#Mr_Devil
#Part_45,46
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)
Part_45
।
।
এরপর রশ্নি নিজের হাতটা ইয়াশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
— এই নাও জামাই, রিংটা পরিয়ে দাও
ইয়াশ– রশ্নি কি হচ্ছে এসব (ফিসফিসিয়ে)
রশ্নিও ফিসফিস করে বললো
— সব কিছু রিপিট হচ্ছে, আপনি একদিন আমাকে আমার বিয়ে থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন
তেমনি আজ আমার পালা
— কি বলতে চাইছো তুমি? আমাকে তুলে নিয়ে যাবে? সেই ক্ষমতা আছে তো তোমার?
রশ্নি কিছু বললো না জাস্ট একটা টেডি স্মাইল দিলো
তারপর আবার জোর গলায় বলা শুরু করলো
— বুঝেছি জামাইটা আমার লজ্জা পাচ্ছে
আচ্ছা ব্যাপার না দাঁড়াও আমি আগে পরিয়ে দিচ্ছি তারপর তুমি দাও কেমন
বলেই নেহার কাছে থাকা রিংটা খপ করে নিয়ে নিয়ে
— আচ্ছা এনগেজমেন্টে ছেলে আগে আংটি পড়ায় নাকি মেয়ে?
হোয়াটেভার তাতে কি এসে যায়
আমাদের বিয়ে তো আগেই হয়ে গিয়েছে, তাই না জামাই (ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে)
— তুমি,,,,,,
রশ্নি ইয়াশকে আর কথা বলতে না দিয়ে
টুকুশ করে ইয়াশের অনামিকা আঙুলে আংটি টা পরিয়ে দেয়
এই নিন এবার আপনিও পরিয়ে দিন
সেখানের সবাই তো পুরাই অবাক
নেহা এতক্ষন আকস্মিক হয়ে এগুলো দেখলেও এখন আর সহ্য করতে পারলো না
গিয়ে রশ্নির হাতটা ধরে ফেলল
যা দেখা মাত্র কয়েকটা মহিলা গার্ড এসে ওকে ধরে ফেলল
রশ্নি নিজের ঘড়িটাকে খুলে ইয়াশের মতো করে বলা শুরু করলো
— ডু ইউ হ্যাভ এ্যানি আইডিয়া হাও এক্সপেন্সিভ ইজ ইট?
ছ্যা নোংরা করে দিলো
বলেই একজন গার্ডকে ডেকে এনে নিজের ঘড়িটাকে ওর হাতে দিলো
তারপর স্যানিটাইজার নিয়ে নিজের হাতটা ধুয়ে ফেললো
— এই ঘড়িটাকে ফেলে দাও আর হ্যা সাথে করে এটাকেও (নেহাকে) নিয়ে যাও
(গার্ডকে বললো)
রশ্নির কথায় ওরা নেহাকে সেখান থেকে টানতে টানতে নিয়ে গেল
সব কিছু ইয়াশ আর রশ্নির বিয়ের দিনের মতোই হচ্ছে
অনিমা– এই মেয়ে, এগুলা হচ্ছে টা কি? কোথায় নিয়ে গেল ওরা ওকে
রশ্নি– আরে শাশুড়ি আম্মু, এই বয়সে এত রাগ করে স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক তাই প্লিজ বেশি রাগ করবেন না
অনিমা– ইউউউউউ……!!
রশ্নি– বাবা….
