#Love_with_vampire,১৩,১৪
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
১৩
অহনা বেশ ভালোই বুঝতে পারলো যে এটাই তার শেষ চোখ বন্ধ করা,এই বন্ধ চোখ কখনো আর সে খুলতে পারবে না।কারনটা তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলো না।অহনার মরে যাওয়ার কি যথেষ্ট কারন আছে? পাথরের ধাক্কায় কপাল কেটে যাওয়ায় কি কারো মৃত্যু হতে পারে?না! পারে না।তবে নেতিবাচক এই হাইপোথিসিস এর বিরুদ্ধে আরেকটা শর্ত দার করালো অহনা। তার সামনে একটা হিংস্র পশু তারই রক্ত চেটেপুটে খাচ্ছে। হয়তো রক্তের পর তাকেও খেয়ে ফেলবে। এটা কি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে? অনুভব কি আমায় মেরে ফেলবে?।
এরকম আরো কিছু যুক্তি অহনা নিজে নিজেই দ্বার করানোর চেষ্টা করলো ফ্লোরে মাথা রেখে।মাথা দিয়ে এখনো রক্ত বেড় হচ্ছে। এখন সে চোখে কিছু দেখছে না।সব অন্ধকার। চোখের পলক ফেলার চেষ্টা করলো।পলক ফেলতে পারলো কি পারলো না সেটা ঠিক বুঝতে পারলো না অহনা।তার এখন চোখের স্নায়ু তন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।হয়তো কিছুক্ষণ পর তার সব স্নায়ুতন্ত্র এভাবেই অচল হয়ে পড়বে।
প্রকৃতির মতো স্নায়ুর ও কিছু নিয়ম থাকে।যদি শরীরের একটি অংশের স্নায়ু কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে বাকিগুলিও শীতল হয়ে পড়ে।তারাও চায় কাজ বন্ধ রাখতে।অহনা আর কিছু ভাবতে পারলো না।চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো ফ্লোরে।
______
মানুষের রক্তের স্বাদ অনেকদিন পর পেলাম।এই মেয়েকেও কি ছিঁড়ে খাওয়া যায়? কেমন হবে যদি মেয়েটার ধর থেকে মাথাটা এক থাবার আলাদা করে দিই? গলা বেয়ে কি রক্ত চির চির করে বের হবে? এর আগে ২টা মেয়ের মাথা গলা থেকে আলাদা করেছি।তাদের তো রক্ত বেড় হয়নি।পরোক্ষনে মনে হলো,মাথা ছিঁড়ে ফেলার আগে তো মেয়ে দুটির শরীর থেকে সব রক্ত চুষে বেড় করে নিয়েছিলাম।সব রক্ত চুষে খেয়ে ফেললে পড়ে তো রক্ত বেড় হওয়ার কথা না।
রক্ত পড়া এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেলো।রক্তের লোহিত কনিকাগুলি ক্ষত স্থানে ঘাট মেরে বসে গেছে তাহলে।রক্তদের এই ক্ষমতা কে দিয়েছে? কিভাবে তারা বুঝতে পারে কোন স্থানে কেটে গেছে? রক্ত গুলিরো কি অনুভূতি আছে?
