Mr_Devil #Part_47,48

0
2086

#Mr_Devil
#Part_47,48
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)
Part_47


হঠাৎ ইয়াশকে দেখে রশ্নি কিছুটা হকচকিয়ে উঠে

রশ্নি– আআআপনি?
ইয়াশ– এই বাচ্চাটা কার?
রশ্নি– আপনি হঠাৎ কোথাথেকে আসলেন?
ইয়াশ– যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও
রশ্নি– ইয়ে মানে

ইয়াশ– ক্লিয়ারলি আনসার দাও
আমি একটু আগে স্পষ্ট শুনেছি এই ভদ্র মহিলা বাচ্চাটাকে তোমার কোলে দিয়ে বলছিলেন
“একদম মা পাগল হয়েছে”

মানে কি এসবের?

ইয়াশের চিৎকার শুনে নিশের ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু ভয় না পেরে উল্টো ইয়াশকে খামচি দেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে

রশ্নি কোনোমতে ওকে সামলাচ্ছে

ইয়াশ আবার চিৎকার করে উঠে
— কি হলো বলছো না কেন?

রশ্নি এবার সইতে না পেরে বলেই দিলো
— আপনার ছেলে ও
প্লিজ আর চেঁচাবেন না

রশ্নির কথায় ইয়াশ যেন পুরো জমে গেল

ইয়াশ– আমার ছেলে মানে?

রশ্নি– হ্যা আপনারই ছেলে ও

এতগুলো দিন অনেক সহ্য করেছি আর না
আজ সব সত্যিটা বলবো

তারপর রশ্নি নেহার করা সব দূষকর্ম ইয়াশকে বলে

আর আপনি আর আপনার মা যে একটা গান গাননা?
যে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম পালিয়ে গিয়েছিলাম?

তাহলে আজ বলছি আমি পালিয়ে যায় নি
আপনার মা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল

আর আপনার সাথে শেষ দেখা করার মূল্য কি নিয়েছিল জানেন?
একটা কসম, যেটা ছিল “আমি আজকের পর থেকে আর কখনো আপনার সামনে আসতে পারবো না”

আমিও তার কথা রাখতে চলে গিয়েছিলাম আপনার থেকে দূরে

কিন্তু হঠাৎ রাস্তার মাঝে মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে নেই আর সামনে দিয়ে একটা ট্রাকও আসছিল তখন শুভও সেখান দিয়ে যাচ্ছিল আর আমাকে ওই অবস্থায় দেখে এসে বাঁচিয়ে নেয়

কিন্তু ততক্ষণে আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি
হসপিটালে গিয়ে জানতে পারি যে আমি প্রেগন্যান্ট

আপনাকে জানাতেও চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার মার কথা রাখতে গিয়েই তা পারি নি

তাই শুভর সাথে সিঙ্গাপুর চলে যাই
সেখানে গিয়ে আমার খান ইন্ডাস্ট্রিজের আর আমার বাবার সম্পত্তি পাই

বাংলাদেশে বিজনেসের কাজেই এসেছিলাম কিন্তু এখানে এসে জানতে পারি আপনাকে নাকি বলা হয়েছে যে আমি পালিয়ে গিয়েছি তাও আবার আমারি ভাইয়ের সাথে

সেটা আবার আপনার মাই আপনাকে বলেছিল

জানেন তো আপনার মার প্রতি না আমার কোনো ক্ষোভ নেই
উনি যা করেছেন একজন মা হিসেবে যে কেউই করতো
কিন্তু কষ্ট টা কোথায় লেগেছে জানেন?
যখন শুনেছি উনি আমার নামে মিথ্যে বলেছেন

তখনও আমি চুপ ছিলাম কিন্তু যখন জানতে পারি যে আপনার এনগেজমেন্ট নেহার সাথে হতে চলেছে
তখন আর চুপ করে থাকতে পারি নি
অন্তত আমার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে পারিনি

বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো

সব কিছু শুনে ইয়াশের যেমন রাগ হচ্ছে তেমনি কষ্টও হচ্ছে

ও এক দৃষ্টিতে নিশের দিকে তাকিয়ে আছে

ইয়াশ গিয়ে নিশকে কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো

রশ্নি নিশকে ইশারা করে বললো যেন ও ইয়াশের কোলে যায়
আর নিশও তা বুঝে ইয়াশের কোলে চলে গেল

ইয়াশ ওকে আষ্টে পিষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো

এটা ওর ছেলে ভাবতেই যেন কেমন খুশি খুশি লাগছে

কিছুক্ষন পর ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর মায়া ভরা মুখটায় চোখ বুলাতে শুরু করলো

পুরো ইয়াশের ডুপ্লিকেট
ওর মতোই লাল টুকটুকে ঠোঁট,
চোখা নাক, আর সব থেকে আকর্ষণীয়
চোখের নীল মনি গুলো যা পুরো ইয়াশের মতো

রশ্নি– প্লিজ ওকে আমার থেকে আলাদা করবেন না
ও আমাকে ছাড়া একদমই থাকতে পারে না

ইয়াশ– এদিক দিয়েও আমার উপর গেছে

রশ্নি– মানে?

ইয়াশ– ওর বাবাও যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারে না
তুমি জানো?

তুমি চলে যাওয়ার পর পাগলের মতো খুঁজেছি তোমাকে
যখন হাজার খুঁজেও পায়নি তখন সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছিলাম

তাহলে এখন কিভাবে ভাবতে পারো যে আমি তোমায় ছাড়া থাকবো
বা ওকে তোমার থেকে আলাদা করবো

আগেও বলেছি তুমি আমার আর আমার হয়েই থাকবে সেটা তুমি না চাইলেও
সেখানে তোমার থেকে আলাদা হওয়ার প্রশ্নই আসে না

রশ্নি এবার ইয়াশের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে কেঁদে দেয়

এক বাহুর মাঝে নিশ আর অন্যটায় রশ্নি
ইয়াশের আজ নিজেকে সম্পুর্ন মনে হচ্ছে

শুভ তখন কাশি দিয়ে উঠে

রশ্নি তাড়াতাড়ি ইয়াশকে ছেড়ে দেয়

শুভ– যাক সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে

অনু– হুম, দোয়া করি আপনারা যেন সব সময় এভাবে হাসি খুশি থাকেন

রশ্নি– কিন্তু শুভ এবার কিন্তু তোর প্রমিজ পুরো করতে হবে

শুভ– কিসের প্রমিজ রে?

রশ্নি– যা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি?
তুই না ছোট বেলায় আমাকে প্রমিজ করেছিলি
যে আমার ছেলের সাথে তোর মেয়ের বিয়ে দিবি
তাহলে এবার তাড়াতাড়ি আমার জন্য একটা লাল টুকটুকে বৌমা এনে দে

অনু– তোমরাও না কিসব যে বলো (লজ্জায় লাল হয়ে)

রশ্নি– আহারে লজ্জা বতীটা ?

শুভ– আইলসামি আর ছাড়বি না তাই না?
মানে নিজে কষ্ট কইরা ছেলের বউ খুঁজতে হইবো বইলা এখন আমার মেয়ের উপর নজর ফালাইছে

রশ্নি– ?

শুভ– আরেহ আমাদের আর কষ্ট করে বিয়ে দিতে হবে না
তোর ছেলে এখন থেকেই ইয়াশের মতো বড় হয়ে দেখ আমার মেয়েকেই না তুলে নিয়ে যায়

রশ্নি– থাক আগে হইতে দে?

ওদের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে দিলো

.

