#Mr_Devil
#Part_26,27
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্মনাম)
Part_26
।
।
এক হাটু সোজা রেখে অন্যটা ভাঁজ করে সেটার উপর এক হাত রেখে বসে আছে ইয়াশ
সেলের দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আজকের সব ঘটনা গুলো আওড়াচ্ছে
কিন্তু কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না
কি থেকে কি হয়ে গেল
এমনটা তো হওয়ার ছিল না
সবটা যেন ওর ধারণার উদ্ধুর্ধে
ওর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে একজন জেলার এসে ওকে বলে গেল
রশ্নি এসেছে আর ওর সাথে দেখা করতে চায়
ইয়াশের প্রত্যাশাটা বাস্তবায়ন হলো
ও জানতো রশ্নি আসবে ওর সাথে দেখা করতে
ইয়াশ অধীর আগ্রহ নিয়ে জেলারটার সাথে গেল
ইয়াশকে সেল থেকে বের করে অন্য একটা রুমে রাখা হয়েছে
রুমটাতে বিশেষ কিছু নেই
অন্ধকার,,তার মধ্যে একটা ছোট ডিম লাইট যেটা নিভু নিভু করে জ্বলছে
একটা ছোট টেবিল তার দুই সাইডে দুইটা চেয়ার
যেটার এক পাশে ইয়াশ বসে আছে
কিছুক্ষন পর ইয়াশ কারো পায়ের কদমের আওয়াজ শুনতে পেল
যা শুনে বুঝতে পারলো রশ্নি এসেছে
লাইট রেড কালারের কমপ্লিট লেডিস সুট,ব্ল্যাক শার্ট,ব্ল্যাক বুটস,রেড লিপস্টিক,গাঢ় আইলাইনার,আর চুল গুলো উঁচু করে ঝুটি করা
সবমিলিয়ে জাস্ট ওয়াও?
সানগ্লাস টা খুলে শার্টের সাথে আটকে দিয়ে অন্যপাশের চেয়ারটা তে বসলো রশ্নি
মুখে অন্য রকমই এক এ্যাটিটিউড,আর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি
দুই হাত একসাথে মুচড়ে ঘাড়ের পিছনে রেখে ইয়াশের দিকে তাকালো
তারপর ওকে উদ্দেশ্য করে
বললো– তা কেমন আছেন মিস্টার বিজনেস ম্যান?
ইয়াশ ওর হাবভাব দেখে পুরাই অবাক,ইয়াশকে পুলিশে দিতে পারলেও ওর সাথে যে ইয়াশ আসলেই কিছু করেছে তা তো সত্যি
তাহলে তো ওর এখানে এসে কান্নাকাটি করে ইয়াশকে দোষারোপ করার কথা
কিন্তু তা না করে রশ্নি ঠান্ডা মাথায় কথা বলছে
ইয়াশ ভ্রূ কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
রশ্নি– দেখুন আমি জানি আমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে তাই বলে কি এভাবে তাকিয়ে থাকবেন নাকি?
রশ্নির কথায় ইয়াশ যেন বোকা বনে গেল
রশ্নি– ওহ হ্যালো কোথায় হারিয়ে গেলেন (ইয়াশের মুখের সামনে হাত নেড়ে)
ইয়াশ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,,
ইয়াশ– তোমার সাথে এতকিছু ঘটে গেল তারপরও তুমি এত,,,,
ইয়াশের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রশ্নি বলা শুরু
করলো– এত স্বাভাবিক কিভাবে তাই তো?
ইয়াশ ভ্রূ কুঁচকে রশ্নির দিকে তাকালো
রশ্নি– আরেহ বাবা আমার সাথে কিছু ঘটলে তো অস্বাভাবিক হবো তাই না ??
রশ্নির কথার মানে ইয়াশ বুঝলো না,,,
–^মানে?
— মানে যা শুনলেন তাই,,,
ইয়াশ– কি বলতে চাইছো তুমি?
রশ্নি– উহুম,,,এত বড় বিজনেসম্যানএর কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি?
ইয়াশ– দেখো যা বলার ক্লিয়ারলি বলো
রশ্নি– উম্ম আচ্ছা ঠিকাছে? আমারও অতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতে খুব বোর লাগছিলো?
আচ্ছা আমার কথা রাখুন,,,আপনি নিজেই বলুন সেদিন রাতে আমাদের মাঝে কি ঘটেছিলো?
রশ্নির কথাটা ইয়াশের কাছে কিছুটা অদ্ভুত লাগলো
রশ্নি– কি হলো বলুন,,
ইয়াশ এখনো ওভাবেই ক্যাবলার মতো ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে
রশ্নি– ভাবুন ভাবুন ?
রশ্নির কথা মতো ইয়াশ ঐদিন রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করছে
কিন্তু ঐদিনের মতোই কিছুতেই কিছু মনে পড়ছে না
ইয়াশ– মনে পড়ছে না
রশ্নি– কিছু হলে তো মনে থাকবে?
