Mr_Calculus (পর্ব – ৭)

0
530

#Mr_Calculus (পর্ব – ৭)

গাড়ি থেকে নেমে পুষ্পর অন্যরকম এক অনুভূতি হল… এই প্রথম সে তার শ্বশুর বাড়িতে পা রাখল! সিঁড়ির উপর তার শ্বাশুড়ি মা সাথে আরও অনেক মুরুব্বি টাইপ মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের হাতে বড় ট্রে জাতীয় কিছু, নিশ্চই বরণ ডালা হবে। তানিয়া সহ ভাবি টাইপ দেখতে যারা আছে তারা এসে ওদের দুজনকে উপরে নিয়ে যায়। তখন মুরুব্বি শ্রেণি ওদের মিষ্টিমুখ করে বরণ করে নেয়। তারপর ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকতেই রিয়ানা আর সব কাজিনরা মিলে বর আর নববধূকে ঘিরে নাচতে শুরু করে গানের তালে। নাচ শেষ হতেই তারা বেশ কিছু রিচ্যুয়াল পালন করে। দুজনকে নিয়ে খুব হৈচৈ আর মাস্তি করে। রিফাতের বড় চাচী এসে তখন সবাইকে বলে, এসব অনেক হয়েছে। ওরা খুব টায়ার্ড ওদের ছেড়ে দে। ওদের খেতে দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দে।

রিয়ানা ওদের খেতে দিয়ে নিজেও বসে পড়ল। রিফাতের কিছু বন্ধু ছিল তারাও খেতে বসে যায়। পুষ্প খুব একটা খেতে পারল না। ২/৩ বার মুখে দিয়েই খাওয়া শেষ করল। এটা নিয়ে রিফাতের বন্ধুরা দুষ্টুমি করতে লাগল,

-“ভাবি মনেহয় নিজের হাতে খেতে চাইছে না… হাতের মেহেদি নষ্ট হয়ে যাবে… নাকি অন্য কিছু ঠিক বোঝা যাচ্ছে না… হা হা হা…”

-আরেকজন বলল- “আরে মহেদি তো বাহানা কেবল… ব্যাপারটা অন্য কিছু…” আবার হাসি…

-আরেকজন বলল- “আমি যে কেন মেহেদি হলাম না? আফসোস… তাহলে মেয়েরা আমাকেও এত যত্ন নিয়ে পরে ঘুরে বেড়াত ছবি তুলত… আমি থাকতাম সবার হাতে হাতে।”

তখন রিফাত বলে উঠল- আরে ব্যাটা মেয়েরা পায়েও মেহেদি পরে। তখন তো ধুলাবালি আর উষ্ঠা খেয়েই মরতি। আবার সবাই হেসে ফেলল।

রিফাতের কথা শুনে পুষ্প আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল- মেয়েদের সম্পর্কে কত জানে! ব্যাটা বদ। আজকের পর অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখিস, তোর একদিন কী আমার একদিন। বলে চোখ কটমট করে রইল। পুষ্পর চোখ রাঙানো রিফাতের নজর এড়ালো না। সে ধরা পড়া গলায় সাথে সাথে বলল-

-আরে আমি আমার মামী চাচীকে পায়ে মেহেদি পরতে দেখেছি অন্য কোন মেয়েকে না। টেবিলের সবাই তখন খাওয়া রেখে যে যেই অবস্থায় ছিল সেখানেই থেমে গেল… পুরো এক মিনিট চলে গেল। রিফাত বুঝল সে বোকামি করে ফেলেছে কিন্তু এখন কিছু করার নেই আর! ওর চেহারা দেখে সবাই হা হা করে হেসে ফেলল। পুষ্প ভীষণ বিব্রতবোধ করল। বিয়ে করে সব ছেলেই কী গাধা হয়ে যায়???