★●●●●●সন্ধ্যা বেলায়●●●●●★

নেহা ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছিলো
তখনই কথাথেকে ফরমাল ড্রেস পরা কয়েকজন ছেলে মেয়ে রুমে ঢুকে পড়ল

সাথে ইয়াশও আছে

হঠাৎ এদেরকে আসতে ভিতরে আসতে দেখে নেহা ভয় পেয়ে যায়

নেহা– আপনারা কারা, আর আমার রুমে এসেছেন কেন

ইয়াশ– আমি সব সত্যিটা জেনে গেছি
সো ডিয়ার নেহা ডার্লিং তুমি আজ ফিনিশ

নেহা– দেদেখো ইশু বে,,,,

ইয়াশ– “ইয়াশ”….নাম আমার (চিৎকার করে)

নেহা– হহহ্যা,,,,ইয়া ইয়াশ
আআআমি তোতোমাকে ভালোবাসি ববলেই ওঅমটা ককরেছিলাম, বিবিবিশ্বাস করো

ইয়াশ– জাস্ট শাট আপ
তোমার এসব আজাইরা ঢংএর জন্য আমাদের জীবনের এত গুলো দিন নষ্ট হলো
আমার ওয়াইফের প্রয়োজনের টাইমে আমি ওর পাশে থাকতে পারিনি
আমার বাচ্ছা পৃথিবীতে আসার পর ৯-১০ টা মাস তার বাবাকে কাছে পায়নি
এই সব কিছুর হিসেব দিতে পারবে আমাকে?
ফিরিয়ে দিতে পারবে সেই সময় গুলোকে?

নেহা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে

ইয়াশ লোকগুলোকে নেহাকে উঠিয়ে আনার জন্য অর্ডার করলো

তারাও তাই করল

নেহা– ইয়াশ কি করছো, প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও
ইয়াশ কিছু বললো না
জাস্ট ওদের বললো যেন ওকে ফলো করে

ইয়াশ গিয়ে থামলো
ওদের বাড়ির গার্ডেনটায়

সেখানে কিছু লোক খোদাই করছে

সেখানে বাড়ির সকলে উপস্থিত আছে

ইয়াশ– এই বেহায়া মেয়েটাকে ওই খোদাই করা জায়গায় ফেলে দাফন করে দাও

এটা শুনে সেখানের সবাই আঁতকে উঠলো

অনিমা– ইয়াশ এটা বেশি হচ্ছে
ইয়াশ– আপাতত আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না আমি তাই আমার থেকে আর আমার পরিবার থেকে দুরুত্ব বজায় রাখুন

অনিমা বেগম এবার ইয়ানাফ আহমেদের কাছে গেলেন
— দেখো তোমার ছেলে কিসব পাগলামি করছে, প্লিজ ওকে থামাও

ইয়ানাফ আহমেদ গিয়ে ইয়াশ সামনে দাঁড়ালো
তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে বলল
— আই এম প্রাউড অফ ইউ মেরা বেটা
ওরা যা করেছে তার জন্য তাদের এই শাস্তিই প্রাপ্য
বলে ইয়াশের পিঠে চাপর দিয়ে এসে সরে দাঁড়ালো

ইয়াশও হেসে সম্মতি জানালো

এতগুলো বছর পর তার বাবার সাথে তার সম্পর্ক ভালো হয়েছে

আর নিশা তো এখানে কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলেছে

ইয়াশ– আরেহ তুমি কাঁদছো কেন?
চিন্তা করো না তোমার শাস্তিও পাবে

আসল ভ্যাম্প তো তুমিই
তোমার বোনকে এই জঘন্য কাজের আইডিয়াটা যে তুমিই দিয়েছো তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে

তাই আগে তোমার বোনের সাথে নিপটে নেই তারপর তোমার পালা

নেহা– রশ্নি প্লিজ তুমি তো ইয়াশকে কিছু বলো
আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ

রশ্নি– শুন নেহা তুমি যা করেছ
তারপর তোমার জন্য মাফ আসছে না

বলেই রশ্নি দুই হাত গুঁজে
মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো

ইয়াশ– অনেক টাইম নষ্ট হয়েছে এবার এটাকে দাফনে দাও

নেহা আর নিশা গিয়ে ইয়াশের পায় ধরলো
— প্লিজ এমন করবেন না

ইয়াশের জাস্ট বিরক্তিকর লাগছে এসব

ইয়াশ ওদের থেকে সরে দাঁড়ালো

ইয়াশ– আমার কাছে মাফ চেয়ে কি হবে
যার সাথে মেইন অপরাধ করেছ তার কাছে চাও

নিশা আর নেহা গিয়ে রশ্নির পায় ধরলো

রশ্নিও সরে দাঁড়ালো
— তুমি তো মাফের যোগ্যই না (নেহাকে বললো)

