Mr_Husband,পর্ব_২৩,২৪

0
3617

#Mr_Husband,পর্ব_২৩,২৪
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_২৩

রাত প্রায় তিনটার কাছাকাছি তখনি আঁধারের আগমন ঘটে। ডুবলিকেট কি দিয়ে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে আঁধার। মুন তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বর্ষাকাল প্রায় শেষ দিকে এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে। চারদিকে হিমেল হওয়া বইছে। জানালা খোলা থাকায় বাতাসের দাপটে জানালার সাদা পর্দা গুলো উড়ছে। হালকা শীত শীত অনুভব হচ্ছে। মুন ঠান্ডায় গুটিসুটি মেরে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর কেঁপে কেঁপে উঠছে। মুখের উপর অবাধ্য কিছু চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঠোঁটটা শুকিয়ে গেছে। মুখটাও কেমন ফ্যাকাশে লাগছে। আঁধার কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেল। কাবার্ড থেকে একটা ব্লাংকেট নিয়ে ধীর পায়ে মুনের কাছে গেল। ব্লাংকেটটা মুনের গায়ে ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে আঁধার মুনের পাশে বসলো। তারপর আলতো হাতে মুখের উপর ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলো। আঁধার এক ধ্যানে মুনের মুখের পানে তাকিয়ে রইলো। কত মায়া জড়ানো আছে এই মুখটিতে আঁধার তা বলে বোঝাতে পারবেনা। তাকালেই যেন মোহে পরে যায় এই বেবী ফেসটার। কিন্তু মুনের লালচে হয়ে যাওয়া হাতটার উপর চোখ যেতেই মুহূর্তে আঁধারের মুখের রং পাল্টে গেলে। আঁধার এক ভ্রু উচু করে মুনের হাতটা চোখের সামনে এনে ভালো করে দেখতে লাগলো। হঠাৎ আঁধারের মুখে রাগ ফুটে উঠলো। কপালের রগ গুলো ফুলতে লাগলো। আঁধারের ইচ্ছে কর ছিল এখনই মুনকে টেনে তুলে জিজ্ঞেস করতে, কিভাবে এরকম হয়েছে। কিন্তু আঁধার নিজেকে শান্ত করে ঠান্ডা মাথায় ভাবলো, মুন ছটফটে স্বভাবের। হয়তো বেখায়ালি হয়ে লাফালাফি করে হাত পুরিয়েছে। তাই আঁধার আর কিছু বলল না। আঁধারের মনে এক অবাধ্য ইচ্ছে জাগলো, মুনকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর। সারাটাদিন দূরে থাকেও রাতটায় কাছে পলে যেন সারাদিনের সব কষ্ট ঘুচে যাবে। আঁধার নিজের ইচ্ছেটাকে প্রধান্য দিয়ে মুনের পাশে শুয়ে পরলো। তারপর মুনকে টেনে বুকের মাঝে চেপে ধরলো। সারাদিনের দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনটা যেন মুহূর্তেই নিভে গিয়ে শীতলতায় ভরে উঠলো। বুকের বা পাশটায় হওয়া চিনচিন ব্যথাটাও যেন গায়েব হয়ে গেল। মনের মধ্যে খালি খালি অনুভুতিটাও উতাল ঢেউয়ে ভরে উঠলো। আঁধার এক হাতে মুনকে জড়িয়ে ধরে আরাক হাত মুনের চুলের ভাজে ঢুকিয়ে বিলি কেটে দিতে লাগলো। মুনের চুলের মিষ্টি গন্ধেই আঁধারের মন ভালো হয়ে গেল। বিলি কাটাতে কাটতেই একসময় আঁধারের দুচোখ ভারী হয়ে আসে। আজকে অনেক ভালো ঘুম হবে সেটা আঁধার। আঁধার তৃপ্তির সাথে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়। মুন ঘুমের মধ্যে অনুভব করে কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। মুন চোখ মেলে দেখতে চায় লোকটিকে কিন্তু পারে না। ঘুমে চোখ দুটো ভারী হয়ে আছে টেনে তুলা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে চোখ দুটোতে কেউ সুপারগ্লু লাগিয়ে দিয়েছে। মুন ব্যর্থ হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