ইয়াশ– কি বুঝতে চাইছো তুমি? (রেগে)
রশ্নি– কাম ডাউন কাম ডাউন,,,
আরেহ ইয়ার চিল না, এত প্যারা নেওয়ার কি আছে,,,
ইয়াশ– বিদ্রুপ করছো?
রশ্নি– উহুম না,,একদমই না,,কিন্তু একটা কথা কি জানেন তো?
আমি আমার লাইফে অনেক স্মার্ট ছেলে দেখেছি কিন্তু আপনি? আপনার তো জবাবই হয় না ??(তালি দিয়ে)
বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই আমি এর থেইক্কা বড় ওভার স্মার্ট আমার লাইফে কখনো দেখি নাই ?
বলেই আবার জোরে জোরে হেসে দিলো
ইয়াশ রশ্নির কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না,,,
পরক্ষনেই রশ্নির মুখের এক্সপ্রেশন পুরো চেঞ্জ
এতক্ষন ফাজলামোর সুরে কথা গুলো বললেও এখন মুখে সিরিয়াস ভাব এনে টেবিলের উপর দুই হাত দিয়ে জোরে বাড়ি মেরে তারপর ইয়াশের দিকে চোখ রাঙিয়ে
বললো– তুই নিজেকে যতটা চালাক ভাবিস তার এক পার্সেন্টও তুই না
শুন তাহলে, ওইদিন রাতে ড্রিংকস আমি না তুই করেছিল
◆—●ফ্লাশব্যাক●—◆
ইয়াশ দুই গ্লাস জুস নিয়ে এসে রশ্নির সামনে রাখলো
যেটা রশ্নির সামনে রেখেছিল ওটাতে ছিল ড্রাগস
যেই না ইয়াশ নিজের গ্লাসটা নিতে যাবে তখনই পিছন থেকে সেহের ওকে ডাক দিল এক সাথে ডান্স করার জন্য কিন্তু ইয়াশ না করে দেয়
আর এই সুযোগেই রশ্নি তার গ্লাসটা ইয়াশের গ্লাসের সাথে এক্সচেঞ্জ করে নেয়
তারপর ড্রাঙ্ক হওয়ার এক্টিং করে
আর ইয়াশও ওর ফাঁদে পা ফেলে ওকে রুমে নিয়ে যায়
দেন, কিছুক্ষনের মধ্যেই নেশার দ্রব্য টা কাজ করা শুরু করে আর ইয়াশ বেহুশ?
★——————————–★———————————★
মানে তোর খোঁড়া গর্থে তোকেই ফেললাম?
ইয়াশ কিছু বলছে না শুধু মাথা নিচু করে বসে আছে
কিছুক্ষন পর ইয়াশ বললো
ইয়াশ– সব ঠিক আছে কিন্তু তখন যদি সেহের আমাকে ডাক না দিত তাহলে? তুমি তো গ্লাস এক্সচেঞ্জ ও করতে পারত না আর তার থেকেও বড় কথা তুমি জানলে কি করে যে আমি জুসে ড্রাগস মিশিয়েছিলাম
রশ্নি– উম বলবো?? না থাক বলবো না আপনি হজম করতে পারবেন না
ইয়াশ কোনো রিয়েক্ট করছে না চুপচাপ বসে রশ্নি কে দেখে যাচ্ছে
রশ্নি– আচ্ছা ঠিকাছে বলেই দেই,, তো শুনুন
অপনার পুরো প্ল্যানটা আমি আগে থেকেই জানতাম,,ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে ফিসফিস করে বললো
ইয়াশ ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে আছে
রশ্নি– এটাই তো ভাবছেন যে কিভাবে জানলাম তাই তো?
রশ্নি একটু হেসে আবার বললো
আপনার প্ল্যানের ব্যপারে কে বলেছে জানেন?
মুহিত মাহফুজ (বাঁকা হেসে)
[মুহিত মাহফুজ ওই ছেলেটা যাকে ফোন করে ওর সব প্ল্যানের ব্যাপারে 24 part এ বলেছিল]
কথাটা শুনা মাত্র ইয়াশ টেবিলের উপর জোরে বাড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল
— না আমি বিশ্বাস করি না (চেচিয়ে)
রশ্নি কোনো রিয়েক্ট করলো না
শান্ত ভাবে বসে ইয়াশকে দেখছে
রশ্নি– আপনি বিশ্বাস করুন বা নাই করুন তাতে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই
কিছুক্ষন থেমে আবার বললো
জানেন সে আপনার বিশ্বাসের মূল্য মাত্র বিশ লাখ টাকা লাগিয়েছে
রশ্নি ইয়াশের চোখের কোনে স্পষ্ট পানি দেখতে পেল
রশ্নি আবার বলা শুরু করলো
রশ্নি– কি হলো? খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? আপনার ছয় বছর পুরোনো বিশ্যস্ত লোক আপনার সাথেই বেইমানি করলো,,,,কিছুক্ষন থেমে আবার বললো,,যেমনটা আপনি করতে চেয়েছিলেন আমার সাথে,,,,,
রশ্নি কথাটা শান্ত ভাবে বললেও এর গভীরতাটা তীব্র!!