রশ্নির ডাকে ইয়ানাফ আহমেদ এসে অনিমা বেগমকে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে গেলেন
সেখানের লোক গুলো হ্যাবলার মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে
একজন তো বলেই ফেললো
— এগুলা কিসব হচ্ছে? দাওয়াত পেলাম এক জনের এনগেজমেন্টের এসে দেখি হচ্ছে অন্য জনের
রশ্নি– আরেহ কাকী মা,
ওর বউ বাইচা থাকতে ওরে অন্য কারো সাথে বিয়ে করতে দিবে, তা ভাবেনও কেমনে
— মানে
— মানে টা কিছুই না জাস্ট
ও আমার জামাই আর অন্য ওর বউ বাট কিছু মানুষ জোর করে আমার টার ঘাড়ে অন্য এক শাকচুন্নিরে ঝুলাইতাছিলো তাই আমি মেইন টাইমে আইসা বাঁচায় নিলাম
উফফ এসব কথার মধ্যে আসল কাজটাই তো হলো না
— কি হলো জামাই? তুমি আংটি টা পড়াচ্ছ না কেন?
ইয়াশ– রশ্নি, অলরেডি অনেক দিন ক্রিয়েট করে ফেলেছো প্লিজ এখন স্টপ যাও
রশ্নি– ওহ মানে আপনি রিংটা পড়াবেন না তাই তো?
ইয়াশ মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে তুলে
মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো
রশ্নি– কথায় বলে না সোজা আঙুলে ঘি না বের হলে আঙ্গুল বাকাতে হয়, আপনার ব্যপারেও তাই করতে হবে
ইয়াশ তাও কিছু বললো না
রশ্নি আরেকটা গার্ডকে ডাকলো
গার্ডটা আসার পর রশ্নি গার্ডটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো
— ম্যাম বলছিলা….
রশ্নি চোখ রাঙিয়ে তাকালো গার্ডটা আর কিছু বলতে পারল না
তারপর রশ্নি ইশারা করে কি যেন দেখালো
আর সে একটা ব্যাগ থেকে ধারালো একটা চাকু বের করে রশ্নির হাতে দিলো
তা দেখে ইয়াশ ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো
রশ্নি– দেখুন লাস্ট বারের মতো বলছি, রিংটা পড়াবেন নাকি না?
পরে কিন্তু কপাল চাপড়াতে হবে
ইয়াশ হাত গুঁজে মুখে ড্যাম কেয়ার ভাব ফুটিয়ে তুললো
রশ্নি– তার মানে আপনি পড়াবেন না,,, ঠিক আছে
বলে হাতে থাকা চাকুটা চেপে ধরলো
ইয়াশ ভেবে ছিল রশ্নি হয়তো চাকু টা দিয়ে ওকে ভয় দেখাবে কিন্তু এই দেখি নিজের হাতেই চেপে ধরলো
এর মধ্যেই অনেকটা রক্ত পরে গেছে
ইয়াশ পাগলের মতো ওর কাছে ছুটে গেল
— তুমি কি জীবনেও মানুষ হবে না নাকি?
সেই পিচ্চিকাল থেকে ঘাড় ত্যারা
ইয়াশ কি বলছে ওর নিজেরই তা জানা নেই
রশ্নি– পিচ্ছি কাল থেকে মানে?
ইয়াশ– কিছু না,
ইয়াশ প্যাকেট থেকে সব টিস্যু একসাথে বের করে নিয়ে রশ্নি হাতে চেপে ধরে রেখেছে কিন্তু তাও লাভ হচ্ছে না
তা দেখে ইয়াশ রশ্নিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে যায় কিন্তু সেখানে রশ্নির কিছু গার্ডরা এসে বাধা দেয়
ইয়াশ– রশ্নি এদেরকে সরতে বলো
রশ্নি– ওরা কোথাও সরবে না
ইয়াশ– বেশি বাড়াবাড়ি করো না
এই সর তো তোমরা
রশ্নি– না, কেউ কোথাও সরবে না,
যতক্ষন পর্যন্ত না আপনি আমাকে রিং টা পরিয়ে দিচ্ছেন
রশ্নি আর হাত থেকে রক্ত পড়তেই আছে তাই ইয়াশ আর কথা না বাড়িয়ে রিংটা পরিয়েই দিলো
রশ্নি– এই তো গুড বয়
বলে ইয়াশের গালটা টেনে দিলো
এতে ইয়াশ চোখ রাঙিয়ে রশ্নির দিকে তাকালো
যা দেখে ও এক চোখ টিপ মেরে ইয়াশকে কিসের ইশারা দেখালো
ইয়াশ আর কিছু না বলে ওকে করে বসিয়ে দিল
তারপর হাই স্প্রীডে গাড়ি চালানো শুরু করলো
ইয়াশ– দেখো যতক্ষন না আমরা হসপিটালে পৌছাচ্ছি
ততখন তুমি এই রুমালটা দিয়ে হাতটা চেপে রাখো
রশ্নি– না, ভাল্লাগে না
ইয়াশ– কি ভালো লাগে না?