পুষ্প তার বাসর ঘরের বিছানায় বসে আছে। রিয়ানা আর তানিয়া তাকে দিয়ে গেছে। পুষ্প ঠিক বুঝতে পারছে না সে বাসর ঘরে বসে আছে নাকি কারো বার্থডে পার্টির ঘরে বসে আছে! ঘরটা সাজানো হয়েছে অথচ একটাও ফুল নেই! বিছানার পেছনের দেয়ালে নেটের কাপড় ডিজাইন করে ঝুলিয়ে তার ভেতর ডেকোরেশন বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে আর ফ্লোর ভর্তি হার্ট শেপের রেড কালারের বেলুন। ঘরের এখানে সেখানে বেশ কিছু ছোট ছোট ডেকোরেটেড মোম জ্বলছে। দেখতে এমনিতে ভালোই লাগছে। সারাদিনের ক্লান্তির পর এই আলো আঁধারিতে বসে থেকে পুষ্পর কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আজ তার বিয়ের দিন, সে বাসরঘরে বসে রিফাতের অপেক্ষা করছে, তার উপর নতুন জায়গা কোথায় ঘুম পালিয়ে থাকার কথা সেখানে সে চোখ খুলে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে, কী অদ্ভুত! রিফাত এখনো আসে না কেন? যেভাবে ঝিমাচ্ছে রিফাত দেখলে নির্ঘাত তাকে রানীক্ষেত মুরগি বলে বসবে! ইয়া মাবুত রক্ষা করো… আচ্ছা সে কী একটা ফোন করবে রিফাতকে? সেটাই বা কী করে হয়? ভাববে জামাইর জন্য উতলা হয়ে গেছি। নাকি ঘুমিয়ে যাবে? ধুর, ভাল্লাগে না… পুষ্প এসব ভাবতে ভাবতেই রিফাত চলে আসে। রিফাত এসে পুষ্পর সামনে বিছানার উপর বসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে-

-কেমন আছ পুষ্প? ঠিক আছ? মানে কম্ফোর্ট ফিল করছ তো?

-হুম, ঠিক আছি…

রিফাত ভাবছে এরপর কী বলবে? বউয়ের চেয়ে ছাত্রী হিসেবেই মেয়েটা ভালো ছিল। যা খুশি দুম দাম বলে ফেলা যেত। অথচ ব্যাপারটা উল্টো হওয়া উচিত ছিল, আশ্চর্য! তারপর বলল-

-ইয়ে, আমার ঘর পছন্দ হয়েছে? সুন্দর সাজিয়েছে না? আইডিয়াটা কিন্তু আমার।

পুষ্প পুরো ঘরে আরেকবার চোখ বুলিয়ে বলল- সাজানো ভালো হয়েছে। কিন্তু আজ আপনার বার্থডে সেটা তো জানতাম না!

-আমার বার্থডে! কে বলল? না তো।

-না, মানে… বাসারঘর তো ফুল দিয়ে সাজায়। এভাবে বার্থডের জন্য সাজাতে দেখেছি তাই ভাবলাম…

-ওহ আচ্ছা, বলে রিফাত হাসল। এভাবে সাজাবার একটা কারণ তো আছেই। তুমি ম্যাথের ছাত্রী সূত্র মেলাও দেখি? বলে পুষ্পর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রিফাত।

-ম্যাথের শিক্ষক যখন সামনে বসেই আছে তখন আর ব্রেইনটাকে খামাখা কষ্ট দেবার দরকার কী? আপনিই বলুন না?

-ব্রেইনটাকে একটুও ইউস করতে ইচ্ছে করে না, না?

-না, করে না।

-সমস্যা নেই সব ঠিক করে ফেলব। তারপর পুষ্পর দিকে একটু এগিয়ে এসে ওর চিবুকে হাত রেখে বলে- “আমি চেয়েছিলাম আমার ঘরে আজ একটাই ফুল থাকুক। কারণ আমার ব্যক্তিগত ফুলের পাশে অন্য সব ফুলকেই বেমানান দেখাবে। তোমাকে আজ দারুণ লাগছে like ‘stat mania’ (গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সমীকরণের নাম)।

পুষ্প রিফাতের কথায় অবাক হয়। ও ভাবেইনি রিফাত এভাবে কিছু বলবে! ওর গালে রক্তিম আভা দেখা গেল। আর মনে মনে ভাবল- তুলনা দেবার জন্য সূত্রই খুঁজে পেল! আর কিছু না? সারা জীবন আমাকে কী এখন সূত্র ধরেই চলতে হবে? রিফাত তখন বলে উঠল-

-তুমি চেঞ্জ করবে না?