এবার নিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো
— আর আপনি……আমার কাছে নিশ্চই এটা এক্সপেক্ট করবেন না যে আমু ঢং করে বলবো
— আপনি আমার বড় আপনার আমার পায় হাত দেওয়া মানায় না

হুহ, আমি চাই না আপনার মত নিম্ন মানসিকতার মহিলার স্পর্শ আমার গায়ে লাগুক

হঠাৎ সেখানে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়
কোনো নরমাল গাড়ি নয়
পুলিশের গাড়ি

ইয়াশ– তোমাদের আজ সত্যিই দাফন করে দিতাম কিন্তু শুধু মাত্র রশ্নির কথায় পারলাম না

পুলিশ রা একা না সাথে রাফিও আছে

রাফিই ওদের আনতে গিয়েছিল

রাফি– স্যার এরেস্ট দেম

নিশা– রাফি তুমিও

রাফি– হ্যা তোমরা যা করেছ তার জন্য শাস্তি তো পেতে হবেই
আচ্ছা নিশা, কি না করেছি আমি তোমার জন্য?
এত ভালবাসলাম,তোমার কথায় উঠতাম বসতাম, তোমাকে রানী করে রাখলাম
তারপরও কেন

রাফি নিজেকে আর কন্ট্রোল করে রাখতে পারছে না

তাই সেখান থেকে চলে গেল

তারপর ওরা নেহাকে এরেস্ট করে নিয়ে গেল

.

●◆■—–☆রাতে☆—–■◆●

রশ্নি সব সময়ের মতো বারান্দায় আকাশের দিকে মুখ করে দারিয়ে আছে

ইয়াশর সবসময়ের ন্যায় পিছন থেকে এসে রশ্নিকে জড়িয়ে ধরলো

তারপর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো
— I love you❤️

ইয়াশের ঘোর লাগানো কন্ঠ রশ্নিকে মাতাল করে তুলছে

রশ্নি সামনের দিকে ঘুরে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরলো
তারপর রশ্নিও ইয়াশের কানের কাছে মুখ লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো
I love you too #Mr_Devil ?❤️

ইয়াশ রশ্নির কানের নরম অংশে ছোট করে চুমু খেয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো

.

রাত ১ টা বেজে ৫৬ মিনিট
________________________

ফোনে মেসেজ আসার শব্দে রশ্নির ঘুম ভেঙে যায়

মেসেজটা ওপেন করা মাত্র ওর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো

রশ্নি একবার ইয়াশকে দেখে নিলো

ইয়াশ নিশকে বুকের উপর নিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে

রশ্নি– যেটার জন্য আমি এত গুলো বছর ধরে অপেক্ষা করেছি তা আজ পূরণ হতে চলেছে

আমাকে ক্ষমা করে দিবেন স্যার, কিন্তু আমার এখন যেতে হবে

রশ্নি আর সময় নষ্ট না করে উঠে রেডি হয়ে নিলো
তারপর ওর কাবার্ড থেকে গান(gun) টা বের করে বুলেট প্রুফ জ্যাকেটটার ডান সাইডে গান রাখার জায়গাটায় রেখে দিল

যাওয়ার আগে একবার নিশ আর ইয়াশকে দেখে নিলো
তারপর চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল



চলবে,

#Mr_Devil
#Part_48
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)



সেন্সলেস হয়ে হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারে মাঝ বয়সী একটা লোক বসে আছে

তার বরাবর সামনের চেয়ারেই রশ্নি বসে আছে

মুখে তার হিংস্রতার ছাপ স্পষ্ট

লোকটার একটু একটু করে জ্ঞান ফিরে আসছে

লোকটা আধো আধো করে চোখ খুলছে

সামনেই হাতে বন্দুক নিয়ে একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখে আঁতকে উঠলেন তিনি