রশ্নি– আরেহ বসুন বসুন,,,ট্রেলার শুনেই এই অবস্থা? পুরো ফিল্ম টা শুনলে(দেখলে) কি করবেন?
ইয়াশ জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো
রশ্নি– এবার আসি জুস এক্সচেঞ্জ করলাম কিভাবে সেই কথায়
ওটাতো শুধু আপনার ছয় বছর পুরোনো লোক ছিল কিন্তু আপনার ছোট বেলার বন্ধুই এই কাজে আমাদের সাথে ছিল মানে সেহের ভাই
শুধু সাথে ছিল না পুরো প্ল্যানটা তো তারই তৈরি করা
সানাকে সেইদিনের পার্টির কথা বলার পরে ও রেগে গিয়ে সেহেরকে বলেছিল আর ওগুলো শুনে সেহের ভাই এই প্ল্যান তৈরি করে
আর এখন সে আপনাকে শুধু ঘৃণা করে আর কিছু না
ইয়াশের পায়ের তলার জমিন যেন সরে যাচ্ছে আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ছে
ও যা করেছে তার জন্য সেহের ওকে ঘৃণা করবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু ওকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সেহের যে এই কাজটা করবে ইয়াশ কখনো এটা কল্পনাও করেনি
ইয়াশ দুই হাটু ভেঙে বসে পড়লো তার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে তার অশ্রু গুলোও আজ বেইমানি করছে
রশ্নি ইয়াশের সামনে একটু ঝুকে বললো
বলেছিলাম না “কার্মা ইজ আ বিছ” যা করবেন তার ফল অবশ্যই পাবেন হয়তো আজ নয়তো কাল
আচ্ছা আপনি এটা বলুন তো
ওইদিন পার্টিতে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও আপনি কিভাবে ভাবলেন যে আমি আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করবো? লাইক সিরিয়াসলি আপনাকে? আপনাকে? আপনার মতো মানুষেরা না কখনো ভালোবাসার যোগ্য হয়েই না
রশ্নি একদমে কথা গুলো বলে জোরে জোরে শাস নিতে লাগলো
অনেক রেগে গেছে ও নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না গিয়ে ইয়াশ টি শার্টের গলা টেনে ইয়াশের মুখটা ওর সামনে এনে বললো
আর কি যেন বলেছিলি? নাহিদ সব কিছু জানার পর আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না তাই না? আরে শোন সব পুরুষ তোর মতো কাপুরুষ হয় না
আমি যদি ধর্ষিতাও হয়ে যাই না তখনো আমার নাহিদ আমাকে ছেড়ে যাবে না
এই সব কিছুতে সব থেকে বেশি সাপোর্ট আমাকে কে করেছে জানিস? আমার নাহিদ
আজ আমি তোকে বলছি তুই কখনো ওর নখের যোগ্যও হতে পারবি না
হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে ইয়াশকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল
ইয়াশ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল দুইটা ছেলে আর একটা মেয়ে ভিতরে আসছে যাদের খুব ভালো করেই ইয়াশ চিনে
সানা,সেহের আর নাহিদ
ওরা তিনজন এসে ইয়াশের সামনে তাকালো
কিন্তু ইয়াশ ওদের দিকে তাকাতে পারছে না
নিচের দিকে তাকিয়ে আছে
নাহিদ– কি ভেবেছিলেন মিস্টার আহমেদ? এত কিছু করে খুব সহজেই পার পেয়ে যাবেন? হুহ, কখনো না
আপনি আমার রশ্নির দিকে নজর দিয়েছেন আপনার অবস্থা তো এমনটা হওয়ারই ছিল
সানা– নাহিদ ভাই এসবের মুখ লেগো না তো (ঘৃণার সুরে বললো)
নাহিদ– হুম ঠিকই বলেছ এদের সাথে কথা বলাও পাপ
সানা– হুম চলতো এখান থেকে (বলেই রশ্নির হাত ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লো সানা)
ওদের সাথে সাথে নাহিদও বেরিয়ে পড়ল
কিন্তু সেহের এখনো ওভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে
ইয়াশ– আমি,,,,
সেহের– এত কিছুর পরেও তোর বলার মতো কিছু থাকতে পারে?
যে মানুষটা আমার প্রাণ ছিল আমার অহংকার ছিল আমার গৌরব ছিল আজ সেই মানুষটি এতটা নিচ একটা কাজ,,,,,,
ছিঃ,,,, কিভাবে করলি রে?
ইয়াশের কলার জোরে জোরে ঢাকিয়ে বললো
কেন করলি তুই এমনটা? কি হলো বল? এই তাকা আমার দিকে (ইয়াশের মুখ চেপে নিজের দিকে করে বললো)
তুই না মেয়েদের একদম সহ্যই করতে পারতি না?
কোনো মেয়েকে নিজের আশে পাশেও ঘেঁষতে দিতি না তাহলে আজ কি হলো? কিভাবে পারলি রে একটা মেয়ের সাথে এমনটা করতে,, কি হলো বল?