রশ্নি– ইটস “ভাল্লাগে না” নট “ভালো লাগে না”
ভাল্লাগে না” বলাতে যে ভালো লাগা কাজ করে তা “ভালো লাগে না” তে নাই?
ইয়াশ– এসব আজাইরা কথা বাদ দাও আর হাতটা চেপে ধরে রাখো
কিছুক্ষনের মাঝে ওরা হসপিটালে এসে পৌঁছায় ইয়াশ
.
রশ্নির হাতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে
ইয়াশ তাও ওর হাতটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে সব ঠিক আছে কিনা
রশ্নি– এত ভালোবাসার পরও কিভাবে ভুল বুঝেন?
আচমকা রশ্নির এমন প্রশ্নে ইয়াশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে
ইয়াশ– ভুল কোথায় বুঝলাম? যেটা সত্যি শুধু সেটাই বুঝেছি
রশ্নি এক ঝটকায় ইয়াশের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো
.
রশ্নি– এই এক দের বছরে আমি এতই পর হয়ে গেছি যে আপনার আমার নামটাও মনে নেই
ইয়াশ– মানে?
রশ্নি– মানে আমার হেড নেম ও যে “খান” আপনি এটা কিভাবে ভুলে যেতে পারেন
ইয়াশ– প্লিজ ক্লিয়ারলি বলো, কি বলতে চাইছো তুমি
রশ্নি– মানে শুভ আমার চাচাতো ভাই সো সেই সুবাদে ওর আর আমার নামের টাইটেল সেইম হওয়াটাই স্বাভাবিক
আর এটা ধরে আপনি ভেবে ফেললেন আমি নাকি ওর স্ত্রী, বাহ
ইয়াশ– মানে ওর সাথে তোমার বিয়ে হয়নি?
রশ্নি– আপনি নাকি এত বিজনেস ম্যান?
তাহলে আজ আপনার বুদ্ধি কোথায় লোপ পেলো?
আরেহ ওর সাথেই যদি আমার বিয়ে হতো তাহলে আমি আপনার কাছে আজ কি করতে আসতাম
আর ও অলরেডি ম্যারিড
রশ্নির বিয়ে হয় নি শুনে মনে মনে ইয়াশ অনেক খুশি হলেও এখনো একটা ব্যাপার নিয়ে ক্ষোভ আছে
ইয়াশ– তাহলে আমার জীবনের ২ টা বছর নষ্ট করলে কেন, কেন সেদিন আমাকে রেখে চলে গিয়েছিলে,, বলো
রশ্নি সেদিনের কথাটা বলতে গিয়েও বলে না
কারন ই ভাবে যদি, ও এখন ঐদিনের ঘটনাটা ইয়াশকে বলে দেয় তাহলে ও ওর মাকে ঘৃণা করে শুরু করবে হয়তো সেপারেটও হয়ে যেতে পারে
যা রশ্নি চায় না, অনিমা ওইদিন যা করেছে তা যেকোনো মা ই করতো
তাই রশ্নি চায় না যে অনিমার সাথে ইয়াশের সম্পর্কটা নষ্ট হোক
ইয়াশ– কি হলো বলছো না কেন
রশ্নি– শুনুন আমি না আপনাকে সব কিছুর কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই
আর সরুন তো সামনে থেকে আমার খুব টায়ার্ড লাগছে আমি বাসায় যাবো
বলেই ইয়াশের গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো
— ওহ হ্যালো, যেতে হলে যাও কিন্তু আমার গাড়ির দিকে কেনো যাচ্ছ?
