#Mr_Devil
#Part_49
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)
।
।
।
রশ্নি– মামা তুমি আমার সাথে এমনটা কিভাবে করতে পারো, আমাকে তো তুমি নিজের মেয়ের মতো আগলে বড়ো করেছ
প্লিজ আমার সাথে এমনটা করো না
আমি বাঁচতে চাই আমার নীল আর সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চাই
বলেই ডুকরে কেঁদে দিলো
কিন্তু আজ রশ্নির কোনো কথাই সাহিদ চৌধুরীর কান পর্যন্ত পৌঁচাচ্ছে না
তিনি উঠে এগিয়ে গেলেন রশ্নিকে মারার জন্য
.
তখনই নাঈমা বেগম এসে উনার সামনে দাঁড়ালেন
নাঈমা– তুমি আর এক পাও এগোবে না
সাহিদ– নাঈমা তুমি সামনে থেকে সরে যাও
নাহলে তোমাকে মারতেও আমার হাত কাঁপবে না
নাঈমা– এতদিন অনেক সহ্য করেছি, অনেক চুপ করে থেকেছি
কিন্ত আর না। আজ আমি কিছুতেই তোমাকে ওর কোনো ক্ষতি করতে দিব না
সাহিদ– বেশ তাহলে আগে তোমাকেই শেষ করি
বলেই পিছন থেকে গান বের করে নাঈমা বেগমের সামনে ধরলো
রশ্নির তখন খেয়াল হলো যে ওর কাছেও পিস্তল আছে
রশ্নি তা বের করে সাহিদ চৌধুরীর সামনে তাক করলো
রশ্নি– পিছনে সরে দাঁড়াও বলছি
নাহলে কিন্তু আমি শুট করে দিব
সাহিদ– সোনামনি, বেশি বাড়াবাড়ি না করে ওটা হাত থেকে ফেলে দাও তো
রশ্নি– পিছনে সরুন একদম এগোবে না
রশ্নি তার দিকে পিস্তল তাক করে রেখেই কাউকে কল করার জন্য মোবাইল টা বের করলো তার আগেই পিছন থেকে নাহিদ এসে ওর হাত দুটো পিছনে মুড়ে পিস্তল আর মোবাইলটা নিয়ে নিল
আচমকা এমন আক্রমণের জন্য রশ্নি প্রস্তুত ছিল
তাই ও নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারেনি
সাহিদ চৌধুরী নিজের হাতএর ঠেকে গানটা ফেলে দিলো
সাহিদ– আজ ওকে নিজের হাতে মারবো
বন্দুক তন্ডুক দিয়ে মেরে অতটা মজা নেই যতটা মজা নিজের হাতে মারতে আছে
বলেই রশ্নির গলার দিকে নিজের দুই হাত বাড়িয়ে দিল
আর তখনই খুব জোরে একটা শব্দ হয়
সবাই ঐখানে তাকায়
রশ্নির ঠোঁটের কোনে আপনি ইচ্ছে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে
(বেশি সাসপেন্স দিলে কি আমি পাঁচ টাহা পাবো?
হ ভাই এটা তোগো ইয়াশ ওরফে নায়ক ভাইই?)
ইয়াশ– তা তো হচ্ছে না চাচ্চু
সাহিদ চৌধুরী সেদিকে তাকে
ইয়াশ– নীল থাকতে তার রশ্নির গায়ে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবে না
“নীল” নামটা শুনে রশ্নির শরীরের শিরায় উপশিরায় যেন এক অন্য রকম প্রশান্তি বইয়ে যাচ্ছে
রশ্নি– নীল
ইয়াশ ওর দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিল
নাহিদ সেই সুযোগে রশ্নির মাথায় বন্ধুক ঠেকাতে যায়
কিন্তু তার আগেই পিছন থেকে কেউ এসে ওকে ধরে ফেলে
কে তা দেখা জন্য পিছনে মুড়ে দেখে
একজন পুলিশ অফিসার
নাহিদ এবার সামনে তাকিয়ে দেখে
সামনে আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসার আছে
— এদিক সেদিক কাকে দেখছো?
আমি এনেছি তাদের
সাহিদ চৌধুরী সামনে তাকিয়ে দেখেন
এটা আর কেউ না তার নিজেরই আপন ভাই
ইয়ানাফ। যে পুলিশ নিয়ে এসেছে
ইয়ানাফ– কেন করলি আমাদের সাথে এমন?