সেহের জোরে ধাক্কা দিয়ে ইয়াশকে মাটিতে ফেলে দিলো
ওকে মারার জন্য ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই পিছন থেকে সানা এসে ওকে আটকে দেয়
সানা– সেহের প্লিজ তুমি শান্ত হও
সানা বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে সেহেরকে শান্ত করে বাহিরে নিয়ে গেল
ইয়াশ ওখানেই মাথা নিচু করে বসে ছিল তখন সেখানে রশ্নি আবার এলো
ইয়াশ বুঝতে পেরেও ওভাবেই শান্ত হয়ে বসে রইল
রশ্নি গিয়ে ইয়াশের সামনে একটা কার্ড দিলো
ইয়াশ কার্ডটার দিকে একবার তাকিয়ে আবার রশ্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রূ কুচকালো,,,
রশ্নি– দেখুন তো যেটার জন্য এসেছিলাম সেটা দিতেই ভুলে গিয়েছি
ইয়াশ এখনো ওভাবেই তাকিয়ে আছে
রশ্নি– আরেহ বিয়ের কার্ড,,,আমার আর নাহিদের,,,
এটা যেন ইয়াশ মানতে পারলো না অবাক হয়ে চেয়ে আছে রশ্নির মুখের দিকে
— মমমানে??
— মানে নাহিদ আর আমার বিয়ের কার্ড দিয়ে গেলাম,,,কালই আমাদের বিয়ে আর আজ গায়ে হলুদ
কিন্তু আপনি তো জেলে থাকবেন? তাহলে আসবেন কিভাবে?
কিন্তু তাতে আমার মামার কি?
আমার দাওয়াত দেওয়ার তা আমি দিলাম এখন আপনার দুর্ভাগ্য আপনি আসতে পারবেন না?
আচ্ছা তাহলে এখন আসি অকাহ বায়?
।
।
।
চলবে,
#Mr_Devil
#Part_27
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)
।
।
।
জানালার পাশে বসে আছে রশ্নি
বাতাসের ঢেউগুলো খেলতে ব্যাস্ত তার রেশমি ঘন চুলগুলোর সাথে
কিন্তু তা যেন বার বার বিরক্তির কারণ হচ্ছে রশ্নির
বার বার মুখ থেকে সরিয়ে দিলে আবার ছুটে আসছে তার মুখের মাঝে
তাই আর বেশি বাড়াবাড়ি না করে ওভাবেই অবাধ্য থাকতে দিলো তাদের
যেটা যেমন সেটাকে তেমনটাই থাকতে দিতে চাইলো
যাক, সেটা নিয়ে আর ভাবলো না
কিন্তু
আজ শীতল বাতাসের পরশ তার শরীরকে স্পর্শ করতে পারলেও পারছে না তার হৃদয়কে
ভিতরটা শুধু ছটফট ছটফট করছে আজ
যেন বড্ড অবাধ্য হয়ে গিয়েছে তার মনটা
শান্ত হতে নারাজ সে
চোখ বন্ধ করতেই ইয়াশের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে আসছে
আজ কিছু সত্যি তো সেও ইয়াশের কাছ থেকে আড়াল করেছে
ইয়াশ রশ্নির মনে ওর জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি না করতে পারলেও অনুভূতির জাল ঠিকই বুনতে পেরেছিল
এই কয়েকদিনে রশ্নি সত্যি অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল ইয়াশের উপর
কিন্তু সেদিন,,,,,,,,
রশ্নি অফিস থেকে বাসায় আসার পথে মুহিনকে দেখেছিল
উল্টো দিকে মুখকরে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল হয়তো ইয়াশ
— জি স্যার,,, আপনি একদম চিন্তা করবেন না সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হয়ে গেছে
আরো অনেককিছু বলছিল কিন্তু তার মধ্যে “রশ্নি” নামটা ওর কানে ভেসে আসে
রশ্নির মনে ব্যাপারটা নিয়ে কিছুটা সংকোচ হয়,,
মুহিন কথা শেষ করে চলে যাচ্ছিল তখন রশ্নি পিছন থেকে ডাক দিল
(মুহিনের অফিসে আসা যাওয়া লেগেই থাকে তাই রশ্নি ওকে খুব ভালো করেই চিনে)
— মুহিন ভাই,,,,,,,
মুহিন পিছনে তাকিয়ে রশ্নিকে দেখে কিছুটা চমকে উঠলো
— জজী,,,,,,
— আপনি তুতলাচ্ছেন কেন? আর ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিলেন দেখলাম কিন্তু আমার নামেও কি যেন বললেন
— ননা ম্যাডাম আপআপনার নামে আবার কি বলবো,,,,
— দেখুন আমি ঘুরানো প্যাচানো কথা পছন্দ করি না,,,আমি স্পষ্ট আপনার মুখে আমার নাম শুনেছি,,,সো সোজা ভাবে বলে দিন কাকে কি বলছিলেন,,,নাহলে আপনি তো আমাকে চিনেনই আমি কি কি করতে পারি,,,,,,,,,,
— আমাকে ক্ষমা করবেন কিন্তু আমি বলতে পারবো না,,,