— ককে তুতুমি?
রশ্নি– যাক ফাইনালি আঙ্কেলের জ্ঞান ফিরেছে
বাই দা ভাঙাচড়া রাস্তা, আমাকে চিনতে পারছেন তো মাহু আঙ্কেল (বাঁকা হেসে)

(লোকটার নাম মাহফুজ কিন্তু রশ্নি ছোট বেলায় মাহু আঙ্কেল বলে ডাকতো)

মাহফুজ সাহেবের মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে রশ্নি বুঝতে পারলো যে উনি ওকে চিনতে পারে নি
আর না পারাটাই স্বাভাবিক

রশ্নি– ওহ চিনবেন কিভাবে, আপনি তো আমাকে সেই ছোট বেলায় দেখেছিলেন কিন্তু আঙ্কেল আমি কিন্তু আপনাকে বেশ চিনে গেছি

আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়ান বেশি কনফিউজড হতে হবে না আমিই পরিচয় দিচ্ছি

লোকটা ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো
হয়তো চেনার চেষ্টা করছেন

“রশ্নি এনায়াত খান”, খান ইন্ডাস্ট্রিজের এক মাত্র উত্তরাধিকারী

রশ্নির কথা শুনে উনি পুরো থমকে গেলেন
সময়টা যেনো সেখানেই থেমে গেলো

এটা সেই ছোট্ট মেয়েটি
এক কালে কত কোলে করে ঘুড়েছিলেন

কত চকলেট আইসক্রিম কিনে ওর হাতে দিয়েছিলেন
আর আজ সেই হাত গুলোর মাঝে পিস্তল আবদ্ধ করে তার সামনে বসে আছে

মাহফুজ সাহেবের চোখ ভিজে এলেন

রশ্নি– কাঁদছেন নাকি?
হুম কাঁদুন কাঁদুন
এত বছর পর দেখা হলো তাই এখন একটু আবেগে ঠেলবে এটাই স্বাভাবিক

কিন্তু কি জানেন তো এগুলো দিয়ে আজ কোনো লাভ হবে না

পরক্ষনেই রশ্নি ফেইস এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হয়ে গেল
মুখটা আরো হিংস্র হয়ে উঠলো

গানটা রিলোড করে মাহফুজ সাহেবের কপালে ঠেকিয়ে ধরলো

রশ্নি– বলুন আমার ফ্যামিলিকে কেন শেষ করে দিয়েছিলেন

— বিশ্বাস কর মা আমি নিজের ইচ্ছায় কিছু করিনি

রশ্নি– এই এই এই,,, একদম নেকামো করবেন না
আমি সব জানি, সেদিনের একসিডেন্টটা আপনি ইচ্ছে করেই করেছিলেন

মাহফুজ– আমাকে দিয়ে একসিডেন্টটা করানো হয়েছিল
আর বলা হয়েছিল যদি আমি সেটা না করি তাহলে আমার মেয়ে আর বউকে মেরে ফেলবে

রশ্নি– কে করিয়েছিল

মাহফুজ– সাসাহিদ চৌধুরী……

রশ্নি– নাআআআআআআ….!!
এই আমার মামার নামে একদম বাজে কথা বলবেন না
উনি আমাকে ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করেছেন আর উনিই কিনা আমার মা বাবাকে মারতে চাইবেন

এই সত্যিটা বলুন নাহলে কিন্তু ট্রিগার প্রেস হয়ে যাবে

মাহফুজ– এটাই সত্যি
সেদিন বাড়ির সবাইর বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল

আমিও প্রত্যেকদিনের মতোই গাড়ি পরিষ্কার করছিলাম
তখন সাহিদ চৌধুরী এসে আমাকে বললেন
যেন আমি ইচ্ছে করে একসিডেন্ট করে দেই

আমি খুব অবাক হয়ে ছিলাম তার কথা শুনে
এই ভালো মানুষির মুখোশের পিছনে যে এমন একটা জঘন্য মানুষ আছে তা আমি ভাবতেও পারি নি