রশ্নি– যাবো যখন একই জায়গায় তাহলে আলাদা ভাবে যাওয়ার কি দরকার
ইয়াশ– মানে?
রশ্নি– আমি অনেক্ষন ধরে দেখছি, আপনি মানে মানে করেই চলেছেন
সব যদি আমিই বুঝিয়ে দেই তাহলে আপনি কি করবেন
ইয়াশ– ?
রশ্নি– আচ্ছা আমিই বলছি,
মানে টা খুবই সিম্পল, আমি এখন আমার শশুর বাড়ী যাচ্ছি যেখানে আপনিও থাকেন তাই যাবো যখন একই জায়গায় তাহলে আলাদা ভাবে কেন
ইয়াশ– ওয়েট ওয়েট ওয়েট। তুমি এখন আমার বাড়িতে যাবে তাও আবার আমার গাড়িতে করেই?
রশ্নি– ইয়াপ
ইয়াশ– দেখো আমি কিন্তু আর বাড়াবাড়ি সহ্য করবো না
রশ্নি– আরেহ আজব তো, মেয়েরা বিয়ের পর তাদের শশুর বাড়ী যাবে না তো আর কোথায় যাবে
ইয়াশ– শুনো, আমি তোমাকে আমার সাথে করে কোথাও নিয়ে যাচ্ছি না
রশ্নি– আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার ফল একটু আগেই ভুগে এসেছেন এখন আবারো সেইম কাজ করতে যাচ্ছেন?
ইয়াশ কিছু না বলে চলে যেতে নেয় তখনই পিছন থেকে রশ্নির কান্নার আওয়াজ পায়
ইয়াশ পিছনে তাকিয়ে দেখে রশ্নি রাস্তার মাঝে বসে কাঁদছে
ততক্ষনে সেখানে বেশ ভিড় জমে গেছে
তারপর এবার উঠে ইয়াশের দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে শুরু করলো
— ভালো করে দেখুন এই লোকটাকে
হ্যা হ্যা হ্যা এই লোকটাকেই, যাকে নিজের প্রানের থেকেও বেশি ভালোবেসেছি
যাকে নিজের কলিজাটা কেটে খাইয়ে দিয়েছি
কিন্তু এই লোকটা?
এত ভালোবাসার পরেও বলে কলিজায় নাকি লবন কম ছিল??
একটা মহিলা এসে রশ্নিকে বলল
— কি হয়েছে মা তোমার?
কি করেছে এই লোকটা
রশ্নি– কি করেছে জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ, তাহলে আপনার সাথে সাথে আপনার পাশে থাকা বিড়ালটাও কেঁদে দিবে?
মহিলা– না তুমি বলো কি হয়েছে,
রশ্নি– আচ্ছা এত রিকোয়েস্ট করছেন যখন বলিই তাহলে?
ইয়াশ– রশ্নি পাবলিক প্লেসে কি করছো এসব
(চোখ রাঙিয়ে)
রশ্নি– দেখুন এই লোকটা এখনো আমাকে ধমকাচ্ছে?
— এই আপনি চুপ করুন তো ওকে বলতে দিন
হ্যা তুমি বলো
রশ্নি– হ্যা, আমাদের বিয়ের ২ বছর পর আমাকে ধোকা দিয়ে এই লোকটা অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছিল আমি বাধা দেওয়াতে আমাকে বেধরম মারলো আর এখন এখানে ফেলে চলে যাচ্ছিল??
