Mr_Calculus (পর্ব -১৩/শেষ পর্ব)

0
845

Mr_Calculus (পর্ব -১৩/শেষ পর্ব)

রিফাত বড় চাচীর সাথে তার ভাইয়াকে নিয়ে আলাপ করল। ভাইয়ার এমন দু:খী, উদাস চেহারা তার আর সহ্য হচ্ছে না। কী করা যায়?

বড় চাচী বললেন- ওর একমাত্র ঔষধ “বিয়ে”।

-বিয়ে!

-হুম।

-আইডিয়া দেয়ার জন্য আর কিছু পেলে না। ভাইয়া বিয়ে করবে?

-আমি কী রাইয়ানের বিয়ের কথা বলেছি নাকিরে গাধা?

-তাহলে কার বিয়ে?

-কার আবার? রিয়ানার। তাছাড়া তানিয়া চলে গেছে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে রাইয়ানের নিজেরও এখন বিয়ের ব্যাপারে আপত্তি করা উচিত না।

-কিন্তু রিয়ানার বিয়ে হলে তাতে ভাইয়ার কী হবে?

-রিয়ানার বিয়ে দিয়ে তারপর রাইয়ানকে বিয়ে দিব। তখন ওকে এমনভাবে চেপে ধরব ও আর মানা করতে পারবে না। তাছাড়া শোক কাটিয়ে ওঠার জিনিস, ওটাকে পুষে রাখতে নেই। কারো জায়গা কেউ কোনদিন নিতে পারে না। সবার জায়গা সব সময় আলাদাই থাকে। তাই কারো জন্য জীবন থামিয়ে রাখতে নেই। রাইয়ান কেন থেমে থাকবে? তাকেও আগে বাড়তে হবে।

-হুম… কিন্তু রিয়ানা তো বাচ্চা মেয়ে মাত্র থার্ড ইয়ারে উঠল।

-উহ, আসছে “বাচ্চা মেয়ে” তুই যখন পুষ্পকে বিয়ে করেছিলি ওর বয়স কত ছিল?

-ও… ইয়ে… ওই তো… কিন্তু পুষ্প অনেক ম্যাচিউরড একটা মেয়ে রিয়ানার মত বাচ্চা না।

-বিয়ের আগে সব মেয়েরাই বাচ্চা থাকে। সংসার এমন জিনিস যেখানে ঢুকলে মেয়েরা আপনা আপনিই ম্যাচিউরড হয়ে যায়। তুই ছেলে দেখা শুরু কর। আমাদের রিয়ানা তো দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ তার উপর আজ বাদে কাল বড় ডাক্তার হবে। তার জন্য তেমন পাত্রই চাই। খোঁজ লাগা জলদি।

-ইয়ে বড় চাচী…

-আবার কী?

-ভাইয়ার কাছে মনেহয় রিয়ানার জন্য ভালো একজন পাত্র আছে। আমাকে জানিয়েছিল, তুমি একবার কথা বলে দেখ না?

-তাহলে তোর সাথে বসে কথা খরচ করতেছি কেন? যা ওরে ডেকে নিয়ে আয়।

রিফাত দ্রুত ভাইয়ার কাছে গিয়ে বড় চাচীর সাথে রিয়ানার ব্যাপারে কী কথা হয়েছে সব জানায়।

-তুই চাচীকে এটা বলে দিসনি তো যে তূর্যর সাথে রিয়ানার পরিচয় আছে বা আমরা অলরেডি ওকে দেখে শুনে ঠিক করে রেখেছি?

-আরে না। এটা তো আমি রিয়ানা পুষ্প ওদেরকেও বলিনি।

-গুড, বিয়ে হয়ে যাওয়া অব্দি বাড়ির কাউকে না জানানোই ভালো। যদি কখনো প্রয়োজন হয় তখন দেখা যাবে। আচ্ছা এখন চল আমি চাচীর সাথে কথা বলছি, বলে দুই ভাই মিলে বড় চাচীর কাছে গিয়ে তূর্য সম্পর্কে সব কথা বলে। ছেলে আর ছেলের পরিবার সম্পর্কে জেনে প্রাথমিকভাবে তূর্যকে চাচীর কাছে বেশ পছন্দই হয়।

রাইয়ান তখন বলে- আমি তাহলে ওদের আসতে বলি? সবার দেখাদেখি হোক?