আমি তাকে এই কাজ করতে না করে দেই
আর তখনই তিনি আমাকে হুমকি দেন যে এটা না করে নাকি আমার সাথে আমার পরিবারকেও শেষ করে দিবে

তাই আমি করতে বাধ্য হই

আমি তো শুধু একজন সাধারণ ড্রাইভার ছিলাম তোদের বাড়িতে
আমি কেন এগুলো করতে চাইবে বল

বিশ্বাস কর আমি সব কিছু তার কথাতেই করেছি

এগুলা শুনার পর
রশ্নির যেন কেমন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে

যাকে ছোট থেকে এত বিশ্বাস করলো
নিজের বাবার স্থান দিলো
তার ব্যাপারে এমন একটা সত্যি রশ্নি মেনে নিতে পারছে না

রশ্নি– আমি কিভাবে মেনে নিব যে আপনি সত্যি বলছেন

মাহফুজ– তাহলে চল তার কাছে
আমাকে দেখে নিশ্চই উনি শিকার করতে বাধ্য হবেন

.

রশ্নি আর মাহফুজ সাহেব সাহিদ চৌধুরীর বাড়ির দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন

রশ্নির কখনো ভাবতেও পারেনি যে তার মামার বাসায় এমন একটা কারনের জন্যও আসবে

রশ্নি একটা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে দরজায় নক করলো

কিছুক্ষন পর বেশ বিরক্ত নিয়েই নাঈমা বেগম এসে দরজাটা খুলে দিলেন

নাঈমা– কিরে এত রাতে তুই? (অবাক হয়ে)

রশ্নি কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে গেলো

ভিতরে গিয়েই জোরে জোরে চিৎকার করে সাহিদ চৌধুরীকে ডাকতে লাগলো

এমন টাইমে তার নাম নিয়ে কে ডাকছে তা দেখার জন্য সাহিদ চৌধুরী নিচে গেলেন
আর গিয়ে রশ্নিকে দেখে উনিও বেশ অবাক হলেন

ওর ডাক শুনে নাহিদও নীচে চলে এসেছে

সাহিদ– এই সময় তুই কোথাথেকে আসলি?
রশ্নি– চিনতে পারছো উনাকে?

সাহিদ চৌধুরী পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে যেন কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন

সাহিদ– আরেহ এই যে মাহফুজ,
মাহফুজ– দেখুন আমি রশ্নিকে সবই বলে দিয়েছি
আপনার কুকর্মের কথা তাই এবার ভালো মানুষির মুখোশটা খুলুন
সাহিদ– মাহফুজ তুমি এসব কি বলছো?
মাহফুজ– কেন আপনি সেদিন বলেন নি
যদি আমি ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট টা না করি তাহলে আমার পরিবারকে শেষ করে দিবেন

সাহিদ– আমার নিজেরই ভাই বোনদের মারতে চাইবো আমি? তা কি করে হয়…..!!

সাহিদ চৌধুরীর কথা শেষ হতে পারলো না তার আগেই পিছন থেকে মাহফুজ সাহেবের চিৎকার শুনতে পায় রশ্নি

রশ্নি পিছনে ঘুরে দেখে
মাহফুজ সাহেব রক্তাক্ত অবস্থায় নীচে পরে আছেন
আর সামনে নাহিদ হাতে চাকু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

রশ্নি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে

রশ্নি– ননাহিদদ তুতুমি এটা কককি করলে?
নাহিদ– পথের কাটাকে পথ থেকে সরিয়ে দিলাম
হুহ এসেছিল আমাদের বিরুদ্ধে ওকালতি করতে

রশ্নি– মামা??

সাহিদ চৌধুরী তালি দিয়ে হাসতে শুরু করেন
তারপর নাহিদের পাশের সোফাটাতে পায়ের উপর পা তুলে বসে

সাহিদ– আহারে বেচারি, সারা জীবন মামা ভক্তিই করে গেল
আবার সেই মামাকেই যে তার মা, বাবা, মিঠি, মিঠু আর স্পেশালি তার ভালোবাসার মানুষকে মেরে ফেললো

বললেই একটা অট্টহাসি দিলো

রশ্নি– মামা তুমি কি বলছো এসব?