ওর কথা শুনে একটা লোক এগিয়ে এসে বললো
— তোদের মতো কিছু ছেলেদের জন্যই আমাদের পুরুষ জাতিটাকে লাঞ্ছিত হতে হয়
রশ্নি– প্লিজ আপনারা ওকে কিছু বলবেন না, ও যায় করে থাকুক না কেন, আমি তো ওকে ভালুপাসি?
— ইশ মেয়েটা কত ভালো এত কিছুর পরও ছেলেটাকে কিছু বলছে না
— সত্যিই এমন মেয়ে পেতে ভাগ্য লাগে আর এই ছেলেটা
এমন অনেকে অনেক কথাই বলতে শুরু করলো
।
।
।
চলবে,
#Mr_Devil
#Part_46
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)
।
।
।
ইয়াশ আর সহ্য করতে পারলো না
ইয়াশ– জাস্ট শাট আপ, এভরিওয়ান
ইয়াশের চিৎকারে সবাই যেন কেঁপে উঠলো
কিন্তু রশ্নি কোনো রিয়েক্ট করলো না যেন ও জানতো এমনটা হবে
ইয়াশ এবার চোখ রাঙিয়ে রশ্নির দিকে তাকালো
— অনেক ড্রামা হয়ে গেছে এবার চলো
বলেই এসে রশ্নিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিল
সারা রাস্তায় রশ্নি বকবক করে ইয়াশের মাথাটা জাস্ট খেয়ে ফেলেছে
ইয়াশ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে যে ওর লাইফটা পুরো তেজ পাতা হতে যাচ্ছে
.
বাসায় পৌঁছে,
ডোর বেইল বাজানোর সাথে সাথে একজন সার্ভেন্ট এসে গেইটটা খুলে দিল
বাড়িতে এখন পুরো ঠান্ডা পরিবেশ
মানে সবাই যেটাকে “সান্নাটা” বলে আর কি
অনিমা বেগম মাথায় এক হাত রেখে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন
ইয়ানাফ আহমেদও সোফার অন্য কর্নারে দুই হাতের উপর থুতনি রেখে বসে আছেন
রাফি ওর মার সামনে দাঁড়িয়ে
ইয়াশ বুঝতে পারছে এটা
তুফান আসার আগের শান্তি
তখন উপর থেকে নিশা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসলো
— মা নেহা কিছুতেই দরজা খুলছে না,
আমার তো খুবই ভয় করছে যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলে তখন?
বলেই আবার কাঁদতে শুরু করলো
অনিমা বেগম আর চুপ থাকতে পারলেন না চিৎকার করে বলা শুরু করলেন
— দেখতে পাচ্ছ তোমার জন্য একটা মেয়ের কি অবস্থা হতে চলেছে?
আরেহ যখন এনগেজমেন্ট করবেই না তখন মেয়েটাকে শুধু শুধু কেন স্বপ্ন দেখালে
তোমার কি ক্ষমতা ছিল না এই মেয়েটার বিরুদ্ধে গিয়ে নেহাকে বিয়ে করার?
ইয়াশ কিছু বললো না শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে
আর এই যে আপনি (রশ্নিকে উদ্দেশ্য করে)
— লজ্জা নেই না? একটুও লজ্জা নেই?
আমিও কাকে আর কি জিজ্ঞেস করছি
লজ্জা থাকলে তো আর এই বাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো না
এত্তো অপমানের পরও আবার মুখ উঠিয়ে এই বাড়িতে এসে হাজির
একবার আমার ছেলেকে মেরে শান্তি হয়নি? যে আবার চলে এসেছ?
ওহ ঐবার তো পুরোপুরি ভাবে শেষ করতে পারনি তাই আবার এসেছ আমার ছেলেটাকে একদম শেষ করে দিতে তাই না?