-আমি আগে তোর বাবা আর বড় চাচার সাথে কথা বলে দেখি। তারা যদি বলে তাহলে আসবে সমস্যা নেই।

রিফাত সাথে সাথে বলে- তুমি এখনই কথা বলো। শুভ কাজে দেরি করতে নেই।

বড়রা সবাই একসাথে বসে পাত্র-পাত্রী দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ তূর্যকে সবারই মনে ধরেছে।

রিফাত আর রাইয়ান রিয়ানার ঘরে গিয়ে দেখে সে পড়ছে। দুই ভাইকে একসাথে দেখে সে পড়া থামিয়ে ওদের দিকে তাকায়।

রিফাত বলল- তূর্যর আমেরিকা যাওয়া কতদূররে?

রিয়ানা ভীষণ অবাক হল কারণ তূর্য সম্পর্কে সে বড় ভাইয়াকে সব বলেছিল ছোট ভাইয়াকে না! সে বড় ভাইয়ার দিকে অসহায়ভাবে তাকাল…

রিফাত বলল- ওদিকে কী দেখিস? এদিকে দেখ, তোর কী মনেহয় এত বড় একটা বিষয় আর ভাইয়া আমাকে বলবে না? ভাইয়া আমাকে সব বলেছে। অবশ্য বলার কারণ ছিল বলেই বলেছে। তূর্যর সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নেবার জন্য ভাইয়া আমাকে জানিয়েছিল সব। ভাইয়া বলা মাত্রই আমি ওর মাথার শিং থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত সব খোঁজ নিয়ে ফেলেছি। ছেলেটা ভালোই, ভদ্র আছে। ধরে হালকা করে একটা ধোলাইও অবশ্য দিয়ে দিতে হয়েছে।

-মানে কী? তুই তূর্যর সাথে কথা বলেছিস?

-কথা বলতে যাব কেন? আমি কী ওর শালা লাগি? ধোলাই দিয়েছি, ধোলাই। বলেছি- “তুমি নিজে স্টুডেন্ট আমার বোনও, তাই ফোনে যদি ব্যস্ত হতে দেখেছি তো শুধু তোমাদের প্রেমই না মাথা পর্যন্ত ভেঙে ফেলব।”

রিয়ানা চোখ সরু করে ঝগড়ার গলায় বলল- এইজন্যই তূর্য কখনো আমাকে ফোন করে না। আর আমি করলেও দুই মিনিটের বেশি কথা বলে না! এইজন্যই তোকে আমি কোন কিছু বলি না। তুই সব সময় সব কিছু নষ্ট করে দিস। গুন্ডা একটা। আমি বাবাকে সব বলে দিব।

-যা বলে দে? তারপর দেখ তোর বিয়ে কী করে হয়? তোরা যে প্রেম করছিস জানিয়ে দে সবাইকে, যাহ।

রিয়ানা রাগে চুপ হয়ে গেল। রাইয়ান বলল- আরে বোকা এত ভাবিস কেন? তোর দুই দুইটা ভাই আছে, নো চিন্তা ডু ফুর্তি। আমরা তোদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছি। তুই ভয় পাস না, তোর পড়া নিয়ে কোনই সমস্যা হবে না। আমরা অলরেডি সব রকম খোঁজই নিয়েছি। বোনের ব্যাপারে কোন কাঁচা কাজ আমরা করি না।

রিফাত তখন রিয়ানার ফোন হাতে নিয়ে বলল- তূর্যকে একটা ফোন দে কথা বলি?

রিয়ানা তূর্যকে ডায়াল করতেই রিফাত ফোনটা নিয়ে নেয়। “কথা আমি বলব” বলে ফোনটা কানে ধরে। ওপাশ থেকে তূর্য ফোন ধরেই গান ধরল-

-“ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে… আমার নামটি লিখো… তোমার মনেরও মন্দিরে…” তারপর বলল- what a coincidence! তোমার কথাই ভাবছিলাম এই মুহূর্তে…

রিফাত নি:শব্দে হেসে গেয়ে উঠল- “আমি… আমার ভেতর থেকে নামি… নেমে যাকে খুঁজি… দেখা নাই তার… রঙ নাম্বার… রঙ নাম্বার…” হা হা হা…

রিয়ানা বলে উঠল- ভালো হচ্ছে না কিন্তু… বড় ভাইয়া তুমি কিছু বলবে না ওকে?