.
রুটিন মোতাবেক আজও আঁধারেরই আগে ঘুম ভাঙ্গলো। আঁধার চোখ মেলতেই সর্ব প্রথম মুনের মুখটা দেখতে পেলো। সকালের সিগ্ধ আলোয় স্পস্ট মুখটা ভেসে উঠেছে আঁধারের দু চোখের নীলাভ মনি কোঠায়। ঘুমন্ত অবস্থায় যে কোনো মানুষকেই নিষ্পাপ লাগে কিন্তু আধাঁরের কাছে মুনকে ঘুমন্ত অবস্থায় পরী ম, হচ্ছে। ঘুমপরী যাকে বলে। আবার স্লিপিং বিউটিও বলা যায়। আঁধার আলতো করে মুনের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। তারপর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে পরলো। এখন কেবল ছয়টা পোনার বাজে। আঁধার ল্যাপটপে কিছু কাজ করতে লাগলো। ধীরে ধীরে সূর্যের তেজ বারতে লাগলো। ছয়টা পোনার থেকে কখন যে সময় গড়িয়ে নয়টায় এসে থামলো আঁধারের সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। সূর্যের মিষ্টি কিরণ এসে মুনের মুখে পরতেই মুন নড়ে উঠলো। ঘুমটা ছুটে গিয়েছে কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠতেই ইচ্ছে করছে না। মুন আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো। পাখিদের কিচিরমিচির গান মুনের কানে বাজতে লাগলো। মুনের চোখ যায় আঁধারের দিকে। আঁধার গুরুগম্ভীর হয়ে ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। মুন সেটাকে আনদেখা করে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

—“নেক্সট মানথ থেকে তোমার এক্সাম শুরু হচ্ছে তাই না?”

মুন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আঁধার ল্যাপটপের দিকে চোখ রেখে কথাটা বলল। মুন ছোট্ট করে জবাব দিলো,

—“হুম!”

—“কাল থেকে তুমি রেগুলার কচিং সেন্টারে যাচ্ছ। উবই রেখে এক মিনিটও যেন কোথাও বসে থাকতে না দেখি।তোমার পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এই এক্সামে আমি এইট্টি ফাইভ পার্সেন্ট মার্ক দেখতে চাই।যা যা বল্লামমনে থাকে যেন।”

মুন মুখে কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়ালো। আঁধার আবারো বলল,

—“ব্রেক ফাস্ট করে রেডি হয়ে থেকো। তোমাকে ভর্তি করাতে কচিং সেন্টারে যেতে হবে।”

মুন এবারো মাথা নাড়ালো। তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

.
ব্রেকফাস্ট করে মুনকে নিয়ে কচিং সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো আঁধার। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা কচিং সেন্টারে পৌঁছে যায়। গাড়িতে দুজনেই চুপচাপ ছিল। কেউ কোনো কথা বলেনি। মুন অভিমানে কিছু বলেনি আর আঁধার বলার জন্য কিছু খুজে পায়নি।আঁধার আগে গাড়ি থেকে নামে তারপর মুন। আঁধার সামনে সামনে হাঁটছে আর মুন চারদিকে তাকাতে তাকাতে আঁধারের পিছনে পিছনে হাঁটছে। আঁধার হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল মুন অন্যদিকে তাকিয়ে হাঁটছিল তাই আঁধার পিঠের সাথে বারি খেল। আঁধার ভ্রু কুঁচকে পিছনে ফিরলো। মুন আমতা আমতা করে বলল,

—“স…স্যরি!”

আঁধার কিছু বলল না। আঁধার একটা ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,

—“অফিস রুমটা কোথায়?”

ছেলেটা বলল,

—“সোজা গিয়ে ডান দিকে।”

—“থ্যাঙ্ক ইউ। চলো।”

শেষের কথাটা মুনকে উদ্দেশ্য করে বলল। তারপর হাঁটা শুরু করলো। অফিস রুমের সামনে এসে আঁধার দরজায় কড়া নাড়লো। ভিতর থেকে আওয়াজ আসলো,

—“কাম ইন!”