সাহিদ– একদম ঠিকই বলছি,
তোর মা বাবা আর ওদের আমিই মেরে ছিলাম
আর সেদিন রাতে তোর নানাভাই আর নানুকেও আমিই মেরেছিলাম

রশ্নি আর সহ্য করতে পারলো না মাটিতে হাটু গেড়ে বসে মুখে দুই হাত গুঁজে কেঁদে দিলো

রশ্নি– কেন করলে তুমি এমনটা কেন

সাহিদ– চল তোকে আজ সবটা বলি

আমরা ২ ভাই আর ১ বোন ছিলাম
তারা দোনোজনই পড়ালেখায়, রূপে,গুনে সব কিছুতে একশতে একশ ছিল কিন্তু আমি কোনো কিছুতেই ভালো ছিলাম না

তাই আমার বাবা আমাকে সব সময় অবহেলা করতেন

তাদেরকে খাইয়ে দিতেন, কিন্তু যখন আমার পালা আসতো তখন বিভিন্ন কাজের বাহানা দিয়ে চলে যেতেন

রাতে দুজনকে দুই বাহুতে নিয়ে
গল্প শুনিয়ে ঘুম পারাতেন
আর আমি তাদের এক সাইডে শুয়ে শুধু বাবার মুখ প্রান্তে তাকিয়ে থাকতাম

নিজের বাবা হয়েও আমার সাথে সৎ বাবাদের মতো আচরণ করতেন

মা আমাকে ভালোবাসতেন কিন্তু বাবার ভয় কিছু বলতেও পারতেন না

তারপর যখন বোরো হলাম
তখন বাবারও বয়স হলো
তখন তিনি তার সম্পত্তি তার ছেলে মেয়েদের নামে লিখে দিয়ে চিন্তা মুক্ত হতে চান

কিন্তু সেখানেও আমার সাথে দুচোখ করা হয়

তাদের নামে সব সম্পত্তি লিখে দেওয়া হয় আর আমি শুধু পাই আমার মার গ্রামের কিছু জমি

সেদিন আর চুপ করে থাকতে পারি নি
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম

এই অবহেলার বদলা আমি নিব

তাই একদিন সবাইকে বললাম
আমরা ঘুরতে যাবো

সবাইও বেশ খুশি হয়ে রাজি হয়ে গেল কিন্তু যাওয়ার আগ মুহূর্তে
আমার কিছু বিদেশি ক্লাইন্ট আসছে
বলে আমার যাওয়া ক্যান্সেল করলাম

ওরা আমাকে ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছিল না
কিন্তু অনেক কষ্টে রাজি করলাম

তারপর হঠাৎ তোরও শরীর খারাপ করলো

তাই তোকেও নিজের কাছে রেখে দিলাম
এই ভেবে যে বড় হলে তোকে আমার নাহিদের সাথে বিয়ে দিব
কারন ওরা বেঁচে না থাকলে সব সম্পত্তি তুইই পাবি
আর খান ইন্ডাস্ট্রিজও আর নাহিদের সাথে বিয়ে হলে সেগুলো নাহিদ পাবে

সব কিছু আমার প্ল্যান মতাবেকি হলো
এক্সিডেন্টে সবাই মারা গেলেন

আর সেদিন রাতে ওরা চলে যাওয়ার পর বাবাকেও আমিই মেরে গুম করে দিয়েছিলাম
মা এগুলো দেখে পুলিশের কাছে যেতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগে আমি তাকেও মেরে গুম করে দেই

কিন্তু পরে জানা যায় ওই একসিডেন্টএর থেকে দুটো লাশ গাহেব
যেগুলো ছিল ভাইয়া আর নীলেরর

রশ্নি– তার মানে আমার নীল মরে নি?