রাইয়ান নিজেও মুচকি হাসছিল সে হাসি থামিয়ে বলল- রিফাত থাম তো, কী করছিস এসব? আমরা ওর বড়, এসব মানায় না।

-কে বলেছে মানায় না? একশ বার মানায়। ও ছোট দেখেই মানায়। এতদিন ওকে জ্বালিয়েছি এখন ওর জামাইকে শুদ্ধ জ্বালাব। বাচ্চাকাচ্চা হলে সেগুলোকেও কানে ধরে মামাবাড়ি দেখিয়ে ছাড়ব। এইজন্যই ছেলের নাম তূর্য রেখেছি। যাতে একটাকে মেরে মেরে আরেকটাকে টাইট দিতে পারি। এখন কথা বলতে দে। ওদিকে ফোনের ওপাশে কঠিন নিরবতা চলছে… রিফাত বলল- কী হলো গান পছন্দ হল না, না কি গলার আওয়াজ, কোনটা? চুপ হয়ে গেলে যে?

-রিফাত ভাইয়া?

-এটা আমার প্রশ্নের উত্তর হল না।

-গান পছন্দ হয়েছে।

-তার মানে আমার গলার আওয়াজ পছন্দ হয়নি?

-ওটা একটু বেশিই পছন্দ হয়েছে কিন্তু আপনি তো একটা এবং পছন্দের অপশন চেয়েছিলেন।

-বাহ্, এই ছেলের তো ব্রেইন খুবই শার্প! বড় ভাইদের সালাম দিতে হয়, সালাম কই?

-আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন ভাইয়া? আমি রিয়ানাকে ভেবেছিলাম তাই…

-হুম, কী করছিলে?

-পড়ছিলাম।

-পড়ার মাঝখানে রিয়ানার কথা ভাবছিলে কেন? পড়াশোনা আসলে করো তো না কি সব গোল্লায় দিয়ে বসে আছ?

-এই তো ভাইয়া চলছে সবই…

-হুম… বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলো, বলে রিফাত রাইয়ানকে ধরিয়ে দিল। রাইয়ান উঠে গিয়ে তূর্যর সাথে কথা বলে কীভাবে কী করতে হবে, কার সাথে কথা বলতে হবে সব কিছু ঠিকঠাক করে নেয়।

এক সপ্তাহ পর তূর্যর পরিবার আসবে রিয়ানাকে দেখতে সেই সাথে সব কিছু ঠিক থাকলে এনগেজমেন্ট হয়ে বিয়ের কথাও পাকা করে যাবে। সেইভাবেই এবাড়িতে প্রস্তুতি চলছে।

রেহানা ইসলাম আর পুষ্প মিলে সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। কিছু দরকার হলে বড় চাচীর কাছ থেকে জেনে নিচ্ছে। আমানত উল্লাহ সাহেব বড় ভাইকে আগের দিনই ভাবিকে সহ চলে আসতে বলে দিয়েছেন। কথা যা বলার বড় ভাইকেই তো বলতে হবে। বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে কেউ কোন কমতি রাখতে চায় না।

রেহানা ইসলাম এই সময়ে তানিয়াকে খুব মিস করলেন… তানিয়া থাকলে অনেক কাজই সহজ হয়ে যেত, অনেক কিছু নিয়ে তাকে ভাবতেই হত না। তানিয়ার জন্য তিনি এখনো নিরবে কেঁদে যান…