অনুভব এসব ভাবতে ভাবতে উঠে দারালো।দেয়ালে রাখা মস্ত আয়নায় নিজের শরীর দেখলো।নিজেকে দেখে নিজের একটু অহংকার বোধ হচ্ছে। এমন হিংস্র রুপ থাকাটা তেমন মন্দের বিষয় নয়।আয়নায় দেখলো তার মুখ বেয়ে রক্ত পড়ছে।মুখের কাছের লোমগুলি রক্তের জমে যাওয়ার কারনে কতগুলি লোক একসাথে শক্ত হয়ে আছে।
আয়না ছেড়ে অহনার দিকে একবার তাকালো অনুভব।মেয়েটার ক্ষত স্থানের কিছু ব্যবস্থা করা দরকার।জ্বান হারিয়ে ফেলেছে হয়তো।মেয়েটিকে আমি কেনো মারতে পারছি না?ওর প্রতি কিসের এতো আকর্ষন আমার? আমার আকর্ষন থাকবে রক্তে,আমি ভ্যাম্পেয়ার।আমার মনে সহানুভূতি বলতে কিচ্ছু নেই।আমার জন্ম মানব দেহের রক্তপানের জন্য। তবে আমি কেন এই মেয়েকে মেরে ফেলতে পারছি না? কেন? আমি কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি?। অসম্ভব ! আনার ভালোবাসার কোনো অধিকার নেই।আমি ভ্যাম্পেয়ার।লালায় আমার জন্ম।আমার প্রেম,মমতা এসব কেন থাকবে? মেয়েটা কি আমায় প্রভাবিত করছে?।
এসব ভাবতে ভাবতে অনুভবের চোখ পড়লো সেই বিশাল প্রকান্ড দরজার প্রতি।মৃদু হেসে ফিসফিস করে বললো, এই দরজার কাছে এসেই আগের মেয়েগুলি প্রান হারিয়েছে। অহনাও এখন এই দরজা খুলতে ব্যাস্ত।এরা কেনো ভেতরে যেতে চায়? তাদের নজর কেন এই দরজায় পড়ে?।
অনুভবের নিজেরও জানা নেই এই ঘরে কি আছে।সে যঝন এই মায়ার বাড়িটা তৈরী করে তখন না চাইতেই এই ঘরটা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো।কেনো এমনটা হয়েছে তার নিজেরও জানা নেই। এবং অবাক করার একটা বিষয় হলো এই দরজার কাছে কোনো প্রাণ গেলের অনুভব কিভাবে যেনো টের পায়।তার সারাশরীরে তেজ এসে যায়।যেখানেই থাকুক না কেন মুহূর্তেই এই দরজার কাছে পৌঁছে যায়। বিষয়টা অনুভবের মনে সারা দিলো।এবং ভালো ভাবেই দিলো। অনুভব সিদ্ধান্ত নিলো সে এই ঘরে ঢুকবে। কিভাবে ঢুকবে সে জানে না।কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই হবে।তার জানতেই হবে কি এমন আছে এই ঘরে।
অনুভবের শরীর এখন মানুষে রুপান্তর হয়ে গেছে।তার হিংস্র পশুর রুপ এখন আর নেই।সে এখন পুরোপুরি একটা মানুষ। তালায় হাত দিতেই মনে হলো অহনার চিকিৎসার প্রয়োজন। এই মুহুর্তে তার জন্য চিকিৎসার ব্যাবস্থা না করলে হয়তো তাকে বাঁচানো যাবে না।তাছাড়া যথেষ্ট রক্ত বেড় হয়েছে,রক্তশূন্যতা যখন তখন তার চরম ক্ষতি করে দিতে পারে।
অনুভব অহনার কাছে গেলো।মুখ থেকে চুলগুলি সরিয়ে দিলো।অহনার রক্তমাখা মুখটা নজরে পড়তেই অনুভবের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। অহনাকে কোলে করে বিছানার চিৎ করে শুইয়ে দিলো।ভেজা কাপড় দিয়ে সব রক্ত মুছে দিলো।অহনার এখনো জ্ঞান ফিরলো না।অহনার জ্ঞান ফিরতে কি করতে হবে সেটা অনুভব ঠিক বুঝতে পারলো না।কপালে ক্ষত দিয়ে এখনো চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে।এখন প্রধান যে কাজ সেটা হলো রক্ত বন্ধ করা।অনুভব বাইরে থেকে কিছু লতা পাতা আনলো।সেগুলি হাতের তালুতে পিষে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলো।ঘুমন্ত অহনাকে দেখে তার অনেক খারাপ লাগছে।অহনার কপালে আলতো চুমু খেয়ে দরজা বন্ধ করে বাইরে বেড় হলো অনুভব।