আঁধার আর মুন অফিস রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো। প্রফেসর আঁধারকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

—“আরে মি.আঁধার রেজওয়ান যে! আসুন! বসুন!”

আঁধার আর মুন প্রফেসরের সামনের সিটে বসলো। প্রফেসর কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—“হু ইজ সি?

আঁধার একবার মুনের দিকে তাকালো তারপর আবার চোখ সরিয়ে প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল,

—“সি ইজ মাই ওয়াইফ।”

প্রফেসর হেসে বললেন,

—“ওহ! কংগ্র‍েস!”

—“থ্যাঙ্ক ইউ।”

—“মি. আঁধার আপনি কি উনাকে ভর্তি করেতে এখানে এসেছেন?”

—“হ্যাঁ”

মুনকে ভর্তি করা শেষে প্রফেসর ওদের ক্লাস রুম দেখাতে নিয়ে গেলেন। ক্লাসের সামনে যেতেই প্রফেসরকে দেখে স্টুডেন্টরা সব দাঁড়িয়ে গেলো। প্রফেসর সবাইকে বসতে বললেন। তারপর প্রফেসর মুনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কচিংসেন্টার থেকে বের হওয়ার সময় মুন একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খায় আঁধার সাথে সাথে ছেলেটার কলার ধরে উপরে উঠিয়ে ফেলে। ছেলেটা ভয়ার্ত গলায় চেচিয়ে বলে উঠলো,

—“ভাইয়া আমি ইচ্ছে করে আপনার বোনকে ধাক্কা দেইনি। ভুল করে লেগে গেছে।”

ছেলেটার কথা শুনে আঁধারের ভ্রু কুঁচকে গেল। আর মুনের এক হাত মুখে আরেক হাত মাথায়। ছেলেটি মুনকে রিকুয়েস্ট করে আবারো বলল,

—“স্যরি আপু। প্লিজ আমাকে ছাড়তে বলুন না আপনার ভাইকে!”

আঁধারের রাগ সপ্তম আকাশ ছুয়েছে। আঁধার রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুন বুঝতে পেরে ছেলেটাকে ঝাড়ি মেরে রাগ দেখিয়ে বলল,

—“চুপ! একদম চুপ! কি তখন থেকে ভাই-বোন, ভাই-বোন করছেন? আমাদের দেখে আপনার ভাই-বোন মনে হচ্ছে? হি ইজ মাই হাসবেন্ড ডাফার!”

ছেলেটা জ্বিব কেটে বলল,

—“স্যরি আপু! স্যরি ভাই! ভুল করে মিস্টেক হয়ে গেছে। ছোট ভাই মনে করে ছেড়ে দেন না প্লিজ।

মুনও বলল,

—“Mr.Husband ছেড়ে দিন উনাকে সবাই দেখছে।”

আঁধার ছেড়ে দিলো। ছেলেটা হাপ ছেড়ে বাঁচলো। হাপাতে হাপাতে বলল,

—“ধন্যবাদ আপু বাঁচালেন আপনি!”

ছেলেটা তড়িঘড়ি করে চলে গেল। আঁধার ও হনহনিয়ে চলে গেল। মুন ও আঁধারের পিছনে ছুটলো।