রিয়ানার এনগেজমেন্ট হয়ে যায়। তূর্য PHD করতে আমেরিকা যাচ্ছে। তার সব কিছুই ঠিকঠাক হয়ে গেছে। এক মাসের মধ্যে সে উড়াল দেবে তার স্বপ্নের পথে, স্বপ্নের দেশে। তাই বিয়েটা সবাই করিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিল। হাতে এক মাস মাত্র সময়। হিসেব মত এক মাসও নেই, কারণ তূর্যকে দেশ ছাড়ার জন্যও তৈরি হতে হবে। তাই বিয়ের আয়োজন করার জন্য কেউ দম ফেলবার সময় পেল না। সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা যাচ্ছে বড় চাচী আর রিফাতের। কারণ তাদেরকে রাইয়ানের জন্যও ভাবতে হচ্ছে। বড় চাচী বেশ কিছু মেয়ে ঘটকের মাধ্যমে দেখে ফেলেছে। তাদের সাথে রাইয়ানের দেখা করাবার প্ল্যানও তিনি করে রেখেছেন। এখন শুধু রাইয়ানকে বিয়ের জন্য রাজি করানো। রাইয়ান অনেক ভদ্র ছেলে তাকে বুঝিয়ে বললে নিশ্চই বুঝবে।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলেই এলো। পুষ্প আর রেহানা ইসলাম আত্মীয়স্বজনের দিকটা সামলাচ্ছে। তারা দম ফেলার সময় পাচ্ছে না কাজ করে। বিয়ে বাড়িতে অনেক লোকের মাঝে রাইয়ান একগাদা লোক দেখল যার অধিকাশংই মেয়ে এবং এদের কাউকেই কেউ চিনতে পারছে না! বড় চাচী কিছুক্ষণ পরপর এদের ধরে এনে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এরচেয়েও বেশি আশ্চর্যের বিষয় প্রত্যেকের সাথে অবিবাহিত এবং সর্বগুণেগুণান্বিত একটা করে মেয়ে থাকছে! হাউ অদ্ভুত! ওদিকে রিফাত ব্যস্ত আছে কী করে জুনিয়র তূর্যকে শাসিয়ে জামাই তূর্যকে ভয় দেখানো যায় সেসব নিয়ে। ছেলেটা পারেও! এত বড় হয়েছে ছেলের বাপ হয়ে গেছে অথচ এখনো ছেলে মানুষী গেল না! রিয়ানা পড়েছে তারচেয়েও বেশি বিপদে। কারণ সে তূর্যর নাম নিলেই সবাই জিজ্ঞেস করছে “তূর্য ছোটটা না কি বড়টা?” এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সে একবার মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল- “আমারটা” তারপর থেকে সবার হাসাহাসি আর খোঁচাখুচিঁতে বেচারার জীবন ফালিফালি হয়ে যাচ্ছে! কথা যেটাই হোক সবাই সব কথার শেষে লাগিয়ে দিচ্ছে “আমারটা”!

ভালোয় ভালোয় বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে রিয়ানাকে বিদায় দিয়ে দেয়। বিদায় দেবার সময় রিয়ানার বাবা আর দুই ভাই কান্নায় ভেঙে পড়ে… রিয়ানা সবার অতি আদরের। আমানত উল্লাহ খান তূর্য আর তূর্যর মা বাবাকে বলেন- “আপনারা আমার মেয়েকে না আমার ঘরের আলো আর রহমতটাকে নিয়ে যাচ্ছেন! আমার রিয়ানা এত শান্ত স্বভাবের যে, কখনো কোন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ দেয়নি সে। পড়াশোনা আর পরিবার দুটোই তার কাছে মূল্যবান। আপনারা ওকে সেভাবেই মূল্যায়ন করবেন। ও পড়াশোনা নিয়ে থেকেছে সব সময়, সংসারের খুটিনাটি অনেক কিছুই সে জানে না। তাকে দেখিয়ে দেবেন, শিখিয়ে নেবেন।

তূর্যর বাবা বললেন- বেয়ান সাহেব আপনি এসব নিয়ে কেন এত চিন্তা করছেন? আমার তো দুটো ছেলে। রিয়ানা আমাদের মেয়ে হয়েই থাকবে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল তূর্য ডাক্তার হবে কিন্তু তূর্যর ইচ্ছে হল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে! কী আর করা… কিন্তু রিয়ানা আমার সে আশা পূরণ করে দিল। আমার ছেলে না হোক ছেলের বউ তো ডাক্তার হতে যাচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা আমার ছেলে আর ছেলের বউয়ের জন্য দোয়া করবেন। তারা বিদায় নিয়ে চলে যায়।

বিয়ে আর বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষ হবার পর বড় চাচী রাইয়ানকে নিয়ে ব্যস্ত হলেন। রাইয়ানকে এক প্রকার চেপে ধরেই বোঝাতে লাগলেন তার এবার একটা বিয়ে করা উচিত। সবাই যার যার নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে সে এভাবে একা আর কতদিন থাকবে? এভাবে বেশিদিন থাকলে এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে পরে আর বিয়ে করতে ইচ্ছে হবে না।

রাইয়ান কোন ভনিতায় না গিয়ে সরাসরি বলল-

-চাচী, আমি বিয়ে নিয়ে ভাবছি না কিছু। তোমরা আমাকে এখন এসব কিছু বলো না।

-এখন বলব না তো কখন বলব?