তার এখন দুটি কাজ করতে হবে,প্রথম কজাটা হলো দরজা ভাঙ্গা এবং দ্বিতীয় কাজটা হলো সেই ঘরে কি আছে সেটা দেখা।অনুভব জোরে জোরে হাঁটছে।
বড় দরজার সামনে অনুভব দারিয়ে আছে।দরজায় ঝুলছে বিশাল তালা।এই তালা যে পাথরের আঘাতে ভাঙ্গবে না সেটা অনুভব ভালোই বুঝতে পারলো।এখন তাকে আবারো ওয়ারওল্ফ রুপ ধারন করতে হবে।
অনুভব একটু দুরে সরে গেলো।চোখ শক্ত করে বন্ধ করলো,বিকট একটা শব্দ করলো।পুরো বাড়ি কেমন যেনো কাঁপতে লাগলো সে গর্জনে।অনুভব এখন হিংস্র পশুর রুপ নিয়েছে। তার চোখ গাঢ় হলুদ।সে চোখে পৃথিবী ধ্বংস করে দেওয়ার মতে তেজ।দূর থেকে এক লাফে দরজার কাছে গেলো।তালাটা হাতে নিয়ে ধারালো দাঁত সেই তালায় বসালো।তালাটা সঙ্গে সঙ্গে চূর্ণবিচুর্ন হয়ে গেলো।সে আবারো একটা গর্জন করলো।সারা বাড়ি এবারো কেঁপে উঠলো।
অনুভব আবারো মানুষে পরিণত হয়েছে। প্রকান্ড দরকার ভেতরে কি এমন জিনিস আছে সেটা দেখার জন্য মনের ভেতর প্রবল কৌতুহল জাগছে।দরজা খুলেই কি দেখতে পারে সেটা মনে মনে একবার ভেবে নিলো।মনে মনে ভাবলো ” দরজাটা আমি খুললাম।খুলেই হয়তো দেখবো কিছু বাদুড় প্রজাতির পাখি শব্দ করে ডাকাডাকি করবে,তারপর তাদের পাখার ঝাপটা আমার শরীরে লাগিয়ে উড়ে যাবে।আমি ভয় ভয় নিয়ে দরজা খুলবো।খুলেই হয়তো বিভৎস কিছু একটা নজরে আসবে।সেটা দেখে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপা শুরু করবে।এর পর কি হতে পারে? আমি কি সেই বিভৎস কিছু দেখে ভয়ে পালিয়ে যাবো?।
এসব ভাবতে ভাবতে বাস্তবে ফিরলো।এমন কিছু হলে কি করবে সেটা মনে মনে ভেবে সাহস সঞ্চার করে দরজা মেললো।
ঘরটার দরজা আস্তে আস্তে খুলছে।ওপর থেকে কালো বালি ঝড়ে পড়ছে।দরজায় কটকট শব্দ হচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনি ভেঙ্গে পড়বে।দরজার যেটুকু অংশ ফাকা হলো সেই অংশুটুকু দিয়ে ভেতরে কি আছে দেখার চেষ্টা করলাম।
ছোট অংশ দিয়ে কিচ্ছু নজরে পড়ছে না।শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার।দরজা খোলার সময় যা যা হবে বলে অনুভব ভেবেছিলো তেমন কিছুই হলো না।বাদুর জাতীয় পাখি উড়ে বেড় হলো না।
পুরো দরজা খুলে ফেললো।খুলতেই সামনে একটা বিশাল আলোকরশ্মি চোখে পড়লো।প্রবল আলোয় অনুভব চোখে পড়তেই দুহাত দিয়ে চোখ ডেকে রাখলো।এরপর হাতের ফাঁক দিয়ে সামনে তাকাতেই অনুভবের শরীর অসম্ভব ভাবে পুরে যেতে লাগলো। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করতেই অনুভব যা দেখলো তা এর আগে সে দেখেনি।সে কেনো কেউ হয়তো দেখেনি।কেউ না।
চলবে?