সাহিদ– তোমরা কখনো বুঝবে না আমাকে। আমার কষ্ট টা শুধু আমিই বুঝি
তোমরা সব সময় বাবার ভালোবাসা পেয়েছ আমি পাইনি, তোমরা সব কিছুর ভাগ পেয়েছ আমি পাই নি, তোমরা মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছ অবশ্য আমিও জন্মেছিলাম কিন্তু আমারটা তোমাদের বাবা কেড়ে নিয়েছিল
ইয়ানাফ– তুই শুধু একবার আমাকে বলে দেখতি নিজের কলিজাটাও তোর নামে করে দিতাম কিন্তু আমার সম্পত্তি গুলো পাওয়ার পর তুই সেগুলো খারাপ কাজে ইউজ করছিলি
তাই সেগুলো আমি ফিরিয়ে নিয়েছিলাম
কিন্তু তুই সামান্য সম্পত্তির জন্য আমাদের ভাই বোনদের সম্পর্ক টাকে ধংস করে দিলি?
সাহিদ অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন
তার কোনো কথাই যে এখন সাহিদের মাথায় ঢুকবে না সেটা ইয়ানাফ খুব ভালো করেই বুঝতে পারলেন
তারপর পুলিশের এসে ওদেরকে নিয়ে গেলেন
.
ইয়াশ গিয়ে নাঈমা বেগমকে জড়িয়ে ধরলেন
— থ্যাঙ্কস ছোট আম্মু
তুমি না থাকলে যে আজ কি হতো
রশ্নি– মামী কি করেছে?
ইয়াশ– উনিই তো আমাদের কল করে সবটা জানিয়েছিলেন
রশ্নি– থ্যাংকস মামী
আমি সব সময় তোমাকে ভুল বুঝেছি কিন্ত আজ তুমিই আমাকে বাচালে
উনি প্রতিত্তরে রশ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন
রশ্নি এবার গিয়ে ইয়াশের সামনে দাঁড়ালো
রশ্নি– আপনি অনেক খারাপ
আমাকে জানান নি কেন যে আপনিই আমার নীল
আপনি জানেন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি
বলেই ইয়াশকে মারতে শুরু করলো
ইয়াশ– এই যে এর জন্যই জানাইনি
আমার মারা শুরু করে দিছে
নাঈমা– এই তোরা থাম তো
আর রশ্নি তুই
আমার ছেলেটাকে একদম মারবি না
রশ্নি– বাহ কি সুন্দর মুহূর্তের মধ্যেই দল বদল করে নিলো?
ইয়াশ– বললেই হয় যে হিংসে হচ্ছে
রশ্নি– আচ্ছা এসব ছাড়ো কিন্তু তুমি বাচলে কি করে
ইয়ানাফ– আমি বলছি……সেদিন
(ইয়াশের বাপারে বাদ দেন আমিই আপনাগোরে বুঝায় কইতাছি?)