-হুম

-আচ্ছা যাও করে নাও।

পুষ্পর ইচ্ছে হচ্ছিল টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে নেয়, রাতে ঘুমার জন্য এরচেয়ে কম্ফোর্ট আর কী হতে পারে? কিন্তু নতুন বউ বলে নাকি আজই ওসব পরা যাবে না। তাকে নাকি শাড়িই পরতে হবে। শাড়ি পরতে হবে সেটাও সমস্যা না, শাড়িতে সে মোটামুটি অভ্যস্ত। ভালোই পরতে পারে। সমস্যা হল পুষ্প কারো সাথে বেড শেয়ার করতে পারে না। সারা জীবন সে একা ঘুমিয়েছে। ছেলেবেলা থেকেই তার বিছানা জুড়ে হাত-পা ছুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে অভ্যেস। কতবার বিছানা থেকে পরে গেছে তার ঠিক নেই। তার সাথে কেউ ঘুমালে সারা রাত তাকে ফুটবল হয়েই কাটাতে হয়! তার সাথে এক রাতের বেশি ঘুমানোর রেকর্ড নেই কারো। আজ কী হবে? ইনফ্যাক্ট এখন থেকে রোজ কী হবে??? কী আর হবে, ভালোই হবে। ব্যাটা ক্যালকুলাসের এ্যাসাইনমেন্ট করানোর জ্বালা তো এখনো জুড়োয়নি সেটা উসুল করা যাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। বলে সে চেঞ্জ করতে গেল।

পুষ্পর চেঞ্জ করা হলে রিফাতও চেঞ্জ করে এসে বিছানায় বসে। তাকিয়ে দেখে পুষ্প চেঞ্জ করে সুতি মসলিন কাপড়ের হ্যান্ড পেইন্ট করা হলুদ রঙের একটা শাড়ি পরেছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়ে নিচ্ছে। রিফাত আড়চোখে পুষ্পকে দেখছিল। পুষ্পকে এভাবে খোলা চুল আর হলুদ শাড়িটাতে খুব সুন্দর লাগছে। ঘরের এই অল্প আলোও পুষ্পর স্বাভাবিক সৌন্দর্য ম্লান করতে পারছিল না বরং আশ্চর্য এক মায়াময় রূপ তৈরি করেছে! আলো বেশি থাকলে নিশ্চই হলদে পাখির মত দেখাত? আসলে মেয়েটাকে সে যেভাবেই দেখে সেভাবেই ভালো লাগে। সে ঘোর লাগা চোখে পুষ্পকে দেখতে দেখতে উঠে দাঁড়িয়েছে ওর দিকে এগিয়ে যেতে ঠিক তখনই পুষ্প ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। এমন হুট করে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরায় তাল সামলাতে না পেরে দুজনে ধপাস করে বিছানায় পড়ে যায়। সাথে সাথে বিছানার মাচা ভেঙে দুজনে ঢুকে যায় বিছানার ভিতর!

পুষ্প রিফাতের নিচে পড়েছে আর রিফাত তার উপর। পুষ্পর চোখে একই সাথে লজ্জা, বিস্ময় আর আতঙ্ক… তখনও সে রিফাতের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে। সেটা খেয়াল করতেই রিফাতের গলা থেকে তার হাত সরিয়ে নিচ্ছিল কিন্তু রিফাত হাতটা ধরে ফেলে বলল-

-It’s okay… আমি জানি আমি তোমার হাজবেন্ড, আমাকে জড়িয়ে ধরার পুরো হক আছে তোমার কিন্তু এভাবে এত জোরে একেবারে ভাঙচুড় করে রেকর্ড গড়ে জড়িয়ে ধরার কারণটা বুঝলাম না! আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না?

-তেলাপোকা…

রিফাত অবাক হয়ে বলল- তেলাপোকা?

-উড়ন্ত তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছিলাম। আমার দিকেই উড়ে আসছিল…

-ওহ… তাই বল… তাকে তো ধরে এনে পুরস্কৃত করা উচিত। কোথায় সে?

-উঠে গিয়ে খুঁজুন তাকে। সরুন, নাকি এভাবেই থাকার ইচ্ছা?

-ও হ্যাঁ, ওঠো। এভাবে চাপা পড়ে আছ কেন কে জানে! রিফাত উঠে পুষ্পকেও ওঠায়। জিজ্ঞেস করে, তোমার লাগেনি তো?

-না। আপনার?

-না। তারপর বিছানার দিকে তাকিয়ে বলে, সর্বনাস তো যা করার করে ফেলেছ। এখন এই সমাজে মুখ দেখাব কী করে? একেবারে বাসর ঘরেই বিছানা ঠুস! এটা কোন কথা? ওফফ… প্লাস্টিক সার্জারি না করে এই মুখ আমি আর সকালে বের করতে পারব না। কী করলে এটা তুমি?

পুষ্প কিছুটা ঝাঁজের সাথে বলল- ৩হাজার বছরের পুরাতন বিছানা হলে তো এমন হবেই। না জানি বিছানায় ঘুমায় নাকি সারা রাত যুদ্ধ করে এর জীবন শেষ করে ফেলেছে আল্লাহ জানে!