অনেক হয়েছে বের হও এবার, বের হও আমার বাড়ি থেকে
রশ্নির কোনো হেল দোল দেখতে না পেয়ে
অনিমা বেগম রশ্নিকে থাপ্পড় মারতে যায়
কিন্তু তার আগেই ইয়াশ হাতটা ধরে ফেলে
ইয়াশ– আচ্ছা মম ও তো আমাকে মেরেছে তাই না
কিন্তু আমার তো তাতে কোনো ক্ষোভ নেই, যেখানে আমারই কোনো ক্ষোভ নেই প্রতি সেখানে তুমি এমন করছো কেন
আমি জানি তুমি আমাকে নিয়ে অনেক কনসার্ন কিন্তু আমি যে ওর হাতে একবার না হাজার বার মরতে রাজি আছি
আর আরেকটা কথা আমি বুঝতে পারছি না, তুমি ওকে এই বাড়ি থেকে কিভাবে বের হতে বলো
আমাদের এখনো ডিভোর্স হয়নি
শি ইজ স্টিল মাই ওয়াইফ
অনিমা– তুমি এই মেয়েটার জন্য আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে
ইয়ানাফ– আবার সেই বাংলা সিনেমার জল্লাদ শাশুরীদের মতন সেইম ডায়লগ (ফিসফিসিয়ে)
ইয়ানাফএর কথায় অনিমা বেগম তার উপর অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন
ইয়ানাফ– ?
ইয়াশ আর কিছু না বলে রশ্নিকে টেনে উপরে নিজের রুমে নিয়ে আসলো
.
এতদিন পর সেই আপন রুমটা দেখে মনে যেমন আনন্দ হচ্ছে তেমনি কেমন যেন একটা পেইনও ফিল হচ্ছে
পুরানো স্মৃতি গুলো চোখেত সামনে আসছে
রশ্নি সব কিছুতে হাত বুলিয়ে দেখছে
আলমারিটা খুলে কিছুটা অবাক হলো
কারন ওর সব জামা কাপড় ওভাবেই সুন্দর করে গোছানো
আয়নায় চোখ পড়তে বুঝতে পারলো ইয়াশ ওর দিকে তাকিয়ে আছে
রশ্নি ওর দিকে ফিরে তাকালো
ইয়াশ এখনো ওভাবেই দু হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে
ওর মুখে বাঁকা হাসির রেখা
এতে রশ্নির কিছু টা অস্বস্তি লাগছে
রশ্নি– আপনি কি কিছু বলবেন?
ইয়াশের দৃষ্টি এবার রশ্নির কোমরের দিকে
ইয়াশ– তুমি আগের থেকে আরো হট হয়ে গেছো
(ঠোঁট কামড়ে)
রশ্নি খেয়াল করে দেখল
ওর কোমরের সাইডের সেফটি পিন টা খুলে গেছে যার জন্য ওর কোমর টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে
রশ্নি তাড়াতাড়ি তা ঢেকে নিলো
রশ্নি– আপনি না রাস্তার বখাটেদের মতো কথা বলছেন
রশ্নির কথায় ইয়াশ আরো বাজে ভাবে ওর দিকে তাকালো
ইয়াশ– বখাটে বললে যখন তাহলে বখাটেদের মতো কিছু কাজও তো করতে হয়
রশ্নি– কি দিন দেখতে হইতাছে, এক বাচ্চার বাপ বলে এগুলা কয়, আল্লাহ উঠায় নাও (বিড়বিড় করে)
ইয়াশ এতক্ষনে রশ্নির অনেকটা কাছে চলে এসেছে
রশ্নি কথা ঘুরানোর জন্য বললো
— আচ্ছা বলছিলাম কি নেহা তো নিজেকে রুমে বন্ধ করে বসে আছে আমাদের কি একবার যাওয়া উচিত না?
মানে উল্টা পাল্টা যদি কিছু একটা করে বসে
ইয়াশ– ও জাহান্নামে যাক, আমার কিছু আসে যায় না
ইয়াশ একটানে ওর কোমরের সাইডের সেফটিপিনটা খুলে ফেললো
তারপর কোমরে হাত বুলাতে শুরু করলো
রশ্নি চোখ বড় বড় করে ওকে দেখছে
ইয়াশের চোখে আজ অন্য রকমই এক নেশা দেখতে পাচ্ছে রশ্নি
ইয়াশ রশ্নির কোমর চেপে ওকে আরেকটু নিজের কাছে নিয়ে আসলো
রশ্নি– আপনি…..