-আরও কিছুদিন যাক।

-না, আর কিছু দিন যেতে পারবে না। আমার বয়স হয়ে গেছে। কখন আল্লাহপাকের হুকুম হয়ে যাবে আজরাইলের ডাক আসবে আমি টুকুস করে চলে যাব। তোর একটা ব্যবস্থা না করে তো আমি শান্তি পাব না বাবা?

-আমি তো মানা করছি না। আর কিছুদিন যাক।

-তাহলে আমরা মেয়ে দেখতে শুরু করি। দেখতে দেখতেও তো অনেক সময় লেগে যায়। আর এসবের ভিতরে থাকলে তোর মনও পরিবর্তন হয়ে যাবে।

রাইয়ান হতাশ হয়ে যায়। বড় চাচীকে কিছু বোঝানো যাবে না। তিনি যেটা ভেবেছেন সেটাই করবেন। তার কথার উপর বাবা মা নিজেই কিছু বলেন না সে কী বলবে? তাছাড়া বড় চাচী অত্যন্ত বিচক্ষণ মানুষ, তিনি কখনো ভুল সিদ্ধান্তও নেন না। তাই রাইয়ান আর কী বলবে?

বড় চাচী তখন রাইয়ানের ফেস রিড করে ইনিয়ে বিনিয়ে বিয়েতে দেখা মেয়েগুলোর কথা রাইয়ানকে বলতে লাগলেন। রাইয়ান বুঝল, তার পালাবার পথ নেই!

ওই মুহূর্তে রিফাত এসে বলল- চাচী সব ওকে? আমি পাত্রীদের লাইন দেয়া শুরু করে দিব?

রাইয়ান ওর কান ধরে বলল- চাচীকে তাহলে তুই উষ্কে দিচ্ছিস, না?

রিফাত আ উ করতে করতে বলল- কেন বিয়ে করে ঠ্যালা শুধু আমি একা সামলাব আর তুমি গায়ে হাওয়া বাতাস উইন্ড লাগিয়ে চোখে টিনের চশমা পরে খোলা ষাঁড়ের মত ঘুরে বেড়াবা সেটা আমার সহ্য হবে নাকি?

-বেশি বাড়িস না ষাঁড়ের ওই শিং দিয়ে গুতিয়ে ফুটো করে দিব।

-কেন শুধু শুধু আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া করছি বলো তো? এইজন্যই বলছি যে একটা ভাবি নিয়ে আসো। ভাবি আর পুষ্প ঝগড়া করুক আমরা পপকর্ণ খেতে খেতে আরাম করে ইনজয় করি, সেটা বেশি ভালো না? পপকর্ণ ভালো না লাগলে আইসক্রিম নিয়ে বসব, কোন সমস্যা নেই।

রাইয়ান ওর মাথায় একটা থাপ্পড় মেরে বলল- সমস্যা আইসক্রিমে হচ্ছে সেটা কে বলেছে ছাগল?

-তাহলে কিসে হচ্ছে?

বড় চাচী তখন বললেন- এই আমি যে এখানে আছি তোরা সেটা দেখতে পাইতেছিস কিনা?

ও… হ্যাঁ পাচ্ছি তো। কিন্তু একটু ভুলে গেছিলাম। ঠিক আছে ভাইয়া যখন বলল তাহলে ওই কথাই ফাইনাল, কী বলো চাচী?

রাইয়ান বলল- কী ফাইনাল?

তোমার জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছি এই সামনের ছুটির দিনে, সেটা।

চাচী বললেন- ঠিক আছে যা ফাইনাল। এখন যা সবাইকে বলে দে।

রাইয়ান অবাক হয়ে বলে- আরে কী এগুলা! আমি কখন বললাম যে, পাত্রী দেখতে যাব?

-এই যে বলতেছ? চাচী বলল না, ও?