#চলব,

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_২৪

ভারী বর্ষণে আঁধার আর মুন একটা ছোট ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির কারণে ভালো কোরে কিছু দেখাও যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে আকাশ ভয়ংকর গর্জন করে চারপাশ কাপিয়ে তুলছে। বাতাসের দাপটে বড় বড় লম্বা লম্বা গাছ গুলো জোরে জোরে দুলছে। একবার দুলে এপাশে পরছো তো আরেক বার দুলে ওপাশে পরছে। এদিকে এ দৃশ্য দেখে ভয়ে মুনে অন্তরআত্মা কেঁপে উঠছে। কি ভয়ানক দৃশ্য! মুনের মনে হচ্ছে এই বুঝি একটা গাছ ওদের উপর ভেঙ্গে পরলো। আর ওরা আলুভর্তা হয়ে গেল। মুন ধীরে ধীরে আঁধার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। খুব ভয় করছে ও। এই অসময়ে বৃষ্টি মুনের একদমই পছন্দ হয়নি এমনিতেই মুনের কখনোই বৃষ্টি পন্দ ছিলো না। তার উপর না মেঘ না বাতস হঠাৎ করেই বৃষ্টিরা আকাশের বুক চিরে ঝাপিয়ে পরলো মাটিতে। রাস্তাটা কাচা তাই আঁধার গাড়ি আর আগে বাড়ায় নি। আর গাড়িতে থাকাটাও রিক্স তাই ওরা নেমে এই ছোট টিনের ছাউনির নিচে এসে আশ্রয় নেয়। আঁধার এক ধ্যানে বৃষ্টি পরা দেখছে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো রাস্তায় জোমে থাকা পানির উপর পরতেই পানি গুলো সরে যাচ্ছে আবার ছিটে আসছে। আঁধার ধীরে ধীরে ছাউনির বাইরে পা বাড়ায়। খোলা আকাশের নিচে এসে দু হাত মেলে চোখ বন্ধ করে বর্ষণের প্রতিটা স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। বৃষ্টিরা খুব তাড়াতাড়ি আঁধারকে সম্পূর্ণ রুপে ভিজিয়ে দিলো। কালো শার্ট টা ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। চুল বেয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে। লাল ঠোঁটটা এখন টকটকে লাল মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে জোরে একটা বাজ পরে। যার শব্দে মুন ভয় পেয়ে চিৎকার করে দৌড়ে গিয়ে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে। কারো কোমল স্পর্শ পেকে আঁধার চোখ মেলে তাকায় আর মুনকে নিজের শরীরের সাথে লেপটে দেখতে পায়। আঁধার মুনের শরীরের কম্পন অনুভব করতে পারছে। আঁধার দুহাত দিয়ে কপালে পোরে থাকা চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিলো। তারপর লম্বা নিশ্বাস নিয়ে মুনকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় হাত দিয়ে নরম কন্ঠে বলল,

—“মুন কাম ডাউন! কিছু হয় নি। যাস্ট একটা বাজ পরেছে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”

মুন এখনো থরথর করে কাঁপছে। আঁধার মুনকে নিয়ে গিয়ে ছাউনির নিচে দাঁড় করিয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে গেল। তারপর একটা পানির বোতল নিয়ে আবার দৌড়ে মুনের কাছে এলো। আঁধার মুনকে পানির বোতলটা দিয়ে বলল,

—“খেয়ে নেও ভালো লাগবে।”

মুন ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে সব পানি খেয়ে নিলো। এখন কিছুটা হালকা লাগছে। আঁধার এবার মুনকে ভালো কে দেখলো। মুখে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির পানি জমে আছে। চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে। পরনে কাচা হলুদ রঙের সেলোয়ার-কামিজ বৃষ্টিতে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে শরীরের প্রতিটা ভাজ স্পস্ট বুঝা যাচ্ছে। আঁধার মুনের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। নিজের গায়ের লেদারের কালো জ্যাকেটটা খুলে মুনকে দিয়ে বলল,

—“জ্যাকেটটা পরে নেও।”

মুন বিনা বাক্য ব্যায়ে বাধ্য মেয়ের মতো জ্যাকেটটা পরে নিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টির তেজ কমে এলো। আঁধার আর এক মিনিট সময়ও ব্যয় না করে গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

.
দুজনেই চুপচাপ। গাড়ি চলছে মিডিয়াম স্প্রিডে।
ম্যা ফিরবি তুমকো চাহুমগা,
ম্যা ফিরবি তুকো চাহুমগা,
ইস চাহাত মে মার যাউঙ্গা!!
ম্যা ফিরবি তুমকো চাহুমগা,
মুন জানালার দিকে ঘুরে বাইরে দৃষ্টি রেখে গুনগুন করে গান গাইছে। আঁধার এক নজর মুনের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো। হঠাৎ আঁধারের ফোন বেজে উঠলো। আঁধার ভ্রু কুঁচকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো আলিয়া কল করেছে। আঁধার গাড়িটা এক সাইডে দাঁড় করিয়ে ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে আলিয়া বলল,

—“হ্যালো ভাই!”