রশ্নির কথা শেষ হওয়ার আগেই ইয়াশ ওর ঠোঁটে নিজের আঙ্গুল ছুইয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিলো
— হুশশশশশ……..!!
একটাও কথা বলবে না আর, অনেক অপেক্ষা করিয়েছ আর না
বলেই ওর ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে ওর ঘরে মুখ ডুবালো
রশ্নি নিজেও ইয়াশের ছোঁয়ায় পাগল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওকে এখন থামাতে হবে
রশ্নি– প্লিজ ছাড়ুন আমাকে
রশ্নির ঘোর লাগানো কথায় ইয়াশ আরো উম্মাদ হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো
রশ্নি– ইয়াশ প্লিজ….(চেচিয়ে)
রশ্নির কথায় ইয়াশের ধ্যান যেন মুহূর্তেই ভেঙে গেল
ইয়াশ রশ্নিকে ছেড়ে ওর গাল চেপে ধরলো
ইয়াশ– বাহ এই কয়েকদিনে তোমার দেখি উন্নতি হয়েছে,
স্যার থেকে ডাইরেক্ট ইয়াশ?
শুনো চুপ করে তোমার সব ড্রামা সহ্য করছি বলে এই না যে আমি বদলে গেছি বা উইক হয়ে পড়েছি
এটা সেই আগের ইয়াশ আহমেদই আছে
এটা মাথায় রেখো
আর খবরদার যদি নেক্সট টাইম থেকে আমার নামটাও নিজের মুখে আনো তো
আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না
বলেই ওকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল
রশ্নি এখনো অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে
শুধু ওর নামটা উচ্চারণ করেছে বলে এত কথা শুনাল?
যাক সেটা নিয়ে রশ্নি আর বেশি ভাবলো না
.
.
.
★–পরেরদিন–★
রশ্নি নিশকে নিয়ে আজ ওর মামার বাসায় এসেছে কতদিন দেখে না মামাকে
গেইটে নক করার কিছুক্ষন বাদে মামী এসে দরজা খুলে দিল
রশ্নিকে দেখে যেন সে অবাকের সাথে খুশিও হলো
নাঈমা বেগম এসে রশ্নিকে জড়িয়ে ধরলেন
তারপর ওর কপালে চুমু দিয়ে ওর গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
— কেমন আছিস
তার এহেন আচরণে রশ্নি অবাক হলেও কিছু বললো না
— ভালো তোমরা
— ভালো
তখনই উপর থেকে সাহিদ চৌধুরী বামে আসছিলেন
তা টের পেয়ে নাঈমা বেগম রশ্নিকে ছেড়ে দিলেন
— ভিতরে আয়!
.
আজ মামার সাথে অনেকদিন পর মন খুলে কথা বললো রশ্নি
আর নিশকে যেন তারা চোখে হারাচ্ছেন
খুব আদর করছে ওকে
নাহিদ কিছু বলছে না শুধু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রশ্নিকে দেখেই চলেছে
সাহিদ– নাহিদ দেখো ও আমাদের কোলে কি সুন্দর করে বসে আছে একটুও কাঁদছে না
ওকে একটু কোলে নিয়ে দেখো, ও অনেক কিউট
নাহিদ এবার এগিয়ে এসে নিশকে কোলে তুলে নিলো
কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
— ওর চোখ গুলো একদম ইয়াশের মতো
তারপর রশ্নির দিকে তাকিয়ে বলল
*একদম নীল রঙের*
তাই না রশ্নি?