রশ্নির কথায় নিজের চোয়াল শক্ত করে নেয় সাহিদ চৌধুরী

— হ্যা বেঁচে যায়, আর সেটাই ছিল আমার ভাগ্যের সব থেকে বড় ভুল

রশ্নি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়

সাহিদ আবার বলা শুরু করেন
— জানি না সেদিন কিভাবে তারা বেঁচে যায়

কিন্তু ফিরে এসে আবার বাবার সম্পত্তি নিজের নামে করে নেয়
আমি বাধা দেওয়াতে আমার সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেন

আমার শেষ আশা ছিলি তুই

তুই যখন বড় হোস তখন তোকে নাহিদের সাথে বিয়ে দিতে চাইলাম
কিন্তু তাও পারলাম না শুধু এই নীলের কারনে

কত বড় সাহস তোর আর নাহিদের বিয়ের দিন এসে তোকে তুলে নিয়ে যায়
আর বিয়ে করে ফেলে

তার কথা রশ্নি বুজছে না
ওকে বিয়ে করে নেয় মানে?

রশ্নি– মানে?
আমার বিয়ে তো….?

সাহিদ– না তোর বিয়ে নীলের সাথেই হয়েছে
যাকে তুই ইয়াশ নামে চিনিস

রশ্নি– তুমি পাগল হয়ে গিয়েছ? কি বলছো এসব
আমার সাথে ওর প্রথম দেখা ওর অফিসে হয়েছিল

সাহিদ– আচ্ছা তুইই বল নাহলে আমাদের হেড নেইম সেম হতো কেন

রশ্নি এবার সব কিছু মিলিয়ে দেখছে

রশ্নি এবার বুঝতে পারছে কেন ইয়াশ ঐদিন
ওর নাম মুখে অনায় ক্ষেপে গিয়েছিল
সেদিন এয়ারপোর্টে রিতকে ইয়াশের পুরো নাম উচ্চারণ করতে না দেওয়া
আর আরেকটা কথাও রশ্নি ভাবতো যে
ওদের বাড়ির সবাই নামে আহমেদ এর সাথে চৌধুরীও লাগতো কিন্তু ইয়াশ লাগতো না

রশ্নি অবাক হয়ে সাহিদের দিকে তাকালেন

রশ্নি–মানে উনিই আমার……

সাহিদ– ও তোকে কখনো নিজের পুরো নাম বলেছে?

রশ্নি– না

সাহিদ– কারন তাহলে যে তুই জেনে জাবি
যে ওটাই তোর নীল
মানে “নিলাদ্রিশ আহমেদ চৌধুরী ইয়াশ”

রশ্নি– তুমি সবটা জানতে?
সাহিদ– অবশ্যই হ্যা
রশ্নি– তাহলে বলোনি কেন
সাহিদ– ভেবেছিলাম
ও যেহেতু তোকে তুলে নিয়ে গেছে আর তুই ওর পরিচয়ও জানিস না তাহলে
নিশ্চই তুই ওর কাছ থেকে চলে আসবি
আর আমি ওকেও মেরে ফেলবে

কিন্তু না তুই তো দিন দিন ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লি

তাই ডিসিশন নেই নীলের সাথে তোকে আর তোর বাচ্ছাকেও মেরে ফেলব

কিন্তু এখন তো তুই আমার কাজটা আরো সহজ করে দিলি

নিজেই নিজের বলি দিতে চলে আসলি

তাই এখন আগে তোকে মারবো আর তারপর তোর নীল আর বাচ্চাকে

— রেডি হয়ে যা তোর মা বাবার কাছে যাওয়ার জন্য

রশ্নি– মামা তুমি আমার সাথে এমনটা কিভাবে করতে পারো, আমাকে তো তুমি নিজের মেয়ের মতো আগলে বড়ো করেছ
প্লিজ আমার সাথে এমনটা করো না
আমি বাঁচতে চাই আমার নীল আর সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চাই

বলেই ডুকরে কেঁদে দিলো

কিন্তু আজ রশ্নির কোনো কথাই সাহিদ চৌধুরীর কান পর্যন্ত পৌঁচাচ্ছে না

তিনি উঠে এগিয়ে গেলেন রশ্নিকে মারার জন্য



চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here