-আমি মোটেও বিছানায় যুদ্ধ করি না। আমি বিছানায় ঘুমালে সকালে সেটা ঠিকও করতে হয় না। এত সুন্দর ঘুমাই যে দেখলে ক্রাশ খেয়ে যাবে।

-হুহ, দেখা যাবে সেসব। তারপর ঘরের দিকে তাকিয়ে বলল, আরও জ্বালান মোমবাতি। এইসব আলো আঁধারি দেখেই যত পোকামাকড় আর তেলাপোকা ছুটে আসছে।

-এত কথা না বলে এবার বিছানার কী করা যায় সেটা বলো?

-কেন বিছানাকে এবার সূত্রে ফেলে দিন না? আপনার তো সূত্রের অভাব নেই। নিউটন বা পীথাগোরাসের কোন একটা সূত্র বসিয়ে দিন বিছানা তরতর করে দাঁড়িয়ে যাক?

রিফাত কটকটে চোখে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলল- very bad joke. পুষ্প সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। তারপর শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে নিয়ে রিফাতকে বলল-

-খাম্বার মত দাঁড়িয়ে না থেকে এদিকে আসুন, দেখুন কী হয়েছে? রিফাত এগিয়ে যায়। মনে মনে সে খুব বিরক্ত। কোথায় রোমান্স করবে তা না… ওফফ। রিফাত বিছানার ম্যাট্রেক্স তুলে দেখে নিচের মাচাগুলো করাত দিয়ে কেউ অতি যত্ন করে কেটে রেখেছে! কোন রকম লাগানো ছিল তাই তারা পড়তেই চাপটা সামলাতে পারেনি হরহর করে ভেঙে পড়েছে! কিন্তু এই দুষ্টুমি করলটা কে??? এই বাসায় সে ছাড়া এমন ফাজিল আবার কবে পয়দা হল?

-কী হল, কী ভাবছেন? কার কাজ এসব?

রিফাত গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল- বুঝতে পারছি না… কে এমন চমৎকার, না মানে বদমাইশিটা করতে পারে?

পুষ্প চোখ পাকিয়ে বলল- এটা অবশ্যই “বদমাইশি” আর সেটা আপনার কাজিন বা বন্ধু সমাজেরই কেউ করেছে। এবার কী করবেন সেটা ভাবুন?

-সেটাই…

-সূত্রমতে যে বা যারা এই কাজ করেছে তারা দরজার বাইরেই আছে। আপনি দরজা খুললেই পেয়ে যাবেন। আর তারা নিশ্চই এই ভাঙা বিছানার বিকল্প কিছু ব্যবস্থাও করে রেখেছে। যান দেখুন?

-এই প্রথম মনে হচ্ছে তুমি তোমার ব্রেইনটাকে কিছু হলেও ইউস করো! বাকিটা প্রমাণ সাপেক্ষে বলা যাবে। বলে রিফাত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলল। আর সাথে সাথেই হুরমুর করে ১০/১২ জন ওর পায়ের কাছে পড়ে গেল! এখানে রিফাতের ৫জন বন্ধু, রিয়ানা আর বাকি সব কাজিন ছিল। সব কটা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখতে লাগল তারপর ভাঙা বিছানা দেখে সব কটা হেসে গড়িয়ে যেতে লাগল। সেকি অট্টহাসি একেকজনার! পুষ্পর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আর রিফাতের মুখ রাগে। সে প্রায় ধমকের সুরে বলল-

-এই দুষ্টুমিটা কার মাথা থেকে এসেছে?

রিয়ানা বলল- ভাইয়া আমার আইডিয়া এটা। “হাম আপকে হ্যায় কৌন” মুভিতে সালমান আর মাধুরীর এমন একটা সীন আছে সেটাই ক্রিয়েট করতে চেয়েছিলাম। ভাইয়াদের বলতেই তারা ম্যানেজ করে ফেলল। ইসসস দেখতে পারলাম না… দারুণ হয়েছে না ভাইয়া?

আইডিয়াটা রিয়ানার বলে রিফাত আর কিছু বলতে পারল না। তাছাড়া আইডিয়াটা আসলেই দারুণ ছিল। কিন্তু সে সেটা প্রকাশ না করে বলল- কচুর আইডিয়া হয়েছে। আমি বিছানায় বসতেই পটাস করে ভেঙে পড়েছে। ফুল… মানে পুষ্পর তো কিছুই হল না। সে তো বিছানায় ছিলই না।

রিয়ানার মুখ সাথে সাথে চুপসে গেল সাথে বাকিদেরও। রিয়ানা মুখ করুণ করে বলল- সিনেমার মত কিছুই হয়নি!