গম্ভীর গলায় আঁধার বলল,

—“হুম, বল? কবে আসছিস? দুদিন পর এক্সাম খেয়াল আছে?”

—“ভাই আমি এখানে সাথে করে বই নিয়ে এসেছি। আর অনলাইন ক্লাসও করছি। তুমি টেনশন করো না আমি এক্সাম শুরু হওয়ার আগেই চলে আসবো। এখন এসব কথা বাদ দেও আর মিষ্টি কোথায় মিষ্টিকে দেও।”

আঁধার ফোনটা মুনের দিকে এগিয়ে দিলো। মুন অবাক হয়ে একবারর ফোনের দিকে আরেকবার আঁধারের দিকে তাকায় তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে কানে ধরে আস্তে করে বলল,

—“হ্যালো!”

—“হ্যালো মিষ্টি! কেমন আছো?”

—“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?”

—“আমিও অনেক ভালো আছি। জানো এখানে আমরা কতো মজা করছি! তোমাকেও আসতে বলে ছিলাম আমার সাথে কিন্তু তুমি তো আসলে না।”

কিছুটা মন খারাপ করে বলল আলিয়া। মুন আড়চোখে আঁধারের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,

—“আমার কি দোষ তোমার রাক্ষস মার্কা ভাই’ই তো আমাকে যেতে দেয়নি।”

আলিয়া মুনের কথা শুনে শব্দ করে হাসতে লাগলো। কথাটা মুন আস্তে বললেও ঠিকই আঁধারের কানে গিয়ে পৌছায়। আঁধার বাকা চোখে মুনের দিকে তাকায়। তারপর আবার ড্রাভিং এ মনযোগ দেয়। মুন কিছুক্ষণ আলিয়ার সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয়। তারপর আবার দুজনের মাঝে নিরবতা শুরু হয়। মুনের চোখ লেগে আসায় মুন গাড়িতে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পরে।

.
দ্রুত গাড়ি ব্রেক করায় ঝাকিতে মুনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। মুন চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে ওরা পৌঁছে গেছে। মুন আস্তে করে গাড়ি থেকে নামে। মুন নেমে যেতেই। আঁধার কিছু না বলেই বাতাসের গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করে চলে যায়। মুন দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বাড়ির ভেতরে যায়। মুন ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই দেখে আরমান রেজওয়ান আর আরিফা রেজওয়ান রেডি হয়ে কোথাও বের হচ্ছে। মুন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—“সাসুমা, শশুরবাবা আপনারা কি কোথাও যাচ্ছেন?”

—“হ্যাঁ মামনি! আমরা একটা বিজনেস পার্টিতে যাচ্ছি আসতে হয়তো রাত হবে। কিছু লাগলে সার্ভেন্টদের বলো। একা একা ভুলেও কিচেনে পা রাখবে না। আর খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেও। ঠিক আছে?”

আরিফা রেজওয়ান গালে হাত রেখে কথা গুলো বললেন। মুন বাধ্যের মতো মাথা নাড়ালো। আরমান রেজওয়া এদিক সেদিক তাকিয়ে বললেন,

—“আঁধার কোথায়? ওকে তো দেখছি না।”

মুন নিচু গলায় জবাব দিলো,

—“উনি আমাকে নামিয়ে দিয়েই চলে গেছেন।”

—“ওহ! ঠিক আছে মামনি নিজের খেয়াল রেখো। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমরা এখন আসি!”

আরমান রেজওয়ান আর আরিফা রেজওয়ান চলে গেলেন। মুনও দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে চলে গেল।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here