-হ্যাঁ বললই তো। আমিও তো শুনলাম।

রাইয়ান তখন ঠিক আছে তোমাদের যা ইচ্ছে করো। বলে ও উঠে যায়। রিফাত তখন চাচীর সাথে হাসতে থাকে। যাক ভাইয়া রাজি হয়ে গেছে। এখন শুধু ভালো একটা মেয়ে পাওয়া আর ভাইয়ার বিয়ে দেয়া। রিফাত নির্ভার হয়। সে চাচীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। বলে- তানিয়া ভাবিকে তাড়াতাড়ি ভুলতে হবে ভাইয়ার। তাকে মনে চেপে রেখে ভাইয়া শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছে। কাউকে কিছু না বললেও আমি টের পাই ওর ভেতরটা। ওর একটা স্বাভাবিক জীবন দরকার।

-তোর বাপ মায়ের আসলে সোনার কপাল। এমন ৩টা সন্তান পেয়েছে তারা। তোর বাপ চাচারা যেমন তোরাও তেমন হয়েছিস।

-এগুলো একটু ভাইয়াকে শুনিয়ে যেও। সে তো সব সময় তোমার ছেলেমেয়েদের উদাহরণ দিয়ে দিয়ে আমাকে ঝালাপালা করে ফেলে। আমি নাকি কিছুই পারি না কিছুই শিখিনি। তোমার সন্তানদের কারণে আমার জীবন অতিষ্ঠ সেটা কি তুমি জানো?

বড় চাচী হাসতে হাসতে শেষ। কথার কী ছিড়ি, এইটুকু এক ছেলে তার আবার জীবন! সেটাও নাকি আবার কেউ অতিষ্ঠ করে ফেলছে হুহ।

রিফাত লাফিয়ে উঠে বলল-এইটুকু ছেলে! এটা তুমি কী বললে চাচী? এই এইটুকু ছেলে এখন এক ছেলের বাপ হয়ে বসে আছে! উফ ছেলে থেকে মনে পড়ল, অনেক্ষণ আমি আমার ছেলেকে দেখি না! “তূর্য…” বলে ডাকতে ডাকতে উঠে চলে গেল রিফাত।

বড় চাচী হাসলেন। এবাড়ির ছেলেমেয়ে সবগুলোই ভদ্র হয়েছে। আল্লাহ সবাইকে মানুষ হবার তৌফিক দিয়েছেন। এখন নাতি নাতনি দিয়ে ঘর ভরে যাচ্ছে। আল্লাহ যেন ওদের মধ্যেও তাদের ছায়া রেখে যেতে পারেন সেই দোয়া করেন।

পুষ্প ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছিল। রিফাত এসে পুষ্পর কাছে বসে বলল- আজকাল আমি তোমার সেকেন্ড অপশন হয়ে গেছি না?

-এতদিন কী অপশন ভাবতে?

-অবশ্যই ফার্স্ট অপশন।

-তাই নাকি? আমি তো জানতাম না।

-তাহলে কী জানতে?

পুষ্প ছেলেকে শুইয়ে দিয়ে রিফাতের কাছে এসে মুচকি হেসে বলল- “ম্যায় তেরে দুশমন দুশন তু মেরা…”

রিফাত পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে বলল- আর সেই দুশমনের প্রতি তোমার এত দুশমনি যে, তারই ছেলের মা হয়ে বসে আছ! হাউ?

-“হাউ?” না, বলো “হাউ সুইট!” এখন বলো ভাইয়াকে বিয়েতে রাজি করাতে পেরেছ?

-রিফাত পারে না পৃথিবীতে এমন কোন কাজ নেই। ভাইয়া পারলে এক্ষুণি পাগড়ি মাথায় দিয়ে জামাই সেজে বিয়ে করতে চলে যায়। বিয়ে করার জন্য তার গাড়িতে চড়ে নষ্ট করার সময়টাও নেই ঘোড়ায় চড়ে যেতে হবে।

পুষ্প হেসে বলল- একটা কথা বলব?

-হুম…

-তুমি যে এখন ভাইয়ার বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়েছ এটা খুব ভালো করেছ। তুমি কীভাবে কীভাবে জানি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলতে পারো। আমি তোমার নামটা যথার্থই দিয়েছি “Mr. Calculus”. আমি লাকি যে তোমাদের পরিবারের অংশ হতে পেরেছি। আমাদের পরিবার সব সময় ভালো থাকুক সবাইকে নিয়ে।

-জীবন আসলে সুন্দর। আমাদের প্রত্যেকের উচিত জীবনের সুন্দর দিকগুলো খুঁজে বের করা, প্রিয় মানুষগুলোর ছোট ছোট ভালো লাগা খেয়াল রাখা। পুরো পরিবার ভালো থাকলেই ভালো থাকা যায়। ভালো থাকুক প্রতিটি মানুষ তার প্রতিটি পরিবার নিয়ে।।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here