সেদিন রাতে যখন তারা বেড়াতে গিয়েছিল তখন
এক্সিডেন্টে নিলাসা(ইয়াশের মা)
রেহানা, রাশিদ (রশ্নির মা বাবা)
সবাই মারা যান ঠিকই কিন্তু নীল মানে ইয়াশ আর ইয়ানাফ বেঁচে ছিলেন
সেই গাড়ির পাশ দিয়েই একটা লোক যাচ্ছিল
আর সে ছিলেন নিলাসার ভাই
উনি এদের এই অবস্থায় দেখে অনেকটা ভেঙে পড়েন
কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করেন
উনি লক্ষ করে দেখেন যে সবার মাঝে ইয়াশ বেঁচে আছে
ও বসে বসে কান্না করছিল
উনি তাড়াতাড়ি ইয়াশকে সেখান থেকে বের করেন
কিন্তু উনি বুঝতে পারেন না যে ইয়ানাফও বেঁচে আছে কারন তিনি তখন সেন্সলেস ছিলেন
তাই তিনি তাড়াতাড়ি ইয়াশকে নিয়ে নিজেদের বাসায় যান মানে ইয়াশের নানু বাড়ি
ইয়াশের মামা যখন ইয়াশকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান
তখনই ইয়ানাফের জ্ঞান ফিরে আর উনি উঠে কোনো রকম হাটা শুরু করেন কিন্তু মাথায় চোট লাগার কারনে বেশি শক্তিও পাচ্ছিলেন না
হাটতে হাটতে হঠাৎ রাস্তার মাঝে পরে যেতে নেন তখনই একটা লোক তাকে ধরে ফেলেন
আর তিনি ছিলেন অনিমা বেগমের বাবা
তিনি ইয়ানাফকে কয়েকদিন নিজের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করেন
আর এখানে ইয়াশের মামা সাহিদকে কল করে সবটা বলেন
ইয়াশের মামা পুলিশকে বলতে চেয়েছিল
কিন্তু সাহিদ তা চায়নি আর ইয়াশের মামাও খুব সরল সহজ বোকা প্রকৃতির ছিলেন তাই তিনিও বেশি মাথা খাটাননি
সাহিদ চেক করে দেখেন ইয়াশ আর ইয়ানাফের লাশ গায়েব
তা নিয়ে কয়েকদিন ভাবলেও পরে আর মাথা ঘামাননি
ওদের মৃত্যুতে সব সম্পত্তি সাহিদের নামে চলে আসে
এদিকে ইয়ানাফও সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন
কিন্তু ইয়ানাফ যখন নিজের বাড়িতে ফিরেন তখন সাহিদের সাহিদের সব কুকর্মের কথা জানতে পারেন
তার সব সম্পত্তিও তিনি খারাপ কাজে ব্যাবহার করছিলেন
তাই উনি তার কাজ ঠেকানোর জন্য
নিজের সব কিছু ফিরে পেতে চান
কিন্তু সাহিদ তা দিতে নারাজ
আর ইয়ানাফেরও তখন অটো ক্ষমতা ছিল না যে ও সাহিদের বিরুদ্ধে লড়বে
তারপর অনিমার বাবা তাকে ওয়াদা করেন যে উনি ইয়ানাফকে সব কিছু দিয়ে সাহায্য করবেন সাহিদের বিরুদ্ধে লড়তে
তিনি সেই ক্ষমতা ইয়ানাফকে তৈরি করে দিবেন কিন্তু তার জন্য তাকে অনিমকে বিয়ে করতে হবে
ইয়ানাফ প্রথমে রাজি না হলেও পরে সব কিছু চিন্তা করে নিজের মনকে মানিয়ে নেন
কয়েক বছর পর তিনি আবার যান সাহিদের কাছে আর নিজের সবটা কেরে হলেও নিয়ে আসেন
এদিকে ইয়াশও বড় হচ্ছিল
সুদর্শন, মেধাবী, ভালো আচরণ
মানে সব দিক দিয়ে ভালো ছিলো ও
একজন billionaire এর ছেলে হয়েও সাধারণ জিপন যাপন করতো
আর যখনই সময় পেত শুধু রশ্নিকেই খুঁজতো
একদিন ইয়ানাফ খবর পান যে তার ছেলে বেঁচে আছেন আর তিনি গিয়ে ইয়াশকে নিয়ে আসেন
কিন্তু ইয়াশ যেতে রাজি হচ্ছিল না
তখন ইয়ানাফও অনিমা বেগমের বাবার মতো সেইম কাজ করেন
ইয়াশকে একটা অফার দেন যার জন্য ইয়াশ রাজি হয়ে যায় আর সেটা হলো
রশ্নিকে ওর কাছে এনে দেওয়া
ইয়ানাফ জানতেন যে রশ্নির কথা বললে ইয়াশ অবশ্যই রাজি হবেন তার কাছে আসতে