-কিচ্ছু না। এবার বিছানা ঠিক করার ব্যবস্থা কর নইলে বাবাকে ডাকলাম। আমি কিন্তু পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি সেটা বাবাকে বলে দিব বলে দিলাম। বলেই সে কোমরে হাত দিয়ে ব্যথার অভিনয়ে আহ করে উঠল।

সবাই তাড়াতাড়ি বলল- ঠিক আছে, ঠিক আছে এত অস্থির হবার কিছু নেই। নতুন মাচা আনিয়েই রাখা আছে। পাল্টে ঠিক করে দিয়ে যাচ্ছি সব।

রিফাত বলল- হুম দ্রুত। আমার রাতটাই তোরা নষ্ট করে দিলি। সব কটাকে যদি রাতে ভূত এসে ঘাড় না মটকে দিয়েছে তো দেখিস।

বিছানা ঠিক করে দিয়ে সবাই চলে যাবার পর রিফাত দরজা বন্ধ করে দেখে পুষ্প বিছানায় গিয়ে হেলান দিয়ে বসেছে। তাকে দেখতে লাগছে হলুদ গোলাপের মত… মেয়েটা আসলেই একটা ফুল! রিফাতের হুট করেই তখন কিছু মনে পড়ে যায়। সে তার কাবার্ডের ভেতর থেকে র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো একটা বক্স বের করে এনে পুষ্পকে বলল- ফুল, এটা তোমার জন্য।

পুষ্প হাত বাড়িয়ে বক্সটা নিল। বলল- এখন খুলব?

-হুম।

পুষ্প খুলতে শুরু করল… র‍্যাপিং খুলতেই ভেতরে আরেকটা র‍্যাপিং মোড়ানো বক্স বের হল সেটার উপর কাগজে লিখা “আজ থেকে তুমি আমার পার্মানেন্টলি ব্যক্তিগত সম্পদ, আমার ব্যক্তিগত ফুল।” লিখাটা পড়ে পুষ্প আড়চোখে রিফাতের দিকে একবার তাকাল, রিফাত তখন বিছানায় হেলান দিয়ে ফোন ঘাটছিল। ভাবল, এইজন্যই তখন আমাকে “ফুল” বলে ডাকছিল? ভালো… পুষ্প পরের কাগজটা খুলতে লাগল। আবার একটা কাগজ বের হল যেখানে লিখা, “প্রাণের বাঁধন দিয়েছি প্রাণেতে দেখি কে খুলিতে পারে?” পুষ্পর ঠোঁটে মিষ্টি হাসি খেলে গেল… সে শেষ র‍্যাপিংটা খুলে একটা মেরুন রঙের বক্স পেল যেটা খুলতেই একটা সবুজ পান্না বসানো হীরের আংটি বের হল! দেখেই তার মুখ ফসকে বের হল “wow… amazing!”

রিফাত এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল- পছন্দ হয়েছে?

-খুউব… ধন্যবাদ। তারপর সে রিংটা রিফাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল- পরিয়ে দিন।

রিফাত পরিয়ে দিল। তারপর গুটুরগুটুর গল্প করতে করতে রিফাত কখন ঘুমিয়ে গেছে কেউ টের পায়নি।

ঘুমের ঘোরে রিফাত অনুভব করে কেউ তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিচ্ছে! তার ঘরে তো পুষ্প ছাড়া আর কেউ ছিল না! তার শ্বাস নিতে কষ্ট হতে লাগল… একটু বাতাসের জন্য ফুসফুস হাসফাস করছে কেমন… আতঙ্কে তার চোখ বড় হয়ে যেতে চাইছে… পুষ্প কী তাকে মেরে ফেলতে চাইছে? কিন্তু কেন? এই মেয়েটা তো তার বিয়ে করা বউ! তারা তো বাসর ঘরেই ছিল। গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে কোন ঝগড়া বা মারামারি বলে কিছু হয়নি তো! তাহলে পুষ্প কেন এমন করছে? কিসের প্রতিশোধ নিতে চায় ও? রিফাত চিৎকার করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে পারছে না। পুষ্পকে ধরতে চাইছে তাও পারছে না। তখন টের পেল ওর দুই হাত দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা! ও কী তাহলে মারা যাচ্ছে??? ঠিক সেই মুহুর্তে পুষ্পর গলা শুনতে পেল, সে হিসহিসে গলায় বলছে- “প্রতিশোধ”। আতঙ্কে জমে গেল রিফাত… তার দম ফুরিয়ে আসছে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here