— বলবেন না তো ঠিক আছে আমি এখনি মানুষ ডাকছি আর বলবো আপনি আমার সাথে অসভ্যতামি করেছেন দেন বাকিটা পাবলিক দেখে নিবে (বাঁকা হেসে)
— না ম্যাম প্লিজ এসব করবেন না,,,আমাকে স্যার একটা কাজ দিয়েছেন যেটা করলে আমি একটা মোটা অংকের টাকা পাবো আর সেটা আমার খুবই প্রয়োজন
আমার বাবার চিকিৎসার জন্য,,,,আমাকে ক্ষমা করবেন এর বাহিরে আমি আর বেশি কিছু বলতে পারবো না,,,,,
রশ্নি বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে
বললো– আপনার স্যার আপনাকে যত টাকা দিবে তার থেকে ডাবল আমি আপনাকে দিব কিন্তু তার জন্য আপনাকে আমাদের হয়ে কাজ করতে হবে
— ম্যাডাম আমি বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারবো না স্যারের সাথে
রশ্নি– দেখুন রাজি হয়ে গেলে আপনারই লাভ,,,আর না হলে লস তো আছেই সাথে আপনার দোষে আপনার পরিবারেরও ক্ষতি হতে পারে,,,
রশ্নির কথায় ভয় পেয়ে গেল লোকটা
তারপর কিছুক্ষন ভেবে রশ্নির প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল
রশ্নিকে ইয়াশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু বললো
সবকিছু শুনে রশ্নির পুরো পৃথিবীটা যেন উলট পালট হয়ে গেল
বুকের মাঝে ভারী কিছু অনুভব করতে পারছে হয়তো ইয়াশের জন্য এতদিনে জমে যাওয়া অনুভূতি গুলোর আর্তনাদ নয়তো বিশ্বাস ভাঙার তীব্র অভিমান
কিন্তু এতকিছুর মাঝেও রশ্নি নিজেকে সামলে নিলো
রশ্নি– আপনি এবার আসতে পারেন
লোকটা কিছুক্ষন অবাক হয়ে চেয়ে থেকে তারপর চলে গেল,,,,,,,,
–হয়তো উপর ওয়ালা তার উপর দয়া করেছে তাই তাকে ইয়াশের ভয়ঙ্কর খেলার হাত থেকে তাকে রক্ষা করেছে
সানা এগুলো শুনার পর সেহেরকে সব বলেছিল তাদের খুবই ঘৃণা জন্মেছিল ইয়াশের প্রতি
সেহের তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি তার প্রিয় বন্ধু এমনটা করতে পারে
তারপরই তারা প্রতিজ্ঞা করে যে নোংরা খেলাটা ইয়াশ খেলতে চেয়েছিল রশ্নির সাথে সেই খেলাতেই হারাবে তারা ইয়াশকে,,,,,,নাহিদও এতে ফুল সাপোর্ট করেছিল রশ্নিকে,,,,,,
.
–রশ্নি
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পাওয়ায় ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো রশ্নি
চোখের কোনের পানিটা তাড়াতাড়ি আড়াল করে নিয়ে পিছনে ফিরল
রশ্নি– নাহিদ তুমি এই টাইমে?
নাহিদ– হ্যা মানে এটা দিতে এসেছিলাম
(কয়েকটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে)
রশ্নি– কি এটা,,,,
নাহিদ প্যাকেটটা থেকে একটা ব্ল্যাক কালার লেহেঙ্গা বের করে রশ্নির হাতে দেয়
নাহিদ– আমি চাই কাল আমাদের বিয়েতে তুমি এই লেহেঙ্গাটা পড়বে,,,,,
রশ্নি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ওর নাহিদের কথায় কোনো খেয়াল নেই
নাহিদ রশ্নিকে ঝাকিয়ে
বললো– কি হলো আমার কথা শুনছো না?
রশ্নি– হ্যা হ্যা,,,পড়বো
নাহিদ– আমার কত দিনের স্বপ্ন কাল পূরণ হতে যাচ্ছে (মুচকি হেসে)
রশ্নি,,,,তোমার কোনো স্বপ্ন ছিল না আমাদের এই দিনটা নিয়ে?
রশ্নি নাহিদের কথার কি উত্তর দিবে তা ভেবে পাচ্ছে না
— আমি,,,মানে,,,
নাহিদ– রশ্নি তুমি কি আজও নি,,,,,,,
রশ্নি– নাহিদ আমার না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে প্লিজ তুমি এখন যাও কাল তাড়াতাড়িও উঠতে হবে
রশ্নি কিছুটা ঠেলেই নাহিদকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল
রশ্নি নিজেও জানে না ও এমন করছে কেন,,,আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানেও মুখ গোমড়া করে ছিলো
অবশ্য তা সবার আড়ালে
সবার সামনে মিথ্যে হাসির ভান করেই ছিল
তাহলে কি আজও রশ্নি ওকে??