#Love_with_vampire [১৪]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
অনুভব পুরো দরজা খুলে ফেললো।খুলতেই সামনে একটা বিশাল আলোকরশ্মি চোখে পড়লো।প্রবল আলো অনুভবের চোখে পড়তেই দুহাত দিয়ে চোখ ডেকে রাখলো।এরপর হাতের ফাঁক দিয়ে সামনে তাকাতেই অনুভবের শরীর অসম্ভব ভাবে পুরে যেতে লাগলো।
ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো অনুভব।আলোর তাপ এখন কিছুটা স্নিগ্ধ হয়েছে। আগের মতো চোখে লাগছে না।অনুভব চোখ মেললো।হাত বাড়ুয়ে নিজের হাত দেখলো।তীব্র আলোয় তার হাত ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।হাতের চামড়া গুলি পুড়ে কালো হয়ে গেছে।অনুভ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো। একহাত দিয়ে আরেকহাত চেপে ধরে কিছুটা ব্যাথা নিবারন করার চেষ্টা করলো।কিন্তু লাভ হলো না।হাতের স্পর্শে ব্যাথা আরো যেনো দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। অনুভব বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলো।এরপর চোখের দৃষ্টি ফেললো পুড়ে যাওয়া অংশে।সেই দৃষ্টিতে পুরে যাওয়া অংশের জ্বালা পোড়া কমতে লাগলো।এক পর্যায়ে হাত পুড়ে যাওয়ার কোনো চিহ্নই রইলো না হাতে।অনুভবের বিকট একটা হাসিতে পুরো ঘর কেঁপে উঠলো।
ঘরটা বেশ বড়।দেয়াল বেয়ে শ্যাওলা,লতা,পাতা দিয়ে ভরে যাওয়ায় দেয়ালটাই নজরে পড়ছে না।বিশাল বড় বড় মাকড়শার জাল ঝুলছে লতা পাতা,এবং এক দেয়াল থেকে আরেক দেয়াল অব্দি। মেঝেতে বালির আস্তরনে ঢাকা।বালিগুলি কুচকুচে কালো।এতো কালো বালি কখনো জীবন দশায় অনুভবের নজরে পড়েনি।ঘরটদয় একটা ভ্যাপসা আলো।সে আলোয় মিশে আছে জলীয় বাষ্প।দু’দিকে প্রকন্ড দুটি জানালা।জানালা দিয়ে কোনো আলো আসছে না।আশ্চর্য, জানালার ফাঁক দিয়ে আলো আসার কথা।এই ঘরে কি কখনো আলো আসেনি এর আগে?
অনুভব কালো বালির ওপর পা রাখলো।বালিগুলি কিছুটা উত্তপ্ত।অনুভবের মনে হলো সামনের বালিতে কিছু একটা আঁকা।কি আঁকা আছপ সেটা দেখতে কাছে যেতেই একটা কালো ছায়ার আঁচড়ে অনুভব ছিটকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলো।দেয়ালে ধাক্কা লাগার সাথে সাথেই অনুভবের শরীরে কথা বলার মতোও আর শক্তি রইলো না।অনুভব পড়ে রইলো দেয়ালের পাশে। তার হাতের কনুই,মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে।অনুভবের মনে হলো এটা কোনো অশুভ শক্তি। এই ছায়ার শক্তি যে সে শক্তি নয়।কে এই অশরীরী?
