ্কর চোখের ওপর তার চোখ পড়লো।
অহনার মাথায় প্রচুর যন্ত্রনা শুরু হতে লাগলো।সে মেঝেতে মাথা রাখলো।চারপর অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।আবছা আবছা কিছু নজরে পড়ছে।ফ্লোরে আবছা আবছা দেখলো নিজের রক্তের স্রোত বইছে।এবং একটা কালো কি যেনো একটা সেই রক্ত চেটে চেটে খাচ্ছে।অহনা অনেক চেষ্টা করে একটু ওপরে তাকানোর চেষ্টা করলো।সে দেখছে,একটা পশু তার কুচকুচে কালো জিহ্বা দিয়ে রক্ত চেটে চেটে খাচ্ছে।এরপর অহনা ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলো।
অহনা বেশ ভালোই বুঝতে পারলো যে এটাই তার শেষ চোখ বন্ধ করা,এই বন্ধ চোখ কখনো আর সে খুলতে পারবে না।
চলবে?