না না ওটা আমার পাস্ট ছিল,,,ওগুলা নিয়ে বেশি না ভাবাই ভালো,,,
নিজের মনকে কোনোভাবে সান্তনা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো
।
।
।
★—–★পরেরদিন★—–★
আজ রশ্নি আর নাহিদের বিয়ে
বাড়ির মধ্যেই বিয়েটা হচ্ছে কিন্তু খুব সুন্দর করেই সাজানো হয়েছে
নাহিদ নীচে সেই কবের থেকে পায়চারি করছে কিন্তু রশ্নির আসার কোনো নামই নেই
উপরে যেয়ে দেখে আসতে চেয়েছিল একবার কিন্তু কাজিনরা ঢুকতেই দেয়নি
.
কাশিকা– উফফ বোইন তোরে তো পুরাই মা,,,,
শুভা– চুপ বেশরম মাইয়া,,লজ্জা করে না নিজের বোইনরে এগুলা কইতে
কাশিকা– তুমিই তো কইলা আমি নাকি বেশরম তাইলে আবার লজ্জা লাগবো কেমতে?
শুভা– তোর যে কি হইবো,,,,
শুপ্তি– তোরা কি বইন বইন লাগাইসস? এখন থেইক্কা তো আমগো ভাবি লাগে ভাবি?
শুভা– তোর কথায় পইন্ট আছে কিন্তু তাইলে নাহিদ ও তো আমগো দুলাভাই লাগে?
কাশিকা– উকে,,,,তাইলে এখন থেকা রশ রে ভাবি কমু আর নাহিদরে দুলাভাই কইয়া ডাকমু?
শুভা+শুপ্তি–??
[এবার এদের পরিচয় দিয়ে নেই
সুপ্তি,শুভা, কাশিকা তিনজনই রশ্নি আর নাহিদের কাজিন সিস্টার
সুপ্তি আর কাশিকা রশ্নির সেইম এজ শুভা রশ্নিদের সিনিয়র কিন্তু ওদের সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি
শুভার একটা ভাই আছে শুভ ওইও রশ্নির সাথে অনেকটা ফ্রেন্ডলি কিন্তু নাহিদের সাথে সেইম এজ
সব কাজিনদের মাঝে শুভই রশ্নির ফেভরেট ওর সাথে সবকিছু কিছু না ভেবেই শেয়ার করতে পারে]
শুভার চোখ গেল রশ্নির দিকে
ও আনমনা হয়ে বসে আছে দেখে শুভা ওকে কিছুটা ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস
করলো– কিরে কি হলো তোর? কই হারিয়ে আছিস?
সুপ্তি– হ্যা আমিও অনেক্ষন ধরে লক্ষ করছি তুই কোনো কথা বলছিস না
কাশিকা– বাসর ঘরের প্লানিং করতাসে মনে হয়??
শুভা আর সুপ্তি একসাথে ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো
কাশিকা– ?
রশ্নি– তোদের হয়ে গেছে আমাকে সাজানো? (চেচিয়ে)
–,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
রশ্নি– হয়ে গেলে প্লিজ এখান থেকে বের হ তোরা
শুভা– বোনু, তুই রেগে,,,,,
— আপু প্লিজ,,,,আমার ভালো লাগছে না তোমরা এখন এখান থেকে যাও,,,,,
শুভা বুঝতে পারলো কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে রশ্নি প্রচন্ড রেগে আছে তাই এখন আর ওর মুখ না লাগাই ভালো,,,এতে ও আরো খেপে যাবে
তাই বেশি কথা না বলে সুপ্তি আর কাশিকাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল,,,,
রশ্নি দরজা লাগিয়ে দিলো,,,,
একটা বক্স বের করলো
বক্সটার উপর 【P+B】লিখা
রশ্নি বক্সটা খুললো
তার ভিতর অনেক কিছু আছে
সেখান থেকে কয়েকটা ছবি বের করে রশ্নি নিজের সামনে রাখলো
একটা ছবির মধ্যে দুইটা মহিলা বসে আছে তাদের
দোনোজনের কোলে দুইটা বাচ্ছা একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বাচ্ছা
মেয়েটা ছেলেটার চুল ধরে টানছে আর ছেলেটা মেয়েটাকে চোখ গরম দেখাচ্ছে
তাদের মা তাদের এইসব কান্ড দেখে হাসছে
আরেকটা রশ্নির আম্মু আব্বুর ছবি
আরো কয়কতায় তাদের ফ্যামিলি ফটো
রশ্নি ওগুলোকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কেঁদে দিলো
রশ্নি– দেখো মনি তোমার রশ্নি কত্ত বড় হয়ে গিয়েছে,,,আজ আমার বিয়ে,,,কিন্তু তোমরা নেই আমার পাশে,,,,,,
রশ্নি আরো ডুকরে কেঁদে উঠলো
তখন ওর চোখ গেল আরেকটা ছবির দিকে বক্সের থেকে একটু বাড়িয়ে
রশ্নি ওটা নিজের সামনে ধরলো
দুইটা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে
মেয়েটা ছেলেটার কাঁধে চড়ে আছে
আর ওর ঝুটি করা চুল গুলো ছেলেটার নাকে যাচ্ছে যার জন্য ওর কাতুকুতু লাগছে
মেয়েটা আরো ইচ্ছে করে ওকে কাতুকুতু দিচ্ছে কিন্তু ছেলেটা কিছু বলছে না শুধু তাকিয়ে আছে যা দেখে মেয়েটা খিল খিল করে হাসছে
রশ্নি– এই তুমি না বলেছিলে কখনো আমার হাত ছাড়বে না,,,আমাকে ছেড়ে যাবে না তাহলে এখন কোথায় গেলে?