নাহিদ কি মিন করে কথাটা বলেছে তা রশ্নির কাছে স্পষ্ট
রশ্নি তাড়াতাড়ি নিশকে ওর কোল থেকে নিয়ে নিলো
রশ্নি– আচ্ছা মামা তাহলে এবার উঠি
মামা– না খেয়ে চলে যাবি?
রশ্নি– হ্যা নাহলে লেইট হয়ে যাবে, আবার অফিসেও তো যেতে হবে
রশ্নি তাদের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো
.
অফিস আওয়ার শেষে নিশকে শুভদের বাড়িয়ে দিয়ে আসতে যায়
শুভ– আচ্ছা রশ্নি তুই নিশের কথা ইয়াশকে কবে জানাবি?
রশ্নি– খুব তাড়াতাড়িই জনাব
শুভ– এখন জানালে প্রবলেম কি?
রশ্নি– দেখ এখন ও আমার উপর রেগে আছে তাই যদি এখন ওকে নিশের কথা জানাই
তাহলে আমি যে নিশকে ওর থেকে আলাদা রেখেছিলাম সেটার শাস্তি দেওয়ার জন্য ও আমাকে নিশের থেকে আলাদা করে দিতে পারে (মন খারাপ করে)
শুভ– তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে
রশ্নি– আই হোপ সো…
.
রশ্নি ইয়াশের সাথে থাকা শুরু করে দিয়েছে অনেক দিন হয়েছে
রশ্নি এখনো ইয়াশকে নিশের ব্যাপারে জানায়নি
কিন্তু প্রত্যিকদিন নিশের সাথে সারাদিন থাকতো আর অফিস আওয়ার শেষ হলে ওকে শুভদের বাসায় দিয়ে আসতো
সবই ঠিক ছিল কিন্তু ইয়াশের সন্দেহ হলো তখন
যখন ও উইকেন্ডসএর দিনও ও বাহিরে যেত
.
আজ ইয়াশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ও রশ্নির পিছু নিবে
আজ রশ্নি, শুভ, আর অনু সবাই মিলে পার্কে যাবে বলে ঠিক করেছে
অবশ্য তা নিশের জন্যই
তাই রশ্নি বেরিয়ে পড়ল
ইয়াশও চুপি চুপি ওর পিছে এসেছে
রশ্নি ওর গাড়ি নিয়ে শুভদের বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে আছে তখনই সেখানে অনু নিশকে কোলে নিয়ে উপস্থিত হয়
নিশ রশ্নিকে দেখেই ওর কোলে যাওয়ার জন্য হাত এগিয়ে দিল রশ্নিও ওকে কোলে তুলে নিলো
রশ্নি– আমার বেবিটা আমাকে মিস করেছে?
অনু– তা আর বলতে?
রশ্নি– বেবি, মাম্মাম তোমাকে তাড়াতাড়ি পাপার কাছে নিয়ে যাবে কেমন
অনু– সেই ভালো, তোকে ছাড়া একদমই থাকতে চায় না, একদম মা পাগল হয়েছে
রশ্নি– আমারো যে ওকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হয়
খুব তাড়াতাড়ি ইয়াশকে সত্যিটা বলে দিব
রশ্নির কথা শুনে ইয়াশ কিছুটা অবাক হলো
ইয়াশকে কি সত্যি বলবে?
আর ওই মহিলা রশ্নিকে ওর মাম্মামই বা বলছে কেন
আর ও যত দূর জানে শুভদের কোনো বেবি নেই তাহলে?
শুভ– আশা করি ইয়াশ নিজের বাচ্চার কথা শুনলে ইয়াশ নিশ আর তোকে মেনে নিবে
এই কথাটায় ইয়াশের বড় সর একটা ঝাটকা লাগলো,
ওর বাচ্চা মানে?
কি বলছে ওরা এসব
সব কিছু ইয়াশের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
না ওর এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে
ইয়াশ আর বেশি কিছু না ভেবে গিয়ে রশ্নির সামনে দাঁড়ালো
।
।
।
চলবে,