অনুভবের চোখ বেয়ে রক্ত টপটপ করে বালিতে পড়তে লাগলো।অনেক কষ্টে অনুভব হাত দিয়ে চোখের কাছের রক্ত মুছে নিলো।মুছে ঘরের ঠিক মাঝখানে তাকালো।যেখানে বালির মাঝে কিছু একটা আঁকা ছিলো।সেখানে তাকাতেই অনুভব লক্ষ্য করলো একটা অশরীরী ছায়া সেখানে হাঁটু মুড়ে বসে আছে।এটা কোনো মেয়ের অশরীরী। ছায়াটা আরো প্রবল হচ্ছে। তার চুল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। শরীর গঠনে অনুভব বুঝতে পারলো এটা কোনো নগ্ন মেয়ের অশরীরী ছায়া।
__________
গুহায় বসে বৃদ্ধ সাধক ব্যাধিতে মন্ত্রসিক্ত ঘি এবং অবিরত মন্ত্র পড়োই যাচ্ছেন।তার সারা শরীর কাঁপছে। বন্ধ চোখ ছোটাছুটি করছে।একসময় সাধনা থেকে উঠে দারিয়ে ভয়ঙ্কর একটা আর্তনাত করে উঠলো।তার চিৎকারে গুহার সামনের পাথর গুলি ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছে।কুন্ডলী থেকে জল নিয়ে ব্যাধির আগুন নিভিয়ে ফেললো।বিকট স্বরে নিজে নিজেই বলে উঠলো
” নাহ, এটা কখনোই হতে পারে না।আমার এতোদিনের পরিকল্পনা এভাবে শেষে এসে নষ্ট হতে পারে না।অনুভবের হঠাৎ কি এমন হলো? ওকে আমি নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না কেন? এতো কষ্ট করে নিজের শক্তিকে বিসর্জন দিয়ে ওকে ঘরে নিয়ে গেলাম সেই গ্রন্থটা পাওয়ার জন্য। কিন্যা হঠাৎ কি হলো? কেনো ওর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না? কেনো আমার দৃষ্টি থেকে এভাবে সরে গেলো? কিভাবে?
আর ওই মেয়েটাই বা কোথায়? তখন থেকে ওর ওপরেও কেনো দৃষ্টি ফেলতে পারছি না? ওই আত্মাটাকেও তো কোনো কিছু বলতপ পারছি না।আমি কি করবো এখন? আজ যদি এই কাজ করাতে না পারি তাহলে আর কখনোই সম্ভব হবে না।আমার মুক্তিও হবে না।সারাজীবন এই গুহায় পচতে হবে।নাহ্ আমি এটা কিছুতেই হতে দিবো না,কিছুতেই না। হে শুভ আত্মা, জেগে ওঠ,জেগে ওঠ,তোর সৃষ্টা তোকে আহ্বান করছে,জেগে ওঠ ”
_________
অহনার বন্ধ চোখ হাল্কা নড়ছে।হয়তো তার জ্ঞান ফিরছে।বেশ কিছুক্ষণ পর অহনার পুরোপুরি জ্ঞান ফিরলো। পিটপিট করে চোখ খুললো।চোখ খুলতেই অহনার সারা শরীর ঝিমঝিম করে উঠলো।বিছানায় হাত রেখে পঠার চেষ্টা করতেই মাথার প্রচন্ড ব্যাথায় ধপ করে আবারো বিছানায় পড়ে গেলো।ব্যাথায় আর্তনাত করার মতো শক্তিও অহনার নেই।তবুও বেশ কিছুক্ষন সময় দিলো নিজেকে সামলে তোলার জন্য। এরপর বিছানায় ভর করে ওঠার চেষ্টা করলো।মাথা ঘুরছে,সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।তখনি একটা আওয়াজ পাওয়া গেলো
” অহনা,অহনা ”
অহনা বুঝতে পারলো এটা তার শরীরে থাকা সেই আত্মার ডাক।অহনা কথা বলতে পারছে না।তবুও কষ্ট করে কাঁপা কাঁপা স্বরে উত্তর দিলো
” হ্যা ”
” তুমি সুস্থ নও এখনো,কিন্তু এখন তোমার প্রয়োজন।সময় হয়ে এসেছে অহনা।যা করার এখন করতে হবে ”
” কি..কি করতে হ..হবে? ”