রশ্নি ছবিটাকে বুকে নিয়ে আরো কাঁদতে লাগলো
হ্যা এই ছেলেটাই রশ্নির জীবনের প্রথম ভালোবাসা
ছোট বেলায় বুঝতো না সেটা ভালোবাসা কিনা কিন্তু যখন ও রশ্নির কাছ থেকে দূরে গিয়েছে তখন ও বুঝতে পেরেছে সত্যিই ওকে খুব ভালোবাসতো,,,
ওই কার একসিডেন্টে রশ্নির মা,বাবা,সাথে আরো কয়েকজন ছিল তাদের সাথে ওই বাচ্ছা ছেলেটাও ছিল
রশ্নির মামা চাইতো নাহিদের সাথে তার বিয়ে হোক
আর এতগুলো বছর তাকে মা বাবার মতো আগলে রেখেছে তার মামা তাই শুধু মাত্র তার মামার মুখের দিকে চেয়েই বিয়েটা করছে রশ্নি
আর নাহিদও রশ্নিকে খুব ভালোবাসে
ছেলে হিসেবেও খারাপ না তাই সব কিছু ভেবে নাহিদকে বিয়ে করার ডিসিসন নেয় ও
হঠাৎ কারো দরজাতে বাড়ি দেওয়ায় রশ্নি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো
— বোনু তাড়াতাড়ি আয় কাজী সাহেব এসে পড়েছেন
রশ্নি তাড়াতাড়ি ওগুলো বক্সের ভিতর রেখে দিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিলো
–আসছি,,,,
বলে বের হতে নিচ্ছিলো কিন্তু কি ভেবে আবার থেমে গেলো
কদম ফিরিয়ে পিছে নিয়ে এসে বক্সটা হাতে নিলো
–“পাস্ট ইজ পাস্ট,,,,আমার অতীতকে আর আমার বর্তমানের উপর প্রভাব ফেলতে দিব না
নতুন করে বাঁচবো, নিজের বর্তমানকে নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়বো
বক্সটা নিয়ে গিয়ে ওদের বাড়ির পিছনের সাইডে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো
ওখানে একটা ড্রেন আছে তাই বক্সটা কারো হাতে পড়বে না ভেবেই নিশ্চিন্ত হয়ে নীচে চলে গেল রশ্নি
কিছুক্ষন পরেই কাজী চলে আসে
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়
কাজী যেই না কবুল বলতে বলে তখনই তাদের বাড়ির বাহিরে কয়েকটা গাড়ি এসে থামে
সেগুলোর ভিতর থেকে কালো পোশাক পরিহিত ২-১ ডজন লোক বেরিয়ে আসে
সবার হাতেই গান
তাদের হাতের গান গুলো দেখেই সেখানের অর্ধেক মানুষের কাপাকাপি শুরু
সবার ভিতর থেকে একজন লোক বেরিয়ে এসে সবার সামনে দাঁড়ালো
পরনে তার ব্ল্যাক শার্ট,ব্ল্যাক প্যান্ট,ব্ল্যাক ব্লেজার,পায় ব্ল্যাক শু,হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি,চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস আর চুল গুলো স্পাইক করা
আর মুখে সেই মন মুগ্ধ করা হাসি
মানে পুরাই ডার্ক চকলেট??
এখানে এমন কেউ নেই যে তাকে চিনে না, অবশ্য আমার পাঠক পাঠিকারাও চিনেন?
সবাই এতক্ষনে নিশ্চই বুঝে গেছেন এটা কে হতে পারে? আরেহ ভাই অভ্যিয়েসলি ইটস আওয়ার মিস্টার ডেভিল ইয়াশ আহমেদ??●[ঠোকো তালি???]
বেশির ভাগ মেয়েদের তো জিব্বাহ দিয়ে যেন লোল পড়ছে
অনেকে তো পুরাই কনফিউজড এখন একে দেখে ক্রাশ খাবে নাকি ভয় পাবে
কিন্তু ওকে দেখে রশ্নি আর নাহিদের চোখ যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম
রশ্নি চোখ বড় বড় জোরে ইয়াশকে দেখছে
নাহিদ– এই বাহিরে কিভাবে আসলো? হোয়াটেভার ওগুলো ভাবার সময় এখন না কিন্তু একে দেখে তো মনে হচ্ছে না এমনি এমনি যাবে কোনো গন্ডগোল না করে,,কিন্তু আমিই বা একা কিভাবে কি করবো,উফ বাবারও আজকেই বিজনেস এর কাজে বাহিরে থাকতে হলো,শুধু কাজ আর কাজ নিজের ছেলের বিয়েটায় থাকলে কি হতো,,,যায় হোক এখন এগুলো কিভাবে হ্যান্ডেল করবো সেটা ভাবি
ইয়াশ এবার মুখ খুললো
–” আরেহ কাজী সাহেব একটু ওয়েট করবেন না,,বর ছাড়া কি বিয়ে হয় নাকি,,আপনি দেখি বর ছাড়াই বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিলেন?