এটা সুযোগের ব্যাবহার নয় ছেলেকে নিজের কাছে যে কোনো মূল্যে রাখার পাগলামো ছিল
আর ইয়াশও জানতো যে
ওর কোনো ক্ষমতা নেই সাহিদ আর নাহিদের কাছ থেকে রশ্নিকে নিয়ে আসার তাই তার বাবার দরকার আছে
তাই ও ইয়ানাফের কাছে চলে যায়
কিন্তু নতুন মাকে দেখে ইয়াশ কিছুটা স্তব্ধ খেয়ে যায়
কারন ওর বাবা যেমনি হোক ওর মাকে খুব ভালো বাসতো
ইয়ানাফ ওকে সবটা বলার পরও ইয়াশ তাকে বুঝে নি
উল্টো ভুলই বুঝে গেছে
তার নতুন মা আর ভাই তাকে খুব ভালো বাসতো
ইয়াশও তাদের ভালো বাসতে শুরু করে কিন্তু তার বাবার সাথে সম্পর্ক টা আর ঠিক হয়নি
এদিকে রশ্নির সাথে তার মামী বাজে ব্যাবহার করতো কিন্তু সাহিদ আর নাহিদের থেকে প্রটেক্টও করতো
বাজে ব্যাবহার করতো কারন
যদি তারা জেনে যায় যে নাঈমা ওকে স্নেহ করে তাহলে তাকেও পথ থেকে সরিয়ে দিত
রশ্নির উপর ইয়াশ সব সময় নজর রাখতো
শুধু ঠিক সময়ের অপেক্ষা করতো
আর ইয়াশের প্ল্যানেই রশ্নি ওর অফিসে চাকরি নেয়
অবশ্য ও তখন বিদেশে ছিল
কিন্তু ও আসার এক সপ্তাহের মাঝেই ওকে ইয়াশের
প্রাইভের সেক্রেটারি বানিয়ে দেওয়া হয়
তারপর আসে সেদিন
সেহেরএর পার্টির কথা
সেটা ইয়াশের আগের থেকেই প্ল্যান করা ছিল
মানে ও নিজের ইচ্ছেতেই জেলে যায় আর নাই ওর রশ্নিকে ধর্ষণ করার কোনো ইচ্ছে ছিল
আর ও জেলে গিয়েছিল কারন
ততদিনে তার মামা জেনে গিয়েছিলেন যে এটা ইয়াশ
আর সাহিদ যে ওকেও সরিয়ে দিতে চাইবে এটা ইয়াশের কাছে পরিষ্কার ছিল
তাই উনি কিছু করার আগে ও নিজেই জেলে চলে যায়
যেন সাহিদ নিজে থেকে আর কিছু না করতে পারে
আর তাই হলো
সাহিড হাফ ছেড়ে রশ্নি আর নাহিদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়
আর ওই দিন সাহিদের কাজ পরে যাওয়াটাও ইয়াশের একটা চাল ছিল
ইয়াশ জেলে আছে তাই কিছু করতে পারবে না ভেবে উনি কাজের জন্য দেশের বাহিরে চলে যান আর তখনই ইয়াশ রশ্নিকে তুলে নিয়ে যায়
রশ্নি– তাহলে আমাকে জানাওনি কেন যে তুমিই নীল?
ইয়াশ– সেটারও কারন আছে
তোমাকে যদি জানতাম যে আমিই নীল
তাহলে তুমি আমার কাছে চলে আসতে চাইতে আর
সেই কারণে সাহিদ চৌধুরী তোমার কোনো ক্ষতি করে দিতে পারতো
রশ্নি– উরিম্মা পুরাই মাস্টার মাইন্ড ?
এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাস কেমনে রে ভাই?
ইয়াশ– হয়েছে এবার বাসায় চলো
রশ্নি– মামী তুমিও আমাদের সাথে চলো না
ইয়াশ– হ্যা ছোট আম্মু চলো
নাঈমা– না রে
আমি আজ অনেক দিন পর মুক্তি পেয়েছি
এবার একটু এই পুরো আকাশটায় ডানা মেলে নিজের মতো করে উড়তে চাই
রশ্নি– তুমি তাহলে কোথায় যাবে?
নাঈমা– নিজের মার কাছে ফিরে যাব
আমার মাও একা থাকেন
তাকে নিয়ে এবার পুরো বিশ্ব টা ঘুরে দেখবো
রশ্নি তাকে আরেকবার জড়িয়ে ধরলেন
রশ্নি– ভালো থেকো মামী
নিজের খেয়াল রেখো আর হ্যা আমাদের সাথে কিন্তু অবশ্যই যোগাযোগ রাখবে
নাঈমা– সে আবার বলতে, তোরা ছাড়া আমার আর কে আছে বল
রশ্নি– তাহলে এবার আসি
নাঈমা– হুম
তারপর ইয়ানাফ আহমেদ, রশ্নি আর ইয়াশ না না নীল
ওরা তিনজন বেরিয়ে পড়ল
।
।
।
চলবে,