বলপই অহনা আবারো বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।তার পক্ষে এখন দারিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়।শরীরে রক্তশূন্যতার কারনে দারাতে গেলেই মাথা ঘুরিয়ে উঠছে।শরীর এলোমেলো লাগছে।অহনা বিছানায় বসে এক হাত মাথায় রেখে শক্ত করে চেপে ধরে আবারো বললো
” কি..কি..কি হলো? কি হয়েছে? কিসের স..স..সময়ের কথা বলছো? ”
” অনুভবকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার এটাই সময়।যা করার এখন ই করতে হবে অহনা।সময় খুব কম ”
অহনা মাথা হাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ভাবলো কি হয়েছিলো।হ্যা৷ তার মনে পড়ছে। যখন সে দরজা খুলার জন্য কাছে যায় তখন কেউ তাকে হ্যাচকা টান মেরে পেছনে ফেলে দেয়,আর সেখানে থাকা পাথরের কোন লেগে মাথায় আঘাত লাগে,প্রচুর রক্তও বেড় হয়।একটা হিংস্র পশু সেই রক্ত তার কালো জিহ্বা দিয়ে চেটে চেটে খাচ্ছিলো।সেটা যে অনুভব ছিলো সে বিষয়ে অহনার কোনো সন্দেহ নেই।কারন মানুষের রক্ত দেখে কোনো ভ্যাম্পেয়ার কি ঠিক থাকতে পারে ? পারে না।অনুভবের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টা ঘটেছে।যখন সে দেখলো আমার রক্ত ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ছে তখন সেটা দেখে ওর মধ্যের সেই পিশাচ রুপটা জেগে উঠেছিলো।এরপর কি হয়েছিলো?।এরপর কি হয়েছিলো সে উত্তর অহনা খুজে পেলো না।
এরপর কি হয়েছিলো সেটা মনে করতে চেষ্টা করছে অহনা।কিন্তু পারছে না।এসব ভাবতে ভাবতে মাথার ব্যাথাটা আরো প্রবল হয়ে উঠছে।অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়।মনে হচ্ছে এখনি ঠাস করে মাথা ফেটে যাবে।তখনি আবারো রুপার আওয়াজ শোনা গেলো
” অনুভবের বিপদ ”
অহনা চমকে উঠলো। অনুভবের বিপদ মানে? কি হয়েছে ওর? ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করতে লাগলো
” কি হয়েছে অনুভবের? কি..কিসের বিপদ? কোথায় অনুভব?
” অনুভব সেই ঘরে প্রবেশ করেছে,যেখানে সে কখনোই প্রবেশ করতো না ”
” সেই ঘর মানে,যে ঘরে গ্রন্থটা ছিলো? ”
” হ্যা ”
” অনুভব কি গ্রন্থটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে? ”
” আমার জানা নেই।ঘরে ঢুকেছে সেটা আমি জানি,ভেতরে কি হয়েছে সেটা আমার দৃষ্টিচড়ে আসছে না।তবে আমার মনে হয়…”
” কি মনে হয় তো…তো..তোমার? ”
” আমার মনে হয় অনুভবের খুব বড় বিপদ হয়েছে সেই ঘরে।কেননা সেই ঘরে কখনো তার ঢোকার কথা নয়,সে কেনো সেখানে ঢুকলো সে বিষয়টা আমিও এখনো বুঝতে পারছি না।কেউ জেনে শুনে নিশ্চয়ই নিজের শেষকে আমন্ত্রণ করবে না,তাই না? ”
” তবে কি? আমি যা ভাবছি সেটাই? ”
” হ্যা,এখানে নিশ্চই সেই সাধকের কোনো খেলা আছে।তার ক্ষমতা ছাড়া এটা কখনই হবে না।”
” ওনার জন্য যদি আমার অনুভবের কিছু হয় তাহলে কিন্তু আমি সবকিছু শেষ করে ফেলবো রুপা।সব শেষ করে ফেলবো”
বলেই অহনা বিছানা থেকে উঠে দারালো।তার সারা শরীরে এখন আগুন জ্বলছে।বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে যেতেই একটা গোঙ্গানির আওয়াজ কানে ভেসে আসলো।অহনা চমকে উঠলো।এটাতো অনুভবের আওয়াজ,কি হয়েছে ওর?
চলবে?