কাজীও ভয় কিছু বলতে পারছে না
কিন্তু ইয়াশের কথা শুনে নাহিদ প্রচন্ড ক্ষেপে গেছে
নাহিদ গিয়ে ইয়াশের কলার ধরার সাথে সাথেই ইয়াশের দুইজন গার্ড এসে নাহিদকে ধরে ফেলে,,,,
ইয়াশ নিজের কলার টা ঝাড়তে ঝাড়তে বিরক্তির সুরে বললো– হোয়াট দা হেল,,,,দিলে তো আমার ব্লেজারটা নোংরা করে,,,ডু ইউ হ্যাভ এ্যানি আইডিয়া হাও মাচ এক্সপেন্সিভ ইস দ্যাট
ইয়াশ তারপর ওর একটা গার্ডকে ডেকে ওর ব্লেজারটা খুলে দিয়ে বললো– এই নে এটা ফেলে দিয়ে আয়
ওখানে সবাই অবাক
জাস্ট নাহিদের হাতের একটু টাচ লাগাতেই এত দামি ব্লেজারটা ফেলে দিলো
কিন্তু ইয়াশের কোনো কথাই যেন নাহিদের কানে ঢুকলো না
ওর অবস্থা এখন একটা পাগল কুকুরের মতো যাকে জোর করে আটকে রাখাতে সে ঘেউ ঘেউ করছে
নাহিদ– এই ছাড় আমাকে তোদের সাহস কিভাবে হলো আমাকে ধরার,,,আর তুই(ইয়াশকে উদ্দেশ করে) একবার জেলে দিয়েছি তাতে মন ভরেনি আবার চলে এসেছিস আমাদের মাঝে,,,এবার তোকে মেরেই ফেলবো,,এই ছাড় আমাকে,,,,,,
নাহিদের অবস্থা দেখে ইয়াশের খুব হাসি পেলো
ইয়াশ কিছুটা হেসে তারপর আবার গার্ডস গুলোকে উদ্দেশ্য করে বললো
যাও ওই ব্লেজারটার সাথে এটাকেও ফেলে দিয়ে এসো (বাঁকা হেসে)
–জী স্যার,,,,
তারপর ওরা টানতে টানতে নাহিদকে সেখান থেকে নিয়ে গেল
কিন্তু এটা যেন রশ্নির আর সহ্য হলো না
ও দৌড়ে গেল তাদের পিছে
— মানে কি “জী স্যার”? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওকে,,প্লিজ ছেড়ে দিন ওকে,,
কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলো না তার আগেই ইয়াশ ওকে ধরে ফেলল
রশ্নি ওকে ধাক্কাচ্ছে ওর কাছ থেকে সরে আসার প্রানপন চেষ্টা করছে,,,,
–প্লিজ ওদের থামতে বলুন,,কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওরা নাহিদকে প্লিজ ছেড়ে দিতে বলুন ওকে
রশ্নির চোখে নাহিদের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ভয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ইয়াশ
কিন্তু তা ওর সহ্য হচ্ছে না তাই নিজের রাগটাকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে সবার সামনে ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিল রশ্নির গালে
থাপ্পড়টা এত জোরেই ছিল যে তার আওয়াজ এর প্রতিধ্বনি হতে লাগলো
এই দৃশ্যটা দেখে সেখানের সবার রুহুটা যেন কেঁপে উঠলো
পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে সেখানে
শুধু ইয়াশের জোরে জোরে নিঃস্বাস নেওয়ার শব্দ গুলো শুনা যাচ্ছে
ইয়াশের পুরো মুখ রাগে টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে
থাপ্পড়টা এতই জোরে ছিল যে ইয়াশের পুরো হাতও জ্বলছে
রশ্নি গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে
ইয়াশ কোনো ভাবে নিজেকে শান্ত করে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই রশ্নির দিকে তাকালো
ওর হাতটা গালের থেকে সরিয়ে থুতনিটা উঁচু করে নিজের সামনে ধরলো
— বাহ আজ বউ সাজে তোমাকে তো খুবই সুন্দর লাগছে,,,
ইয়াশের হঠাৎ এমন স্বাভাবিক কথা শুনে সবার সাথে রশ্নিও অবাক
ইয়াশ এমন ভাবে কথাগুলো বলছে যেন এখানে কিছুই ঘটেনি
কিন্তু পরক্ষনেই ইয়াশের ফেস রিয়েকশন চেঞ্জ
রশ্নির গাল চেপে ধরে
বললো– বিয়ে করার খুব শখ তাই না? চল আজ তোর এই বিয়ের শখ টাও মিটাই
এরপর রশ্নির হাত ধরে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে যেতে শুরু করলো ইয়াশ
।
।
।
চলবে,